০৫.১০.০৮
মাটি ও মানুষের কৃষি
ইত্তেফাক ।। তন্ময় রায়
বাংলাদেশের জেলাগুলোর পরিচয় এক একটি জেলা কৃষি উৎপাদনের সাফল্যের পরিচয়ের সাথে পরিচিত। এভাবে দিনাজপুর জেলাকে দেশের ধান উৎপাদনের উদ্বৃত্ত জেলা হিসেবে বলতে পারি। জেলার মোট আবাদি জমির প্রায় ৭০.৮ ভাগ ধান উৎপন্ন করা হয়। অন্য যে কোন ফসলের তুলনায় ধান এ জেলাতে বেশি হয়। এখানকার উৎপাদিত ধানের সুখ্যাতি রয়েছে দেশে-বিদেশে। বিশেষ করে জেলায় উৎপাদিত “কাটারী ভোগ” ধানের আদর এখন অনেক স্থানে ছড়িয়ে গেছে। এখানকার কাটারী ভোগ ধানের চাল খেয়ে সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র আহমদ শাহ বাংলা ছাড়তে রাজি হননি সহজে। তিনি দিনাজপুরকে তুলনা করেছিলেন পারস্যের গোলাপের সাথে।
দিনাজপুর জেলার ৪, ১৮৪৪৭ হেক্টর জমিতে ধান উৎপাদিত হয়। ১৩টি উপজেলার প্রয়োজনীয় ৪, ৫৯.৪৮৬ মেট্রিক টন ধানের চাহিদা মিটিয়ে আরও ৭,৭৫,২২৮ মেট্রিক টন ধান উদ্ধৃত্ত উৎপাদন করে তা বাইরে বিক্রি কর হয়।
প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন জাতের ধান উৎপাদন করা হচ্ছে এখানে। আউশ, আমন, এবং বোরো জাতের ধানের মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতের ধান উৎপাদন করা হয়। আদিকালে অনেক প্রজাতির ধান উৎপাদন করা হলেও বর্তমানে হাইব্রিড জাতের ধান প্রধান উৎপাদনকারী ফসল হিসেবে জায়গা দখল করে নিয়েছে।
ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, ধান দিনাজপুরের নিজস্ব সম্পদ। প্রাগৈতিহাসিক কালে কখন মানুষ পর্বতের গুহা থেকে নেমে এসে ধান চাষ শুরু করেছিল তা জানা যায় না। বিখ্যাত ভৌগলিক বেজর্গ ইবনে শাহারিয়ার রচিত ‘আজায়েবুল হেন্দ’ গ্রন্থ থেকে জানা যায়- দিনাজপুরের অতি প্রাচীন কৃষিজাত দ্রব্যই ধান। এই গ্রন্থের রচনা ৯২১ খৃষ্টাব্দে।
ধান চাষের জন্য দিনাজপুরের সাথে অনেক কথা জড়িয়ে আছে। কেউ কেউ মত প্রকাশ করেন যে, প্রাচীনকালে চীন এবং মিশর হতে চারা এনে দিনাজপুরে ধান চাষ শুরু করা হয়েছিল। আবার কারও কারও মতে মোঘল বাদশাহদের আমলে আফ্রিকার ব্রেজিলে নাকি দিনাজপুর হতে ধানের বীজ পাঠিয়ে সেখানে ধান চাষ শুরু করা হয়েছিল।
দিনাজপুরের চাষযোগ্য মাটিকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়- প্রথমতঃ খেয়ার, দ্বিতীয়তঃ পলি। তদ্রƒপ এখানে তিন জাতের ধান উৎপন্ন হয়। যথা- আউশ, আমন এবং বোরো।
আউশ জাতের ধানের মধ্যে সরূকরাস, চিš-ামন, ঢুলকলি, শনি, জসবাভাদই, প্রচুর উৎপন্ন হত। বর্তমানে এ জাতের ধানের মধ্যে পারি, বি আর- ২৪, ২১, ২৬, ১৬, ১৪, ১ ও ২, ইরাকন-২৪, বিরি-২৮, জবা, পৌষা, পূর্বাচি ধান উৎপাদন হয়ে থাকে।
আবার আমন জাতের ধানের মধ্যে বিন্নি, চেঙ্গা, মালকিরা, নারী পর্যাত, সালনা, খৈয়ান, বাগুন বিবিয়া, সামরোট, ভাদরা, আঘুন পাক, লয়াজং, রেঙ্গন, মর্গিমালসেরা, কাঁকুয়া, কনচুষ, কলম, ভশেওয়া, দুপশার, পানিসাইল, দাঁড়িকাসাইল, ইন্দ্রসাইল, কার্ত্তিক সাইল, কাটারীভোগ, দাউদখানী, কালনুনিয়া প্রভৃতি ধান অধিক উৎপাদন করা হলেও বর্তমানে বি আর-১১, বি আর আর আই-৩০, ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৪, স্বর্না, পাজাম, কাঠারী, সাপাহার, ফিলিপাইন কাঠারী, বাতরাজ, শিলকুমার, কলম, বোল্ডার , মাগুর শাইল, বাদশাভোগ, ইন্ডিয়ান রঞ্জিত প্রভৃতির উৎপাদন হচ্ছে।
নদীর চর এবং বিল এলাকাই বোরো ধান উৎপাদন করা হয়। যেমন বি আর- ১, ২, ৩, ৮, ৯, ১৫, ১৬, ১১, ১৪, ইরাউশ -২৪, বি আর আর আই- ২৮, ২৯, ৩৩, ৩৬, পাজাম, পারী পৌষা, পূর্বাচি, মিনিকেট, ইন্ডিয়ান-৫০, বিনা-৬, সোনার বাংলা, জাগরণী, হীরা, বাশমতি, জিরা কাটারী প্রভৃতি।
এ জেলার অর্থনীতি কৃষি তথা ধান নির্ভর বলা যায়। জেলার বহু মানুষ ধান চাষ, ধান বাজার জাত, ধান হতে তৈরি বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য তৈরির ব্যবসার সাথে জড়িত। আদি থেকে বর্তমান পর্যš- প্রতি নিয়ত নিত্যনতুন ধানের সুঘ্রাণ বইছে দিনাজপুরের বাতাসে। এত সবের পরেও এই ধান উৎপাদন এবং ধান ব্যবসায় রয়েছে হাজারও সমস্যা। বাজারজাত করার সমস্যা, পুঁজি স্বল্পতা, পদ্ধতিগত আধুনিকায়নের অভাব, প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলার অক্ষমতা, আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাওয়া, মাটির পি-এইচ সংরক্ষণ করতে না পারা, কীটনাশকের জন্য পরিবেশের ভারসাম্যহীনতা প্রভৃতি। এ সকল বিষয়ে সম্মিলিত সহযোগীতা দেওয়া জরুরি প্রয়োজন। কেননা ইতিপূর্বে দূর্র্ভিক্ষের সময় এ জেলার ধান খেয়ে মানুষ প্রাণে বেঁচেছিল। উদ্বৃত্ত জেলা তাই প্রতি বছর এখানকার ধান দেশের মানুষের আহার যোগাড় করে আসছে। এখন শুধু প্রয়োজন নিত্য নতুন ধানের সুঘ্রাণে কৃষকের মুখের নির্মল হাসি। -
Monday, October 6, 2008
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
About Me
- Participatory Research & Action Network- PRAN
- প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।
Krishi Khobor
-
▼
2008
(356)
-
▼
October
(54)
- ফটো ফিচার........
- কৃষিঋণ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন নীতিমালা
- কৃষিখাতে ক্ষুদ্রঋণের চাহিদা বাড়ছে
- ২৫ হাজার টন এমওপি সার আমদানি করবে সরকার
- কৃষিঋণ : পুনঃঅর্থায়ন নীতিমালা সহজ হচ্ছে
- ইকোলজিক্যাল স্যানিটেশনের মাধ্যমে বিপুল জৈব সার তৈর...
- আমন চাষীদের বাঁচাল রেশমী
- চুয়াডাঙ্গায় প্রকাশ্যে বীজ নিয়ে প্রতারণা
- ফটো ফিচার........
- কুড়িগ্রামে সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমির ধান গাছ নুয়ে প...
- চা বাগানসমূহের অনুকূলে আজ ৫ হাজার টন ইউরিয়া সার সর...
- কৃষককে সময়মতো সারের জোগান জরুরি
- ‘সামগ্রিক কৃষি সংস্কার কর্মসূচি’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়...
- খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করিতে সার উৎপাদনে স্বয়ংসম্...
- ইউরিয়া সারের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা জরুরি
- জলবায়ু পরিবর্তনের দায় আমাদেরই
- বিকল্প আয়ের উৎস : সামুদ্রিক শৈবাল চাষ
- জাপানে বাংলাদেশী বিজ্ঞানীর ধানের লবণাক্ততা ও খরা স...
- আধুনিক কৃষি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
- খাদ্য সংকট নিরসনে কাসাবা
- কৈ মাছের কৃত্রিম প্রজনন
- খাদ্যনিরাপত্তায় উৎপাদন বাড়াতে হবে
- ১ নভেম্বর থেকে ঢাকায় মাছ ও সবজি বিক্রি বন্ধের হুমক...
- চীনের সহায়তায় হাইব্রিড তুলা ফলাবে বাংলাদেশ
- আসন্ন মৌসুমে ৮১ লাখ হেক্টরে রবিশস্য চাষের কর্মসূচি...
- জলবায়ু সহনশীল খাদ্যশস্য ও আজকের কৃষি
- কয়েক দফা বন্যায় আমন চাষ ব্যাহত
- গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে অভাবনীয় সাফল্য
- কৃষি খাতে রূপান্তর ও পুঁজির বিকাশ
- পাটগ্রামে ধানক্ষেতে পাতামরা রোগ, কৃষক দিশেহারা
- লক্ষ্মীপুরে সার-কীটনাশক-শ্রমের মূল্যবৃদ্ধিII আমন চ...
- দামুড়হুদায় হিমাগারের অভাব নষ্ট হচ্ছে কৃষিপণ্য
- কৃষিবান্ধব নীতির কারণে কৃষিতে এগিয়ে চীন
- হাইব্রিড ধান বীজ
- তিন বছর মেয়াদী শস্য ঋণ চালু II বাংলাদেশ ব্যাংকের প...
- কোল্ড স্টোরেজে রয়েছে ১৫ লাখ টন আলু লোকসানে বিক্রি ...
- ঝালকাঠিতে এক হাজার একর জমির সেচ সুবিধা নিশ্চিত
- টিএসপি ও এমওপি সারের অভাবজনিত অপু®িদ্ব ও পোকার আত্...
- ঠাকুরগাঁও কৃষকের দুশ্চিন্তার কারণ পাতাপচা রোগ আর প...
- জীবনমানের সব আছে কৃষকের ঘরে
- কৃষকরা ব্যাংক থেকে তিন বছর মেয়াদে ঋণ পাবেন
- টমেটো ও বেগুনের জোড়-কলম
- হালাল খাদ্যপণ্যের রপ্তানী কৌশল রপ্ত করতে হবে
- সূর্যমুখী চাষের মৌসুম আসন্ন
- মরিচের চারা বিক্রি করে লাখপতি
- কৃষিঋণ : প্রান্তিক কৃষকদের সুবিধা কতখানি ?
- পারস্যের গোলাপ: দিনাজপুরের ধান
- কৃষককে সংগঠিত করা বিশেষ প্রয়োজন
- ভার্মি কম্পোস্ট! সবুজ বিপ¬বের আর এক নিয়ামক
- কৃষিক্ষেত্রে কুমিল্লা মডেলের পুনর্মূল্যায়ন
- সমস্যায় জর্জরিত কৃষিখাত
- রাবার চাষ বদলে দিতে পারে কৃষি অর্থনীতি
- বীজ, সার, সেচ, যত্ন, এই চার মিলে রত্ন
- চলছে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষের মৌসুম
-
▼
October
(54)
No comments:
Post a Comment