১৯.১০.০৮
মাটি ও মানুষের কুষি
ইত্তেফাক ।। এ. কে. এম নূরুল হক
কৈ মাছের কৃত্রিম প্রজননের জন্য আমরা এর আগে সিস্টার্নে বা হাউজে ওভারহেড ট্যাংক এর পানির স্রোত ব্যবহার করে হরমোন প্রয়োগের মাধ্যমে রেনু উৎপাদনের কৌশলের কথা উলে¬খ করেছিলাম। এখন এমন একটি কৌশলের কথা উলে¬খ করছি যেখানে কৈ মাছের প্রজননের জন্য কোন ওভারহেড ট্যাংক এর প্রয়োজন পড়বে না বা কোন হাউজ বা সিস্টার্নেও প্রয়োজন পড়বে না। শুধুমাত্র একটি হাপা হলেই এই মাছের প্রজনন করা সম্ভব। চাহিদামত বা ইচ্ছানুযায়ী লক্ষ লক্ষ রেনু এবং পোনা উৎপাদন করা যাবে। যার ফলে একজন মৎস্যচাষী অš-তপক্ষে পোনা কেনা থেকে অনেক টাকা বাচাতে পারবেন।
পুকুর প্রস্তুতকরণ : যে পুকুরে কৈ মাছকে ইঞ্জেকশন দেওয়ার জন্য নির্বাচন করা হবে সেই পুকুরটিকে প্রথমেই ভালভাবে শুকিয়ে নিতে হবে। পুকুরের ভেতরের চারপাশের যাবতীয় ঘাস বা ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করতে হবে। তারপর পুকুরের চারপাশ দিয়ে ভালভাবে জাল দিয়ে বেড়া দিতে হবে যাতে বাইরে থেকে কোন ব্যাঙ বা সাপ পুকুরের ভেতর না ঢুকতে পারে। তারপর যেদিন কৈ মাছকে ইঞ্জেকশন দেওয়ার জন্য নির্বাচন করা হবে ঠিক সেদিনই পুকুরে পানি ঢুকাতে হবে। অন্যথায় পুকুরে পানি তোলার পর ২/৩ দিন দেরি হয়ে গেলে ওই পানিতে প্রাণী প¬াংটন জন্মাবে। যার কারণে কাঙ্খিত পরিমাণে পোনা উৎপাদন সম্ভব হবে না। অর্থাৎ প্রাণী প¬াংটনে কৈ মাছের রেনু ছোট হওয়ার কারণে রেনুগুলোকে সহজেই নষ্ট করতে পারে।
হাপা সেটিং ও প্রজনন কৌশল : পানি উচ্চতা ২ ফুট হলে ওই দিনই পুকুরে হাপা সেট করতে হবে। পুকুরে হাপা সেটিং করার পর বিকেলের দিকে অর্থাৎ তিনটা চারটার দিকে হাপা পুকুরে স্থাপন করে কৈ মাছগুলোকে ইঞ্জেকশনের জন্য বড় পাতিল করে পুকুরের কাছে আনতে হবে। এরপর পুকুরে স্থাপিত হাপায় মাছগুলোকে ইঞ্জেকশন করে হাপায় ভরতে হবে।
ইঞ্জেকশন প্রয়োগ পদ্ধতি : প্রতি কেজি স্ত্রী কৈ মাছকে ৭/৮ মি:গ্রা: পিজি দিয়ে ইঞ্জেকশন করতে হবে। প্রথমে ১ মি:লি: এর একটি ইনসুলিন সিরিঞ্জ নিতে হবে যে সিরিঞ্জে ৫০টি দাগ থাকতে হবে। বাজারে ১০০ দাগ সম্পন্ন পর্যš- ইনসুলিন সিরিঞ্জ পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে ৫০ দাগ মাত্রার সিরিঞ্জ ব্যবহার করতে হবে। সাধারণত কৈ মাছের ক্ষেত্রে ১ কেজি মাছের জন্য ০.৫ মি: লি: পানি ব্যবহার করা যায়। সেক্ষেত্রে প্রথমে ১ কেজি মাছের জন্য ৮ মি: গ্রা: পিজি একটি কাচের বাটিতে ভালভাবে পিষিয়ে তারপর ধীরে ধীরে ওই ১ মি:লি: পানি মেশাতে হবে। এভাবে ১ কেজি স্ত্রী কৈ মাছের ইঞ্জেকশনের জন্য দ্রবণ প্রস্তুত হয়ে গেল। আমরা আগেই উলে¬খ করেছি যে সিরিঞ্জে দাগ থাকবে ৫০ টি। তা হলে প্রতিটি দাগের জন্য আমরা ২০ গ্রাম ওজনের মাছকে ইঞ্জেকশন করতে পারবো। যদি কোন মাছের ওজন ১০০ গ্রাম হয় তাহলে ৫ দাগ ওষুধ মিশ্রিত দ্রবণ ব্যবহার করতে হবে। এই হিসেবে সবগুলো স্ত্রী মাছকে ইঞ্জেকশন করে তারপর পুরুষ মাছকে ইঞ্জেকশন করতে হবে। ইঞ্জেকশন করে তারপর পুরুষ মাছকে ইঞ্জেকশন করতে হবে। পুরুষ মাছের ক্ষেত্রে ১ কেজি মাছের জন্য মাত্র ৫ মি: গ্রা: পিজি মিশিয়ে উপরোলি¬খিতভাবে প্রয়োগ করে সবগুলো স্ত্রী এবং পুরুষ মাছকে একসাথে হাপায় ভরতে হবে।
এই পদ্ধতিতে রেনু উৎপাদনের জন্য থাই জাল (পলিথিন জাতীয়) দিয়ে একটি হাপা তৈরি করতে হবে। হাপার মাফ হবে দৈর্ঘ্যে দেড় মিটার প্র¯ে- ছয় মিটার। হাপাটি সব দিক থেকেই একই নেট দিয়ে আবদ্ধ থাকতে হবে। আর তা না হলে প্রজননের সময় মাছ বেরিয়ে যেতে পারে। প্রথমে এই হাপাটি তৈরি করার পর পুকুরে ১.৫/২ ফুট পানিতে করতে হবে। যাতে হাপাতে কমপক্ষে ১ ফুট পানি থাকে। হাপার উপরের অংশের এক কোণায় সামান্য খোলা রেখে মাছগুলোকে পি.জি. হরমোন দিয়ে ইঞ্জেকশন করার পর হাপার এক কোণার খোলা অংশ দিয়ে হাপাতে মাছগুলোকে ছেড়ে দিতে হবে। সাধারণত বিকেল ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে মাছগুলোকে ইঞ্জেকশন দিয়ে হাপাতে ছাড়তে হবে। অর্থাৎ ৭/৮ঘন্টা পর অর্থাৎ গভীর রাতে মাছগুলো যাতে ডিম পাড়ার সময় হয়। এরপর সন্ধ্যার পর থেকে পুকুরের পাশে যে কোন শ্যালো দিয়ে ওই হাপার আশপাশ দিয়ে পানির প্রবাহ দিতে হবে। এভাবে ৫/৬ ঘন্টা পানি দিলেই ওই হাপাতে কৈ মাছ ডিম পারবে। কৈ মাছের ডিমগুলো ভাসমান বিধায় ওই ডিমগুলো হাপার জালের ফাঁক দিয়ে অনায়াসে পুকুরে চলে যাবে। সকালের দিকে ডিমপাড়া শেষ হলে কৈ মাছসহ হাপাটিকে পানি থেকে উঠিয়ে ফেলতে হবে। পুকুরে শুধুমাত্র ভাসমান অবস্থায় ডিমগুলো থেকে যাবে। ডিম দেওয়ার ২০ ঘন্টার মধ্যে ডিম থেকে বাচ্চা বের হবে। বাচ্চা বের হওয়ার ৭২ ঘন্টা পর থেকে ডিম সিদ্ধ করে গ¬াস নাইলন কাপড় দিয়ে ছেঁকে রেনু পোনাকে খাবার দিতে হবে দিনে অš-ত ৩ বার। এবাবে ১ সপ্তাহ ডিমের কুসুম খাওয়ানোর পর নার্সারি ফিড দিতে হবে আরও ১৫ দিন। রেনু ফোটা থেকে ২২ দিনের মধ্যে পোনা তৈরি হয়ে যাবে। এভাবে পুকুরে হাপাতে কৈ মাছের ব্র“ড মাছকে ইঞ্জেকশন দিয়ে অনায়ায়ে ইচ্ছানুযায়ী রেনু এবং পোনা উৎপাদন করা সম্ভব।
এ. কে. এম নূরুল হক, ময়মনসিংহ
Sunday, October 19, 2008
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
About Me
- Participatory Research & Action Network- PRAN
- প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।
Krishi Khobor
-
▼
2008
(356)
-
▼
October
(54)
- ফটো ফিচার........
- কৃষিঋণ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন নীতিমালা
- কৃষিখাতে ক্ষুদ্রঋণের চাহিদা বাড়ছে
- ২৫ হাজার টন এমওপি সার আমদানি করবে সরকার
- কৃষিঋণ : পুনঃঅর্থায়ন নীতিমালা সহজ হচ্ছে
- ইকোলজিক্যাল স্যানিটেশনের মাধ্যমে বিপুল জৈব সার তৈর...
- আমন চাষীদের বাঁচাল রেশমী
- চুয়াডাঙ্গায় প্রকাশ্যে বীজ নিয়ে প্রতারণা
- ফটো ফিচার........
- কুড়িগ্রামে সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমির ধান গাছ নুয়ে প...
- চা বাগানসমূহের অনুকূলে আজ ৫ হাজার টন ইউরিয়া সার সর...
- কৃষককে সময়মতো সারের জোগান জরুরি
- ‘সামগ্রিক কৃষি সংস্কার কর্মসূচি’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়...
- খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করিতে সার উৎপাদনে স্বয়ংসম্...
- ইউরিয়া সারের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা জরুরি
- জলবায়ু পরিবর্তনের দায় আমাদেরই
- বিকল্প আয়ের উৎস : সামুদ্রিক শৈবাল চাষ
- জাপানে বাংলাদেশী বিজ্ঞানীর ধানের লবণাক্ততা ও খরা স...
- আধুনিক কৃষি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
- খাদ্য সংকট নিরসনে কাসাবা
- কৈ মাছের কৃত্রিম প্রজনন
- খাদ্যনিরাপত্তায় উৎপাদন বাড়াতে হবে
- ১ নভেম্বর থেকে ঢাকায় মাছ ও সবজি বিক্রি বন্ধের হুমক...
- চীনের সহায়তায় হাইব্রিড তুলা ফলাবে বাংলাদেশ
- আসন্ন মৌসুমে ৮১ লাখ হেক্টরে রবিশস্য চাষের কর্মসূচি...
- জলবায়ু সহনশীল খাদ্যশস্য ও আজকের কৃষি
- কয়েক দফা বন্যায় আমন চাষ ব্যাহত
- গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে অভাবনীয় সাফল্য
- কৃষি খাতে রূপান্তর ও পুঁজির বিকাশ
- পাটগ্রামে ধানক্ষেতে পাতামরা রোগ, কৃষক দিশেহারা
- লক্ষ্মীপুরে সার-কীটনাশক-শ্রমের মূল্যবৃদ্ধিII আমন চ...
- দামুড়হুদায় হিমাগারের অভাব নষ্ট হচ্ছে কৃষিপণ্য
- কৃষিবান্ধব নীতির কারণে কৃষিতে এগিয়ে চীন
- হাইব্রিড ধান বীজ
- তিন বছর মেয়াদী শস্য ঋণ চালু II বাংলাদেশ ব্যাংকের প...
- কোল্ড স্টোরেজে রয়েছে ১৫ লাখ টন আলু লোকসানে বিক্রি ...
- ঝালকাঠিতে এক হাজার একর জমির সেচ সুবিধা নিশ্চিত
- টিএসপি ও এমওপি সারের অভাবজনিত অপু®িদ্ব ও পোকার আত্...
- ঠাকুরগাঁও কৃষকের দুশ্চিন্তার কারণ পাতাপচা রোগ আর প...
- জীবনমানের সব আছে কৃষকের ঘরে
- কৃষকরা ব্যাংক থেকে তিন বছর মেয়াদে ঋণ পাবেন
- টমেটো ও বেগুনের জোড়-কলম
- হালাল খাদ্যপণ্যের রপ্তানী কৌশল রপ্ত করতে হবে
- সূর্যমুখী চাষের মৌসুম আসন্ন
- মরিচের চারা বিক্রি করে লাখপতি
- কৃষিঋণ : প্রান্তিক কৃষকদের সুবিধা কতখানি ?
- পারস্যের গোলাপ: দিনাজপুরের ধান
- কৃষককে সংগঠিত করা বিশেষ প্রয়োজন
- ভার্মি কম্পোস্ট! সবুজ বিপ¬বের আর এক নিয়ামক
- কৃষিক্ষেত্রে কুমিল্লা মডেলের পুনর্মূল্যায়ন
- সমস্যায় জর্জরিত কৃষিখাত
- রাবার চাষ বদলে দিতে পারে কৃষি অর্থনীতি
- বীজ, সার, সেচ, যত্ন, এই চার মিলে রত্ন
- চলছে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষের মৌসুম
-
▼
October
(54)
No comments:
Post a Comment