Tuesday, May 19, 2009

নীলফামারীতে বোরো উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রার ৫০ শতাংশ ব্যাহত

১৯.০৫.০৯
ডেসটিনি ।। নীলফামারী প্রতিনিধি।।

নীলফামারী জেলায় এবার বোরো মৌসুমের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না। প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং জ্বালানি তেল ও সারের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় এবার ৫০ শতাংশ ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থার মধ্য দিয়ে জেলার সর্বত্র বোরো ধান কাটা ও ঝাড়াই শুরু হয়েছে। ক্লন্তিহীনভাবে কৃষকরা মাঠের ফসল ঘরে তুলছেন। কারণ যে কোনো সময় উঠতি ফসলে কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টি আঘাত হানতে পারে। জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি বোরো চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৭৯ হাজার ৭০০ হেক্টরে নির্ধারণ করা হয়েছে। এর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৮৪ হাজার মেট্রিক টন। বোরো চাষাবাদের শুরুতেই জ্বালানি তেল, সার ও কীটনাশকের দাম কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় কৃষি বিভাগের চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রার ১০ ভাগ জমিতে বোরো চাষ করতে মাঠে নামেননি এ জেলার কৃষকরা। এর ওপর আরো ৫ শতাংশ জমির বোরো চাষিরা টাকা-পয়সার অভাবে রোপণকৃত বোরো চারায় সেচ ও সার সময়মতো দিতে না পারায় নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়াও স¤প্রতি জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কয়েক দফা কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টির কারণে প্রায় ২৫ শতাংশ জমির উঠতি ফসল ঝরে পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে এবার এ জেলায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা তো পূরণ হবেই না বরং ৫০ শতাংশ কম হবে। এ অবস্থায় অবশিষ্ট বোরো ফসল মাঠ থেকে কৃষকদের ঘরে তোলার খরচ ও স্থানীয়ভাবে কৃষি ঋণ নিয়ে চাষাবাদের খরচের টাকার ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে অনেকেই শূন্য হাতে কেউবা সামান্য ধান নিয়ে ঘরে ফিরতে দেখা গেছে। অপরদিকে নীলফামারীতে গত ৪ মে থেকে বোরো ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে চালু হয়নি। ফলে বোরো চাষিরা স্থানীয় হাট-বাজারে ফড়িয়া শস্য ব্যবসায়ীদের মনগড়া দামে বোরো ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে বোরো চাষিরা ধানের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. এনায়েতুর রহমান জানান, খুব শিগগিরই বোরো ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু করা হবে। এ জেলায় শুধু মে মাসের জন্য ক্রয় বরাদ্দে অর্ডার এসেছে ১ হাজার ৬৬৪ মেট্রিক টন ধান ও ৬ হাজার ৬৩৪ মেট্রিক টন চাল। প্রতি কেজি ধান ১৪ টাকা ও চাল ২২ টাকা দামে ক্রয় করা হবে।

শেরপুরের কৃষকরা গুদামে ধান দিতে পারছেন না

১৯.০৫.০৯
ডেসটিনি ।। আইয়ুব আলী, শেরপুর (বগুড়া)।।

সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হলেও বগুড়ার শেরপুরের কৃষকরা গুদামে ধান দিতে পারছেন না। কৃষকরা ধান দিতে প্রস্তুত থাকলেও তালিকায় তাদের নাম না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে জেলা খাদ্য সংগ্রহ কমিটির সিদ্ধান্তের পরিবর্তন আনা হয়েছে স্থানীয়ভাবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকরা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার কাছ থেকে কৃষক তালিকা সংগ্রহের কথা বলা হলেও স্থানীয়ভাবে পরিবর্তন এনে তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের নাম জুড়ে দিয়েছেন। আর এতেই দেখা দিয়েছে যত বিপত্তি। অল্প পরিমাণ বরাদ্দ পাওয়া ধান কৃষকদের মধ্যে বণ্টন করতে গিয়ে তোপের মুখে পড়তে পারেনÑ এ ভয়ে চেয়ারম্যানরা তালিকা তৈরিতে সময় কালক্ষেপন করছেন। ফলে চলতি মাসের অর্ধেক সময় পার হলেও গুদামে ধান উঠছে না।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, অভ্যন্তরীণ বোরো ধান সংগ্রহ অভিযান সফল করতে ৪ মে জেলা প্রশাসক ইফতেখারুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে জেলা খাদ্য সংগ্রহ কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, জেলা কমিটির কার্যপরিধি ২২গ(১) নং এর আলোকে এক এলএসডি বিশিষ্ট উপজেলা যেমন শাজাহানপুর, নন্দীগ্রাম, সারিয়াকান্দি, কাহালু উপজেলার প্রাপ্ত লক্ষ্যমাত্রার বিভাজনের কোনো অবকাশ নেই। জেলার অবশিষ্ট ৮টি উপজেলায় একাধিক এলএসডি রয়েছে। ক্রয় কেন্দ্রভিত্তিক ধান বিভাজনের জন্য উপজেলা কমিটিকে দায়িত্ব অর্পণ করা যায়। সেখানো আরো বলা হয়েছে, প্রতি কৃষক সর্বনিম্ন ৭০ কেজি এবং সর্বোচ্চ ৩ মেট্রিকটন ধান বিক্রয় করতে পারবেন। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকরা কৃষি বিভাগের ব্লক সুপারভাইজারদের (উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা) কাছ থেকে কৃষক তালিকা সংগ্রহ করবেন। তালিকা অনুযায়ী আগে এলে আগে ভিত্তিতে কৃষকদের কাছ থেকে মানসম্মত ধান সংগ্রহ করা যেতে পারে বলা হয় ওই সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে জানা যায়, চলতি মাসে শেরপুর উপজেলায় ৪৬৯ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলার দুটি খাদ্য গুদামে ৭ মেট্রিকটন ১৪ কেজি ধান সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
শেরপুর উপজেলার মির্জাপুর গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ জানান, তিনি কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহের জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। কিন্তু কৃষক ধান নিয়ে না আসায় কেনা সম্ভব হচ্ছে না। এর কারণ জানতে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবদুস সাত্তার ম-লের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কয়েকদফা যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। উপজেলার ভবানীপুর ইউপি চেয়ারম্যান জি এম মোস্তফা কামাল জানিয়েছেন, তার ইউনিয়নের কৃষকদের কাছ থেকে মাত্র ৫৯ মেট্রিকটন ধান নেয়া হবে। এ অবস্থায় তিনি কোনো কৃষককে বাদ দিয়ে নাম তালিকাভুক্ত করবেন। তিনি তাদের তোপের মুখে পড়তে চান না। তাই তিনি ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের কৃষক তালিকা করার পরামর্শ দিয়েছেন। বিশালপুর ইউপি চেয়ারম্যান এস এম রাফিউল ইসলাম লাবু জানান, তিনি গত বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে এ ধরনের একটি চিঠি পেয়েছেন। সে মোতাবেক ইউনিয়নের সব কৃষক পরিবারকে আলোচনার জন্য ডেকেছেন। মির্জাপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী মন্টু জানান, তিনি আগে এলে আগে পাবেন ভিত্তিতে কৃষকদের নাম তালিকাভুক্ত করে তাদের ধান বিক্রির ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। তাই কোনো কৃষক তার কাছে এলে তিনি তাকে স্লিপ দেন বলে জানান।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুল হাসেম জানান, কৃষক শনাক্ত করার পর কেউ এ ধরনের সমস্যায় পড়লে তাকে দ্রুত কার্ড দেয়ার জন্য উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইউএনও মোহাম্মদ জাকির হোসেন জানান, চলতি মাসে যেসব কৃষক ধান দেবেন তারা আগামী বরাদ্দে ধান দিতে পারবে না।

পাট, আবার সুদিন আসুক

১৯.০৫.০৯
।। ডেসটিনি ।। মকবুলা পারভীন

স্যার মোহাম্মদ আজিজুল হক ছিলেন একজন যশস্বী আইনবিদ, ১৯৩৭ সালের বঙ্গীয় প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য ও পরে স্পিকার, অবিভক্ত বাংলার শিক্ষামন্ত্রী, কলকাতা বিশ্ববিদ্যায়ের ভাইস চ্যান্সেলর এবং সি,আই,ই,কে,সি,এস,আই ও স্যার উপাধিপ্রাপ্ত। রাজনীতি ও সাহিত্যের ক্ষেত্রেও তাঁর ছিল অবাধ বিচরণ। এই যশস্বী ব্যক্তির প্রকাশিত বেশ কয়েকটি মূল্যবান বইয়ের অন্যতম হচ্ছে ‘দি ম্যান বিহাইন্ড দি প্লাউ।’
এই বইয়ের একটি অংশে বাংলাদেশের মাটি সম্পর্কে লেখা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ প্রধানত পলিমাটির দেশ। অসংখ্য নদী-নালা এই পলিমাটি বয়ে আনে। পাহাড়ে ও পাহাড়ি অঞ্চলে যখন বৃষ্টি হয়, তখন সেই পানি প্রবল বেগে নিচে নেমে আসে; সেই সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে মাটিও কেটে আসে। সমতল ভূমিতে আসার পর এই স্রোতধারাগুলো একত্রে মিলিত হয়ে নদীতে পরিণত হয়। সমতল ভূমিতে এই নদীর গতিমন্থর হয়ে যাওয়ায় বয়ে আনা মাটি তলদেশে ও দুই পাশে জমতে থাকে। তারপর সাগরে মিলিত হওয়ার সময় বদ্বীপ সৃষ্টি হয় এবং এইরূপে জমির পরিমাণ বেড়ে যায়। ... পানির এই স্রোতধারা নিজের গতিপথ সম্প্রসারণ ও ভরাট করে, কখনো গতি পরিবর্তন করে দ্বীপ সৃষ্টি করে, কখনো এক পাড় ভেঙে অন্য পাড় গড়ে তোলে। হাজার হাজার বছর যাবত এই প্রক্রিয়া চলে আসছে। বালু, কাদা, পলি, কাঁকর একত্রে জমে গিয়ে মাটি প্রস্তুত হয় এবং এক সময় হয়ত নতুন প্লাবন এসে সব ধুয়ে-মুছে নিয়ে যায়। ... এই ভাঙাগড়ার খেলা অনন্তকাল ধরে চলে আসছে। বাংলার মাটি এই ভাঙাগড়া ও গঠন পুনর্গঠনেরই ফল, তার উর্বরা শক্তির মূল উৎস হচ্ছে পলিমাটি।’
সাধারণভাবে বলা হয়, ‘মাছের রাজা ইলিশ।’ পদ্মা নদীর ইলিশ মাছের স্বাদ তুলনাহীন। এই মাছ নিয়ে গবেষণাকারীদের মত হচ্ছে, পদ্মার ইলিশের তুলনাহীন স্বাদের অন্যতম কারণ পদ্মার ভেসে বেড়ানো পলি। এই পলি খেয়েই নাকি ইলিশ সুস্বাদু হয়ে ওঠে। তেমনি একসময় বলা হতো, পাটের রাজা পূর্ববঙ্গ অর্থাৎ বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এই উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ পাট উৎপাদনে রেকর্ডও করেছে বারবার। কেন? গবেষকদের মতে, পাটের আবাদে জমির অধিক উর্বরা শক্তির প্রয়োজন হয়। বন্যার সময় নদীর পানিতে যে উর্বর পলিমাটি ভেসে আসে একমাত্র তার ফলেই পাট চাষ সম্ভব হতে পারে। ক্ষেত্র বিশেষে কোনো সার প্রয়োগেরও দরকার নেই।
বিশ্বে এরকম একটি ভূমির একমাত্র অধিকারী বাংলাদেশ। আবহাওয়া বৈরী আচরণ না করলে বাংলাদেশ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পাট উৎপাদনে সক্ষম।
ব্রিটিশ শাসিত ভারতে এক জরিপে জানা গিয়েছিল, বিহার, উড়িষ্যা, আসাম, কুচবিহার ও ত্রিপুরা রাজ্যে সামান্য কিছু চাষ হলেও মূলত পাটের আবাদ ছিল একচেটিয়া বাংলাদেশের। পৃথিবীর আর কোনো দেশে তখন পাটের আবাদ ছিল না কিন্তু পাট ও পাটজাত দ্রব্যের আন্তর্জাতিক চাহিদা ছিল। পাট খুব উপকারী এবং সস্তা হিসাবে তখনও গণ্য ছিল। এর কোনো বিকল্প ছিল না। এ সুযোগ কাজে লাগিয়েছিল ব্রিটিশরা। তারা অবিভক্ত ভারতে বহু পাটকল স্থাপন করেছিল। এ প্রসঙ্গে পরে আসছি।
বাংলাদেশের কৃষকরা প্রাচীনকাল থেকে পাটের আবাদ করে আসছে। ঘর-সংসারের কাজে যেমন পাটের প্রয়োজন তেমনি অর্থকরী ফসল হিসেবে তখনও এর মূল্য ছিল। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, খাদ্যের চাহিদা বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে ধানের আবাদী জমি বাকি রেখে কৃষক পাটের আবাদ করতেন। এরপরও পাটই একসময় ছিল প্রধান অর্থকরী ফসল। ব্রিটিশ এবং পাকিস্তান আমলে কৃষকরা মুনাফার জন্য ফসল আবাদ করতেন না। সারা বছরের খাদ্য রেখে উদ্বৃত্ত ফসল সম্পন্ন কৃষকরা বাজারে বিক্রি করতেন। কিন্তু পাটের ক্ষেত্রে কথাটা খাটে না। বছরে একবার নগদ টাকা পাওয়ার প্রয়োজনে কৃষক পাট চাষে মনোযোগী হতেন। তবে সব সময় একটা সমস্যা ছিল বা আছে তা হচ্ছে, কৃষক পাট লাগিয়ে উৎপান খরচ, মজুরি খরচ করে কেটে, ধুয়ে, শুকিয়ে, বাজারে বিক্রি করে যে অর্থ আয় করতেন তাতে উৎপাদন ও অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে খুব একটা লাভ থাকত না বা থাকে না। তবে কমবেশি আজও কৃষক পাট বিক্রি করার টাকায় মেয়ের বিয়ে, যৌতুক, পরিবারের নগদ অর্থের চাহিদা ও মহাজনী ঋণ শোধসহ অন্যান্য প্রয়োজন পূরণ করার স্বপ্ন দেখেন।
বহুকাল আগে থেকেই কৃষকের পাটের একটি বড় অংশ লাভ করে মধ্যস্বত্বভোগীরা। তারা কৃষকের কাছ থেকে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে পাট কিনে তা আরো উচ্চমূল্যে বড় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে প্রচুর মুনাফা লাভ করে।
ব্রিটিশ আমলে পাট ও পাটজাত দ্রব্যের আন্তর্জাতিক চাহিদা সামনে রেখে শাসকরা তৎকালীন বাংলার রাজধানী কলকাতা ও এর আশপাশে পাটকল গড়ে তোলে। অথচ তৎকালীন পূর্ববঙ্গ ছিল বৃহত্তর পাট উৎপাদনকারী অংশ। এ দেশে একটিও পাটকল তারা স্থাপন করেনি। ফলে এ বঙ্গের কৃষকের উৎপাদনের পাটে চলত কলকাতা ও তার আশপাশের পাটকলের তাঁত। সে সময়ও পাট ও পাটজাত দ্রব্য দিয়ে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে তা রফতানি হতো আন্তর্জাতিক বাজারে। এটিই ছিল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী প্রধান খাত। এই খাতটি পাটের বিকল্প বস্তু না আসা পর্যন্ত অত্যন্ত লাভজনক ছিল।
ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটার পর সাতচল্লিশ-উত্তর বাংলাদেশে ছোট-বড় বহু পাটকল স্থাপিত হয়। উপমহাদেশের বিখ্যাত আদমজী জুটমিল সাতচল্লিশ-উত্তর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। এর সঙ্গে পাট উৎপাদনকারী জেলাগুলোতে স্থাপিত মিলগুলোতে পূর্ণোদ্যমে কাজ শুরু হলে অর্থনীতিতে সূচিত হয় সাফল্যের ধারা। এ দেশে পাট উৎপাদনে ঘটে উল্লেখযোগ্য বিপ্লব। ১৯৬৯-৭০ সালে এ দেশে উৎপাদিত হয় ৭০ লাখ বেল পাট। বলতে গেলে আন্তর্জাতিক বাজারে পাট ও পাটজাত পণ্যের একচেটিয়া বাজার দখল করে পলিমাটির গড়া এ ভূমি।
এরপর এ দেশের পাটশিল্প ক্রমশ নিম্নমুখী হতে থাকে। আন্তর্জাতিক বাজারে পাটের বিকল্প নাইলন এবং প্লাস্টিক যেমন এ শিল্পকে আঘাত করে তেমনি এ শিল্পের বিষয়ে উদাসীনতা, সরকারিকরণের সুযোগে মিলগুলোতে ব্যাপক লুটপাট, পাট গুদামে পরিকল্পিত অগ্নিকা- ঘটতে থাকায় পাটশিল্প প্রায় পড়ে যায়। কিন্তু বিশ্ববাজারে পাট বা পাটজাত দ্রব্যের চাহিদা কমে এলেও বাজার একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। বাংলাদেশের পাট শিল্পে অব্যবস্থা বিরাজ করায় এ সুযোগকে কাজে লাগায় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত। তারা নতুন করে মিল-কারখানা তৈরি এবং পরিকল্পিত পাটের আবাদ করে সাফল্য লাভ করে। তারা পাট ও পাটজাত দ্রব্যের অভ্যন্তরীণ বাজার তৈরিতে সফল হয় এবং এতে ব্যাপক মুনাফা অর্জন করতে থাকে। অভ্যন্তরীণ বাজার চাহিদা মিটিয়েও তারা পাটজাতদ্রব্য বিদেশে সাফল্যজনকভাবে রফতানি করছে। অথচ পাশাপাশি দেশ হওয়া সত্ত্বেও আমাদের ঊর্ধ্বতন মহল এ বিষয়টিকে উদাহরণ হিসেবে গ্রহণ করে এ শিল্পের উজ্জীবন ঘটাতে চেষ্টা করেনি। উপরন্তু উপমহাদেশের বিখ্যাত আদমজী জুটমিলসহ বেশ কটি জুটমিল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, দক্ষ শ্রমিকদের বেকার করা হয়েছে। উল্লেখ্য, এ দেশের বৃহত্তর পাটকল আদমজী বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর কলকাতায় আরও চার-পাঁচটি মিল স্থাপিত হয়েছে, উৎপাদন হচ্ছে দিন-রাত। প্রতিবেশী একটি দেশ যদি পাটশিল্পের প্রতি এত মনোযোগ প্রদান করে তাহলে আমাদের দেশে কেন এ শিল্পের প্রতি এত অবজ্ঞা ও তাচ্ছিল্য প্রদর্শন করা হচ্ছে-এ প্রশ্ন তোলা সঙ্গত।
আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের দেশের পাট পণ্যের চাহিদা এখনো রয়েছে। এক সংবাদে প্রকাশ, গতমাসে থাইল্যান্ড সরকার বাংলাদেশ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টন পাটের ব্যাগ আমদানির জন্য কয়েক দফায় সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে যোগাযোগ করে ব্যর্থ হয়েছে। এর আগে জানা গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া এবং আমেরিকা আগাম টাকা দিয়েও পাটপণ্য ও পাটের সুতার অর্ডার করাতে পারেনি। গত বছর নাকি সিরিয়া ও আফ্রিকা এ দেশ থেকে পাটজাত পণ্য কিনতে চেয়ে বিফল হয়েছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছেÑ বাংলাদেশে পাটজাত দ্রব্যের উৎপাদন কমে যাওয়া। উল্লেখ্য, সিরিয়া, সুদান, ইরান, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশী মোটা চট, ছালা বা বস্তা এবং সিবিসির চাহিদা আছে। এ দেশগুলো এসব পণ্য বাংলাদেশ থেকে কিনতে আগ্রহী। বর্তমানে পাট শিল্পের অবস্থা নাকি এমন যে, এসব পণ্য পর্যাপ্ত পরিমাণে উৎপাদিত হচ্ছে না, ফলে এক দেশের কাছে এসব পণ্য বিক্রি করলে অন্য দেশে সরবরাহ করার মতো পণ্য আর থাকে না। এটা কি একটা যুক্তি হলো? শিল্প কি অবহেলার বিষয়?
পলিমাটির দেশের উৎপাদিত পাট দিয়ে পরিবেশবান্ধক অনেক কিছু তৈরি করা সম্ভব। যে বিশ্ব একদিন পাটকে পাশকাটিয়ে কৃত্রিম আঁশের দিকে ঝুঁকে পড়েছিল সেই বিশ্ব এখন কৃত্রিম আঁশের কুফল সম্পর্কে সচেতন হয়ে আবার পরিবেশবান্ধব পাটজাত পণ্যের দিকে ঝুঁকে আসছে। বিশ্বব্যাপী বাড়ছে এর চাহিদা। এ সময় বাংলাদেশের এ শিল্পকে রাশটেনে ধরার অর্থ হচ্ছে ইচ্ছা করে নিজেদের পিছিয়ে রাখা। বিশ্বব্যাপী পাট শিল্পের চাহিদা বাড়ছে বলে বাংলাদেশে ও পাটের বাজার আবার চাঙ্গা হয়ে উঠছে। গত দু’বছর বাংলাদেশের কৃষক পাটের মূল্য পেয়ে খুশি হয়েছেন। এখন দরকার আবার পাটশিল্পের পুনরুজ্জীবন ঘটানো। উল্লেখ্য, পাট দিয়ে কাপড়, ফিল্ম, কাগজ, জিন্সের কাপড় ছাড়াও আরও অনেক কিছু তৈরি হচ্ছে। এ সুযোগ হাতছাড়া করার সুযোগ নেই। পাট শিল্পকে চাঙ্গা করতে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এজন্য দরকার দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাহিদা অনুযায়ী পাট উৎপাদন করা, প্রচলিত চট, থলে, কার্পেট ও সিবিসির মানোন্নয়ন করা, এ শিল্পে যথাসময়ে প্রয়োজনীয় অর্থায়ন করা, চাহিদা অনুযায়ী পাটজাত দ্রব্য উৎপাদন, রফতানির পরিমাণ ও উৎপাদন মান বজায় রেখে বাজার সম্প্রসারণ ও চোরাচালান প্রতিরোধ, পাট উৎপাদনে কৃষককে উন্নতমানের পাটবীজ সরবরাহ ও কৃষি সহায়তা প্রদান করা। একই সঙ্গে এ শিল্পে অসন্তোষ ও দুর্নীতি দূর করতে হবে- বন্ধ পাটকলগুলো পুনরায় চালু করতে হবে। তবেই পাট হয়ে উঠবে আমাদের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি।
আমাদের উর্বরা ভূমির পাট এবং আমাদেরই কলকারখানায় উৎপাদিত পাটজাত দ্রব্যের সুনাম আবার তার হৃত গৌরব ফিরে পাক।

পাট, আবার সুদিন আসুক

১৯.০৫.০৯
ডেসটিনি ।। মকবুলা পারভীন।।

স্যার মোহাম্মদ আজিজুল হক ছিলেন একজন যশস্বী আইনবিদ, ১৯৩৭ সালের বঙ্গীয় প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য ও পরে স্পিকার, অবিভক্ত বাংলার শিক্ষামন্ত্রী, কলকাতা বিশ্ববিদ্যায়ের ভাইস চ্যান্সেলর এবং সি,আই,ই,কে,সি,এস,আই ও স্যার উপাধিপ্রাপ্ত। রাজনীতি ও সাহিত্যের ক্ষেত্রেও তাঁর ছিল অবাধ বিচরণ। এই যশস্বী ব্যক্তির প্রকাশিত বেশ কয়েকটি মূল্যবান বইয়ের অন্যতম হচ্ছে ‘দি ম্যান বিহাইন্ড দি প্লাউ।’
এই বইয়ের একটি অংশে বাংলাদেশের মাটি সম্পর্কে লেখা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ প্রধানত পলিমাটির দেশ। অসংখ্য নদী-নালা এই পলিমাটি বয়ে আনে। পাহাড়ে ও পাহাড়ি অঞ্চলে যখন বৃষ্টি হয়, তখন সেই পানি প্রবল বেগে নিচে নেমে আসে; সেই সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে মাটিও কেটে আসে। সমতল ভূমিতে আসার পর এই স্রোতধারাগুলো একত্রে মিলিত হয়ে নদীতে পরিণত হয়। সমতল ভূমিতে এই নদীর গতিমন্থর হয়ে যাওয়ায় বয়ে আনা মাটি তলদেশে ও দুই পাশে জমতে থাকে। তারপর সাগরে মিলিত হওয়ার সময় বদ্বীপ সৃষ্টি হয় এবং এইরূপে জমির পরিমাণ বেড়ে যায়। ... পানির এই স্রোতধারা নিজের গতিপথ সম্প্রসারণ ও ভরাট করে, কখনো গতি পরিবর্তন করে দ্বীপ সৃষ্টি করে, কখনো এক পাড় ভেঙে অন্য পাড় গড়ে তোলে। হাজার হাজার বছর যাবত এই প্রক্রিয়া চলে আসছে। বালু, কাদা, পলি, কাঁকর একত্রে জমে গিয়ে মাটি প্রস্তুত হয় এবং এক সময় হয়ত নতুন প্লাবন এসে সব ধুয়ে-মুছে নিয়ে যায়। ... এই ভাঙাগড়ার খেলা অনন্তকাল ধরে চলে আসছে। বাংলার মাটি এই ভাঙাগড়া ও গঠন পুনর্গঠনেরই ফল, তার উর্বরা শক্তির মূল উৎস হচ্ছে পলিমাটি।’
সাধারণভাবে বলা হয়, ‘মাছের রাজা ইলিশ।’ পদ্মা নদীর ইলিশ মাছের স্বাদ তুলনাহীন। এই মাছ নিয়ে গবেষণাকারীদের মত হচ্ছে, পদ্মার ইলিশের তুলনাহীন স্বাদের অন্যতম কারণ পদ্মার ভেসে বেড়ানো পলি। এই পলি খেয়েই নাকি ইলিশ সুস্বাদু হয়ে ওঠে। তেমনি একসময় বলা হতো, পাটের রাজা পূর্ববঙ্গ অর্থাৎ বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এই উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ পাট উৎপাদনে রেকর্ডও করেছে বারবার। কেন? গবেষকদের মতে, পাটের আবাদে জমির অধিক উর্বরা শক্তির প্রয়োজন হয়। বন্যার সময় নদীর পানিতে যে উর্বর পলিমাটি ভেসে আসে একমাত্র তার ফলেই পাট চাষ সম্ভব হতে পারে। ক্ষেত্র বিশেষে কোনো সার প্রয়োগেরও দরকার নেই।
বিশ্বে এরকম একটি ভূমির একমাত্র অধিকারী বাংলাদেশ। আবহাওয়া বৈরী আচরণ না করলে বাংলাদেশ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পাট উৎপাদনে সক্ষম।
ব্রিটিশ শাসিত ভারতে এক জরিপে জানা গিয়েছিল, বিহার, উড়িষ্যা, আসাম, কুচবিহার ও ত্রিপুরা রাজ্যে সামান্য কিছু চাষ হলেও মূলত পাটের আবাদ ছিল একচেটিয়া বাংলাদেশের। পৃথিবীর আর কোনো দেশে তখন পাটের আবাদ ছিল না কিন্তু পাট ও পাটজাত দ্রব্যের আন্তর্জাতিক চাহিদা ছিল। পাট খুব উপকারী এবং সস্তা হিসাবে তখনও গণ্য ছিল। এর কোনো বিকল্প ছিল না। এ সুযোগ কাজে লাগিয়েছিল ব্রিটিশরা। তারা অবিভক্ত ভারতে বহু পাটকল স্থাপন করেছিল। এ প্রসঙ্গে পরে আসছি।
বাংলাদেশের কৃষকরা প্রাচীনকাল থেকে পাটের আবাদ করে আসছে। ঘর-সংসারের কাজে যেমন পাটের প্রয়োজন তেমনি অর্থকরী ফসল হিসেবে তখনও এর মূল্য ছিল। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, খাদ্যের চাহিদা বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে ধানের আবাদী জমি বাকি রেখে কৃষক পাটের আবাদ করতেন। এরপরও পাটই একসময় ছিল প্রধান অর্থকরী ফসল। ব্রিটিশ এবং পাকিস্তান আমলে কৃষকরা মুনাফার জন্য ফসল আবাদ করতেন না। সারা বছরের খাদ্য রেখে উদ্বৃত্ত ফসল সম্পন্ন কৃষকরা বাজারে বিক্রি করতেন। কিন্তু পাটের ক্ষেত্রে কথাটা খাটে না। বছরে একবার নগদ টাকা পাওয়ার প্রয়োজনে কৃষক পাট চাষে মনোযোগী হতেন। তবে সব সময় একটা সমস্যা ছিল বা আছে তা হচ্ছে, কৃষক পাট লাগিয়ে উৎপান খরচ, মজুরি খরচ করে কেটে, ধুয়ে, শুকিয়ে, বাজারে বিক্রি করে যে অর্থ আয় করতেন তাতে উৎপাদন ও অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে খুব একটা লাভ থাকত না বা থাকে না। তবে কমবেশি আজও কৃষক পাট বিক্রি করার টাকায় মেয়ের বিয়ে, যৌতুক, পরিবারের নগদ অর্থের চাহিদা ও মহাজনী ঋণ শোধসহ অন্যান্য প্রয়োজন পূরণ করার স্বপ্ন দেখেন।
বহুকাল আগে থেকেই কৃষকের পাটের একটি বড় অংশ লাভ করে মধ্যস্বত্বভোগীরা। তারা কৃষকের কাছ থেকে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে পাট কিনে তা আরো উচ্চমূল্যে বড় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে প্রচুর মুনাফা লাভ করে।
ব্রিটিশ আমলে পাট ও পাটজাত দ্রব্যের আন্তর্জাতিক চাহিদা সামনে রেখে শাসকরা তৎকালীন বাংলার রাজধানী কলকাতা ও এর আশপাশে পাটকল গড়ে তোলে। অথচ তৎকালীন পূর্ববঙ্গ ছিল বৃহত্তর পাট উৎপাদনকারী অংশ। এ দেশে একটিও পাটকল তারা স্থাপন করেনি। ফলে এ বঙ্গের কৃষকের উৎপাদনের পাটে চলত কলকাতা ও তার আশপাশের পাটকলের তাঁত। সে সময়ও পাট ও পাটজাত দ্রব্য দিয়ে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে তা রফতানি হতো আন্তর্জাতিক বাজারে। এটিই ছিল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী প্রধান খাত। এই খাতটি পাটের বিকল্প বস্তু না আসা পর্যন্ত অত্যন্ত লাভজনক ছিল।
ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটার পর সাতচল্লিশ-উত্তর বাংলাদেশে ছোট-বড় বহু পাটকল স্থাপিত হয়। উপমহাদেশের বিখ্যাত আদমজী জুটমিল সাতচল্লিশ-উত্তর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। এর সঙ্গে পাট উৎপাদনকারী জেলাগুলোতে স্থাপিত মিলগুলোতে পূর্ণোদ্যমে কাজ শুরু হলে অর্থনীতিতে সূচিত হয় সাফল্যের ধারা। এ দেশে পাট উৎপাদনে ঘটে উল্লেখযোগ্য বিপ্লব। ১৯৬৯-৭০ সালে এ দেশে উৎপাদিত হয় ৭০ লাখ বেল পাট। বলতে গেলে আন্তর্জাতিক বাজারে পাট ও পাটজাত পণ্যের একচেটিয়া বাজার দখল করে পলিমাটির গড়া এ ভূমি।
এরপর এ দেশের পাটশিল্প ক্রমশ নিম্নমুখী হতে থাকে। আন্তর্জাতিক বাজারে পাটের বিকল্প নাইলন এবং প্লাস্টিক যেমন এ শিল্পকে আঘাত করে তেমনি এ শিল্পের বিষয়ে উদাসীনতা, সরকারিকরণের সুযোগে মিলগুলোতে ব্যাপক লুটপাট, পাট গুদামে পরিকল্পিত অগ্নিকা- ঘটতে থাকায় পাটশিল্প প্রায় পড়ে যায়। কিন্তু বিশ্ববাজারে পাট বা পাটজাত দ্রব্যের চাহিদা কমে এলেও বাজার একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। বাংলাদেশের পাট শিল্পে অব্যবস্থা বিরাজ করায় এ সুযোগকে কাজে লাগায় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত। তারা নতুন করে মিল-কারখানা তৈরি এবং পরিকল্পিত পাটের আবাদ করে সাফল্য লাভ করে। তারা পাট ও পাটজাত দ্রব্যের অভ্যন্তরীণ বাজার তৈরিতে সফল হয় এবং এতে ব্যাপক মুনাফা অর্জন করতে থাকে। অভ্যন্তরীণ বাজার চাহিদা মিটিয়েও তারা পাটজাতদ্রব্য বিদেশে সাফল্যজনকভাবে রফতানি করছে। অথচ পাশাপাশি দেশ হওয়া সত্ত্বেও আমাদের ঊর্ধ্বতন মহল এ বিষয়টিকে উদাহরণ হিসেবে গ্রহণ করে এ শিল্পের উজ্জীবন ঘটাতে চেষ্টা করেনি। উপরন্তু উপমহাদেশের বিখ্যাত আদমজী জুটমিলসহ বেশ কটি জুটমিল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, দক্ষ শ্রমিকদের বেকার করা হয়েছে। উল্লেখ্য, এ দেশের বৃহত্তর পাটকল আদমজী বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর কলকাতায় আরও চার-পাঁচটি মিল স্থাপিত হয়েছে, উৎপাদন হচ্ছে দিন-রাত। প্রতিবেশী একটি দেশ যদি পাটশিল্পের প্রতি এত মনোযোগ প্রদান করে তাহলে আমাদের দেশে কেন এ শিল্পের প্রতি এত অবজ্ঞা ও তাচ্ছিল্য প্রদর্শন করা হচ্ছে-এ প্রশ্ন তোলা সঙ্গত।
আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের দেশের পাট পণ্যের চাহিদা এখনো রয়েছে। এক সংবাদে প্রকাশ, গতমাসে থাইল্যান্ড সরকার বাংলাদেশ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টন পাটের ব্যাগ আমদানির জন্য কয়েক দফায় সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে যোগাযোগ করে ব্যর্থ হয়েছে। এর আগে জানা গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া এবং আমেরিকা আগাম টাকা দিয়েও পাটপণ্য ও পাটের সুতার অর্ডার করাতে পারেনি। গত বছর নাকি সিরিয়া ও আফ্রিকা এ দেশ থেকে পাটজাত পণ্য কিনতে চেয়ে বিফল হয়েছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছেÑ বাংলাদেশে পাটজাত দ্রব্যের উৎপাদন কমে যাওয়া। উল্লেখ্য, সিরিয়া, সুদান, ইরান, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশী মোটা চট, ছালা বা বস্তা এবং সিবিসির চাহিদা আছে। এ দেশগুলো এসব পণ্য বাংলাদেশ থেকে কিনতে আগ্রহী। বর্তমানে পাট শিল্পের অবস্থা নাকি এমন যে, এসব পণ্য পর্যাপ্ত পরিমাণে উৎপাদিত হচ্ছে না, ফলে এক দেশের কাছে এসব পণ্য বিক্রি করলে অন্য দেশে সরবরাহ করার মতো পণ্য আর থাকে না। এটা কি একটা যুক্তি হলো? শিল্প কি অবহেলার বিষয়?
পলিমাটির দেশের উৎপাদিত পাট দিয়ে পরিবেশবান্ধক অনেক কিছু তৈরি করা সম্ভব। যে বিশ্ব একদিন পাটকে পাশকাটিয়ে কৃত্রিম আঁশের দিকে ঝুঁকে পড়েছিল সেই বিশ্ব এখন কৃত্রিম আঁশের কুফল সম্পর্কে সচেতন হয়ে আবার পরিবেশবান্ধব পাটজাত পণ্যের দিকে ঝুঁকে আসছে। বিশ্বব্যাপী বাড়ছে এর চাহিদা। এ সময় বাংলাদেশের এ শিল্পকে রাশটেনে ধরার অর্থ হচ্ছে ইচ্ছা করে নিজেদের পিছিয়ে রাখা। বিশ্বব্যাপী পাট শিল্পের চাহিদা বাড়ছে বলে বাংলাদেশে ও পাটের বাজার আবার চাঙ্গা হয়ে উঠছে। গত দু’বছর বাংলাদেশের কৃষক পাটের মূল্য পেয়ে খুশি হয়েছেন। এখন দরকার আবার পাটশিল্পের পুনরুজ্জীবন ঘটানো। উল্লেখ্য, পাট দিয়ে কাপড়, ফিল্ম, কাগজ, জিন্সের কাপড় ছাড়াও আরও অনেক কিছু তৈরি হচ্ছে। এ সুযোগ হাতছাড়া করার সুযোগ নেই। পাট শিল্পকে চাঙ্গা করতে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এজন্য দরকার দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাহিদা অনুযায়ী পাট উৎপাদন করা, প্রচলিত চট, থলে, কার্পেট ও সিবিসির মানোন্নয়ন করা, এ শিল্পে যথাসময়ে প্রয়োজনীয় অর্থায়ন করা, চাহিদা অনুযায়ী পাটজাত দ্রব্য উৎপাদন, রফতানির পরিমাণ ও উৎপাদন মান বজায় রেখে বাজার সম্প্রসারণ ও চোরাচালান প্রতিরোধ, পাট উৎপাদনে কৃষককে উন্নতমানের পাটবীজ সরবরাহ ও কৃষি সহায়তা প্রদান করা। একই সঙ্গে এ শিল্পে অসন্তোষ ও দুর্নীতি দূর করতে হবে- বন্ধ পাটকলগুলো পুনরায় চালু করতে হবে। তবেই পাট হয়ে উঠবে আমাদের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি।
আমাদের উর্বরা ভূমির পাট এবং আমাদেরই কলকারখানায় উৎপাদিত পাটজাত দ্রব্যের সুনাম আবার তার হৃত গৌরব ফিরে পাক।

গুমাই বিলের ১০ লাখ বর্গা চাষীর স্বপ্নভঙ্গ গোলা ভরেছে মহাজনের

১৯.০৫.০৯
ইত্তেফাক ।। চট্টগ্রাম অফিস ।।

গুমাই বিলের বর্গা চাষী হরিপদের ৪ একর জমিতে এবার ধান হয়েছে সাড়ে ৩২ মণ। নিজের কুঁড়ে ঘরটা তাই এবার টিন দিয়ে বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। কিন্তু পাকা ধান কাটার আগেই ভেঙ্গে গেছে হরিপদের স্বপ্ন। কারণ জমির ব্যবহারিক দাম ও একর প্রতি উৎপাদন খরচ ধান কাটার পর পরই বুঝে নিয়েছেন তার মহাজন। ৪ একর জমিতে উৎপাদিত সাড়ে ৩২ মণ ধান থেকে মহাজনের ঘরে গেছে ৩০ মণ ধান। আর ছয় মাসের শ্রম হিসাবে হরিপদ পেয়েছে আড়াই মণ, সরকারি হিসাবে যার দাম মাত্র ১ হাজার ৪০০ টাকা!

মহাজনের হিসাব ও সরকারি দামের সঙ্গে তাল মিলাতে গিয়ে চট্টগ্রামে হরিপদের মত স্বপ্নভঙ্গের কষ্টে পুড়ছে প্রায় ১০ লাখ বর্গা চাষী। কারণ সব হিসাব চুকিয়ে যে ধান আছে কৃষকের ভাগে, তা দিয়ে সংসারের খরপোষ হবে না আগামী ছয় মাস। আবার ধান বিক্রি করলেও পাওয়া যাচ্ছে না ন্যায্য দাম। সরকার প্রতি কেজি ধান ১৪ টাকা ও চাল কিনছে ২২ টাকা দরে।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক আবুল কালাম আজাদ ইত্তেফাককে বলেন, ‘চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাঁচ জেলায় ২ লাখ ৩২ হাজার ৮১৫ হেক্টর জমিতে এবার বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৯ লাখ ৩৮ হাজার ২৭০ মেট্রিক টন। ১৬ লাখ ৬৩ হাজার কৃষক পরিবারের অক্লান্ত পরিশ্রমে প্রত্যাশিত টার্গেট অর্জিত হয়েছে আমাদের। কিন্তু বাম্পার ফলন হলেও মহাজনদের চাহিদা মিটিয়ে বেশি কিছু অবশিষ্ট থাকছে না বর্গাচাষীদের ভাগ্যে।

দেশের অন্যতম বৃহত্তম শস্য ভান্ডার গুমাই বিলের কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এবার তাদের প্রতি একর জমিতে হাইব্রিড ধান হয়েছে ৮ মণ থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৮ মণ পর্যন্ত। আর উচ্চ ফলনশীল (উফশী) ধান হয়েছে একরপ্রতি সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ৬ মণ। স্থানীয় হিসাবে প্রতি কানি জমিতে ১২৫ থেকে ১৩০ আড়ি (১০ কেজিতে এক আড়ি) হাইব্রিড ধান হয়েছে। আর উফশী ধান হয়েছে কানিপ্রতি ৯০ থেকে ১০০ আড়ি পর্যন্ত। প্রতি কানি জমিতে এই ফসল পেতে সার, কীটনাশক, সেচ ও রোপণসহ বিভিন্ন খাতে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছে কৃষককে। আর একরপ্রতি (আড়াই কানিতে এক একর) এই খরচের পরিমাণ গড়ে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা।

মহাজনদের কানিপ্রতি ১২০ থেকে ১২৫ আড়ি হাইব্রিড ধান দেয়ার শর্তে বোরো ধানের জমি বর্গা চাষ করেছে এ অঞ্চলের কৃষকরা। নিজের জমি না থাকায় হতদরিদ্র কৃষকরা এমন কঠিন শর্তে অন্যের জমিতে ধান ফলিয়েছে। চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে, এ অঞ্চলে এমন হতদরিদ্র কৃষকের সংখ্যা মোট কৃষকের প্রায় ৮০ শতাংশ। উল্লেখ্য, এ অঞ্চলের ৫ জেলায় ১৬ লাখ ৬৩ হাজার ১১২ জন কৃষকের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় আছে ৬ লাখ ১৯ হাজার, কক্সবাজারে আছে ১ লাখ ৭৭ হাজার, নোয়াখালীতে আছে ৩ লাখ ৭৬ হাজার, ফেনীতে আছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ও লক্ষ্মীপুরে আছে ৩ লাখ সাড়ে ৮ হাজার কৃষি পরিবার।

গুমাই বিলের বর্গা চাষী জীবন নাথ ইত্তেফাক প্রতিনিধিকে বলেন, সাত কানি জমি বর্গা নিয়ে ধান রোপণ করেছি গত পৌষ মাসের শেষে। গত পাঁচ মাস শ্রম দিয়ে এসব জমি থেকে যে ধান পেয়েছি তার ৮০ শতাংশই দিতে হচ্ছে জমির মালিককে। অবশিষ্ট যে ধান আছে তা সরকারি দামে বিক্রি করলে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পাবো আমি। গত পাঁচ মাস জমিতে শ্রম না দিয়ে যদি অন্যকিছু করতাম তবে সাত সদস্যের পরিবারটা অন্তত আরো ভালভাবে চলতো।

রাঙ্গুনিয়া উপজেলার গুমাই বিলে এবার বোরো আবাদ হয়েছে ২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। ৯ হাজার ৫৫৫ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এসব জমি চাষ করে প্রায় ১০ হাজার কৃষক। স্থানীয় ভারপ্রাপ্ত উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা একরাম উদ্দিনের তথ্যানুযায়ী, এদের মধ্যে ৮ হাজার কৃষকেরই নিজস্ব জমি নেই। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে ফসল ফলিয়েছে তারা। তাই পুরো বিলে এবার বাম্পার ফলন হলেও সুখের দেখা পায়নি বর্গা চাষীরা। মহাজনের ধান বুঝিয়ে দিতে গিয়ে নিজের গোলা ভরাতে পারেনি এসব বর্গা চাষী।

গুমাই বিলের ১০ লাখ বর্গা চাষীর স্বপ্নভঙ্গ ।। গোলা ভরেছে মহাজনের

১৯.০৫.০৯

ইত্তেফাক ।। চট্টগ্রাম অফিস ।।

গুমাই বিলের বর্গা চাষী হরিপদের ৪ একর জমিতে এবার ধান হয়েছে সাড়ে ৩২ মণ। নিজের কুঁড়ে ঘরটা তাই এবার টিন দিয়ে বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। কিন্তু পাকা ধান কাটার আগেই ভেঙ্গে গেছে হরিপদের স্বপ্ন। কারণ জমির ব্যবহারিক দাম ও একর প্রতি উৎপাদন খরচ ধান কাটার পর পরই বুঝে নিয়েছেন তার মহাজন। ৪ একর জমিতে উৎপাদিত সাড়ে ৩২ মণ ধান থেকে মহাজনের ঘরে গেছে ৩০ মণ ধান। আর ছয় মাসের শ্রম হিসাবে হরিপদ পেয়েছে আড়াই মণ, সরকারি হিসাবে যার দাম মাত্র ১ হাজার ৪০০ টাকা!

মহাজনের হিসাব ও সরকারি দামের সঙ্গে তাল মিলাতে গিয়ে চট্টগ্রামে হরিপদের মত স্বপ্নভঙ্গের কষ্টে পুড়ছে প্রায় ১০ লাখ বর্গা চাষী। কারণ সব হিসাব চুকিয়ে যে ধান আছে কৃষকের ভাগে, তা দিয়ে সংসারের খরপোষ হবে না আগামী ছয় মাস। আবার ধান বিক্রি করলেও পাওয়া যাচ্ছে না ন্যায্য দাম। সরকার প্রতি কেজি ধান ১৪ টাকা ও চাল কিনছে ২২ টাকা দরে।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক আবুল কালাম আজাদ ইত্তেফাককে বলেন, ‘চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাঁচ জেলায় ২ লাখ ৩২ হাজার ৮১৫ হেক্টর জমিতে এবার বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৯ লাখ ৩৮ হাজার ২৭০ মেট্রিক টন। ১৬ লাখ ৬৩ হাজার কৃষক পরিবারের অক্লান্ত পরিশ্রমে প্রত্যাশিত টার্গেট অর্জিত হয়েছে আমাদের। কিন্তু বাম্পার ফলন হলেও মহাজনদের চাহিদা মিটিয়ে বেশি কিছু অবশিষ্ট থাকছে না বর্গাচাষীদের ভাগ্যে।

দেশের অন্যতম বৃহত্তম শস্য ভান্ডার গুমাই বিলের কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এবার তাদের প্রতি একর জমিতে হাইব্রিড ধান হয়েছে ৮ মণ থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৮ মণ পর্যন্ত। আর উচ্চ ফলনশীল (উফশী) ধান হয়েছে একরপ্রতি সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ৬ মণ। স্থানীয় হিসাবে প্রতি কানি জমিতে ১২৫ থেকে ১৩০ আড়ি (১০ কেজিতে এক আড়ি) হাইব্রিড ধান হয়েছে। আর উফশী ধান হয়েছে কানিপ্রতি ৯০ থেকে ১০০ আড়ি পর্যন্ত। প্রতি কানি জমিতে এই ফসল পেতে সার, কীটনাশক, সেচ ও রোপণসহ বিভিন্ন খাতে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছে কৃষককে। আর একরপ্রতি (আড়াই কানিতে এক একর) এই খরচের পরিমাণ গড়ে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা।

মহাজনদের কানিপ্রতি ১২০ থেকে ১২৫ আড়ি হাইব্রিড ধান দেয়ার শর্তে বোরো ধানের জমি বর্গা চাষ করেছে এ অঞ্চলের কৃষকরা। নিজের জমি না থাকায় হতদরিদ্র কৃষকরা এমন কঠিন শর্তে অন্যের জমিতে ধান ফলিয়েছে। চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে, এ অঞ্চলে এমন হতদরিদ্র কৃষকের সংখ্যা মোট কৃষকের প্রায় ৮০ শতাংশ। উল্লেখ্য, এ অঞ্চলের ৫ জেলায় ১৬ লাখ ৬৩ হাজার ১১২ জন কৃষকের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় আছে ৬ লাখ ১৯ হাজার, কক্সবাজারে আছে ১ লাখ ৭৭ হাজার, নোয়াখালীতে আছে ৩ লাখ ৭৬ হাজার, ফেনীতে আছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ও লক্ষ্মীপুরে আছে ৩ লাখ সাড়ে ৮ হাজার কৃষি পরিবার।

গুমাই বিলের বর্গা চাষী জীবন নাথ ইত্তেফাক প্রতিনিধিকে বলেন, সাত কানি জমি বর্গা নিয়ে ধান রোপণ করেছি গত পৌষ মাসের শেষে। গত পাঁচ মাস শ্রম দিয়ে এসব জমি থেকে যে ধান পেয়েছি তার ৮০ শতাংশই দিতে হচ্ছে জমির মালিককে। অবশিষ্ট যে ধান আছে তা সরকারি দামে বিক্রি করলে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পাবো আমি। গত পাঁচ মাস জমিতে শ্রম না দিয়ে যদি অন্যকিছু করতাম তবে সাত সদস্যের পরিবারটা অন্তত আরো ভালভাবে চলতো।

রাঙ্গুনিয়া উপজেলার গুমাই বিলে এবার বোরো আবাদ হয়েছে ২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। ৯ হাজার ৫৫৫ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এসব জমি চাষ করে প্রায় ১০ হাজার কৃষক। স্থানীয় ভারপ্রাপ্ত উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা একরাম উদ্দিনের তথ্যানুযায়ী, এদের মধ্যে ৮ হাজার কৃষকেরই নিজস্ব জমি নেই। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে ফসল ফলিয়েছে তারা। তাই পুরো বিলে এবার বাম্পার ফলন হলেও সুখের দেখা পায়নি বর্গা চাষীরা। মহাজনের ধান বুঝিয়ে দিতে গিয়ে নিজের গোলা ভরাতে পারেনি এসব বর্গা চাষী।

Monday, May 18, 2009

বেতাগীতে তরমুজের বাম্পার ফলন

১৮.০৫.০৯

।। ডেসটিনি ।। বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি
বেতাগীতে এই প্রথম তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে বিক্রির জন্য গাড়ি ভরে প্রথমবারের মতো বাজারে নিয়ে আসছে চাষিরা। তরমুজ চাষে ভাগ্য ফিরছে বেতাগীর কয়েকশ কৃষকের। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এবার উন্নত জাতের সুস্বাদু ফ্যাংভও তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। ক্রমান্বয়ে কৃষকদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তরমুজ চাষ। মাত্র কয়েক বছরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভাবনীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। অল্প সময়ে বেশি লাভবান হওয়ায় তরমুজ চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। তরমুজ চাষ করে বেশি লাভবান হওয়ায় অন্য ফসলের আবাদ ছেড়ে এলাকার কৃষকরা ঝুঁকে পড়েছেন তরমুজ চাষে। খরচ কম ও লাভ বেশি হওয়ায় প্রতি বছরই তরমুজ চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। উপজেলার আমড়াগাছিয়া, বাসন্ডা, বিবিচিনি, ফুলতলা, কদমতলা, চান্দখালী, মোকামিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে আগের তুলনায় বর্তমানে তরমুজ চাষ এলাকায় সাড়া জাগিয়েছে। তরমুজ চাষে খরচ কম, লাভ বেশি হওয়ায় অনেক কৃষকই তরমুজ চাষে আগ্রহী হচ্ছে। বাসন্ডা গ্রামের ধীরেন ম-ল জানান এক একর জমিতে তরমুজ চাষ করে অনেক বেশি লাভবান হয়েছেন। যা বিগত বছরের চেয়ে রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ঝিলবুনিয়া গ্রামের ইউপি সদস্য আলাউদ্দিন আকাশের ক্ষেতে গিয়ে দেখা গেছে ৫ হাজার টাকা খরচ করে প্রায় ৩০ হাজার টাকা মূল্যের তরমুজ ফলিয়েছে। চাষিরা জানান উন্নত জাতের তরমুজ চাষ করে সুস্বাদু তরমুজ হিসেবে বেতাগীতে পরিচয় লাভ করছে।

উলিপুরে ধান নিয়েবিপাকে কৃষক

১৮.০৫.০৯

।। ডেসটিনি ।। উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
সরকারিভাবে সারাদেশে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হলেও জেলার উলিপুরে এখনো শুরু হয়নি। সরকার ধান-চালের মূল্য নির্ধারণ করে দিলেও কৃষকরা এর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ অবস্থায় লাভবান হচ্ছে স্থানীয় ফড়িয়া ও মজুমদাররা। এদিকে শ্রমিক সংকটের কারণে একর প্রতি ৩ থেকে সাড়ে তিনি হাজার টাকা দিয়েও শ্রমিক পাচ্ছে না কৃষকরা। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, শ্রমিক ও অর্থ সংকটের কারণে ক্ষেতের ধান কাটাতে না পেরে মহা ফাঁপড়ে পড়েছেন কৃষকরা। অপরদিকে টাকার অভাবে অনেক কৃষক কম দামে ধান বিক্রি করেও টাকা সংগ্রহ করতে পারছে না। সঠিক মূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করার সব উদ্যোগ যেন কোনোভাবে কাজে আসছে না। উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে ধান বিক্রি করার কারণে কৃষকের লোকসান গুনতে হচ্ছে। ফলে এ অবস্থায় কৃষকের নবান্নের উৎসব যেন ফিকে হয়ে যাচ্ছে। তথ্য মতে, গত মৌসুমে যেসব ফড়িয়া ও মজুমদার বেশি দামে ধান কিনে মজুদ করে রেখেছিল ওইসব মজুদ ধান এবারে গুদামে নেয়ার চেষ্টা চলছে। এ কারণেই অনেক ব্যবসায়ী চলতি মৌসুমের বোরো ধান কিনতে আগ্রহী হচ্ছে না।
উলিপুর উপজেলার খাদ্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ৪৬৪ মে. টন ধান ও মিল মালিকদের কাছ থকে ১ হাজার ২০ মে. টন চাল সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ অভিযান সফল করতে গত ৪ মে ক্রয় সংক্রান্ত কমিটির সভা হলেও এখন পর্যন্ত ধান চাল সংগ্রহ করতে পারেনি খাদ্যবিভাগ। কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে ২০ হাজার ৩৮৪ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড, উফশী ও স্থানীয় জাতের ধান চাষ করা হয়। কিন্তু গত মৌসুমে ধানের দাম বেশি হওয়ায় উপজেলায় ২ হাজার ৮৫৯ হেক্টর বেশি জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে। যার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৮৭ হাজার ৩১৫ মে. টন। কিন্তু বিদ্যুৎচালিত ১ হাজার ৪৩৭টি গভীর ও অগভীর নলকূপের আওতায় ৯ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ উৎপাদন কম হবে। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে উৎপাদন কম হওয়ায় ওইসব কৃষক আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।