Thursday, March 5, 2009

জলবায়ু পরির্বতনের কুফল রোধে কৃষি ও বনায়ন!

ইত্তেফাক ।। মাজহার মিলন

আফ্রিকার প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা টেকসই কৃষিব্যবস্থা এবং বনায়নের মাধ্যমে জলবায়ু পরবির্তনের সাথে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে এবং এর ফলে সম্ভাব্য কু-প্রভাবের মোকাবিলা করতে সক্ষমÑ পোলান্ডের পোজনানে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলন (ঈঙচ ১৪) -এর আলোচনা সভায় এ তথ্য দেয়া হয়েছে। আফ্রিকার দেশগুলোর সা¤প্রতিক নেয়া পদক্ষেপের ওপর আলোচনায় বিষয়টি উঠে আসে। আফ্রিকার জলবায়ু পরিবর্তন সমস্যার সমাধানে নেয়া এই সমন্বিত উদ্যোগ পর্যালোচনা করতে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল আহ্বান করা হয়েছে এই সভায়। প্রতিনিধিদল আফ্রিকান কৃষি এবং বনায়নের মাধ্যমে সেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে সীমিত করার প্রক্রিয়াটি পর্যবেক্ষণ করবে।

পূর্ব ও দক্ষিণ আফ্রিকার একক সাধারণ বাজার (ঈঙগঊঝঅ)-র মহাসচিব সিনডিসো নগুয়েনা জানান, “বায়ুমণ্ডলে কার্বন ছাড়ার জন্য দায়ী বিশ্ববাজারের শীতল বাণিজ্য থেকে আফ্রিকা ইতোমধ্যেই বেড়িয়ে এসেছে।” আফ্রিকার জলবায়ু সমস্যার সমাধান বিষয়ে নেয়া উদ্যোগে বায়ো-কার্বনের বিস্তার সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে যাতে বনায়ন, বন উজারীকরণ, কৃষি-বনায়ন, প্রাকৃতিক পুনরুৎপাদন প্রক্রিয়া, জমির উর্বরতা ফিরিয়ে আনা, ভূমিধ্বস কমানো এবং ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে কোপেনহেগেনে জলবায়ু পরিবর্তনের কুফল রোধে কৃষি বিষয়ক চুক্তির অন্যান্য ধারাগুলো উলে¬খ করা হয়েছে।

“আমরা আমাদের গরিব কৃষকদের জলবায়ু পরিবর্তনের কুফল রোধে নেয়া পদক্ষেপগুলোর সাথে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছি এবং তারা তাতে সাড়া দিয়েছেÑ আমরা তাদের এই মানসিকতাকে সম্মান জানাই” সম্মেলনের পর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে কথাগুলো বলেন খাদ্য, কৃষি এবং প্রাকৃতিক সম্পদ বিষয়ক নীতিমালা বিশে¬ষণ নেটওয়ার্কের (ঋঅঘজচঅঘ) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং আফ্রিকান সিভিল সোসাইটি সংস্থার প্রধান আইনজ্ঞ ড. লিন্ডিওয়ে মাজেলে সিবান্দা। তিনি ইতোমধ্যেই তাদের বক্তব্য এবং কার্যক্রম আফ্রিকান জলবায়ু পরিবর্তন মডেলে তুলে ধরেছেন।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বর্তমানে একটি বহুল আলোচিত ইস্যু। সারা পৃথিবী বিশেষ করে এশিয়া এবং আফ্রিকার দেশগুলোর কৃষি এবং জীবনব্যবস্থা এতে বড় ধরনের হুমকির মধ্যে রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করেন। এ অবস্থার জন্য উন্নত বিশ্বের দেশগুলো প্রধানত দায়ী হলেও তাদের ঝুঁকি এক্ষেত্রে কম। তাদের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা তাদের জীবনব্যস্থায় জলবায়ু পরিবর্তনের তেমন প্রভাব ফেলতে পারবে না। এশিয়া, আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর দরিদ্র কৃষিজীবি মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় শিকার হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই এই প্রভাব শুরু হয়েছে অনেক অঞ্চলেই। আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় পর্যায়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া না হলে শঙ্কার মাত্রা আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশংকা করছেন বিজ্ঞানীরা। এক্ষেত্রে আফ্রিকার নেয়া এ পদক্ষেপ পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলেও মডেল হততে পারে বলে তারা মনে করেন।

কমছে আবাদি জমি বাড়ছে খাদ্য সংকট

ইত্তেফাক।। সাহারা তুষার

পৃথিবীর জনসংখ্যা বাড়ছে দ্রুত। বাড়ছে বিশাল এ জনসংখ্যার খাদ্যের চাহিদা। সে তুলনায় পিছিয়ে আছে খাদ্য উৎপাদন। আমরা পিছিয়ে রয়েছি খাদ্য উৎপাদনের সাথে তাল মিলিয়ে জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে। তাই বারবার সম্মুখীন হচ্ছি খাদ্য সংকটের। লোকসংখ্যার তুলনায় কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা অপ্রতুল থাকার কারণে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশে হয়েছে খাদ্য রায়ট। বেশি দিন আগের কথা নয়Ñ সংবাদ সংস্থা এএফপি এপ্রিল, ২০০৮ -এর প্রথম সপ্তাহে জানিয়েছেÑ বিশ্বে ৩৩টিরও বেশি দেশে তীব্র খাদ্য সংকট চলছে, যার ফলে বিরাজ করছে গণ-অসন্তোষ। খবরটি গারডিয়ান-এ’ও প্রকাশিত হয়েছিল। হাইতিতে গত বছর খাদ্যের জন্য দাঙ্গা হয়ে মারা গেছে ১০ জন। মিশরসহ কয়েকটি দেশের সরকারি খাদ্য গুদামে হয়েছে লুটপাট।

বিশ্বের ৩৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশও আছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে কৃষি বিজ্ঞানীদের চেষ্টার কমতি নেই। সেরা জাতের বীজ উদ্ভাবন, রোগবালাই প্রতিরোধ, খরা, বন্যা ইত্যাদি দুর্যোগ সহনশীল ও উচ্চ ফলনশীল ফসল আবিষ্কারের চেষ্টা চলছে নিরন্তর। বিশ্ব বিবেককে ভাবিয়ে তুলেছে আজকের জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা। পাশাপাশি শিল্পকারখানা আর বসতবাড়ি নির্মাণে গ্রাস করছে আবাদি জমি। প্রতিদিন দেশে প্রায় ৩২০ হেক্টর কৃষি জমি চলে যাচ্ছে অ-কৃষি কর্মকাণ্ডে। যাতে করে ১৫ লক্ষ মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা হারাচ্ছে। দু’তিন ফসলি জমিতে মাটি ভরাট করে গড়ে উঠছে ঘরবাড়ি ও শিল্পকারখানা। বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির ফলে ফসল উৎপাদন ব্যবস্থা প্রশংসার দাবীদার হলেও ১৫ কোটি মানুষের মধ্যে প্রায় ১ কোটি মানুষ দিনে তিনবেলা খেতে পারে না। তারা নীরব দুর্ভিক্ষের শিকার।

প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে বাসগৃহ-দালানকোঠা, রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট। নগরায়নের ছোবলে কৃষি বিষাক্রান্ত হয়ে উঠছে। কোথাও আবাসন ও শিল্পকারখানা। মানুষসৃষ্ট এ বিপর্যয় এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ Ñএ দুটোই আমাদের আগামীর খাদ্য সংকটকে ক্রমান্বয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় নিয়ে চলেছে। তিন ফসলি জমি হারিয়ে যাচ্ছে। ভূমি জরিপ বিভাগের তথ্য মতে, ১৯৭১ সালে আমাদের আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ২ কোটি ১৭ লাখ হেক্টর। যা ১৯৮৬ সালে এসে দাঁড়ায় মাত্র ৮১ লাখ ৫৮ হাজার হেক্টরে এবং ২০০৩ সালে কমে দাঁড়ায় ৭০ লাখ ৮৭ হাজার হেক্টরে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটি ৯০ লাখ। ২০০০ সালে ১৩ কোটি এবং বর্তমানে ১৫ কোটিতে এসে দাঁড়িয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, গত ২০ বছরে গ্রামাঞ্চলে জনসংখ্যা বেড়েছে ২ কোটি ৬০ লাখ। এর মধ্যে ২ কোটি ৪০ লাখই নিরঙ্কুশ দরিদ্র। বর্তমানে মোট জনসংখ্যা ১১ কোটি-ই গ্রামে বাস করে।

দেশের কৃষি জমি মৌলিকভাবে উৎকৃষ্টমানের, তবে বর্তমানে এর মান নানাস্থানে নানাভাবে কমছে। জনপ্রতি আবাদি জমির পরিমাণ পৃথিবীর অন্যান্য জনবহুল ও কৃষি প্রধান দেশের চেয়ে কম। কৃষি জমি কমে গেলে অবশিষ্ট জমির উপর চাপ বাড়তে থাকে। রাস্তাঘাট, আবাসন ও শিল্পকারখানার ফলে কৃষি জমি দিন দিন অ-কৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। এতে বন্যার পানি নিষ্কাশনের পথে অন্তরায় সৃষ্টি হচ্ছে। ফসলি জমি জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছে। কৃষক হচ্ছে আর্থিকভাক্ষে ক্ষতিগ্রস্থ। এতে ভূমিক্ষয় বৃদ্ধি পাচ্ছে, জমির উর্বরা শক্তি কমবার এবং রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার বেড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। সব মিলিয়ে কৃষি জমি কমে চলেছে এবং অবশিষ্ট জমির উপর চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে স্বাভাবিকভাবেই।

ইট-ভাটার সংখ্যা বাড়ছে এবং সে কারণেও নষ্ট হচ্ছে আবাদি জমি। ইট-ভাটার জন্য সাধারণত ব্যবহার করা হয় আবাদি জমির উপরের উর্বর মাটি। যে মাটি কৃষি আবাদের জন্য খুবই উপযোগী। একবার আবাদি জমির উপরের মাটি কেটে নিয়ে গেলে অন্তত ১৫ বছর সময় লাগে তা আগের অবস্থায় ফিরে আসতে। এর ফলে উৎপাদন হয় ব্যাহত।

নদী ভাঙ্গনেও কৃষক হারাচ্ছে আবাদি জমি।

কলকারখানার দূষিত বর্জ্যরে কারণে কারখানাসংলগ্ন আবাদি জমির উর্বরা শক্তি ও ফসল উৎপাদন ব্যবস্থা হ্রাস পাচ্ছে। কৃষক বাধ্য হয়ে তার জমি অন্যের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে। সেখানে আবারও গড়ে উঠছে কলকারখানা।

২০০৫-০৬ সালে ফসলি জমির পরিমাণ ছিল ৭৮.০৯ লাখ হেক্টর এবং দেশের ভূমির ৫৩ ভাগ আবাদি, ৪ভাগ পতিত জমি এবং আবাদযোগ্য অনাবাদি জমির পরিমাণ ২ ভাগ। ফসলের নিবিড়তা ১৭৭% ধরে হিসেব করা হয় যে, মোট ১৩৭.৪৩ লাখ হেক্টর জমি ছিল ফসলের আবাদি ভূমি।

ধানের মনোকালচার, রাসায়নিক সার ব্যবহার এবং জমির অর্গানিক উপাদান হ্রাসের কারণে ভূমি উর্বতা কমছে। এছাড়া রয়েছে ভূমির অসম বন্টন। বিবিএস (বাংলাদেশ পরিসংখ্যান অধিদফতর) -এর উপাত্ত অনুযায়ী বাংলাদেশে ৪৫% পরিবার ভূমিহীন। এক্ষেত্রে ভূমি ব্যবহার নীতি, শস্য উৎপাদনের নিরিখে ম্যাপিং এবং ভূমি প্রশাসনে পল¬ী দারিদ্র বিমোচন গুরুত্ব পাওয়া সবিশেষ প্রয়োজন। সরকারি নীতিমালায় খাসজমি ও পানির উৎপাদনমুখী ব্যবহার প্রাধান্য পেতে পারে। বাংলাদেশে ৩০টি কৃষি ইকোলজিক্যাল জোন আছে। যেখানে বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদিত হয়। ভূমির যথোপযুক্ত ব্যবহারের উদ্দেশ্যে ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনা (যা ১৯টি উপকূলীয় এবং ২টি সমতল জেলার জন্য করা হয়েছে), পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় কর্তৃক উপকূলীয় ইকোসিস্টেম স্টাডি এবং ঝজউও কর্তৃক প্রণীত খাদ্য নিরাপত্তার নীতিসমূহ বাস্তবায়ন করা গেলে ভূমির আরও উৎপাদনমুখী ব্যবহার সম্ভব। মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইন্সটিটিউট ৫০টি উপজেলার ভূমি ব্যবহারের নির্দেশিকা হালনাগাদ করেছে এবং ভূমি ম্যাপিংসহ ৪০টি উপজেলার জন্য নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে। আগামী ৫ বছরে তারা ৪৬০ উপজেলার জন্য এ ধরনের নির্দেশিকা হালনাগাদ করার কথা।

কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রদর্শনী খামার এবং কৃষকের জমির উৎপাদনের ব্যবধান খুবই বেশি। বাংলাদেশে অন্যান্য দেশের তুলনায় ফসল, পশুপালন, মৎস্য সকল ক্ষেত্রেই উৎপাদনের হার কম। বাংলাদেশে চাউলের উৎপাদন হার চীন, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার তুলনায় যথাক্রমে ৪৫%, ২০% ও ২৫% কম। বাংলাদেশের মোট জমির পরিমাণ ১৪৮.৪০ লক্ষ হেক্টর যার মধ্যে আবাদি জমির পরিমাণ ৮২.৯০ লক্ষ হেক্টর, পতিত জমি ৭.৩০ লক্ষ হেক্টর এবং বনের পরিমাণ ২৫.৯৭ লক্ষ হেক্টর। উলে¬খ্য, দেশের ৮০.৩১ লক্ষ হেক্টর নীট ফসলি জমির মধ্যে এক ফসলি, দু’ ফসলি এবং তিন ফসলি জমির পরিমাণ যথাক্রমে ৩৫. ৮০%, ৫১.৪৫% এবং ১২.৭৫%। এক ফসলি জমিকে দু’তিন ফসলি জমিতে রূপান্তরের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি সম্ভব যা দেশের মোট ২৪৫.২০ লক্ষ মে. টন খাদ্য শস্যের চাহিদা পূরণে উলে¬খযোগ্য অবদান রাখবে। (তথ্যসূত্র : বিবিএস ২০০৭)

অধিক ফসল-অধিক উৎপাদন আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন। এটি একটি সূত্র হিসেবে ধরে এগোতে হবে বাংলাদেশকে। খাদ্যশস্য, অর্থকারী ফসল ও অন্যান্য রবিশস্য উৎপাদনের মাধ্যমে দেশ স্বনির্ভর হতে পারে। বাংলাদেশে প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা থেকে দারিদ্র নিরসন কৌশলপত্র সর্বত্রই খাদ্য নিরাপত্তার কথা বলা হয়েছে। চার ধরনের ফসল যেমনÑ ধান, ডাল, ভোজ্য তেল এবং মশলা নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা সংস্থা রাজস্ব বাজেট যে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে তা ২০১১ সালের ভেতর বাস্তবায়ন হওয়ার কথা। তাতে উৎপাদন ৮.৫% থেকে ২৫% এ বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশে সেচ ব্যবস্থার কার্যকারিতা এবং দক্ষতা বৃদ্ধিরও সুযোগ আছে। দক্ষিণ এশিয়ায় সেচ ব্যবস্থার কার্যকারিতার দিকে বাংলাদেশ রয়েছে পেছনের কাতারে। এটি ভারতে ৪৯%, পাকিস্তানে ৪৯%, নেপালে ৫৮%, মায়ানমারে ৩৯% এবং বাংলাদেশে ৩০ %। বর্তমানে বাংলাদেশে তা ৪০%। সারফেস ওয়াটার এবং কৃষি খামারে পানি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তা অনেক বাড়ানোর সুযোগ আছে। পানি সম্পদ, কৃষি স¤প্রসারণ বিভাগ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ, বিএডিসি, বরেন্দ্র বহুমুখী কর্তৃপক্ষ চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে ২০০৬ সালে সেচাধীন ৫৪ লাখ হেক্টর থেকে ২০১১ সালে ৬৫ লাখ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেয়া সম্ভব হবে।

খাদ্য নিরাপত্তার প্রশ্নে কৃষি কিংবা খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিই যখন মূল প্রস্তাবনা, তখন বছরে ৮০ হাজার হেক্টর জমি অর্থাৎ ১% হারে আবাদি জমি হারানোর পরিণতি কি হতে পারে- তা সহজেই অনুমেয়। Ñসাহারা তুষার

কম দাম পেলে উৎপাদন ব্যাহত হবে

ইত্তেফাক ।। মোঃ সিরাজ সিকদার

কৃষির উন্নতি হয়েছে। কৃষকের আজ অবধি কোন উন্নতি হয়নি। আদিকাল থেকে কৃষক যেখানে ছিল সেখানেই আছে। কৃষক পরিবার রোগে চিকিৎসা পাচ্ছে না। ঠিকমত কাপড় পাচ্ছে না। ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে পারছে না। কৃষকের মাথার উপর চালা নেই। চব্বিশ ঘন্টা তারা রোদে পোড়ে, বৃষ্টিতে ভেজে। ভাবতে অবাক লাগে, যে কৃষক এত কষ্ট করে ফসল উৎপাদন করে সে কৃষকই ক্ষুধায় অন্ন পায় না, উপোস থাকে ছেলেমেয়ে নিয়ে। কিন্তু কেন?

আমরা প্রথম থেকে দেখে আসছিÑ কৃষক নানাভাবে শোষিত হচ্ছে নানা দিক দিয়ে। কখনও সার পাচ্ছে না, কখনও বীজ পাচ্ছে না, কখনও বালাইনাশক পাচ্ছে না। ঠিক সময় পানি পাচ্ছে না।

আমাদের দেশের অধিকাংশ কৃষক ভূমিহীন। তারা অপরের জমি চাষ করে। ভূ-মালিকরা নানাভাবে তাদের শোষন করে। ফলে তারা তাদের অধিকার থেকেও বঞ্চিত।

ইদানিং আরও একটা বিষয় কৃষককে ভাবিয়ে তুলেছে। সেটি হলÑ কৃষকের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য। কৃষক যে খরচে ফসল উৎপাদন করছে তার চেয়ে কম দামে তাকে বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে। বিশেষ করে ধান। একমণ ধান উৎপাদন খরচ যদি ৫০০ টাকা হয় তাহলে তা ৪০০ টাকা বিক্রি করলে কৃষক অন্য দিকে ঝুঁকবে। কদিন আগে দেখতে পেলামÑ কুষ্টিয়ায় ধানী জমিতে ব্যাপকভাবে হচ্ছে তামাকের চাষ। হৃদয়ে মাটি ও মানুষের মাধ্যমে দেখেছিলামÑ মুন্সীগঞ্জের কৃষকরা আলুচাষ বাদ দিয়ে তামাক চাষের দিকে এগোচ্ছে। অমারা খবরের কাগজে দেখতে পাচ্ছিÑ এদেশেরই কৃষক অধিক মূল্য পেতে পপি চাষ করছে।

এসব কিসের আলামত?

আমাদের দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। আমরা সাধারণত বাইরে থেকে ঘাটতি থাকা খাদ্য আমদানি করি। কিন্তু ফসলের দাম এভাবে কমতে থাকলে কৃষক তার ধানী জমিতে বাধ্য হয়ে অন্য ফসল চাষ করবে। এর ফলে খাদ্য সংকট আরও দেখা দেবে। শুধু নির্দিষ্ট কোন জেলা নয়। সব জেলাতেই একই অবস্থা। বাংলাদেশের সব কৃষকই নানাভাবে একই অভিযোগ করে আসছে। আমি একজন সচেতন কৃষক হিসেবে বলছিÑ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সারের দাম, শ্রমিকের মজুরী, বীজ, সেচ সবকিছু দিয়ে কৃষকের যে টাকা খরচ হয় তাও উঠে আসে না বর্তমান ধার্যকৃত মূল্যে। একই জমিতে কৃষক ধান আবাদ করে ৫০০ টাকা পেলে তামাক আবাদ করে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা পাবে। তাহলে কৃষক কি করবে? অবশ্যই তামাক চাষ বা অন্যকিছু চাষের দিকে ঝুঁকবে।

এই প্রক্রিয়া চলতে থাকলে আমাদের দেশে খাদ্য উৎপাদন আরও কমে যাবে। তামাক বা এই জাতীয় ফসল উৎপাদনের ফলে জমির উর্বরা শক্তি কমে যাবে। এক সময় দেখা যাবে উৎপাদনমুখী ওই জমি একদিন পতিত জমিতে পরিণত হবে।

আধুনিক বিজ্ঞানের কল্যাণে দিন দিন কৃষির উন্নতি হয়েছে। সাধারণ ধান থেকে হাইব্রিড ধান এসেছে। উৎপাদন বেড়েছে। তবে বীজগুলোর সত্ত্ব এখনও কৃষকের হাতে দেয়া হয়নি। কৃষকের হাতে হাইব্রিড ধানের সত্ত্ব ছেড়ে দিলে আমাদের দেশে আরও বেশি ফসল উৎপাদন হবে বলে আশা করছি। কৃষি উপরকরণসহ কৃষকের নানাবিধ সমস্যায় সরকার এগিয়ে আসলে অদূর ভবিষ্যতে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে এ আশা অলিক কল্পনা নয়।

-মোঃ সিরাজ সিকদার

কৃষক ও কৃষক সংগঠক, বাগেরহাট

ঠাকুরগাঁওয়ে চিকন ও সুগন্ধি ধানের আবাদ বাড়ছে

০১.০৩.০৯
ইত্তেফাক ।। ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা ।।

ঠাকুরগাঁও জেলার জমি উঁচু ও বেলে দোঁআশ হলেও সেচ সুবিধা বৃদ্ধি পাওয়ায় সর্বত্র বোরা চাষ চলছে পুরোদমে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কম হওয়ায় এখানে বোরো ধানের ক্ষতির আশংকাও কম। জেলায় এবার রেকর্ড পরিমাণ জমিতে অর্থাৎ ৫৭ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৩ হাজার ১৮৮ মে. টন (চালের আকারে)। গত কয়েক বছরের মতো এবারও জেলায় চিকন ও সুগন্ধি জাতের ধানের আবাদ চলছে। সার ও ডিজেলের দাম কমে যাওয়ায় এবং বীজতলার চারার অবস্থা ভালো হওয়ায় কৃষকেরা এবার তেমন সমস্যায় পড়েনি। গত মৌসুমে সারের অভাবে কৃষকেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। তবে এবার গভীর নলকূপের আওতাধীন কৃষকেরা বিদ্যুৎ সংকটের আশংকায় চিন্তিত।

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল হায়াত জানান, জেলায় গভীর নলকুপ রয়েছে ১১৪৬ টি । স্বল্প উত্তোলক পাম্প রয়েছে ৯ টি এবং কৃষকের কাছে অগভীর নলকূপ আছে ৩৯ হাজার ৮৬২ টি। বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ-২ জানান, জেলার ১১৪৬ টি গভীর নলকূপের মধ্যে তারা ১০৬৬ টি নিয়ন্ত্রণ করছেন। কৃষি বিভাগ জানায়, সব সেচ যন্ত্রই চলছে না। ৫৭ হাজার ২০০ হেক্টরের মধ্যে পানি কমে যাওয়ায় নদীর দুই পাশে, খাল, বিল ও পুকুরে চাষ হবে আনুমানিক ৫ হাজার হেক্টরে। শীর্ণকায় নদীর বুকে, পানি কমে যাওয়ায় খাল, বিল ও পুকুরে বোরো চাষের জন্য কৃষকেরা উঠে পড়ে লেগেছে।

জেলার টাংগন, সেনুয়া, সুক, নাগর, কুলিক ইত্যাদি নদীতে এখন পানি কম। মাঝের শীর্ণ পানির স্রোত বাদ দিয়ে বাকী অংশে বোরো চাষ চলছে। টাংগন নদীর বুকে ধান চাষরত কয়েকজন কৃষক জানান, তাদের জমি নেই। তাই তারা এখানে ধান চাষ করছেন। এখানে সেচ খরচ নেই, সারেরও তেমন প্রয়োজন হয় না। হঠাৎ বন্যা না হলে ফসল ঘরে তুলতে পারবেন তারা। কৃষি বিভাগ জানায়, ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেলায় ৩২ হাজার ৪১৫ হেক্টরে বোরো চাষ হয়েছে। বোরো চাষ চলবে ১৫ মার্চ পর্যন্ত।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল হায়াত জানান, ধান চাষ যেভাবে এগিয়ে চলছে তাতে ১৫ মার্চের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়। তিনি জানান, ফুলের পরাগায়নের সময় তাপমাত্রা কম হলে অর্থাৎ ১৫ থেকে ১৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস কম হলে ধান চিটা হয়ে যায়। আবার ৩৮ ডিগ্রীর বেশি হলেও ধান চিটা হয়। ঠাকুরগাঁওয়ে সাধারণত দেরিতে বোরো চাষ হয়। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় অর্থাৎ পরাগায়নের সময় এখানে তাপমাত্রা কেমন হবে তার উপর নির্ভর করবে ফলন। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ২ লাখ ২৩ হাজার ১৮৮ মে.টন ফলন (চালের আকারে) পাওয়া যাবে। ব্রি ধান-২৮, ব্রি ধান-২৯, পূর্বাচি জাতের ধানের ফলন অন্যান্য জাতের চেয়ে বেশি, হেক্টর প্রতি ৬ থেকে ৭ মে.টন। তাছাড়া এই জেলায় বেশ কিছু জমিতে চিকন ও সুগন্ধি জাতের ধান চাষ হচ্ছে। রাণীশংকৈল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফণী ভূষণ রায় জানান, এই উপজেলায় প্রায় একশ’ হেক্টরে চিকন ও সুগন্ধি ধানের আবাদ হচ্ছে।

বিভিন্ন স্থানে বোরো চাষ ব্যাহত হওয়ার আশংকা লোডশেডিং

২৮.০২.০৯
ইত্তেফাক ।। উখিয়া (কক্সবাজার) সংবাদদাতা ।।

কক্সবাজারের সবচেয়ে বিদ্যুৎ নির্ভর উখিয়ার সেচ কার্য মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমান সময়ে চাহিদার এক তৃতীয়াংশও বিদ্যুৎ সরবরাহ মিলছে না। যা পাওয়া যায় সে সময়ে ঘন্টায় ন্যূনতম ১৫/১৮ বার বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিভাগের চালুকৃত আন্ডার ফ্রি কোয়েন্সির নতুন যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ উখিয়ার গ্রাহক সাধারণ।

উখিয়ার বিদ্যুৎ গ্রাহকদের জীবনে লোডশেডিং নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার হলেও চলতি শুষ্ক মওসুমে মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং এ জনজীবনে অসহ্য যন্ত্রণায় পরিণত হয়েছে। কক্সবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উখিয়া জোনাল অফিসের তথ্য মতে, পিক আওয়ারে এখানে সাড়ে পাঁচ মেগাওয়াটের মত এবং অফ পিক আওয়ারে সাড়ে চার মেগাওয়াটের মত বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম নূরুল হোসাইন জানান, পিকআওয়ারে দুই থেকে আড়াই এবং অফ পিক আওয়ারে এক থেকে দেড় মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ মিললেও তা নিরবচ্ছিন্ন নয়। এ প্রেক্ষিতে গ্রাহকদের উপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে আন্ডার ফ্রি কোয়েন্সি নামের অন্য যন্ত্রণা। বিদ্যুৎ সরবরাহকালে ঘন্টায় ১৫/১৮ বার বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার ফলে সেচ পাম্পসহ ইলেকট্রনিক্স পণ্য সামগ্রী নষ্ট হচ্ছে। আন্ডার ফ্রি কোয়েন্সি সম্পর্কে ডিজিএম জানান, বিভিন্ন গ্রীড সঞ্চালন লাইনে বিদ্যুতের সমতা আনতে এ ব্যবস্থা চালু হলেও অতিষ্ঠ গ্রাহকদের গাল-মন্দ, হুমকির কারণে অধিকাংশ সময় মোবাইল ফোন বন্ধ রাখতে হয়। উখিয়ায় ১২শ সেচ পাম্পে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হয়। এছাড়াও বিক্ষুব্ধ গ্রাহকরা যে কোন সময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর আশংকার কথা উল্লেখ করে দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নতি ও গ্রাহক যন্ত্রণার ফ্রি কোয়েন্সি পদ্ধতি প্রত্যাহার করতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী বরাবরে পত্র প্রেরণ করা হলেও পরিস্থিতির কোন উন্নতি ঘটছে না।

কৃষি বিভাগের উখিয়া সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোঃ সৈয়দ নূর জানান, চলতি বোরো চাষ, উৎপাদন, সেচ প্রভৃতি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে তারা চিন্তিত। চলতি বোরো মওসুমে সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টর চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও বিদ্যুৎ সরবরাহের অবস্থা দেখে পাঁচ হাজার হেক্টরও পুরোপুরি চাষাবাদ করা যাচ্ছে না। চাষকৃত বোরোতে প্রয়োজনীয় সেচ দিতে না পারায় অনেক কৃষক ফলনের আশা ছেড়ে দিচ্ছে। অনুরূপভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রভাব পড়ছে ক্ষুদ্র শিল্প কারখানা অফিস পাড়া, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষার্থীদের লেখাপড়ার এবং উখিয়ায় অবস্থিত ২৫টি চিংড়ি পোনা উৎপাদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান মারাত্মক লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছে বলে জানা গেছে।

নাঙ্গলকোট (কুমিল্লা) সংবাদদাতা ।। কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে পল্লী বিদ্যুতের লোডশোডিং চরম আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিন বিদ্যুৎ আসাযাওয়ার ভেল্কিবাজীতে জনসাধারণ অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। গড়ে প্রতিদিন ৬/৭ ঘন্টা লোডশেডিং থাকে। সন্ধ্যার সাথে সাথে বিদ্যুৎ চলে গেলে আর আসার খবর থাকে না। বিদ্যুতের অভাবে কৃষকদের ইরি বুরো আবাদ চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যুৎ না থাকায় নিয়মিত সেচ দিতে না পারার কারণে কৃষকও পাম্প মালিকদের মধ্যে প্রতিনিয়ত ঝগড়া বিবাদের ঘটনা ঘটছে। এছাড়া এসএসসি দাখিল ও অন্যান্য পরীক্ষার্থীরা লেখা পড়া করতে পারছে না। ঘন ঘন বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার কারণে টিভি ফ্রিজসহ ইলেট্রনিক্স মালামাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

নাঙ্গলকোট পল্লী বিদ্যুৎ ডিজিএম রহমতে সোবহান জানান, নাঙ্গলকোটে ১০ মোগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে তার মধ্যে সরবরাহ পাওয়া যায় ২/৩ মেগাওয়াট।

মহাবেদপুর (নওগাঁ) সংবাদদাতা ।। নওগাঁর মহাদেবপুর বিদ্যুতের লোডশেডিং এর কারণে চলতি মৌসুমে ইরি বোরো চাষ চরম হুমকির মুখে পড়েছে। বিদু্যুতের অভাবে সেচ দিতে না পারায় অনেকস্থানে সদ্য রোপিত ইরি বোরোর চারা শুকিয়ে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ২৯ হাজার হেক্টর জমিতে ইরি বোরোর চাষ হয়েছে। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএসডি) ৫১৪টি বিদ্যুৎ চালিত গভীর নলকূল বসিয়েছে এসব ক্ষেতে পানি সেচের জন্য। কিন্তু দিনে রাতের বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ না থাকায় এই এলাকার সেচ ব্যবস্থা প্রায় ভেঙ্গে পড়েছে।

স্থানীয় কৃষকরা অভিযোগ করেন দিন-রাত ২৪ ঘন্টার মধ্যে ২-৩ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ থাকছে না। এতে সঠিকভাবে সেচ দিতে না পারায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশংকা করছেন সংশ্লিষ্ট কৃষকরা। এ ব্যাপারে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করা হলে বিদ্যুৎ অফিস থেকে জানানো হয় সেচ মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা ২৪ মেগাওয়াট সেখানে সরবরাহ রয়েছে মাত্র ৪ মেগাওয়াট। এ কারণে লোডশেডিং হচ্ছে।

বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিং ইরি-বোরো আবাদ হুমকির মুখে

২৬.০২.০৯
ইত্তেফাক ।।

বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে ইরি-বোরো আবাদ ব্যাহত হচ্ছে। কোনো কোনো এলাকার কৃষকরা জমিতে সেচ দিতে না পেরে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এসএসসি এবং দাখিল পরীক্ষার্থীরা। কল-কারখানার উৎপাদন হুমকির মুখে। খবর ইত্তেফাক সংবাদদাতাদের।

নেত্রকোনা: নেত্রকোনায় পর্যাপ্ত বিদ্যুতের অভাবে ইরি-বোরো জমিতে সেচের সমস্যা হচ্ছে বলে কৃষকরা অভিযোগ করেছে। বিশেষ করে পল্লী বিদ্যুতের লোডশেডিং বেশি হচ্ছে বলে জানা গেছে। নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোনায় প্রায় ৫ হাজার সেচ যন্ত্র পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ নিয়ে জমিতে পানি সরবরাহ করছে। এ বছর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি নতুন করে আরো ৭শ’ সেচ যন্ত্রে সংযোগ প্রদান করেছে। ফলে দিনদিন পল্লী বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ না পাওয়াতে অনেক সেচ যন্ত্র বন্ধ থাকছে।

নীলফামারী: নীলফামারী জেলার ৬টি উপজেলায় বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে ইরি-বোরো আবাদ নিয়ে কৃষকরা চিন্তিত হয়ে পড়েছে এবং মিল কল-কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে মারাত্মকভাবে। বিদ্যুৎ বিভাগ রাত আটটার পর শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখলেও কুলাতে পারছে না।

নীলফামারী জেলায় এবছর ইরি-বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৯ হাজার ১৬৩ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে উফশী ৪৫ হাজার ৬১৩ হেক্টর, হাইব্রিড ৩৩ হাজার ৫শ’ ও স্থানীয় জাতের ৫০ হাজার হেক্টর জমি রয়েছে। বীজতলা তৈরির পর প্রায় ৬০ ভাগ জমিতে চারা লাগানোর কাজ ইতিমধ্যে সমাপ্ত হয়েছে। কিন্তু বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং-এর কারণে কৃষকরা প্রয়োজন মত জমিতে পানি দিতে পারছে না। এ সময় ইরি-বোরো ক্ষেতের পানি খুব প্রয়োজন হলেও বিদ্যুতের লোডশেডিং, ভোল্টেজ আপ-ডাউনের কারণে কৃষকরা সেচ যন্ত্র চালাতে পারছেন না। এতে করে ইরি-বোরো আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে কিনা সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

সৈয়দপুর গ্রীড সূত্র জানায়, ৫০ থেকে ৫৫ মেগাওয়াট চাহিদার মাত্র ১৯ থেকে ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বরাদ্দ দেয়ায় গোটা নীলফামারী জেলা ছাড়াও নীলফামারী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, সৈয়দপুর, পার্বতীপুর, ফুলবাড়ি, বিরামপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, পাগলাপীর এলাকাসহ বৃহত্তর রংপুর-দিনাজপুর জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

কয়রা: পানির জন্য হাহাকার পড়ে গেছে কয়রা উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে। বোরো চাষীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। পানি নির্ভর বোরো আবাদের ভরা মৌসুম চললেও জমিতে প্রয়োজনমত এবং কোথাও কোথাও একেবারে পানি না পেয়ে চরম উৎকণ্ঠা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে কৃষকদের মাঝে। আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না বলে আশংকা দেখা দিয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি বছর কয়রা উপজেলাতে ৬ হাজার বিঘা জমিতে সেচ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করে সেচ কার্যক্রম শুরু করা হয়। চাষীরা শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি উঠাবে এ আশা করে তারা ঝুঁকি নিয়ে বোরো চাষ করে। হাজার হাজার বোরো চাষঅ এবার সেচ যন্ত্র মালিকদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। সেচ নির্ভর এ বোরো ধানের আবাদ করতে গিয়ে উচ্চ মূল্যে সেচ দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে কৃষকরা। সরকারিভাবে বৈদ্যুতিক সেচের ক্ষেত্রে ভর্তুকি দেয়া হলেও তার কোন সুবিধা ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীরা ভোগ করতে পারছে না। সেচযন্ত্র মালিকরা এবার সবকিছুর দাম বাড়ার অজুহাতে কৃষকদের নিকট থেকে ইচ্ছেমত অর্থ আদায় করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

কুমিল্লা উত্তর: বিদ্যুতের লোডশেডিং-এর কারণে কুমিল্লা উত্তরের দাউদকান্দি, হোমনা, চান্দিনা মুরাদনগর, দেবীদ্বার, মেঘনা ও তিতাস উপজেলার জনগণের চরম দুর্ভোগ হচ্ছে। এ এলাকায় সন্ধ্যার পর পরই বিদ্যুৎ চলে যায়। রাত ১০টার পর বিদ্যুৎ আসলেও সারা দিন এই আসে এই যায় খেলা চলে। ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজনের এলাকাটিতে ১৭/১৮ মেগাওয়াট ও পাওয়া যায় না। জাতীয় গ্রীড থেকে মাত্র ২/১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যায় বাকিটা পাওয়া যায় সামিট গ্রুপ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত কুটুম্বপুর পাওয়ার প্লাট থেকে।

সিঙ্গাইর: কৃষক এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে বোরো আবাদ নিয়ে। কিন্তু অব্যাহত লোডশেডিংয়ের কারণে বিপাকে পড়েছে এখানকার বোরো কৃষকরা। বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে সেচ সংকটে ইরি-বোরো চাষাবাদে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। প্রতিদিন ঘন্টার পর ঘন্টা লোডশেডিংয়ের কবলে পড়তে হয় পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহকদের। সন্ধ্যার পর বিদ্যুৎ চলে যাওয়া নিত্য-দিনের ঘটনা। দিনের বেলায়ও তাই। এ অবস্থা বিরাজ করতে থাকলে আবাদ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে কৃষক মনে করেন। অপরদিকে এসএসসি পরীক্ষার্থীরাও লেখাপড়া করতে পারছে না। ছাত্র-ছাত্রীদের লেখা-পড়ায় মারাত্মক অসুবিধা হচ্ছে।

আন্ডার ফ্রিকুয়েন্সীজনিত সমস্যার কারণে ঘন ঘন বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করে বলে জানা গেছে। আর এ কারণে সেচ গ্রাহকদের মোটরও নষ্ট হতে যাচ্ছে।

বাঞ্ছারামপুর: বাহ্মণবাড়িয়া জেলা বাঞ্ছারামপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বিদ্যুতের অব্যাহত লোডশেডিং-এ জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এতে ইরি-বোরো চাষ এবং এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষার্থীদের লেখাপড়া চরমভাবে বিঘিœত হচ্ছে। বিদ্যুতের কারণে উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে শতাধিক ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প-কারখানা, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান অচল হয়ে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ফলে ইরি ব্লকে রীতিমত পানি দিতে না পারায় কৃষকদের হাতে লাঞ্ছিত হচ্ছে ব্লক ম্যানেজাররা।

কালিয়াকৈর: উপজেলার নয়টি ইউনিযনের সর্বত্র বিদ্যুৎ সংকট চরমে পৌঁছেছে। ফলে কৃষকেরা কৃষিক্ষেত্রে নিয়মিত সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়েছেন। নাবী ইরি জমিগুলোতে বিদ্যুতের অভাবে যথাসময়ে ইরি রোপণ করা যাচ্ছে না। অনেক ইরি ক্ষেত সেচের অভাবে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। দিন-রাতের ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১০ থেকে ১৫ ঘন্টাই বিদ্যুৎবিহীন চলছে। ফলে কৃষিক্ষেত্র ছাড়াও শিল্প ক্ষেত্রেও নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে। উপজেলার প্রায় ৪শ’ শিল্প কারখানা বিদ্যুতের অভাবে একাধিক শিফট করতে পারছে না। ফলে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শফিপুর, মৌচাক, কালামপুর, ভান্নারা প্রভৃতি এলাকার শত শত শিল্প কারখানাগুলো। বিদ্যুতের অভাবে ছাত্রদের পড়াশুনার দারুণ ক্ষতি হচ্ছে। তাদের সামনে পরীক্ষা থাকায় প্রস্তুতি ঠিকমত নিতে পারছে না।

ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) ঃ সেচ মৌসুম শুরু হওয়ার সাথে সাথে নজীরবিহীন লোডশেডিংয়ের কারণে উপজেলার সর্বত্র বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে উপজেলার বোর আবাদ হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভার আওতায় এবার ১৯ হাজার হেক্টর জমিতে বোর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও অর্জিত হয়েছে ২০ হাজার ৯শ’ ৫০ হেক্টর। এবার এসব জমিতে সেচ দেয়ার জন্য মাঠে রয়েছে বিদ্যুৎচালিত গভীর নলকূপ ২শ’ ১৯টি। এলএলপি ৬টি এবং অগভীর নলকূপ ১ হাজার ৭০টি। কিন্তু বিদ্যুতের অভাবে কৃষকরা তাদের জমিতে পানি সেচ দিতে পারছে না।

কৃষকের দিন বদলই হলো আসল চ্যালেঞ্জ

২৫.০২.০৯
ইত্তেফাক ।। সম্পাদকীয়

ব্যক্তিগত কাজে সড়কপথে সিলেট যেতে হয়েছিল কয়েকদিন আগে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পার হওয়ার পর থেকে সিলেট অবধি রাস্তার দু’পাশে অনাবাদী পড়ে আছে বিপুল পরিমাণ কৃষি জমি। যেখানে এখন প্রান্তর জুড়ে উদীয়মান শস্যের সবুজ গালিচা থাকার কথা, সেখানে শুধুই ধূলি উড়ছে। বাংলাদেশে বোরোর এই ভরা মৌসুমে এমন দৃশ্য অভাবনীয় শুধু নয়, মর্মস্পর্শী এক গুরুতর অপরাধ বলেও মনে হয় আমার কাছে।

মনে পড়ে, মাত্র কয়েক মাস আগে খাদ্যের জন্য কী হাহাকারটাই না করেছি আমরা। দ্বিগুণ দাম দিয়েও বিশ্ববাজার থেকে চাল ও গম সংগ্রহ করতে গিয়ে কী দুর্ভোগটাই না পোহাতে হয়েছে আমাদের! সর্বোচ্চ ১৫ টাকা কেজির মোটা চাল রাতারাতি ৪০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছিল। পাথরে ভর্তি দুর্গন্ধযুক্ত সেই মোটা চাল কেনার জন্যও ঘন্টার পর ঘন্টা শত শত মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে দীর্ঘ লাইনে। অজানা এক আতঙ্ক ভর করেছিল সাধারণ মানুষের চোখেমুখে। ভর করারই কথা। পেটে ভাত না থাকলে বাকি সবই অসার।

আমাদের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সেই সংকট এখনও পুরোপুরি কাটেনি। বর্তমানে চাল, গম সহ বেশিরভাগ খাদ্যপণ্যের জন্যই আমরা বিদেশের উপর বিপজ্জনকভাবে নির্ভরশীল। বিপজ্জনক নানা কারণে। সবচেয়ে বড়ো কারণটি হলো, বিশ্ব বাজারের সামান্য অস্থিরতাও যে অভ্যন্তরীণ বাজারকে কতোটা বেসামাল করে দিতে পারে তা দেখার দুর্ভাগ্য আমাদের হয়েছে। তাই এই বিদেশনির্ভরতা পরিহার করা না গেলে খাদ্য নিরাপত্তাজনিত সংকট থেকে আমরা কখনই মুক্তি পাবো বলে মনে হয় না। প্রসঙ্গত বলা দরকার যে, আতঙ্কের সেই দিনগুলোতে পরপর বাম্পার ফলন উপহার দিয়ে কৃষকই আমাদের বাঁচিয়ে দিয়েছিল একটি সম্ভাব্য মহাদুর্যোগ থেকে।

তখন আমরা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করেছি যে, এ ধরনের খাদ্য-দুর্যোগ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলো খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন। আর খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের একমাত্র উপায় হলো কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি। তাই চির উপেক্ষিত বিবর্ণ কৃষিখাতের দিকে বিশেষ নজর দেওয়ার প্রসঙ্গটি সামনে এসেছিল। সামনে এসেছিল ততোধিক জরাজীর্ণ কৃষকের ভালো থাকার প্রসঙ্গও। দাতাদের অযাচিত পরামর্শ অগ্রাহ্য করে কৃষিখাতে ভর্তুকি ও বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে গড়ে উঠেছিল শক্তিশালী জনমত। আমাদের দাতামুখাপেক্ষী কৃষিবিমুখ নীতিনির্ধারকগণও তাদের ঝানু মাথা নেড়ে (সম্ভবত প্রথমবারের মতো) তাতে সায় দিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন কতোটা ঘটেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। গত বোরো মৌসুমেও সার ও সেচের জন্য কৃষককে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।

এবারের পরিস্থিতি একটু ভিন্ন। নবনির্বাচিত সরকার দায়িত্ব নেয়ার পরপরই সারের দাম অর্ধেক কমানো হয়েছে। সেচ-খরচের দিকে লক্ষ্য রেখে কমানো হয়েছে ডিজেলের দামও। সেচ কাজে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। নেয়া হয়েছে আরও কিছু ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে, কৃষির প্রতি দেড় মাস বয়েসী এ সরকারের যে বিশেষ মনোযোগ রয়েছে তা বোঝা যায়। এটা তাদের অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গীকারও বটে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ২০১৩ সালের মধ্যে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, এ লক্ষ্যে ‘কৃষি উপকরণে ভর্তুকি বৃদ্ধি, কৃষি উপকরণ সহজলভ্য করা ও কৃষিঋণের আওতা বৃদ্ধি এবং প্রাপ্তি সহজীকরণ করা হবে’।

সার্বিক পরিস্থিতিও নিঃসন্দেহে গত মৌসুমের চেয়ে ভালো। ডিজেল, বিদ্যুৎ ও সারের জন্য কৃষকের হাহাকার তুলনামূলকভাবে কম। তবে এই খাতে এতো বেশি উপেক্ষার অন্ধকার জমে আছে যে, তা সহজে দূর হবার নয়। কৃষিখাতের অমিত সম্ভাবনার বৃহদংশই যে এখনও অকর্ষিত পড়ে আছে তার প্রমাণের অভাব নেই। সেচ সংকটসহ নানা কারণে শুধু মৌলভীবাজার জেলায় দেড় লক্ষাধিক একর কৃষি জমি অনাবাদি থাকে শুষ্ক মৌসুমে। বৃহত্তর সিলেটেই শুধু নয়, দেশের সর্বত্রই দেখা যাবে এই চিত্র। এই ভাবে বছরের পর বছর ধরে লাখ লাখ একর কৃষি জমি অনাবাদি পড়ে আছে। কিন্তু দেখার কেউ নেই।

অথচ প্রতিবছর আমাদের জনসংখ্যা বাড়ছে ২০ লাখ করে, অন্যদিকে বর্ধিত জনসংখ্যা, নগরায়ন ও শিল্পায়নের চাপে কৃষি জমির পরিমাণ দ্রুত কমছে। একই সঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দূষণ ও রাসায়নিক সারের অপব্যবহারের কারণে কমে যাচ্ছে জমির উর্বরতা শক্তিও। তাই খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হলে এক ইঞ্চি কৃষি জমিও যাতে অনাবাদি পড়ে না থাকে তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। নজর দিতে হবে দেশের সর্বত্র সময়মতো মানসম্মত সার ও সেচসহ আনুষঙ্গিক কৃষি উপকরণ সরবরাহের দিকে। কমাতে হবে সার ও কীটনাশকের অপব্যবহার। সরকারের বাড়তি মনোযোগ সত্ত্বেও দিনাজপুরের ফুলবাড়িয়া, রংপুরের তিস্তা সেচ প্রকল্প, রাজশাহীর বরেন্দ্র সেচ প্রকল্প, নারায়ণগঞ্জের ডিএনডি প্রকল্প এবং জিকে প্রকল্পসহ দেশের বহুস্থানে সেচ সংকটের খবর প্রকাশিত হয়েছে সংবাদপত্রে। ইত্তেফাক প্রতিনিধি জানিয়েছেন যে, শুধু চট্টগ্রামেই দুই লাখ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়নি সেচের অভাবে।

আছে ডিজেল এবং সারের সংকটও। সারের সংকটই বেশি ভোগাচ্ছে কৃষকদেরকে। সংবাদপত্রের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, এবার সার পাচারের মাত্রা কম হলেও ভেজাল ও নিম্নমানের সারে সয়লাব হয়ে গেছে উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বহু এলাকা। ফলে কৃষকই শুধু প্রতারিত হচ্ছে না, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি উৎপাদনও। নষ্ট হচ্ছে জমির উর্বরা শক্তি। পাশাপাশি, কৃষির জন্য ভর্তুকিমূল্যে বরাদ্দকৃত ২৮ লাখ টন ইউরিয়ার মধ্যে ১২ লাখ টনই শিল্পসহ অকৃষি খাতে চলে যাওয়ার উদ্বেগজনক খবরও প্রকাশিত হয়েছে সংবাদপত্রে। সরকার এখন থেকে প্রস্তুতি নিলে আগামী মৌসুমে এই সমস্যাগুলোও অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব বলে আমি মনে করি। শুধু তাই নয়, সে-ক্ষেত্রে খাদ্য উৎপাদনে আমরা হয়তো স¡য়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে যেতে পারি।

তবে এ-ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জটি হলো কৃষকের দিন বদল করা। কৃষকের দিন বদলানো না গেলে সবই বিফলে যেতে বাধ্য। যুগ যুগ ধরে দেশের খাদ্য চাহিদার বৃহদংশের জোগান দিয়ে যাচ্ছে তারা। মূলত তাদের শ্রম ও ঘামের উপর ভর করে ইতোমধ্যে আমাদের দেশ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। কিন্তু কৃষকের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। পরিবর্তন যে হয়নি তা বোঝার জন্য কোন গবেষণার দরকার নেই। কৃষকের রোদে পোড়া বিবর্ণ মুখই তার অকাট্য প্রমাণ হিসাবে উত্থাপিত হতে পারে। কাঠফাটা রোদে কিংবা অঝোর বৃষ্টিতে উদয়াস্ত পরিশ্রম করে এখনও তাকে বছরের অর্ধেকটা সময় অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাতে হয়। সন্তানের শিক্ষা কিংবা চিকিৎসা এখনও তার নাগালের বাইরে। তার শরীরে এখনও শতচ্ছিন্ন জামা। দেশের মানুষকে পুষ্টি জোগাতে গিয়ে কৃষক নিজেই আজ ভয়াবহ অপুষ্টির শিকার। তার হাড়জিরজিরে দেহের দিকে তাকানো যায় না। কৃষকের চিরকালের এই দুঃখ ঘোচাতে হলে পাড়ি দিতে হবে আরও দীর্ঘ পথ।

কৃষকের সত্যিকারের দিনবদলের পথে বাধা অনেক। প্রধান বাধাটি হলো, জমির মালিকানা। যে-জমিতে কৃষক ফসল ফলায় সেটি তার নিজের নয়। আবার সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রবাসী মালিকদের এমন অনেক অনাবাদী জমি পড়ে আছে কেউ তার খোঁজও রাখেন না। আছে বেদখল হয়ে থাকা বিপুল পরিমাণ খাসজমিও। এখানে বড়ো ধরনের সংস্কার দরকার। এটাও ক্ষমতাসীন দলের একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী অঙ্গীকার। এ প্রসঙ্গে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বলা হয়েছে, ‘ভূমিহীনদের মধ্যে খাসজমি বিতরণ এবং খাস জলাশয় ও জলমহাল প্রকৃত মৎস্যজীবীদের বন্দোবস্ত দেয়া হবে। সমুদয় জমির রেকর্ড কম্পিউটারায়ন করা হবে এবং জমি, জলাশয়ের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও সামাজিক ন্যায়বিচারের লক্ষ্যে ভূমি সংস্কার কমিশন গঠন করা হবে’। ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি রেকর্ডের বহুপ্রতীক্ষিত কাজটি ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। ভূমি-বিরোধ, ভূমিহীনতা ও ভূমির জবর দখল রোধে এটি নিঃসন্দেহে খুবই দরকারি একটি পদক্ষেপ।

কৃষকের দিনবদলের জন্য দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হলো, তার আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এ ক্ষেত্রে কৃষি উপকরণে ভর্তুকির গুরুত্ব অপরিসীম। তবে সেই ভর্তুকি তারা কতোটুকু পাচ্ছে বা আদৌ পাচ্ছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তাই এমন একটি ‘মেকানিজম’ উদ্ভাবন করা দরকার যাতে ভর্তুকিটা সরাসরি কৃষক পায়। এ-ক্ষেত্রে সামাজিক নিরাপত্তামূলক বিভিন্ন কর্মসূচির পাশাপাশি কৃষক পরিবারগুলোকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ভর্তুকি দেয়ার বিষয়ও ভাবা যেতে পারে। দশ লাখ মানুষকে রেশনিং ব্যবস্থার আওতায় আনা এবং পোশাক ও চা শ্রমিকদের মধ্যে ভর্তুকি দিয়ে ১৮ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির সিদ্ধান্তটি নিঃসন্দেহে খুবই ভালো উদ্যোগ। পাশাপাশি, কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) ও টেস্ট রিলিফ (টিআর)সহ অন্যান্য সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচির আওতাও অবশ্যই বাড়ানো দরকার। সর্বোপরি, কৃষিতে বিনিয়োগের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলে ব্যাপক কর্মসংস্থানই পারে কৃষকের জীবন অনেকটাই বদলে দিতে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৭৫ শতাংশের বেশি মানুষ গ্রামীণ এলাকায় বাস করে। তাদের একটি বড়ো অংশ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার শিকার। তাদের এ নিরাপত্তাহীনতা মৌসুমি এবং স্থায়ী। আবার খাদ্য উৎপাদন বাড়লেই যে তাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে কিংবা খাদ্য নিরাপত্তাহীন মানুষের সংখ্যা কমে যাবে তাও নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন। বাম্পার ফলন হলেও আরেকটি ফসল আসার আগেই বর্গা চাষী, প্রান্তিক কৃষক এবং গ্রামীণ কৃষি-শ্রমিকের ঘরে ঠিকই খাবার ফুরিয়ে যায়। তখন খাবার কিনে খাওয়া ছাড়া তাদের উপায় থাকে না। এ সময়ে খাদ্যপণ্যের দামও থাকে চড়া। আর দাম কম থাকলেই বা কী? কিনে খেতে হলে যে টাকা দরকার সেটাই বা তারা পাবে কোথায়? তাই বাজারে খাদ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও প্রতিবছর মঙ্গার শিকারে পরিণত হতে হয় উত্তরাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষকে। কৃষির পাশাপাশি গ্রামে বছরব্যাপী বিকল্প কাজের বা উপার্জনের সুযোগ থাকলে এটা হতো না বা হতে পারতো না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাদ্য উৎপাদন বাড়লেও গ্রামাঞ্চলে গরিব মানুষের স্থায়ী উপার্জনের বর্ধিত সুযোগ সৃষ্টি করা না গেলে মানুষের খাদ্য কিনে খাবার সাধ্য থাকবে না। নীরব দুর্ভিক্ষ হানা দিতে থাকবে লাখ লাখ মানুষের দরোজায়। তাই জনগণের পূর্ণ খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন যেমন জরুরি, তেমনি জরুরি হলো কৃষকের সত্যিকারের দিনবদল। কৃষকের দিনবদল ছাড়া বাংলাদেশের দিনবদল সুদূরপরাহতই বলা যায়। প্রশ্ন হলো, কৃষকের দিন কি সত্যিই বদলাবে?

লোডশেডিংয়ে দিশেহারা সাটুরিয়ার কৃষক

২৫.০২.০৯
ডেসটিনি ।। সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলায় লোডশেডিংয়ে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। পুড়ে গেছে ৩ শতাধিক বিদ্যুৎচালিত মোটর। অনেকেই ইরি-বোরো মৌসুমে সেচের অভাবে আবাদি জমি চাষ করতে পারছেন না। কৃষকরা জানান, পতিত থাকবে প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমি। রোপণকৃত ইরি-বোরোর চারায় মড়ক ধরেছে। এলাকাবাসী জানান, মোমবাতি জ্বালিয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থীরা লেখাপড়া করছে। কারণ একটাইÑ বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সাটুরিয়া উপজেলায় ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ২২টি ব্লকে বিদ্যুৎচালিত গভীর ও অগভীর ২ হাজার ৬০০ নলকূপের মাধ্যমে বোরোর ইরির আবাদ হয়ে থাকে। কিন্তু ঘন ঘন বিদ্যুৎ যাওয়ার কারণে অনেকেই আবাদ করতে পারছেন না। যাও আবাদ করেছে, তাও সেচের অভাবে প্রচ- রোদের খড়তাপে ক্ষেতের মাটি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। ফলে ব্লকের বিদ্যুৎ বিদ্যুৎচালিত ইরি-বোরোর রোপণকৃত চারার মড়ক ধরেছে। আবাদ নিয়ে মোটরমালিক ও কৃষকরা মহাবিপদে পড়েছেন। অনেক মোটরমালিক প্রজেক্টের টাকা ফেরত দিয়ে দিচ্ছে। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় অনেক জমিই পতিত থাকবে।
সাটুরিয়া উপজেলার বিদ্যুৎচালিত ২২টি ব্লকের মধ্যে গোপালপুর ১৫, ছনকা ১৫, দিঘলিয়া ৬৩, দেলুয়া ৫২, বালিয়াটী ১২, হাজিপুর ১১, গর্জনা ২৭, নওগাঁও ৭০, দরগ্রাম ৫০, আকাশী ২, তিল্লি ৪, পারতিল্লি ১০, হরগজ উত্তর ৪০, হরগজ দক্ষিণ ৬৭, সাটুরিয়া ১৩, ধুল্লা ৫১, বৈতলা ২৩, ধানকোড়া ৫৬, কৈট্টা ৭, মহিষালোহা ৭০, ফুকুরহাটি ৫৮ ও জান্না ৬টি গভীর ও অগভীর নলকূপ রয়েছে। এ বছর ২২টি ব্লকে ইরি-বোরোর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৬ হাজার ৬০০ হেক্টর। কিন্তু প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা জানান, যেভাবে বিদ্যুতের লোডশেডিং তা অর্জন করা সম্ভব নয়। দিনরাত মিলে বিদ্যুৎ থাকে মাত্র এক থেকে দেড় ঘণ্টা। সাটুরিয়া উপজেলায় এ মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ৮০ মেগাওয়াট। সেখানে পাচ্ছে ১৫ থেকে ২০ ওয়ার্ড।
বৈলতলা বাছট গ্রামের কৃষক মো. তোফাজ্জল হোসেন জানান, এক বিঘা জমিতে ইরি-বোরোর আবাদ করতে খরচ হয় শুরুতেই ৪ হাজার টাকা। এবার আমি প্রায় ১০ বিঘা জমি বিদ্যুৎচালিত মোটরে আবাদ করেছি। আমার শুরুতেই খরচ হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। খরচের টাকা উঠবে কি না জানি না, তবে এভাবে বিদ্যুতের লোডশেডিং চলতে থাকলে প্রান্তিক কৃষকদের পথে বসতে হবে।
বালিয়াটী গর্জনা গ্রামের গভীর নলকূপের ম্যানেজার মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, আমার ইরি-বোরো প্রজেক্টের বিঘাপ্রতি হারের টাকা কৃষকদের মাঝে ফেরত দিয়ে দিয়েছি। আমার প্রজেক্টে অর্ধেক জমিই পতিত থাকবে। যাও ইরি-বোরোর চারা রোপণ করেছে, তাও সেচের অভাবে মরে যাচ্ছে। আবাদি জমির দিকে তাকালে মনে হয় জমিগুলো পানির জন্য হাহাকার করছে। সামনে চৈত্র মাস, এভাবে বিদ্যুৎ চলতে থাকলে রোপণকৃত ইরি-বোরোর জমিগুলো মরুভূমিতে পরিণত হবে।
বিদ্যুতের বার বার লোডশেডিংয়ের কারণে প্রায় ৩ শতাধিক বিদ্যুৎচালিত মোটর পুড়ে গেছে। মোটর মালিকরা ইলেক্ট্রনিকের দোকানে এসে ভিড় জমাচ্ছে। মোটরমালিকরা অভিযোগ করে বলেন, ঘন ঘন বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার কারণে মোটর জ্বলে যাচ্ছে। এদিকে প্রান্তিক কৃষকরা প্রতিদিন রোপণকৃত চারায় সেচ দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করলেও মোটরমালিকরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
এ ব্যাপারে সাটুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ দৈনিক ডেসটিনিকে জানান, আমি বালিয়াটী ইউনিয়ন জগন্নাথপুর এলাকাসহ কয়েকটি ব্লকে বোরো রোপণকৃত জমি পরিদর্শন করি। ঘন ঘন বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে রোপণকৃত বোরো চারার মড়ক ধরেছে এ কথা স্বীকার করে বলেন, বিদ্যুতের এ অবস্থা চলতে থাকলে এ উপজেলায় বোরো লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নাও হতে পারে। ফলে কৃষকরা ফসল ঘরে তুলতে না পারলে প্রান্তিক কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। তিনি আরো জানান, বিদ্যুতের উন্নতি না হলে পতিত থাকবে অনেক জমিই।

গলাচিপায় কম দামে ধান বিক্রি করছে কৃষক

২৫.০২.০৯
ডেসটিনি ।। গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

চালের দাম প্রত্যাশিত হারে না কমলেও ধানের দাম পড়ে গেছে ব্যাপকভাবে। কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে কেবলই হা-হুতাশ করছেন। এ সময় এভাবে ধানের দাম পড়ে যাওয়ায় তাদের মাথায় হাত পড়েছে। বোরো লাগাতে উৎপাদন খরচের চেয়েও কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা। বাজার পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হওয়ার কারণে ধানের বেপারিরাও প্রতিনিয়ত ধান কিনে লোকসানের মুখে পড়ছেন। ফলে অনেক ধান বিক্রি না করে বাজার থেকে ফিরিয়ে নিচ্ছেন বলেও খবর পাওয়া গেছে। অনুরূপভাবে চাতাল ব্যবসায়ীরা অব্যাহত লোকসান দিয়ে চাল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। মনপ্রতি তাদের রকমভেদে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা হারে লোকসান গুনতে হচ্ছে। এমনকি বাজার এখনো কমতির দিকেই আছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। গত জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত রকমভেদে প্রতি মন ধান ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কম দামে বিক্রি হয়েছে। অথচ একই ধান মনপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা কমে বর্তমান বাজারে কৃষকরা বিক্রি করছেন। এ অবস্থায় ধানের বাজারদর শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা ভেবে কোনো কূল-কিনারা করতে পারছেন না কৃষকরা। আর তাই ধানের অস্থিতিশীল বাজার পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে শস্য ভা-ারখ্যাত দক্ষিণাঞ্চলসহ পটুয়াখালীর গলাচিপার কৃষক পরিবারগুলো। বিশেষ করে এ অবস্থার পরিবর্তন না ঘটলে প্রান্তিক চাষিরা মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। তাদের মাথা তুলে ঘুরে দাঁড়ানোই যেন অনেকটা অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে জানিয়েছেন একাধিক কৃষক। এদিকে অস্বাভাবিকভাবে ধানের বাজার পড়ে যাওয়ায় কৃষকরা চলতি মৌসুমের রকমারি ফসল চাষ নিয়েও ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় চলতি মৌসুমের ধান, আলু, তরমুজ, সবজিসহ রকমারি ফসল চাষের জন্য সার, কীটনাশকসহ অন্যান্য খরচের জোগান দিতে কৃষকরা সম্পূর্ণভাবে অসহায় হয়ে পড়েছেন। সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত মৌসুমে তাদের ধান চাষ করতে প্রতিটি ক্ষেত্রে দ্বিগুণ থেকে পাঁচ গুণ হারে ব্যয় করতে হয়েছে। সেই হারে তারা তাদের ফসলের দাম পাচ্ছেন না। উপজেলার পূর্ব-নেতা গ্রামের কৃষক রফিকুল আকন জানান, গত দুই মাস আগে কাঁচা ধানের যে দাম ছিল এখন শুকনো ধানেরও সেই দাম নেই। এক বিঘা জমিতে ধান লাগানো থেকে শুরু করে কাটা, মাড়াই ও জমির মালিককে বর্গাবাবদ টাকা দেয়া পর্যন্ত তার প্রায় ৯ হাজার টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৩৬০ টাকার ৩০ কেজি ইউরিয়া সার, ৮০০ টাকার ১০ কেজি টিএসপি, ৪৪০ টাকার ১০ কেজি এমওপি, ৫০ টাকার ১০ কেজি জিপসাম, ১০০ টাকার ১ কেজি রোবন, ৭০০ টাকার কীটনাশক, ৫০০ টাকার বীজ লাগানো বাবদ ৫০০ টাকা, কাটা বাবদ ৭০০ টাকা, ক্ষেত ও ফসল পরিচর্যা বাবদ ৪০০ টাকা ও জমির মালিককে ৪ হাজার টাকা দেয়া। অথচ সেই জমি থেকে সর্বোচ্চ ১২ মন হারে ধানের ফলন হয়েছে। বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী সেই ধান তাকে ৪৮০ থেকে সাড়ে ৫০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। অর্থাৎ প্রতি বিঘায় তাদের অনেক টাকা লোকসান দিতে হয়েছে। আর এ হিসাবে তার মতো কৃষক পরিবারের অবস্থা কি হতে পারে তিনি এমন পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেন এ প্রতিবেদকের কাছে। এ অবস্থা কিন্তু তার একার নয়, গলাচিপা উপজেলাসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় কৃষক পরিবারেরই।

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।