Friday, October 31, 2008

ফটো ফিচার........



প্রতিদিনের তরকারিতে এর ব্যবহার রসনায় বাড়তি তৃপ্তি এনে দেয় বলে বিলাতি ধনে পাতার গ্রহণযোগ্যতা অনেক। এক সময় সমতল ভূমিতে উৎপন্ন হলেও এখন পাহাড়েও এর চাষ হচ্ছে। পাহাড়ি এলাকায় এবার ধনে পাতার ব্যাপক ফলন হয়েছে। কিন্তু শ্রম বা চাহিদার তুলনায় বিলাতি ধনে পাতার তেমন দাম নেই। ছবিটি কাপ্তাইয়ের কারিগরপাড়া এলাকা থেকে তোলা ---------মসিউর রেহমান বাদল

কৃষিঋণ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন নীতিমালা

৩১.১০.০৮
ইত্তেফাক ।। সম্পাদকীয়

কৃষিঋণের বর্তমান ভল্যুম বৃদ্ধি করিতে বাংলাদেশ ব্যাংক পুনঃঅর্থায়ন নীতিমালা সহজ করার চিন্তা-ভাবনা করিতেছে। চলতি অর্থ বছরের শুরুতে কৃষিঋণ বিতরণের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, তাহা এ যাবৎ আশানুরূপভাবে বাস্তবায়িত হয় নাই। মূলত বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বর্তমান অর্থ সংকটই ইহার জন্য দায়ী। এই প্রেক্ষিতে সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিকট পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা চাহিয়া আবেদন করিয়াছে। সরকারি বন্ডের বিপরীতে ব্যাংক রেট তথা ৫ শতাংশ সুদে এইসব ব্যাংকে এই সুবিধা প্রদানের বিষয়টি এখন বিবেচনাধীন। কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলির তারল্য সংকট মোকাবিলায় দ্রুত এই পুনঃঅর্থায়ন নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হইবে বলিয়া জানা যায়।

বলা নিষ্প্রয়োজন, কৃষিই আমাদের অর্থনীতির প্রাণ। কিন্তু এই খাত যুগ যুগ ধরিয়া অবহেলিত। বিশেষ করিয়া কৃষিখাতে বড় বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির বিনিয়োগ প্রবণতা বরাবরই কম। তবে বিশ্ব জুড়িয়া সাম্প্রতিককালের খাদ্য সংকটের প্রেক্ষিতে সকলেরই টনক নড়ে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করিতে কৃষিখাতকে দেওয়া হয় অগ্রাধিকার। এই খাতের অন্যান্য সমস্যার মধ্যে পুঁজি স্বল্পতা সবচাইতে মারাত্মক। কৃষি মৌসুমে কৃষকদের হাতে পর্যাপ্ত অর্থ থাকে না। ফলে অনেকে বীজ ক্রয় হইতে শুরু করিয়া মাঠ প্রস্তুতিসহ প্রারম্ভিক নানা কাজে হাত দিতে পারে না। ইতিপূর্বে মহাজনের নিকট হইতে ঋণ লইয়া সর্বস্বান্ত হওয়ার নানা করুণ কাহিনী ও অভিজ্ঞতার সঙ্গে কৃষক সমাজ কমবেশি পরিচিত হইয়াছেন। ফলে কোথা হইতে টাকা পাওয়া যাইবে এই চিন্তায় কিষাণ-কিষাণীর ঘুম হারাম হয়। সেক্ষেত্রে তাহারা উদ্যম হারাইয়া ফেলে। তাহাছাড়া বাংলাদেশে বর্গাচাষীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় যথাসময়ে পুঁজি প্রাপ্তির ব্যবস্থা করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গত অর্থ বৎসরে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি কৃষিঋণ বিতরণ করা হইয়াছিল বলিয়াই বোরোসহ একাধিক ফসলের বাম্পার ফলন হইয়াছে। ফলে মূল্যস্ফীতি ও নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে নিপতিত হইলেও কৃষিই আমাদের শেষ পর্যন্ত রক্ষা করিয়াছে। তাই বলা যায়, সমস্যা জর্জরিত দেশটির প্রায় ১৫ কোটি মানুষের অন্ন-আহার নিশ্চিত করিতে হইলে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ব্যতীত গত্যন্তর নাই।

সরকার ইতিমধ্যে দেশী-বিদেশী সকল ব্যাংকে কৃষিঋণ বিতরণ বাধ্যতামূলক করিয়াছে। ইহা নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক উত্তম সিদ্ধান্ত। কিন্তু কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ ও যথাযথ তদারকি ব্যতীত এই কার্যক্রমের সফলতা আশা করা যায় না। ঋণের অর্থ সময়মতো প্রকৃত কৃষকের হাতে পৌঁছানোটাই বড় চ্যালেঞ্জ। গত বছরের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ বাড়াইয়া এবার কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এই পর্যন্ত সরকারী ব্যাংকগুলো মাত্র ৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা বাড়াইতে সক্ষম হইয়াছে। এই সূত্রে সরকারী ব্যাংকগুলি পুনঃঅর্থায়ন সুবিধার যে দাবি জানাইয়াছে তাহা অত্যন্ত যৌক্তিক। কিন্তু এই সুবিধায় পাওয়া ঋণ যাহাতে কেবল কৃষিখাতেই বিতরণ করা হয় তাহা সর্বাগ্রে নিশ্চিত করিতে হইবে। অপেক্ষাকৃত কম সুদে ঋণ বিতরণের বিষয়টিও এখানে উল্লেখ না করিলেই নয়। জানা যায়, দেশের মোট কৃষিঋণের প্রায় ৯০ শতাংশই বিতরণ করিয়া থাকে সরকারী ৮টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমে বেসরকারী ব্যাংকের অংশগ্রহণ ও দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি করিতে হইবে। অন্যদিকে বিদেশী ব্যাংকগুলি এনজিওর মাধ্যমে কৃষিঋণ বিতরণ করিয়া থাকে। যাহা হউক, এ সকল ঋণের সুদ, বিতরণ হার ও পদ্ধতি স্বচ্ছ, যৌক্তিক বা সন্তোষজনক কিনা তাহা নিয়মিত মনিটরিং করা একান্ত প্রয়োজন।

বস্তুত ১৯৯০ সালে আর্থিক খাত সংস্কার কর্মসূচির আওতায় নির্দেশিত ঋণপ্রথা বিলুপ্ত হইলে কৃষিখাতে ঋণ বিতরণের প্রবাহ কমিতে থাকে। কিন্তু অস্তিত্ব রক্ষার খাতিরেই আবার কৃষির প্রতি অধিক মনোযোগ প্রদানের সময় আসিয়াছে। চলতি অর্থ বৎসরে সরকারী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় ৭ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করিয়াছে। কিন্তু ইহাই যথেষ্ট কিনা সেই বিষয়টিও ভবিষ্যতে ভাবিয়া দেখিতে হইবে। আবার অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে কৃষিঋণের উদ্দেশ্য ব্যাহত হউক, ইহা কাহারও কাম্য নয়। সাধারণত প্রকৃত কৃষকগণ ঋণ পরিশোধে খুবই আন্তরিক। শুধু ছদ্মবেশী কৃষক, টাউট-বাটপাড় ও মধ্যস্বত্বভোগীদের লুটপাট হইতে মুক্ত রাখিতে পারিলে কৃষিঋণ কার্যক্রমকে অবশ্যই সফল করা সম্ভব। ইতিপূর্বে সরকারী তরফ হইতে তিন বছর মেয়াদী আবর্তক শস্যঋণ ব্যবস্থা ও কৃষকদের জন্য আইডি কার্ড প্রবর্তনের কথা বলা হইয়াছে। আমরা শীঘ্রই ইহার বাস্তবায়ন দেখিতে চাই। পরিশেষে কৃষিঋণ বিতরণ নির্বিঘœ ও নিশ্চিত করিবার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলিকে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা প্রদানের বিষয়টিকে আমরা জরুরি ও অপরিহার্য বলিয়া মনে করি।

কৃষিখাতে ক্ষুদ্রঋণের চাহিদা বাড়ছে

৩০.১০.০৮
ইত্তেফাক ।। প্রেস বিজ্ঞপ্তি

সম্প্রতি পিকেএসএফ-এর অডিটরিয়ামে পল্লী কর্ম সহায়ক-ফাউণ্ডেশন (পিকেএসএফ) আয়োজিত ‘কৃষিখাত ক্ষুদ্রঋণ’ কর্মসূচি শীর্ষক অবহিতকরণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন পিকেএসএফ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. কাজী মেসবাহউদ্দিন আহমেদ।

বক্তৃতায় ড. কাজী মেবাহউদ্দিন আহমেদ বলেন যে, দারিদ্র্য বিমোচনকল্পে ফাউণ্ডেশনের ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম বহুমুখীকরণের ধারাবাহিকতায় ফাউণ্ডেশন সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে মৌসুমী ঋণ কর্মসূচির আওতায় সংগঠিত দরিদ্র জনেগোষ্ঠীকে বিভিন্ন কৃষি কার্যক্রমে ঋণ সুবিধা প্রদান করছে। ফলে মাঠপর্যায়ে প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষক জনগোষ্ঠীর মধ্যে ঋণের ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। সহযোগী সংস্থাসমূহের মধ্যেও এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে এবং তাদের গৃহীত উদ্যোগে মাঠপর্যায়ে কৃষিঋণ কার্যক্রমের একটি বড় সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে পিকেএসএফ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোশাররফ হোসেন খান, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (বিপুল) মিসেস পারভীন মাহমুদ, মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) ড. এম. এ হাকিম এবং উক্ত কর্মসূচি সংশ্লিষ্ট পিকেএসএফ-এর ৬১টি সহযোগী সংস্থার প্রধান নির্বাহী এবং প্রধান ঋণ কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত অংশগ্রহণকারীগণ উন্মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। -

২৫ হাজার টন এমওপি সার আমদানি করবে সরকার

৩০.১০.০৮
।। ইত্তেফাক রিপোর্ট ।।

সরকার ১৪০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা মূল্যে বেলারুশ থেকে ২৫ হাজার টন এমওপি সার আমদানি করবে। বুধবার অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা মির্জা আজিজুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সভায় এ আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন সরাসারি আগামী মওসুমে এ সার আমদানি করবে।

কৃষিঋণ : পুনঃঅর্থায়ন নীতিমালা সহজ হচ্ছে

৩০.১০.০৮
।। ইত্তেফাক রিপোর্ট ।।

কৃষিঋণ বাড়াতে পুনঃঅর্থায়ন নীতিমালা সহজ হচ্ছে। সরকারি বন্ডের বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা নিতে পারবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো এমন লক্ষ্য সামনে রেখে কাজ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কৃষিঋণ বিতরণে সরকারি ব্যাংকগুলো যাতে আর্থিক সংকটে না পড়ে সেজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে।
চলতি অর্থবছরের শুরুতে কৃষিঋণ বিতরণে সকল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে গতবারের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ বাড়িয়ে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে বলা হলেও সরকারি ব্যাংকগুলো মাত্র ৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা বাড়াতে পেরেছে। বরং অর্থ সংকট দেখিয়ে কৃষিখাতে ঋণ বিতরণ বাড়ানোর জন্য এসব ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা চেয়ে আবেদন করে। সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ওই আবেদন আমলে এনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা দেয়ার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে। এ লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন নীতিমালা সহজ করা হচ্ছে। তবে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধায় পাওয়া ঋণ শুধু কৃষিখাতে বিতরণ করা হবে এমন নিশ্চয়তা চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একইসঙ্গে পুনঃঅর্থায়নের টাকা যাতে চুরি না হয় এজন্য সরকারি ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে পুনঃঅর্থায়নের বিপরীতে সরকারি বন্ড নেয়া হবে।

ব্যাংকিং সূত্রগুলো বলছে, পুনঃঅর্থায়নের টাকা শুধু কৃষিখাতে বিতরণ করা হবে এমন নিশ্চয়তা পেলে সরকারি বন্ডের বিপরীতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে ব্যাংক রেটে (৫ শতাংশ সুদে) পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এতে ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট কাটার পাশাপাশি অপেক্ষাকৃত কম সুদে কৃষিঋণ বিতরণ করতে পারবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো।

প্রসঙ্গত দেশের কৃষিখাতে মোট ঋণের প্রায় ৯০ শতাংশ বিতরণ করে থাকে সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এরমধ্যে শুধু বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি) এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা পায়। বাকি ৪ সরকার মালিকানাধীন সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক বাণিজ্যিক খাতেও ঋণ বিতরণ করে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা পায় না।

চলতি অর্থবছর থেকে সরকারি-বেসরকারি সব ব্যাংকের জন্য কৃষিঋণ বিতরণ কার্যক্রম বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। আগের বছর থেকে বেসরকারি ব্যাংকগুলো কৃষিঋণ কার্যক্রমে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করলেও দেশের মোট কৃষিঋণের প্রায় ৯০ শতাংশই বিতরণ করে থাকে সরকারি ৮ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এগুলো হচ্ছে সোনালী ব্যংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, বিকেবি, রাকাব, বিআরডিবি ও সমবায় ব্যাংক। এরমধ্যে চলতি অর্থবছরে সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় ৭ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। অপরদিকে বেসরকারি ব্যাংকগুলো ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা কৃষি-ঋণ বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গতবছর সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ৬ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা এবং বেসরকারি ব্যাংকগুলো ৯৬০ কোটি টাকার কৃষিঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। চলতি অর্থবছরে সোনালী ব্যাংক ৬৭০ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংক ৬৫০ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংক ৪৩৮ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংক ৬৬ কোটি টাকা, কৃষি ব্যাংক (বিকেবি) ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) ৮৫০ কোটি টাকা, বিআরডিবি ৭৪৫ কোটি টাকা এবং সমবায় ব্যাংক ৪৫ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণ করবে।

ইকোলজিক্যাল স্যানিটেশনের মাধ্যমে বিপুল জৈব সার তৈরি সল্ফ¢ব

৩০.১০.০৮
সমকাল ।। সমকাল প্রতিবেদক

জাতীয় স্যানিটেশন মাস উপলক্ষে আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, বাংলাদেশের ২৫ শতাংশ জনগোষ্ঠিকে ইকোলজিক্যাল স্যানিটেশনের আওতায় আনা সল্ফ¢ব হলে যে জৈব বর্জ্য পাওয়া যাবে তা দিয়ে বিপুল পরিমাণ জৈব সার তেরি করা সল্ফ¢ব। এতে ৫০ লাখ টন রাসায়নিক সার ব্যবহার বল্পব্দ করা যাবে। পাশাপাশি দেশের বিদ্যামান পানি সংকট বহুলাংশে কমানো সল্ফ¢ব হবে। এটা সরকারের ২০১০ সালের মধ্যে সবার জন্য স্যানিটেশন নিশ্চিত করার পাশাপাশি পরিবেশ বাল্পব্দব, স্ট^াস্ট’্যসল্ফ§ত, দীর্ঘস্ট’ায়ী স্যানিটেশন ব্যবস্ট’ার লক্ষ্য পহৃরনে কার্যকর ভুমিকা পালন করবে।
গতকাল বুধবার আইমেক্স সেন্টারের সভাকক্ষে ড¦িèউবিবি ট্রা®দ্ব এবং সোসাইটি ফর পিপলস অ্যাকশন ইন চেঞ্জ অ্যান্ড ইক্যুয়িটি (¯েক্সস) এর যৌথ উদ্যোগে ‘পরিবেশ বাল্পব্দব ও দীর্ঘস্ট’ায়ী স্যানিটেশন ব্যবস্ট’ায় ইকোলজিক্যাল স্যানিটেশন’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা। সভায় মহৃল প্রবল্পব্দ উপস্ট’াপন করেন ¯েক্সস এর নির্বাহী পরিচালক আজাহার প্রামাণিক ও প্রাকটিক্যাল অ্যাকশনের টেকনোলজি প্রমোশন অফিসার এস এ আবদুল্কèাহ আল মামুন। উপস্টি’ত ছিলেন ইউনিসেফের ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল স্যানিটেশন সেকশনের প্রজেক্ট অফিসার কামরুন নাহার, ড¦িèউবিবি ট্রা®েদ্বর প্রোগাম ম্যানেজার সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন, ঢাকা সিটিকর্পোরেশনের বস্টিø উল্পুয়ন বিভাগের প্রধান খন্দকার মিল্কèাত হোসেন, পানি উল্পুয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো আবুল কায়সার, বার্ড কুমিল্কèার ডেপুটি ডিরেক্টর আবদুল্কèাহ আল মামুন, জাপান এসোসিয়েশন অব ড্রেনেজ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের আবাসিক প্রতিনিধি তোফায়েল আহমেদ প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, স্যানিটেশন ব্যবস্ট’ার উল্পুয়নে দীর্ঘস্ট’ায়ী ব্যবস্ট’ার ওপর জোর দিতে হবে। ল্যাট্রিনের বর্জ্যকে আবর্জনা না ভেবে একে কীভাবে সুষ্ঠু ব্যবস্ট’াপনার মাধ্যমে পুনব্যবহার করা যায় তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রচলিত স্যানিটেশন ব্যভস্ট’ার পাশাপাশি ইকোস্যান প™ব্দতির কথা চিšøা করে টয়লেট ব্যবহারে জনগণকে উৎসাহিত করতে হবে।
টয়লেটের বর্জ্য, দৈনন্দিন কাজে ব্যবহƒত পানি বৃ®িদ্বর পানিকে পুনব্যবহার করে এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
তারা আরো বলেন, বাংলাদেশে ইকোলজিক্যাল স্যানিটেশন প™ব্দতির মাধ্যমে পানির অপচয় রোধ এবং টয়লেটের বর্জ্য সার হিসাবে ব্যবহারে গুরুÍ^পুর্ন অবদান রাখবে। একই সঙ্গে স্যানিটেশন থেকে ছড়ানো রোগ-ব্যাধির হাত থেকে দেশ বাঁচবে।

আমন চাষীদের বাঁচাল রেশমী

৩০.১০.০৮
সমকাল ।। জিয়ানগর (পিরোজপুর) প্রতিনিধি

রেশমীর প্রভাবে প্রবল বর্ষণ জিয়ানগরের ধানচাষীদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, নিল্ফুচাপ সৃ®িদ্বর আগে পাতা মোড়ানো রোগ ও লেদা পোকার আত্রক্রমণে ৮০ ভাগ জমির রোপা আমন ধহৃসর রং ধারণ করছিল। কৃষকরা রোপা আমনে রোগের আত্রক্রমণের ফলে দিশেহারা হয়ে পড়ছিলেন। আশগ্ধকা করছিলেন, তারা এবার আমন ফসল ঘরে তুলতে পারবেন কি-না! উপজেলা কৃষি অফিসও ছিল এ ব্যাপারে উ™ি^¹ু। কিন্তু ২৪ অক্টোবর সৃ®দ্ব নিল্ফুচাপের প্রভাবে প্রবল বর্ষণে এ উপজেলার আমন ফসল রোগমুক্ত হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শহিদুল্কèাহ জানান, নিল্ফুচাপের প্রভাবে প্রবল বর্ষণে রোপা আমন রোগমুক্ত হয়েছে এবং ইউরিয়া সারের বাড়তি সুবিধা দিয়েছে। তাই মনে হয়, সৃ®দ্ব নিল্ফুচাপ জিয়ানগরের ধানচাষীদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছিল।

Tuesday, October 28, 2008

চুয়াডাঙ্গায় প্রকাশ্যে বীজ নিয়ে প্রতারণা

২৮.১০.০৮
যায়যায়দিন ।। চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি

বীজ উৎপাদন ও বীজ প্রত্যয়নের ক্ষেত্রে সরকার চুয়াডাঙ্গাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। তবে তার সুফল ভোগ করতে পারছেন না এ জেলার কৃষকরা। প্রত্যয়নকৃত বীজ বপন বা রোপণে উপকারিতার বিষয়ে কৃষকদের সচেতনতার অভাবই এর মূল কারণ। এদিকে অপ্রত্যয়নকৃত বীজ কৃষকদের মধ্যে বিক্রি আইনগতভাবে নিষিদ্ধ থাকলেও তা বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যে হাটে-বাজারে যা কৃষকরা কিনছে হরহামেশায়।
সারা দেশে বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি রয়েছে মোট ৩০টি। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গায় রয়েছে দুটি। যা প্রমাণ করে এ অঞ্চলের কৃষকদের এক্ষেত্রে একটু বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। কেননা এ জেলার উৎপাদিত ফসল জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশে অন্যান্য এলাকার প্রয়োজন মেটায়। সেসঙ্গে এলাকার উৎপাদিত বীজ সারাদেশের বীজের চাহিদা পূরণে দীর্ঘদিন ধরে দৃষ্টান্ত ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। যে কারণে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর ও ঝিনাইদহকে বীজ উৎপাদন ও বীজ প্রত্যয়নের ক্ষেত্রে বরাবরই সরকার গুরুত্ব দিয়ে আসছে। কয়েক বছর ধরে সরকারের পাশাপাশি কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা বীজ উৎপাদন করে আসছে। এ খাতে বিনিয়োগ করে তারা লাভবানও হচ্ছে। তারপরও কৃষকরা থেকে যাচ্ছেন সেই আগের তিমিরেই। এ জেলায় দুইটি বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি থাকার পরও প্রতিবছর প্রতি মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষকরা বীজ নিয়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।
দেশে মৌলবীজ, ভিত্তিবীজ, প্রত্যয়িত বীজ ও মানঘোষিত বীজ এই চার প্রকারের বীজ বিক্রির বৈধতা রয়েছে। ধান, গম, পাট, আলু ও আখ এই ৫টি ফসলের ক্ষেত্রে মৌলভিত্তি ও প্রত্যয়িত মানের বীজ প্রয়োজন। বীজ প্রত্যয়ন মানেই ওই বীজের গুণগতমান যাচাই করে প্রত্যয়ন সনদ দেয়া। প্রত্যয়ন সনদ ছাড়া কোনো বীজ বাজারে বিক্রি করা যাবে না। আবার কৃষকরা নিজেরাও নিজেদের মধ্যে বীজ উৎপাদন করে তার গুণগত মান যাচাই না করেই তা বপন বা রোপণ করে থাকেন। এসব কারণে অধিকাংশ সময়ই আবাদে বিপর্যয় দেখা দেয়। বীজ উৎপাদিত করতে হলে এবং প্রত্যয়ন নিতে হলে বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধিত বীজ ডিলার হতে হবে। এরপর বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি নির্ধারিত ফি নিয়ে ওই বীজের গুণগত মান যাচাই করে সনদ প্রদান করে। মৌলবীজের জন্য সবুজভিত্তি বীজের প্রত্যয়নকার্ড বিতরণ করা হয়। এ কার্ড ছাড়া তা বিক্রি করা নিষিদ্ধ। বিধি অনুযায়ী প্রত্যয়ন এজেন্সির প্রদত্ত কার্ড ছাড়া বীজ বিপণন আইনত দ-ণীয় অপরাধ। অথচ চুয়াডাঙ্গার অধিকাংশ হাট-বাজারে বীজের দোকানে দেদার ওই প্রত্যয়নকার্ড ছাড়াই বিক্রি করা হচ্ছে বীজ। কৃষকরা ওই প্রত্যয়নকার্ড সম্পর্কে সচেতন না হওয়ায় বিক্রেতারা তা বিক্রির সুযোগ পাচ্ছে। কৃষকরা যদি এ বিষয়ে সচেতন হতেন তবে প্রত্যয়িত কার্ড দেখে বীজ সংগ্রহ করতেন।
চুয়াডাঙ্গা বিএডিসি সূত্রে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা ও জীবননগর উপজেলার দত্তনগর খামান থেকে প্রতি মওসুমে যে বীজ উৎপাদিত হচ্ছে তা দেশের মোট উৎপাদিত বীজের ৫ শতাংশ। প্রত্যয়নকৃত বীজ না কেনায় কৃষকরা বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি থাকার সুফল ভোগ করতে পারছেন না বলে তারা মত দেন। এ জন্য প্রয়োজন কৃষকদের সচেতন করে গড়ে তোলা। সে প্রচেষ্টাও চলছে বলে তারা জানান।

ফটো ফিচার........


দু’দিনের টানা বৃষ্টি ও ঘূর্ণিঝড়ে সাতক্ষীরার আমন ধানের গাছ এভাবেই পানিতে নুয়ে পড়েছে - যাযাদি

কুড়িগ্রামে সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমির ধান গাছ নুয়ে পড়েছে

২৮.১০.০৮
যায়যায়দিন ।। কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে কুড়িগ্রামে ২ দিন ধরে সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। হিমেল হাওয়া ও টানা বর্ষণে জনজীবন হয়ে পড়ে বিপর্যস্ত। জেঁকে বসেছে শীত। বেড়ে গেছে সর্দি, কাশি ও নিউমোনিয়াসহ শ্বাসপ্রণালির প্রদাহ ইত্যাদি রোগের প্রকোপ। সদর হাসপাতালে জন্মকালীন শ্বাসকষ্টের কারণে মার গেছে নিউ বাবু নামের এক সদ্যজাত শিশু। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে দুদিন ধরে বন্ধ আছে চিলমারী থেকে বাহাদুরাবাদ, চিলমারী-রৌমারী, চিলমারী-রাজিবপুর এবং অভ্যন্তরীণ সব রুটের নৌ চলাচল। ফলে এসব এলাকার যাত্রীরা পড়েছে চরম দুর্ভোগে। এছাড়াও প্রচ- বাতাসে দুধ ও পাকা পর্যায়ে থাকা ৬ হাজার ৪৯৫ হেক্টর আমন ধান গাছ মাটিতে নুইয়ে পড়েছে। ফলে এসব ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগ সোমবার ১৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে।

চা বাগানসমূহের অনুকূলে আজ ৫ হাজার টন ইউরিয়া সার সরবরাহ শুরু

২৮.১০.০৮
ইত্তেফাক ।। তথ্য বিবরনী

দেশের চা বাগানসমূহের অনুকূলে চলতি বছর প্রাতিষ্ঠানিক কোটায় বরাদ্দকৃত ৫ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আজ থেকেই সরবরাহ করা শুরু হবে। সোমবার শিল্প মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ টি এসোসিয়েশন নেতৃবৃন্দ এবং বিসিআইসি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্পেশাল এসিস্ট্যান্ট টু চিফ এডভাইজার মাহবুব জামিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে শিল্প সচিব শেখ এনায়েতউল্লাহ, বিসিআইসি’র চেয়ারম্যান মোঃ মোখলেছুর রহমান, বাংলাদেশ টি এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান এম সালমান ইস্পাহানী, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মোহাঃ সাফওয়ান চৌধুরী, এম শাহআলম, শফিক এ চৌধুরীসহ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং বিসিআইসি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।-

কৃষককে সময়মতো সারের জোগান জরুরি

২৮.১০.০৮
অন্যস্বর
ডেসটিনি ।। এম জি মহিউদ্দীন আহম্মদ

জলবায়ুর পরিবর্তন বিশ্বে বহুমাত্রিক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিশ্বখাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও হুমকির কারণ হয়েছে। জলবায়ুর পরিবর্তন বাংলাদেশে বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, এটি সারা বিশ্বের অভিজ্ঞ মহলের অভিমত। তাই বাংলাদেশে বিশেষ সতর্কতাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। তা ছাড়া বাংলাদেশ বিপুল জনসংখ্যার দেশ। স্বল্প পরিসর ভূখ-ে এ বিপুল জনসংখ্যা ও একটি হুমকি। এ বিপুল জনসংখ্যার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও তাই অত্যাবশ্যকীয় এ নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থাকতে পারে না। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার বিকল্প নেই। এ প্রেক্ষাপটে খাদ্য শস্য উৎপাদন বাড়ানো ছাড়া গত্যন্তরও নেই। দেশের সীমিত পরিসরে ক্রমহ্রাসমান আবাদি জমিতে উৎপাদন বাড়াতে হলে খাদ্যের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। আর উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কৃষিতে অব্যাহতভাবে প্রযুক্তির সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে এবং উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন কৃষি উপকরণ পর্যাপ্ত পরিমাণে জোগান নিশ্চিত করতে হবে। তা ছাড়া কৃষকগণ যেন সময়মত কৃষি উপকরণ পেতে পারে সে ব্যবস্থাও নিশ্চিত করতে হবে। কৃষি উৎপাদনের জন্য চাষের যন্ত্রপাতি যেমন ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার, হালের গবাদিপশু, বীজ, সার, সেচ, কীটনাশক, কৃষি শ্রমিক, পণ্য পরিবহনের উপকরণ এসবের জোগান নিশ্চিত করা জরুরি। খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর জন্য এসব উপকরণ সংগ্রহের জন্য পর্যাপ্ত আর্থিক সামর্থ্য বেশির ভাগ কৃষকেরই নেই। তাই এসব উপকরণ সংগ্রহের জন্য কৃষকের কাছে সময়মত আর্থিক জোগান নিশ্চিত করাও অপরিহার্য। অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎস থেকে আর্থিক সহায়তা ব্যয় বহুল বিধায় কৃষকের জন্য স্বার্থহানিকরও। সরকারি ব্যবস্থাপনায় কৃষককে আর্থিক সহায়তার যে ব্যবস্থা আছে তা ত্রুটিপূর্ণ এবং অপর্যাপ্ত। এ ক্ষেত্রে সরকারের ঐকান্তিক পদক্ষেপ ফলদায়ক হবে। বর্তমান আলোচনায় কৃষি উপকরণের সব ক’টা নিয়ে আলোচনায় না গিয়ে শুধু সার সরবরাহের বিষয়াদি নিয়ে পর্যালোচনা করা হবে।
দেশের আবাদি জমির পরিমাণ সীমিত ও অপর্যাপ্ত বিধায় সব সময়ই চাষাধীনে থাকে। অব্যাহত চাষের আওতায় থাকায় জমির উর্বরতা হ্রাস পাওয়া স্বাভাবিক। এ প্রেক্ষাপটে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সার ব্যবহারের বিকল্প নেই। চাষাবাদে যথাসময়ে পর্যাপ্ত সারের জোগান নিশ্চিত করা তাই অত্যাবশ্যকীয়। কৃষক পর্যায়ে সময়মত ও পর্যাপ্ত পরিমাণে সারের জোগান নিশ্চিত করা সম্ভব না হলে উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন সম্ভব না হওয়াই স্বাভাবিক। কৃষক পর্যায়ে সময়মত ও পর্যাপ্ত সারের জোগান নিশ্চিত করা তাই জরুরি এ নিয়ে সংশয় থাকতে পারে না। কৃষক পর্যায়ে সারের জোগান নিশ্চিত করার প্রক্রিয়াটি কয়েকটি ধাপে হয়ে থাকে। প্রথম ধাপে পর্যাপ্ত সারের সরবরাহ নিশ্চিত করার মতো পর্যাপ্ত পরিমাণে সারের প্রাপ্তি। আর দ্বিতীয় ধাপে প্রাপ্ত সার কৃষক পর্যায়ে পৌঁছানোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। চাষের জন্য প্রয়োজনীয় সার সরবরাহের জন্য দেশজ উৎপাদন ও আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানিকৃত সারের সরবরাহ নিশ্চিত করতে ভর্তুকি দিতে হয়। দেশজ সারেও ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। তবে সার আমদানির ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা বাড়ার কারণে দেশে সার উৎপাদন করা ছাড়া সময়মত পর্যাপ্ত সার সরবরাহ করা সম্ভব নাও হতে পারে। তাই পর্যাপ্ত সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে হলে দেশেই সার উৎপাদন করার বিকল্প পথ সরকার বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট গুরুত্বসহ তৎপর রয়েছে। পত্রিকান্তরে জানা যায় সরকার সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে এবং সিরাজগঞ্জে একটি করে ইউরিয়া সার উৎপাদনের জন্য সার কারখানা স্থাপনের পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। এ দু’টি সার কারখানায় প্রায় ১১ লাখ টন ইউরিয়া উৎপাদিত হবে বলেও জানা যায়। এ দুটি কারখানায় উৎপাদন শুরু হলে মাত্র দুই থেকে তিন লাখ টন ইউরিয়া সার আমদানি করার প্রয়োজন হতে পারে। কারখানাদ্বয় যত তাড়াতাড়ি উৎপাদনে যাবে ততই মঙ্গল। তবে উল্লেখিত পরিমাণ ইউরিয়া নতুন কারখানাদ্বয়ে উৎপাদন হলেও স্বল্প পরিমাণে হলেও আমদানি করার প্রয়োজন হতে পারে। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, সারের জন্য বিদেশ নির্ভরতামুক্ত হওয়ার জন্য সব ধরনের সার দেশেই উৎপাদন নিশ্চিত করা উচিত। চাষাবাদে উৎপাদন বাড়ানোর বিকল্প নেই বিধায় কৃষি উপকরণ বিশেষ করে সার সময়মত এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে কৃষকের হাতে পৌঁছানো নিশ্চিত করা অপরিহার্য। গত শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে চলমান সময় পর্যন্ত কৃষিতে রাসায়নিক সারের জোগান নিয়ে তৎপরতা চালানো হতে থাকে। কিন্তু জমিতে সার প্রয়োগে কি পরিমাণে সার প্রয়োগ করা দরকার তার মাত্রা সঠিকভাবে নির্ধারিত হয়নি বরং কৃষক বেশি সার প্রয়োগের মাধ্যমে বেশি ফলন পাওয়ার প্রত্যাশা করছে। ফলে অতিরিক্ত রাসায়নিক সারের ব্যবহারও আবাদি জমির উর্বরতা হ্রাসে ভূমিকা রাখছে। সাম্প্রতিক সময়ে জৈব সার প্রয়োগের বিষয়টি নিয়ে সীমিত তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়। মাটির জৈব উপকরণ রক্ষা করতে হলে জৈব সার প্রয়োগের বিকল্প নেই। তাই জৈব সার উৎপাদনে কৃষকদের প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদানসহ বাস্তব সহায়তা করা জরুরি। জৈব সার উৎপাদন বাড়াতে কৃষকদের সাফল্য এবং জমির উর্বরতা রক্ষার পাশাপাশি রাসায়নিক সারের ওপর নির্ভরতা কমাতেও ভূমিকা রাখবে। উল্লেখ্য, খাদ্যের মান বাড়াতেও জৈব সারের ব্যবহার ভূমিকা রাখবে।
কৃষকদের পরিমিত সার প্রয়োগে সফল করতে হলে আবাদযোগ্য জমিতে কোন ফসলের জন্য কি পরিমাণে সারের দরকার এ তথ্য দেয়া অপরিহার্য হলেও বর্তমানে কৃষকরা এ ধরনের সহায়তা থেকে বঞ্চিত। পরিমিত সার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হলে কৃষক পর্যায়ে আবাদি জমির মাটি পরীক্ষার ব্যবস্থা করা অপরিহার্য এ বিষয়ে কোনো দ্বিমতের অবকাশ নেই। আশার কথা দেশের কোনো কোনো স্থানে অতি সীমিত পর্যায়ে মাটি পরীক্ষার ব্যবস্থা শুরু হয়েছে। সব আবাদি জমির মাটি পরীক্ষার পর ফসল উৎপাদন করতে হলে অন্তত প্রত্যেক ইউনিয়নে মাটি পরীক্ষার যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা প্রয়োজন। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার আওতায় এ কাজটি করতে এগিয়ে যাওয়া জরুরি। তাৎক্ষণিকভাবে অন্তত উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত মাটি পরীক্ষার যন্ত্রপাতি সরবরাহের ব্যবস্থা নিতে পদক্ষেপ নেয়া মঙ্গলজনক। স্থায়ীভাবে মাটি পরীক্ষার যন্ত্রপাতি সরবরাহ করতে পারার আগে পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ মাটি পরীক্ষার ব্যবস্থা নেয়া জরুরিভাবে বিবেচ্য। মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা করা আমাদের ভবিষ্যৎ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অপরিহার্য বিধায় মাটি পরীক্ষার ব্যবস্থা জরুরিভিত্তিতে করতে হবে।
পর্যাপ্ত পরিমাণে সারের মজুদ দেশে বিদ্যমান থাকাই ফসল উৎপাদনের জন্য সহায়ক হবে না বরং কৃষকের হাতে সময়মত পর্যাপ্ত সার পৌঁছে দেয়া জরুরি। আর এ কাজটি করতে হলে সার সরবরাহ ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠুভাবে গড়ে তোলা দরকার। রাসায়নিক সারের প্রয়োগ শুরু করার পাশাপাশি কৃষক পর্যায়ে সার সরবরাহ করতে সরকারি উদ্যোগে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন স্থাপিত হয়েছিল। এ প্রতিষ্ঠানটির সাফল্য-ব্যর্থতা যাচাই না করেই দাতা সংস্থার পরামর্শ মোতাবেক এটির কার্যক্রম সার সরবরাহ ক্ষেত্রে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। চলমান সময়ে কৃষক পর্যায়ে সার সরবরাহ নিয়ে জটিলতার বিষয়টি প্রায়ই পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়ে থাকে। জাতীয় পর্যায়ে সারের অভাব না থাকলেও কৃষকরা পর্যাপ্ত সার সময়মত পেতে ব্যর্থ হচ্ছে। এ বিষয়টি অবশ্যই উদ্বেগের কারণ বিধায় নিরসনে ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে অবশ্যই এগিয়ে যেতে হবে। সুষ্ঠু সার সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ার ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কাঠামো গড়ার বিকল্প নেই।
কৃষকের কাছে সময়মত পর্যাপ্ত সারের জোগান নিশ্চিত করার কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি কৃষিবিদদের উদ্ভাবিত কালার চার্টের ব্যবহার নিশ্চিত করতে কার্যকর উৎপরতা চালানো দরকার। তা ছাড়া গুটি ইউরিয়া নিরঙ্কুশভাবে দ্রুত ব্যবহারের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়াও জরুরি। কৃষকদের সময়মত পর্যাপ্ত সারের জোগান নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের সার প্রয়োগে যথাযথভাবে দক্ষ করতে পারলে (১) আবাদি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত সারের ব্যবহার বন্ধ হবে, ফলে মাটির স্বাস্থ্য সংরক্ষণ করা সম্ভব হতে পারে (২) কালার চার্টের ব্যবহারে কৃষকদের দক্ষ করতে পারলে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সারের ব্যবহার রোধ হতে পারে (৩) গুটি ইউরিয়া সারের ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হলে সার কম পরিমাণে প্রয়োজন হবে এবং কৃষকের উৎপাদন ব্যয় কমার সুযোগ হবে (৪) মাটি পরীক্ষা করে সার প্রয়োগ করা সম্ভব হলেও অতিরিক্ত সার ব্যবহার রোধ হবে। কৃষক পর্যায়ে অতিরিক্ত সার ব্যবহার বন্ধ হলে জাতীয় পর্যায়ে বিপুল পরিমাণ সার সাশ্রয় হতে পারে। যা জাতীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব রাখতে পারে।
এমতাবস্থায়, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শস্যের ফলন বাড়াতে সময়মত পর্যাপ্ত সার কৃষক পর্যায়ে জোগান নিশ্চিত করার বিকল্প নেই এবং এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অবহেলারও অবকাশ নেই। এ বিষয়ে সরকারি বেসরকারি কার্যকর তৎপরতা নিশ্চিত করতে অব্যাহত তৎপরতা চালানো জরুরি। য়
লেখক : সাবেক ব্যাংকার ও প্রাবন্ধিক

Monday, October 27, 2008

‘সামগ্রিক কৃষি সংস্কার কর্মসূচি’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দাবি

২৭.১০.০৮
।। ইত্তেফাক রিপোর্ট ।।

গ্রামীণ জীবনযাত্রা ও দেশের খাদ্য নিরাপত্তার স্বার্থে কৃষকদের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য ‘সামগ্রিক কৃষি সংস্কার কর্মসূচি’ প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন রাজনীতিবিদ ও কৃষক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

গতকাল রবিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘ক্যাম্পেইন ফর সাসটেইনেবল রুরাল লাইভলিহুডস (সিএসআরএল)’ এবং ‘কর্মজীবী নারী’ কর্তৃক আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ দাবি জানান। সভায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের বিদ্যমান ১৭টি কৃষি বিষয়ক নীতির মধ্যে বিরোধ ও অসামঞ্জস্যতা পরিহার এবং বিশ্বায়ন, খাদ্য নিরাপত্তা, গ্রামীণ জীবনযাত্রার উন্নয়নের জন্য সামগ্রিক কৃষি সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন প্রয়োজন।

সিএসআরএল এবং কর্মজীবী নারী’র সভাপতি শিরীন আখতারের সভাপতিত্বে সভায় জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ড. এম আব্দুর রাজ্জাক, ওয়ার্কার্স পাটির সাধারণ সম্পাদক বিমল বিশ্বাস, গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ ভট্টাচার্য, কৃষক লীগের সভাপতি মির্জা আব্দুল জলিল, সিএসআরএল’র সদস্য সচিব জিয়াউল হক মুক্তা, জাতীয় কৃষক জোটের সভাপতি ইকবাল হোসেন খান, জাতীয় কৃষক জোটের যুগ্ম আহবায়ক আনোয়ারুল ইসলাম বাবু, জাতীয় কৃষক সমিতির সভাপতি আনিসুর রহমান মল্লিক, ভূমিহীন সমিতির সভাপতি সুবল সরকার, বাংলাদেশ কৃষি ফার্ম ফেডারেশনের সভাপতি নূরুল আনোয়ার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সভায় দেশের ৩০টি কৃষি-প্রতিবেশ অঞ্চলের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মতামতের ভিত্তিতে প্রণীত সামগ্রিক কৃষি সংস্কার কর্মসূচির খসড়া উপস্থাপন করেন উন্নয়ন গবেষক শাহীন রহমান।

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করিতে সার উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হইতে হইবে

২৭.১০.০৮
সম্পাদকীয়
।। ইত্তেফাক ।।

ইউরিয়াসহ সব ধরনের রাসায়নিক সারের উচ্চমূল্য ও দুষ্প্রাপ্যতার কারণে কৃষি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হইয়া পড়িয়াছে। মাঠভরা এখন আমন ধান। ধানের ক্ষেতে শীষ বাহির হইবার মোক্ষম সময় ইহা। এই পর্যায়ে জমিতে শেষবারের মত ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা জরুরি হইয়া দেখা দেয়। সামনে আসিতেছে রবি মৌসুম। তারপরেই আবার বোরো সিজন। মাস দুয়েকের মধ্যে শুরু হইয়া যাইবে বোরো ধানের বীজতলা তৈরির কাজ। বোধগম্য কারণেই এই সময়টায় সারের চাহিদা বাড়িবে। কিন্তু আমাদের দেশে সারের দুর্ঘট সাংবাৎরিক সমস্যা হইয়া দেখা দিয়াছে। বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ৬টি ইউরিয়া কারখানায় ১৭ লক্ষ মেট্রিক টনের বেশি উৎপাদন হয় না। অথচ বৎসরে আমাদের ইউরিয়ার চাহিদা ২৮ লক্ষ টন। বাকী ১১ লক্ষ টন আমদানি করিতে হয় কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করিয়া। এইদিকে বিদেশেও ইউরিয়া দুষ্প্রাপ্য হইয়া গিয়াছে বলিয়া গত রবিবার (২৬ অক্টোবর) একটি রিপোর্ট বাহির হইয়াছে পত্রিকান্তরে।

এমন দিন হয়তো দূরে নয়, যখন উন্নয়নশীল ও দরিদ্র দেশের জন্য সারের সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থা কায়েম হইবে। অর্থাৎ কৃষি-নির্ভর দেশগুলি বহুক্ষেত্রে সার সরবরাহ ও বিক্রয়কারী দেশ বা বহুজাতিক ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের কাছে জিম্মি হইয়া পড়িবে। তেমন অবস্থায় যাহাতে কোনদিন পড়িতে না হয়, সেই চিন্তা এখনই করা উচিত। এখনই উচিত সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং সার উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার আবশ্যিক এবং সামগ্রিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। উল্লেখ করা যাইতে পারে আমাদের আভ্যন্তরীণ সার-ঘাটতির বর্তমান বাস্তবতায় চট্টগ্রামে স্থাপিত কাফকো সার কারখানা তেমন কাজে আসে না। এই কারখানায় বাংলাদেশের গ্যাস ব্যবহার করিয়া পর্যাপ্ত ইউরিয়া সার উৎপাদিত হইলেও বাংলাদেশের সমস্যা সমাধানে ইহার অবদান অতি সামান্য। কাফকোর নিকট হইতে আমাদের সার কিনিতে হয় যথারীতি আন্তর্জাতিক বাজারদর অনুযায়ী, যাহা আমদানিরই শামিল।

এই পরিস্থিতিতে দেশে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং খাদ্য নিরাপত্তা গড়িয়া তোলার যে কথা বলা হইতেছে, তাহা দূরপরাহত হইয়া থাকিবার সমূহ আশংকা। সারের সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিত করা না গেলে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা নিতান্তই অসম্ভব। আধুনিক কৃষি ব্যবস্থায় রাসায়নিক সার অপরিহার্য। সার, বীজ ও কীটনাশক- এই তিনটি উপকরণ ছাড়া কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়ানতো পরের কথা, বিপর্যয় দেখা দেওয়াই স্বাভাবিক। এই অবস্থায় দেশের অভ্যন্তরে ইউরিয়াসহ বিভিন্ন প্রকারের রাসায়নিক সারের উৎপাদন বাড়ান অত্যাবশ্যক।

প্রসঙ্গত এইখানে উল্লেখ করা বাঞ্ছনীয় যে, বাংলাদেশে সরকারি মালিকানায় সারের কারখানা রহিয়াছে ৬টি। ইহার মধ্যে ৪টি স্থাপিত হয় পাকিস্তান আমলে। ১৯৮১ সালে আশুগঞ্জে স্থাপন করা হয় জিয়া ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি। তারও দশককাল পরে জামালপুরের তারাকান্দায় প্রতিষ্ঠিত হয় যমুনা সার কারখানা । নতুন-পুরাতন মিলাইয়া বাংলাদেশের অর্ধ ডজন কারখানার সার উৎপাদন ক্ষমতা ২৩ লক্ষ টন হইলেও কার্যত উৎপাদিত হয় ১৭ লক্ষ টন। কোনো কোনো বছর উৎপাদন আরো কম হয়। ইহার কারণ বহুবিধ। প্রথমত অব্যবস্থাপনা, বিশৃংখলা এবং দুর্নীতি তো আছেই, উপরন্তু এইসব কারখানার মেশিনপত্র পুরনো এবং জীর্ণ। প্রায়শই বিকল হইয়া যায়। ফলে হ্রাস পায় উৎপাদন।

গত জুলাই মাসে সার কারখানাসমূহ সংস্কারের একটি কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়। এই সংস্কারের মাধ্যমে ২০১২ সাল নাগাদ দেশে ইউরিয়া সারের উৎপাদন ৫ লক্ষ টন বৃদ্ধি করা সম্ভবপর হইবে বলিয়া আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। ইহা সম্ভবপর হইলে ইউরিয়া আমদানি খাতে ব্যয় অনেকটাই হ্রাস পাইবে। কিন্তু, একটি স্বনির্ভর কৃষি ব্যবস্থাপনা গড়িয়া তুলিতে হইলে সার আমদানি শূন্যের কোঠায় নামাইয়া আনিতে হইবে। দেশে সরকারি এবং বেসরকারি খাতে আরো সার কারখানা স্থাপন করা দরকার। এই খাতে বিনিয়োগের জন্য দেশী-বিদেশী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করিতে হইবে। ইউরিয়া ছাড়াও অন্যান্য রাসায়নিক সারের আমদানি নির্ভরতা হ্রাস করিতে হইবে। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগের পথে যেসব অন্তরায় রহিয়াছে তাহা দূর করিতে হইবে। এইক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার অবসান এবং গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহের নিশ্চয়তা বিধান জরুরি। সারের উৎপাদন বাড়াইবার বিষয়টি সরকারের অগ্রাধিকার বিবেচনা লাভ করিবে, ইহাই আমাদের প্রত্যাশা।

ইউরিয়া সারের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা জরুরি

২৭.১০.০৮
ডেসটিনি ।। সম্পাদকীয় ।।

কৃষকের কাছে ইউরিয়া সারের গুরুত্ব কতটা তা বলার প্রয়োজন পড়ে না। সময়মতো চাহিদামাফিক সার না পেলে কৃষকের শ্রম ও অর্থ বিনিয়োগ যেমন নিরর্থক হয়ে পড়ে তেমনি ফলন-উৎপাদনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর সে কারণেই ফসল উৎপাদন মৌসুমে ইউরিয়া সারের দুষ্প্রাপ্যতা, উচ্চমূল্য কৃষকের বিশ্রামের ঘুম হারাম করে দেয়। এমন গুরুত্বপূর্ণ কৃষি উপকরণের উৎপাদন, আমদানি, সরবরাহ যদি কোনো কারণে বাধাগ্রস্ত, বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে তাহলে তা শঙ্কিত, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে তোলে সবাইকে। কারণ সময়মতো সার পাওয়া না গেলে উৎপাদনে ধস অনিবার্য। আর ফলন কম, উৎপাদন হ্রাস চরম খাদ্য সংকট ডেকে আনতে পারে। দেশের অর্থনীতিও হয়ে পড়তে পারে বিপন্ন, বিপর্যস্ত।
দেশে ইউরিয়া সারের উৎপাদন কমছেÑ তেমনই একটি উদ্বেগজনক সংবাদ। গ্যাস সংকটের কারণে দেশের ইউরিয়া সার কারখানাগুলোর উৎপাদন প্রতি বছরই হ্রাস পাচ্ছে। একই সঙ্গে গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো সরকার ইউরিয়া সারের মূল্যবৃদ্ধি ঘটিয়ে সার্বিক উৎপাদন ব্যবস্থাকে চরম ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। দেশে ইউরিয়া সারের উৎপাদন ছিল ১৭ লাখ টন, বিদেশ থেকে আমদানি করা হতো ১১ লাখ টন। কিন্তু গ্যাসের জোগান কমে যাওয়া এবং বিদ্যমান সার কারখানাগুলোর রুগ্ণপ্রায় অবস্থায় দেশে সারের উৎপাদন কমে আসায় আমদানির প্রয়োজন বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু ইচ্ছা করলেই বিশ্ববাজার থেকে সার কেনা যায় যত ইচ্ছা সেই পরিমাণে বাস্তব অবস্থা কিন্তু তা নয়। সার উৎপাদনকারী দেশগুলো সঙ্গত কারণেই নিজেদের চাহিদার কথা আগে ভাবে, পূরণ করে তারপর বাড়তি সার এমন সময়ে বাজারে ছাড়ে যখন আমাদেরও সারের চাহিদা কমে আসে। দেশে সারের উৎপাদন অব্যাহতভাবে হ্রাস পাওয়া, আমদানিতে জটিলতা, সারের উচ্চমূল্য স্বভাবতই কৃষি উৎপাদনের সামনে বড় হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে।
অথচ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে খাদ্য আমদানি বা বিদেশি সহায়তার মুখাপেক্ষী না থেকে নিজেদের উৎপাদন ব্যবস্থা জোরদার করা অধিক জরুরি, নির্ভরযোগ্য। কিন্তু সেজন্য ইউরিয়ার মতো কৃষি উপকরণের জোগান স্বাভাবিক রাখা আবশ্যক। হাইব্রিড ফসলের উৎপাদনে গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে। এ গুরুত্ব আরোপ যথেষ্ট নয়, যদি কৃষকের হাতে উৎপাদন উপকরণ তুলে দেয়া না যায়। অবশ্য রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহারের উপদেশ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু জৈব সারের জোগান সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এ অবস্থায় ইউরিয়ার জোগান কীভাবে স্বাভাবিক রাখা যায় তা ভাবনায় নেয়া আবশ্যক এবং এ কাজটি করতে হবে আগামী বোরো মৌসুমের আগেই। দেশে সারের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সার কারখানা নির্মাণ অবশ্যই করতে হবে ভবিষ্যতের কথা ভেবে। তবে চলমান উৎপাদন ব্যবস্থা সচল রাখতে ইউরিয়ার আগাম আমদানি জরুরি। আমদানির পথে কী জটিলতাÑ এসব নিয়ে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে সময়ক্ষেপণ না করে আমদানি নিশ্চিত করাই দেশের খাদ্য নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিতে পারে।

Sunday, October 19, 2008

জলবায়ু পরিবর্তনের দায় আমাদেরই

১৯.১০.০৮
ইত্তেফাক ।। তৌফিক আহমেদ

প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে জলবায়ু আর এর প্রভাবে প্রভাবিত হচ্ছে পৃথিবী ও পৃথিবীর মানুষ। কিন্তু, যারা সরচেয়ে ক্ষতিগ্র¯- হয় তাদের কাতারে রয়েছে অতি-দরিদ্র কৃষক, জেলে, বন-নির্ভর খেটে খাওয়া মানুষ। এরাই প্রধানত মারাত্মক ঝুঁকিগ্র¯- এবং অনিরাপদ জনগোষ্ঠি হিসেবে বিশ্ব দরবারে পরিচিত। এরা কিভাবে ক্ষতিগ্র¯- হয়? এরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়- জমির অভাবে, পানি এবং জৈব-নিরাপত্তার অভাবে, খাদ্যের উচ্চমূল্যের কারণে, সর্বশেষ ধারণা করা হচ্ছে খাদ্যশস্য থেকে জৈব-জ্বালানি প্রস্তুতকরণের কারণে। কৃষিজীবি মানুষসহ সাধারণ দরিদ্র মানুষরা এসব কারণে ভুগে চলেছে সবকিছুর অভ্যš-রে। বিশ্ব খাদ্য দিবস এবারও অš-ত ৮৬২ মিলিয়ন ভুক্তভোগী অপুষ্টিজনিত মানুষের অধিকারের বয়ান করল ১৬ অক্টোবর, ২০০৮ তারিখে। এই মানুষের বেশিরভাগই বাস করে প্রত্যš- গ্রামাঞ্চলে যেখানে তাদের আয়ের প্রধান উৎস কৃষি। বৈশ্বিক উষ্ণতা এবং জৈব-জ্বালানির উত্তরোত্তর হুমকি প্রতিদিনই বিশ্বে বাড়িয়ে চলছে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা এবং এই ক্রমবর্ধমান ক্ষুধার্ত মানুষ ভবিষ্যতে আরও বেশি হারে বাড়বে। জলবায়ু পরিবর্তন নিঃসন্দেহে আবাদি জমিতে আনছে বিরাট পরিবর্তন। এতে করে শুধু যে জমি আক্রাš- হচ্ছে তা নয়, বরং বিভিন্ন ধরনের ফসল, মৎস্যসম্পদ এমন কি গবাদিপশুও আক্রাš- হচ্ছে হুমকির মুখে পড়ছে জনস্বাস্থ্য, কৃষি উৎপাদনশীলতা এবং সৃষ্টি হচ্ছে ফসলের নতুন ধরনের রোগ। তাপমাত্রা পরিবর্তন হচ্ছে। মারাত্মক রুক্ষ আবহাওয়া ছড়িয়ে পড়ছে গোটা বিশ্বে। মানুষের ঘরবাড়ি চলে যাচ্ছে নদী এবং সমুদ্রগর্ভে। বিলীন হয়ে যাচ্ছে জনগোষ্ঠি এবং সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হল কৃষি-উৎপাদনশীলতার উৎসগুলো নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। জনবসতি ক্রমাগত স্থানাš-রিত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কৃষকরা নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে। পানির দু®প্রাপ্যতা, বিরূপ আবহাওয়ার কারণে বন্যা এবং অতিবৃষ্টির কারণে মাত্রার অতিরিক্ত পানি প্রাপ্তিসহ নানা সমস্যার কারণে ফসল উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। একদিকে যেমন পানি একটি আতংক হিসেবে হাজির হচ্ছে, একইভাবে আর এক আতংক হচ্ছে খরা। একই বিশ্ব ভিন্ন ভিন্ন সময় ভিন্নরূপে আবির্ভূত হচ্ছে আমাদের সামনে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায় যে পদক্ষেপগুলোর কথা বলা হচ্ছে তার ভেতর প্রধান বিষয়গুলো হচ্ছে- জলবায়ু প্রভাবের ধরণগুলো কি হতে পারে তার একটি পরিপূর্ণ মডেল প্রস্তুতকরণ, জীবন-জীবিকায় বৈচিত্র আনায়ন, নতুন কৃষি পদ্ধতি, মৎস্যচাষে নতুন পদ্ধতি গ্রহণ, আবহাওয়া এবং জলবায়ুর পূর্বাভাস কেন্দ্র ও নির্ণয় পদ্ধতির উন্নয়নসাধন, আবহাওয়া সতর্কীকরণ পদ্ধতির উন্নয়ন, দুর্যোগ মোকাবেলা ব্যবস্থার উন্নয়ন, জমি ব্যবহার নীতিমালা, খাদ্য নিরাপত্তার নানান কর্মসূচি, মৎস্য এবং বনাঞ্চল নীতিমালার পরিপূর্ণ সমন্বয় সাধনসহ কৃষকের সর্বশ্রেষ্ঠ উদ্ভাবনের সঠিক এবং যথার্থ মূল্যায়ন করে নব-উদ্ভাবন খাদ্য সংকট মোকাবেলায় কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। এজন্য স্থানীয়, জাতীয় এবং আš-র্জাতিক পর্যায়ে সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে।

বিকল্প আয়ের উৎস : সামুদ্রিক শৈবাল চাষ

১৯.১০.০৮
ইত্তেফাক ।। মো. তৌফিক আরেফীন

যে জাতি পুষ্টি নিরাপত্তায় যত সবল, সে জাতি পৃথিবীতে তত বেশি অগ্রগামী। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ অপুষ্টির শিকার। শুধু ভিটামিন ‘এ’ -এর অভাবে দেশে প্রতি বছর ৩০ থেকে ৪০ হাজার শিশু অন্ধ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে সামুদ্রিক মৎস্যের জল আয়তনের অর্থনৈতিক এলাকা ৪১,০৪১ বর্গ নটিক্যাল মাইল হতে পারে পুষ্টি নিরাপত্তার সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। সফল শৈবাল চাষে উৎপাদিত সামুদ্রিক শৈবাল এনে দিতে পারে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা।

রফতানিযোগ্য পণ্য সামুদ্রিক শৈবাল : বর্হিবিশ্বে সামুদ্রিক শৈবালের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিশ্বে শৈবালের প্রতি বছরে উৎপাদন প্রায় ১০ মিলিয়ন টন যার আর্থিক মূল্য ১২ বিলিয়ন ডলার। এ্যাকুয়াকালচার উৎপাদনে শৈবালের অবস্থান দ্বিতীয়। শৈবাল সম্ভাবনাময় জলজ উদ্ভিদ যার পুষ্টিমান অন্যান্য জলজ প্রজাতির চেয়ে কম নয়।

শৈবাল চাষ, বাংলাদেশ প্রেক্ষিত : প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে প্রায় ১৪০ ধরনের শৈবাল জন্মে। তাছাড়া প্যারাবন এলাকাতেও ১০ প্রকারের শৈবাল পাওয়া যায়। দেশে শৈবাল চাষ একটি সম্পূর্ণ নতুন উদ্যোগ এবং এর চাষ পদ্ধতি খুব সহজ। সেন্টমার্টিন দ্বীপে পরীক্ষামূলকভাবে দুটি প্রজাতি ঈধঁষবৎধ ৎধপবসড়ংধ, ঐুঢ়হবধ ংঢ়. স্থানীয় জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিভিন্ন চাষ পদ্ধতি অবলম্বন করে বাংলাদেশে প্রথমবারের মত শৈবাল চাষের সূচনা হয়। গবেষণা কার্যক্রমের অগ্রনায়ক ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষক ড. মোহাম্মদ জাফর। তাঁর গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে বাংলাদেশের উপকূলীয় জলরাশিতে শৈবাল চাষ সম্ভব।

শৈবাল চাষে তুলনামূলক সুবিধা : শৈবাল চাষীদের জন্য স্বল্প বিনিয়োগের নিশ্চয়তা শৈবাল চাষকে স¤প্রসারিত করতে পারে অনেকখানি। গৃহস্থালী উপকরণ (দড়ি, বাঁশ, জার, প¬¬াস্টিক বয়াঃ) ব্যবহার করে চাষীরা সহজে এ চাষ পদ্ধতি শুরু করতে পারে। জোয়ার ভাটার মাঝের স্থানে অধিকাংশ শৈবাল জন্মায়। সে কারণে ভূমিহীন চাষীগণ খাস সরকারি অনাবাদি জলাভূমিতে বিনা বাধায় চাষ করতে পারবে।

শৈবালের ওষুধি গুণ : আš-র্জাতিক বাজারে শৈবালের দিন দিন চাহিদা বাড়ছে, কারণ শৈবালে আছে ওষুধিগুণ। শৈবাল টিউমার, রক্তচাপ, হৃদরোগসহ নানা রোগের ঝুঁকি কমায়।

শৈবাল চাষ কেন : অনুসন্ধানে দেখা যায় প্রাকৃতিক পরিবেশে জন্মানো শৈবাল বেশিরভাগ নষ্ট হয়ে যায়। স্থানীয় জনগণ ঐুঢ়হবধ শৈবাল কুড়িয়ে, তা শুকিয়ে বিদেশে রফতানি করে এবং কিছু শৈবাল সার হিসেবে ব্যবহার করে। পর্যাটকদের অবাধে চলাফেরা, নৌ-চালনা, পাথর আহরন এসব কারণে সেন্টমার্টিন দ্বীপে শৈবালের আবাসস্থলে কিছুটা অসুবিধা হয়। প্রাকৃতিক উৎস থেকে শৈবাল সংগ্রহ না করে বিভিন্ন পদ্ধতিতে শৈবাল চাষাবাদ করলে শৈবালের গুণগতমান যেমন রক্ষা হয় তেমনি আর্থিকভাবে লাভবানও হওয়া যায়।

বিকল্প আয়ের উৎস : উপকূলীয় অঞ্চলের জনগণের জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম খুব সীমিত। এ অঞ্চলের জনসাধারণ বেশিরভাগ সময় বেকার থাকে। তারা দৈনিক ভিত্তিতে আয় করে। অর্থ জমানোর সুযোগ থাকে না। ফলে আর্থিক অভাব অনটন তাদের লেগেই থাকে, বাড়ে ঋণের বোঝা। পরিণামে চাষীপল¬ীতে পারিবারিক ও সামাজিক অস্থিরতা বিরাজ করে। উপকূলীয় অঞ্চলের চাষীদের বিকল্প আয়, স্থিতিশীল পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টিতে শৈবাল চাষ উলে¬¬খযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।

শৈবাল চাষের জন্য বিবেচ্য বিষয় : ১. বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতি নির্বাচন ২. সঠিক স্থান নির্বাচন ৩. বাঁশের ফ্রেম তৈরির কৌশল ৪. শৈবাল আহরনের কৌশল ৫. শৈবাল প্রক্রিয়াজাতকরণ কৌশল।

শৈবাল চাষ পদ্ধতি : বাংলাদেশে অনেকগুলো চাষযোগ্য ও বাণিজ্যিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ শৈবাল হচ্ছে ঈধঁষবৎধ ৎধপবসড়ংধ, ঐুঢ়হবধ ংঢ়, ঝধৎমধংংঁস। শৈবাল চাষের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। লোকজনের আনাগোনা কম ও পরিষ্কার সমুদ্রের পানিতে খুঁটি বসাতে হবে। তারপর খুঁটির দুপ্রাšে- দড়ি আটকিয়ে এবং বাঁশের ফ্রেম তৈরি করে তার মধ্যে জাল লাগিয়ে শৈবাল চাষ করা যায়। দড়ির ফাঁকের মাঝে শৈবাল টিস্যু নরম সুতা দিয়ে আটকিয়ে দিতে হবে যেন পানির স্রোতে ভেসে না যায়।

শেষ কথা : উপকূলীয় অঞ্চলের দারিদ্র্য বিমোচন, পারিবারিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা আনয়নে শৈবাল চাষ খুলে দিতে পারে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার নতুন দুয়ার। পুরুষের পাশাপাশি মহিলাদের অংশগ্রহণে নতুন মাত্রা যোগ করে জনগণের পুষ্টির অভাব পুরণ ও রোগ প্রতিরোধে আগামী দিনে কার্যকর ভূমিকা রাখবে এই শৈবাল চাষ।

মো. তৌফিক আরেফীন, কৃষিবিদ, ঢাকা।

জাপানে বাংলাদেশী বিজ্ঞানীর ধানের লবণাক্ততা ও খরা সহনশীল নতুন জ্বীন আবিষ্কার

১৯.১০.০৮
ইত্তেফাক ।। ড. নিয়াজ পাশা

বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) বিজ্ঞানী ড. মোঃ ইমতিয়াজ উদ্দিন জাপানের টট্টরি ইউনিভার্সিটির “প¬ান্ট বায়োলজি ল্যাব” -এ গবেষণার মাধ্যমে ধানের লবণাক্ততা ও খরা সহনশীল নতুন একটি জ্বীন চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি এ জ্বীনের নাম দিয়েছেন ঙংঅজচ। ধানে এ জ্বীন প্রয়োগের মাধ্যমে লবণাক্ততা ও খরা সহনশীল নতুন ধানের জাত উদ্ভাবনে সক্ষম হবেন। ফলে দেশের বি¯-ীর্ণ উপকূলীয় লবণাক্ত এবং খরাপ্রবণ বরেন্দ্র এলাকায় ধানচাষ সম্ভব হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

দীর্ঘ চার বছরব্যাপী পিএইচডি’র গবেষণা কাজের অংশ হিসেবে মোঃ ইমতিয়াজ উদ্দিন এ সাফল্যলাভ করেন এবং স¤প্রতি পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁর কাজের স্বীকৃত স্বরূপ ডিগ্রী প্রাপ্তির আগেই তাঁকে এ গবেষণা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য দুই বছরের জন্য জাপান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ জে.এস.পি.এস. বৃত্তি প্রদান করেছেন। ইতোমধ্যেই ড. মোঃ ইমতিয়াজ উদ্দিন তাঁর চিহ্নিত জ্বীন ধানে ট্্রান্সফারের কাজ শুরু করেছেন। এ ছাড়াও ড. মোঃ ইমতিয়াজ উদ্দিন ইউ.এস. ট্রপিক্যাল জাপানিকা কাল্টিভার “ড্রিউ” নামক ধানের জাত থেকে ৪টি মিউট্যান্ট লাইন সনাক্ত করেছেন যা ১০ ডেসি/ সাইমন (১০ ফঝ/স ঊঈ) লবণাক্ততার মাঝেও সšে-াষজনক ফলন দিয়েছে।

ড. মোঃ ইমতিয়াজ উদ্দিন তাঁর দীর্ঘ চার বছরের গবেষণাকালীন সময়ে উক্ত জ্বীনকে (ঙংঅজচ) ধান গাছ থেকে আলাদা করে তামাক গাছে প্রতিস্থাপন করে দেখতে পান যে, উক্ত জ্বীন বহন করার কারণে ট্রান্সজেনিক তামাক গাছ ২০ ডেসি সাইমন (২০ ফঝ/স ঊঈ) লবনাক্ততা এবং খরা প্রতিরোধ করতে পারে। অথচ সাধারণ তামাক গাছ তা সহ্য করতে পারে না। তিনি বিশেষ ধরনের ইলেক্ট্রনিক মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে কোষের ভ্যাকিওল (ঠধপঁষবং) পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পান যে, উক্ত জ্বীনের কারণে লবণাক্ততার জন্য দায়ী সোডিয়াম আয়ন (ঘধ+) কোষের ভ্যাকিওলে স্থানাš-রিত হয় এবং কোষরসে থাকে না। ফলে কোষ স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারে ও লবণাক্ততা প্রতিরোধ করার পাশাপাশি খরাও প্রতিরোধ করতে পারে। তাঁর এই গবেষণালব্ধ ফলাফল পৃথিবী বিখ্যাত জার্নাল “প¬ান্ট ও সেল ফিজিওলজি” তে প্রকাশিত হয়েছে এবং জুন ২০০৮ সালের সর্বাধিক এ্রক্সেসেবল গবেষণা প্রবন্ধ হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। এখানে উলে¬খ্য যে, ইতোপূর্বে ড. মোঃ ইমতিয়াজ উদ্দিন জার্মানী ও আমেরিকা থেকে “বায়োটেকনোলজী” বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।

আধুনিক কৃষি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

১৯.১০.০৮
।। ইত্তেফাক ।। সাহারা তুষার

পৃথিবীর জনসংখ্যা বাড়ছে দ্রুত। সেই সাথে বাড়ছে বিশাল এই জনসংখ্যার খাদ্যের চাহিদা। কিন্তু সে তুলনায় পিছিয়ে আছে খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা। শিল্পকারখানা আর বসতবাড়ি নির্মাণে গ্রাস করছে আবাদি জমি। আমরা পারছি না খাদ্য উৎপাদনের সাথে তাল মিলিয়ে জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে। তাই বারবার সন্মুখীন হচ্ছি খাদ্য সংকটের। লোকসংখ্যার তুলনায় কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা প্রথম থেকে অপ্রতুল থাকার কারণে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশে হয়েছে খাদ্য রায়ট। বেশিদিন আগের কথা নয়Ñ সংবাদ সংস্থা এএফপি এপ্রিল, ২০০৮ এর প্রথম সপ্তাহে জানিয়েছে বিশ্বে ৩৩টিরও বেশি দেশে তীব্র খাদ্য সংকট চলছে যার ফলে বিরাজ করছে গণ-অসšে-াষ। ইতোমধ্যে হাইতিতে খাদ্যের জন্য দাঙ্গা হয়ে ১০জন মারা গেছে। মিশরসহ কয়েকটি দেশের সরকারি খাদ্য গুদামে হয়েছে লুটপাট।

বিশ্বের ৩৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশও আছে। নীতি নির্ধারক ও জনগণের মধ্যে একটা অস্থিরতা বিরাজ করছে বর্তমানে।

এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে কৃষি বিজ্ঞানীদের চেষ্টার কমতি নেই। সেরা জাতের বীজ উদ্ভাবন, রোগবালাই প্রতিরোধ, খরা, বন্যা ইত্যাদি দুর্যোগ সহনশীল ও উচ্চ ফলনশীল ফসল আবিষ্কারের টেষ্টা চলছে নিরš-র। বিশ্ব বিবেককে ভাবিয়ে তুলেছে আজকের জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা।

বিশ্বের এই চরম দুঃসময়ে কৃষিবিদ হাবিবুর রহমান দেশ ও জাতির হাতে তুলে দিলেন “আধুনিক কৃষি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি” নামে একটি মূল্যবান গ্রন্থ। গ্রন্থের শিরোনামের দিকে তাকালে আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে ভেতরকার বিষয়বস্তু। লেখক গ্রন্থে বাংলাদেশের অতীত ইতিহাস, বর্তমান কৃষির ব্যবস্থা, কৃষি শিক্ষাসহ গবেষণা, কৃষি বিভাগের কর্মতৎপরতা এবং বাংলাদেশে কৃষির ভবিষ্যত নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন অভিজ্ঞতার আলোকে। বাংলাদেশের বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে কৃষি খাতে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব; কৃষি ও অকৃষি খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দেশজ উৎপাদন কীভাবে বৃদ্ধি করা যায় এবং কী কী ধরনের সমন্বিত প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গড়ার মাধ্যমে বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব সবগুলো বিষয়ই স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন প্রাণঞ্জল ভাষায়। পাশাপাশি তুলে ধরেছেন মাটির শ্রেণীবিভাগ, পানি ধারণ ক্ষমতা ও নিষ্কাশন ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে ফসল উৎপাদন। গ্রন্থটিতে আরও যোগ হয়েছে আধুনিক ফসল উৎপাদনের কৌশল, বপন ও রোপণ কাল, বীজ ও চারার পরিমাণ নির্ধারণ, সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি, ফসলের পরিচর্যা, রোগবালাই সনাক্তকরণ ও তার প্রতিকার, মানব দেহের জন্য খাদ্য ও পুষ্টিগুণ, বয়সভিত্তিক খাদ্যের চাহিদা ইত্যাদি। গ্রন্থটির প্রতিটি অধ্যায়ে বিষয়ভিত্তিক বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্ত দিয়ে লেখক বাংলাদেশের কৃষি খাতের সম্ভবনা, সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তার বিভিন্ন কৌশল উপস্থাপন এবং দারিদ্র্য বিমোচনের কলা-কৌশল সুবিন্যা¯-ভাবে উপস্থাপন করেছেন।

সা¤প্রতিক তথ্যসমৃদ্ধ গবেষণা গ্রন্থÑ “আধুনিক কৃষি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি” শুধুমাত্র কৃষি গবেষক, অর্থনীতিবিদ গোষ্ঠির কাছে সুপাঠ্য হিসেবে বিবেচিত হবে এমন নয় বরং সাধারণ পাঠকের কাছেও গ্রন্থটি বহুল সামাদৃত হবে বলে আশা করি।

খাদ্য সংকট নিরসনে কাসাবা

১৯.১০.০৮
ইত্তেফাক ।। বিশেষ নিবন্ধ

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতি ইঞ্চি জমির ব্যবহার করতে সম্ভাবনাময় ফসল কাসাবা হতে পারে দেশের অন্যতম খাদ্য। দেখতে শিমুল গাছের মত, এই কাসাবার গাছই দূর করতে পারে দারিদ্র্য। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রধান খাদ্য এবং উৎপাদনের দিক থেকে ধান, গম, ভুট্টা ও গোলআলুর পরই কাসাবা স্থান করে নিয়েছে। উচ্চ শর্করা সমৃদ্ধ কাসাবা হচ্ছে কন্দ জাতীয় ফসল। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিচ্ছিন্নভাবে এর চাষাবাদ হয়ে আসছে। এ পর্যš- কাসাবার দুটি জাতের সন্ধান পাওয়া গেছে, যা ফিলিপাইন থেকে আসছে। দেশের ক্রমবর্দ্ধমান খাদ্য ঘাটতি ও মঙ্গা মোকাবেলায় কাসাবা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। এর চাষের জন্য কোন ফসলি জমির প্রয়োজন হয় না। দেশে যে পরিমাণ অনাবাদি জমি আছে তাতেই চাষ করা যায় কাসাবা। কাসাবা চাষে উৎপাদন খরচ কম ও ফলন বেশি হয়। অল্প পরিশ্রমে অধিক ফসল পাওয়া যায় তাই কাসাবা একটি উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় ফসল আমাদের দেশে। তবে পরিবেশ ও ভবিষ্যতের কথা চিš-া করে যে কোন কৃষি কাজের পূর্বশর্ত হচ্ছে সুষম সার ব্যবহার এবং জৈব প্রযুক্তির কৃষির উপর নির্ভরশীল হওয়া।

কাসাবা নিয়ে ইতোপূর্বে অনেক গবেষণার কারণে কাসাবার গুরুত্ব দিন দিন বেড়েই চলছে। এখন বরিশালের গৌরনদীতে সল্পপরিসরে এর চাষ শুরু হয়েছে। মোটা শেকড়ের মত মূলই হচ্ছে কাসাবা। যেটি কাঁচাও খাওয়ার যোগ্য। ফলন শুরু হওয়ার পর সারা বছরই মাটি খুঁড়ে কাসাবা সংগ্রহ করা যায়। একটি গাছ কমপক্ষে ৩ বছর ফলন দেয়, আবার গাছের পুষ্ট ডাল থেকে বীজ তৈরি করে খুব অল্প দিনেই গড়ে তোলা সম্ভব কাসাবার বাগান।

কাসাবায় রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টিগুণ। উচ্চ ক্যলোরিযুক্ত কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ ফসল এই কাসাবা। কাসাবা থেকে উন্নতমানের সাদা আটা পাওয়া যায় যা দিয়ে রুটি, বিস্কুট, চিপসসহ নানাবিধ খাদ্য তৈরি করা যায়। এছাড়া শাগু, বিয়ার, পোলট্রিফিড, বস্ত্র ও কাগজ তৈরির শিল্পে প্রচুর কাসাবা ব্যবহার হয়।

কাসাবায় সধারণত যে সব রোগ বা পোকামাকড় আক্রাš- করে তার মধ্যে হোয়াইড গ্রাব, নেমাটোড, উঁই পোকা এবং ইঁদুর উলে¬খযোগ্য। সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করে ওষুধ ব্যবহার করলে এ সব রোগ ও পোকা দমন করা যায় সহজে। গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, জৈব প্রযুক্তিতে কাসাবা চাষ করলে পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয়। কাসাবা যদিও খরা সহনশীল তারপরও খরা মৌসুমে প্রতি সপ্তাহে পানি সেচ দিতে পারলে ভাল ফলন পাওয়া যায়।

কাসাবা সাধারণত বর্ষা মৌসুমে রোপণ করতে হয়। তবে সেচ ব্যবস্থার আওতায় এনে বছরের যে কোন সময় রোপণ করা যায়। কাসাবার বংশবি¯-ার সাধারণত স্টেম কাটিংয়ের মাধ্যমে করা হয় ৮ থেকে ১২ মাস বয়সের মধ্যে। এমন কাসাবা নির্বাচন করতে হবে যার রোগ ও পোকামাকড় মুক্ত কাণ্ড চারা তৈরির জন্য আদর্শ। কাসাবা চাষের জমিতে সাথী ফসল হিসেবে স্বল্পমেয়াদি ফসলও চাষ করা যায়।

গবেষণায় দেখা গেছে, পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যফসলের একটি হচ্ছে এই কাসাবা। খরাপ্রবণ অঞ্চলের জন্য এর আবাদের উপযোগিতা ধরা হলেও মূলত যেকোন মাটিতেই এর আবাদ সম্ভব। কম খরচে ও সহজে দরিদ্র কৃষকরা কাসাবা উৎপাদন করতে পারে বিধায় অনুন্নত ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে ব্যাপকভাবে কাসাবার চাষ হচ্ছে। এমনকি আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের প্রধান খাদ্য এই কাসাবা। কাসাবা গাছ সাধারণত ৫ থেকে ৮ ফুট পর্যš- লম্বা হয়। কাসাবার মূল মূলত খাদ্য উপাদান হিসেবে বেশি ব্যবহৃত হলেও এর পাতা, কাণ্ড সবই খাদ্য উপযোগী। বিশেষজ্ঞরা কাসাবাকে একটি সুষম খাবার হিসেবে আখ্যায়িত করছেন। কাসাবা গাছের পাতার প্রোটিন এবং ডিমের প্রোটিনের মান সমান।

আমাদের দেশে কাসাবা উৎপাদনে যে সম্ভাবনা রয়েছে তা বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক কারণ ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগের অভাবে সে সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। আর তারই কারণে উৎপাদনে দেখা দিচ্ছে মন্থরগতি। লাভজনক বিকল্পখাদ্য কাসাবা সম্পর্কে তৃণমূল পর্যায়ে কৃষকদের বুঝাতে পারলে কৃষকদের মাঝে আগ্রহের সৃষ্টি হবে। কাসাবা চাষ সমগ্র বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে স¤প্রসারণ করতে পারলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারবে। পরিকল্পিত কাসাবা চাষে কৃষক পরিবারে অতিরিক্ত আয় ও কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। বাংলাদেশের আবহাওয়া কাসাবা চাষের উপযোগী। কৃষি ও শিল্পভিত্তিক এই কাসাবা উৎপাদনের মাধ্যমে মঙ্গা কবলিত জনপদের হতদরিদ্র জনগণের বাড়তি আয় তথা দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে এ পণ্য রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করার একটি উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণের মধ্য দিয়ে খুব দ্রুত এই কাসাবা আবাদ দেশব্যাপী স¤প্রসারণ করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। ভাতের বিকল্প খাদ্য হিসেবে কাসাবা জনপ্রিয় করা হলে আগামীর খাদ্য নিরাপত্তার প্রশ্নে এটি হতে পারে একটি মাইলফলক।

-মোঃ আহছান উল¬াহ

কৃষক ও সংগঠক, গৌরনদী, বরিশাল

কৈ মাছের কৃত্রিম প্রজনন

১৯.১০.০৮
মাটি ও মানুষের কুষি
ইত্তেফাক ।। এ. কে. এম নূরুল হক


কৈ মাছের কৃত্রিম প্রজননের জন্য আমরা এর আগে সিস্টার্নে বা হাউজে ওভারহেড ট্যাংক এর পানির স্রোত ব্যবহার করে হরমোন প্রয়োগের মাধ্যমে রেনু উৎপাদনের কৌশলের কথা উলে¬খ করেছিলাম। এখন এমন একটি কৌশলের কথা উলে¬খ করছি যেখানে কৈ মাছের প্রজননের জন্য কোন ওভারহেড ট্যাংক এর প্রয়োজন পড়বে না বা কোন হাউজ বা সিস্টার্নেও প্রয়োজন পড়বে না। শুধুমাত্র একটি হাপা হলেই এই মাছের প্রজনন করা সম্ভব। চাহিদামত বা ইচ্ছানুযায়ী লক্ষ লক্ষ রেনু এবং পোনা উৎপাদন করা যাবে। যার ফলে একজন মৎস্যচাষী অš-তপক্ষে পোনা কেনা থেকে অনেক টাকা বাচাতে পারবেন।

পুকুর প্রস্তুতকরণ : যে পুকুরে কৈ মাছকে ইঞ্জেকশন দেওয়ার জন্য নির্বাচন করা হবে সেই পুকুরটিকে প্রথমেই ভালভাবে শুকিয়ে নিতে হবে। পুকুরের ভেতরের চারপাশের যাবতীয় ঘাস বা ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করতে হবে। তারপর পুকুরের চারপাশ দিয়ে ভালভাবে জাল দিয়ে বেড়া দিতে হবে যাতে বাইরে থেকে কোন ব্যাঙ বা সাপ পুকুরের ভেতর না ঢুকতে পারে। তারপর যেদিন কৈ মাছকে ইঞ্জেকশন দেওয়ার জন্য নির্বাচন করা হবে ঠিক সেদিনই পুকুরে পানি ঢুকাতে হবে। অন্যথায় পুকুরে পানি তোলার পর ২/৩ দিন দেরি হয়ে গেলে ওই পানিতে প্রাণী প¬াংটন জন্মাবে। যার কারণে কাঙ্খিত পরিমাণে পোনা উৎপাদন সম্ভব হবে না। অর্থাৎ প্রাণী প¬াংটনে কৈ মাছের রেনু ছোট হওয়ার কারণে রেনুগুলোকে সহজেই নষ্ট করতে পারে।

হাপা সেটিং ও প্রজনন কৌশল : পানি উচ্চতা ২ ফুট হলে ওই দিনই পুকুরে হাপা সেট করতে হবে। পুকুরে হাপা সেটিং করার পর বিকেলের দিকে অর্থাৎ তিনটা চারটার দিকে হাপা পুকুরে স্থাপন করে কৈ মাছগুলোকে ইঞ্জেকশনের জন্য বড় পাতিল করে পুকুরের কাছে আনতে হবে। এরপর পুকুরে স্থাপিত হাপায় মাছগুলোকে ইঞ্জেকশন করে হাপায় ভরতে হবে।

ইঞ্জেকশন প্রয়োগ পদ্ধতি : প্রতি কেজি স্ত্রী কৈ মাছকে ৭/৮ মি:গ্রা: পিজি দিয়ে ইঞ্জেকশন করতে হবে। প্রথমে ১ মি:লি: এর একটি ইনসুলিন সিরিঞ্জ নিতে হবে যে সিরিঞ্জে ৫০টি দাগ থাকতে হবে। বাজারে ১০০ দাগ সম্পন্ন পর্যš- ইনসুলিন সিরিঞ্জ পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে ৫০ দাগ মাত্রার সিরিঞ্জ ব্যবহার করতে হবে। সাধারণত কৈ মাছের ক্ষেত্রে ১ কেজি মাছের জন্য ০.৫ মি: লি: পানি ব্যবহার করা যায়। সেক্ষেত্রে প্রথমে ১ কেজি মাছের জন্য ৮ মি: গ্রা: পিজি একটি কাচের বাটিতে ভালভাবে পিষিয়ে তারপর ধীরে ধীরে ওই ১ মি:লি: পানি মেশাতে হবে। এভাবে ১ কেজি স্ত্রী কৈ মাছের ইঞ্জেকশনের জন্য দ্রবণ প্রস্তুত হয়ে গেল। আমরা আগেই উলে¬খ করেছি যে সিরিঞ্জে দাগ থাকবে ৫০ টি। তা হলে প্রতিটি দাগের জন্য আমরা ২০ গ্রাম ওজনের মাছকে ইঞ্জেকশন করতে পারবো। যদি কোন মাছের ওজন ১০০ গ্রাম হয় তাহলে ৫ দাগ ওষুধ মিশ্রিত দ্রবণ ব্যবহার করতে হবে। এই হিসেবে সবগুলো স্ত্রী মাছকে ইঞ্জেকশন করে তারপর পুরুষ মাছকে ইঞ্জেকশন করতে হবে। ইঞ্জেকশন করে তারপর পুরুষ মাছকে ইঞ্জেকশন করতে হবে। পুরুষ মাছের ক্ষেত্রে ১ কেজি মাছের জন্য মাত্র ৫ মি: গ্রা: পিজি মিশিয়ে উপরোলি¬খিতভাবে প্রয়োগ করে সবগুলো স্ত্রী এবং পুরুষ মাছকে একসাথে হাপায় ভরতে হবে।

এই পদ্ধতিতে রেনু উৎপাদনের জন্য থাই জাল (পলিথিন জাতীয়) দিয়ে একটি হাপা তৈরি করতে হবে। হাপার মাফ হবে দৈর্ঘ্যে দেড় মিটার প্র¯ে- ছয় মিটার। হাপাটি সব দিক থেকেই একই নেট দিয়ে আবদ্ধ থাকতে হবে। আর তা না হলে প্রজননের সময় মাছ বেরিয়ে যেতে পারে। প্রথমে এই হাপাটি তৈরি করার পর পুকুরে ১.৫/২ ফুট পানিতে করতে হবে। যাতে হাপাতে কমপক্ষে ১ ফুট পানি থাকে। হাপার উপরের অংশের এক কোণায় সামান্য খোলা রেখে মাছগুলোকে পি.জি. হরমোন দিয়ে ইঞ্জেকশন করার পর হাপার এক কোণার খোলা অংশ দিয়ে হাপাতে মাছগুলোকে ছেড়ে দিতে হবে। সাধারণত বিকেল ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে মাছগুলোকে ইঞ্জেকশন দিয়ে হাপাতে ছাড়তে হবে। অর্থাৎ ৭/৮ঘন্টা পর অর্থাৎ গভীর রাতে মাছগুলো যাতে ডিম পাড়ার সময় হয়। এরপর সন্ধ্যার পর থেকে পুকুরের পাশে যে কোন শ্যালো দিয়ে ওই হাপার আশপাশ দিয়ে পানির প্রবাহ দিতে হবে। এভাবে ৫/৬ ঘন্টা পানি দিলেই ওই হাপাতে কৈ মাছ ডিম পারবে। কৈ মাছের ডিমগুলো ভাসমান বিধায় ওই ডিমগুলো হাপার জালের ফাঁক দিয়ে অনায়াসে পুকুরে চলে যাবে। সকালের দিকে ডিমপাড়া শেষ হলে কৈ মাছসহ হাপাটিকে পানি থেকে উঠিয়ে ফেলতে হবে। পুকুরে শুধুমাত্র ভাসমান অবস্থায় ডিমগুলো থেকে যাবে। ডিম দেওয়ার ২০ ঘন্টার মধ্যে ডিম থেকে বাচ্চা বের হবে। বাচ্চা বের হওয়ার ৭২ ঘন্টা পর থেকে ডিম সিদ্ধ করে গ¬াস নাইলন কাপড় দিয়ে ছেঁকে রেনু পোনাকে খাবার দিতে হবে দিনে অš-ত ৩ বার। এবাবে ১ সপ্তাহ ডিমের কুসুম খাওয়ানোর পর নার্সারি ফিড দিতে হবে আরও ১৫ দিন। রেনু ফোটা থেকে ২২ দিনের মধ্যে পোনা তৈরি হয়ে যাবে। এভাবে পুকুরে হাপাতে কৈ মাছের ব্র“ড মাছকে ইঞ্জেকশন দিয়ে অনায়ায়ে ইচ্ছানুযায়ী রেনু এবং পোনা উৎপাদন করা সম্ভব।

এ. কে. এম নূরুল হক, ময়মনসিংহ

খাদ্যনিরাপত্তায় উৎপাদন বাড়াতে হবে

১৯.১০.০৮
।। ডেসটিনি ।। বিশেষ নিবন্ধ

প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দীন আহমদ দেশে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশজ উৎপাদন বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। গত বৃহস্পতিবার বিশ্ব খাদ্য দিবস-২০০৮ উপলক্ষে চীনমৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে কৃষি মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ গুরুত্বারোপ করেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, খাদ্যনিরাপত্তা মানে কেবল খাদ্যশস্য উৎপাদন ও বাজারজাত করা নয়। বরং এর মানে একটি স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ জীবনের লক্ষ্যে পর্যাপ্ত পুষ্টি ও তুলনামূলক নিরাপদ খাবার পাওয়া। কৃষককূলকে উৎসাহিত করার জন্য তিনি ঘোষণা করেন, এ বছর থেকে বছরের একটি নির্দিষ্ট দিন জাতীয় কৃষি দিবস হিসেবে পালিত হবে। এ ছাড়া দেশে একটি কৃষি জাদুঘর স্থাপন করা হবে।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, গত কয়েক বছর ধরে খরা, অনাবৃষ্টি, রোগ-বালাই, সারের অভাব ইত্যাদি কারণে পর্যাপ্ত খাদ্য উৎপাদন না হওয়ায় ২০০৮ সালে চালের মূল্য রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২৬টি দেশে ৪৩ শতাংশ জনগণ নিজেদের খাদ্য বাজেট কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, জার্মানির মতো শিল্পোন্নত দেশের জনগণও স্বাভাবিক খাবারের মেন্যু অনেক কমিয়ে ফেলেছে। বাস্তবতা এই, অন্যান্য দিনের মত বিশ্ব খাদ্য দিবসেও ১০০ কোটি মানুষকে ক্ষুধার জ্বালা সইতে হয়েছে। এ হিসাব দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। তাই ইংল্যান্ডে যখন আনন্দ করে মানুষ চকোলেট উইক পালন করছে তার মধ্যে ১৬ অক্টোবর বিশ্ব খাদ্য দিবস যেন এক ছন্দপতন।
খাদ্য সংকট বিশেষ করে বাংলাদেশে বিরাট প্রভাব ফেলে। যে কারণে বিষয়টি সরকারসহ দেশের সব স্তরের মানুষকে ভাবিয়ে তোলে। সরকার এ বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে যা প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থা ফাও বলেছে, তাদের হিসাব মতে এ বছর ৪.৯ শতাংশ খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। তারপরও ৩৬টি দেশ খাদ্য সংকটের ধকল সামলাতে পারবে না। তাই তাদের খাদ্য সহায়তা অব্যাহত রাখার জন্য উন্নত বিশ্বকে পরামর্শ দিয়েছে ফাও। ফাও যাই বলুক খাদ্যদ্রব্যের ব্যাপারে আমাদের নিজেদের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষিকে গুরুত্ব দিতে হবে। দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধির বিকল্প নেই। এদিক থেকে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য অত্যন্ত সময়োপযোগী ও গ্রহণযোগ্য। তাঁর জাতীয় কৃষি দিবস ও কৃষি জাদুঘর স্থাপন ঘোষণা এটা প্রমাণ করে জাতীয় পর্যায়ে কৃষিখাতকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, এতে জনগণ এ আশা করতে পারে অদূরভবিষ্যতে দেশ খাদ্য সংকটের হাত থেকে রেহাই পাবে। তবে এর সঙ্গে আমরা যোগ করতে চাই, জাতীয় শুল্ক ও ভর্তুকি নীতিকে এমনভাবে সাজাতে হবে যেন তা প্রান্তিক কৃষক ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্য-সার্বভৌমত্ব ও জীবিকার নিশ্চয়তা বিধান করে এবং শুধু বাণিজ্যের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত না হয়। অব্যাহতভাবে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হলে আমাদের প্রয়োজন দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও কৃষিবান্ধব নীতি। কৃষি উৎপাদন ও কৃষি সহায়তা দক্ষতার সঙ্গে কৃষকের হাতে উন্নত উপকরণ ও আধুনিক প্রযুক্তি পৌঁছে দিতে হবে।

Saturday, October 11, 2008

১ নভেম্বর থেকে ঢাকায় মাছ ও সবজি বিক্রি বন্ধের হুমকি ফড়িয়া ও আড়ৎদারদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ

১১.১০.০৮
যায়যায়দিন ।। আহমেদ তোফায়েল
ফড়িয়া ও আড়তদারদের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন মহানগরীর কাঁচাবাজারের মাছ ও সবজি ব্যবসায়ীরা। ফড়িয়াদের সঙ্গে যোগসাজশে মাছ ও সবজি বাজার অস্থির করে তুলছে আড়তদাররা। তারা পাইকারি ব্যবসায়ীদের মাপে কম দিয়ে এবং কয়েলির নামে চাঁদাবাজি করে বাড়িয়ে দিচ্ছে মাছ ও সবজির দাম। এদিকে আড়তদারদের মাপে কম দেয়া ও কয়েলির নামে চাঁদা আদায় বন্ধ না করলে ঢাকা মহানগরীতে ১ নভেম্বর থেকে অনির্দিষ্ট-কালের জন্য মাছ ও সবজি বিক্রি বন্ধের হুমকি দিয়েছে ঢাকা মহানগর মাছ ও কাঁচাবাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতি। বিক্ষোভের অংশ হিসেবে ২১ অক্টোবর থেকে মহানগরীর ১০টি সিটি করপোরেশন কার্যালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সামনে মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি পালন ও স্মারকলিপি প্রদান করবে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতি। এ কর্মসূচি চলবে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর মাছ ও কাঁচাবাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসেন গতকাল যায়যায়দিনকে বলেন, বাজারে মাছ এবং সবজির উচ্চমূল্যের একমাত্র কারণ আড়তদাররা। আড়তদাররা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা মাছ এবং সবজি প্রথমে ফড়িয়াদের কাছে বিক্রি করে। ফড়িয়ারা আবার তা পাইকারদের কাছে বিক্রি করে। পাইকাররা তা আবার খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে। তিনি বলেন, এতো হাত ঘুরতে ঘুরতে এসব পণ্যের দাম শেষ পর্যন্ত দিগুণ, তিনগুণ হয়ে যায়। আড়তদার ও ফড়িয়াদের যোগসাজশের কারণে বেশি দাম দিতে হচ্ছে ক্রেতাদের। তিনি বলেন, শসার দাম কেজিপ্রতি রমজান মাসে ছিল ২২-২৪ টাকা। আর এখন এ শসার দাম ৬০ টাকা। এর কারণ আড়তদার হিমাগারের নামে অযৌক্তিকভাবে অতিরিক্ত দাম হাতিয়ে নিচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, রাজধানীতে ৩৩টি সিটি করপোরেশন নির্মিত বাজার আছে। এ দোকানগুলো প্রকৃত ব্যবসায়ীদের মধ্যে দেয়ার কথা। কিন্তু সিটি করপোরেশন নিয়মের তোয়াক্কা না করে রাজনীতিবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বরাদ্দ দিচ্ছে। এর ফলে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা দোকানগুলো এসব প্রভাবশালী লোকের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছে। সিটি করপোরেশন নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি দোকানের ভাড়া ১৬৮ টাকা, বিদ্যুৎ ভাড়া প্রতি ইউনিট ৫ টাকা। কিন্তু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দোকান ভাড়া বাবদ ৮ হাজার টাকা এবং প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য ৫০ টাকা নেয়া হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগর মাছ ও কাঁচাবাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতি মহানগরবাসীকে নায্যমূল্যে মাছ ও সবজি সরবরাহের লক্ষ্যে গত বছর ১২ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনায় ঢাকা মহানগরে মাছ, সবজি পাইকারি আড়ত ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, মহানগর ক্ষুদ্র ব্যবসায় সমিতির প্রতিনিধি, বিডিআরের পরিচালক, র‌্যাবের পরিচালক, পুলিশ কমিশনার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বাজারগুলোতে আড়তদাররা মাছ ও সবজির সঠিক ওজন ও কয়েলির নামে চাঁদা বন্ধ রাখার প্রতিশ্রুতি ও কাঁচাবাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা বিধান করবে এ মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিন্তু এখনো ওজনে কম দেয়া ও কয়েলির নামে দিগুণ চাঁদা আদায় অব্যাহত রয়েছে।
জানা গেছে, আড়তদারদের কাছ থেকে ৫ কেজি পণ্য কিনলে তা ওজন কমে হয়ে যাচ্ছে ৪ কেজি, কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাড়ে ৩ কেজিও হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে খুচরা ব্যবসায়ীরা আসল টাকা সমন্বয় করার জন্য দিগুণ দামে ক্রেতাদের কাছে পণ্য বিক্রি করছেন।

চীনের সহায়তায় হাইব্রিড তুলা ফলাবে বাংলাদেশ

১১.১০.০৮
ডেসটিনি ।। শফিকুল ইসলাম, চীন থেকে ফিরে

চীনের কারিগরি সহায়তায় এবার হাইব্রিড তুলা উৎপাদনে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বর্তমানে তুলা উৎপাদন বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক না হওয়ায় দেশীয় কৃষকরা এক্ষেত্রে অনেকটাই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। এ অবস্থায় কৃষকদের তুলা চাষে আরও বেশি উৎসাহিত করতে বেসরকারি পর্যায়ে এ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। দেশে ব্যাপকহারে তুলা উৎপাদনে কারিগরি সহায়তা দিতে সম্মত হয়েছে চীনের হুবাই প্রভিন্সিয়াল সিড গ্রুপ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ২৫ থেকে ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে বছরে ৯০ হাজার বেল তুলা উৎপাদিত হচ্ছে। আর প্রতিবছর বিদেশ থেকে আমদানি হচ্ছে কমপক্ষে ১৪ লাখ বেল তুলা। আমদানি নির্ভরতা কমাতে বাংলাদেশ তুলা উন্নয়ন বোর্ড এরই মধ্যে যশোরের চৌগাছা ও দিনাজপুরের জগদীশপুরে নিজেদের ফার্মে এইচএসসি-১ ও এইচএসসি-৪ নামে দুটি হাইব্রিড তুলা চাষের ব্যাপারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তুলা উন্নয়ন বোর্ডের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দেশে প্রচলিত যুক্তরাষ্ট্রের সিবি-৯ জাতের তুলার চেয়ে চীনের এইচএসসি-১ ও এইচএসসি-৪ জাতের হাইব্রিড তুলা অনেক বেশি উচ্চ ফলনশীল ও লাভজনক। সিবি-৯ জাতের ফলন প্রতি হেক্টরে ১ দশমিক ৫ মেট্রিক টন থেকে ২ দশমিক ৭৫ মেট্রিক টন। তাই বেসরকারি হাইব্রিড বীজ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো এই দুই জাতের হাইব্রিড তুলা চাষের ব্যাপারে এগিয়ে আসতে চাইছেন। এ ধরনের একটি প্রতিষ্ঠান সুপ্রিম সিড কোম্পানি লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি চুয়াডাঙ্গায় এই দুই জাতের হাইব্রিড তুলা চাষের বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখতে একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নিয়েছে। চীনের বিখ্যাত হুবাই প্রভিন্সিয়াল সিড গ্রুপ কোম্পানি গত বছর সুপ্রিম সিড কোম্পানিকে ১০ টন হাইব্রিড তুলা বীজ সরবরাহ করে। এ ব্যাপারে সুপ্রিম সিড কোম্পানির উপদেষ্টা ও প্রকল্প পরিচালক ইব্রাহীম খলিল এ প্রতিবেদককে জানান, আমাদের বীজ উৎপাদনের উদ্যোগ সফল হলে দেশীয় তুলাচাষিরা খুব অল্প সময়ের ভিতরেই হাইব্রিড তুলা উৎপাদনে সক্ষম হবেন। তুলা উৎপাদনে সম্ভাব্যতা ú্রসঙ্গে হুবাই প্রভিন্সিয়াল সিড গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান গোবায়ো ইউয়ান বলেন, বাংলাদেশের স্থানীয় তুলার উৎপাদনের পরিমাণ হেক্টর প্রতি ৩২ শতাংশের বেশি নয়। অপরদিকে চীনের উৎপাদিত হাইব্রিড তুলার উৎপাদন ৪০ শতাংশের কম নয়।

আসন্ন মৌসুমে ৮১ লাখ হেক্টরে রবিশস্য চাষের কর্মসূচি II দেশে মশলার ঘাটতির কারণে মশলা জাতীয় ফসল চাষে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে

০৯.০৮.০৮
ইত্তেফাক ।। বিমল সাহা, ভ্রাম্যমাণ সংবাদদাতা ।।

আসন্ন রবি মৌসুমে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সারাদশে ৮০ লাখ ৭১ হাজার হেক্টরে বিভিন্ন প্রকার শীতকালীন ফসল চাষের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এবার বোরো চাষে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বোরোর আবাদ বাড়ানো হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ঢাকার খামারবাড়ির এক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, মোট ৪৬ লাখ ৭৫ হজার হেক্টরে বোরো চাষের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। তন্মধ্যে সাড়ে ১২ লাখ হেক্টরে উচ্চফলনশীল এবং সোয়া লাখ হেক্টরে স্থানীয় জাতের বোরো চাষ করা হবে। আর বোরোর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক কোটি ৯৩ লাখ ৩৮ হাজার ৭শ’ ৫০ টন (চাল)। তবে বোরো উৎপাদনে সাফল্য নির্ভর করে সার সরবরাহ এবং সেচের পানির নিশ্চয়তার ওপর। বোরো চাষ পুরোপুরি সেচ নির্ভর।

চার লাখ হেক্টরে গম চাষের মাধ্যমে ১০ লাখ ৪০ হাজার টন গম এবং আড়াই লাখ হেক্টরে ভুট্টা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। এবার ৫ লাখ হেক্টরে আলু চাষ করে সাড়ে ৮৭ লাখ টন আলু এবং ৬০ হাজার হেক্টরে মিষ্টি আলু চাষের মাধ্যমে ৮ লাখ ৪০ হাজার টন মিষ্টি আলু উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। সাড়ে ৪ লাখ হেক্টরে শীতকালীন সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। আর সবজির উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সাড়ে ৬৭ লাখ টন। ইতিমধ্যেই সবজি চাষ শুরু হয়ে গেছে। আগাম চাষকৃত ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, মুলা, পালংশাক বাজারে উঠতে শুরু করেছে। ৫ লাখ হেক্টরে সরিষা, ১৫ হাজার হেক্টরে তিল, ৪৫ হাজার হেক্টরে সয়াবিন, ৩ হাজার ৯৪৯ হেক্টরে তিসি, ৯২৮ হেক্টরে গর্জনতিল এবং ১২৭ হেক্টরে সূর্যমুখি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। ৫ লাখ ৮৬ হাজার টন বিভিন্ন ধরনের তৈলবীজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।৭০ হাজার হেক্টরে চিনা বাদাম চাষের মাধ্যমে একলাখ সাড়ে ২২ হাজার টন চিনাবাদাম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে।

দেড় লাখ হেক্টরে মসুর, ১৫ হাজার হেক্টরে ছোলা, ৮০ হাজার হেক্টরে মাসকালাই, এক লাখ হেক্টরে মুগ, ২০হাজার হেক্টর মটর, ৩০ হাজার হেক্টরে ফেলন, এক হাজার হেক্টরে অড়হর ও আড়াই লাখ হেক্টরে খেশারি ডাল। মোট ৬ লাখ ২৪ হাজার ২শ’ টন ডাল জাতীয় ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এবার এক লাখ ৬০ হাজার হেক্টরে পিঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। পিঁয়াজের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ লাখ ৬০ হাজার টন। ৬৫ হাজার হেক্টরে রসুন চাষ করে ৩ লাখ ৯০ হাজার টন রসুন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। ৩৫ হাজার হেক্টরে ধনিয়া, দেড় লাখ হেক্টরে মরিচ, ৩০ হাজার হেক্টরে হলুদ ও ১৫ হাজার হেক্টরে আদা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর ৪৩ হাজার ৭৫০ টন ধনিয়া, ২ লাখ ২৫ হাজার টন মরিচ, ৯০ হাজার টন হলুদ ও এক লাখ সাড়ে ৮৭ হাজার টন আদা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশে মশলার ঘাটতির কারণে মশলা জাতীয় ফসল চাষে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

জলবায়ু সহনশীল খাদ্যশস্য ও আজকের কৃষি

০৯.০৮.০৮
গবেষণা
ইত্তেফাক ।। বিবিসি ওয়েবসাইট অবলম্বনে-জাকিরুল ইসলাম

বিশ্বের নানাবিধ সমস্যার মধ্যে জনসংখ্যার আধিক্য ও ক্রমবর্ধমান খাদ্য চাহিদা অন্যতম। দিনদিন যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে সে হারে খাদ্যশস্যের উৎপাদন বাড়ছে না। খাদ্যশস্যের উৎপাদনের সঙ্গে ভূমির উর্বরতা, উন্নতমানের বীজ, সময় উপযোগী কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার ও বিজ্ঞানসম্মত রক্ষণাবেক্ষণ অতি জরুরি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে- বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং সে জন্য জলবায়ুর চরমভাবাপন্নতা কৃষি উৎপাদনে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। যা কিনা ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদার ক্ষেত্রে রীতিমতো ঝুঁকিজনক অবস্থা। দেশে-দেশে বাড়তি খাদ্য শস্য উৎপাদনের যে কোশেশ চলছে তা একদিকে আশাব্যঞ্জক অন্যদিকে উদ্বেগের কারণ। কেন না, সীমিত ভূমিতে অধিক ফসল ফলানোর জন্য মানুষ লাগামহীন হারে সার ও কীটনাশক ব্যবহার করছে। ফল-তাৎক্ষণিকভাবে কিছুটা পাওয়া গেলেও সুদূরপ্রসারী ক্ষতিকর দিক নিয়ে তেমন একটা ভাবান্তর লক্ষণীয় নয়। এমনি পরিস্থিতিতে গ্লোবাল ক্রপ ডাইভার্সিটি ট্রাস্ট গ্রহণ করেছে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। তারা জলবায়ু পরিবর্তনের মাঝেও টিকে থাকতে সক্ষম এমন খাদ্যশস্যের বীজ উৎপাদনের বিষয় নিয়ে গবেষণা শুরু করেছে।

গত কয়েক বছর যাবৎ একদল বিজ্ঞানী একের পর এক বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। সে সময় তারা এ ব্যাপারে একমত হন যে, গম, ধান, মসুর ও ভুট্টার সঙ্গে অন্যান্য শস্যের এমন বীজ উৎপাদন করতে হবে যা চরমভাবাপন্ন বৈরী আবহাওয়া বিশেষ করে বন্যা, খরা, অতিরিক্ত তাপেও টিকে থাকতে পারে। এজন্য প্রাথমিকভাবে ১৫ লাখ ডলারের তহবিল গঠনের বিষয়েও ঐকমত্যে পৌঁছেছেন সংশ্লিষ্টরা। এ সংক্রান্ত প্রকল্পের কাজ হবে প্রথমে জাতীয় পর্যায়ে জলবায়ু সহনশীল খাদ্যশস্যের বীজ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা। প্রয়োজনে আর্কটিক অঞ্চলে গড়ে ওঠা ডুমস্ডে সীড ভল্টের (মহাপ্রলয় দিবসের বীজ সংরক্ষণাগার) সহায়তা নেয়া। গবেষকদের প্রত্যাশা আগামী ১২ থেকে ২৪ মাসের মধ্যে তারা নানাজাতের জলবায়ু সহনশীল বীজের ব্যাংক গড়ে তুলতে সক্ষম হবেন। প্রকল্পের উদ্যোক্তা এবং গ্লোবাল ক্রপ ডাইভার্সিটি ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক কেরি ফাউলার জানান, পরবর্তী পর্যায়ে বাছাইকৃত বীজ বপন বা রোপণের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদনের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে।

জেনেটিক্যালি মোডিফাইড অর্গানিজম (জিএমও) ফুডের প্রবক্তারা এতে অতিশয় খুশি হয়ে বলেছেন, এ প্রক্রিয়ায় লোকজন জিএম ফুড সম্পর্কেও জানতে পারবে। একই সঙ্গে যারা জিএম ফুডের বিরোধী করে আসছেন তারা বাস্তবতা সম্পর্কে অনুধাবন করতে সক্ষম হবেন। তাদের ভাষায়, কৃষিখাত বর্তমান চ্যালেঞ্জের মুখে। চরমভাবাপন্ন জলবায়ুতে খাদ্যশস্য উৎপাদন করা সম্ভব না হলে খাদ্য সংকট আরো প্রকট আকার ধারণ করতে পারে। অথচ জলবায়ু পরিবর্তন তথা সহনশীল খাদ্যশস্যের উদ্ভাবন করা সম্ভব হলে সে সংকট অনেকটাই দূরীভূত হতে পারে।

কয়েক দফা বন্যায় আমন চাষ ব্যাহত

০৯.০৮.০৮
ইত্তেফাক ।। ইসলামপুর (জামালপুর) সংবাদদাতা ।।

বন্যায় জামালপুরের অনেক এলাকায় আমন চাষীদের মেরুদণ্ড ভেঙ্গে গেছে। কৃষি ক্ষেত্রে ক্ষতির ধকল কাটাতে নতুন উদ্যমে কৃষকরা রোপা আমন আবাদ শুরু করেছে। পানি নেমে যাওয়ার পর এ অঞ্চলের কৃষকরা পড়েছে আমন চারা সংকটে। সার, কীটনাশক, জমি চাষ ও শ্রমিকের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা এখন দিশেহারা। জামালপুরের ইসলামপুরের এ সমস্যা প্রকট। এখানে ২৫ হাজার মেট্রিক টন আমন ধান উৎপাদন কম হওয়ার সম্ভবনায় খাদ্য ঘাটতির আশংকায় কৃষি সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমন লাগানো হয়। পরিবেশ অনুকূলে থাকলে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হওয়ার সম্ভবনা ছিল। কিন্তু দফায় দফায় বন্যা ও ভারী বর্ষণে ৮ হাজার ১৫০ হেক্টর জমির রোপা আমন পানিতে নিমজ্জিত হয়। দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় ৭ হাজার ৫৬০ হেক্টর জমির রোপা আমন ক্ষেত সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়। এতে ৩৫ হাজার কৃষক প্রায় ২২ হাজার ৬৮০ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আর ১২৩ হেক্টর বীজতলা, ৫০৮ হেক্টর শাক-সবজিসহ মোট ৮ হাজার ২৪৭ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হওয়ায় ৫১ কোটি ৯৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। বিপুল এ ক্ষতির ধকলে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক কৃষকেরা বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মেরুদণ্ড একবারে ভেঙ্গে গেছে। গত বছরও এ উপজেলার কৃষকর আমন আবাদে মার খেয়েছিল।

বন্যাকবলিত এলাকা থেকে পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন উদ্যমে কৃষকরা রোপা আমন আবাদ শুরু করেছে। কৃষকরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে জমি তৈরি ও আমন রোপণের কাজে। পানি নেমে যাওয়ার পর এসব অঞ্চলের কৃষকরা পড়েছে আমন চারা সংকেট।

১২৩ হেক্টর বীজতলা নষ্ট হওয়ায় আমন চারা সংগ্রহে হিমসিম খাচ্ছে এখানকার কৃষকরা। উঁচু এলাকা ছাড়াও দূর-দূরান্তের বিভিন্ন স্থান থেকে যতটুকু চারা পাওয়া যাচ্ছে তা চড়া মূল্যে কিনতে হচ্ছে। পরিবহন ব্যয় মিলিয়ে প্রতি বিঘা জমির জন্য ধানের চারা সংগ্রহ করতে তাদের ব্যয় হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫শ’ টাকা। এমনিতেই বন্যার কারণে রোপা আমনের আবাদ পিছিয়ে গেছে ২০ থেকে ২৫ দিন। এখানকার কৃষকদের ধারণা যদি নতুন বীজতলার চারা রোপণের আশায় থাকতে হয়, তবে উৎপাদন প্রক্রিয়া পিছিয়ে যাবে আরো দেড় মাস।

অপরদিকে, গত বছরের তুলনায় সার, কীটনাশক, জমি চাষ ও শ্রমিকের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা আমন চাষ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

ইসলামপুরের কৃষি কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার সাহা জানান, কৃষক আবার নতুন উদ্যমে রোপা আমন লাগাতে শুরু করেছে। আমন আবাদে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। পরিবেশ অনুকূলে থাকলে ক্ষতি অনেকাংশে পুরণ হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। তবে কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলেছে, আবাদে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলেও ২৫ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদন কম হবে।

গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে অভাবনীয় সাফল্য

১০.১০.০৮
ডেসটিনি ।। সেনবাগ (নোয়াখালী) সংবাদদাতা

মাত্র একদিনের প্রশিক্ষণ নিয়ে ইচ্ছা শক্তি; অনবদ্য চেষ্টা আর মননকে কাজে লাগিয়ে অসাধ্যকে সাধন করে নোয়াখালী জেলার মডেল কৃষকের খ্যাতি অর্জন করেছেন সেনবাগ উপজেলার কৃষক মো. সাহাবউল্লা, গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করে সাহাবউল্লা যেমন এলাকায় চমক সৃষ্টি করেছেন, তেমনি হয়েছেন লাভবান। ইতিমধ্যে সারাদেশে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে। সম্মাননা হিসেবে তিনি পেয়েছেন সরকারি-বেসরকারি বহু লোকের সান্নিধ্য। কৃষি বিভাগের ব্লক সুপার ভাইজার থেকে শুরু করে কৃষিমন্ত্রী পর্যন্ত এসেছে তার সাফল্য স্বচক্ষে দেখার জন্য। এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টুও এক ঝলক দেখে গেছেন সাহাবউল্লার এ সাফল্য। যার সম্মাননা হিসেবে ইতিমধ্যে সরকারিভাবে এক মাসের বিদেশে ট্যুর করার সুযোগ পেলেন। ২০০৬ সালে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে সেনবাগ পৌর শহরের আমতলী নামক স্থানে ৩৬ শতাংশ জায়গা লিজ নেন। সেখানে চাষ করেন বারি টমেটো-৩ ও বারি-৪। তার খরচ হয় ৭০/৮০ হাজার টাকা। ২০০৬ সালের সাফল্য দেখে ২০০৭ সালেও অনুরূপভাবে টমেটো চাষ করেন; কিন্তু ওই বছর লাভের চেয়ে ক্ষতির পরিমাণ বেশি ছিল। তিনি এতে পিছ পা না হয়ে, এ বছরও একই জায়গায় একইভাবে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করেন। এর পাশাপাশি সাহাবউল্লা চকোরী, আলাবী জাতের খিরা এবং শসা চাষ করেন। তিনি জানান, ৩৬ শতাংশ একটি উঁচু জায়গা লিজ নিয়ে সেখানে সর্বমোট ৭০০টি হাইব্রিট গ্রীষ্মকালীন টমেটোর চারা লাগান এবং একই জমিতে ৮০০টি চমক, চকোরী, আলাবী জাতের খিরা এবং শসা গাছ লাগান। রমজানের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে বাজারজাত শুরু করেন।
ফলন ভালো হওয়ায় এবং দর ঠিক মতো পাওয়ায় কৃষক সাহাবউল্লা বেশ খুশি। সম্প্রতি সাহাবউল্লার সবজি ক্ষেতে গেলে তিনি জানান, টমেটো, শসা ও খিরা সবজি ক্ষেত রক্ষণাবেক্ষণ ও অন্যান্য খরচ বাবদ তার প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এ ক্ষেত থেকে শেষ পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার টমেটো ও খিরা বিক্রি হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তাকে এ ব্যাপারে স্থানীয় কৃষি বিভাগের লোকজন সার্বক্ষণিক দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন বলে তিনি জানান। তার এ সফলতা দেখে এলাকার বেকার যুবকরা তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন। তিনি তাদের উদ্দেশ্য বলেন, কেউ বেকার না থেকে এ ধরনের কাজে নিজেকে আত্মনিয়োগ করলে একদিকে যেমন বেকারত্ব দূর হবে, অন্যদিকে অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধান হবে। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান জানান, কৃষক সাহাবউল্লার মতো অন্য যে কেউ এগিয়ে এলে তাকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা দেয়া হবে।

কৃষি খাতে রূপান্তর ও পুঁজির বিকাশ

১০.১০.০৮
ডেসটিনি ।। জাহাঙ্গীর আলম

আশ্বিন মাসের দিনগুলো দ্রুত চলে যাচ্ছে। গ্রামের কৃষকদের এখন অত্যন্ত ব্যস্ত সময় কাটছে। রোপা আমনের চারা গুঁজে দেয়ার লগ্ন ক্রমেই ফুরিয়ে আসছে। অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকায় ইতিমধ্যেই আমন ধানের চারা গুঁজে দেয়া শেষ হয়েছে। অতঃপর সবুজ রং ধারণ করছে বিবর্ণ ও ফিকে হয়ে যাওয়া ধানের চারা গাছগুলো। তবে নিচু এলাকায় এখনো শেষ হয়নি চারা গুঁজার কার্যক্রম। বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে অতি দ্রুত জমি চাষ করতে পারছে না অনেক কৃষক। মাঠে পশুশক্তির চাষ এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। কৃষক গরু পালছে মূলত দুধের জন্য অথবা মোটাতাজা করার জন্য। কেবল হালের জন্য বলদ কিংবা গাভী পালার দৃষ্টান্ত এখন বিরল। গরু পালনকারী গ্রামীণ পরিবারের সংখ্যাও ক্রমে হ্রাস পাচ্ছে। হালের জন্য এখন কৃষকরা নির্ভর করছে প্রধানত যন্ত্র শক্তির ওপর। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে ট্রাক্টর কিংবা পাওয়ার টিলারের সরবরাহ খুবই অপ্রতুল। প্রতিটি ট্রাক্টর কিংবা পাওয়ার টিলার হাল চাষের কাজ করছে দুই শিফটে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমি চাষ করছে একজন ড্রাইভার। আবার ড্রাইভার পাল্টে দ্বিতীয় শিফটে একই কলের লাঙ্গল ব্যবহার করে জমি চাষ হচ্ছে সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত। মাঠে বিরতিহীনভাবে চলছে ওই কলের লাঙ্গলগুলো। এরপরও কৃষকদের চাহিদামাফিক জমি চাষ করতে পারছে না যন্ত্রের মালিকরা। আগাম ভাড়ার টাকা পরিশোধ করেও প্রতিটি কৃষককেই ৩/৪ দিন, কোথাও সপ্তাহকাল অপেক্ষা করে থাকতে হচ্ছে জমি চাষের জন্য। ফলে জমিতে চারা গুঁজার সময় পিছিয়ে যাচ্ছে। হালের জন্য পশুশক্তির ব্যবহার থেকে যন্ত্র শক্তির ব্যবহারে উত্তরণের এই ক্রান্তিলগ্নে আর বেশি ট্রাক্টর ও টিলার সরবরাহ করা দরকার। আমাদের ছোট ও মাঝারি কৃষকনির্ভর স্বল্প পুঁজির কৃষি ব্যবস্থায় স্ব-নিজ উদ্যোগে কৃষকরা এ সংকট মোকাবিলা করতে পারবে বলে মনে হয় না। এর জন্য চাই সরকারি উদ্যোগ। চাই প্রয়োজনীয় পুঁজির সরবরাহ। নতুবা সামনের বোরো মৌসুমে এ সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করতে পারে।
এবার জমি থেকে বর্ষার পানি বেশ আগেভাগেই সরে গেছে। তদুপরি তায়ে তায়ে বৃষ্টি হচ্ছে। তাতে পানি সেচের তেমন প্রয়োজন হচ্ছে না কোথাও। তা ছাড়া আমাদের দেশে রোপা আমন অনেকটাই বৃষ্টিনির্ভর। ফলে সামনে আর একটা বাম্পার ফলন অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। কিন্তু আগামী দিনগুলোতে খরা হলে কোথাওবা সেচের প্রয়োজন হবে। সম্প্রতি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় এর অভিঘাত এসে লাগবে কৃষিতে। সামনে বোরো মৌসুমে তা আরও বেশি করে অনুভূত হবে। পানি সেচের জন্য যে ভর্তুকি দেয়া হয় তা সেচের ভাড়া হ্রাসের জন্য তেমন সহায়ক নয়। কৃষককে তার জমিতে পানি নিতে হলে সেচ যন্ত্রের মালিককে আগেভাগেই সেচের মাশুল নগদ টাকায় পরিশোধ করে দিতে হয়। কিন্তু ছোট কৃষক ও বর্গা চাষিদের ক্ষেত্রে পুঁজির অপর্যাপ্ততা প্রয়োজনীয় পানি সেচের সরবরাহকে অনিশ্চিত করে তুলছে। রোপা ও বোরো মৌসুমে ধানের চারা গুঁজে দেয়ার কাজটি খুবই শ্রমবহুল। আগে মানুষ বদলা দিত। কয়েকটি কৃষক পরিবার একসঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে মাঠে পালাক্রমে রুইয়ে দিত ধানের চারা। এখন আর সেই বদলার দিন নেই। এখন চুক্তি হয় নগদ অর্থে। বছর কামলা আর রোজ কামলা দিয়ে মাঠে কাজ করানোর দিন প্রায় শেষ। বিদেশে অদক্ষ শ্রমিক রফতানি বৃদ্ধির ফলে আমাদের জন্য যে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পথ সুগম হয়েছে এ কথাটি সত্য, কিন্তু সেই সঙ্গে কৃষি শ্রমিকের সরবরাহও হ্রাস পেয়েছে। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে কৃষি শ্রমিকের মৌসুমী সংকট। বেড়ে যাচ্ছে মজুরি। চুক্তিবদ্ধভাবে নগদ টাকায় ধানের চারা রোপণের কাজ তাতে বিঘিœত হচ্ছে। কারণ আমাদের ছোট কৃষকদের হাতে প্রয়োজনীয় পুঁজির বড় অভাব। ধানের চারা গজানোর কাজও সব কৃষক প্রয়োজনমতো করতে পারে না। কারো জমি থাকে না। কারো থাকে না বীজ। অধিকাংশ কৃষককেই চারা কিনে নিতে হয় বাজার থেকে। সেখানেও দরকার পুঁজি। প্রয়োজন হয় নগদ অর্থের। ছোট কৃষক ও ভূমিহীন বর্গাচাষিদের জন্য এটি একটি সংকট, একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা।
চাষাবাদের আর একটি বড় উপকরণ রাসায়নিক সার। সামগ্রিকভাবে ম্যাক্রো পর্যায়ে দেশে তেমন সার সংকট কখনোই দৃশ্যমান হয় না। গাণিতিক হিসাবে প্রয়োজনের তুলনায় সারের সরবরাহ বেশিই থাকে। কিন্তু সংকট অনুভূত হয় মাঠ পর্যায়ে। যে কৃষক জমি চাষ করে, অপ্রতুল সার সরবরাহের জন্য আক্ষেপ ও অভিযোগ থাকে তারই। অনেক ক্ষেত্রেই তা সত্য বলে প্রতীয়মান। এবার সরকারি পর্যায়ে সারের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। গ্রামে গিয়ে তা আরও বেড়ে যাচ্ছে একধাপ। তাতে পুঁজির সংকট তীব্রতর হচ্ছে। তদুপরি প্রায়ই প্রয়োজনীয় পরিমাণে সারের সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারছে না ডিলাররা। এটি জমি চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহের কারণ।
ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার ও ধান কাটার বিষয়টিও এখন পুঁজিবহুল। অনেক ক্ষেত্রেই এ কাজগুলো চুক্তির ভিত্তিতে করিয়ে নিতে হয় কৃষকদের। তাতে প্রয়োজন হয় নগদ অর্থের। কিন্তু ছোট কৃষকদের হাতে নগদ অর্থ প্রায়ই থাকে না।
পারিবারিক শ্রমিকের অপ্রতুলতা এবং কৃষি উপকরণের উচ্চ মূল্যের কারণে অনেক কৃষক নিজে আর জমি চাষ করতে সাহসী হচ্ছে না। তারা অন্যদের কাছে পত্তন দিয়ে দিচ্ছে জমি। এ নাগাদ একসনা জমি লিজের মূল্য তেমন বেশি ছিল না। বেশ সহনীয় মূল্যে গ্রামাঞ্চলে এতদিন কৃষি জমি লিজ দেয়া হতো। কিন্তু কৃষি পণ্যের সাম্প্রতিক মূল্য বৃদ্ধি জমির লিজ মূল্য অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। তাতে চাষের জমি হাতে নিতে প্রয়োজন হচ্ছে অনেক পুঁজির। এ পুঁজি সংগ্রহ করতে খুবই হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের ছোট ও ভূমিহীন কৃষকদের।
বাংলাদেশের কৃষি কাজ এখন বেশ পুঁজিঘন। প্রায় সব কৃষি উপকরণই বাজার মূল্যে ক্রয় করতে হচ্ছে নগদ অর্থে। কিন্তু দেশের ছোট কৃষক, জমির পত্তন গ্রহীতা ও বর্গাচাষিদের অনেকে নগদ টাকার অভাবে প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণ জোগাড় করতে পারছে না। গত কয়েক বছর ধরে মোট বিতরণকৃত কৃষি ঋণের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকসহ বাংলাদেশে কার্যরত সব তফসিলি ব্যাংকে কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ কার্যক্রমে অংশ নিতে নির্দেশনা পাঠিয়েছে। এটি একটি উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। এর ফলে কৃষি ঋণের প্রবাহ আরও অনেক বেড়ে যাবে। কিন্তু তাতে ছোট কৃষক ও বর্গাচাষিদের ঋণ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা সম্ভবপর হবে কি না সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। জানা যায়, বর্গাচাষিদের জন্য বিনা জামানতে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আসল সমস্যাটি হলো এই যে, ঋণের জন্য ছোট কৃষক ও বর্গাচাষিরা ব্যাংকের দুয়ারে সাধারণত যেতে চায় না। তারা ব্যাংক ঋণ সম্পর্কে অহেতুকই আতঙ্কগ্রস্ত থাকে। এটি দূর করতে হবে। ব্যাংক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যেতে হবে ছোট কৃষকদের কাছে। তাদের সঙ্গে মিশতে হবে। ঋণ নেয়ার বিষয়ে সহজ-সরলভাবে বুঝিয়ে বলতে হবে তাদের। যাতে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের বিষয়টি তাদের কাছে সহজ ও নিরাপদ মনে হয়।
কৃষি খাতে বর্তমানে একটি রূপান্তর ঘটছে। এ রূপান্তর ক্রমেই পুঁজিবহুল হচ্ছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আমাদের কৃষি ব্যবস্থাকে সঠিকভাবে প্রস্তুত করে তোলা দরকার। য়
- লেখক : কৃষি গবেষক

পাটগ্রামে ধানক্ষেতে পাতামরা রোগ, কৃষক দিশেহারা

০৮.১০.০৮


পাটগ্রাম (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি
পাটগ্রাম উপজেলায় চলতি আমন ক্ষেতে ব্যাপকভাবে পাতামরা রোগ দেখা দিয়েছে। এতে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তারা কৃষি বিভাগসহ কীটনাশকের দোকানে ধরনা দিচ্ছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে পাটগ্রাম উপজেলায় ১৯ হাজার ৪৩৮ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও চাষাবাদ করা হয়েছে ১৯ হাজার ৪০০ হেক্টরে। প্রাকৃতিক কারণে উপজেলায় এবার দেরিতে আমন রোপণ করা হয়েছে। কারণ বৈশাখের শেষে এবং জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথমদিকে বীজ বপনের সময় প্রচ- খরার কারণে কৃষকরা নির্দিষ্ট সময় বীজ বপন করতে পারেনি। যার কারণে আষাঢ় মাসে চারা রোপণের উপযুক্ত সময় হলেও অধিকাংশ কৃষকই শ্রাবণ মাসে চারা রোপণ করে। কিন্তু এই চারা রোপণের পর দেখা দেয় অতি বৃষ্টি। এই অতি বৃষ্টির কারণে উপজেলার শত শত একর আমন ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যায়। কৃষকরা একদিকে সারের উচ্চমূল্যের কারণে পটাশ, টিএসপিসহ জমিতে সারের সুষম প্রয়োগ করতে না পারায় এবং দেরি করে জমিতে চারা রোপণ ও অতি বৃষ্টির কারণে উপজেলার শত শত একর জমিতে পাতা মরারোগ দেখা দিয়েছে। উপজেলার জগতবেড়, কুচলিবাড়ি, বাউরা, দহগ্রাম, পাটগ্রাম, শ্রীরামপুর, জোংড়া ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে মাঠের পর মাঠ আমনক্ষেতে পাতামরা রোগ দেখা দিয়েছে। এ রোগের কারণে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগ ফেডি মার্শাল হেলিক্স কনিকা কেরাটে সবিক্রম জাতীয় কীটনাশক দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছে। জগতবেড় ইউনিয়নের কৃষক ওয়াজেদ আলী গত ২৯ সেপ্টেম্বর তার ক্ষেতের প্রায় পুড়ে যাওয়া আমনের পুরো গাছটি তুলে এনে কৃষি কর্মকর্তা হামিদুর রহমানকে দেখালে তিনি বলেন, এটি পাতামরা রোগ। জোংড়া ইউনিয়নের ক্ষুদ্র কৃষক আতিয়ার রহমান এবার সাড়ে ৫ দোন জমিতে আমন রোপণ করেছে। তিনি জানান, তার সব জমি আক্রান্ত হয়েছে। এ রোগের কারণে তিনি ইতিমধ্যে অর্ধ দোন জমি গরু দিয়ে খাইয়েছেন। শুধু আতিয়ার রহমান নয়, উপজেলায় তার মতো অনেক কৃষকের ক্ষেতে এ রোগ দেখা দিয়েছে। কৃষকের সঙ্গে কথা বললে তারা জানায়, সারের উচ্চমূল্যের কারণে এবারে তারা পটাশ ও টিএসপি নির্দিষ্ট পরিমাণে দিতে পারেনি। পাটগ্রাম মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ এম ওয়াজেদ আলীও স্বীকার করলেন সারের উচ্চ মূল্যের কারণে তিনিও এবার তার জমিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ সার প্রয়োগ করতে পারেননি। এসব কারণে উপজেলায় এবার আমন উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হামিদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি দৈনিক ডেসটিনিকে জানান, বিক্ষিপ্তভাবে কিছু কিছু জমিতে পাতামরা রোগ দেখা দিয়েছে। তবে কৃষকদের কীটনাশক প্রয়োগের পরামর্শা দেয়া হচ্ছে।

লক্ষ্মীপুরে সার-কীটনাশক-শ্রমের মূল্যবৃদ্ধিII আমন চাষ নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক

০৮.১০.০৮
ডেসটিনি ।। লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

গত বছরের তুলনায় সার, কীটনাশক, শ্রমিকের শ্রমের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় চলতি মৌসুমে আমন চাষ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি, কমলনগর, রামগঞ্জ, রায়পুর ও সদর উপজেলার কৃষকরা। বাজারে অসহনীয় দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সার, কীটনাশক ও শ্রমের মূল্যসহ এবার কৃষি উপকরণের মূল্য দ্বিগুণ বেড়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। চলতি মৌসুমে জেলায় আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা বেশি বলে জানিয়েছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা। ফলে চলতি মৌসুমে কৃষিনির্ভর লক্ষ্মীপুর জেলায় আমন উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কৃষক ও কৃষি সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আমন চাষের জন্য অত্যাবশ্যকীয় ইউরিয়া, টিএসপি, বাসুডিনসহ কীটনাশকের দাম গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ থেকে চারগুণ বৃদ্ধি পেয়ে টিএসপি (বাংলা ফসফেট) প্রতি ৫০ কেজি বস্তা ১ হাজার ২০০ টাকা, প্রতি কেজি ১৮ টাকা করে বিক্রি করা হয়েছে। কিন্তু এক বছরের ব্যবধানে বাজারে এখন টিএসপি (বাংলা ফসফেট) সারের বস্তা ৪ হাজার ২০০ টাকা এবং খুচরা প্রতি কেজি ৪৮ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। বিদেশি টিএসপি ৫০ কেজির বস্তা ৮০০ টাকা বিক্রি করা হলেও এবার ৫০ কেজি বস্তা বিক্রি করা হচ্ছে ৩ হাজার ৭০০ টাকায়। অর্থাৎ কেজিপ্রতি বিক্রি করা হচ্ছে ৭৫ টাকায়। গত বছর এমওপি (পটাশ) সার ৫০ কেজির বস্তা ২০০ টাকা, খুচরা ২৫ টাকা করে বিক্রি করা হয়। এবার প্রতি ৫০ কেজির বস্তা ৩ হাজার এবং খুচরা ৬০ টাকা করে কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। এসএসপি সার গত বছরের প্রথমদিকে ৫০ কেজি বস্তা ৮০০ টাকা এবং প্রতি কেজি ১৬ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। কিন্তু এখন এই এসএসপি ৫০ কেজি বস্তা ২ হাজার ২৫০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। খুচরা ৪৫ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। ইউরিয়া ৫০ কেজি বস্তা ৩০০ টাকা, খুচরা ৬ টাকা কেজি বিক্রি করা হয়েছিল। দস্তার কেজি গত বছর ৮০ টাকা, এখন ১০০ টাকা। কীটনাশক বাসুডিনের কেজি ছিল ১২০ টাকা, এখন ১৬০ টাকা, সিনজেনটার সবিক্রন ৫০০ এমএলের দাম ছিল ৪০০ টাকা, এখন ৫৬০ টাকা। বিওসি ছিল ১৫০ টাকা, এখন ২৮০ টাকা। এ বছর সার ও কীটনাশক প্রায় চারগুণ বেড়ে যাওয়ায় কৃষিক্ষেত্রে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
কমলনগর উপজেলার চরকাদিরার কৃষক হোসেন বলেন, গত বছর প্রতি একর জমিতে সার বাবদ খরচ হয়েছিল ৩ হাজার ৫০০ টাকা, এবার খরচ হয়েছে ৪ হাজার ৫০০ টাকা। চর ফলকনের কৃষক গিয়াস উদ্দিন বলেন, গত বছর একজন শ্রমিকের মজুরি ছিল ৫০ টাকা, এবার ১৫০ টাকা। গত বছর জমিতে কীটনাশক বাবদ খরচ হয়েছিল ৬০০ টাকা, এবার ১ হাজার টাকা। রামগতি উপজেলার চর আলেকজান্ডার গ্রামের কৃষক আবদুর রব জানান,্ এক একর জমিতে তার উৎপাদন খরচ পড়বে ১৭ হাজার ৫০০ টাকা অথচ ধান পেতে পারেন ১৫ হাজার থেকে ১৭ হাজার টাকার। ২৮ থেকে ৩২ মণ ধান পাওয়া যেতে পারে। তাই তিনি চলতি মৌসুমে আমন আবাদ বাদ দিয়েছেন।
জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় ২৬ হাজার ৩৬০ হেক্টর, রামগতি উপজেলায় ২১ হাজার ৫০০ হেক্টর, কমলনগর উপজেলায় ২৪ হাজার ৭৯০ হেক্টর, রায়পুর উপজেলায় ১ হাজার ৭০ হেক্টর ও রামগঞ্জ উপজেলায় ৩ হাজার ২৯০ হেক্টর। মোট ৮৬ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষ করা হয়েছে। লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বলেন, এ বছর কোনো রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দিলে বাম্পার ফলন হবে বলে আমার বিশ্বাস।

দামুড়হুদায় হিমাগারের অভাব নষ্ট হচ্ছে কৃষিপণ্য

০৮.১০.০৮
ডেসটিনি ।। দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) প্রতিনিধি

দামুড়হুদা উপজেলায় কোনো হিমাগার না থাকায় প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে কৃষিপণ্য নষ্ট হচ্ছে। ফলে এলাকার গরিব চাষিদের আত্ম-সামাজিক উন্নয়নে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। উপজেলার চাষিরা অতি কষ্টে বিভিন্ন প্রকার ফলমূল ও সবজি জাতীয় ফসল উৎপাদন করে থাকেন। কিন্তু মজুদ করে রাখার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে অল্প মূল্যে এসব পণ্য বিক্রি করে থাকেন। এতে করে স্থানীয় কৃষকরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। এদের পাশে দাঁড়াবার কেউ থাকে না। এ উপজেলায় কৃষকদের উৎপাদিত ফলমূল ও বিভিন্ন প্রজাতির তরিতরকারি সাধারণত পচনশীল হওয়ার কারণে এগুলো দ্রুত হিমাগারে রেখে মজুদ রাখা প্রয়োজন। এসব উৎপাদিত পণ্য জমি থেকে উত্তোলন করে পচে নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে বেশিদিন মজুদ করে রাখতে পারছেন না। সঙ্গত কারণেই বাজারে দাম থাকুক বা নাই থাকুক অল্প দরেই উৎপাদিত পণ্যগুলো বিক্রি করে দিতে হয়। এতে করে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও একটি গুরুত্বপূর্ণ পৌর এলাকার প্রতি বছর মৌসুমি ফল আম, কাঁঠালসহ আলু ও টমেটো উৎপাদন হয়ে থাকে। এগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান হয়ে থাকে। এদিকে সঠিকভাবে সংরক্ষণের অভাবে এসব পণ্যের ২৫ থেকে ৩০ ভাগ নষ্ট হয়। বাকিগুলো কমদামে বিক্রি করতে হয়। দেশের ভারত সীমান্তবর্তী এ উপজেলা চাষাবাদসহ সব ফসল উৎপাদনের মূল ঘাঁটি হিসেবে চিহ্নিত। এখানে হিমাগার না থাকায় এলাকার চাষিদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এলাকার সচেতন মহল বলেছে, হিমাগার গড়ে তোলার বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এ জনপদে আজও কোনো হিমাগার গড়ে ওঠেনি। এলাকাবাসী তথা কৃষকদের দাবি এখানে একটি হিমাগার তৈরি হলে চাষিরা উৎপাদিত পণ্যের সঠিক মূল্য পেতেন।

কৃষিবান্ধব নীতির কারণে কৃষিতে এগিয়ে চীন

০৮.১০.০৮
ডেসটিনি ।। শফিকুল ইসলাম, চীন থেকে ফিরে

কৃষিবান্ধব নীতির কারণে সফলতার ধারায় এগিয়ে যাচ্ছে চীনের কৃষি। বিশ্বের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর দেশ চীনে কৃষকদের শস্যভেদে সরকার ৬০ ভাগ পর্যন্ত ভর্তুকি দিয়ে থাকে। বর্তমানে ভূমির মালিকানা সরকারের হাতে থাকলেও তা দীর্ঘমেয়াদে লিজ দেয়া হচ্ছে কৃষকদের। কৃষকের নামে জমি লিজ নিয়ে কন্ট্রাক্ট ফার্মিং পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছে শহরের খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
বেইজিং শহর থেকে সাড়ে ৪ হাজার কিলোমিটার দূরে হুবাই প্রদেশের গুনআন কাউন্টির (জেলা) একটি গ্রাম জুজেইয়ান। ২৬ সেপ্টেম্বর সেখানে সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, দেড় হাজার হেক্টর আয়তনের এ বিশাল গ্রামের লোকসংখ্যা মাত্র ২ হাজার ৪১২ জন। আর কৃষক পরিবারের সদস্য ৫৬০ জন। মোট জমির ১ হাজার হেক্টরই আবাদি জমি। ৩ থেকে ৫ হাজার পাকা দালান নিয়ে গড়ে উঠেছে চীনের একেকটি গ্রাম। এসব গ্রামে মূলত কৃষকরাই বসবাস করেন। কৃষকের দুই থেকে পাঁচতলা বাড়িই বেশি চোখে পড়ে। প্রতিটি বাড়ি রঙিন টাইলস দিয়ে তৈরি। চোখে পড়লো কৃষকের পাকা উঠানে শুকাতে দেয়া তুলা, ভুট্টা আর লাল মরিচ। বাড়ির পাশের সামান্য পতিত জমিতে কৃষক বুনেছেন নানা জাতের শাকসবজি। ফুটে আছে সর্ষেফুল। রাস্তার পাশে ছোট নালায় ফুটেছে
নীলপদ্ম। কোথাও পাকা আবার কোথাও আধাপাকা ধানের ক্ষেত। চোখে পড়লো কৃষকের ব্যস্ততা। কৃষাণীদের ব্যস্ততা যেন একটু বেশিই। ধান কেটে সঙ্গে সঙ্গে ক্ষেতেই মেশিন দিয়ে তা মাড়াই করা হচ্ছে। মাড়াইয়ের পর ধানের খড় জমিতেই পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। এরপর গাড়িতে করে কৃষকের ফসল চলে যাচ্ছে সরকার নিয়ন্ত্রিত গ্রামের খাদ্য গুদামে।
কৃষকদের শস্যভেদে সার, সেচসহ অন্যান্য উপকরণে ৪০ ভাগ থেকে ৬০ ভাগ পর্যন্ত ভর্তুকি দিয়ে থাকে চীন সরকার। পাশাপাশি কৃষিজমি কোনোভাবেই অকৃষিতে যাতে না যায় সেজন্য চীন সরকারের রয়েছে কঠোর নীতিমালা। কেউ ইচ্ছা করলেই কৃষি জমিতে শিল্প-কারখানা স্থাপন করতে পারেন না। এ ধরনের নীতিমালা বাংলাদেশে না থাকায় প্রতি বছর দেশে ৬০ থেকে ৬৫ হেক্টর জমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। কৃষকদের যাতে কেউ ঠকাতে না পারে সেজন্যও রয়েছে কঠিন আইন। চীনে মুক্তবাজার অর্থনীতি থাকলেও রয়েছে কঠোর আইন। কেউ ইচ্ছা করলেই কৃষি উপকরণের দাম বেশি নিতে পারেন না। অর্থনীতির ফর্মুলায় উপকরণের ওপর নিয়ন্ত্রণ না থাকলেও মান নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে চীন সরকার কঠোর ভূমিকা পালন করে থাকে।
চীনের মতো বাংলাদেশে কৃষিবান্ধব নীতিমালা থাকলে দেশ অনেকদূর এগিয়ে যেত উল্লেখ করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক কৃষিবিদ ইব্রাহিম খলিল বলেন, কৃষির অন্যতম উপকরণ বীজ, সার ও কীটনাশক সহজলভ্য করা উচিত। দেশে প্রতি বছর ২৮ লাখ ১৪ হাজার টন ইউরিয়া, ৪ লাখ ৬০ হাজার টন টিএসপি, ৪ লাখ টন এমওপি এবং আড়াই লাখ টন ডিএপি সারের প্রয়োজন হয়। কৃষকদের স্বার্থের কথা ভেবে এসব সার কৃষকরা প্রয়োজন মতো খুব সহজে যাতে পেতে পারেন, সে ধরনের কৃষিবান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন করা প্রয়োজন।

Tuesday, October 7, 2008

হাইব্রিড ধান বীজ

০৭.১০.০৮
সম্পাদকীয়
।।ডেসটিনি।।

চালের ঘাটতি কমাতে হাইব্রিড ধানের চাষ বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। আগামী বোরো মৌসুমে ১৫ হাজার টন হাইব্রিড ধান বীজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সে জন্য জমি নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ লাখ হেক্টর। গত মৌসুমে হাইব্রিডের আওতায় জমি ছিল ৮ লাখ হেক্টর। আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি বিগত বছরে আমাদের এক নতুন এবং তিক্ত অভিজ্ঞতা দিয়েছে। এই অভিজ্ঞতা থেকেই ঘটেছে নতুন বোধোদয়। বাংলাদেশ খাদ্য ঘাটতির দেশ। এই ঘাটতি পূরণে আমদানিনির্ভরতা কমাতে না পারলে বিগত বছরের মতো মূল্য বিপর্যয়ের মুখে পড়ার আশঙ্কা থেকে যাবে বরাবরই। আমদানিনির্ভরতা কমাতে নিজেদের খাদ্য উৎপাদনকে জোরালো করতে হবে। সে ক্ষেত্রে হাইব্রিড ধানের আবাদ বৃদ্ধি অবশ্যই গুরুত্ব পাওয়ার দাবি রাখে। স্পষ্ট করেই বলতে হয় দেশের জমি ও জনগণের খাদ্য চাহিদার বিচেনায় হাইব্রিডের বিকল্প নেই। সাধারণ জাতের ধানের চেয়ে হাইব্রিডের ফলন শতকরা ২০ ভাগ বেশি। কৃষি বিশেষজ্ঞরাও হাইব্রিড আবাদকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। সরকার হাইব্রিড ধানের আবাদ বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে যথাযথ, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছেন।
তবে প্রশ্নটি অন্যত্র। চাহিদা মাফিক হাইব্রেডের বীজ আসবে কোথা থেকে। এ ক্ষেত্রে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাফল্য একেবারেই নগণ্য। হাইব্রিডের বীজের জন্যও আমদানিনির্ভর হয়ে থাকতে হচ্ছে দেশকে। জানা গেছে, সরকার ১৫ হাজার টন হাইব্রিড বীজ আবাদের পরিকল্পনা নিলেও সরকারি বীজ ভা-ারে বীজ রয়েছে মাত্র ৫০০ টন। বোরো মৌসুমের আগে সাড়ে ১৪ হাজার টন বীজ ধান কোথা থেকে, কিভাবে আসবে সেটাই বড় প্রশ্ন। সরকার হাইব্রিডের আবাদ বাড়াতে উৎসাহী কিন্তু বীজ আমদানির ব্যাপারে সরকার বেসরকারি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের দিকে তাকিয়ে আছেন। জানা গেছে, কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট পরিমাণ বীজ আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, যারা বীজ আমদানি করছে বা করবে তারা তা করবে ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে। বিগত বছরগুলোতে যেসব হাইব্রিডের আবাদে কৃষকরা সাফল্য পেয়েছে সে জাতের বীজ আমদানিকারকরা আনছে বা আনবে কি না? অধিক লাভের আশায় আমদানিকারকরা যদি হঠকারিতার আশ্রয় নেয় তাহলে কি পরিণতি দাঁড়াবে তা ভেবে দেখা দরকার পূর্বাহ্নেই। বলা বাহুল্য, ভুল জাতের বীজ আমদানি হলে কৃষকরা শুধু উৎপাদনে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, ধান আবাদের পরিবেশও বিপন্ন হয়ে পড়তে পারে।
আমরা মনে করি, খাদ্য ঘাটতি পূরণে যেমনি নিজেদের উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানিনির্ভরতা কমাতে হবে তেমনি হাইব্রিড বীজ উৎপাদনেও নিজস্ব সামর্থ্য বাড়াতে হবে- আমদানিনির্ভরতা কমাতে হবে। দেশে হাইব্রিড বীজ উৎপাদনের প্রতি সরকারকেই গুরুত্ব দিতে হবে। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটকে এমন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হবে যা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রহণ করে। ইতিমধ্যে দেশের কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান উচ্চ ফলনশীল, হাইব্রিড বীজ উৎপাদনে আত্মনিয়োগ করেছে। তারা যদি হাইব্রেড বীজ উৎপাদনের প্রযুক্তি পায় এবং বীজ উৎপাদনে যেতে পারে তাহলে হাইব্রিড বীজের জন্যে আমদানিনির্ভরতা কমানো সম্ভব। হাইব্রিড বীজের জন্যে বিদেশি নির্ভরতা ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতি মৌসুমেই যদি বীজ আমদানি করে আবাদ করতে হয় এবং কোনো কারণে কোনো মৌসুমে যদি বীজ আমদানি করা সম্ভব না হয় তাহলে কি অবস্থা দাঁড়াবে তা সহজেই অনুমান করা যায়। উচ্চ ফলনশীল, হাইব্রিড বীজ উৎপাদনে যেমন চাই নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন তেমনি বীজ উৎপাদনকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য চাই সরকারের উৎসাহ ও সার্বিক সহযোগিতা। দেশের ক্রমবর্ধমান খাদ্য চাহিদা পূরণে এবং আমদানিনির্ভরতা দূর করতে অবশ্যই খাদ্যশস্যের বিশেষ করে ধানের উৎপাদন বাড়াতে হবে। ধানের উৎপাদন বাড়াতে হাইব্রিড আবাদ ছাড়া গত্যন্তর নেই। এই হাইব্রিডের জন্যও বিদেশনির্ভরতা দূর করতে হবে। সে জন্যই উৎসাহিত করতে হবে দেশীয় বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে।

তিন বছর মেয়াদী শস্য ঋণ চালু II বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন

০৭.১০.০৮
ইত্তেফাক ।। ইত্তেফাক রিপোর্ট

সব ব্যাংককে কৃষি ঋণ বিতরণ নির্দেশসহ কৃষি ঋণ বিতরণের নিশ্চিত করতে তিন বছরের আবর্তনশীল শস্য ঋণ পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পৃথক দু’টি প্রজ্ঞাপন জারি করে এসব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নজরুল হুদা এক সাংবাদিক সম্মেলনে কৃষিঋণ বিতরণ ব্যাংকগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় এই প্রজ্ঞাপন দু’টি জারি করা হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কৃষি ঋণ বিতরণ ব্যবস্থা জোরদার করতে এসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানাগেছে।

সকল ব্যাংকের জন্য কৃষি ঋণ বিতরণ বাধ্যতামূলক করা সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বেসরকারি ও বিদেশী ব্যাংকসহ বাংলাদেশে কার্যরত সব তফসিলী ব্যাংককে কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে হবে। প্রত্যেক ব্যাংক তার মোট ঋণের একটি অংশ কৃষি ঋণ বিতরণের জন্য লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে প্রতি অর্থবছরের শুরুতে এই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে হবে।

চলতি অর্থবছরে এখনও পর্যন্ত যেসব ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেনি তাদের অবিলম্বে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অঞ্চলভিত্তিক ফসল উৎপাদন, ফসলের ধরণ অর্থাৎ যে এলাকায় যে ফসল ভালো উৎপাদন হয় সেগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে বাস্তবভিত্তিক কৃষি ঋণ বিতরণ করতে হবে। যেসব ব্যাংকের পল্লী অঞ্চলে শাখা নেই অথবা যাদের শাখার সংখ্যা পর্যাপ্ত নয় তারা এনজিও লিংকেজের মাধ্যমে কৃষি ঋণ বিতরণ করবে।

তিন বছরের আবর্তনশীল শস্য ঋণ পদ্ধতি চালু সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, প্রচলিত ব্যবস্থায় কৃষকরা প্রায়ই পুরণো ঋণ যথাসময়ে পরিশোধ করলেও একই ক্ষেত্রে আবার ডকুমেন্টেশনের বাধ্যবাধকতার কারণে নতুন ঋণ প্রাপ্তিতে দীর্ঘসূত্রতা সৃষ্টি হয় এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের দ্বারা কৃষকরা হয়রানির শিকার হন। এ কারণে কৃষি ঋণ বিতরণের অবিরাম প্রবাহ প্রান্তিক পর্যায়ে নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। ফলে কৃষি ঋণ বিতরণ ফলপ্রসূ হচ্ছে না। এ অবস্থায় তিন বছরমেয়াদি একটি আবর্তক শস্য ঋণসীমা পদ্ধতি প্রচলনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এতে বলা হয় , অবিরাম ফসল উৎপাদনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কৃষকরা আবর্তক ঋণ সুবিধা পাবেন।

সব শস্য ঋণের ক্ষেত্রে ইতিপূর্বে বিতরণ করা ঋণের সমুদয় সুদাসল আদায় করে পুনঃডকুমেন্টেশন ছাড়াই ঋণ নবায়ন করে পুনরায় ঋণ মজুরি ও বিতরণ করতে হবে। ঋণের জামানত, সীমা, সুদের হার ইত্যাদি সংবলিত এ নতুন স্কিম ব্যাংকগুলো নিজেরাই তৈরি করবে। প্রাথমিকভাবে ব্যাংকগুলোকে অল্পসংখ্যক শাখায় পরীক্ষামূলকভাবে ওই পদ্ধতি চালু করতে হবে।

কোল্ড স্টোরেজে রয়েছে ১৫ লাখ টন আলু লোকসানে বিক্রি করছে কৃষকরা II ৪ লাখ টন অবিক্রিত থাকার সম্ভাবনা

০৭.১০.০৮
ইত্তেফাক ।। নিজামুল হক

আগামী দুই মাসের মধ্যে নতুন আলু বাজারে আসা শুরু হবে। কিন্তু দেশের ৩০০টি কোল্ড স্টোরেজে এখনও সংরক্ষিত রয়েছে ১৫ লাখ টন আলু। এ অবস্থায় সংরক্ষিত আলু অবিক্রিত থাকার আশংকা করছেন কৃষকরা। আলু অবিক্রীত থাকলে কৃষকদের কয়েকশ’ কোটি টাকার লোকসান গুনতে হবে। এ অবস্থায় কৃষকরা আলুর ব্যবহার বাড়াতে ত্রাণ বিতরণসহ বিভিন্ন খাদ্য কর্মসূচিতে আলু অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন।

আলুর চাষ বৃদ্ধিতে সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের কারণে কৃষকরা বিগত বছরগুলোর চেয়ে বেশি জমিতে আলু চাষ করে। অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে গত মওসুমে আলুর উৎপাদন ৯০ লাখ টন ছাড়িয়ে যায়। দেশের বিভিন্ন জেলায় ৩০০টি কোল্ড স্টোরেজে গত মওসুমে ২২ লাখ টন আলু সংরক্ষণ করা হয়। এর মধ্যে এখনও ১৫ লাখ টন আলু সংরক্ষিত রয়েছে। অন্যান্য বছর এ সময়ে অর্ধেক আলু কোল্ড স্টোরেজ থেকে খালাস হয়। কোল্ডস্টোরেজ মালিকরা জানিয়েছেন, বর্তমানে যে পরিমাণে আলু কোল্ড স্টোরেজ থেকে খালাস হচ্ছে সে অনুযায়ী আগামী মওসুমে নতুন আলু বাজারে আসলেও অন্তত ৪ লাখ টন আলু হিমাগারে পড়ে থাকার আশংকা রয়েছে। ইতিমধ্যে কৃষকরা উঁচু জমিতে আলু চাষের প্রস্তুতি নিয়েছে। আগামী নভেম্বরের মাঝামাঝি এবং শেষ সপ্তাহের মধ্যে বাজারে নতুন আলু আসবে। আলু বীজ বাদে এ সময়ের মধ্যে কোল্ড স্টোরেজ থেকে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টন আলু বের হতে পারে। এরপরই নতুন আলু বাজারে চলে আসবে। নতুন আলু বাজারে আসার কারণে ক্রেতারা পুরাতন আলু কিনতে আগ্রহী হবেন না।

চালের ওপর থেকে চাপ কমানো এবং আলুর ব্যবহার বাড়াতে গত মে মাসে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজন করা হয়েছিল পটেটো ক্যাম্পেইন। উক্ত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আলুর বহুবিধ ব্যবহারের জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা হয়। কৃষি বিজ্ঞানীরা বলছেন, উৎপাদন অনুযায়ী আলুর ব্যবহার তেমন বাড়েনি। ফলে ক্যাম্পেইনের সুফল পাচ্ছে না কৃষকরা। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত মওসুমে ৫ লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে ৯০ লাখ টন আলু উৎপাদন হয়। বাজার চাহিদা পূরণের পর ২২ লাখ টন আলু কোল্ডস্টোরেজে রাখা হয়।

মুন্সীগঞ্জের কৃষক কামাল হোসেন জানান, প্রতি বস্তায় ৮০ কেজি আলু থাকে। ৮০ কেজি আলুর উৎপাদন খরচ ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা। কোল্ড স্টোরেজে প্রতি বস্তার জন্য দিতে হয় ১৮০ টাকা। পরিবহন খরচ ৮০ টাকাসহ বস্তা প্রতি তার খরচ ৯৫০ টাকা। কামাল হোসেন আরো জানান, প্রতি বস্তা তিনি বিক্রি করছেন ৯০০ টাকায়। বস্তা প্রতি তাকে ৫০ টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে। তবে স্থানভেদে উৎপাদন খরচ কম-বেশি হয়। কেউ লোকসান দিয়ে বা কেউ শুধু মূলধন তুলে নেয়ার উদ্দেশ্যে আলু বিক্রি করছেন বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে দেশে প্রতিষ্ঠিত রফতানিমুখী কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প পটেটো ফ্লেক্সের ৪টি কারখানা বন্ধ রয়েছে। এগুলো হলো পাটোয়ারী পটেটো ফ্লেক্স লিমিটেড, বিক্রমপুর পটেটো ফ্লেক্স লিমিটেড, পটেটো ফ্লেক্স (বিডি) লিমিটেড এবং ফ্লেমিংগো এগ্রোটেক লিমিটেড। কারখানাগুলোর আলু প্রক্রিয়াজাতকরণ ক্ষমতা বছরে অন্তত ৪ লাখ থেকে ৬ লাখ টন। এ কারখানা চারটি চালু করা গেলে আলুর ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষকরা লাভবান হতে পারতো বলে ধারণা করছে অনেকেই।

এসব কারখানা মালিকদের অভিযোগ, মূলধন বরাদ্দের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিআরপিডি সার্কুলার-৫এর শর্ত শিথিল না হওয়ায় ঋণ নেয়া যাচ্ছে না। বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মেজর (অবঃ) জসিম উদ্দীন বলেন, আলুর ব্যবহার বাড়াতে সশস্ত্রবাহিনী, বিডিআর, পুলিশ, আনসার, জেলখানা, এতিমখানা, হাসপাতাল, ভিজিএফ, কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচিসহ বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ হিসাবে চাল-গমের সঙ্গে আলু দেয়া হোক। তিনি কৃষকদের লোকসানের বিষয়টি বিবেচনা করে সরকারকে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।

ঝালকাঠিতে এক হাজার একর জমির সেচ সুবিধা নিশ্চিত

০৭.১০.০৮
যায়যায়দিন ।। ঝালকাঠি প্রতিনিধি
ঝালকাঠি সদর উপজেলার গাবখান-ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনির হোসেন হাওলাদার কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্পের অংশ হিসেবে রাস্তা বানানোর জন্য ফসলি জমির মাটি না কেটে ৯টি খাল পুনর্খনন করেছেন। ফলে এক হাজার একর জমির সেচ সুবিধা নিশ্চিত হয়েছে। গাবখান-ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারের বরাদ্দকৃত কাবিখা ও কাবিটার ৯টি প্রকল্প বাস্তবায়নে ইউপি চেয়ারম্যান মনির হোসেন হাওলাদার ফসলী জমির উর্বরা মাটি কেটে রাস্তা বানাতে না দিয়ে ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত কিন্তু ভরাট হয়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ খালগুলো পুনর্খনন করিয়ে সে মাটি দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করিয়েছেন। এর ফলে সেরয়র খাল, ভাড়ানি খাল, বলের খাল, বোরূপয়সার খাল, দেউলকাঠি খাল, দগিরার খাল, হেড়োর খাল, মোল্লার ভাঙ্গা ও বেরপয়রা ভাঙ্গার গভীরতা বেড়ে গেছে। ফলে এসব খাল দিয়ে আবার পানি চলাচল শুরু হয়েছে। এ কারণে পাঁচশরও বেশি কৃষক ও কৃষিজীবী পরিবারের প্রায় এক হাজার একর কৃষি জমিতে শুষ্ক মৌসুমসহ সারা বছর চাষাবাদের পানি প্রাপ্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। পাওয়ার পাম্প ও পাওয়ার টিলার চালানো জ্বালানি তেলের ঘাটতি ও চড়া মূল্যের হাত থেকে রেহাই পেয়ে বিনামূল্যে চাষাবাদের পানি সুবিধা পাওয়ায় এ ইউনিয়নের কৃষকরা দারুণ খুশি ও স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।

টিএসপি ও এমওপি সারের অভাবজনিত অপু®িদ্ব ও পোকার আত্রক্রমণ বগুড়া নওগাঁ ও জয়পুরহাটে আমন ফলন সিকিভাগে নামার আশগ্ধকা

০৭.১০.০৮
সমকাল ।। বগুড়া ব্যুরো/ নওগাঁ ও ক্ষেতলাল প্রতিনিধি

ঈদ এবার ভালো কাটেনি কৃষকের। ধানের শীষ বের হওয়ার মুহহৃর্তে সবুজ ক্ষেতগুলো ত্রক্রমেই বিবর্ণ হয়ে ওঠায় ফসলহানির দুশ্চিšøার ছাপ তাদের চোখে-মুখে। ফসল বাঁচাতে ঈদের দিনও কীটনাশক নিয়ে তাদের ছুটতে হয়েছে জমিতে।
কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জমি প্রস্ট‘ত করার সময় প্রয়োজনীয় ফসফেট ও পটাশজাতীয় সার প্রয়োগ করতে না পারার কারণেই মহৃলত ধানগাছগুলো অপু®িদ্বতে আত্রক্রাšø হয়ে দিন দিন বিবর্ণ হয়ে পাতা মরে যাচ্ছে। ফসলের সল্ফ¢াব্য ক্ষয়ক্ষতির কথা অফিসিয়ালি বলতে মানা। তাই উত্তরাঞ্চলে কর্মরত ক’জন কৃষি কর্মকর্তা ‘অব দ্য রেকর্ডে’ জানান, অপু®িদ্বর কারণে ধানগাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় অঞ্চলভেদে ক্ষেতগুলোতে নানা ধরনের পোকার আত্রক্রমণও বাড়ছে। অপু®িদ্ব কাটাতে কৃষি বিভাগের দেওয়া পরামর্শ অনুযায়ী কৃষক পটাশ মিশ্রিত পানি ¯েক্স্র কিংবা কীটনাশক ছিটিয়েও এখন ধানগাছের হারানো সবুজ রং ফেরাতে পারছেন না। কমছে না পোকার আত্রক্রমণও। বগুড়া, নওগাঁ ও জয়পুরহাট অঞ্চল ঘুরে এমন দৃশ্যই চোখে পড়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আমন আবাদের জন্য জমি প্রস্ট‘ত করতে ১ জুলাই মৌসুম শুরু হওয়ার আগে থেকেই অর্থাৎ জুনের মাঝামাঝিতে কৃষকরা ফসফেট সার প্রয়োগ করে থাকেন। কিন্তু এবার বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের কোনো জেলাতেই নির্ধারিত সময়ে তো নয়ই, এমনকি এক মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও কৃষকরা চাহিদা অনুযায়ী ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) ও মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার সংগ্রহ করতে পারেননি। সময়মতো ওই দুই ধরনের সারের যে বরাদ্দ মেলেনি, তা কৃষি কর্মকর্তারা স্ট^ীকারও করেছেন। তবে ‘চাকরি বাঁচানোর’ কথা বলে কোনো কর্মকর্তাই বরাদ্দ ও উত্তোলন পরিস্টি’তির পরিসংখ্যান মিডিয়ার কাছে প্রকাশ করতে রাজি হননি।
বগুড়ায় কৃষি কর্মকর্তাদের অসহযোগিতার মুখে জেলা প্রশাসনের সংশিল্গ®দ্ব শাখায় অনুসল্পব্দান করে জানা গেছে, জেলায় এমওপি সারের প্রথম বরাদ্দ দেওয়া হয় ২৮ জুলাই। ৩ হাজার ৬৬৩ মেট্রিক টনের বিপরীতে প্রথম বরাদ্দ মেলে মাত্র ৫০০ মেট্রিক টন। এরপর ৫ ও ৬ আগ¯দ্ব দু’দিনে বরাদ্দ দেওয়া হয় আরো ২ হাজার ৪৩৬ মেট্রিক টন। একইভাবে টিএসপির মোট চাহিদা ৫ হাজার ৫৭ মেট্রিক টন হলেও প্রথম বরাদ্দ মেলে ১৮ জুলাই মাত্র ১৬ মেট্রিক টন। এরও ১৭ দিন পর বরাদ্দ দেওয়া হয় ২ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন। নওগাঁয় জুলাই, আগ¯দ্ব ও সেপ্টেল্টল্ফ^রে যেখানে টিএসপির চাহিদা ছিল ১৭ হাজার ৬৯৩ মেট্রিক টন, সেখানে বরাদ্দ মিলেছে মাত্র ১ হাজার ৮৯৮ মেট্রিক টন। আর ১৬ হাজার ৪৯৯ মেট্রিক টন এমওপি সারের বিপরীতে বরাদ্দ এসেছে মাত্র ৩১৫ মেট্রিক টন।
মাঠপর্যায়ে কৃষকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, নির্ধারিত সময়ে টিএসপি ও এমওপি না পাওয়ার কারণে তারা ওই দুই ধরনের সার ছাড়াই আবাদে নেমে পড়েন। পরে অনেক দেরিতে সারগুলো ডিলারদের মাধ্যমে বাজারে ছাড়া হলেও দাম গত মৌসুমের তুলনায় ™ি^গুণের বেশি হওয়ায় কৃষকরা তা কেনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। গত মৌসুমে যেখানে প্রতি বস্টøা টিএসপির দাম ছিল ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার, আর এবার ৩ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার ৬০০ টাকা পর্যšø উঠেছে। একইভাবে ১ হাজার ৫০ টাকা বস্টøার এমওপি এবার বিত্রিক্র হচ্ছে ২ হাজার ২৫০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা পর্যšø।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উচ্চ পদস্ট’ এক কৃষি কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, টিএসপি ও এমওপি সারের ঘাটতির কারণে এবার আমন আবাদে কৃষকরা পুরোপুরি ইউরিয়া সারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। ফলে ধানগাছ তরতর করে বেড়ে উঠলেও টিএসপি ও এমওপি সারের অভাবজনিত কারণে অপু®িদ্বতে আত্রক্রাšø হয়ে সেগুলো বিবর্ণ হতে শুরু করে। গাছে ধান জন্ম নেওয়ার মুহহৃর্তে তা আরো প্রকট আকার ধারণ করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় সবুজ ধানগাছ লাল ও হলুদ রং ধারণ করার পাশাপাশি অঞ্চলভেদে ধানক্ষেতে মাজরা ও বাদামিসহ নানা ধরনের পোকার উপদ্রব বেড়ে যায়।
শস্যভাউত্তরাঞ্চলে খাদ্য উ™^ৃত্ত জেলাগুলোর অন্যতম বগুড়া, নওগাঁ ও জয়পুরহাট জেলার প্রায় সাড়ে ৪ লাখ হেক্টর জমির আমন ফসলই হুমকির মুখে পড়েছে। বিবর্ণ হয়ে যাওয়া ক্ষেত থেকে এবার সিকিভাগ ফলনও মিলবে কি-না তা নিয়ে শগ্ধিকত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। কৃষি কর্মকর্তাদের আশগ্ধকা, কাগ্ধিক্ষত ফলন না হলে খাদ্য উ™^ৃত্ত ওই ৩ জেলায় ১২ লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা মারাͧকভাবে ব্যাহত হতে পারে।
আমন ফসলের সল্ফ¢াব্য পরিণতি কী হতে পারে তা এ অঞ্চলের নদীতীরবর্তী এক জেলার ঊর্ধ্বতন এক কৃষি কর্মকর্তার মšøব্য থেকেই স্টক্স®দ্ব অনুমান করা যায়। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, পটাশ সারের ঘাটতিজনিত ফসলের এমন বিবর্ণ চেহারা গত ৪০ বছরেও দেখা যায়নি।
জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার মালিপাড়া গ্রামের কৃষক শামছুল আলম সমকালকে জানান, তিনি এবার যে ১৬ বিঘা জমিতে এবার ধান লাগিয়েছেন, এর সবই বিবর্ণ হয়ে পোকার আত্রক্রমণের শিকার হয়েছে। এ পর্যšø কয়েক দফায় ১০ হাজার টাকার কীটনাশক ছিটিয়েও কোনো ফল পাননি। পাশর্^বর্তী আক্কেলপুর উপজেলার সোনাইমাগুরা গ্রামের আবদুল জলিল জানান, তার জমিতে লাগানো ধানগাছের পাতা মরে যাচ্ছে। পাতামরা রোগ থেকে আমন ফসল রক্ষার জন্য তিনি এ পর্যšø ৪ বার কীটনাশক ¯েক্স্র করেছেন; কিন্তু কিছু তো হচ্ছেই না, বরং দিন দিন আরো নতুন পাতা মরে যাচ্ছে।
বগুড়া কৃষি স¤ক্স্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক রুস্টøম আলী জানান, যেসব কৃষক সময়মতো ফসফেট সার জমিতে প্রয়োগ করতে পারেননি, তাদের এখন ওই সার পানিতে মিশিয়ে ¯েক্স্র করতে বলা হয়েছে। তিনি অবশ্য স্ট^ীকার করেন, জমি প্রস্ট‘ত করার সময় টিএসপি ও এমওপি সার দিতে না পারলে ধানগাছ অপু®িদ্বজনিত রোগে আত্রক্রাšø হতে পারে।
জয়পুরহাট কৃষি স¤ক্স্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মহসীন আলী অবশ্য ফসফেট সারের ঘাটতির কথা মানতে রাজি হননি। তিনি ধানগাছ রোগাত্রক্রাšø হওয়ার পেছনে কৃষকদের ভারতীয় নিল্ফুমানের স্ট^র্ণা, মামুন ও রঞ্জিত জাতের বীজ ব্যবহারকে প্রধান কারণ হিসেবে উল্কেèখ করেন।

Monday, October 6, 2008

ঠাকুরগাঁও কৃষকের দুশ্চিন্তার কারণ পাতাপচা রোগ আর পোকার আক্রমণ

০৬.১০.০৮
যায়যায়দিন ।। ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

ঠাকুরগাঁওয়ে আমন ধানে ব্যাপকভাবে ফসল বিনষ্টকারী কীটপতঙ্গের আক্রমণ ও পাতাপচা রোগের খবর পাওয়া গেছে। সদর, বালিয়াডাঙ্গী, পীরগঞ্জ, রাণীশংকৈল, হরিপুরসহ পাঁচটি উপজেলাতেই কমবেশি এ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ব্যাপক পোকার আক্রমণের শুরুতেই দুই সপ্তাহ আগে যায়যায়দিনে এ ব্যাপারে খবর প্রকাশ হলেও কৃষি বিভাগ আগে থেকেই ব্যবস্থা না নেয়ায় আমন ধানের উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিরাট বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে কৃষি বিভাগ মাইকে ঘোষণা করে কৃষকদের সচেতন করা ছাড়া অন্য কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। এদিকে কৃষকরা গ্রামে নানা ভেজাল যুক্ত কীটনাশক ব্যবহার করে পোকার আক্রমণ রোধে সফল হয়নি।
বর্ষা মৌসুমের শেষ প্রান্ত থেকে টানা বর্ষণের কারণে এ পোকামাকড়ের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে বলে কৃষকরা ধারণা করছেন। তবে বিগত ৫/৭ দিন থেকে এটা ব্যাপক আকার ধারণ করলে কৃষি বিভাগের চৈতন্যের উদয় হয়। শুরুতে তারা পোকা আক্রমণের ব্যাপারটিকে গুরুত্ব না দিলেও কৃষকদের হাহাকারের মুখে গ্রামে গ্রামে ও পৌর এলাকায় মাইকিং করে কৃষকদের সচেতন করার উদ্যোগ নিয়েছে। তবে কৃষকদের অভিযোগ মাইকিং ছাড়া এখন পর্যন্ত তাদের অন্য কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
সরকারি লক্ষ্যমাত্রা উফশি ও দেশি জাতের মিলিয়ে ১ লাখ ৯ হাজার হেক্টর হলেও বাম্পার ফলনের আশায় জেলার কৃষকরা ১ লাখ ২৯ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদ করেছেন বলে কৃষি বিভাগ জানায়। টিএসপি সারের দু®প্রাপ্যতা ও চরম মূল্যবৃদ্ধির কারণে বেশিরভাগ কৃষক রাসায়নিক সার অনেক কম ব্যবহার করতে পারায় এমনিতেই ফসল কম হওয়ার আশঙ্কায় ছিলেন। পোকামাকড়ের এ উপদ্রব তাদের পুরোপুরি পথে বসিয়ে দেয়ার আশঙ্কায় ফেলেছে। গত আমন মৌসুমে জেলায় ২ লাখ ৯৫ হাজার মেট্রিক টন (প্রায়) আমন ধান উৎপাদিত হলেও এ বছর পোকার আক্রমণে হেক্টরের পর হেক্টর জমির আবাদ যেভাবে নষ্ট হতে শুরু করেছে তাতে কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক হতাশা বিরাজ করছে। যদিও গত বছরের তুলনায় ২৭ হাজার ৪০০ হেক্টর বেশি জমিতে রোপা আমনের আবাদ করেছে কৃষকরা। জেলার দৌলতপুরের কৃষক তহিদুল, রফিকুল, গৌরিপুরের আনছারুল, শহিদুল ও কাশেম জানায়, পোকার ব্যাপক আক্রমণে তারা ভয় পাচ্ছেন এক বস্তা ধানও ঘরে নিতে পারবেন কি না। এদিকে কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বছর আবহাওয়া সার্বিকভাবে ফসলহানিকর পোকামাকড়ের আক্রমণের জন্য খুবই উপযোগী। তাছাড়া বেশিদিন পানি থাকার কারণেই ধানগাছগুলোতে পচন ধরেছে। আশ্বিনী মঙ্গার দূরবস্থার মধ্যেও কৃষকরা কষ্ট করে বাজার থেকে যে কীটনাশকগুলো কিনছেন সেগুলোতে কোনো কাজ হচ্ছে না বলে কৃষকরা অভিযোগ করেছেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল হায়াৎ ও সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন জানান, আমরা খবর পেয়েছি।

জীবনমানের সব আছে কৃষকের ঘরে

০৬.১০.০৮
যায়যায়দিন ।। আলতাব হোসেন বেইজিং (চীন) থেকে ফিরে

বিশ্বের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর দেশ চীনের আর ১০টি গ্রামের মতোই একটি জুজেইয়ান। এ গ্রামে আছে হাসপাতাল। রয়েছেন সার্বক্ষণিক দুজন ডাক্তার। অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটারসহ হাসপাতালে আছে অ্যাম্বুলেন্স সুবিধা। কৃষকের স্বাস্থ্যসেবায় ৮০ ভাগ ভর্তুকি দিয়ে থাকে চীন সরকার। গ্রামে আছে কমিউনিটি সেন্টার। সঙ্গে বড় পরিসরের একটি করে লাইব্রেরি। আছে বিনোদনের জন্য মিনিপার্ক ও বাচ্চাদের খেলার মাঠও।
প্রতিটি বাড়িতে যাচ্ছে সাপ্লাইয়ের পানি। ঘরে ঘরে পানি গরম ও ঠা-া করার মেশিন। আছে প্রচ- শীতে
তাপ দেয়ার ব্যবস্থা। এসি-ফ্রিজেরও দেখা মিললো কিছু ঘরে। মাঝারি মানের শপিং মলও আছে। আধুনিক বিজ্ঞানের সঙ্গে গ্রামের কৃষকসহ সাধারণ মানুষকে পরিচিত করার জন্য আছে আইসিটি সেন্টার। গ্রামের শিশুরা ইন্টারনেটে জেনে নেয় নিজেদের দরকারি তথ্য। প্রতিটি বাড়িতেই আছে গ্যাস সরবরাহ। গ্রামেই আছে গ্যাস স্টেশন। আর গ্রাম থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরেই মহাসড়ক। চীনারা এসব গ্রামের নাম দিয়েছে ‘সোশ্যাল ভিলেজ’।
বেইজিং শহর থেকে সাড়ে ৪ হাজার কিলোমিটার দূরের এ গ্রামটি হুবাই প্রদেশের গুনআন কাউন্টিতে (জেলা)। দেড় হাজার হেক্টর আয়তনের এ বিশাল গ্রামের লোকসংখ্যা মাত্র ২ হাজার ৪১২ জন। আর কৃষক পরিবারের সদস্য ৫৬০ জন। মোট জমির এক হাজার হেক্টরই আবাদি জমি। অপেক্ষাকৃত কম উৎপাদনশীল উঁচু-নিচু জমিতে থরে থরে সাজিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে লালচে রঙের কৃষকের ঘরবাড়ি। বাড়ির পাশের মহাসড়ক থেকে পাকা রাস্তা চলে গেছে কৃষকের দোরগোড়ায়।
তিন থেকে পাঁচ হাজার পাকা দালান নিয়ে ঘরে উঠেছে চীনের একেকটি গ্রাম। আর এসব গ্রামে মূলত কৃষকরাই বেশি বসবাস করেন। এসব কৃষকের বাড়ি দুই থেকে পাঁচ তলাই বেশি চোখে পড়ে। প্রতিটি বাড়ি রঙিন টাইলস দিয়ে তৈরি। সব বাড়িতেই শূকর পালা হয়। মানুষ ও শূকরের বিষ্ঠা থেকে তৈরি করা হয় বায়োগ্যাস (বায়ো ফুয়েল)। আছে সৌরবিদ্যুৎও। চোখে পড়লো কৃষকের পাকা উঠানে শুকাতে দেয়া তুলা, ভুট্টা আর লাল মরিচ।
বাড়ির পাশের সামান্য পতিত জমিতে কৃষক বুনেছেন নানা জাতের শাকসবজি। ফুটে আছে সর্ষে ফুল। রাস্তার পাশে ছোট নালায় ফুটেছে নীলপদ্ম। চোখে পড়লো কোথাও পাকা আবার কোথাও আধা পাকা ধানের ক্ষেত। দেখেই বোঝা যায় কৃষকের ব্যস্ততা। এর মধ্যে কৃষাণীদের ব্যস্ততা যেন একটু বেশিই। ধান কেটে সঙ্গে সঙ্গে ক্ষেতেই তা যন্ত্রে মাড়াই হচ্ছে। আর বিছিয়ে রাখা হচ্ছে খড়, পরে তা পুরিয়ে ফেলা হবে। বিকালের সোনারঙা রোদ পড়ছে গ্রামের মাঠে। গাড়িতে করে কৃষককের ফসল চলে যাচ্ছে গ্রামের কোল্ড স্টোরেজে বা খাদ্য গুদামে। আর গ্রামের পুরো বিষয় তদারকি করেন গ্রামপ্রধান। এ গ্রামপ্রধান হলেন কমিউনিস্ট পার্টির এক তৃণমূল সদস্য।
এমন একটি স্বপ্নময় গ্রাম তৈরি করতে চীনাদের খুব বেশি সময় লাগেনি। গ্রামের এতোসব সুযোগ-সুবিধার পরেও চীনের বর্তমান এ অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার সুফল কেবল শহরের মানুষ ভোগ করছে বলে অভিযোগের অঙুলি ক্রমেই দৃশ্যমান হচ্ছে। গ্রাম ও শহরের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়ছে বলেও অভিযোগ আছে।
গ্রাম ও শহরের আয়-বৈষম্য কমাতে চীনা সরকার ভূমি ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন এনেছে। বর্তমানে ভূমির মালিকানা সরকারের হাতে থাকলেও তা দীর্ঘমেয়াদে লিজ দেয়া হচ্ছে কৃষকদের। আর কৃষকের নামে জমি লিজ নিয়ে কন্ট্রাক্ট ফার্মিং পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছে শহরের খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
গুনআন কাউন্টির ডেপুটি গভর্নর লি ফ্লুয়েন জানান, ৯০-এর পর শুরু হওয়া তাদের নতুন সোশ্যাল ভিলেজ সংগ্রামে হয়তো ছোটখাটো কিছু সমস্যা থাকবে, তবে নির্দিষ্ট একটা সময় পর এ বৈষম্য আর থাকবে না। তিনি জানান, এজন্য তারা কৃষিভিত্তিক শিল্প বিস্তারে প্রাধান্য দিচ্ছে।
১৯৬৪ সালে শুরু করা মাও সেতুংয়ের ‘সাংস্কৃতিক বিপ্লব’ সাফল্য পায়নি বলে একটা অনুযোগ আছে চায়না অর্থনীতিবিদদের। মাও সেতুংয়ের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের মূল উদ্দেশ্যই ছিল মানুষের মনোযোগের জায়গায় ব্যাপক পরিবর্তন আনা। যার মাধ্যমে স্বেচ্ছাশ্রমে প্রতিটি উন্নয়ন কর্মকা- পরিচালিত হবে। শিল্পভিত্তিক কৃষি খামারে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার মাধ্যমে বিশাল জনগোষ্ঠীর আয় নিশ্চিত করা হবে। কিন্তু সে কর্মসূচি শেষ পর্যন্ত ‘ব্যর্থ’ হয়েছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, চীনের বর্তমান অগ্রগতি যেভাবে এগোচ্ছে তাতে খুব অল্প সময়েই তা মার্কিন অর্থনীতির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামার আশঙ্কা করছে আমেরিকা। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিবিদরা ভারত ও চীনের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। সম্প্রতি বেইজিং অলিম্পিকের ম্যানেজমেন্ট (ব্যবস্থাপনা) দেখে অবাক হয়েছে বিশ্ব। কারণ অর্থনৈতিক ভিত মজবুত না হলে এ ধরনের একটি বিশ্ব আসর এতো সুন্দরভাবে শেষ করা হয়তো সম্ভব হতো না।
চীনের রাজনীতি সমাজতান্ত্রিক হলেও বর্তমানে অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় পুরোমাত্রায় ভর করেছে পুঁজিবাদ। দেশটির ছোট বড় প্রায় প্রতিটি শহরে এর প্রমাণ মিলেছে ম্যাগডোনালসের বার্গার শপ দেখে। বিশেষ করে ১৯৯০ সালে সোভিয়েত ‘বিপর্যয়ের’ পর চীনা অর্থনীতিতে পুঁজিবাদের অনুপ্রবেশ ঘটে, যা বর্তমানে দেশটির অর্থনীতিকে ‘চাঙ্গা’ করে রেখেছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। গত শতাব্দীর মধ্যভাগে চীন বিপ্লবের সংগঠিত হলেও খুব অল্প সময়ে চীনের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষেত্রে বিশাল ভূমিকা রাখছে।

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor