Friday, January 30, 2009

উত্তরাঞ্চলে সেচ সংকটে ফসলের ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা

৩১.০১.০৯
ইত্তেফাক ।। আমিনুল ইসলাম চৌধুরী, উত্তরাঞ্চল প্রতিনিধি ।।

উত্তরাঞ্চলের জলবায়ুর পরিবর্তন ও আবহাওয়ার বৈরী আচরণ কৃষি ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। এই অবস্থা জনস্বাস্থ্যের জন্যও হুমকিস্বরূপ। দীর্ঘস্থায়ী ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে প্রকৃতি। দিনভর সূর্যের মুখ দেখা যায় না। ৭ দিন পর গত বৃহস্পতিবার দুপুর ২ টায় মাত্র এক ঘন্টার জন্য সূর্যের মুখ দেখা গেছে। নদ-নদীর পানি সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে। পানিশূন্য হয়ে পড়েছে নদ-নদী, খাল-বিল। ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে। এখন শুরু হয়েছে বোরো মৌসুম। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে যাওয়ায় সেচ সংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। বেশি ফলনের আশায় উত্তরাঞ্চলে ৮০ ভাগ জমিতেই হাইব্রিড ধানের চাষ হচ্ছে। সেচ সংকট দেখা দিলে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। পদ্মা, যমুনা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র নদ-নদীর পানি প্রবাহ শূন্যের কোটায়। বিশাল বিস্তৃত চলনবিলসহ শতাধিক নদী পানিশূন্য। চলনবিল ও নদ-নদীর তলদেশে ফসলের চাষ হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য, চলতি মৌসুমে পদ্মা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা নদ-নদীর পানির গভীরতা সর্বনিম্নে নেমে গেছে। পানিশূন্য নদ-নদী বক্ষে বিশাল বিস্তৃত বালির স্তর জমেছে। ৫০ হাজারেরও বেশি একর আবাদি জমি অনাবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, এবার শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই উত্তরাঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে। ৯০ থেকে ১শ ফুট পাইপ বসিয়েও নলকূপে পানি উঠছে না। পানির স্তর ৩৫ থেকে ৪০ ফুট নিচে নেমে গেছে। পানির স্তর সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে যাওয়ায় উত্তরাঞ্চলের জন্য অশনিসংকেত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে যাওয়া উত্তরাঞ্চলে মরু প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিশুদ্ধ পানীয় জলের সংকট দেখা দিয়েছে। পানিতে আর্সেনিকের পরিমাণ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার জরিপ রিপোর্ট থেকে জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের বগুড়া, রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, জয়পুরহাট, নাটোর, নওগাঁ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ জেলায় ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিকের পরিমাণ সব চেয়ে বেশি। এসব জেলার ৯৫টিরও বেশি গ্রামের পানিতে আর্সেনিকের পরিমাণ বেশি বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব গ্রামে আর্সেনিকে আক্রান্ত লোকের সংখ্যা সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। বেসরকারি সংস্থার হিসাবে এ সংখ্যা ৫ সহস্রাধিক।

প্রকৃতির বৈরী আচরণে ফসল উৎপাদনও ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আবাদ করা ফসলে ছড়িয়ে পড়ছে রোগবালাই। ঘন কুয়াশায় এবার উত্তরাঞ্চলে আলু ক্ষেতে ছত্রাক রোগের বিস্তৃতি ঘটেছে। পাতা পচা রোগে নষ্ট হচ্ছে আলু। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে উঠতি গম, সরিষা। ওষুধ ছিটিয়েও কাঙিক্ষত ফল পাওয়া যাচ্ছে না। কৃষি বিভাগের হিসাবে উত্তরাঞ্চলের বগুড়া, রংপুর, নীলফামারী, পাবনা, জয়পুরহাট, লালমনিরহাট, সিরাজগঞ্জ জেলায় উচ্চফলনশীল ও হাইব্রিড জাতের আলু চাষ হয়েছে ৯৫ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে। আবহাওয়া ও প্রকৃতির বৈরী আচরণে ছত্রাকে ( লেট ব্লাইড) আক্রান্ত হয়ে সাড়ে তিন হাজার হেক্টরেরও বেশি জমির আলু নষ্ট হয়ে গেছে। উৎপাদনও নিচে নেমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

অ®দ্বগ্রামে সারের দাবিতে ইউএনও অফিসে ধরনা শত শত কৃষকের

সমকাল ।। কুলিয়ারচর (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি

কিশোরগঞ্জের অ®দ্বগ্রামে বৃহ¯ক্সতিবার সারের জন্য ইউএনও অফিসের সামনে শত শত কৃষক সমাবেশ করেছে। সারা বছরের একমাত্র ফসল বোরো উৎপাদনের জন্য হাওরের কৃষকরা সার না পেয়ে বিক্ষোভ করেন।
কৃষকরা জানান, বোরো মৌসুমের শুরুতে এলাকায় সার সংকট দেখা দেয়। জমিতে ইউরিয়া সার ছিটানোর ভরমৌসুম হলেও উপজেলার বর্ধমানপাড়া, বালুরচর, কলাপাড়া, মাইকেরহাটি, কদমচালসহ বিভিল্পু গ্রামের কৃষকরা এখন পর্যšø জমিতে সার দিতে পারেননি। বৃহস্টক্সতিবার সারের জন্য সদর ইউনিয়নের বিভিল্পু গ্রাম থেকে ৪-৫ শ’ কৃষক ইউএনও অফিসের সামনে জড়ো হন। এ সময় সাংবাদিকদের কাছে সার সংকটের চিত্র তুলে ধরে কেউ কেউ কাল্পুায় ভেঙে পড়েন। বর্ধমানপাড়ার কৃষক সারাজ মিয়া (৬৫), সাব্বির মিয়া (৩৩), মাইকেরহাটির ছলিম মিয়া (৩৮), বালুরচরের রতন মিয়া (৩০), কলাপাড়া গ্রামের আবদুল আহাদ (৬২) বলেন, ‘অহন ক্ষেতে সার দেওয়ার ফুরা সময়। সার না দিলে ধান অইব না, আমরার একটামাত্র ফসল যদি না অয় তাইলে না খাইয়া মরতে অইব।’
ইউএনও অফিসের সামনে কৃষকদের প্রায় এক ঘণ্টা অবস্ট’ানকালে সারের দাবি নিয়ে সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সৈয়দ ফাইয়াজ হাসান বাবু উপজেলা নির্র্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। অফিস থেকে বের হয়ে তিনি এ প্রতিনিধিকে জানান, মৌসুমের শুরু থেকেই সার সংকট চলছে। কোনো কোনো এলাকার কৃষক এখন পর্যšø জমিতে একমুঠো সারও দিতে পারেননি। ওয়ার্ডভিত্তিক সার বণ্টন করা হলেও সার না পাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের (বিএস) দায়ী করেন। তিনি এসব অভিযোগ ইউএনওকে অবহিত করেছেন বলে জানান।
উপজেলা কৃষি অফিস সহৃত্রে জানা গেছে, অ®দ্বগ্রাম উপজেলায় ২৬ হাজার হেক্টর জমি বোরো আবাদের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ওই পরিমাণ জমির জন্য ইউরিয়া সারের চাহিদা দেওয়া হয় ৫ হাজার ৬৪২ মেট্রিক টন। এখন জমিতে ইউরিয়া সার ছিটানোর সময় হলেও দুই কিস্টিøতে মাত্র ২ হাজার ৭২৪ মেট্রিক টন সার পাওয়া গেছে।

‘হামার আবাদ বুঝি শ্যাষ হয়া যায়’

৩১.০১.০৯
সমকাল ।। আবদুল খালেক ফারুক, কুড়িগ্রাম

‘৫ দিন থাকি জমিত পানি পাই না, জমি ফাটি গেইচে; হামার আবাদ বুঝি শ্যাষ হয়া যায়’Ñ বোরো চারা রোপণের পরেই বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে শুকনা, খরখরে জমির দিকে তাকিয়ে কৃষক রিয়াজুল দীর্ঘশ^াস ছেড়ে এসব কথা বলেন। রাজারহাটের ছাটমাধাই গ্রামের প্রাšিøক কৃষক রিয়াজুলের মতো অনেকেই বোরো চারা রোপণ করে সেচের পানি না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন। আবার অনেকেই জমি তৈরি করে বসে আছেন; পানি পাচ্ছেন না। পল্কèী বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কারণে মৌসুমের শুরুতেই সেচ সংকটে পড়েছেন কুড়িগ্রামের কৃষকরা।
বৃহস্টক্সতিরার কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নের মুক্তারাম, গঙ্গাদাস, রাজারহাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের কেন্দ্রা ও ছাটমাধাই গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, পানির অভাবে অনেক কৃষক জমি তৈরি ও চারা রোপণ করতে পারছেন না। আবার কেউ সেচ নিয়ে জমিতে চাষ দেওয়ার পর শুকিয়ে যাচ্ছে পানি। ফলে কোনো মতে চারা রোপণের পর কয়েক দিন সেচ দিতে না পারায় চারা লাল বর্ণ ধারণ করছে। গঙ্গাদাস গ্রামের উজ্জল, খালেকুজ্জামান ও ছোবান জানান, চারার বয়স ৪০ দিন পার হয়ে গেলেও এখনো পাল্ফেক্সর মালিকরা পানি দিতে পারেননি। ফলে জমিতে এখনো চারা লাগাতে পারেননি। পাল্ফক্স মালিক আবদুল লতিফ জানান, বাড়তি চাহিদা মেটাতে ১০ কেভির ট্রান্সফরমার পরিবর্তন করে ১৫ কেভির ট্রান্সফরমার নেওয়ার জন্য ১ মাস ধরে অফিসে ঘুরেও কাজ হচ্ছে না। মুক্তারামের মনির উদ্দিন বলেন, ‘পানি নিয়া বড় বিপদে আছি বাহে’। ছোটমাধাই গ্রামের সুধীর চন্দ্র বলেন, ‘জমিত হাল দিয়া ৩ দিন থাকি মেশিনের মালিকের ওটে ঘুরবার নাগছি, পানির সিরিয়াল পাওয়া যাবার নাগছে না। পাল্ফেক্সর মালিক সুনীল জানান, দিনের ১১ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ থাকে না, তাই কৃষকের চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। সময় যত যাচ্ছে, কৃষকের উ™ে^গ তত বাড়ছে, বাড়ছে পানি নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ। কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্কèী বিদ্যুৎ সমিতির এজিএম (গ্রাহকসেবা) খালিদ মাহমুদ জানান, পিক আওয়ারে ১৮ মেগাওয়াট চাহিদার স্ট’লে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। ২৪ ঘণ্টার ১১ ঘণ্টাই লোডশেডিং দেওয়ার কারণে কৃষকরা সমস্যায় পড়েছেন।
সংযোগ পেতে নানা বিড়ল্ফ^না
কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্কèী বিদ্যুৎ সমিতি সহৃত্রে জানা গেছে, বিগত বোরো মৌসুমে এ দুটি জেলায় ৮ হাজার ২৫৩টি সেচ পাল্ফেক্স বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছিল। আরো প্রায় ৪ হাজার আবেদনকারী সংযোগের জন্য আবেদন করলেও ট্রান্সফরমার, তার ও মিটার সংকটের কারণে সংযোগ দেওয়া সল্ফ¢ব হয়নি। এ বছর আরো ২ হাজার কৃষক সংযোগের জন্য আবেদন করেন। বিদ্যুৎ স্ট^ল্কপ্পতার কারণে সরকারি নীতিমালা হচ্ছে ৭ শতাংশের বেশি অতিরিক্ত সংযোগ দেওয়া যাবে না। তবে বিশেষ বিবেচনায় আরো কিছু সংযোগ দেওয়া হবে। যদিও এ বছর সব মিলে ১ হাজার ৬৮৫টির বেশি নতুন সংযোগ দিচ্ছে না পল্কèী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। বাকি আবেদনকারী তাই প্রতিদিন অফিসে এসে ধরনা দিলেও লাভ হচ্ছে না।
তাছাড়া সৌভাগ্যত্রক্রমে সংযোগ পাওয়ার জন্য যারা মনোনীত হয়েছেন, প™ব্দতিগত জটিলতার কারণে মাসের পর মাস অফিসে ঘুরেও কাগ্ধিক্ষত সংযোগটি নিতে পারছেন না। রাজারহাটের বালাকান্দি গ্রামের বাদশা মিয়া জানান, গত বছর জামানতের ১১ হাজার ৪৮৭ টাকা জমা দিয়েও সংযোগ পাননি। এবার নতুন নিয়মে ট্রান্সফরমার বাবদ ২৬ হাজার ১০৭ টাকা জমা দিয়েও ১২ দিনেও সংযোগ পাননি। মুক্তারামের ছাত্তার জানান, তারের টাকা জমা দিয়ে ১০/১২ দিন ধরে অফিসে ঘুরে কোনো কিনারা করতে পারছেন না।
কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্কèী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মুহাল্ফ§দ মনজুর উর রশীদ জানান, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী সল্ফ¢ব দ্র“ততম সময়ে সংযোগ দেওয়ার চে®দ্বা করছেন তারা। এ ক্ষেত্রে তাদের কোনো গাফিলতি নেই।

ঠাকুরগাঁওয়ে আলুর ফলনে বিপর্যয়ের আশঙ্কা

৩১.০১.০৯
যায়যায়দিন ।। ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

একদিকে ফরিয়াদের খপ্পরে পড়ে বেশি দামের আশায় ক্ষেত থেকে অপরিপক্ব আলু বিক্রি করছেন কৃষকরা। অন্যদিকে ঘন কুয়াশার কারণে জমিতে লেটব্লাইট রোগের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ফলে ঠাকুরগাঁওয়ে আলুর ফলনে বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। বন্যামুক্ত উঁচু জমির জন্য বিখ্যাত ঠাকুরগাঁওয়ে আলুর এই বিপর্যয়কর ফলনের কারণে ব্যাহত হবে আলুর জাতীয় উৎপাদন, খাদ্য সঙ্কট দেখা দেবে বলে মনে করছেন অভিজ্ঞরা।
আলু ওঠার পুরা মৌসুম শুরু হতে এখনো এক-দেড় মাস বাকি, কিন্তু এরই মধ্যে বাজারে আলুর দাম বেড়ে যাওয়ায় অপিরপক্ব আলু ক্ষেত থেকে বিক্রি করে দিচ্ছেন আলুচাষীরা। ব্যবসাটি লাভজনক হওয়ায় দূর-দূরান্ত থেকে পাইকার ফড়িয়ারা এসে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে ৫৫ থেকে ৭০ দিন বয়সের অপরিপক্ব আলু বিক্রি করতে। কৃষি বিভাগ জানায়, এতে যে আলুটি ১৫০ গ্রাম ওজনের হতো তা সর্বোচ্চ ৫০ গ্রামে বিক্রি করছেন কৃষকরা। আলুর ভরা মৌসুমে বাজারে ন্যায্য দাম না পাওয়ার আশঙ্কায় কৃষকরা বিক্রি করছেন পরিমাণে প্রায় অর্ধেক বা তিন ভাগের এক ভাগ ফলন হওয়া আলু। এ বিষয়টি আলুর জাতীয় উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন।
অন্যদিকে আলুচাষীদের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়েছে এ এলাকার আলু ক্ষেতে লেটব্লাইট রোগের সংক্রমণ। ১৫ দিনের টানা কুয়াশায় লেটব্লাইটে আক্রান্ত হয়ে মাঠের পর মাঠ পুড়ে যাচ্ছে আলুক্ষেতগুলো। দিনরাত ¯েপ্র করেও এর বিহীত হচ্ছে না। কৃষকদের অভিযোগ, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসছে না সরকারি কৃষি বিভাগ। কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এ মৌসুমে ২৩ হাজার ২৭০ হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৬৮ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু অকালে আলু তোলা ও লেটব্লাইটের প্রাদুর্ভাবের কারণে এ লক্ষ্যমাত্রার তিন ভাগের এক ভাগ আলুও উৎপাদিত হবে কি না এ ব্যাপারে সন্দিহান সংশ্লিষ্টরা। এ জেলায় বিভিন্ন আলুক্ষেত ঘুরে দেখা যায় লেটব্লাইটে আক্রান্ত নয় এমন ক্ষেত খুঁজে পাওয়াই দুস্কর।

বেড়ায় আড়াই হাজার মেট্রিক টন নিম্নমানের টিএসপি সার আটক

৩১.০১.০৯
যায়যায়দিন ।। বেড়া (পাবনা) সংবাদদাতা

বেড়ার নগরবাড়ী-নটাখোলা ঘাটে শুক্রবার পুলিশ ও বেড়া কৃষি বিভাগ যৌথ অভিযান চালিয়ে প্রায় ২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন নিম্নমানের টিএসপি সার আটক করেছে।
উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর জন্য আমদানি করা এসব নিম্নমানের সার বেড়ার নগরবাড়ী-নটাখোলা ঘাটের এক ব্যবসায়ীর গুদামে মজুদ করা হয়।
বেড়া কৃষি কর্মকর্তা জানান, ট্রিপল সুপার ফসফেটে ৪৬ শতাংশ ফসফরাস থাকার স্থলে মাত্র ৩০ শতাংশ ফসফরাস রয়েছে। টিএসপির সঙ্গে সংমিশ্রিত সালফার ১৮ শতাংশের স্থলে মাত্র ৯ শতাংশ এবং আর্দ্রতা ২ শতাংশের স্থলে ৫ শতাংশ থাকায় কৃষি অধিদপ্তরের কাছে আমদানি করা এ টিএসপি সার নিম্নমানের। যশোর নওয়াপাড়ার মেসার্স দেশ ট্রেডিং সম্প্রতি চীন থেকে ৬ হাজার ৫৬৬ টন টিএসপি সার আমদানি করে। ওই সার নিয়ে প্রায় এক সপ্তাহ আগে একটি জাহাজ চট্টগ্রামের বহির্নোঙরে এসে পৌঁছায়। সার খালাসের সময় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নমুনা পরীক্ষা করে জানতে পারে আমদানি করা সার নিম্নমানের। এ সার কৃষি ক্ষেত্রে ব্যবহার করলে বিপর্যয় হবে বলে কৃষি বিভাগ ওই সার বাজারজাতকরণ বন্ধ করে দেয়। কিন্তু আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সে নির্দেশ অমান্য করে যশোরের নওয়াপাড়া এবং পাবনার বেড়ার নগরবাড়ী-নটাখোলায় নিয়ে এসে গোপনে বিক্রি করার চেষ্টা চালায় বলে বেড়া কৃষি কর্মকর্তা জানান।

এবার ইরি-বোরো ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা

৩১.০১.০৯
যায়যায়দিন ।। মোর্শেদ আলী

এবার ইরি-বোরো ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা কৃষিতে বিশেষ করে সার ও ডিজেলে যে প্রক্রিয়ায় বর্তমানে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে এ প্রক্রিয়ায় খোদ কৃষক খুব সামান্য উপকৃত হয়। আসলে লাভ হয় ডিলারদের। এ মধ্যস্বত্বভোগীদের তোয়াজ কি এ মুহূর্তে খুব প্রয়োজন ছিল? বরং পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনা প্রয়োজন ছিল। আসলে কৃষককে যদি ভর্তুকি দিতে হয় সেটা সার, বীজ, সেচের মাধ্যমে দেয়া বাঞ্ছনীয়। আর সেটা করতে হলে বিএডিসিকে পূর্ব অবস্থানে নিতে হবে প্রথম।
===========================================
এবার যখন ইরি-বোরোর জন্য জমি তৈরি করার কাজ শুরু হয় ঠিক সে সময় জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সরকার ব্যস্ত ছিল। প্রয়োজনীয় নজরদারি ঠিকমতো হয়নি। নতুন সরকার আসার পর দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে ঠিক। কিন্তু ইতিমধ্যে চাষের ও ধান লাগানোর কাজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। কৃষক জমি তৈরি করতে যেসব নন-ইউরিয়া সার ব্যবহার করে অর্থাৎ টিএসপি, ডিএপি, এমওপি জাতীয় সারের দাম অতিরিক্ত থাকায় সেসব অতি প্রয়োজনীয় সার কৃষক ব্যবহার করতে পারেনি। কিছু ব্যবহার করলেও পরিমাণমতো দিতে পারেনি। কারণ অতি উচ্চ মূল্য ছাড়াও যে বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হয় তা হলো কৃষকের হাতে টাকা নেই। প্রয়োজনীয় কৃষিঋণ কৃষক পাচ্ছে না।
অথচ খাদ্য নিরাপত্তার জন্য আমাদের এ বোরো ফসলের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অতি জরুরি। কারণ এখন আমাদের মতো দেশ চাইলেই চাল-গম কিনতে পারে না। বিশ্বে এখন খাদ্যশস্যের নানাবিধ ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় খাদ্যশস্যের দাম যেমন বেড়েছে তার সঙ্গে আগের মতো সহজপ্রাপ্য নয়। অর্থাৎ টাকা দিলেই বা থাকলেই বিদেশ থেকে খাদ্য সহজে কিনতে পাওয়া যায় না। কারণ আমেরিকাসহ উন্নত বিশ্বে বায়োফুয়েল তৈরির জন্য প্রচুর পরিমাণ শস্য ব্যবহার করা হচ্ছে। এ নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্ন উঠেছে, কিন্তু ফয়সালা হয়নি। এসব বিষয় লক্ষ্য রেখে সরকার যাতে পদক্ষেপ নেয় তা জরুরি হয়ে পড়েছে। প্রথমত আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম অস্বাভাবিকভাবে পড়ে যাওয়ায় সারসহ অনেক ব্যবহার্য জিনিসের দাম কমে গেছে। সেই সুযোগ গ্রহণ করে আমাদের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে এবং খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হবে।
এ বিষয়ে সরকারি পদক্ষেপের কিছু ত্রুটি লক্ষণীয়। আন্তর্জাতিক বাজারে যে হারে সারের দাম কমেছে সরকার ভর্তুকি দিয়ে তারচেয়ে বেশি দাম ঘোষণা করেছে। ডিজেলের ক্ষেত্রেও তাই। তাছাড়া ইউরিয়া সারের দাম যা ছিল তাই রেখেছে। অথচ এ সময়ই ইউরিয়া প্রয়োজন। বিগত সরকার ইউরিয়ার দাম দ্বিগুণ করে ১২ টাকা করে দেয়। এখনো তাই রাখা হয়েছে। অথচ ইউরিয়া উৎপাদন খরচ কেজি প্রতি ৭ টাকার বেশি নয়। সরকারের এ পদক্ষেপে কৃষক খুব লাভবান হবে না। কয়দিন আগে কৃষিমন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, একসঙ্গে দাম না কমিয়ে ধাপে ধাপে কমানো আমাদের জন্য ভালো। কিন্তু সময়ের একটি বিষয় আছে। কৃষককে এখনই সহযোগিতা করা দরকার। কয়দিন পর দাম কমালে ইরি-বোরোর জন্য কোনো উপকার হবে না। ফলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন। অন্তত ইউরিয়া সারের দাম পূর্ব অবস্থায় নিয়ে গেলে সরকারের খুব ক্ষতি হবে না। আর যদি ফসলের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না করা যায়, তাহলে সরকার আরো ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। উল্লেখ্য, সরকার এবার ১ কোটি ৮০ লাখ ম্যাট্রিক টন ইরি-বোরোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে যা বিগত বছরের চেয়ে ১.৪০% বেশি।
অপর প্রসঙ্গ হচ্ছে কৃষিতে বিশেষ করে সার ও ডিজেলে যে প্রক্রিয়ায় বর্তমানে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে এ প্রক্রিয়ায় খোদ কৃষক খুব সামান্য উপকৃত হয়। আসলে লাভ হয় ডিলারদের। এ মধ্যস্বত্বভোগীদের তোয়াজ কি এ মুহূর্তে খুব প্রয়োজন ছিল? বরং পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনা প্রয়োজন ছিল। আসলে কৃষককে যদি ভর্তুকি দিতে হয় সেটা সার, বীজ, সেচের মাধ্যমে দেয়া বাঞ্ছনীয়। আর সেটা করতে হলে বিএডিসিকে পূর্ব অবস্থানে নিতে হবে প্রথম। তারপর এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সব উপকরণ কিনে কৃষকদের দ্বারে ভর্তুকি মূল্যে বিতরণের ব্যবস্থা করলেই সত্যিকার উপকার হবে। তবে ব্যক্তিমালিকানায়ও সারের ব্যবসা থাকবে। শুধু ব্যক্তি মালিকদের ওপর নির্ভর করাটা সরকারের জন্য বোকামি হবে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ ও বিএডিসির মাধ্যমে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে সেচে যে রমরমা ব্যবসা ডিপ-টিউবওয়েলের মালিকরা গ্রামে ফেঁদে বসেছে তার হাত থেকে কৃষক মুক্তি পাবে না। এরই সঙ্গে কিছু পরামর্শ উত্থাপন করা হলোÑ
১. সার, বীজ, ঋণ প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও উপকরণসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধি ও প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সময়মতো সেসবের আমদানি নিশ্চিত করা এবং সারাদেশে উৎপাদক কৃষকের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ ও সহজলভ্য করতে হবে। ভর্তুকি প্রদান করে কম দামে এসব উপকরণ কৃষকের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।
২. খোদ কৃষক যাতে কৃষিপণ্যের উৎসাহমূলক ও ন্যায্য মূল্য পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে পণ্য পরিবহন, বাজারজাতকরণ, দেশব্যাপী পাইকারি ও খুচরা মূল্য সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহের উন্নত ব্যবস্থা করতে হবে। মূল্য সমর্থন দিয়ে লাভজনক দামে উৎপাদক কৃষকের কাজ থেকে সরকারিভাবে কৃষিপণ্য কেনার ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. খুচরা মূল্যের ৭৫% যেন খোদ কৃষক পায় তার নিশ্চয়তার জন্য উপযুক্ত আইন ও তদারকি সরকারকে করতে হবে। এজন্য বাজার ব্যবস্থায় ব্যক্তি খাতের পাশাপাশি কৃষকদের বাজার সমবায় এবং বিএডিসিসহ রাষ্ট্রীয় সংস্থায় বহুমুখী কার্যক্রম প্রসারিত করতে হবে।
৪. গ্রামীণ অর্থনীতিতে বহুমাত্রিক উৎপাদন ও সেবামূলক কার্যক্রম চালু করতে হবে। একই সঙ্গে গ্রামীণ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প প্রসারে ব্যাপক উদ্যোগ নিতে হবে।
৫. কৃষি ও কৃষকের স্বার্থে ভূমি ব্যবহার নীতি প্রণয়ন করতে হবে। খোদ কৃষক যাতে জমি না হারায় তার নিশ্চয়তা বিধান করে গ্রামাঞ্চলে নিঃসকরণ প্রক্রিয়া বন্ধ করার ব্যবস্থা করতে হবে।
৬. জলমহাল ও ভাসান পানিতে প্রকৃত জেলেদের মাছ ধরার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
৭. গবাদিপশু পালন কার্যক্রম কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের সমবায়ভিত্তিক খামার প্রতিষ্ঠায় সরকারি উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে। গবাদি পশু-পাখির রোগবালাই বিশেষত বার্ড ফ্লু, ম্যাডকাউ ডিজিজ ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ ও বীমা সুবিধা প্রবর্তন করতে হবে।
৮. গ্রামে অবিলম্বে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক থেকে সহজশর্তে ঋণদান পদ্ধতি চালু ও তদারকির ব্যবস্থা করতে হবে।
৯. সর্বোপরি অবিলম্বে শস্য বীমার ব্যাপক প্রচলন শুরু করতে হবে।
অবশেষে বলতে চাই, সরকার তার ভালো কথা বা সরকারি নির্দেশ দিলেই হবে না। তা কার্যকর হচ্ছে কি-না তার তদারকির ব্যবস্থা গড়ে তুলতে। তাছাড়া গ্রামে কৃষকদের জন্য কার্ডের ব্যবস্থা করলে বিতরণ ব্যবস্থা উন্নত করা যাবে।
মোর্শেদ আলী: রাজনীতিক ও কলাম লেখক।

ঘন কুয়াশায় শেরপুরে অধিকাংশ আলু ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি

৩১.০১.০৯
ডেসটিনি ।। শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে অব্যাহত শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশার কারণে শেরপুরে শীতকালীন ফসল আলু ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এমনকি ক্ষেতে ওষুধ প্রয়োগ করেও রোগ দমন করা যাচ্ছে না। বরং দিন দিন তা নতুন মাত্রায় মারাত্মক আকার ধারণ করে ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেতে ছড়িয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় চাষিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তবে স্থানীয় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা পরিস্থিতি মোকাবিলায় কয়েক সপ্তাহ ধরেই মাঠপর্যায়ে কৃষকদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য কৃষকদের নিয়ে গ্রুপি মিটিং, লিফলেট বিতরণ, বাড়তি ট্রেনিংসহ বিভিন্ন পরামর্শমূলক দিকনির্দেশনা দেয়া হচ্ছে বলে উপজেলা কৃষি স¤প্রসারণ কর্মকর্তা আবদুর রহিম জানিয়েছেন।
উপজেলা কৃষি অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি শীত মৌসুমে ৩ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আলু, ১ হাজার ৩৪০ হেক্টর বোরো বীজতলা, ১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে সরিষা, ১ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন বিভিন্ন শাক-সব্জি চাষ করা হয়েছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশার দাপটে উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে লাগানো আলু ক্ষেতগুলো শীতকালীন ছত্রাকনাশক রোগ লেট ব্রাইটে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। এতে ক্ষেতের আলু গাছগুলো কুঁকড়ে মাটিতে পড়ে গেছে। অব্যাহত ওষুধ প্রয়োগ করেও কৃষকরা তা দমাতে পারছেন না। এমনকি রোগটি আরো নতুন জমিতে ছড়িয়ে পড়ছে।
উপজেলার তালতা গ্রামের কৃষক আবু সাঈদ জানান, তিনি গত বছর ১০ বিঘা জমিতে আলু লাগিয়েছিলেন। তবে সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকটা মূলধনের সংকট দেখা দেয়। তবুও তিনি এ বছর ৫ বিঘা জমিতে আলু লাগিয়েছেন। কিন্তু ক্ষেতের গাছগুলো রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। কয়েকদিন পরপর দুই থেকে আড়াই টাকার ওষুধ কিনে তা ক্ষেতে ¯েপ্র করতে হচ্ছে। তাতেও রোগ দমছে না। শেষ পর্যন্ত কী হবে তা উপরওয়ালাই জানেন।
সাধুবাড়ির শহিদুল ইসলাম, গোলাম রব্বানী, মামুরশাহীর দুলাল হোসেন, ঘোলাগাড়ীর নুরুল ইসলাম, মাকোরকোলার হায়দার আলী, মতিয়ার রহমান জানান, অব্যাহত ঘন কুয়াশার কারণে তাদের আলু ক্ষেতগুলো প্রায় সম্পূর্ণভাবে নষ্টের পর্যায়ে। কিছু ভালো থাকলেও সেগুলোও লেটব্লাইটে আক্রান্ত হচ্ছে। ওষুধ ¯েপ্র করেও রোগের প্রাদুর্ভাব কমাতে পারছেন না।

বন্দর ও কৃষি বিভাগ খালাসের অনুমতি দেয়নি ১০ কোটি টাকার সার আটক

৩০.০১.০৯
যায়যায়দিন ।। স্টাফ রিপোর্টার যশোর

যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়ায় আটক করা ১০ কোটি টাকার টিএসপি সার চট্টগ্রাম বন্দর ও কৃষি বিভাগ খালাসের অনুমতি দেয়নি। তারপরও সেগুলো বাজারজাত করার জন্য পাঠানো হয়। বুধবার আটক প্রচুর পরিমাণ সার গতকাল কার্গো থেকে আনলোড করে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের গুদামে রাখা হচ্ছিল। আনলোড শেষে গুদাম সিলগালা করে রাখা হবে।
জানা যায়, সম্প্রতি মেসার্স দেশ ট্রেডিং নামে একটি প্রতিষ্ঠান ওই সার চীন থেকে আমদানি করে। সার বোঝাই জাহাজ চট্টগ্রামে নোঙর করার পর নিয়ম অনুযায়ী ওই সারের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় ওই সার নিম্নমানের বলে প্রমাণিত হয়। কৃষি বিভাগ ও বন্দর কর্তৃপক্ষ এ কারণে সার খালাসের অনুমতি দেয়নি। এরই মধ্যে ওই সার কার্গোযোগে বাজারজাত করার জন্য নওয়াপাড়া পাঠানো হয়। এদিকে চট্টগ্রামের কৃষি কর্মকর্তারা ফ্যাক্সযোগে বিষয়টি যশোরের কৃষি কর্মকর্তাদের অবহিত করে ওই সার যাতে বাজারজাত করতে না পারে এ জন্য আটকের কথা বলা হয়। বুধবার অভয়নগর উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ যৌথভাবে ওই সার আটক করে। সার আটক নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বলেন, নিয়ম মেনেই সার আমদানি করা হয়েছে। সার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণকারী সিন্ডিকেট কর্মকর্তাদের যোগাসাজশে ওই সার আটক করা হয়েছে। এতে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে নিজেদের সার বেশি দামে বিক্রির চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের যশোরের উপপরিচালক খায়রুল ইসলাম বলেন, আটক সার সিলগালা করে রাখা হবে। পরে ওই সারের বিষয়ে মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে।

জ্বালানি তেল সারের দাম কমায় উৎফুল্ল কৃষক এখন উদ্বিগ্ন

৩০.০১.০৮
সমকাল ।। সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

জ্বালানি তেল ও সারের মহৃল্য কমানোর কারণে উজ্জীবিত সিরাজগঞ্জের কৃষক ব্যাপক হারে বোরোধানের আবাদ শুরু করলেও ঘন কুয়াশা আর বিরূপ আবহাওয়া তাদের উ™ি^¹ু করে তুলেছে। ইতিমধ্যে জেলাজুড়ে রোপণ করা বোরোধান বিবর্ণ হয়ে লালচে বাদামি রং ধারণ করছে। বীজতলায়ও একই ধরনের প্রভাব পড়েছে। কোনো কোনো জমিতে সদ্য রোপণ করা ধানের চারা পচতে শুরু করেছে। দীর্ঘস্ট’ায়ী ঘন কুয়াশা, অপর্যাপ্টø সহৃর্যালোক আর তাপমাত্রা বৃ™িব্দ না পাওয়ায় বোরো আবাদে ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে। ফলে কৃষকরা ফলন বিপর্যয়ের আশগ্ধকা করছেন।
উত্তরাঞ্চলের শস্যভা-ার হিসেবে খ্যাত চলনবিল অঞ্চলের সর্বত্র কৃষক এ বছর ব্যাপক হারে বোরোধানের চাষ শুরু করলেও দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিরূপ আবহাওয়ার দরুন অনেকেই ‘পরিস্টি’তি পর্যবেক্ষণ’ করছেন। মধ্য চলনবিল অঞ্চলের লালুয়া মাঝিড়া গ্রামের কৃষক ফরিদুল জানান, গত বছরের এই সময়ে তার ৮ বিঘা জমিতে বোরোধানের চাষ করলেও এ বছর তিনি তা করছেন কিছুটা ঢিমেতালে। তার জমির আশপাশের অনেক কৃষক বোরো আবাদ করলেও অধিকাংশ জমির ফসল লালচে হয়ে পড়েছে। কোনো কোনো জমির চারা পচেও গেছে। যে কারণে ঘন কুয়াশা কেটে না যাওয়া পর্যšø তিনি অপেক্ষা করার কথা ভাবছেন। একই গ্রামের কৃষক ইসলাম উদ্দীন জানান, দুমর্হৃল্যের বাজারে তিনি জমি চাষ করে সেচ দিয়ে জমি প্রস্ট‘ত করেছেন ১০ দিন আগে। কিন্তু একই কারণে তিনিও জমিতে বোরোর চারা লাগাতে পারছেন না। এ সময় কিছুটা দীর্ঘ হলে তাকে আবারো জমি প্রস্ট‘ত করতে হবে। কামারসন গ্রামের আবদুল কুদ্দুস জানালেন, ইতিমধ্যেই তিনি দেড় বিঘা জমিতে বোরোধানের চাষ করলেও প্রায় স¤ক্সহৃর্ণ জমির ধান লালচে হয়ে গেছে। কোনো কোনো ধানের গোড়া পচে যেতে শুরু করেছে। জেলার উল্কèাপাড়া, রায়গঞ্জ, কাজীপুরসহ প্রায় সবক’টি উপজেলাজুড়েই চলছে এমন অবস্ট’া।
সিরাজগঞ্জে এ বছর ১ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরোধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও জ্বালানি তেল ও সারের মহৃল্য হ্রাস করায় বোরো আবাদের জমির পরিমাণ এ বছর আরো বাড়বে। কিন্তু বিরূপ আবহাওয়ার দরুন বোরো আবাদ ক্ষতিগ্রস্টø হতে পারে। জেলা কৃষি বিভাগের মতে, সাধারণত প্রতিবছর শীতকালের এ সময়ে নিল্ফুচাপের প্রভাবে ২/১ দিন বৃ®িদ্বপাত হয়ে থাকলেও এ বছরে তার ব্যত্যয় ঘটেছে। বৃ®িদ্ব হওয়ার সল্ফ¢াবনাও দেখা যাচ্ছে না। সহৃত্রমতে মৌসুমের এ সময় বৃ®িদ্ব হলে প্রকৃতিতে বোরো আবাদের উপযোগী পরিবেশের সৃ®িদ্ব হতো দ্র“ত। বোরাধান দ্র“ত বৃ™িব্দর জন্য ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা প্রয়োজন। তাপমাত্রা এর কাছাকাছি থাকলে ধানের চারা সবুজ বর্ণ এবং সতেজ হয়ে ওঠে। কিন্তু বর্তমানে এ অঞ্চলে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করছে। এর পাশাপাশি সল্পব্দ্যার পর থেকেই ঘন কুয়াশা পড়তে শুরু করে। আর কৃষি বিভাগের মতে, এই মুহহৃর্তে কুয়াশা কেটে তাপমাত্রা বৃ™িব্দ পেলেই বোরোধানের জমিগুলো সজীব হয়ে উঠবে। আর কুয়াশা দীর্ঘস্ট’ায়ী হলে ক্ষতির মুখে পড়তে হবে কৃষকদের।

সার সংকট নিরসনে আশার আলো

৩০.০১.০৯
ডেসটিনি ।। ইয়াসরেমিনা বেগম সীমা

বিশ্ব বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য সহনীয় রাখার জন্য খাদ্য উৎপাদনের বিকল্প নেই একথা সবাই স্বীকার করে নিয়েছে। পাশাপাশি এও স্বীকার করেছে উৎপাদন সামগ্রীর মূল্য না কমালে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা সম্ভব নয়। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সব ধরনের কৃষি উপকরণের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। এ ছাড়া ক্রমবর্ধমান হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, কৃষি জমি কমে যাওয়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলহানি প্রভৃতি কারণে বিশ্বজুড়েই চলছে খাদ্য সংকট। আর এ সমস্যা মোকাবিলার জন্য প্রয়োজন অল্প জমিতে অধিক উৎপাদন। আর এই অধিক উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন উন্নতমানের বীজ এবং রাসায়নিক নাইট্রোজেন সার। গত শতাব্দীতে পৃথিবীতে মানুষ বেড়েছে প্রায় ৫০০ কোটি। এই বর্ধিত জনগোষ্ঠীর জন্য অতিরিক্ত খাদ্য সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছে কেবল উন্নতমানের বীজ, সেচ, আধুনিক চাষাবাদ আর নাইট্রোজেন সারের গুণে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। ইন্টারন্যাশনাল ফার্টিলাইজার ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী ১৯৯৬ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে সারা বিশ্বে সারের ব্যবহার বেড়েছে ৩১ শতাংশ আর বাংলাদেশে বেড়েছে ৪০ শতাংশ। বাংলাদেশে ’৮০’র দশকের শুরুতে বছরে সারের ব্যবহার ছিল প্রায় ১০ লাখ টন; বর্তমান দশকের শুরুতে প্রায় ৩৩ লাখ টনে পৌঁছায়; বর্তমানে এই চাহিদা প্রায় ৪০ লাখ টনের কাছাকাছি।
স¤প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে বর্তমানে বাংলাদেশে কৃষিখাতে সারের চাহিদা ৩২ লাখ টন। এর মধ্যে দেশে উৎপাদিত হয় ১৫ লাখ টন। বিদেশ থেকে আমদানি করে অবশিষ্ট চাহিদা পূরণ করা হয়। আমদানি করা হয় এমওপি ও জিঙ্ক পুরোটা, ৮০-৯০ শতাংশ টিএসপি এবং ১০-২৫ শতাংশ ইউরিয়া। ফসলের উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সারের উৎপাদন ও আমদানি দুটোই বেড়েছে। আশির দশকের শুরুতে দেড় কোটি টন খাদ্যশস্যসহ তিন কোটি টন ফসল উৎপাদনে হেক্টরপ্রতি ৭০ কেজি সার ব্যবহার হয়েছে আর ২০০০ সালের শুরুতে প্রায় তিন কোটি টন খাদ্যশস্যসহ পাঁচ কোটি টন ফসল উৎপাদনে হেক্টরপ্রতি সারের ব্যবহার দাঁড়িয়েছে ২৭০ কেজি। এ হিসাবে বলা যায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অতিরিক্ত খাদ্য উৎপাদনের জন্য সারের ব্যবহার ভবিষ্যতে বাড়বে বই কমবে না এবং খাদ্যদ্রব্যের দামও গগনচুম্বী হবে। সরকার খাদ্যদ্রব্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার তাগিদে অব্যাহতভাবে সারে ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছে। শুধুমাত্র ইউরিয়া সার আমদানিতেই সরকারকে ভর্তুকি দিতে হয় ২ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়াও দেশে যে ১৫ লাখ টন সার উৎপাদন হয়, সেই সারও ভর্তুকি দিয়ে কৃষকদের কাছে পৌঁছানো হয়। এ ক্ষেত্রে ভর্তুকি বাবদ সরকারের খরচ হয় আরো ৩ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ এ খাতে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হয় ৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। ’৮০’র দশকের শেষে এবং ’৯০’র দশকের গোড়ার দিকে বাংলাদেশে যে সার উৎপাদিত হতো- সেই সার দিয়ে দেশের চাহিদা সম্পূর্ণ মিটানো যেত। কিন্তু এরপর চাহিদা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু দেশে কোনো নতুন সার কারখানা স্থাপন করা হয়নি। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে সদ্য বিদায় নেয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিভিন্ন প্রকার সারের দাম দ্বিগুণ বৃদ্ধি করে। দাম বৃদ্ধি হলেও সার হয়ে যায় আক্রা। সারের দাবিতে মিছিল, সড়ক অবরোধ, পুলিশের লাঠিচার্জ সবই সমানতালে চলতে থাকে। টাকা দিয়েও যখন সার পাওয়া যাচ্ছিল না তখন জৈবসার, গুটি ইউরিয়ার ব্যবহারসহ বিভিন্ন বিকল্প সারের ব্যবহার মানুষ খুঁজতে থাকে। এ সময়ে জৈব সার এবং গুটি ইউরিয়ার ব্যবহার বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
বতমান সরকার ক্ষমতাসীন হয়েই নন-ইউরিয়া সারের দাম প্রায় ৫০ শতাংশ কমিয়েছে, ফলে অতীতে যেখানে এ খাতে ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ৬শ’ কোটি টাকা, এখন সেখানে দিতে হবে ২ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া ইউরিয়া খাতে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে ৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা। ফলে ৬ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে। ভর্তুকি দিয়ে সারের দাম কম রাখা হয়েছে।
কিন্তু পার্শ্ববর্তী দেশে এই কম দামের সার পাচার হয়ে যাচ্ছে যার জন্য কর্তৃপক্ষকে পাচার রোধেও গলদঘর্ম হতে হচ্ছে। এ ছাড়া আরো খবর আছে তৈজসপত্র, পারটেক্স, প্লাইউড, ইটভাটা, ডাইং কারখানায় তৈরি রং পাকা করতে এবং গরু মোটা-তাজাকরণ, মৎস্য চাষসহ বিভিন্ন কারখনার পণ্য তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ইউরিয়া সার ব্যবহার করা হয়। শিল্পোৎপাদনের জন্য কল-কারখানায় ইউরিয়ার জোগান দেয়াও সরকারের দায়িত্ব। সুতরাং ভর্তুকিই শেষ কথা নয়; সারের অপচয় রোধ ও ব্যবহার হ্রাসই সর্বোত্তম উপায়।
এছাড়া যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার হয়ে আসছে সেহেতু একদিকে জমি যেমন রাসায়নিক সারনির্ভর হয়ে উঠছে অপরদিকে তেমনি মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে মাটির গুণাগুণও হুমকির মুখে পড়ছে। এর সঙ্গে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষার তাগিদে কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহারে প্রাকৃতিক পরিবেশ দূষণের প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গিয়েছে যা নিয়েও বিশেষজ্ঞরা আছেন বিশেষ ভাবনায়। সারের অপচয় ও ব্যবহার হ্রাস করে ফসলের উচ্চফলনের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গবেষণা চলছে সেই ১৯৩০ সাল থেকে। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট আশির দশকে ইউরিয়া সারের অপচয় রোধের ওপর গবেষণা চালিয়ে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে গুটি ইউরিয়া প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে।
যার মাধ্যমে ইউরিয়া সারের অপচয় কমিয়ে প্রায় শতকরা ৪০ ভাগ সাশ্রয় করে এবং সারের কার্যকারিতা বেড়ে যাওয়ায় ধানের ফলনও ২৫-৩০ ভাগ বাড়ানো যায়।

বাজিতপুরে সেচপাম্প থেকে আগুন বের হচ্ছে

৩০.০১.০৯
ডেসটিনি ।। কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার ইছামতি বিলে একটি সেচপাম্প থেকে পানির সঙ্গে অবিরত বের হচ্ছে আগুন। কৌতূহলী লোকজন এ দৃশ্য দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন ইছামতি বিলে। জানা যায় বোরো জমিতে সেচ দেয়ার জন্য উপজেলা সাদিরচর গ্রামের কৃষক ফরিদ মিয়া জমিতে সেচপাম্প বসালে পাম্প থেকে গ্যাস নির্গত হতে থাকে। জনৈক কৃষক ওই পাইপে দেশলাই দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিলে পাম্পের পাইপ থেকে পানির সঙ্গে অবিরত আগুন বের হতে থাকে। বাজিতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ছাইফুল্লাহিল আজম ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছেন। তিনিও এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় অনুসন্ধানের জন্য জেলা প্রশাসককে অবহিত করবেন বলে জানান।

Thursday, January 29, 2009

রবি ফসল রক্ষায় কৃষি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

২৯.০১.০৯
যায়যায়দিন ।। গোকুল চন্দ্র বিশ্বাস বাকৃবি
টানা ঘন কুয়াশা, তাপমাত্রা কমে যাওয়া এবং সূর্যালোকের স্বল্পতার কারণে দেশে রবি ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। বিরূপ আবহাওয়ার কারণে দেশের প্রায় ৭০ ভাগ জমির আলু গাছ ইতিমধ্যে রোগাক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েছে টমাটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, লাউ, মুলা, বেগুনসহ কমপক্ষে দশ ধরনের শীতকালীন সবজি। কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে এ বিরূপ আবহাওয়া দীর্ঘস্থায়ী হলে গম ও ভুট্টা চিটা হয়ে যেতে পারে এবং বোরো ধানেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে এ মুহূর্তে রিডোমিল গোল্ড ছত্রাক নাশক ব্যবহার না করে অ্যাক্রোব্যাট ব্যবহার করলে সুফল পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
আলুর লেটব্লাইট বা পাতা মড়ক রোগ নিয়ে উপমহাদেশের প্রথম ও একমাত্র প্লান্ট ডিজিজ ক্লিনিক বা উদ্ভিদ হাসপাতালের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্লান্ট প্যাথলজি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. এম. বাহাদুর মিঞা জানান, ১৮৪৫ সালে আয়ারল্যান্ডে আলুর লেটব্লাইট বা পাতা মড়ক রোগের কারণে সেখানে আইরিশ ফ্যামিন বা দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল। যার কারণে সে দেশের অজস্র মানুষ না খেয়ে মারা গিয়েছিল। সম্প্রতি বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় আলু ক্ষেতে লেটব্লাইট বা পাতা মড়ক রোগ দেখা দিয়েছে যা অত্যন্ত ক্ষতির কারণ হতে পারে। সরেজমিন বিভিন্ন জেলায় মাঠ পরিদর্শন করে দেখা গেছে এবার দেশের প্রায় ৭০ ভাগ জমির আলু গাছ লেটব্লাইট রোগে আক্রান্ত হয়েছে। ১৯৯২ সাল থেকে বাংলাদেশের মানুষ এ রোগের বিপরীতে রিডোমিল গোল্ড ব্যবহার করে আসছে। কিন্তু এ ছত্রাকনাশকের প্রতি লেটব্লাইট বা পাতা মড়ক রোগের জন্য দায়ী অণুজীব সহনশীল হয়ে গেছে। তাই রিডোমিল গোল্ড ছত্রাকনাশক ব্যবহার না করে অ্যাক্রোব্যাট ব্যবহার করতে হবে।
ড. বাহাদুর জানান, আলুর ‘লেটব্লাইট’ রোগের জন্য বিরূপ আবহাওয়াই অনেকটা দায়ী। এ ছাড়া টমাটো গাছও ব্লাইট রোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। শিম ও লাউ গাছের ফুল পচে যাওয়ার কারণে উৎপাদন ব্যাপকভাবে হ্রাস পাচ্ছে এবং বাজারে শিম ও লাউয়ের সরবরাহ অনেক কমে গেছে। বেগুন গাছের ফুল ঝরে যাচ্ছে। এছাড়া ফুলকপি, বাঁধাকপি এবং মুলা গাছে পচন রোগ দেখা দিয়েছে। এ বিরূপ আবহাওয়া ২০-২৫ দিন স্থায়ী হলে গম ও ভুট্টায় চিটা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এবং বোরো ধানের ফলনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
ড. বাহাদুর আরো বলেন, শীতকালে শীত ও কুয়াশা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। সাধারণত জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং কুয়াশা কম থাকে। গত দুই-তিন বছর ধরে এর ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। জানুয়ারি মাসের শেষের দিকেও তাপমাত্রা কম থাকছে এবং টানা ঘন কুয়াশা থাকছে। রবি ফসল উৎপাদনের জন্য এরূপ আবহাওয়া একটি বড় ধরনের বাধা। টানা ঘন কুয়াশার কারণে পাতা ও কা- ভেজা থাকায় ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাকজনিত বিভিন্ন রোগে রবিশস্য আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া পোকার আক্রমণও বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষকরা বাকৃবির প্লান্ট ডিজিস ডায়াগনস্টিক ক্লিনিকে ফোন করে এসব সমস্যার প্রতিকার জানতে চাচ্ছেন। সারাদেশের রবি ফসলের বর্তমান অবস্থা উদ্বেগজনক।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (সরেজমিন উইং) কৃষিবিদ অনিল চন্দ্র সরকার জানান, ‘বিরূপ আবহাওয়ার কারণে এবারে রবি শস্যে তুলনামূলকভাবে বেশি রোগ বালাইয়ের প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। আলু গাছ ‘লেটব্লাইট’ রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। তবে যেসব চাষী আগাম আলু চাষ করেছেন তাদের জমিতে এ রোগের প্রকোপ তুলনামূলকভাবে কম হয়েছে। এসব আলু খাবার হিসাবে ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হলেও পরবর্তী সময়ে বীজ হিসেবে ব্যবহার করতে নিষেধ করা হচ্ছে। অন্যদিকে দেরিতে চাষ করা আলু গাছ এবার তুলনামূলকভাবে রোগাক্রান্ত হয়েছে বেশি। সুখের কথা হচ্ছে, দেশের অধিকাংশ কৃষকই আগাম আলু চাষ করছেন।
ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এম.এ. হালিম খান জানান, ‘টানা ঘন কুয়াশা এবং সূর্যালোক না থাকায় ফসলের সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পাতা ভেজা থাকায় এর যে ‘স্ট্রোমা’ ছিদ্র আছে তা বন্ধ থাকছে। এ ছিদ্র দ্বারা উদ্ভিদ ‘ফটোসিনথেসিস’ প্রক্রিয়ার জন্য কার্বনডাইঅক্সাইড গ্যাস গ্রহণ করে। কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস গ্রহণ করতে না পারায় এবং সূর্যালোক না থাকায় উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণ হচ্ছে না। সালোকসংশ্লেষণ না হওয়ায় গাছ কার্বোহাইড্রেট তৈরি করতে পারছে না বিধায় গাছের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ অস্বাভাবিক আবহাওয়া আরো কয়েকদিন স্থায়ী হলে দেশের রবি শস্যের ওপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে’।
বাকৃবির প্লান্ট প্যাথলজি (উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব) বিভাগের অধ্যাপক ড. বাহাদুর মিঞা, মুশফিকুর রহমান খান ও আলী হোসেন এবং উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. গোলাম রাব্বানী জানান, বর্তমানে যেভাবে আলু গাছ মারা যাচ্ছে তাতে এর কোনো প্রতিকার সম্ভব নয়। কারণ এ মড়কে রিডোমিল গোল্ড একমাত্র প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জনসহ নানাবিধ কারণে রিডোমিল গোল্ড ব্যবহার করে এ বছর কোনো কাজে আসছে না। তবে অ্যাক্রোব্যাট ব্যবহার করে সুফল পাওয়া যাচ্ছে। ২০ গ্রাম অ্যাক্রোব্যাট ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতক জমিতে ¯েপ্র করলে সুফল পাওয়া যাবে। তারা আরো বলেন, পরবর্তী বছরে জমিতে এ রোগকে প্রতিহত করতে চাইলে আলু ও টমাটো বাদে ওই জমিতে অন্যান্য রবি ফসল লাগাতে হবে।

অভয়নগরে সাড়ে ১০ কোটি টাকার নিম্নমানের টিএসপি সার আটক

২৯.০১.০৯
যায়যায়দিন ।। অভয়নগর (যশোর) সংবাদদাতা
অভয়নগরে নিম্নমানের অভিযোগে প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকার চীন থেকে আমদানি করা টিএসপি সার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে অভয়নগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গতকাল সন্ধ্যায় আটক করেছেন। তিনটি কার্গোতে করে নওয়াপাড়ার মেসার্স তাবলিগ ঘাটে মেসার্স দেশ ট্রেডিং নামের আমদানিকারক ২৫৭৫ মেট্রিক টন সার আনলে এ আটকের ঘটনা ঘটে।

কৃষি উপকরণের মূল্য হ্রাস প্রসঙ্গে

২৯.০১.০৯
ইত্তেফাক ।। ড. জাহাঙ্গীর আলম

দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই নয়া সরকার যে বিষয়ে সবচে’ বেশী গুরুত্ব দিয়েছেন সেটি হলো কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য উপকরণের মূল্য হ্রাস। তজ্জন্য ভর্তুকি বাড়ানো হয়েছে কৃষি উপকরণ খাতে। প্রথমে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম কমানো হয়েছে লিটার প্রতি ২ টাকা। পরে হ্রাস করা হয়েছে ইউরিয়া বহির্ভূত রাসায়নিক সারের মূল্য। জোট সরকার ও সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য দফায় দফায় বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছিল লিটার প্রতি ৫৫ টাকায়। সম্প্রতি তেলের আন্তর্জাতিক মূল্য হ্রাসের প্রেক্ষিতে দু’দফায় ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য ৯ টাকা হ্রাস করা হয়। অত:পর মহাজোট সরকার আরো ২ টাকা কমিয়ে তা নির্ধারণ করেছে ৪৪ টাকায়। এটি তেমন উল্লেখযোগ্য হ্রাস বলা যায় না। তবে এটি সরকারের সদিচ্ছার বহি:প্রকাশ। ধারণা করা হচ্ছে ভবিষ্যতে তেলের দাম আরো কমানো হতে পারে। দেশে বর্তমানে ২৯ লাখ টন তেল ব্যবহৃত হয়। তার শতকরা ৯১ ভাগই ডিজেল ও কেরোসিন। ডিজেলের বেশী ব্যবহার সেচ কাজে, বোরো মৌসুমে। কেরোসিনও বেশী ব্যবহৃত হয় গ্রামে, জ্বালানীর কাজে। সেদিক থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য হ্রাসের সংগে গ্রামের মানুষের, বিশেষ করে কৃষকের স্বস্তি জড়িত। কাজেই আন্তর্জাতিক বাজারে যখন তেলের দাম অনেক কমে গেছে তখন বাংলাদেশেও এর মূল্য বিশেষ করে কেরোসিন ও ডিজেলের মূল্য উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা উচিৎ। তাতে উপকৃত হবে গ্রামের সাধারণ মানুষ ও কৃষক। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে তেলের মূল্য হ্রাসের সুবিধাটুকু প্রকৃত কৃষকরা পায়। এটি যেন কেবলই সেচ যন্ত্রের মালিক ও মধ্যস্বত্বভোগীদের করায়ত্ব না হয়।

বাংলাদেশে বর্তমানে ৬১ শতাংশ আবাদযোগ্য জমিতে সেচ প্রদান করা হয়। এটা অনায়াসেই ৮০ শতাংশে বৃদ্ধি করা যায়। সে ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিতে হবে গভীর ও অগভীর নলকূপের আওতায় সেচ এলাকা বৃদ্ধির উপর। কারণ ভূ-গর্ভস্থ পানি দ্বারা যে সেচ দেয়া হয় তার শতকরা ৭১ ভাগই গভীর ও অগভীর নলকূপের মাধ্যমে হয়ে থাকে। সম্প্রতি এ পদ্ধতির সেচের অধীনে জমির পরিমাণ খুবই মন্থর গতিতে বাড়ছে। তার কারণ সেচ যন্ত্রের উচ্চ মূল্য, ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি ও বিদ্যুতের অনিশ্চয়তা। সেচ কাজে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ ও ডিজেল খাতে এখন ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। কিন্তু সেচ যন্ত্রের উপর কোন ভর্তুকি নেই। তাই সেচ যন্ত্রের উপর বিশেষ করে গভীর নলকূপ ক্রয়ের ক্ষেত্রে ভর্তুকি চালু করা যেতে পারে। ভূ-উপরিস্থ পানি যাতে সেচের কাজে লাগানো যায় তজ্জন্য খাল খনন, ড্রেজিং এর মাধ্যমে নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি এবং বর্ষা ও বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য জলাধার নির্মাণ ইত্যাদি বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।

কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থে রাসায়নিক সারের ক্ষেত্রে এবার বড় রকমের ছাড় দিয়েছে নয়া সরকার। ইউরিয়া ব্যতিত অন্যান্য রাসায়নিক সারের ক্ষেত্রে ভর্তুকি ঘোষণা করেছে ৫৫ শতাংশ। তাতে প্রায় অর্ধেক কমে গেছে টিএসপি, এমওপি এবং ডিএপি সারের মূল্য। আগে প্রতি কেজি টিএসপি ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করা হতো, বর্তমানে তা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ টাকায়। এমওপি সারের মূল্য ইতিপূর্বে ছিল ৬৮ থেকে ৭০ টাকা। বর্তমানে তা ৩৫ টাকা। প্রতি কেজি ডিএপি সারের পূর্বের বাজারদর ছিল ৮৭ থেকে ৯০ টাকা। এখন তা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫ টাকা। তাতে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে ২ হাজার ৭৫৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এছাড়া ইউরিয়া সারের দাম কমানো না হলেও আগের আন্তর্জাতিক মূল্যে বর্তমানে তাতে ভর্তুকি আছে কেজি প্রতি প্রায় ৩০ টাকা। ফলে এ খাতে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে ৩ হাজার ৮শ কোটি টাকা। বর্তমানে ইউরিয়া সারের আন্তর্জাতিক মূল্যের সংগে আমাদের অভ্যন্তরীণ মূল্যের তেমন বেশী ফারাক নেই। ইদানিং ইউরিয়া বহির্ভূত রাসায়নিক সারের ভর্তুকি বৃদ্ধির একটা বিশেষ কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে টিএসপি এবং এমওপি সারের মূল্য প্রায় দুই তৃতীয়াংশ কমে যাওয়া। ইতিপূর্বে আন্তর্জাতিক বাজারে টিএসপি ও এমওপির মূল্য দ্রুত বেড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল যথাক্রমে ১ হাজার ৬২ ডলার এবং ১ হাজার ডলারে। বর্তমানে তা নেমে গেছে যথাক্রমে ৪০০ ডলার এবং ৩৫০ ডলারে। ফলে দেশীয় বাজারে এসব সারের অতি উচ্চ মূল্যের কারণে আমদানিকৃত শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ নন-ইউরিয়া সার অবিক্রিত থাকে। এখন আন্তর্জাতিক বাজারের সংগে তাল মিলিয়ে এগুলোকে হ্রাসকৃত মূল্যে বিক্রির জন্য সরকারকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, সাম্প্রতিক মূল্য ছাড়ের পরও এমওপি সার বাদে অন্যান্য নন-ইউরিয়া সারের মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় আমাদের অভ্যন্তরীণ বাজারে অনেক বেশী।

ইউরিয়া বহির্ভূত রাসায়নিক সারের মূল্য হ্রাসের ফলে স্বাভাবিকভাবেই কৃষি পণ্যের উৎপাদন খরচ কমবে। তবে এই কারণে প্রতি কেজি কৃষি পণ্যে কত টাকা উৎপাদন খরচ কমবে তা নির্ভর করবে নন-ইউরিয়া সারের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং অনুবর্তী উৎপাদন বৃদ্ধির উপর। এখনই তা বলার বিষয়টি হবে কেবলই অনুমান নির্ভর, যার কোন বা কেতাবি ভিত্তি নেই। তবে ইউরিয়া বহির্ভূত অন্যান্য রাসায়নিক সারের মূল্য হ্রাস পাওয়ায় সুষম সারের ব্যবহার যে উৎসাহিত হবে তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। তাতে ত্বরান্বিত হবে বর্ধিত উৎপাদন।

বাংলাদেশে বর্তমানে যে পরিমাণ সার ব্যবহৃত হয় তার শতকরা ৭০ ভাগই ইউরিয়া। ফসফেট ও পটাশ সারের শরিকানা যথাক্রমে ১৪ ও ৭ শতাংশ। বাকি ৬.৫ শতাংশ মিশ্র সার ও ২.৫ শতাংশ জিংক ও জিপসাম। নন-ইউরিয়া সারের দাম কমে যাওয়ায় ভবিষ্যতে এই শরিকানায় পরিবর্তন আসবে। এদেশে বছরে সার প্রয়োজন হয় প্রায় ৩৫ লাখ টন। এর বিপরীতে ৬টি ইউরিয়া এবং ১টি টিএসপি কারখানায় উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ১৭ লাখ টন। বাকি সারের যোগান দিতে হয় আমদানির মাধ্যমে। বর্তমানে দেশীয় সার কারখানাগুলো পুরনো হয়ে গেছে। এগুলো নিত্যদিন চালিয়ে রাখা হচ্ছে মেরামতের মাধ্যমে। ভবিষ্যতে এগুলোর উৎপাদন আরো কমবে। তাতে বেড়ে যাবে সারের আমদানি নির্ভরতা। প্রয়োজন পড়বে আরো বেশী বৈদেশিক মুদ্রা খরচের। সে কারণে দেশে এখন নতুন কিছু সার কারখানা স্থাপন করা উচিৎ। এক হিসেবে দেখা যায়, প্রতিবছর সার আমদানি খাতে আমাদের ৪ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়। তা দিয়ে যমুনা সার কারখানার চেয়েও বড় একটি কারখানা প্রতিষ্ঠিত করা যায়।

নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বর্তমান সরকার কৃষি উপকরণের মূল্য হ্রাস ও কৃষক পর্যায়ে এর পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য ইতিমধ্যেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে শুরু করেছে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারের অনুসরণে ধীরে ধীরে কৃষি পণ্যের মূল্যও হ্রাস পাচ্ছে অভ্যন্তরীণ বাজারে। তবে খাদ্য দ্রব্যসহ বিভিন্ন কৃষি পণ্যের দর পতন এখানে কতটুকু প্রয়োজন এবং কোন পর্যায়ে তা কৃষকের উৎপাদন প্রণোদনা যোগাবে তা বিবেচনার বিষয়। এ বিষয়ে সমীক্ষা ভিত্তিক তথ্য ও উপাত্তের উপর অধিকতর নির্ভরশীল হওয়া উচিৎ। এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে কৃষি পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার বিষয়টিও আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে রয়েছে।

[লেখক : কৃষি অর্থনীতিবিদ]

ভৈরবে যমুনা ডিপোর ডিজেল জমে যাচ্ছে ।। সরবরাহ বন্ধ

ইত্তেফাক ।। ভৈরব সংবাদদাতা ।।

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে যমুনা ডিপোর ডিজেল পামওয়েলের মত জমাট বেঁধে যাচ্ছে। এ কারণে বুধবার এই ডিপো থেকে তেল সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বোরোর এই ভরা মৌসুমে অর্ধ-শতাধিক তেলবাহী লরি তেল না পেয়ে ডিপো এলাকায় অপেক্ষায় আছে।

ডিপো সূত্র জানায়, এম ভি জহুর নামে একটি জাহাজ গত ২১ জানুয়ারি ১৩ লাখ লিটার ডিজেল নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ডিপো এলাকায় নোঙ্গর করে। গতকাল সকালে এই তেল সরবরাহ দিতে গিয়ে কর্মকর্তারা সমস্যাটি চিহ্নিত করেন। কেন এমন হলো বোঝার জন্য তারা প্রথমে ১০০ লিটার ডিজেল ডিপোর ড্রেনে ছেড়ে দেখতে পান পামওয়েল মত ডিজেল জমাট বেঁধে যাচ্ছে। তারা দ্রুত তেল সরবরাহ বন্ধ রেখে বিষয়টি লিখিতভাবে যমুনার প্রধান কার্যালয়ের মহাব্যবস্থাপককে জানান। এদিকে বিভিন্ন স্থান থেকে তেল নিতে আসা ট্যাঙ্ক লরির চালকরা জানান, এই ডিপো থেকে বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও নরসিংদীসহ সুনামগঞ্জ জেলায় তেল সরবরাহ হয়ে থাকে। বর্তমানে ওই জেলাগুলোতে বোরোর ভরা মৌসুম চলছে। একদিন তেল পেতে বিলম্ব হলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কৃষি সেক্টরে।এ প্রসঙ্গে ভৈরব যমুনা ডিপোর উপ-ব্যবস্থাপক মোঃ এমদাদুর রহমান জানান, এই ডিজেল মালয়েশিয়া থেকে আসা। কেন এই সমস্যা হচ্ছে সঠিক কিছু বলা না গেলেও তার ধারণা জাহাজে পরিবহনের সময় কোন সমস্যা হতে পারে।

বীজের যোগান, প্রশিক্ষণ ও সংরক্ষণের মাধ্যমেই পিঁয়াজের ঘাটতি দূর করা সম্ভব

২৯.০১.০৯
বিশেষজ্ঞদের অভিমত
ইত্তেফাক ।। মুন্না রায়হান

প্রতিবছর দেশে পিঁয়াজের ঘাটতি প্রায় ৭ লাখ টন। এর পুরোটাই ভারত ও মিয়ানমার থেকে আমদানি করা হয়। অথচ মানসম্মত বীজের যোগান, কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও পিঁয়াজ সংরক্ষণ করা গেলে এই ঘাটতি অনেকটাই দূর করা যাবে বলে কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।

গত বছর দেশে ১ দশমিক ৫৬ লাখ হেক্টর জমিতে ৮ দশমিক ৮৪ টন পিঁয়াজ উৎপাদন হয়। কিন্তু প্রতিবছর দেশে পিঁয়াজের চাহিদা ১৫ লাখ ৭৫ টন। ঘাটতি প্রায় ৭ লাখ টন। এই ঘাটতি মেটাতে গত ৬ মাসে ভারত থেকে ৩ লাখ ২৬ হাজার টন পিঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। এছাড়া মিয়ানমার থেকে আমদানি করা হয়েছে ৩০ টন পিঁয়াজ।

জানা গেছে, মানসম্মত বীজের অভাবে উৎপাদন কম হওয়া ও বিভিন্ন কৃষি উপকরণের দাম আকাশছোঁয়া হলেও সেই অনুপাতে দাম না পাওয়ায় কৃষকরা পিঁয়াজ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। নানা কৃষি উপকরণের মধ্যে শুধুমাত্র মানসম্মত পিঁয়াজের বীজের কেজি ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে বেড়ে এখন সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সূত্র জানায়, গত বছর বিএআরসির ‘মশলা জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির এ্যাকশন প্লান্ট’ কার্যক্রম বাস্তবায়ন হয়নি। যে কারণে বিএআরসির তত্ত্বাবধানে যে ১১ লাখ টন পিঁয়াজের বীজ ছিল তা কৃষকদের মধ্যে ভালোভাবে বন্টন করা হয়নি।

পিঁয়াজের ফলন আশানুরূপ না হওয়ার আরেকটি কারণ প্রকৃত চাষীদের প্রশিক্ষণ থেকে বঞ্চিত হওয়া। প্রতিবছর সরকার পিঁয়াজ চাষীদের যে প্রশিক্ষণ দেয় বিভিন্ন কারণে তা থেকে প্রকৃত চাষীরা বঞ্চিত হচ্ছেন।

মশলা গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাসুদুল হক বলেন, কৃষকদের মানসম্মত বীজের যোগান, যথাযথ প্রশিক্ষণ ও পিঁয়াজ সংরক্ষণ করা গেলে দেশে পিঁয়াজের ঘাটতি অনেকটাই দূর করা যাবে। তিনি বলেন, ক্ষেত থেকে পিঁয়াজ তোলার পর উপযুক্ত যতেœর অভাবে ১৫ শতাংশ পিঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে প্রতি হেক্টর জমিতে ৬ টন পিঁয়াজ উৎপাদন হয়। অথচ ভারতে একই পরিমাণ জমিতে বড় আকারের পিঁয়াজ ২৫ টন ও পাকিস্তানে ১৪ টন উৎপাদন হয়। কৃষকদের ভালো বীজ সরবরাহ করে ও তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আমরাও পিঁয়াজের উৎপাদন বাড়াতে পারি।

সার ও জ্বালানি তেলের দাম কমলেও বোরো আবাদ নিয়ে শঙ্কিত কৃষক

ডেসটিনি ।। মাসুদ পারভেজ, সিরাজগঞ্জ

সরকারি ঘোষণায় জ্বালানি তেল ও সারের দাম কম, তারপরও সিরাজগঞ্জ জেলার কৃষকেরা বৈরী আবহাওয়ার কারণে আসন্ন বোরো আবাদ নিয়ে শঙ্কিত। দীর্ঘস্থায়ী ঘন কুয়াশা, তাপমাত্রা বৃদ্ধি না পাওয়ায় বোরো আবাদে ক্ষতিকর বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই বীজতলা লালচে হয়ে যাচ্ছে। চারাও বৃদ্ধি পাচ্ছে না সঠিকভাবে। কোথাও কোথাও চারা পচে যাচ্ছে।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ বছর ১ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আকস্মিকভাবে জ্বালানি তেল ও সারের মূল্য কমে যাওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বোরো আবাদের চাষ বাড়বে বলে তাদের ধারণা ছিল। কিন্তু বিরূপ আবহাওয়ার কারণে বোরো আবাদ এবার ব্যাহত হবে। তাদের মতে সাধারণত প্রতি বছর শীতকালের চলতি মৌসুমে নিম্নচাপের প্রভাবে টানা ২/১ দিন বৃষ্টিপাত হয়। কিন্তু এ বছরই এর ব্যতিক্রম। বৃষ্টি যে হবে তারও কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। মৌসুমের এ সময় বৃষ্টিপাত হলে বোরো আবাদের উপযোগী পরিবেশ দ্রুত সৃষ্টি হয়। তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকলে ধানের চারা দ্রুত সবুজবর্ণ ধারণ করে এবং সতেজ হয়। কিন্তু বর্তমানে জেলায় ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করছে। এ ছাড়া প্রায় প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকেই ঘন কুয়াশার চাদর পরতে শুরু করে, যা ভেত করে সকাল ১০টায়ও সূর্যের দেখা মেলে না। দুপুরে খানিকটা সূর্য দেখা গেলেও প্রকৃতিতে তাপ মেলে অপর্যাপ্ত। বিরূপ এ আবহাওয়ার কারণে অনেক কৃষক বোরো ধানের চারা লাগাতে পারছে না। এ কারণে এ বছর বোরো আবাদ বিলম্বিত হচ্ছে। এতে করে ফলনও হবে কম।
তবে কুয়াশা কেটে গেলে কৃষকরা বোরো চাষে ঝাঁপিয়ে পড়বে। এ জন্য তারা আগাম প্রস্তুতি হিসেবে জমিতে পানি ও চাষ দিয়ে প্রাথমিকভাবে তা তৈরি করে রাখছে। বীজতলা মরে যাওয়ার কারণে হঠাৎ করে এ দামও উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে। কয়েকদিন আগেও প্রতিপণ বীজতলার দাম ছিল ১৫০ টাকা, বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮০ টাকায়। এ দামও আরো বাড়তে পারে বলে কৃষকরা আশঙ্কা করছে।
দীর্ঘস্থায়ী ঘন কুয়াশা এবং সূর্য ঢেকে থাকায় আলু, পেঁয়াজ, রসুন ও অন্যান্য সবজিও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সবজির ফুল পড়ে যাওয়ায় ফল ধরছে না। কৃষি বিভাগের মতে এসব জমিতে ৭/৮ দিন পর পর পেনকোজেন ছিটালে এ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। কৃষকদের এ ব্যাপারে প্রতিনিয়ত পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তবে কৃষকরা এ ব্যাপারে সাড়া না দেয়ায় ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। এদিকে দীর্ঘস্থায়ী কুয়াশা এবং তাপমাত্রা কম থাকায় এবার গমের ফলন আশাতীত হবে বলে কৃষি বিভাগ জানায়।
এদিকে সরকার জ্বালানি তেলের দাম কমালেও ক্ষুদ্র ও প্রান্তিকরা এর সুফল ভোগ করতে পারছে না। কৃষকরা অভিযোগ করে জানান, গত বছর সেচ মালিকরা প্রতি শতক জমির সেচ বাবদ ৫৫ টাকা করে নিয়েছিল। কিন্তু এ বছর জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা কমলেও সেচের দাম আগের ৫৫ টাকাই রয়েছে।

শেরপুরে ভেজাল সারে বাজার সয়লাব

ডেসটিনি ।। শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি

চলতি বোরো মৌসুমের শুরুতেই বগুড়ার শেরপুরে নিম্নমানের ভেজাল সারে বাজার সয়লাব হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন বানের পানির মতো ঢুকছে নিম্নমানের রকমারি ভেজাল সার। কতিপয় সার ব্যবসায়ী এসব ভেজাল সার উপজেলার গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে দিচ্ছে আর দেদারছে বিক্রি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে এসব সারের কম দাম হওয়ায় অনেক কৃষকও তা মানসম্পন্ন সার মনে করেই হুমড়ি খেয়ে কিনতে দেখা গেছে। এমনকি না জেনে এসব ভেজাল সার দিয়েই তারা জমি প্রস্তুত ও বোরো লাগাচ্ছেন। ফলে ভেজাল সার ব্যবহার করায় এ বছর বোরো ফলনে মারাত্মক বিপর্যয় ঘটতে পারেÑ এমনই আশঙ্কা করছে স্বয়ং খোদ কৃষি বিভাগ, স্থানীয় একাধিক সার ব্যবসায়ী ও অভিজ্ঞ চাষীরা। তবে ভেজাল ও নিম্নমানের সার প্রতিরোধে প্রশাসন এখনো কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
গত মঙ্গলবার শেরপুর শহর ও আশপাশের কয়েকটি এলাকায় সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, এ উপজেলায় বিসিআইসির অনুমোদনপ্রাপ্ত ১০ জন ডিলার ছাড়াও অন্তত ছোট-বড় প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন সার ব্যবসায়ী রয়েছেন। সার ব্যবসায়ীদের মধ্যে হাতে গোনা দুই-একজন বাদে প্রায় প্রত্যেকের কাছেই কম-বেশি নিম্নমানের ভেজাল সার রয়েছে বলে কৃষকরা জানান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় বারোদুয়ারি হাটের একজন ডিলার জানান, প্রতিদিন চারদিকে থেকে মিনি ট্রাক, ভটভটিসহ একাধিক যানবাহনযোগে রাত-দিন বস্তায় বস্তায় ভারতীয় নানারকম ভেজাল সার শেরপুর শহরে প্রবেশ করছে। পরে সেসব সার গুদামজাত করে সুযোগ বুঝে শেরপুরসহ পার্শ্ববর্তী ধুনট, কাজীপুর, নন্দীগ্রাম, রায়গঞ্জ, তাড়াশ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ছোট-বড় ও খুচরা ব্যবসায়ীর কাছে পাঠানো হচ্ছে। তিনি আরো জানান, বর্তমান বাজারে প্রতি বস্তা ইউরিয়া ৫৮৫ টাকা, টিএসপি ২ হাজার টাকা, এমওপি ১ হাজার ৭৫০ টাকা, ড্যাপ ২ হাজার ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ ভারতীয় ভেজাল টিএসপি ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮২০ টাকা, পটাশ ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
উপজেলার তালতা গ্রামের কৃষক আবু সাঈদ, সাধুবাড়ী গ্রামের শহিদুল ইসলাম, ভাদরার ইছানুর রহমানসহ একাধিক কৃষক জানান, এসব ভেজাল সারের কম দাম হওয়ায় কৃষকরা এসব ভেজাল সারই বেশি কিনছেন। আর সার ব্যবসায়ীরাও ভেজাল সারকে ভালো সার বলেই বিক্রি করছে বলে তারা জানান।
উপজেলা কৃষি স¤প্রসারণ কর্মকর্তা আবদুর রহিম জানিয়েছেন, এ উপজেলায় ভেজাল সার বিক্রির কোনো তথ্য তাদের জানা নেই। কোনো ব্যবসায়ী ভেজাল সার বিক্রি করছেÑ এমন তথ্য পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে ভেজাল সার জমিতে ব্যবহার করলে ফসলের উৎপাদন কমে যাবে বলে তিনি স্বীকার করেন।

সোয়া দুই লাখ টন সার বিএডিসির গলার কাটা

২৯.০১.০৯
ডেসটিনি ।। শফিকুল ইসলাম

সোয়া দুই লাখ টন সার বিএডিসির গলার কাটায় পরিণত হয়েছে। বিদেশ থেকে আমদানি করা প্রায় ১৮০০ কোটি টাকার সোয়া ২ লাখ মেট্রিক টন টিএসপি ও এমওপি সার নিয়ে বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। চড়া দামে আমদানি করা এ সার এখন গুদামে পড়ে আছে। এ কারণে বিএডিসিকে ব্যাংক সুদসহ বিপুল অঙ্কের লোকসান গুনতে হচ্ছে।
এদিকে বেশি দামের এ সার বিএফএর ডিলারদের বিক্রিতে অনীহা ও সার বিতরণ ব্যবস্থায় উপজেলা ও জেলা সার মনিটরিং কমিটির দীর্ঘসূত্রিতার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে বিএডিসি সূত্র দাবি করেছে। তবে বেসরকারি আমদানিকারকরা বিএডিসির এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে বলছেন, স্বাভাবিক নিয়মেই কম দামে আমদানি করা সার অগ্রাধিকার ভিত্তিতেই আগে বিক্রি হচ্ছে। এখানে বেসরকারি আমদানিকারকদের করার কিছু নেই।
বিএডিসি সূত্রে জানা গেছে, ফসলের অধিক ফলনের জন্য সেচ মৌসুমে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট) ও এমওপি (মিউরেট আব পটাস) সার প্রয়োগের উপযুক্ত সময়। এ সময় ফসলে সার দিতে না পারলে ফলন হ্রাস পায়।
সূত্রমতে, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন টিএসপি ও ৭৫ হাজার মেট্রিক টন এমওপি সার আমদানি করে বিএডিসি। তিউনেশিয়া ও বেলারুশ থেকে এ সার আমদানি করা হয়। যার দাম প্রায় ১ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা। সরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এ সার আমদানি করা হয়েছে। কিন্তু এ সার সংস্থাটির গুদামে পড়ে আছে। কোনো সার বিক্রি করতে পারছে না বিএডিসি।
বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএ) ডিলারদের মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে এ সার বিক্রির কথা থাকলেও তারা তা করছে না। এমনকি এ সার বিক্রিতে সরকার বা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ থাকলেও তার তোয়াক্কা করছে না বিএফএ।

Monday, January 26, 2009

শাহজাদপুরে কম্পোস্ট হিপ তৈরির ধুম

২৭.০১.০৯

যায়যায়দিন ।। শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতা
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় পুরোদমে চলছে জৈবসার কম্পোস্ট হিপ তৈরির কাজ। আসন্ন বোরো মৌসুমে এ উপজেলায় কৃষকদের রাসায়নিক সারের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনতে ব্যাপকভাবে কম্পোস্ট হিপ তৈরি চলছে। এ লক্ষ্যে উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় কম্পোস্ট সার তৈরির ওপর ৫৪০ জন কৃষক ও ৩৪ জন উপসহকারী কৃষি অফিসারকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। শাহজাদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল জলিল জানান, ১০ ফুট লম্বা ৪ ফুট উঁচু ও ১ ফুট চওড়া প্রতিটি কম্পোস্ট হিপ থেকে ১১ থেকে ১২ শতাংশ জমিতে ব্যবহার উপযোগী জৈব সার পাওয়া যাবে। আবদুল জলিল আরো জানান, শাহজাদপুরে যে পরিমাণ গোবর জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয় এর অর্ধেক গোবর যদি জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা যায় তাহলে এখানে কৃষকদের চাহিদা মিটিয়ে বাইরে সার বিক্রি করে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারেন। কৃষি বিভাগ সূত্রে আরো জানা গেছে, এ মৌসুমে শাহজাদপুরের ১৩টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার প্রায় ২৫ হাজার কম্পোস্ট হিপ তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে সরাসরি ৩০ হাজার কৃষক উপকৃত হবে। জৈব সার ব্যবহারের ফলে মাটির গুণগত মান বৃদ্ধি পাবে।

১৩ লাখ টন তেল ও দেড় লাখ টন ইউরিয়া সার ক্রয়ের অনুমোদন

২৭.০১.০৯

যায়যায়দিন
দেশের প্রয়োজনীয় তেল মজুদ করার জন্য ১৩ লাখ মেট্রিক টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ও কৃষকের ভবিষ্যৎ চাহিদার কথা বিবেচনা করে দেড় লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার ক্রয়ে দুটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদ কমিটি।
গতকাল ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদ কমিটির সভা শেষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। তবে তেল ও সার ক্রয়ে মোট কি পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন তা তিনি বলেননি।
বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, সৌদি আরব ও আবুধাবি থেকে ১৩ লাখ মেট্রিক টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সাত লাখ মেট্রিক টন আনা হবে সৌদি আরব থেকে। বাকি ৬ লাখ মেট্রিক টন আনা হবে আবুধাবি থেকে। তবে তেল আমদানির প্রিমিয়াম (পরিবহন খরচ) নির্ধারণ হয়নি এ বৈঠকে। পরে পরিবহন খরচ নির্ধারণ করা হবে বলে তিনি জানান।
অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশে বর্তমানে সারের কোনো সঙ্কট নেই। ভবিষ্যতেও যাতে সঙ্কট তৈরি না হয় সে জন্য মার্চের মধ্যে দেড় লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আমদানি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ৭৫ হাজার মেট্রিক টন ফিল্ড ইউরিয়া ও ৭৫ হজার মেট্রিক টন গ্রানুলা ইউরিয়া আনা হবে।
তিনি জানান, চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর দিয়ে সার রপ্তানিকারক বিভিন্ন দেশ থেকে এ সার আনা হবে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে যে ৭৫ হাজার মেট্রিক টন ফিল্ড ইউরিয়া আনা হবে তার মধ্যে প্রতি মেট্রিক টন ফিল্ড ইউরিয়ার দাম পড়বে ২৯৮ থেকে ৩০১ মার্কিন ডলার। আর প্রতি মেট্রিক টন গ্রানুলা ইউরিয়ার দাম পড়বে ২৯৯ দশমিক ৩৭ ডলার।
এদিকে মংলা বন্দর দিয়ে আনা হবে ৭৫ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া। প্রতি মেট্রিক টন ফিল্ড ইউরিয়ার দাম পড়বে ৩১৪ দশমিক ১৭ ডলার। আর গ্রানুলা ইউরিয়া সারের প্রতি মেট্রিক টনের দাম পড়বে ৩১৪ দশমিক ৩৭ ডলার।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ঘাটতির কথা বিবেচনা করে দেড় লাখ মেট্রিক টন সার ক্রয়ে অনুমোদন দেয়া হলো। এ সার আগামী মার্চের মধ্যে দেশে আসবে। তিনি জানান, সরকার সর্বশেষ ডিসেম্বরে সার ক্রয় করেছিল। সেগুলো ফেব্রুয়ারির মধ্যে দেশে আসবে। ওই সময় প্রতি মেট্রিক টন সারের দাম ধরা হয়েছিল ৩০৭ ডলার।
সারের কৃত্রিম সঙ্কট মোকাবেলায় কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কি না তা জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, এটা তার দেখার বিষয় নয়। এ বিষয়টি কৃষিমন্ত্রী দেখবেন। এ বিষয়টি নিয়ে তিনিই কথা বলবেন। আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়।

১৩ লাখ টন জ্বালানি তেল ও দেড় লাখ টন সার আমদানির সিদ্ধান্ত

।। ইত্তেফাক রিপোর্ট ।।

১৩ লাখ টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল এবং দেড় লাখ টন ইউরিয়া সার আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গতকাল সোমবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। কমিটির আহ্বায়ক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের সভাপতিত্বে মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে অর্থমন্ত্রী অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের বলেন, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ সার মজুদ রয়েছে। ফলে সারের কোন সংকট হবে না। প্রয়োজনীয় পরিমাণ সার আগেই আমদানি করা হয়েছে। আজ চাহিদার বাকি দেড় লাখ টন আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালের জন্য প্রয়োজনীয় লাইট ক্রুড অয়েল (এএলসি) ও মারবান ক্রুড অয়েল সৌদি আরবের আরামকো এবং আবুধাবীর এডনক থেকে আমদানি করা হবে। এরমধ্যে সৌদি আরব থেকে ৭ লাখ টন এবং আবুধাবী থেকে ৬ লাখ টন তেল আমদানি করা হবে। এছাড়া মার্চের মধ্যে দেড় লাখ টন ইউরিয়া সার দেশে এসে পৌঁছবে। তিনি জানান, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে যে সার আমদানি করা হবে তার দাম পড়বে টন প্রতি ২৯৮ থেকে ২৯৯ মার্কিন ডলার। এছাড়া মংলা বন্দর দিয়ে এর দাম পড়বে ৩১৪ মার্কিন ডলার।

সভায় কমিটির সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব:) একে খন্দকার, বাণিজ্যমন্ত্রী লেঃ কর্নেল (অব:) ফারুক খান, যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ সচিব আব্দুল আজিজসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।

কৃষিপণ্য উৎপাদন, বাজারজাত, রফতানী ও প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং হর্টেক্স ফাউন্ডেশন

২৭.০১.০৯
ইত্তেফাক ।। কারার মাহমুদুল হাসান

বিশ্বব্যাংক-এর সাবেক প্রেসিডেন্ট রবার্ট ম্যাকনামারা ১৯৯২ সালে এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, ঘনবসতিপূর্ণ উন্নয়নশীল দেশের জন্য কৃষিখাতের উপর বেশী জোর দেয়া প্রয়োজন। তার বক্তব্য: সার, জলসেচ, উচ্চফলনশীল বীজ ব্যবহার, কীটনাশক এবং অধিকজমি যান্ত্রিক চাষাবাদের আওতায় আনা সম্ভব হলে এদেশগুলোর খাদ্য ঘাটতি পূরণ খুব তাড়াতাড়ি সম্ভব। উপরোক্ত কথাগুলো বাংলাদেশের জন্য খুব বেশী করে প্রযোজ্য।

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এদেশের মানুষের আশা-আকাঙক্ষা, জীবন জিন্দেগী, আয়-রোজগার, আমোদ-উল্লাস- তথা জীবনধারণের পরতে পরতে কৃষি তথা কৃষি সংশ্লিষ্ট সার্বিক কর্মকাণ্ড অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মতো এতো সহজে এবং কমখরচে কৃষিপণ্য এবং বৃহত্তর আংগিকে কৃষি সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পণ্য যথা মাছ, মুরগী, গবাদী পশু, ফলমুল, সাক-সবজী ইত্যাদি উৎপাদন করার সুযোগ-সুবিধাদি অন্য কোথাও আছে বলে আমাদের জানা নেই। ১৯৪৭ সালের প্রথম দেশভাগ এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতার পর কৃষি সেক্টরে যে উন্নয়ন সাধিত হয়েছে তাকে খাটো করে দেখা যাবে না। তবে এটাও অস্বীকার করা যাবে না যে সামগ্রীক কৃষি সেক্টরে নিরন্তর যোগপোযোগী গবেষণা কার্যক্রম গ্রহণের প্রক্রিয়ায় আরও পরিকল্পিত, কার্যকরী এবং নিয়মিত ফলোআপ এ্যাকশন গ্রহণের মাধ্যমে অন্তত: ৩০ থেকে ৫০ ভাগ উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি করার সব রকম আলামত মজুদ ছিল। কিন্তু প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা, অবহেলা, অনভিজ্ঞতা এবং ক্ষেত্র বিশেষে কথিত চুরি-চামারীর কারণে কাংখিত গন্তব্যে পৌঁছার উদ্যোগ আয়োজনে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে। সে কুয়াশাচ্ছন্ন অবস্থা থেকে জাতি এখনও বেড়িয়ে আসতে পারেনি। এর মধ্যে আমরা অর্থাৎ অধিক ক্ষমতাধর সুবিধাভোগীরা বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)কে নিজ হাতে বেয়াকুফের মতো প্রায় “ফোক্লা” করে তছনছ করে দিয়েছি, কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহে সময়ে সময়ে বক্তৃতাবাজীতে পারঙ্গম, কথিত আর্থিক অনিয়ম ইত্যাদিতে সিদ্ধহস্ত লোকদেরকে অনেক সময় উদ্দেশ্যমূলকভাবে বড় বড় পদে বসিয়ে দিয়ে এসব কাজকর্মকে প্রায় স্থবির করে গবেষণা কাজে বছরের পর বছর জটিল অবস্থা সৃষ্টির কারণ ঘটিয়েছি। সে সঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডকে (কিছু কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া) গত কয়েক বছর যাবত যথাযথ দায়দায়িত্বের বাইরে সেচ-সার এ ভর্তুকি প্রদান কাজে এবং গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কৃষি উপদেষ্টার নেতৃত্বে গুটি ইউরিয়ার প্রশ্নসাপেক্ষ মাহাত্ব প্রচার ও প্রসারে এক ধরনের হুলস্থূল কাণ্ড ঘটিয়ে বছরের প্রায় অর্ধেককালই কর্মকর্তা কর্মচারীদেরকে ব্যাপিত রাখার সবরকম “আন্জাম” প্রদান করে বক্তৃতা-বিবৃতি, সেমিনার, ওয়ার্কশপ, মিটিং-মিছিল ইত্যাদি সহজে ও নির্বিবাদে (সেসব কাজে সরকারী কোষাগার থেকে নির্বিবাদে টাকাকড়ি খরচ করা যায়) সম্পাদন করার কাজগুলোতে বেশী মনোযোগ প্রদান করা হয়েছে। আর আচানক বিষয় হলো, গত ১৫ই জানুয়ারী ২০০৯ তারিখে এক সেমিনারে বিআইডিএ-এর সর্বোচ্চ গবেষণা কর্মকর্তার বয়ানে উল্লেখ করা হয়েছে যে গত বোরো মৌসুমে কৃষকদের প্রাপ্য ডিজেলে ভর্তুকির প্রায় ৫০ কোটি টাকা মূলত: ডিএইসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সরকারী কর্মকর্তা/কর্মচারিগণ অবলীলাক্রমে এবং বেপরোয়াভাবে আত্মসাৎ করে বসে আছে। এতবড় আত্মসাতের দায়-দায়িত্ব ৫ই জানুয়ারী ২০০৯ পর্যন্ত কর্মরত কৃষিউপদেষ্টা ও সচিব সাহেব এড়াবেন কিভাবে? নতুন সরকার চলতি বোরো মৌসুমে এবং চলতি ক্যালেন্ডার বছরের অন্যান্য মৌসুমে সার ও ডিজেলের মতো কৃষি উপকরণে বেশ কয়েক হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি প্রদানের ঘোষণা প্রদান করেছেন।

কৃষিমন্ত্রী, শিল্পমন্ত্রী এবং সরকারের অন্যান্য মন্ত্রিগণ দেশের কৃষি উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় ব্যাপকভিত্তিক বেকার সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে কার্যকরীভাবে সারাদেশে ’এগ্রোবেজড্ ইন্ডাষ্ট্রী ’ স্থাপনে সর্বাত্বক সহযোগিতা প্রদানের ঘোষণা দিয়ে চলেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও তার নির্বাচনপূর্ব এবং নির্বাচনপরবর্তী বিভিন্ন বক্তৃতায় সামগ্রিক কৃষি উন্নয়ন এবং পাশাপাশি ব্যাপকভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে অমৎড়নধংবফ শিল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকান্ড পরিকল্পিতভাবে সম্প্রসারণের তাগিদ প্রদান করছেন।

সরকারের এতদসংক্রান্ত উদ্যোগে অত্যন্ত ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত হর্টিকালচার এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (ঐড়ৎঃরপঁষঃঁৎব ঊীঢ়ড়ৎঃ উবাবষড়ঢ়সবহঃ ঋড়ঁহফধঃরড়হ) সংক্ষেপে “হর্টেক্স ফাউন্ডেশন” মূলত: বিশ্বব্যাংক, আইডিএ এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আর্থিক অনুদানে এবং বাংলাদেশ সরকারের তথা কৃষিমন্ত্রণালয়ের পরোক্ষ সহযোগিতায় ১৯৯৩ সনের ১৮ই ডিসেম্বর তারিখে স্থাপন করা হয় এবং বাস্তব কার্যক্রম শুরু করা হয় জুন ১৯৯৬-এর শেষ ক’ সপ্তাহে। এর অফিস ঢাকাস্থ ২২নং মানিক মিয়া এভিনিউতে অবস্থিত। সংস্থাটি একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ১৯১৩ সালের কোম্পানীজ এক্ট এ নিবন্ধনকৃত। এটা একটি ”নন-প্রফিট” সংস্থা যার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে "ফবাবষড়ঢ়সবহঃ, ঢ়ৎড়সড়ঃরড়হ ধহফ সধৎশবঃরহম ড়ভ বীঢ়ড়ৎঃধনষব যড়ৎঃরপঁষঃঁৎধষ ঢ়ৎড়ফঁপবং, ঢ়ধৎঃরপঁষধৎষু যরময াধষঁব, হড়হ ঃৎধফরঃরড়হধষ পৎড়ঢ়ং ঃড় যরময ঢ়ৎরপব হড়হ-পড়হাবহঃরড়হধষ ভড়ৎবরমহ সধৎশবঃং" ২০০৩ সনে ঐড়ৎঃবী ঋড়ঁহফধঃরড়হ -এর মেমোরেন্ডাম এবং আর্টিকেলস্ অব এসোশিয়েশন পরিমার্জন/পরিবর্ধন করে এর কার্যক্রম এগ্রোবিজনেস-এর আরও বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায় বিস্তৃত ও বর্ধিত করা হয়। এর গভর্নিং বডি সাত সদস্য বিশিষ্ট বিভিন্ন কৃষিসংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ডে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত বেসরকারী সেক্টরের উদ্যোক্তাগণ (একটি এনজিওসহ) যারা বিধিবদ্ধ নিয়ম নীতির আওতায় ১৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি জেনারেল বডি কর্তৃক নির্বাচিত। কৃষিপণ্য রফতানী কার্যক্রমে সহযোগিতার লক্ষ্যে রফতানী উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যানকে গভর্নিং বডির একমাত্র সরকারী সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যেহেতু প্রতিষ্ঠানটি মূলত: কৃষি সংশ্লিষ্ট- সেহেতু এর সৃষ্টির প্রথম থেকেই কৃষিসচিব তাঁর পদবীর সুবাদে ঐড়ৎঃবী ঋড়ঁহফধঃরড়হ এর ঊী-ড়ভভরপড় -এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন, যাকে গভনিং বডির সদস্যগণ কর্তৃক নির্বাচিত হতে হয়।

হর্টেক্স ফাউন্ডেশন স্থাপনের পর থেকে এগ্রোবিজনেস বিশেষত: হর্টিকালচারেল প্রডাক্টস্ উৎপাদন, উন্নয়ন ও বিদেশে রফতানীর সুযোগ সৃষ্টিতে এটি উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে সক্ষম হয়। বিভিন্ন কৃষিসংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী কৃষক গ্রুপ, বেসরকারীখাতে কৃষিপণ্য উৎপাদন ও কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত ছোটবড় ব্যক্তিবর্গ এমনকি মার্জিনেল ফার্মারস ও অন্যদেরকে ংঢ়ড়হংড়ৎ, ঢ়ৎড়সড়ঃব, ধংংরংঃ (আর্থিকভাবে) ইত্যাদি সহ দেশে বিদেশে ট্রেনিং, স্কীম তৈরীতে ও বিদেশে কৃষি পণ্যের রফতানী বাজার খোঁজে দেয়ার কাজে সহায়তা প্রদানসহ দেশের এক উল্লেখযোগ্য জনগোষ্ঠীর আয় রোজগার বৃদ্ধি ও দারিদ্র্য বিমোচন ইত্যাদি কর্মকাণ্ডে এ ফাউন্ডেশন প্রভূত সহযোগিতা প্রদান করে আসছিল।

ইতিপূর্বে হর্টেক্স ফাউন্ডেশন আইডিএ ক্রেডিট নং - ২৩৯৩ বিডি’র "ঝঁঢ়ঢ়ড়ৎঃ ভড়ৎ ঐড়ৎঃরপঁষঃঁৎধষ ঊীঢ়ড়ৎঃ উবাবষড়ঢ়সবহঃ চৎড়লবপঃ" এবং সে-সংগে অমৎর-ইঁংরহবংং ঈড়সঢ়ড়হবহঃ ড়ভ অমৎরপঁষঃঁৎধষ ঝঁঢ়ঢ়ড়ৎঃ ঝবৎারপবং (অঝঝচ - ওউঅ ঈৎবফরঃ ঘঙ ২২৩৩- ইউ)--এর আওতায় জুন ১৯৯৯ পর্যন্ত প্রকল্পটি হর্টেক্স ফাউন্ডেশন কৃষিমন্ত্রণালয়ের সহোযোগিতায় অত্যন্ত দক্ষতার সংগে কাজ চালিয়ে আসে। এ প্রকল্প দুটির আওতায় ক) কুমিল্লার চান্দিনায় আর্ন্তজাতিক মানের “মডেল জোন ফর এক্সপোর্ট অরিয়েন্টেড” কৃষিপণ্য, বিপণন, বাজারজাতকরণ সংশ্লিষ্ট মডেল জোন স্থাপন, খ) কৃষিপণ্য উৎপাদন কাজে ঈড়হঃৎধপঃ ভধৎসরহম পদ্ধতি চালু ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানের হাই ভেল্যূ সম্পন্ন কয়েক জাতের কৃষি পণ্য উৎপাদন, গ) যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ড ও সিংগাপুরসহ পৃথিবীর আরও কয়েকটি উন্নত দেশে কৃষি সংশ্লিষ্ট রহঃবৎহধঃরড়হধষ সধৎশবঃ রহঃবষষরমবহপব সরংংরড়হং স্থাপন এবং সেসব দেশে উচ্চমূল্যের আন্তর্জাতিক মানের বেশকিছু ভেরাইটির কৃষিপণ্য রফতানীর সুযোগ সৃষ্টিকরণ ঘ) পার্বত্য চট্রগ্রামে আন্তর্জাতিক মানের বেবী পাইনএপল’ (ছোট জাতের সুমিষ্ট আনারস) উৎপাদন ও এনজিও ব্র্যাক-এর সহোযোগিতায় এসবের রফতানীর ব্যবস্থা চালুকরণ ঙ) আন্তর্জাতিক মানের প্যাকেজিং কার্টুন প্রস্তুত করে বেসরকরী সেক্টরের রফতানীকারকদের হড় ষড়ংং হড় ঢ়ৎড়ভরঃ ভিত্তিতে সরবরাহ করণসহ আরও বেশ কিছু যুগান্তকারী কার্যক্রম গ্রহণে সক্ষম হয়। আইডিএ’র আর্থিক সহযোগিতায় উল্লিখিত দুটি প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়নের পর (ওউঅ) পরবর্তীতে অমৎরপঁষঃঁৎধষ ঝবৎারপবং ওহহড়াধঃরড়হ ধহফ জবভড়ৎস চৎড়লবপঃ (অঝওজচ- ঈৎবফরঃ ঘঙ - ৩২৮৪ - ইউ) নামে আরেকটি প্রকল্প কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক সহযোগিতায় সার্বিকভাবে ’ হর্টেক্স ফাউন্ডেশন’ বাস্তবায়ন করে- যার কার্যক্রম চালু ছিল জুলাই ১৯৯৯ থেকে মার্চ ২০০৩ পর্যন্ত । এ প্রকল্পের আওতায় ”হর্টিকাল্চার” সেক্টরে এবং বিশেষত আন্তর্জাতিক মানের ’হর্টিকাল্চার’ পণ্য বিদেশে রফতানী এবং দেশে ব্যাপকভিত্তিক ’উৎপাদন ও রফতানী’ যে চেইন গড়ে উঠে-তা এককথায় অসাধারণ। এর পর ঝসধষষ চৎড়লবপঃ ঋধপরষরঃরবং (ঝচঋ) ৎবষবাধহপব ঃড় পধঢ়ধপরঃু নঁরষফরহম, ঝধহরঃধৎু ্ চযুঃড়-ঝধহরঃধৎু (ঝচঝ) সবধংঁৎবং ধহফ ঊট সধৎশবঃ ঝঃধহফধৎফং নু ঊট ধহফ ঐড়ৎঃবী ঋড়ঁহফধঃরড়হ (ঔঁষু ০৬ ঃড় ঙপঃড়নবৎ ০৭) বাস্তবায়ন করা হয়।

হর্টিকালচার এক্সপোর্ট ডেভলোপমেন্ট ফাউণ্ডেশন সংক্ষেপে যা, ‘হর্টেক্স ফাউন্ডেশন’ নামে পরিচিত, ২০০৩ পর্যন্ত মোটামোটি ভালভাবেই চলছিল এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানসম্পন্ন কৃষিপণ্য উৎপাদন ও রফতানীতে উৎপাদনকারী, রফতানীকারী, উদ্যোক্তা এবং বেসরকারী সেক্টরে একটি বড়মাপের কৃষিপণ্য উৎপাদন ও রফতানী সংশ্লিষ্ট আন্দোলন গড়ে তুলতে সক্ষম হয়ে ছিল। কিন্তু ২০০৪ এর পর থেকে দেখা দেয় এর মধ্যে নানান অনিয়ম, দুর্নীতি। ফলে ফাউন্ডেশনটা দেওলিয়া হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। একদিকে তখনকার সরকার তথা, কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, অসময়ে পদোন্নতি আর স্বজনপ্রীতি ফাউন্ডেশনটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপণীত করে ফেলে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের বর্তমান কান্ডারীগণ হর্টেক্স সম্পর্কে গভীর মনোযোগ দিবেন দেশবাসী তাই প্রত্যাশা করে। এ ফাউন্ডেশন যেন আরও ক্ষতিগ্রস্থ ও তছনছ হবার কোন রকম সুযোগ না পায়। কারণ এ প্রতিষ্ঠনের মাধ্যমে উন্নত ও আন্তর্জাতিকমানের বিশেষ বিশেষ ক্যাটাগরীর কৃষিপণ্য উৎপাদন কর্মকান্ডে আইডিএ, বিশ্বব্যাংক, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও অন্যান্যরা ক্রমবর্ধমান সহোযোগিতা নিয়ে নিরন্তর এগিয়ে আসছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, উল্লিখিত বিষয়ে কৃষি এবং দেশের স্বার্থে আপনার সুদৃষ্টি কামনা করি। কারণ এ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আগামী এক দেড় বছরের মধ্যে লক্ষাধিক জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য বিদেশে বাজার সৃষ্টির পথ সুগম করতে পারে।

কৃষক যখন বিজ্ঞানী

অন্যদৃ®িদ্ব
সমকাল II আরিফ হোসেন
বাংলাদেশের কৃষকের অর্থনীতির জ্ঞান টনটনে, এটা অনেক ‘বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদও’ মানেন। কৃষিবিজ্ঞানও তারা ভালো বোঝেন। আর এ জ্ঞান পুঁথি থেকে নয়, তারা আয়ত্ত করেন একেবারে বাস্টøব অভিজ্ঞতা থেকে। টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইলের আবদুল আজিজকে আমরা এ দলেই ফেলতে পারি। তিনি আনারসের চাষ করতেন। বোরো চাষে যেমন ইউরিয়া ব্যবহার হয়, তেমনি আনারসেও তা দরকার হয়। বাগানে ছিটিয়ে দেওয়া হয় এ সার। তার আনারস বাগান বড় এবং প্রয়োজন পড়ে প্রচুর সার। সারের দাম বাড়তে থাকায় তিনি এর জোগান নিয়ে সমস্যায় পড়েন। আর এ থেকেই নতুন বু™িব্দ মাথায় আসে। তিনি সার ছিটিয়ে দেওয়ার পরিবর্তে পানিতে গুলিয়ে ¯েক্স্র করার সি™ব্দাšø নেন। এতে অবশ্যই ঝুঁকি ছিল। কম সার প্রয়োগের কারণে ফলন কম হতে পারত। কিন্তু তিনি ঝুঁকিতে জিতে যান। দেখা গেল, ছিটিয়ে দিলে যেখানে ১০০ কেজি সার প্রয়োজন, সেখানে গুলিয়ে ৫-৭ কেজিতেই কাজ হয়ে যায়। আনারসের পর তিনি এ প™ব্দতি প্রয়োগ করেন বরই চাষে। তারপর ধানের ক্ষেতে। এখানেও তিনি সফল। শনিবার চ্যানেল আইয়ে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আবদুল আজিজ জানান, তার দেখাদেখি আরো কয়েকজন কৃষকও এ প™ব্দতি প্রয়োগ করে ইউরিয়ার ব্যবহার অনেক কমাতে পেরেছেন।
আবদুল আজিজ যে কৃষিবিজ্ঞানের পরিপন্থী কোনো কাজ করেননি, তার সাফাই করলেন কৃষি উল্পুয়ন করপোরেশনের ক্ষুদ্র সেচ রিফর্ম সি¯েদ্বমের প্রধান কৃষি প্রকৌশলী ইফতেখারুল ইসলাম। তার মতে, সার প্রয়োগে ছিটানোর চেয়ে ¯েক্স্র প™ব্দতি বেশি উপযোগী। কেউ প্রশু তুলতেই পারে, ধান উৎপাদন নিয়ে সরকারের যেসব প্রকল্কপ্প রয়েছে তাদের কারো মাথায় এ বু™িব্দ এলো না কেন? কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের কোনো বিজ্ঞানী এ পথ বাতলাতে পারলেন না কেন? এর উত্তর তারা ভাবতে থাকুন।
এটাও স্ট^ীকার করতে হবে, মানবজাতিতে অনেক গুরুÍ^পহৃর্ণ আবিষ্ফ‹ার আকস্টি§কভাবেই হয়েছে। আবদুল আজিজের আবিষ্ফ‹ার যদি বিজ্ঞানী সমাজে সমাদৃত হয় এবং এর প্রয়োগে অন্যদের উৎসাহিত করা হয় তাহলে অর্থনীতির জন্য সুবিধা হবে। এমনকি তা যুগাšøকারীও হতে পারে। বর্তমানে কেবল বোরো মৌসুমেই ১৪-১৫ লাখ টন ইউরিয়া সারের প্রয়োজন হয়। এ সারের দাম খুব চড়া এবং তা উৎপাদনে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রয়োজন হয়। কিন্তু এ গ্যাসের জোগান আর অফুরান বলে বিবেচিত হচ্ছে না। তাছাড়া উৎপাদন ব্যয়ও বিপুল। যদি আবদুল আজিজের প™ব্দতি প্রয়োগ করে ইউরিয়ার ব্যবহার কমানো যায় তাহলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্কপ্প খাতসহ অন্যান্য খাতে এ মহৃল্যবান স¤ক্সদ কাজে লাগানো যাবে।
কৃষি উৎপাদনে নানা ধরনের উপকরণ দরকার হয়। কৃষকদের চাই ভালো বীজ, উল্পুত মানের সার এবং সেচের পানি। ধান, পাট, চা, তামাক, আলু, নানা ধরনের সবজি ও ফল সবকিছুতেই এ ধরনের উপকরণ প্রয়োজন হতে পারে। বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞরা যদি এসব ব্যবহারে সাশ্রয়ী প™ব্দতি বাতলে দিতে পারেন, তাহলে উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে রাখা সল্ফ¢ব হবে। ফল হিসেবে জনগণ পেতে পারে অপেক্ষাকৃত কম দামে কৃষিপণ্য।
আবদুল আজিজের উদ্ভাবন দেশের কাজে লাগলে তিনি কৃষির বিকাশে অন্যতম পথিকৃৎ হিসেবে গণ্য হবেন। তার প™ব্দতির আরো উল্পুয়ন সাধন প্রয়োজন কি-না, সে পথ বাতলাতে পারেন বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞরা। তারা নিশ্চয়ই নিরাশ করবেন না।

খোলাবাজারে সার বিত্রিক্রর দাবিতে নড়াইলে কৃষকদেরম বিক্ষোভ, স্ট§ারকলিপি পেশ

সমকাল ।। নড়াইল প্রতিনিধি
নড়াইলে খোলাবাজারে সার বিত্রিক্রর দাবিতে সাধারণ কৃষকরা বিক্ষোভ মিছিল এবং জেলা প্রশাসক বরাবর স্ট§ারকলিপি পেশ করেছেন। রোববার শহরে বিক্ষোভ মিছিল শেষে জেলা প্রশাসক মোঃ মশিউর রহমানের কাছে স্ট§ারকলিপি পেশ করা হয়। স্ট§ারকলিপি প্রদান করেন অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, কৃষক সমিতির সভাপতি খন্দকার শওকত, অঞ্জন রায় প্রমুখ।
এছাড়া শনিবার সদরের মুলিয়া বাজারে খোলাবাজারে সার বিত্রিক্রর দাবিতে কয়েকশ’ কৃষক বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন এবং সার ডিলার অলোক কু-ু ও কৃষি স¤ক্স্রসারণ কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার দাসকে দেড় ঘণ্টা অবরু™ব্দ করে রাখেন।

মৌসুমভিত্তিক পানি দিয়ে বোরো আবাদ চলছে

ডেসটিনি ।। নেত্রকোনা প্রতিনিধি
নেত্রকোনার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মোহনগঞ্জ উপজেলায় ইরি-বোরো চাষাবাদে নদ-নদীর পানির আওতায় থাকা সেচ কার্যে ব্যবহৃত কৃষি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর কৃষকের নির্ভরতা ক্রমেই বাড়ছে। সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের সেচ প্রকল্পগুলো। অভিজ্ঞ মহল মনে করে, হাওর অঞ্চলে কাক্সিক্ষত খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে সেচযোগ্য সব জমি সেচের আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি, কৃষকদের পানি ও সেচ যন্ত্র ব্যবহার এবং রক্ষণাবেক্ষণে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিতে হবে। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মোহনগঞ্জ উপজেলায় মোট জমির পরিমাণ ৬১ হাজার ৪৪০ একর। আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ৩৯ হাজার ৮৮৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের সেচ যন্ত্র ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে এক ফসলি জমির পরিমাণ ২৯ হাজার ৯২১ একরে ব্যবহৃত হয় ৮৭৫টি অগভীর নলকূপ, দুই ফসলি ৯ হাজার ৭৩২ একরে গভীর নলকূপ ৩৮টি, তিন ফসলি ২৪২ একর জমিতে লো-লিফ্ট পাম্প ৪০৫টি সেচ কার্যে ব্যবহৃত হয়। উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা শাহ শোয়াইব আহম্মদ বলেন, খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হাওরের জমিতে সেচ এলাকা বাড়াতে হবে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে হবে। সূত্র মতে, উপজেলার অধিকাংশ সেচ প্রকল্পে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় এবং মেরামতের অভাবে যথাযথভাবে পরিচালিত হচ্ছে না। হাওরের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ক্ষুদ্র সেচের আওতায় প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর ভূ-উপরিভাগের পানি দিয়ে সেচ কার্য পরিচালনা করা সম্ভব। অন্যদিকে কৃষকদের গভীর-অগভীর ও লো-লিফ্ট পাম্পের অপরিকল্পিত ব্যবহারের ফলে প্রচুর পরিমাণ সেচের পানি অপচয় হয়। ভূ-উপরিভাগের পানি ব্যবহার করা হয় বলে সেচ জমি বাড়ছে না। হাওরের অনেক কৃষকের নলকূপ স্থাপনে বাস্তব অভিজ্ঞতা নেই। তাই ভূ-উপরিভাগের পানির ব্যবহার বৃদ্ধি এবং ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার নিশ্চিত করে কৃষকের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

বৈরী আবহাওয়া ও ঘন কুয়াশায় বাঘায় রবি ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা

ডেসটিনি ।। নুরুজ্জামান, বাঘা (রাজশাহী)
বৈরী আবহাওয়া ও ঘন কুয়াশার কারণে এ বছর রাজশাহীর বাঘা উপজেলার প্রধান অর্থকরী ফসল আম, গম, মসুর ও শিমের ফুল পচন ধরেছে। ফলে গত বছরের তুলনায় এবার ফসল উৎপাদন হ্রাস পাবে এবং উৎপাদন অর্ধেকেরও কম হবে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বর্তমানে যে রবি ফসল উৎপাদিত হচ্ছে তা পরিদর্শন করে ও কৃষকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, এ বছর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে কৃষি উপকরণের মূল্য আগের চেয়ে এমনিতেই বেশি, তার ওপর কৃষকরা সময়মতো সার পাননি। ফলে তারা অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর কম ফসল উৎপাদন করেছেন। তারা জানান, ২০-২৫ দিন আগে এ অঞ্চলের প্রধান অর্থকরী ফসল আমসহ মসুর, গম এবং শিমে মুকুল ও ফুল আসতে শুরু করেছে। ফুল ফোটার সময় হঠাৎ টানা ১০-১২ দিন ঘন কুয়াশা হয়। এতে সদ্য ফোটা ফুলে পচন ধরে। এ ছাড়া কুয়াশা ছেড়ে যাওয়ার পর কুয়াশাযুক্ত ফুলগুলোতে রোদ পড়ে তা পুড়ে যায়। উপজেলার আমোদপুর গ্রামের কৃষক আকবর আলী, আজাহার, নাসির ও আশরাফপুর গ্রামের মহাসিন জানান, গত কয়েক দিন থেকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে তাদের জমির মসুর ও গমের ফুলে পচন দেখা দেয়। তারা ফসলে নানা ধরনের ওষুধ প্রয়োগ করেছেন। এর পরও বিশেষ কোনো ফল পাননি। এ প্রসঙ্গে উপজেলার সবচেয়ে বেশি উৎপাদনকারী এলাকা পলাশী ফতেপুর চরের কৃষক ধলু মিয়া জানান, গত বছর তার ১৫ বিঘা জমি থেকে ৯০ মণ মসুর উৎপাদন হয়েছিল। এ বছর সার সংকট ও কৃষি উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় তিনি ১২ বিঘা জমিতে মসুর চাষ করেছেন। তার পরও প্রথম অবস্থায় যে হারে ফুল দেখা দিয়েছিল আবহাওয়া অনুকূল থাকলে হয়তো এ স্বল্প জমি থেকে তিনি গতবারের সমান ফলন পেতেন।
এ ব্যাপারে বাঘা কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, গত বছর এখানে ৪১ হেক্টর জমিতে মসুর ও গম উৎপাদিত হয়েছিল। এ উপজেলাটি কৃষিপ্রধান এলাকা। এখানে প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়। এ ছাড়া অন্যান্য রবি ফসল ও সবজির জন্যও এলাকাটি সমৃদ্ধ। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমরা আশা করে ছিলাম গতবারের চেয়ে এ বছর প্রতিটি ফসলেই উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে তা হবে না।

রংপুর-দিনাজপুরের আলুচাষিরা ‘লেটব্লাইট’ তা-বে বিপাকে

ডেসটিনি ।। রংপুর প্রতিনিধি

বৃহত্তর রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের মাটি আলু চাষের জন্য উৎকৃষ্ট হলেও বৈরী আবহাওয়া, ভেজাল সার এবং মানহীন বালাইনাশকের ছড়াছড়ির কারণে এবার এ অঞ্চলে আলু উৎপাদনের কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভেজাল ও মানহীন বালাইনাশকের কারণে আলু ক্ষেতে পাতাপচা রোগের আক্রমণ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়তই হাজার হাজার একর জমির উঠতি আলু ফসল লেটব্লাইট রোগ বা পাতাপচা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শত চেষ্টা করেও এ রোগের কবল থেকে বের হয়ে আসতে পারছেন না এ অঞ্চলের আলুচাষিরা। ছত্রাকনাশক ও বালাইনাশক সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন ¯েপ্র করেও আলু ক্ষেত লেটব্লাইট রোগ থেকে রক্ষা করা যাচ্ছে না। এছাড়া বাজারে উল্লেখিত ওষুধগুলোর সংকট সৃষ্টি করে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের জিম্মি করে রাখছে। ফলে তারা ন্যায্যমূল্য দিয়েও চাহিদামতো ওষুধ কিনতে পারছেন না। শনিবার সন্ধ্যায় বালাইনাশক মজুদারির বিরুদ্ধে শহরের মাহিগঞ্জে আলুচাষি সমিতি সংবাদ সম্মেলন করে। জানা গেছে, চাষিরা আলুক্ষেত রক্ষায় হন্যে হয়ে বালাইনাশক খুঁজছেন। যদিও বা দু-একটি দোকানে বালাইনাশক পাওয়া যায়, তা বাজার মূল্যের চেয়ে অধিক দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি সংকট দেখা দিয়েছে বায়ার কোম্পানির সিকিউর জাতীয় বালাইনাশকের। আলু আবাদ করে লগ্নিকৃত অর্থ খোয়ানোর আশংকায় শংকিত হয়ে পড়েছেন বৃহত্তর রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের চাষিরা। ফলে কাক্সিক্ষত ফলন অর্ধেকে নেমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। এ বছর ঘন কুয়াশা, আর শীত এবং মানহীন বালাইনাশকের খপ্পরে পড়ে বৃহত্তর রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের আলুচাষিরা দিশেহারা। নামি-দামি কোম্পানির ছত্রাকনাশক ওষুধ ব্যবহার করেও আলু ক্ষেত পচন রোগ থেকে রক্ষা করা যাচ্ছে না। ভুক্তভোগী চাষিরা এবার বালাইনাশক ওষুধের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। প্রতি কেজি বালাইনাশকের প্যাকেটে যে পরিমাণ গুণাগুণ থাকার কথা, সে পরিমাণ আছে কি না তা নিয়েও চাষিরা আশংকা প্রকাশ করছেন। তাছাড়া সরকারের কৃষি বিভাগ থেকেও এসব বালাইনাশকের গুণগত মান পরীক্ষা-নিরীক্ষার তেমন কোনো তদারকি না থাকায় প্রতিনিয়তই মানহীন কোম্পানির হরেক রকমের ছত্রাকনাশক ওষুধ অবাধে বাজারে ঢুকছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় কৃষি বিভাগের তেমন কোনো জোর নজরদারি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না বলে ভুক্তভোগী আলুচাষিদের অভিযোগ। বৃহত্তর রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের একাধিক কৃষক অভিযোগ করেন, তারা সরকারের কৃষি বিভাগ থেকে মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষি উপ-সহকারীদের কাছে তেমন কোনো পরামর্শ বা সহযোগিতা পাচ্ছেন না। কোন বালাইনাশক কি পরিমাণ ও কতটুকু জমিতে প্রয়োগ করতে হবে তা কৃষকরা নির্ভর করছেন বালাইনাশক বিক্রেতার পরামর্শের ওপর। এর ফলেও তারা প্রতারিত হচ্ছেনÑ তারা প্রতিনিয়তই বাজারে বালাইনাশক ওষুধের সরবরাহ কম বলে ছত্রাকনাশক ওষুধের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন বলেও আলু চাষিদের অভিযোগ। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা কৃষি সংশ্লিষ্ট উপকরণের মাননিয়ন্ত্রণ ও অধিক মূল্যের বিষয়টিও জোর নজরদারিতে দেখছেন না বলে কয়েকজন আলু চাষি আক্ষেপ করে বলেন। এ ব্যাপারে রংপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলহাজ্ব দেলবর হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমরা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের যথাসাধ্য পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদানের চেষ্টা করছি। প্রমাণ সাপেক্ষে মানহীন ওষুধের ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর যদি বালাইনাশক বিক্রেতারা ছত্রাকনাশক ওষুধ বেশি দামে বিক্রি করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে মাঠ পর্যায় ঘুরে দেখা গেছে উল্টো চিত্র।
রংপুর সদরের বুড়িরহাট গোয়ালুর আলু চাষি তাজিদুল ইসলাম লাল ও দুলাল চন্দ্র রায় দুঃখ করে বলেন, ‘ভাই অনেক শখ করি ১০ একর জমিত আলু নাগাছু। মাইসের কাছে টাকা হাওলাত করি। কায় জানে লেটব্লাইড মোর এমন সর্বনাশ করবে। টাকা প্যাচত নিয়া দোকানত ঘুরি ঘুরিয়াও সিকুর পানু না। তাও যদি আছে দাম মেলা টাকা চায়। এলা মুই কি করিম আল্লায় জানে মোর খরচ ওঠে না ওঠে।’
পীরগাছা উপজেলার কল্যাণী ইউনিয়নের এলাকার আদর্শ আলু চাষি বুলবুল ও মাহাবুব আক্ষেপ করে বলেন, ‘ভাই মুই হামার ইউনিয়নের কৃষি উপ-সহকারীক দ্যাখোং নাই, হামাক তেমন কোন সহযোগিতাও করে না। যদি কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে আসিয়া হামার আলু ক্ষ্যাত দ্যাখিয়া পরামর্শ দেইল হয় তাহলে কিছুটা হলেও হামার আলু ক্ষ্যাত রক্ষা হইল হয়।’ পীরগাছা উপজেলার কল্যাণী ইউনিয়নের আদর্শ আলুচাষি আহমেদ আক্ষেপ করে বলেন, ‘ভাই মুই এবার শ্যাস, সারা বছরের জমানো টাকা দিয়া মুই এবার ছয় দোন জমিত আলু লাগাইছিনু, কিন্তু ক্ষ্যাত আর আটকাইবার পারছোং না। মানহীন বালাইনাশক মোক এবার পথে বসাইছে। আলু ক্ষ্যাতের যে জীর্ণশীর্ণ অবস্থা তাতে মোর বাঁচন নাই। মোর এলাকায় কোনদিনও সরকারের কৃষি বিভাগের লোকজন মোর দুঃখ-দুর্দশা দেইখবার আসিল নারে ভাই। ভাইরে মোর এবার উঠতি আলু ক্ষেত পাতাপচা রোগে খায়া ফ্যালাওছে, মুই কিভাবে দেনা শোধ করিম।’
কৃষকদের এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষজ্ঞ মহল কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ে জোর নজরদারি, কৃষকদের বিভিন্ন ফসল উৎপদানের যথাযথ পরামর্শ প্রদান, বাজারে বালাইনাশক ওষুধের মাননিয়ন্ত্রণ করা এবং ভেজাল সার যাতে বাজারে প্রবেশ করতে না পারে তর জন্য সরকারের কৃষি বিভাগের আশু সুদৃষ্টি আকর্ষণ করে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছেন। নইলে বৃহত্তর রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের সম্ভাবনাময় অর্থকারী ফসল আলু চাষের সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে যাবে। অতিরিক্ত কৃষি স¤প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার বৃহত্তর রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলে প্রায় ১ লাখ ৭৭ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়েছে। কৃষি অফিস সূত্র মতে, গড়ে প্রতি হেক্টরে ১৭ মেট্রিক টন করে আলু উৎপাদন হলে ৩০ লাখ ৭ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বিরূপ আবহাওয়ায় অধিকাংশ আলুক্ষেত লেটব্লাইট রোগে আক্রান্ত হওয়ায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ আলু উৎপাদন কম হওয়ার আশংকা করছেন কৃষক ও কৃষিবিদরা। এদিকে রংপুরে কিটনাশক ও বালাইনাশকের কৃত্রিম সংকটের প্রতিবাদে শনিবার সন্ধ্যায় শহরের মাহিগঞ্জ পাইকারী কাঁচাবাজারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রংপুর আলুচাষি সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন চৌধুরী।

বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা ও ধানের বাম্পার ফলনে মূল্যস্ফীতি হ্রাস পাচ্ছে

অর্থনীতিবিদদের অভিমত

ইত্তেফাক ।। জাহাঙ্গীর শাহ কাজল ।।

বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা এবং স্থানীয় বাজারে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম হ্রাস পাওয়ার প্রেক্ষাপটে মূল্যস্ফীতির লাগামে টান পড়েছে। মূল্যস্ফীতি ধারাবাহিকভাবে কমতে শুরু করেছে। অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর) অর্থ্যাৎ গত তিন মাস ধরে মূল্যস্ফীতি সিঙ্গেল ডিজিটে রয়েছে। সর্বশেষ গত ডিসেম্বরে (পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে) মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, চলমান বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা এবং চলতি মৌসুমে বোরো ও আমনের বাম্পার ফলনের কারণে মূল্যস্ফীতি কমে এসেছে। এতে সামনের দিনগুলোতেও মূল্যস্ফীতি আরো কমতে পারে।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ হিসাব মতে, গত ডিসেম্বরেই ২০০৮ সালের সর্বনিম্ন ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছে। ডিসেম্বরে খাদ্যপণ্যে শহরাঞ্চলের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে মূল্যস্ফীতির হার বেশি ছিল। খাদ্যপণ্যে শহরে মূল্যস্ফীতির হার ৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ, গ্রামে এই হার ৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

চলতি বছরের শুরু থেকেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মূল্যস্ফীতির হার বাড়তে থাকে। ২০০৮ সালে এপ্রিল এবং সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর প্রান্তিক ছাড়া কখনোই মূল্যস্ফীতি সিঙ্গেল ডিজিটে নামেনি। গত জানুয়ারিতে সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ মূল্যস্ফীতি ছিল।

২০০৮ সালের শুরু থেকেই দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছিল না। এসময় দরিদ্র ও সীমিত আয়ের মানুষের আয় না বাড়ায় প্রকৃত ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। কিন্তু জুলাই-আগস্ট থেকে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হওয়ার পরপরই আন্তর্জাতিক বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমতে শুরু করে। এক সময় আন্তর্জাতিক বাজারে টন প্রতি চালের দাম হাজার ডলার হয়ে যায়, এখন তা ৫০০ ডলারের নিচে নেমে এসেছে। এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম প্রায় এক-পঞ্চমাংশে নেমে গেছে। জুলাইতে পরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি দেড়শ’ ডলারে উন্নীত হয়েছিল, গত সপ্তাহে তা ৩৩ ডলারে নেমে গেছে। এ কারণে স্থানীয় বাজারেও জ্বালানি তেলের দাম দুই দফায় কমানো হয়েছে। এতে পণ্যের উৎপাদন ও পরিবহন ব্যয় কমেছে। এদিকে বোরো মৌসুমকে সামনে রেখে ইউরিয়া ব্যতীত অন্যান্য সারের দামও অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে। এতে চালের দাম আরো কমবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে চালের দামই বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিম্নবিত্তরা ও দিনমজুররা তাদের আয়ের প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ব্যয় করে থাকে খাদ্যপণ্য কিনতে। এর সিংহভাগই ব্যয় হয় চালে। বাকি ২০ শতাংশ আয় তারা জীবনধারণের অন্যান্য পণ্য কিনতে ব্যয় করে থাকেন।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক কাজী শাহাবুদ্দীন বলেন, আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় প্রেক্ষাপটই মূল্যস্ফীতি কমাতে সহায়তা করেছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একজন মানুষের চাল কেনায় কত ব্যয় হচ্ছে তাই হলো এদেশের মূল্যস্ফীতি পরিমাপের মৌলিক বিষয়। অন্যদিকে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার সুফল পাচ্ছে বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত আমদানি নির্ভর দেশগুলো। জ্বালানি তেলের দাম এক-পঞ্চময়াংশে নেমে আসায় উৎপাদন ব্যয় কমে আসছে।

ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি ব্যাংকের মনিটরিং টিমের কাজ শুরু

২৬.০১.০৯

।। ইত্তেফাক রিপোর্ট ।।
কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির ঘোষিত লক্ষ্যকে সামনে রেখে কৃষি ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধিকল্পে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক উচ্চ পর্যায়ের এক বিশেষ মনিটরিং কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এ লক্ষ্যে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে উপমহাব্যবস্থাপক ও সহকারী মহাব্যবস্থাপক পর্যায়ের ২১ জন নির্বাহীকে মাঠ-পর্যায়ে কৃষিঋণ বিতরণ ও আদায় মনিটরিং-এর জন্য একটি বিশেষ কর্মসূচীর আওতায় সাময়িকভাবে নিয়োজিত করা হয়েছে।

মনিটরগণ ঋণ বিতরণসহ সার্বিক ব্যাংকিং কার্যক্রমে পিছিয়ে পড়া অঞ্চলসমূহে ব্যাপক ভ্রমণ করে শাখাসমূহের কৃষিঋণ প্রবাহ বৃদ্ধিসহ যাবতীয় কার্যক্রম জোরদারকরণে নির্দিষ্ট কার্যপরিধি মোতাবেক কাজ করবেন। পাশাপাশি মনিটরগণের কর্মকাণ্ডসহ শাখাগুলোর পরিচালনগত যাবতীয় কার্যক্রম তদারকির জন্য ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের দুইজন ডিএমডি এবং চার জন জিএম-এর সমন্বয়ে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদারকি দলও একই সময়ে মাঠ পর্যায়ে নিয়োজিত থাকবেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোখতার হোসেন সম্প্রতি ব্যাংকের বোর্ডরুমে আয়োজিত এক ব্রিফিং-সভায় উক্ত মনিটরিং ও তদারকি দলের সদস্যদের কার্যপরিধি ব্যাখ্যা করে তাঁদের লক্ষ্য অর্জনে বিশদ দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন। ইতোমধ্যে ঋণ বিতরণ ও আদায়সহ ব্যাংকের বর্তমান অর্থবছরের ব্যবসায়িক লক্ষ্যমাত্রা ১০০% অর্জন নিশ্চিত করার জন্য প্রধান কার্যালয় থেকে শাখাসমূহে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

বৃটেনে সবজি রপ্তানির সোনালী হাতছানি

২৬.০১.০৯

ইত্তেফাক ।। ফখরুল ইসলাম
সিলেট অঞ্চলের মানুষের প্রিয় বেশকিছু সবজির একটি বিশাল বাজার রয়েছে বৃটেনে। সাতকরা, জারা লেবু, আদা লেবু, খাসিয়া পান, নাগা মরিচ, লাইপাতা, লতা ইত্যাদির জন্য বৃটেনে বসবাসকারী সিলেটীরা লালায়িত। আর তাদের মাধ্যমে এসব সবজির জনপ্রিয়তা বৃটিশসহ বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর কাছেও বাড়ছে। এই অবস্থায় বাংলাদেশ থেকে বৃটেনে সবজি রপ্তানির খুবই উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখছেন রপ্তানির সাথে সংশ্লিষ্টরা। অবশ্য দীর্ঘদিন ধরে সিলেট থেকে কিছুসংখ্যক রপ্তানিকারক বৃটেনে সবজি রপ্তানি করে আসছেন। তবে নানা কারণে এই খাতে এখনো কাঙিক্ষত উন্নয়ন হয়নি। এব্যাপারে সরকারি উদ্যোগ-পৃষ্ঠপোষকতাও তেমন নেই। ফলে রপ্তানিকারকদের পক্ষে বিভিন্ন সমস্যা মোকাবেলা অনেক ক্ষেত্রে কঠিন হয়ে পড়ে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বৃটেনের বাজারে বিপুল চাহিদা থাকা সত্ত্বেও গত প্রায় ৭ মাস ধরে সাতকরা, আদা লেবু, কাগজী লেবু, জারা লেবু, শসা ও বেগুন রপ্তানিতে জটিলতা চলছে। এসব লেবুতে ক্ষতিকারক উপাদান এবং বেগুন ও শসায় পোকা রয়েছে দাবি করে বৃটেনের সরকারি স্বাস্থ্য সংস্থা ‘ডিপার্টমেন্ট অব এনভায়রনমেন্ট ফুড রিসার্চ এসোসিয়েশন (ডেফরা)’ এগুলো তাদের দেশে প্রবেশে বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে। এমনকি এসব পণ্যের অনেকগুলো বড় চালান তারা ডেষ্ট্রয় (নষ্ট) এবং রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে জরিমানাও আদায় করছে। সিলেটের জালালাবাদ ভেজিটেবল এক্সপোর্টার গ্রুপের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ডেফরা যে অজুহাতে এসব পণ্য তাদের দেশে প্রবেশ করতে বাধা দিচ্ছে তা সঠিক নয়। কারণ এসব পণ্য আমাদের দেশের লোকজন নিয়মিতই খাচ্ছেন। উপরন্তু সিলেটের রপ্তানিকারকদের দাবিতে প্রায় চার মাস আগে বাংলাদেশ এগ্রিকালচার ইন্সটিটিউটের একটি বিশেষজ্ঞ টিমও জৈন্তাপুরের একাধিক লেবু বাগানের লেবু পরীক্ষা করে ক্ষতিকারক উপাদান পাননি। এই অবস্থায় রপ্তানিকারকরা বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য সরকারি উচ্চ পর্যায় থেকে বৃটেনের ডেফরার সাথে জরুরিভিত্তিতে আলোচনার দাবি জানিয়েছেন।

সিলেটের রপ্তানিকারকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে সবজি রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার হলো বৃটেন। সেদেশে নানা জাতের লেবু, বেগুন, শসা, পান, শিম, কাঁচা মরিচ, নাগা মরিচ, ডাঁটা, ডাঁটাশাক, লালশাক, লাইপাতা, কচু, মুখি, লতা, চিচিঙ্গা, চালতা প্রভৃতির অনেক চাহিদা রয়েছে। লন্ডন সিটি, ম্যানচেস্টার, বার্মিংহাম, শেফিল্ড, লিবারপুল, নিউক্যাসলসহ বড় বড় শহরগুলোতে এসব সবজির ক্রেতা অনেক। দীর্ঘদিন ধরে সিলেট থেকে এসব সবজি কম-বেশি রপ্তানি হচ্ছে। তবে তা আশানুরূপ পর্যায়ে বৃদ্ধি পায়নি। সিলেটে অবস্থিত রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোও এব্যাপারে তেমন কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারছে না বলে রপ্তানির সাথে সংশ্লিষ্টরা জানান। তারা বলেন, নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও গত বছরের প্রথম ৭-৮ মাস সিলেট থেকে প্রতিমাসে প্রায় ২শ’ টন করে সবজি রপ্তানি হয়েছে। পরবর্তীতে ডেফরার বিধি নিষেধ, পাউন্ডের দরপতনসহ আরো কিছু কারণে রপ্তানির পরিমাণ কমে যায়। বর্তমানে সিলেট থেকে ( লেবু, শসা ও বেগুন বাদে) প্রতিমাসে প্রায় দেড় শ’ টন সবজি বৃটেনে রপ্তানি হচ্ছে। এ থেকে মাসে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে। ডেফরা যেসব পণ্যে বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে তার সমাধান হলে রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয় বহুগুণ বাড়বে। সংশ্লিষ্টরা আরো জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে জেট ফুয়েলের দাম কমলেও পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বিমান ভাড়া সে তুলনায় কমানো হয়নি। এতে রপ্তানিকারকরা আগ্রহ হারাচ্ছেন। সংশ্লিষ্টরা রপ্তানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান সকল সমস্যা সমাধান এবং সময়োপযোগী নানা পদক্ষেপের মাধ্যমে এই খাতের উন্নয়নে সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

জালালাবাদ ভেজিটেবল এক্সপোর্টার গ্রুপের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর আহমদ ইত্তেফাককে বলেন, বৃটেনে সবজি রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সুযোগ রয়েছে। এই সুযোগকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারলে দেশ উপকৃত হবে। তিনি বিমান ভাড়া কমানো, রপ্তানিকারকদের সহায়তা প্রদান ও ডেফরার সাথে আলোচনা করে বিধি-নিষেধ আরোপিত পণ্যগুলো রপ্তানির পথ সুগম করার দাবি জানান।

সিলেট মেট্রোপলিটন বিজনেস কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সিলেটে সরকারি উদ্যোগে ভেজিটেবল এক্সপোর্ট জোন প্রতিষ্ঠা করে সেখানে সবজি উৎপাদন এবং উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মান সুরক্ষিত রেখে উন্নত প্যাকেজিং করে তা বিদেশে রপ্তানি করলে এই খাত দ্রুতই সমৃদ্ধ হবে। কারণ এ খাতে রয়েছে সম্ভাবনার বিরাট হাতছানি।

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor