Friday, November 28, 2008

জাতীয় কৃষি দিবস দিবস পালনেই যেন সীমাবদ্ধ না থাকে

২৫.১১.০৮
ডেসটিনি ।। ইয়াসরেমিনা বেগম সীমা

নিজের গোলায় তুলবো ধান, গাইবো গান ভরবে প্রাণ’Ñ এ সেøাগান দিয়ে গত ১৫ নভেম্বর, ১ অগ্রহায়ণ সারা দেশে পালিত হলো জাতীয় কৃষক দিবস। পৃথিবীর বহু দেশে অনেক আগে থেকে জাতীয়ভাবে কৃষক দিবস পালিত হলেও বাংলাদেশে এটা ছিল প্রথম। কৃষি সাংবাদিক শাইখ সিরাজের লেখা থেকে জানা যায় খোদ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রদেশে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে কৃষি দিবস পালনের রেওয়াজ আছে। আইওয়াতে ২০০৫ সাল থেকে কৃষি দিবস পালন শুরু হয়েছে। সেখানে তারা ১০ থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত ৩ দিনব্যাপী কৃষি দিবস পালন করে, উত্তর ক্যারোলিনাতে ৩১ জুলাই এবং ১ ও ২ আগস্ট এ ৩ দিন ১১ পর্বে উদযাপিত হয় কৃষি দিবস। এ বছর সেখানে ৫৩তম কৃষি দিবস উদযাপিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কিমব্যালে গত ২৭ সেপ্টেম্বর ১৩ পর্বে পালিত হয়েছে ৮২তম কৃষক দিবস। আফগানিস্তানে ইংরেজি ২০ মার্চ নওরোজ উদযাপনের দিন পালিত হয় কৃষি উৎসব। স্থানীয়ভাবে একে বলা হয় ‘যাসনি দেহকান’ বা কৃষকের উৎসব।
বহুকাল থেকেই আমাদের দেশে নবান্ন উৎসব পালন হয়ে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে এ নবান্ন উৎসব কৃষকের কাছে প্রায় স্মৃতির চিলেকোঠায় ওঠার উপক্রম হয়েছিল। ১ বৈশাখে পান্তাভাত খাওয়ার মতো শহরের উৎসাহী সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোই নবান্ন উৎসবকে মূলত জিউয়ে রেখেছিল। ১৯৮২ সাল থেকে বিশ্বব্যাংকের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী কৃষিকে অবহেলা এবং বিএডিসিকে নিষ্ক্রিয় করে রেখে সবার মধ্যে এরূপ ধারণা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা হয় কৃষি আসলে একটা অলাভজনক খাত। গত বছর যখন বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকট, বাংলাদেশে দুই দফা বন্যা এবং সিডরের মতো বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থাকে প্রায় ল-ভ- করে দেয় এমনিক আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত চাল রফতানির ক্ষেত্রে নজিরবিহীন টালবাহানা শুরু করে তখন আমাদের জাতীয় নেতাদের বোধোদয় হয়। তারা কিছুটা হলেও বুঝতে পারেন জাতির অস্তিত্ব রক্ষার জন্য কৃষিকে গুরুত্ব দেয়ার বিকল্প নেই। এ সংকট সময়ে আমাদের দেশের কৃষকরা বোরো, আমন, আলুসহ শস্যের বাম্পার উৎপাদন করেন যার ফলে সংকট আয়ত্তের মধ্যে আসে।
দিনাজপুরে চেড়াডাঙ্গির কৃষক সমাবেশে প্রধান উপদেষ্টা কৃষককে জাতীয় বীর ও দেশের সবচেয়ে বড় নায়ক হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন আর এ কথার স্বীকৃতি দিতেই এ আয়োজন। এবারের প্রতিপাদ্য ‘কৃষিই সমৃদ্ধি’। ‘জাতীয় কৃষি দিবস’ পালনের জন্য সরকার নানা কর্মসূচি গ্রহণ করে এর মধ্যে প্রধান আকর্ষণ ছিল ধান কাটার উৎসব। এছাড়া দিবসটি স্মরণ করে রাখার জন্য প্রধান উপদেষ্টা একটি স্মারক ডাকটিকিট উন্মোচন করেছেন। প্রথমবার জাতীয় দিবস পালন করতে ৯৩ লাখ টাকা বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছে। এ দিবস পালন করতে প্রতিটি জেলা শহরে ৫০ হাজার টাকা এবং উপজেলায় ১০ হাজার করে টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। কৃষককে কাজে উদ্দীপ্ত করতে প্রধান উপদেষ্টার আগ্রহে এ কৃষি দিবস পালন করা হচ্ছে বলে সংবাদ মাধ্যমে জানা গেছে। জাতীয় কৃষি দিবস উপলক্ষে প্রতিটি জেলা-উপজেলায় আয়োজন করা হয়েছে কৃষক শোভাযাত্রা, ধান কাটা উৎসব, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আনন্দমেলা। শিশু একাডেমীর উদ্যোগে কৃষিভিত্তিক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। দিবসটি পালনের জন্য কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, জেলা ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়গুলো নানা সাজে সজ্জিত করা হয়েছিল। আনন্দ আয়োজন দিয়ে দেশের কৃষির এক নতুন অগ্রযাত্রা, কৃষকের কাক্সিক্ষত স্বপ্নের বিজয়। হাজারো দিবসের মধ্যে একটি দিবস নির্ধারিত হয়েছে, যাতে দেশের শতকরা ৮৫ ভাগ মানুষের সম্পৃক্ততা রয়েছে।
হাজারো সমস্যার আবর্তিত হচ্ছে বাংলাদেশের কৃষি, লাখো সমস্যায় জর্জরিত আমাদের কৃষক। সচেতনতার অবাবে প্রতিদিন ইঞ্চি ইঞ্চি করে কমছে কৃষিজমি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বার বার কেড়ে নিচ্ছে কৃষকের মুখের গ্রাস, দাদন ব্যবসায়ীর শোষণে আর সার্টিফিকেট মামলায় হাতছাড়া হচ্ছে প্রান্তিক কৃষকের কৃষিজমি। কোনো আগাম সঙ্কেত ছাড়াই বাড়ছে সার, ডিজেল, কীটনাশকের দাম, জমি বন্ধক রেখে দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা এনে চড়া দামে কিনতে হয় ভেজাল বীজ, ভেজাল সার ও কীটনাশক। এতে কখনো জমিতে গাছ হলেও ফসল ফলে না, মাটি হয় বিষাক্ত, অনাক্সিক্ষত পোকামাকড় বাসা বাঁধে ফসলের জমিতে, সর্বনাশ হয় কৃষকের। সরকার মাঝে মধ্যে কৃষিতে ভর্তুকি দেয়ার কথা ঘোষণা করে বা দেয়, কিন্তু কৃষক জানেস না ভর্তুকির মর্মার্থ কী? উপজেলা কৃষি অফিস ও ব্লক সুপারভাইজারের দায়িত্ব কী? এছাড়া কৃষক সরাসরি সরকারি বরাদ্দ আর ভর্তুকির সুফলও পায় না। সরকারি ভর্তুকি না হলে কৃষককে কত টাকার সার কত টকায় কিনতে হতো তাও জানেন না। তিনি জানেন না, জানার চেষ্টাও করেন না। কৃষক চান শুধু কৃষি উৎপাদনের জন্য কৃষি উপকরণ ও অনুকূল পরিবেশ। সেই উপকরণ আর পরিবেশ ছাড়াই প্রতিকূলতার মাঝে যে ফসল উৎপাদন করেন তার ন্যায্যমূল্যও তিনি পান না। কৃষকের ফসলের লাভের অংশ চলে যায় মধ্যস্বত্বভোগীদের দখলে। এ কথা আজ সর্বজন স্বীকৃত, দেশের খাদ্য দিবস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পরে।
যেহেতু প্রতি বছরই কৃষি দিবস পালন করা হবে, সেহেতু গ্রামে গ্রামে কৃষি সমবায় সমিতি গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। এতে করে কৃষি দিবস উদযাপনে রাষ্ট্রের সঙ্গে কৃষকের নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠবে। কৃষক জানতে পারবেন সরকারি ভর্তুকি তারা কী পরিমাণ পাচ্ছেন। উপজেলা কৃষি অফিসের দায়িত্ব কী, সরকার থেকে উন্নতমানের বীজ ও সার কীভাবে-কখন পাওয়া যাবে। তারা সরাসরি সরকারের কাছে অভিযোগ করতে পারবেন কখন-কীভাবে কৃষি উৎপাদনে হয়রানির স্বীকার হচ্ছেন। জাতির বৃহত্তর স্বার্থে কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রথমদিকে রাজধানীতে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ঢাকায় বেশকিছু খোলাবাজার সৃষ্টি করা হয়েছিল। এত মধ্যস্বত্বভোগীদের এড়িয়ে কৃষক ও রাজধানীর মানুষ উভয়েই উপকৃত হয়েছেন। যে বাজার সৃষ্টি করা হয়েছিল সে বাজার ব্যবস্থা আবার স্থায়ীভাবে চালু করতে হবে। প্রত্যেক উপজেলায় ফসল সংরক্ষণাগার গড়ে তুলতে হবে। প্রশাসনের সঙ্গে কৃষকের নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে সময়মতো হয়রানি ছাড়া কৃষিঋণ প্রাপ্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমানে সরকার কৃষককে ডিজেলে ভর্তুকি বাবদ নগদ টাকা দিচ্ছে। এতে করে সরকার থেকে কৃষকের হাতে আসতে টাকার একটা অংশ যেমন মাঝপথে ইঁদুর খাচ্ছে অন্যদিকে ওই সামান্য পরিমাণ টাকায় তাদের কতটুকু সাশ্রয় হচ্ছে তা ভেবে দেখা দরকার। এ ব্যাপারে কৃষকের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে, তাদের হাতে নগদ টাকার চেয়ে ন্যায্যমূল্যে ডিজেল পৌঁছানো যায় কি না। নগদ টাকার ভর্তুকিতে সমস্যা অনেক, অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের কৃষকরা প্রান্তিক চাষি। অভাব তাদের নিত্যদিনের সহচর। এতে ডিজেল কেনার টাকা অনেক সময় অন্য খাতে খরচ হতে পারে। তাছাড়া ভর্তুকির টাকা সংগ্রহ ও তেল কিনতে আলাদাভাবে সময় ব্যয় করলে এতে তার চুলায় হাঁড়ি ওঠা বন্ধ হওয়ার অবস্থাই সৃষ্টি হতে পারে।
জাতীয় কৃষি দিবস গ্রামবাংলার কৃষকের মাঝে নতুন উদ্দীপনা সষ্টি করেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কৃষকের এ উদ্দীপনাকে কাজে লাগোনো এবং বাস্তবরূপ দেয়া সরকারের দায়িত্ব। প্রতি বছর কৃষি দিবসে কৃষকের জন্য চমকপ্রদ ঘোষণা থাকতে হবে। কৃষি সমবায়ের মাধ্যমে প্রকৃত কৃষক, প্রান্তিক কৃষক, বর্গাচাষি চিহ্নিত করে তাদের রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। তাদের ছেলেমেয়েদের জন্য কৃষিতে উচ্চশিক্ষা ও সরকারি চাকরিতে কোটার ব্যবস্থা রাখতে হবে। ভবিষ্যতে বছরের এ দিনটিতে কৃষকের অভিযোগ শুনতে হবে এবং পরবর্তী সময়ে তা সুরাহা করতে হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরকে অঞ্চল ভাগ করে ত্রৈমাসিক ওয়ার্কশপের আয়োজন করে কৃষককে অভিহিত করতে হবে। এ ব্যবস্থাগুলো বাস্তবরূপ দিতে পারলে কৃষি দিবস উদযাপন সফল হবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের খাদ্যশস্য, ভোজ্যতেল, জ্বালানি তেল, কসমেটিক থেকে শুরু করে সব কিছুই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। আর আমাদের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা চলে যাচ্ছে এসব কিছু আমদানি করতেই। অথচ শুধু কৃষি খাতকে যদি আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে পারি তবে শিল্প খাতে কাক্সিক্ষত অগ্রগতি সম্ভব হবে, আমরা পারবো উন্নতির সোপান পাড়ি দিয়ে কাক্সিক্ষত গন্তব্যে পৌঁছাতে। অন্যথায় কৃষি দিবস যদি শুধু দিবস পালনের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে তবে আমদানি আর সাহায্যনির্ভর জাতি হিসেবেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। য়
লেখক : কলাম লেখক ও সমাজকর্মী

চলনবিলে পোকার আত্রক্রমণে সরিষা চাষীরা দিশেহারা

২৪.১১.০৮
সমকাল ।। সিরাজগঞ্জ/উল্লাপাড়া প্রতিনিধি

সিরাজগঞ্জের উল্কèাপাড়াসহ বৃহত্তর চলনবিল এলাকায় হাজার হাজার একর জমির সরিষা কেটে ফেলছে ‘কমন কার্ট ওয়াম’ নামক এক ধরনের পোকা। কীটনাশক দিয়েও দমন করা যাচ্ছে না এ পোকার আত্রক্রমণ।
কৃষকরা জানিয়েছেন, নতুন ধরনের এ পোকা দমনে তাদের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। উচ্চমহৃল্যের কীটনাশক ব্যবহার করেও পোকা দমন করা যাচ্ছে না। ফলে ব্যাপক ফসলহানির আশগ্ধকায় তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন খান জানান, এ পোকা সল্পব্দ্যার দিকে উঠে রাতে সরিষা গাছের গোড়া কেটে ফেলছে। সল্পব্দ্যা বেলায় সরিষার জমিতে র‌্যালোথিন ক্যারাটে, মেলাথিয়ন জাতীয় কীটনাশক প্রয়োগের পরামর্শ দেন তিনি।

চাটখিলে বীজ ধান কিনে প্রতারিত হচ্ছেন

২৪.১১.০৮
সমকাল ।। চাটখিল (নোয়াখালী) প্রতিনিধি

নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলায় চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে বীজ ধান কিনে কৃষকরা প্রতারিত হচ্ছেন। অথচ উপজেলা কৃষি অধিদফতর এ ব্যাপারে কিছুই জানে না বলে জানায় । বাজারে বিভিল্পু জাতের হাইব্রিডজাতীয় বীজ ধানের প্যাকেট ২২০ টাকা কেজি ধরে বিত্রিক্র হচ্ছে। এ প্যাকেট বীজ ধান কিনে যথানিয়মে পরিচর্যা করেও চারা (অগ্ধকুরোদগম) না হওয়ায় উপজেলার কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
উপজেলার বিভিল্পু এলাকা ঘুরেও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চীনের উৎপাদিত হীরা-২ হাইব্রিড বীজ ধান কিনে বিভিল্পু গ্রামের শতাধিক কৃষক প্রতারিত হয়েছেন। কৃষক নহৃর মোহাল্ফ§দ জানান, তার ৫ একর জমির জন্য ১০ দিন আগে মৌসুমি বীজ ভা-ার থেকে ১৫ কেজি ধান কিনে চারা বসান। কিন্তু ধানে চারা না গজানোয় তিনি হতাশ হয়ে পড়েন। এদিকে বাংলাদেশ ব্রিধান-২৯কে লিলি কো¤ক্সানি হাইব্রিড-২৯ নামে প্রতি কেজি ৭৫ টাকা দরে বিত্রিক্র করছে। প্রকৃতপক্ষে এ ধানের প্রতি কেজির মহৃল্য ৩৫ টাকা।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, বাংলাদেশে হাইব্রিড-২৯ নামে কোনো ধান নেই। চাটখিল বাজারের বীজ ধান ডিলাররা হাইব্রিড হীরা-২ ধানে চারা না গজানোর কথা স্ট^ীকার করেছেন।
এ ব্যাপারে চাটখিল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিবাস দেবনাথের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান।

কৃষি এবং কৃষকের ভাবনা

২৪.১১.০৮
ইত্তেফাক ।। কারার মাহমুদল হাসান

পহেলা অগ্রহায়ণ দিনটি পালন করে আসছে বাংলাদেশের জনগণ নবান্ন উৎসব হিসেবে। বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা, পিঠা খাওয়া, নাচ-গান-আনন্দ উল্লাসের মাধ্যমে অনেক বছর থেকে। বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলিতে সীমিত আকারে হলেও রাজধানী ঢাকায় বিশেষ করে শাহবাগে অবস্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট বকুল তলায় মূলত সচ্ছল ও উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারের বিপুল সংখ্যক ছেলে-মেয়ে সাধ্য অনুযায়ী আনন্দ-আহলাদের সংগে এ দিবসটি হৈ-হুল্লোড়ের মাধ্যমে উদযাপন করে আসছে অনেক বছর থেকে। তবে সারাদেশে গ্রামেগঞ্জে কত সংখ্যক কৃষক পরিবার নবান্ন উৎসব দিবসটিকে কিভাবে কি প্রক্রিয়ায় পালন করে থাকেন কিংবা এ দিবসটির ব্যাপারে কোন খবরাখবর করার ফুরসৎ পান কিনা সরকারের কোন মহলে সে খবরাখবর আছে বলে মনে হয় না। উপরোক্ত প্রেক্ষাপটে বর্তমানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পহেলা অগ্রহায়ণ তারিখটিকে এ বছর থেকে জাতীয় কৃষি দিবস হিসাবে ঘোষণা করেছে। প্রত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ১লা অগ্রহায়ণ তারিখে একদিকে কৃষকের ঘরে নতুন ফসল ওঠার আনন্দ আর অন্যদিকে কিষাণ বধূর ঘরে নতুন ধানের পিঠাপুলি। “নিজের গোলায় তুলবো ধান, গাইবো গান ভরবে প্রাণ”-এ শ্লোগানকে সামনে রেখে সম্প্রতি পালিত হয়েছে জাতীয় কৃষি দিবস। তাছাড়া, সরকারের তরফ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্যদিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজধানীসহ বিভিন্ন বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা শহরে মিটিং, মিছিল, সেমিনার, যন্ত্রসংগীত, বক্তৃতা, কবিতা, গান, কোথাও লাঠি খেলা, দাড়িয়াবান্দা, ঢাক-ঢোলের মাধ্যমে গান-বাজনা ইত্যাদি হরেক কিসিমের আনন্দ উপকরণ শ্লোগান-শোভাযাত্রা ইত্যাদি লীলা খেলা আনজাম-আয়োজনের মধ্য দিয়ে কৃষি উপদেষ্টা মহোদয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে দিবসটি পালনের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে ধান কাটা উৎসবে মাননীয় উপদেষ্টাগণ যোগদান করে কৃষি দিবসকে উৎসবমুখর করার কর্মসূচীও নেয়া হয়েছিল। তবে ঐ দিবসে শুধুমাত্র যোগাযোগ উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব:) গোলাম কাদেরকেই গাজীপুরের এক কৃষকের পাকাধান ক্ষেতে কয়েক মুষ্টি ধান কাটতে দেখা যায়। অন্যদিকে কৃষি উপদেষ্টা ডাঃ চৌধুরী সাজ্জাদুল করিমকে ঐদিন কোন ধান ক্ষেতে ধান কাটতে দেখা না গেলেও বিকাল বেলায় মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার অফিসে দিবসটি স্মরণ করে একটি স্মারক ডাকটিকেট উন্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্থিত দেখা যায়। তবে ১লা অগ্রহায়ণ তারিখে বিভিন্ন সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংগে জাতীয় কৃষি দিবস বিষয়ে তিনি কথা বলেন এবং এ মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, এ দিবস ঘোষণার ফলে কৃষক কুল উজ্জীবিত হবেন, কৃষিকাজে আরো মনোযোগী হবেন এবং ফলে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে ব্যাপকভাবে সহায়ক ও অনুপ্রেরণা যোগাবে।

এবার কৃষি দিবস পালনে সরকার মোট তিরানব্বই লাখ টাকার বাজেট নির্ধারণ করেছিল। যা প্রায় কোটি টাকার কাছাকাছি। আশা করা যায় আগামী বছর জাতীয় কৃষি দিবসে সরকারী পর্যায়ে আরো শান-শওকত-এর সংগে উদযাপনের জন্য বাজেট কমপক্ষে দ্বিগুণ উন্নীত করার ব্যবস্থা হবে। প্রথম জাতীয় কৃষি দিবস উপলক্ষে কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা, কৃষি উপদেষ্টা ও কৃষিসচিব এর বাণী সম্বলিত ক্রোড়পত্র বের করা হয়। এবার কৃষি দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয় কৃষিই সমৃদ্ধি। ক্রোড়পত্রের কৃষিই সমৃদ্ধি শিরোনামে কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত মূল নিবন্ধে বলা হয়েছে যে, দেশে গত শতাব্দীর সত্তরের দশকের তুলনায় জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ কিন্তু খাদ্যশস্যের উৎপাদন বেড়েছে তিন গুণ। খাদ্যশস্যের পাশাপাশি বিভিন্ন ডালবীজ, তেলবীজ, মসলা ফসল, ফল ও শাকসবজি ৭০’ দশকের তুলনায় কোন কোনটি শতাধিক পারসেন্ট (অর্থাৎ দ্বিগুণ বা তার চেয়ে কিছু বেশী) বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। তবে গত প্রায় চার দশকে ডাল ৪.২%, তেলবীজ ১২.৫% উৎপাদন বেড়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। নিবন্ধে বলা হয়েছে এ সুবর্ণ সাফল্যের মহানায়ক এ দেশের কৃষকরাই, আর কৃষকদের নিরন্তর সহায়তা ও কৃষি সেবা দিয়ে আসছে কৃষি মন্ত্রণালয়। উন্নতমানের বীজের প্রাপ্যতার বিষয় উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে, ডিএই’র সহযোগিতায় কৃষক এখন ধানবীজ চাহিদার প্রায় ১৭% পূরণ করতে পারছে। এখানে উন্নত মানের ধানবীজ উৎপাদন বিএডিসি’র অবদান বা সংশ্লিষ্টতার করা ভুলে কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। কেন হয়নি-তা অতি আচানক বিষয় বটে। [ভোজ্য তেল নিয়ে দেশে অনেক বছর থেকে যে ভয়ংকর সংকট চলছে সে প্রেক্ষাপটে তেলবীজ উৎপাদনে কৃষি মন্ত্রণালয় রাজনীতির প্রভাবমুক্ত গত দুই বছরসহ ৭০’ দশকের পর ডিএই’র উপর ভর করে কৃষি মন্ত্রণালয় কি কি অনবদ্য অবদানে সক্ষম হয়েছে তার কোন উল্লেখ এ নিবন্ধে নেই।] সেচ এর কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে ৭০’ দশকের শুরুতে মোট আবাদী জমির ‘১৫% সেচের আওতায় ছিল যা এখন বেড়ে ৫৮%-এ উন্নিত হয়েছে আর সেই সাথে কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে অর্থ সাশ্রয়ী সেচ প্রযুক্তি। এ সেচ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে বিএডিসি’র কোন ভূমিকা ছিল কিনা তা নিবন্ধে কোথাও কোন উল্লেখ করা হলো না তা রহস্যজনক বটে।

ক্রোড়পত্রের বিভিন্ন বাণীতে এবং প্রকাশিত নিবন্ধে কৃষি উৎপাদনের বিভিন্ন উপকরণের মধ্যে সবচেয়ে বড় ও মূল উপকরণ হলো মূলধন বা যা কৃষকগণ মূলত: বিভিন্ন রাষ্টায়ত্ত ব্যাংকে এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক হতে ঋণ হিসাবে পাওয়ার কথা সে বিষয়ে কোথাও কোন উল্লেখ নেই। বিআরডিবি’ও তাদের আওতাধীন বিভিন্ন কৃষক সমবায় সমিতি’র সদস্যদেরকে সীমিতভাবে হলেও প্রতি বছর কৃষিঋণ আকারে সরবরাহ করে থাকে। কৃষকগণ বোরো মৌসুমসহ বিভিন্ন মৌসুমে উপরোল্লিখিত বিভিন্ন ব্যাংক থেকে কৃষিঋণ সংগ্রহ করে থাকেন। গত দুই-তিন বছর থেকে বিভিন্ন বেসরকারী ব্যাংকও মোটামুটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কৃষকদেরকে কৃষিঋণ দিয়ে যাচ্ছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের কাছে আমাদের বিনীত জিজ্ঞাসাঃ ব্যাংকসমূহ থেকে কোন ক্যাটাগরিতে গরীব কৃষক কৃষিঋণ সংগ্রহে উপযুক্ত বলে বিবেচিত হতে পারেন সে বিষয়ে মন্ত্রণালয় কি অবহিত নয়। কৃষি মন্ত্রণালয় কি জানে না যে কৃষি উৎপাদনের সংগে কৃষিজমি চাষাবাদে যারা প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত তাদের প্রায় ৭০ ভাগই বর্গাদার চাষী, যাদের নিজের জমি নাই এবং জমি নাই বিধায় তাদের জমির দলিলও নাই। আর দলিল ছাড়া কোন ব্যাংকই এ ধরনের বর্গাচাষীদেরকে আইনত: কৃষিঋণ দিতে পারে না। বর্তমান কৃষি উপদেষ্টা সাহেব একাধিক বার বিভিন্ন সভায় পত্র-পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার লোকজনের কাছে সহাস্যবদনে ঘোষণার পর ঘোষণা প্রদান করে বলেছেন যে, দেশে মূল ফসল উৎপাদনকারী বর্গাচাষীদেরকে কৃষিঋণ প্রদানের একটি গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি অতি তাড়াতাড়ি প্রণয়ন করা হবে। এরপর দিন যায়, মাস যায়, বছর যায় উপদেষ্টা পরিষদের মেয়াদও যায় যায়। কিন্তু অতি প্রয়োজনীয় বিশেষত: শস্য উৎপাদনকারী কৃষকদের জন্য এবং সার্বিকভাবে দেশের খাদ্য উৎপাদন বিপুলভাবে বৃদ্ধির জন্য এ কাজটি যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা কৃষি মন্ত্রণালয়-এর কর্ণধারগণ এখন পর্যন্ত ঠাহর করতে পেরেছেন বলে তো মনে হয় না। জমিতে ফসল উৎপাদনকারী বর্গাচাষীগণকে (মোট ফসল উৎপাদনের প্রায় ৭১/৭৫ ভাগের সংগে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত) উৎপাদনের সবচেয়ে বড় উপকরণ - ‘মূলধন’ তথা কৃষিঋণ কিভাবে চাহিদা মোতাবেক সময়মত দেয়া যায় সে সব বিষয়ে কর্তৃপক্ষ নির্লিপ্ত। অথচ দেশের ফসল উৎপাদনে ‘কৃষি ঋণ’ই প্রাথমিক বিবেচনায় সবচেয়ে বড় হাতিয়ার।

এ কাজটি সহজে এবং কম সময়ে সম্পাদন করার জন্য নিম্নে বর্ণিত কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করলে উপকার হতে পারে: ক) মূলত কৃষি এবং কৃষিসংশ্লিষ্ট সার্বিক উন্নয়ন সাধনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামকে এক একটি “উন্নয়ন ইউনিট” (নম্বর প্রদান সহ) চিহ্নিত করে (টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত) একটি তালিকা প্রণয়ন করা যায়। উল্লেখ্য, ২০০১-এর বিবিএস-এর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের গ্রামের সংখ্যা ৮৭৩১৯টি। খ) প্রতিটি গ্রামে তথা ‘উন্নয়ন ইউনিটে’ কি পরিমাণ কৃষিজমি আছে, উক্ত জমির মধ্যে আবাদি, আবাদিযোগ্য, কিন্তু আবাদের আওতায় এখনও আনা হয়নি তার পরিমাণ (বিবরণ), সেসংগে জমি যা কৃষি আবাদের অনুপযুক্ত বা কৃষি কাজে ব্যবহারের সুযোগ সীমিত, সে সবের চিত্র। গ) প্রতি উন্নয়ন ইউনিটে (গ্রামে) প্রতি কৃষকের মালিকানাধীন জমিতে বছরে কয়টি ফসল উৎপাদিত হয়, ফসলের (বার্ষিক) পরিমাণ ও ধরন ইত্যাদি তথ্যাদি।

ঘ) জমির মালিক কৃষক (ইউনিট ভিত্তিক) নিজে কত একর জমিতে চাষাবাদ করেন এবং বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেয়া কৃষিঋণের পরিমাণ (বাৎসরিক) কত। অন্যদিকে বর্গাচাষীগণ কর্তৃক (ইউনিট ভিত্তিক) কত পরিমাণ জমিতে চাষাবাদ করা হয় এবং তাদের মূলধন প্রাপ্তির সূত্র এবং পরিমাণ কত। বর্গচাষীদের (চাষাবাদকৃত জমির পরিমাণ উল্লেসহ) ইউনিট ভিত্তিক তালিকা, গ্রাম ইউনিয়ন উল্লেখসহ বাৎসরিক ঋণের চাহিদার পরিমাণ উল্লেখসহ তালিকা।

অন্যদিকে দেশের সেচকাজের জন্য ব্যবহৃত গভীর নলকূপের সার্বিক চিত্র সম্পর্কে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির স্বার্থে- কিছু প্রস্তাব কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করতে পারেন। বিএডিসি, ডিএই এবং বিএমডিএ - এ তিন প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তিগণ কর্তৃক স্বাক্ষরিত (২৬/১০/০৮) এক প্রতিবেদনে দেখা যায় বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ চালিত (পিডিবি ও আরইবি) গভীর নলকূপের সংখ্যা ২৮,২৮৮। অন্যদিকে ডিজেল চালিত গভীর নলকূপের সংখ্যা ৩,০১৪টি। বিদ্যুৎ ও ডিজেলে পরিচালিত এবং সেচকাজে ব্যবহৃত মোট গভীর নলকূপের মাধ্যমে ২০০৭-২০০৮ অর্থ বছরে ৭ লক্ষ ৮৫ হাজার ৬ শত ৮০ হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে যুগ্মভাবে স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে।

অতিশয় আচানক বিষয় হলো দেশে সেচকাজে ব্যবহৃত বিদ্যমান মোট গভীর নলকূপ-এর মধ্যে ১৮ হাজার ৪ শত ৬০টির মালিক হলো বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন ১৬৫১৩টি কৃষক সমবায় সমিতি। উল্লিখিত গভীর নলকূপের মধ্যে এখন সচল আছে ১৪ হাজার ৭ শত ৬১টি এবং অচল (মেরামতের অপেক্ষায় হয়ে পড়ে আছে) ৩৬৯৯টি গভীর নলকূপ। দেশবাসীর দুর্ভাগ্য, গভীর নলকূপ বিষয়ে যৌথস্বাক্ষরে প্রণীত/প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিআরডিবি’র নামগন্ধ কোথাও নেই। অনুসন্ধানে জানা যায়- ডিএই এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক এতদ্বিষয়ে বিআরডিবি’র সংগে কোন রকম আলাপ-আলোচনা করার প্রয়োজনীয়তাই অনুভব করেনি।

কৃষিঋণ এবং সেচকাজে ব্যবহৃত গভীর নলকূপ বিষয়ে প্রকৃত চিত্র বিষয়ে আমার প্রস্তাব হলো কৃষিঋণ চিত্র প্রণয়নের আঙ্গিকে প্রতিটি উন্নয়ন ইউনিটে কতগুলি গভীর নলকূপ, অগভীর নলকূপ এবং শক্তি চালিত পাম্প আছে এবং এসবের ব্যবহার পদ্ধতি ও পরিস্থিতি কি, খবরাখবর ও সহযোগিতা প্রদান করা গেলে সেচ যন্ত্রসমূহের সর্বোচ্চ ব্যবহার কিভাবে সম্ভব করা যেতে পারে, সে সব চিত্র বিবরণী অনধিক ৬ সপ্তাহের মধ্যে প্রণয়ন করা সম্ভব। সার্বিক চিত্র পাওয়া গেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রচেষ্টায় এবং উপজেলায় কর্মরত অন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ একত্রে বসে আলাপ-আলোচনা করে জেলা প্রশাসক, উপ-পরিচালক, ডিএই এবং বিআরডিবি সমন্বয়ে গঠিত কমিটি সেচ সংক্রান্ত সার্বিক বিষয়াদি বিচার-বিশ্লেষণ করে করণীয় বিষয়ে বাস্তবসম্মত ও বাস্তবায়নযোগ্য পরামর্শ ও সুপারিশ কৃষি মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করতে পারেন। এর অনুলিপি দেশের প্রধান নির্বাহী, বিএডিসি, বিআরডিবি এবং ডিএই’র সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ বরাবরেও প্রেরণ করতে পারেন।

এরপর কৃষিঋণ ও সেচযন্ত্র সংক্রান্ত তথ্যাবলী পত্র-পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশ ও প্রচারসহ ডিএই থেকে পুস্তিকা আকারে প্রকাশ করে প্রতি ইউনিয়ন পরিষদ এবং উপজেলা পর্যায়ে ইউএনও, ইউএও, ইউআরডিও এবং উপজেলা চেয়ারম্যান বরাবরে প্রেরণ করলে সংশ্লিষ্টদের পক্ষে নিরন্তর ফলোআপ একশন নেয়া সহজ হবে এবং দেশের কৃষক কুল ও দেশ উপকৃত হবে।

[লেখক : সাবেক সচিব]

খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির প্রশ্নে অগ্রাধিকার দিতে হইবে

২৪.১১.০৮
ইত্তেফাক ।। সম্পাদকীয়

বৃষ্টি কম হইলে, এমনকি সেচ ছাড়াই খরাপ্রবণ জমিতে দ্বিগুণ ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা খুঁজিয়া পাইয়াছেন যুক্তরাষ্ট্রের আলবার্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক। ফিলিপিনসের আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইরি) এবং ভারতের পূর্বাঞ্চলে তিনি এই গবেষণা কর্মটি পরিচালনা করেন। গবেষক দেখিতে পান যে, ধানের মধ্যে এমন কিছু জিন রহিয়াছে, যেইগুলি শুষ্ক মাটির গভীর হইতে পানি শুষিয়া নিয়া ভালভাবে ফলবতী হইয়া উঠিতে পারে। গত ২৩ নভেম্বর, রবিবার একটি ওয়েবসাইটের বরাত দিয়া খবরটি ছাপা হইয়াছে পত্রিকান্তরে।

খাদ্য সমস্যা যখন বিশ্বজুড়িয়া প্রবল হইয়া দেখা দিতে শুরু করিয়াছে, তখন শুষ্ক জমিতে দ্বিগুণ ধান উৎপাদনের সম্ভাবনার খবর নিঃসন্দেহে কৌতূহল উদ্দীপক এবং উৎসাহব্যঞ্জক। বিশ্ব প্রেক্ষাপটে খাদ্যশস্য হিসাবে গমের পরেই ধানের অবস্থান। পৃথিবীর প্রায় ৪০ শতাংশ লোকের প্রধান খাদ্য ধান হইতে প্রাপ্ত চাউল। ভাতই হইল এশিয়ার বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর প্রিয় ও প্রধান খাদ্য। ভাতে ক্যালরির মাত্রাও বেশি। বাংলাদেশে বলিতে গেলে শতকরা একশতভাগ মানুষই ভাতের উপর নির্ভরশীল। কাজেই ধানের উৎপাদন বাড়াইতে না পারিলে, কিংবা কোনো কারণে উৎপাদন হ্রাস পাইলে এইখানে প্রকট হইয়া দেখা দেয় খাদ্য সমস্যা। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করিতে হইলে আমাদের ধানের উৎপাদন বাড়াইতেই হইবে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ করা বাঞ্ছনীয় যে, উচ্চ ফলনশীল ধানের আবাদ, সেচ সম্প্রসারণ এবং অন্যবিধ আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তির কল্যাণে গত সাড়ে তিন দশকের ব্যবধানে বাংলাদেশে বৎসরে ধানের উৎপাদন দ্বিগুণ হইয়াছে। বিঘাপ্রতি ফলন যেমন বাড়িয়াছে, তেমনই বাড়িয়াছে ধান চাষের জমি, যদিও মোট আবাদী জমির আয়তন কমিয়া গিয়াছে। রবিশস্য ও পাটের চাষ হ্রাস পাওয়ায় ধানের জমি বাড়িয়াছে। অন্যদিকে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে দ্রুত কমিয়া যাইতেছে আবাদি জমি। প্রতিদিনই কিছু না কিছু ফসলের জমি চলিয়া যাইতেছে শিল্প-কারখানা, বাড়িঘর কিংবা নানা স্থাপনার কাজে। ইহা এমন এক বাস্তবতা, যাহা রুখিয়া দেওয়া সহজ নয়।

এমতাবস্থায় কম জমিতে অধিক ফসল ফলাইবার নীতি-কৌশল আমাদের গ্রহণ করিতে হইয়াছে এবং ইহা বাস্তবে খুবই ফলপ্রসূ বলিয়া প্রতিপন্ন হইয়াছে। তবে কৃষি ও খাদ্যোৎপাদনে এই যাবৎ যেটুকু সাফল্য অর্জিত হইয়াছে তাহা সন্তুষ্ট হওয়ার পক্ষে মোটেও যথেষ্ট নহে। অধিক খাদ্যোৎপাদনের একটি স্থায়ী ও মজবুত অবকাঠামো এখন সম্পূর্ণভাবে গড়িয়া তোলা সম্ভব হয় নাই। এই ক্ষেত্রে আমাদের কৃষির সমস্যাবলি যেমন সঠিকভাবে চিহ্নিত করা দরকার, তেমনই এই দেশের জমির বৈশিষ্ট্যের সহিত মিল রাখিয়া সদ্ব্যবহার করিতে হইবে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির। বাংলাদেশে জমির প্রকৃতি সর্বত্র একরূপ নয়। কিছু উঁচু এলাকা আছে, যেইখানে সেচ ছাড়া ধানের আবাদ করা কঠিন। সময়মত বৃষ্টিপাত না হইলে এবং পর্যাপ্ত সেচের ব্যবস্থা করা না গেলে সেইসব জমিতে ফসল মার খায়, কোন কোন ক্ষেত্রে জমি পতিত পড়িয়া থাকে। আবার নিচু এলাকায় ফসলের এমন মাঠও রহিয়াছে, যেইখানে বর্ষাকাল আসিতে না আসিতেই জলমগ্ন হইয়া যায়। ফসল নষ্ট হইয়া যায়। এই ধরনের প্রতিকূল অবস্থার কারণেও বাংলাদেশে খাদ্যশস্যের মোট উৎপাদন কমিয়া যায়।

এই পরিস্থিতিতে খরা ও বন্যা সহনশীল জাতের ধান আবাদ করিলে অবশ্যই সুফল পাওয়া যাইবে। দেশি জাতের এমন অনেক ধান অতীতে এইখানে ছিল যেইগুলি এই দেশের প্রকৃতির সহিত খুবই সামঞ্জস্যপূর্ণ। অধিক উৎপাদনে অত্যন্ত সম্ভাবনাপূর্ণ সেইসব ধানের জাত অধিকাংশই হারাইয়া গিয়াছে। হারানো সেই ধানগুলির পুনরুদ্ধার এবং জাত উন্নয়নের মাধ্যমে সুফল পাওয়া যাইতে পারে। ধানের মধ্যে মাটির গভীর হইতে পানি বা রস শুষিয়া নিতে সক্ষম যে জিনের সন্ধান পাওয়া গিয়াছে, সেই সূত্র ধরিয়া দেশি ধানের জাত উন্নয়ন সম্ভব কিনা, তাহা এই দেশের আমাদের কৃষি বিজ্ঞানীদেরও গবেষণার সুযোগ করিয়া দিবে। নতুবা কয়েকটি দেশে সাম্রাজ্যবাদী কায়দায় বীজ সংরক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণের যে গোপন চেষ্টা চলিতেছে, সেই ফাঁদে পড়িয়া যাইতে পারে বাংলাদেশ। বন্যা ও খরা সহনশীল এবং উচ্চফলনযোগ্য ধানবীজ উদ্ভাবিত হইলে, অথবা দেশি ধানের জাত উন্নয়ন করা সম্ভব হইলে এই দেশে ধানের উৎপাদন বাড়িবে নিশ্চয়ই। এই ব্যাপারে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের আগাইয়া আসা উচিত। মনে রাখিতে হইবে যে, ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি করিতে না পারিলে অদূর ভবিষ্যতে খাদ্য সমস্যা আরও প্রকট হইবে। খাদ্য আমদানি খাতে ব্যয় বাড়িবে, সমস্যা দেখা দিবে নানা দিক দিয়া। বলাই বাহুল্য, খাদ্য সমস্যার সহিত দারিদ্র্যের সম্পর্ক ওতপ্রোত। খাদ্যাভাব দারিদ্র্যের পরিধি বাড়াইয়া দেয়। জাতীয় উন্নয়নের পথে দারিদ্র্যই সবচাইতে বড় বাধা। কাজেই উৎপাদন বাড়াইয়া খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের বিষয়টিকে আমাদের গ্রহণ করিতে হইবে অগ্রাধিকারভিত্তিতে।

মতলবে অজানা রোগে আমন উৎপাদনে শঙ্কা

২৪.১১.০৮
ডেসটিনি ।। মতলব (চাঁদপুর) প্রতিনিধি

মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের জমিতে জানা-অজানা নানা রোগে আমন উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে কৃষি উপকরণের মূল্যবৃদ্ধির ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় চাষিরা সংকটে পড়েছেন। চলতি মৌসুমে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে মতলব উত্তর উপজেলায় ১০ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২০ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন। এ উপজেলায় বৃষ্টির পানি দিয়ে আমনের আবাদ করা হয়। দেখা যায়, এবার আমন আবাদের মাস দেড়েক পরই জমিতে রোগ দেখা দিয়েছে। ফসল পোকা-মাকড়ে আক্রান্ত হয়েছে। এ ছাড়া টুংরো রোগের আক্রমণে ধান গাছ পচে মাটিতে মিশে যাচ্ছে, পাতা ঝলসানো বা বিএলবি এবং খোলপোড়া রোগে আক্রান্ত সবুজ ক্ষেত হলুদ বর্ণ ধারণ করে শুকিয়ে যাচ্ছে। কৃষক আলী মিয়া বলেন, ‘এত টাকা খরচ করে জমিতে ধান চাষ করেছি এখন সব হলুদ হয়ে যাচ্ছে। শুনেছিলাম আমাগো পরামর্শ দেয়ার জন্য মাঠে নাকি কৃষি অফিসারা আছেন। শুনেছি কিন্তু দেখি না। নিজেরা বাজার থেকে ওষুধ এনে দিয়েছি কোনো কাজ হচ্ছে না।’ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. আমিনুর রসিদ মুকুল বলেন, পটাশ ও দস্তার অভাবে এ রোগ দেখা দিতে পারে। পটাশ ও দস্তা প্রয়োগ করলে এ রোগ ভালো হতে পারে।

‘কমন কার্ট ওয়াম’ পোকার আক্রমণে সরিষা চাষিরা দিশেহারা

২৪.১১.০৮
ডেসটিনি ।। উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) প্রতনিধি

শস্যভা-ার হিসেবে পরিচিত সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়াসহ বৃহত্তর চলনিবল এলাকায় হাজার হাজার একর জমির সরিষা কেটে ফেলছে ‘কমন কার্ট ওয়াম’ নামক এক ধরনের মারাত্মক পোকা। কীটনাশক দিয়েও দমন করা যাচ্ছে না এরূপ পোকার আক্রমণ।
সরেজমিন তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ অঞ্চলের কৃষকরা পরপর দুবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে রবি সরিষার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পর অতি কষ্টে পুনরায় সরিষা চাষ করলেও হঠাৎ এই পোকার আক্রমণে চাষিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। অল্প কিছুদিন হলো বেড়ে ওঠা এই সরিষা অকালেই পোকার আক্রমণের শিকার হওয়ায় ব্যাপক ফসলহানির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। একদিকে সারের দুর্মূল্য ও নকল সারের বাজার সয়লাব অন্যদিকে এসব ধকল কেটে উঠতে না উঠতেই পোকার জ্বালা শুরু হওয়ায় তারা কোনো কূলকিনারা পাচ্ছেন না। উচ্চমূল্যের কীটনাশক স্প্রে করেও পোকার আক্রমণ থেকে সরিষাকে রক্ষা করা যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উদাসীনতা ও অবহেলার দরুন এরূপ পোকার আক্রমণ দ্রুত বিস্তার লাভ করছে। পোকার আক্রমণ এ অঞ্চলে এবারই প্রথম। তাই কৃষকরা এই পোকাকে দমন করার মতো অভিজ্ঞতা না থাকায় তারা হিমশিম খাচ্ছেন। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন খান এ প্রতিনিধিকে জানান, কমন কার্ট ওয়াম নামক পোকার আক্রমণের কথা তিনি শুনেছেন। তিনি বলেন, এ পোকা সন্ধ্যার দিকে উঠে রাতে সরিষা গাছেল গোড়া কেটে ফেলছে। কাজেই সন্ধ্যাবেলার র‌্যালোথিন, ক্যারাটে, মেলাথিয়ন জাতীয় কীটনাশক প্রয়োগের পরামর্শ দেন তিনি।

উত্তরাঞ্চলে আমন ধান কাটা মাড়াই শুরু

২৪.১১.০৮
ডেসটিনি ।। সাইদুর রহমান, জয়পুরহাট

জয়পুরহাটসহ উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার কৃষকরা সাড়ে ৪৩ লাখ মেট্রিক টন উৎপাদনের টার্গেট নিয়ে ধান কাটা শুরু করে দিয়েছেন। বন্যা, খরা আর পাতাপচা রোগের মোকাবেলা করেও ধানের ফলন ভালো হবে জানিয়েছেন কৃষকরা। জয়পুরহাটের ৫ উপজেলার কৃষকরা তাদের জমির ধান কাটার জন্য কৃষকদের কাছে ধর্ণা দিয়ে বেড়াচ্ছে। পরিশ্রম ও কৃষাণের মজুরি বেশি হলেও তারা তাদের জমির ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। জয়পুরহাট সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকার কৃষকরা তাদের জমির আমন ধান কাটা শুরু করে দিয়েছেন। আবার অনেকেই সেই ধান জমি থেকে ঘরে তুলে নিয়ে মাড়াই করারও কাজ শুরু করেছেন। সেই মাড়াই ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এসব এলাকার কৃষক ও কৃষাণিরা। এসব এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার তারা বন্যা, পাতাপচা রোগসহ বিভিন্ন কারণে তাদের জমির ধান ঘরে তুলতে পারবেন কি না এ নিয়ে হতাশ হয়ে পড়লেও শেষ পর্যন্ত তারা তাদের ঘরে জমির ধান তুলতে পেরেছেন। এ জন্য তারা বেজায় খুশি এবং খোশমেজাজে রয়েছেন। নতুন ধান দিয়ে নবান্ন উৎসব করেছেন অনেকে।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর অফিস সূত্রে জানা যায়, জয়পুরহাটসহ উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় চলতি আমন মৌসুমে প্রায় ১৭ লাখ ৪০ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে জয়পুরহাট জেলায় ৭৩ হাজার ৮শ ৮৫ হেক্টর জমিতে আবাদ করে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৪শ ৩৫ মেট্রিক টন, বগুড়া জেলায় ১ লাখ ৯০ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ করে উৎপাদন ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৬শ ৯০ মে. টন, রংপুরে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৮শ ৪০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদ করে উৎপাদন ধরা হয় ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৪শ ৮ মেট্রিক টন। গাইবান্ধা জেলায় ১ লাখ ১৭ হাজার ২শ ১৮ হেক্টর জমিতে আবাদ করে উৎপাদন ধরা হয়েছে ২ লাখ ৭৮ হাজার ৯শ ৭৬ মেট্রিক টন, কুড়িগ্রাম জেলায় ১ লাখ ১৪ হাজার ৪শ হেক্টর জমিতে আবাদ করে উৎপাদন ধরা হয়েছে ২ লাখ ৭১ হাজার ৪শ ৭৬ মেট্রিক টন, লালমনিরহাট জেলায় ৮৩ হাজার ১শ ৫ হেক্টর জমিতে আবাদ করে উৎপাদন ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৭ হাজার ১শ ৭৮ মে. টন, নীলফামারী জেলায় ১ লাখ ১০ হাজার ৮শ ২০ হেক্টর জমিতে আবাদ করে উৎপাদন ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮৫ হাজার ৯শ ২৪ মেট্রিক টন, দিনাজপুর জেলায় ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬শ ৩ হেক্টর জমিতে আবাদ করে উৎপাদন ধরা হয়েছে ৬ লাখ ১৪ হাজার ৪শ ৪০ মেট্রিক টন, ঠাকুরগাঁও জেলায় ১ লাখ ২ হাজার ৩শ ৩২ হেক্টর জমিতে আবাদ করে উৎপাদন ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার ২শ ৮৯ মেট্রিক টন, পঞ্চগড় জেলায় ৭৯ হাজার ৫শ ১০ হেক্টর জমিতে আবাদ করে উৎপাদন ধরা হয়েছে ১ লাখ ৯৫ হাজার ৭শ ২৩ মেট্রিক টন, রাজশাহী জেলায় ৭৯ হাজার ৭শ ৮২ হেক্টর জমিতে আবাদ করে উৎপাদন ধরা হয়েছে ২ লাখ ৭ হাজার ৯শ ৫ মে টন, নওগাঁ জেলায় ১ লাখ ৮৯ হাজার ৫৩ হেক্টর জমিতে আবাদ করে উৎপাদন ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭৫ হাজর ৭শ ৩৫ মেট্রিক টন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৫৩ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ করে উৎপাদন ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৭শ ২১ মেট্রিক টন, পাবনা জেলায় ৪৬ হাজার ৫শ ৫৫ হেক্টর জমিতে আবাদ করে উৎপাদন ধরা হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ৭শ ৭৭ মেট্রিক টন এবং সিরাজগঞ্জ জেলায় ৬২ হাজার ৯শ ৯৪ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদ করে উৎপাদন করা হয়েছে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৮২ মেট্রিক টন ধান।

কালীগঞ্জে ১৪০ বস্তা ভেজাল সার আটক

২৪.১১.০৮
ডেসটিনি ।। কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি

ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ বারবাজারে শনিবার রাতে পুলিশ একটি নকল সার কারখানায় অভিযান চালিয়ে ১৪০ বস্তা ভেজাল সার উদ্ধারসহ ১টি মোটর সাইকেল ও ১টি আলম সাধু গাড়ি আটক করেছে।
পুলিশ জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তারা জানতে পারে বারবাজার বেলাট গলাকাটা মসজিদের পার্শ্বে একটি নকল সার তৈরি কারখানা থেকে ভেজাল সার অন্যত্র নেয়ার উদ্দেশে একটি আলম সাধু গাড়িতে লোড করা হচ্ছে। খবর পেয়ে সুবর্ণ সারা ফাঁড়ি পুলিশ রাতেই উক্ত স্থানে হানা দিলে তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে কারখানার লোকজন পালিয়ে যায়।

সাতক্ষীরায় ১৭০ বস্তা সার উদ্ধার, মামলা

২৪.১১.০৮
ডেসটিনি ।। সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

সদর উপজেলার বেতলা গ্রামে অভিযান চালিয়ে চোরাচালানের উদ্দেশে মজুদ করে রাখা ১০৭ বস্তা টিএসপি সার আটক করেছে বিডিআর। জানা গেছে, বিডি আর গত শনিবার রাত ২টার দিকে বেতলা গ্রামে আব্দুল ছালেকের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় তার বাড়ির একটি পরিত্যক্ত ঘরে মজুদ করে রাখা ১০৭ বস্তা টিএসপি সার উদ্ধার করে। তবে এর সঙ্গে জড়িতদের কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি বলে বিডিআর জানায়। এ ব্যাপারে বিডিআর সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বেতলা গ্রামের মৃত রহিম বক্সের ছেলে আব্দুল সামাদ, একই গ্রামের আখাতুল্লাহ গাজীর ছেলে আব্দুল জব্বার ও ভবানীপুর গ্রামের করিম বক্সের ছেলে আব্দুল মালেককে আসামি করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে।

মিঠাপুকুরে আলুচাষে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা

২৪.১১.০৮
ডেসটিনি ।। মিঠাপুকুর (রংপুর) প্রতিনিধি

ইউরিয়া, টিএসপি, পটাশসহ সব ধরনের কৃষি উপকরণের দাম বৃদ্ধিতে দেশের সর্বোচ্চ আলু উৎপাদনকারী এলাকা হিসেবে খ্যাত মিঠাপুকুর উপজেলায় আলু চাষ নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন কৃষকরা। নানা দ্বিধা আর দ্বন্দ্বের টানাপড়েনে মাঠে আলু চাষ করছেন তারা। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিরা এবার আলু চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। বিশেষ করে সারের মূল্য না কমলে মিঠাপুকুর উপজেলায় এবার ৮ হাজার ১০২ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার আশঙ্কাই বেশি। তবে কৃষি অফিস টার্গেট অনুযায়ীই আবাদের আশাবাদী। তবে আলু আবাদ নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। বলেছেন গত বছরের ৩০০ টাকার ইউরিয়ার বস্তা ৬০০ টাকারও বেশি। ১,৮০০ টাকার টিএসপির বস্তা ৩,৮০০ টাকা, ১,০৫০ টাকার এমপিও (পটাশ) ২,২০০ টাকারও বেশি দিয়ে ক্রয় করে আলু জমিতে ব্যবহার করছেন। এ ছাড়াও এবার দ্বিগুণ বেড়েছে বীজ, শ্রমিক, কীটনাশক, জৈবসার উপকরণের দাম। কৃষকরা জানান, ১ একর জমি আবাদ করতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খরচ পড়বে ৫০-৬০ হাজার টাকার উপরে। এ কারণে ইতিমধ্যেই এ এলাকার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষি আলু আবাদের চিন্তা বাদ দিয়েছেন। অনেকেই দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে সার ক্রয় করে আবার অনেকে পাওয়ার টিলার ও ঘরের আসবাবপত্র এবং আগাম আলু বিক্রি করে চাষ করছেন। বহু ফরিয়া ও লিজ ব্যবসায়ী এখন এ অঞ্চলের মাঠে ছড়িয়ে পড়েছেন। তারা প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষিদের কাছ থেকে জমি লিজ নিয়ে আলুর আবাদ করছেন। একাধিক ফড়িয়া ও লিজ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ হয় এ প্রতিবেদকের। তারা জানান, এবার জমি লিজ পাওয়া যাচ্ছে ঝামেলা ছাড়াই। তবে সারসহ অন্যান্য উপকরণের দাম বেশি হওয়ায় টার্গেট অনুযায়ী আবাদ করার সুযোগ পাচ্ছি না। অন্যদিকে আলুর দাম যদি ভালো পাওয়া না যায় তাহলে আবাদ করে মাঠে মারা যাব। চাষিরা বলছেন, সারের দাম না কমালে এবার এ উপজেলায় কেউই টার্গেট অনুযায়ী আলু আবাদ করতে পারবে না। উপজেলার শাল্টিপাড়া গ্রামের আব্দুল মজিদ খন্দকার, বান্দের পাড়া গ্রামের আ. জলিল, মাহিদুল ইসলাম আউলিয়া, ইকবাল হোসেন, দুর্গামতি গ্রামের আমজাদ হোসেন, আজিজার হোসেন, আ. হাকিম সরকারসহ অনেক কৃষক জানান, সারের দাম বৃদ্ধির কারণে তারা যে জমিতে আলু আবাদের কথা চিন্তা করেছিলেন তা করতে পারবেন না। টার্গেটের চেয়ে তারা ২ থেকে ৩ একর কম জমিতে আলু চাষ করবেন। মিঠাপুকুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা জানান, গত বছরের মতো এবারো বাম্পার ফলন অব্যাহত থাকবে। টার্গেট অনুযায়ী আবাদ হবে।

সিএসআরএলের উদ্যোগে খুলনায় কৃষক-কৃষাণী সমাবেশ শোভাযাত্রা

২৩.১১.০৮
সমকাল ।। খুলনা ব্যুরো

গ্রামীণ জীবনযাত্রার টেকসই উল্পুয়নের জন্য প্রচারাভিযানের (সিএসআরএল) কো¯দ্বাল এরিয়া ক্যা¤েক্সইন গ্র“পের আয়োজনে গতকাল সকাল ১০টায় নগরীর শহীদ হাদিস পার্কে কৃষক-কৃষাণী সমাবেশ ও নগরীতে শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিপর্যয়ের জন্য বিশে^র ধনী দেশগুলো দায়ী। জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশে প্রতিবছর ঘহৃর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, সমুদ্র¯ম্ফীতি, অনাবৃ®িদ্ব, অতিবৃ®িদ্ব বাড়ছে। নদীনালা শুকিয়ে যাওয়ায় জলাব™ব্দতা তৈরি হচ্ছে। লবণাক্ততা মাত্রাতিরিক্ত বাড়ছে। এ বিপর্যয়ের জন্য দায়ী ধনী দেশগুলোকে ক্ষতিপহৃরণ দিতে হবে।
সমাবেশে সভাপতিÍ^ করেন ডুমুরিয়ার কৃষক শেখ আতিয়ার রহমান। প্রধান অতিথি ছিলেন সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক। সভায় প্রস্টøাবনা পাঠ করেন সাংবাদিক ও গবেষক গৌরাঙ্গ নন্দী।
সিএসআরএলের মহাসচিব জিয়াউল হক মুক্তা, হাফিজুর রহমান ভঁহৃইয়া, অ্যাডভোকেট ফিরোজ আহমেদ, আলহাজ মিজানুর রহমান মিজান, মনিরুজ্জামান মনি, রফিকুল ইসলাম খোকন, হায়দার গাজী সালাউদ্দিন রুনু, শ্যামল সিংহ রায়, ব্যবসায়ী মুনির আহমেদ, প্রফেসর ড. আবদুল মাল্পুান, খুলনা প্রেস ক্লাবের সভাপতি ওয়াদুদুর রহমান পাল্পুা, কাউন্সিলর মেমোরী সুলতানা শুনু, ইউপি চেয়ারম্যান শেখ যুবরাজ, কৃষাণী আঞ্জুমানারা বেগম প্রমুখ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।

প্রতি মণের উৎপাদন খরচ ৭৭৬ টাকা বাজারে বিত্রিক্র হচ্ছে সাড়ে পাঁচ শ’

২৩.১১.০৮
সমকাল ।। মোহন আখন্দ, বগুড়া ব্যুরো

‘ইবার (এবার) ধানের যে অবস্ট’া... যারা লিজের (নিজের) জমিত আবাদ করিচে তারা কোনোমতে চলবার পারবি। কিন্তু যারা জমি আদি (বর্গা) লিয়ে (নিয়ে) ধান লাগাছিল তারকেরে (তাদের) খরচের ট্যাকাই উটপি (উঠবে) না’। সদ্য ঘরে তোলা আমন ধানের ফলন নিয়ে এমন মšøব্য কৃষক আফজাল হোসেনের।
ফসফেটিক সারের অভাবজনিত অপু®িদ্ব এবং পোকার আত্রক্রমণে এবার বগুড়ার যে অঞ্চলে আমন ফসলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সেই কাহালু উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা তিনি। কাহালুসহ জেলার পশ্চিমাঞ্চলে নভেল্ফ^রের ™ি^তীয় সপ্টøাহ থেকেই আমন কাটা শুরু হয়েছে। স্ট’ানীয় কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী ইতিমধ্যে ২৫ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। কৃষক আফজাল জানিয়েছেন, ধান জন্ম নেওয়ার মুহহৃর্তে গাছগুলো নানা রোগে আত্রক্রাšø হয়ে পড়ায় ফলন অর্ধেকে নেমে এসেছে। অন্য বছরগুলোতে যেখানে বিঘাপ্রতি (৩৩ শতাংশ জমি) ১০ থেকে ১২ মণ করে ফলন এসেছে সেখানে এখন ৬ মণের বেশি ধান মিলছে না। তার মতে, আবাদের শুরুতে সব ধরনের সারের দাম কয়েকগুণ বাড়ানোর কারণে উৎপাদন খরচ যে হারে বেড়েছে সেই হারে ধানের দাম বাড়েনি। তার ওপর ফলন কম হওয়ায় কৃষক বিশেষত যারা বর্গাচাষী তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।
আমন আবাদের লাভ-লোকসান সল্ফক্সর্কে কৃষক আফজালের দেওয়া বক্তব্যের যথার্থতা খুঁজে পাওয়া গেছে কৃষি বিভাগের হিসাবেও। কৃষি সল্ফপ্রসারণ অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী সব ধরনের সারের মহৃল্যবৃ™িব্দর কারণে এক বছরের ব্যবধানে প্রতিকেজি আমন ধানের উৎপাদন খরচ বেড়েছে ৫ টাকা ৬১ পয়সা। গত বছর প্রতি কেজি আমন ধানের উৎপাদন খরচ ছিল ১৩ টাকা ৮০ পয়সা আর এবার সল্ফ¢াব্য খরচ ধরা হয়েছে ১৯ টাকা ৪১ পয়সা।
কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী প্রতি কেজিতে উৎপাদন খরচ ৫ টাকা ৬১ পয়সা বৃ™িব্দর কারণে গত বছরের তুলনায় এবার ধানের মহৃল্য প্রতি মণে (৪০ কেজির কিছু কম) ২২৪ টাকা ৪০ পয়সা বাড়ার কথা। অর্থাৎ ১৯ টাকা ৪১ পয়সা কেজি হিসেবে প্রতিমণ ধানের মহৃল্য ৭৭৬ টাকা ৪০ পয়সা হওয়ার কথা। কিন্তু গত কয়েক দিনের হাটবাজার ঘুরে দেখা গেছে, গেল আমন মৌসুমের তুলনায় এবার ধানের মহৃল্য ওই হারে বাড়েনি। বাজারভেদে ৫৫০ থেকে ৫৭০ টাকায় বিত্রিক্র হচ্ছে। এবার যে এলাকায় ফলন তুলনামহৃলক ভালো হয়েছে তার মধ্যে পশ্চিম বগুড়ার দুপচাঁচিয়া অন্যতম। ওই এলাকায় কাহালুর চেয়ে গড়ে ২ মণ করে বেশি অর্থাৎ বিঘাপ্রতি ৮ মণ করে ফলন এসেছে।
কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী ৮ মণ ধানের উৎপাদন খরচ দাঁড়ায় ৬ হাজার ২১১ টাকা ২০ পয়সা। কিন্তু বর্তমান বাজারে প্রতি মণ ধানের সর্বোচ্চ মহৃল্য ৫৭০ টাকা হিসাবে ওই ৮ মণের মহৃল্য দাঁড়ায় ৪ হাজার ৫৬০ টাকা। অর্থাৎ কৃষককে প্রতি বিঘায় ১ হাজার ৬৫১ টাকা ২০ পয়সা লোকসান গুনতে হচ্ছে।
দুপচাঁচিয়ার জিয়ানগর ইউনিয়নের খিদিরপাড়া গ্রামের কৃষক হামিদুর রহমান ৩ বিঘা জমিতে আমন আবাদের কথা জানিয়ে বলেন, সারের মহৃল্যবৃ™িব্দর পাশাপাশি ফলন গতবারের তুলনায় কম হওয়ায় বর্গাচাষীরা লোকসানের মুখে পড়েছে। তিনি জানান, জমিগুলো নিজের হওয়ায় ভাড়া বাবদ প্রতি বিঘায় ৩ হাজার করে বাড়তি ১২ হাজার টাকা গুনতে হয়নি বলে কোনোরকমে তার রক্ষা হয়েছে। তার মতে, যারা বর্গাচাষী তাদের প্রত্যেককেই লোকসান দিতে হয়েছে।
কৃষি বিভাগ বীজ থেকে শুরু করে ধান কাটা পর্যšø যে ৯টি খাতে এক বছরে খরচের ব্যবধান তুলে ধরেছে তাতে দেখা গেছে সারের ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বেশি খরচ বেড়েছে। গত মৌসুমে প্রতি কেজি ইউরিয়া ৬ টাকা দরে বিত্রিক্র হলেও এবার সরকারিভাবে তা শতভাগ বৃ™িব্দ করায় ১২ টাকায় গিয়ে ঠেকে। একইভাবে ট্রিপল সুপার ফসফেটের (টিএসপি) মহৃল্য ২৮ টাকা থেকে ১৬০ শতাংশ বেড়ে ৭৩ টাকায় এবং ২৪ টাকা কেজির মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) ৪৫ টাকায় কিনতে হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি বছর ১ জুলাই আমন মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই জুনের মাঝামাঝি থেকে কৃষক জমিতে ফসফেটিক সার প্রয়োগ করে থাকেন। কিন্তু এবার বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের কোনো জেলাতেই নির্ধারিত সময়ে তো নয়ই; এমনকি এক মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও কৃষক চাহিদা অনুযায়ী টিএসপি ও এমওপি সার মেলাতে পারেনি। সময়মতো ওই দুটি সারের যে বরাদ্দ মেলেনি তা কৃষি কর্মকর্তারা স্ট^ীকারও করেছেন। তবে ‘চাকরি বাঁচানোর’ কথা বলে কোনো কর্মকর্তাই বরাদ্দ ও উত্তোলন পরিস্টি’তির পরিসংখ্যান মিডিয়ার কাছে প্রকাশ করতে রাজি হননি।
মাঠ পর্যায়ে কৃষকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, নির্ধারিত সময়ে টিএসপি ও এমপি না পাওয়ার কারণে কৃষক ওই দুটি সার ছাড়াই আবাদে নেমে পড়ে। পরে অনেক দেরিতে সারগুলো ডিলারদের মাধ্যমে বাজারে ছাড়া হলেও দাম গত মৌসুমের তুলনায় ™ি^গুণের বেশি হওয়ায় হিমশিম অবস্ট’ার কারণে কৃষক তা কেনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উচ্চপদস্ট’ এক কৃষি কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেছেন, টিএসপি ও এমওপি সারের ঘাটতির কারণে এবার আমন আবাদে কৃষক পুরোপুরি ইউরিয়া সারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। ফলে ধান গাছ তর তর করে বেড়ে উঠলেও টিএসপি এবং এমওপি সারের অভাবজনিত কারণে অপু®িদ্বতে আত্রক্রাšø বিবর্ণ হতে শুরু করে। গাছে ধান জন্ম নেওয়ার মুহহৃর্তে তা আরো প্রকট আকার ধারণ করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় সবুজ ধান গাছ লাল-হলুদ রঙ ধারণ করার পাশাপাশি অঞ্চলভেদে ধানক্ষেতে মাজরা ও বাদামিসহ নানা ধরনের পোকার উপদ্রবও বেড়ে যায়। বগুড়ার কৃষি সল্ফপ্রসারণ কর্মকর্তা রুস্টøম আলী অবশ্য ধানের ফলন কমে যাওয়ার কথা অস্ট^ীকার করে সমকালকে বলেন, ‘এখন পর্যšø যে ২৫ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে তাতে স্ট^াভাবিক ফলন পাওয়া গেছে’।

সার, তেল, ওষুধে আরও বেশি ভর্তুকি দিতে হবে

২৩.১১.০৮
ইত্তেফাক ।। মুনসী কাওছার উদ্দিন

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এ দেশের অধিকাংশ মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে কৃষিকাজকে অবলম্বন করে। অথচ কৃষিকে অবহেলা করার কারণে দিন দিন আমাদের খাদ্য সমস্যার সন্মুখীন হতে হচ্ছে। কৃষিকে অবহেলা বলছি এই কারণে যে, আমাদের দেশে উৎপাদন পদ্ধতি এখনও মান্ধাতা আমলের রয়ে গেছে। উন্নত বিশ্বের সাথে আমরা তাল মিলিয়ে চলতে পারছি না। বাংলাদেশের কৃষি খাতকে অধিক উন্নতির জন্য কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মী ছড়িয়ে আছে সারা দেশের প্রত্যš- অঞ্চলে। কিন্তু তারা তাদের দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হলেও যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে না নানা কারণে। কেউ কেউ অবহেলা করে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করে আবার কেউ আছে নিবেদিত প্রাণ। আমাদের অধিকাংশ কৃষক অশিক্ষিত হওয়ার কারণে তারা ওষুধ, সারের নানা অপকারিতা সম্পর্কে অবগত না হয়ে মাঠে কাজ করে। ওষুধের বিষক্রিয়ায় কৃষকের চর্মরোগ, ফুসফুসে ব্যথা, শ্বাসকষ্টসহ নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। ওষুধ প্রয়োগের নিয়ম কানুন অনেকেই জানে না। এ ব্যাপারে উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তারা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলেও অনেকক্ষেত্রে মূল কৃষক সে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পায় না বা থাকে না।

আমাদের দেশের আবাদি জমি অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক উর্বর। এই উর্বর জমির যথাযথ ব্যবহার করতে পারি তাহলে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা মোটেও আমাদের পক্ষে কঠিন কাজ হবে না। তবে এ ব্যাপারে সরকারের সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখতে হবে কৃষি খাতে। তৎপর হতে হবে সব মহলকে।

দেশে আজ সার, ওষুধ, ডিজেলের দাম বেশি। ভাল ফলন পেতে হলে এই তিনটি জিনিস খুব দরকারি। অথচ এগুলো এক রকম কৃষকের নাগালের বাইরে। মৌসুমের সময় অনেক কৃষক গ্রামের মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে অথবা ব্যাংক থেকে নানা প্রতিকূল অবস্থা পার হয়ে ঋণ নিয়ে ফসল ফলায়। কখনও দেখা যায় অতিবৃষ্টি, খরা কিংবা সিডরের মত দুর্যোগ এসে ক্ষতি করে ফসল। তখন কৃষকের ভিটেমাটিটুকু চলে যায় দেনার দায়ে। কৃষক হয় পথের ভিখারী। দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হিসেবে গড়ে তুলতে সরকারের নিতে হবে নানা বা¯-বমুখি পদক্ষেপ। সরকারের কৃষি খাতে দিতে হবে ভর্তুকি। না হলে দেশ খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হবে।

ইদানিং জৈব সার নিয়ে নানা কথাবার্তা চলছে। রাসায়নিক সার জমিতে ব্যবহারের ফলে দিন দিন জমির উর্বরাশক্তি হারাচ্ছে। এমন একদিন আসবে জমিতে তখন বেশি সার দিলেও ফসল ফলবে না। ফসলবান্ধক জৈব সার আমাদের উৎপাদন করে জমিতে ব্যবহার করতে হবে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং এর লাইসেন্স দিতে হবে কৃষককে কোনরকম ঝুটঝামেলা ছাড়া। আমাদের অশিক্ষিত কৃষকদের এ কাজে সাহায্য করবে উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তারা। কোন পদ্ধতিতে জৈব সার তৈরি করতে হবে তা শিখিয়ে দেবে কৃষি কর্মকর্তারা। কৃষক তার নিজের প্রয়োজন মাফিক উৎপাদন করবে ফসলবান্ধব জৈব সার। এতে যেমন আর্থিক সাশ্রয় হবে তেমনি জমির উর্বরা শক্তি অক্ষুন্ন থাকবে। অন্যদিকে বালাইদমন যদি প্রাকৃতিকভাবে করা যায় তাহলে ওষুধ খরচটাও বেঁচে যাবে। যেমন সেক্সফেরোমনের (জাদুর ফাঁদ) মাধ্যমে মনিরামপুরের কৃষকরা বালাইদমন করে সাফল্য অর্জন করেছে। এমনি করে আমাদের কৃষি বিজ্ঞানীদের নতুন নতুন প্রাকৃতিক উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে দমন করতে হবে রোগবালাই।

ডিজেলে সরকারকে ভর্তুকি দিয়ে কৃষকের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। কেননা সেচ ব্যবস্থা আমাদের ফসল উৎপাদনের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত।

সারের অগ্নিমূল্য আজ ভাবিয়ে তুলছে কৃষকদের। অনেক কৃষকই প্রয়োজন মাফিক সার সংগ্রহ করতে পারছে না অর্থনৈতিক কারণে। সার সংগ্রহ করতে না পারার ফলে জমিতে সারের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। ফলে উৎপাদন তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারছে না। খবরের কাগজের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই সারের অগ্নিমূল্যের কারণে বিভিন্ন জেলাতে মিছিল মিটিং হয়েছে এবং হচ্ছে।

১০০ দিনের সরকারের কর্মসৃজন কর্মসূচির প্রশংসা না করে পারছি না। তবে জৈব সার গ্রামের সাধারণ মানুষ দিয়ে যেভাবে তৈরি করা হচ্ছে তাতে সবকিছু পরিমাণ মত না থাকলে হিতে বিপরীত হতে পারে। কর্তৃপক্ষের এদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তারপরও একটা কথা থেকে যায়, ১০০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্প সঠিকভাবে বা¯-বায়িত হচ্ছে তা বলা যাবে না। অনেক জায়গা থেকে নানা রকমের দুর্নীতির কথা শোনা যাচ্ছে। তারপরও সরকারকে ধন্যবাদ এমন একটা প্রকল্প হাতে নেওয়ার জন্য।

১ অগ্রহায়ণকে সরকার প্রথম কৃষি দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি সারা দেশে পালিত হয়েছে এই দিবসটি। গণমাধ্যম বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রচার করেছে এই দিবসটি কেন্দ্র করে। বিভিন্ন জেলাতে কৃষরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদযাপন করেছে দিনটিকে। এতদিন কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে কৃষকের কোন বিশেষ দিন ছিল না। সরকারের এই শুভবুদ্ধিকে সাধুবাদ জানাই।

মশলা ফসল চুই চাষের কথা

২৩.১১.০৮
ইত্তেফাক ।। কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন, মোঃ আব্দুর রহমান

চুই বাংলাদেশের একটি অপ্রচলিত মশলা জাতীয় ফসল। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিশেষ করে খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা, যশোর, নড়াইল এসব জেলার চাষিদের কাছে এটি একটি অর্থকরী সমাদৃত মশলা। মাংস ও মাছ রান্নায় মশলা হিসেবে এর জুড়ি নেই। এটি অত্যš- মুখরোচক, শে¬ষানাশক, গায়ে ব্যথা উপশমে অব্যর্থ এবং হজমীকারক হিসেবে বেশ সহায়ক।

পরিচিতি : চুই লতা জাতীয় গাছ। এর কাণ্ড ধূসর এবং পাতা পান পাতার মত সবুজ রঙয়ের। এর কাণ্ডটিই মশলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। চুই সাধারণত দুই প্রকার। একটির কাণ্ড আকারে বেশ মোটা (২০ থেকে ২৫ সেঃ মিঃ), অন্যটির কাণ্ড চিকন, (আকারে ২.৫ থেকে ৫.০ সেঃ মিঃ)। চুই গাছ ৮ থেকে ১০ মিটার পর্যš- লম্বা হয়।

উৎপাদন পদ্ধতি :

জমি ও মাটির প্রকৃতি : দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি এবং পানি নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত ও ছায়াময় উঁচু জমিতে সাধারণত চুই চাষ করা হয়।

রোপণের সময় : বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ (এপ্রিল-মে) এবং আশ্বিন-কার্তিক (অক্টোবর-নভেম্বর) মাস।

বীজ: কাটিং পদ্ধতিতে এর কাণ্ড বা শাখা ৫০ থেকে ৭৫ সেঃ মিঃ লম্বা করে কেটে সরাসরি মাটিতে রোপণ করা হয়। স্থানীয়ভাবে কাটিং বা শাখাকে পোড় বলা হয়। একটি পোড়ে কমপক্ষে ৪/৫ টি পর্বসন্ধি থাকে।

সার প্রয়োগ : চুই চাষে চাষিরা সাধারণত কোন রাসায়নিক সার ব্যবহার করে না। পোড় বা শাখা রোপণের পূর্বে গর্তে পচা আবর্জনা বা ছাই ব্যবহার করে। শুকনো মৌসুমে পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হয়।

বাউনি দেওয়া : আম, জাম, সুপারি, নারিকেল ও কাফলা (জিয়ল) গাছ বাউনি হিসেবে চুই চাষের জন্য ব্যবহৃত হয়। বাউনি না দিলেও মাটিতে বৃদ্ধি পায়। তবে এক্ষেত্রে বর্ষা মৌসুমে গাছের ক্ষতি হয়। কৃষকদের মতে আম ও কাফলা গাছে চাষকৃত চুই খুব সুস্বাদু হয়।

ফসল সংগ্রহ : চুই রোপণের ১ বছরের মাথায় খাওয়ার উপযোগী হয়। তবে ভাল ফলনের জন্য ৫/৬ বছরের গাছই উত্তম।

ফলন : হেক্টর প্রতি প্রায় ২.০ থেকে ২.৫ মেঃ টন ফলন পাওয়া যায়। ৫/৬ বছরের একটি গাছ থেকে প্রায় ১০ থেকে ১৫ কেজি পর্যš- ফলন পাওয়া যায়।

বাজার দর : পাইকারী প্রতি কেজি চুই ৮০ থেকে ১০০ টাকা এবং খুচরা ১৫০ থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রয় হয়।

ব্যবহার : কাণ্ড খাওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। বড় বড় মাছ বা যে কোন মাংসের সাথে খাওয়া যায়। আঁশযুক্ত নরম কাণ্ডের স্বাদ ঝাল। কাঁচা কাণ্ডও অনেকে লবণ দিয়ে খেয়ে থাকেন।

আধুনিক পদ্ধতিতে চুই ফসল চাষ করলে কৃষকের দারিদ্র্যবিমোচন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এটি বিশেষ অবদান রাখতে পারে। বিশেষ করে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষকদের কাছে এটি একটি অর্থকরী ফসল হিসেবে পরিগণিত।

মঙ্গার অভিশাপ মুক্তিতে ব্রি ধান-৩৩

২৩.১১.০৮
মন্তব্য প্রতিবেদন
ইত্তেফাক ।। শাইখ সিরাজ

উত্তরাঞ্চলে মঙ্গা একটি পরিচিত শব্দ এবং প্রতিবছরই আশ্বিন কার্তিক মাসে এর অভিশাপ জনজীবনকে পর্যুদ¯- করে দেয়। এই অঞ্চলের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর দিন কাটে ক্ষুধার সঙ্গে যুদ্ধ করে। দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষগুলোর কাজ থাকে না। কাজের সন্ধানে তারা পাড়ি জমায় দূর শহরে। আর অশিক্ষার কারণে এই অঞ্চলগুলোতে জনসংখ্যা একেবারেই অনিয়ন্ত্রিত। প্রতিদিনই যেন যোগ হচ্ছে খাবারের নতুন মুখ।

লক্ষ্য করা গেছে, আশ্বিনের শুরুতে বা সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝিতে শুরু হয় এই মঙ্গা। থাকে কার্তিকের শেষ অর্থাৎ ধান কাটার আগ পর্যš-। এই এলাকার কৃষকরা আমন মৌসুমে ব্যাপকভাবে বিআর ১১, স্বর্ণা ইত্যাদি ধানের চাষ করে থাকেন। এসব ধানের জীবনকাল ১৪৫ থেকে ১৭০ দিন পর্যš-। সাধারণত কৃষকরা জৈষ্ঠ্য থেকে আষাঢ় মাসে বীজতলায় বীজ বপন করেন এবং পরবর্তীতে প্রায় দেড় দুই মাস বয়স্ক চারা জমিতে রোপণ করেন। এরপর নভেম্বর থেকে মধ্য ডিসেম্বরে কৃষকরা এই ধান কাটেন। ধানকাটার দুই মাস আগে থেকেই ধানের জমিতে কোন কাজ থাকে না। আর উত্তরাঞ্চলে আমন ধানই একমাত্র ফসল যেখানে ১০০ ভাগ কৃষকই এই ধান উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। সরকারি বেসরকারি সংস্থার জরীপে স্পষ্টতই প্রমাণিত হয়েছে যে, আমন ধান কাটা যদি অগ্রহায়ণ মাসের পরিবর্তে কার্তিক মাসে সম্ভব করা যায় তাহলে মঙ্গা উত্তরণ করা সম্ভব।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত আমন মৌসুমে স্বল্প সময়ের ধান ব্রি ধান-৩৩ এই সমস্যা সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে। এ বছরই দেখা গেছে এর দারুণ সফলতা। যার কারণে এবার ‘মঙ্গা’ শব্দটি আর ইস্যু হয়ে উঠতে পারেনি। এবারই প্রথম কার্তিক পার হয়েছে মঙ্গার হাহাকার ও রাজনৈতিক প্রচার অপ্রচার ছাড়া। ব্রি ধান-৩৩ নিয়ে প্রথম থেকেই গবেষণা করেছেন ব্রি’র মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আব্দুল মজিদ। তিনি জানান, এই জাতের ধান পাকতে সময় লাগে ১১৫ থেকে ১১৮দিন। পক্ষাš-রে বিআর ১১সহ অন্যান্য জাতের ধান পাকতে সময় লাগে ১৪৫ থেকে ১৬০ দিন। সেই সঙ্গে ধানের চারা রোপণের পরিবর্তে অংকুরিত বীজ সরাসরি ড্রাম সিডারের মাধ্যমে সরাসরি বুনে দেখা গেছে প্রকৃত সময়ের চেয়ে ১৫ থেকে ২০ দিন আগেই ধান পেকে যায়। ফলনও পাওয়া যায় ১০-১২ ভাগ বেশি। ২০০৪ সাল থেকে এ বছর পর্যš- সরকারি বেসরকারি সংস্থার সহায়তায় উত্তরাঞ্চলের ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে ছড়ানো গেছে ব্রি ধান-৩৩ এর আবাদ। আমন মৌসুমে ব্রি ধান-৩৩ সরাসরি বোনা পদ্ধতিতে উৎপাদন করে প্রায় একমাস আগেই ধান কাটতে পেরেছেন। এতে কৃষি শ্রমিকরা যেমন আগাম ধান কাটার কাজ পেয়েছেন। তাকে এবং তার পরিবারকে মঙ্গার কষ্ট সহ্য করতে হয়নি। এ বছর উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড় ও লালমনিরহাট জেলায় এবার মঙ্গা প্রতিরোধের লক্ষ্য থেকে কৃষকরা ব্রি ধান-৩৩ আবাদ করেছে। ইতোমধ্যে সাফল্যজনক ফলাফলও পেয়েছেন। সত্যিই, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত ধান এর মাধ্যমে দীর্ঘদিনের একটি সমস্যা লাঘবের এই প্রয়াস দারুণভাবেই প্রশংসনীয়। এর জন্য ধান বিজ্ঞানী ড. আব্দুল মজিদ, বেসরকারি সংস্থা আর ডি আর এস-এর কৃষি সমন্বয়ক এম জি নিয়োগীসহ সংশি¬ষ্ট বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি সংস্থার নিষ্ঠাবান কর্মকর্তাদের প্রতি জানাই আš-রিক ধন্যবাদ।

খাদ্যশস্য উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের স্থান অষ্টমে। তারপরেও প্রাকৃতিক বিপর্যয়সহ নানা কারণেই এদেশের প্রাšি-ক পর্যায়ের জনগোষ্ঠীকে এক ধরণের খাদ্যাভাব মোকাবিলা করতে হয়। আর উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলার মানুষের এই অভাব নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চিত্রও দেখা যায়। অথচ মানুষের সংকট ও সমস্যা সমাধানের কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায় না। পর পর কয়েক বছর ধরে বি¯-ৃতি লাভ করা বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত ব্রি ধান-৩৩ প্রাšি-ক জনগোষ্ঠীর দীর্ঘ সংকটের অনেকটাই নিরসন করেছে। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত জাতগুলো নিয়ে আরও গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। যেগুলোর মধ্য দিয়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয় সহনশীলসহ বিভিন্ন এলাকার ভূ-প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ উৎপাদনের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়। হাজারও প্রতিকূলতার মধ্যেও আমাদের খাদ্যশস্য উৎপাদনের সাফল্য পৃথিবীর অনেক দেশকেই আর্থসামাজিক উন্নয়নের পথ দেখাচ্ছে। শুধু মানুষের খাদ্যাভাব মোবাবিলাই নয়, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা পূরণের জন্য আমাদের নিজস্ব সম্পদের আরও পরিকল্পিত ব্যবহার প্রয়োজন। প্রয়োজন উৎপাদন কৌশলে আরও সুদূরপ্রসারি টেকসই কার্যক্রম গ্রহণ।

বিনা চাষে আলু আবাদ

২৩.১১.০৮
ইত্তেফাক ।। মাটি ও মানুষের কৃষি

গত বছর মুন্সিগঞ্জসহ অন্যান্য জেলায় আলুর ফলন ভাল হওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় কোল্ড-স্টোরেজ সংকটে পড়ে অনেক আলু নষ্ট হয়ে যায়। তারপর আবার এবার সার, কীটনাশকসহ অন্যান্য উপকরণের দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় চাষ খরচও বেড়ে গিয়েছে কয়েকগুণ। তাই এবার সেসব এলাকার অনেক কৃষকই তাদের আলু চাষের জমি কমিয়ে আনতে পারেন। তাই এবার আলু চাষ বেশ লাভজনক হবে বলে ধারণা করা যায়। তবে খরচ কমিয়ে এই ফসল চাষ করার পদ্ধতিও আছে। এটি কৃষকের জন্য অনেক সাশ্রয়ী হবে, তেমনি অনেক পতিত জমিও চাষের আওতায় আসবে।

জোয়ার প¬াবিত দক্ষিণাঞ্চলে আমন ধান কাটার পর মাটি শুকাতে অনেক বেশি সময় নেয়ায় সঠিক সময়ে আলু চাষ করা কঠিন হয়ে পড়ে। দেরীতে আবাদের জন্য ফলনও অনেক কমে যায়। তাই যেসব এলাকা নীচু এবং বর্ষার পানি নামতে দেরী হয় সেখানে কৃষকরা বিনা চাষে আলু আবাদ করতে পারেন। এভাবে আবাদের ফলে চাষ খরচ অনেক কম যায় কারণ কচুরিপানার লাভজনক ব্যবহার হয়, একে মালচিং দ্রব্য হিসেবে ব্যবহার করে মাটির রস সবসময় সংরক্ষণ করা য়ায়, সেচ খরচ সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখা যায়, অনেক কম রাসায়নিক সার দরকার হয়, জমিতে আগাছা কমে যায়, আলু বেশি সুস্বাদু হয় এবং এর আকারও অনেক বড় হয়।

এভাবে আলু চাষের জন্য এমন জমি নির্বাচন করতে হবে যেখানে বৃষ্টিপাত হলে পানি জমে না। সাধারণত উচ্চ ফলনশীল এবং স্থানীয় জাতের ধান কাটার পর জমি ফাঁকা হবার সঙ্গে সঙ্গেই আলু আবাদের সুযোগ ঘটে। কাছাকাছি নদী বা পুুকুরে কচুরীপানার উৎস থাকতে হবে। নভেম্বর মাসের শেষ পর্যš- এ আলু চাষের উপযুক্ত সময়। তবে ডিসেম্বরের ১০ তারিখ পর্যš- বিরনা চাষ পদ্ধতিতে আলু আবাদ সম্ভব।

বীজ ব্যবস্থাপনা : হিমাগারে সংরক্ষিত অনুমোদিত জাত যেমন- কার্ডিনাল, ডায়মন্ড ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রতি শতকে ৬-৮ কেজি বীজের দরকার হবে। ২৫-৩০ গ্রাম ওজনের ছোট আলু বা বড় আলুর কমপক্ষে দুই চোখ বিশিষ্ট কাটা অংশই আলুর বীজের জন্য ভাল। কাটা অংশে ছাই লাগিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। রোপণের আগে এসব বীজ অনুমোদিত ছত্রাকনাশক (যেমন-ব্যাভিস্টিন বা ডাইথেন এম-৪৫) দিয়ে শোধন করে নেয়া ভাল। ২০ ইঞ্চি দূরে সারি করে ১০ ইঞ্চি দূরে প্রতিটি বীজ আঙুলের চাপ দিয়ে বসিয়ে দিতে হবে। যদি মাটি কিছুটা শক্ত হয় তবে হাত লাঙল টেনে ১০ সেঃ মিঃ গভীর করে নালায় বসিয়ে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।

সার ব্যবস্থাপনা : বীজ রোপণের আগে শতক প্রতি ১.৩ কেজি ইউরিয়া এবং আধা কেজি টিএসপি প্রয়োগ করতে হবে। বীজ রোপণের আগের দিন পটাশ ও গোবর সার একত্রে মিশিয়ে ছিঁটিয়ে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে বীজের গায়ে যেন কোনভাবেই রাসায়নিক সার না লাগে।

মালচিং বা আচ্ছাদন : কচুরিপানা, খড়, নাড়া ইত্যাদি আচ্ছাদন হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। নদী বা খাল থেকে কচুরীপানা তুলে রেখে দিয়ে পানি ঝরিয়ে নিয়ে শুকালে সেটি আচ্ছাদন হিসেবে ভাল হয়। খড় বা নাড়াকে আচ্ছাদন হিসেবে ব্যবহার করলে ইঁদুরের আক্রমণ বাড়তে পারে। বীজ আলু লাগানোর পরপরই ৪-৬ ইঞ্চি পুরু করে আচ্ছাদন দিতে হবে। বীজ আলু সম্পূর্ণরূপে আচ্ছাদিত হতে হবে না হলে আলুর গায়ে সবুজ মেলানিনের দাগ পড়ে যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। আবার আচ্ছাদন বেশি হলে গাছ বের হতে সমস্যায় পড়ে।

রোগবালাই : কাটুই পোকার কীড়া চারাগাছ কেটে দেয় এবং ছিদ্র করে ফসলের ক্ষতি করে। এই পোকা দিনের বেলা মাটির নীচে লুকিয়ে থাকে। এই পোকার উপদ্রব খুব বেশি না হলে কাটা গাছের কাছাকাছি মাটি খুঁড়ে কীড়া সংগ্রহ করে মেরে ফেলতে হবে। উপদ্রব বেশি হলে ক্লোরোপাইরিফস (ডারসবান) ২০ ইসি ৫ মিলি হারে মিশিয়ে গাছের গোড়া ও মাটি ¯েপ্র করে ভিজিয়ে দিতে হবে। আলু লাগানোর ৩০-৪০ দিন পর এটা করা দরকার। বাড়িতে সংরক্ষিত আলুতে সুতলী পোকা লম্বা সুড়ঙ্গ করে। পরে এটি অন্যান্য আলুর মধ্যেও ছড়িয়ে যায়। এজন্য বাড়িতে আলু সংরক্ষণের সময় ছাই, তুষ অথবা কাঠের গুঁড়ো দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। আলু সংরক্ষণের আগে আক্রাš- আলু বাছাই করে ফেলে দিতে হবে। জাবপোকা গাছের রস চুষে খায় এবং ভাইরাস রোগ ছড়ায়। প্রতি ৭ দিন পর ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি ১০ মিলি ১০লিটার পানিতে মিশিয়ে ¯েপ্র করতে হবে। উড়চুঙ্গা রাতে গর্ত থেকে বের হয়ে গাছের শেকড় ও কাণ্ড খেয়ে ফেলে। বিষটোপ ব্যবহার করে অথবা গর্ত থেকে পোকা বের করে মেরে ফেলতে হবে।

লেট ব¬াইট বা আলুর মড়ক রোগ হলে প্রথমে পাতা, ডগা ও কাণ্ডে ছোট ছোট ভেজা দাগ পড়ে। পড়ে এটি বড় হয়ে পুরো গাছে ছড়িয়ে পড়ে। বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা বেশি থাকলে ২-৩ দিনের মধ্যে পুরো ক্ষেতে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে। আক্রাš- ক্ষেতে পোড়া গন্ধ পাওয়া যায় যেন ফসল পুড়ে গিয়েছে। প্রতিকারের জন্য সুষম সার এবং সময়মত সেচ প্রয়োগ করতে হবে। রোগ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোভরাল অথবা ডাইথেন এম-৪৫, ২০ গ্রাম ১০ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পরপর ¯েপ্র করতে হবে।

এভাবে রোগবালাইয়ের হাত থেকে রক্ষা করে আবাদ করলে হেক্টর প্রতি ২৫-৩০ টন আলু ফলানো সম্ভব। আর স্বাভাবিকভাবে আলু চাষ করতে কৃষকের যে খরচ তাতে কৃষকের পুষিয়ে ওঠা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। আর বিনাচাষে এই পদ্ধতিতে আলু চাষ করলে চাষ খরচ প্রায় তিন চতুর্থাংশে নেমে আসে। - মাজহার মিলন

নোয়াখালীতে ৫ সার ব্যবসায়ীর ডিলারশিপ বাতিলের সিদ্ধান্ত

২৩.১১.০৮
ডেসটিনি ।। নোয়াখালী অফিস

নোয়াখালী জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটি বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে সদর ও হাতিয়া উপজেলার ৫ জনের সারের ডিলারশিপ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা যায়। নোয়াখালী জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সভায় ২নং আলোচনায় সদর উপজেলার মেসার্স খান অ্যান্ড সন্স ও মেসার্স জয়নাল আবেদীন ইউনিয়নের সমন্বয় হতে ইচ্ছুক না থাকায় উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে এবং সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ সংক্রান্ত সমন্বিত পদ্ধতি ’০৮-এর ১-২ বিধি মোতাবেক তাদের ডিলারশিপ বাতিলযোগ্য বিধায় ওই ২ ডিলারের ডিলারশিপ বাতিল করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

খুলনায় কৃষক-কৃষাণি র‌্যালি ও সমাবেশে বক্তারা ।। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিপর্যয়ের জন্য বিশ্বের ধনী দেশগুলো দায়ী

২৩.১১.০৮
ডেসটিনি ।। খুলনা ব্যুরো

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, সমুদ্রস্ফীতি, অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি বাড়ছে। নদীনালা শুকিয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে। লবণাক্ততা মাত্রাতিরিক্ত বাড়ছে। এই বিপর্যয়ের জন্য দায়ী ধনী দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। গতকাল শনিবার বেলা ১০টায় খুলনার শহীদ হাদিস পার্কে কৃষক-কৃষাণির সমাবেশ ও কৃষাণি আঞ্জুমানারা বেগম এ কথা বলেন। গ্রামীণ জীবনযাত্রার স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের জন্য প্রচারাভিযানের (সিএসআরএল) কোস্টাল এরিয়া ক্যাম্পেইন গ্রুপ এই সমাবেশের আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্বে করেন ডুমুরিয়ার কৃষক শেখ আতিয়ার রহমান। প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। সভায় প্রস্তাবনা পাঠ করেন সাংবাদিক, লেখক, গবেষক গৌরাঙ্গ নন্দী। সমাবেশে জেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে ৫ হাজারেরও বেশি কৃষক-কৃষানি অংশগ্রহণ করেন।
সমাবেশে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিএসআরএলের মহাসচিব জিয়াউল হক মুক্তা, হাফিজুর রহমান ভূঁইয়া, অ্যাডভোকেট ফিরোজ আহমেদ, আলহাজ মিজানুর রহমান প্রমুখ।

কৃষিঋণ ও পুনঃঅর্থায়ন নীতিমালা প্রসঙ্গ

২৩.১১.০৮
ডেসটিনি ।। মো. আবদুস সালিম

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ হওয়ায় কৃষিতে স্বনির্ভরতা অর্জনে যা প্রয়োজন তা খুবই জরুরি। নানা সময়ে সরকার কৃষির উন্নয়নে নানা কার্যক্রম গ্রহণ করে। কিন্তু সেসবের কাক্সিক্ষত সুফল সাধারণ কৃষক তথা দেশের মানুষ তেমনভাবে ভোগ করতে পারেন না। কৃষক তথা কৃষির সবচেয়ে বড় পিছুটান হচ্ছে আর্থিকসংকট সমস্যা। এ সমস্যাকে পুঁজি করে স্বার্থান্বেষী মহল যেমন দাদন ব্যবসায়ী, বর্গাচাষি ইত্যাদি শ্রেণীর লোক মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এখন পর্যন্ত সরকার এদের দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না। এর ওপর আবার রয়েছে প্রভাবশালীদের দাপট। তাদের দাপটের কারণে প্রকৃত দরিদ্র কৃষকরা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সহজে ঋণ পান না। ফলে প্রদত্ত ঋণের সুবিধাও পাওয়া যায় না। অথচ কৃষির উৎপাদনের ওপরই বেশি নির্ভর করে দেশের আয়-ব্যয়ের হিসাব। কৃষির উন্নয়নের ওপর নির্ভর করে জাতীয় উন্নয়ন। কৃষিনির্ভর নয় এমন দেশ যদি কৃষিতে স্বনির্ভরতা অর্জন করতে পারে তবে আমরা তা অর্জন করতে পারবো না কিসের জন্য। এসব ক্ষেত্রে সরকার একটু আন্তরিক হলেই দেশের কৃষি খাতের চেহারা খুব সহজেই পাল্টে যেতে পারে।
সরকার কৃষির উন্নয়নে কমবেশি নজর দিয়েছে বলতে হয়। কেননা কৃষিঋণ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন নীতিমালায় নমনীয়তা আসছে বলে জানা গেছে। অর্থাৎ সরকার কৃষিঋণ বাড়ানোর ওপর নজর দিয়েছে। সরকারি বন্ডের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরাসরি বা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো থেকে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা ভোগ করতে পারবে। সেই মোতাবেক কাজ শুরু করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বেশি পরিমাণে ঋণ দিয়ে আর্থিকভাবে কমবেশি ক্ষতির শিকার হয় ব্যাংকগুলো। তাই ব্যাংক যাতে কোনো ধরনের আর্থিক সংকটে না পড়ে সেজন্য এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
চলতি ২০০৮-০৯ অর্থবছরের শুরুতে কৃষিঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে নজরদারি বাড়ানো হয়। ব্যাংক ও অপরাপর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে গত অর্থবছরের (২০০৭-০৮) চেয়ে প্রায় ১০ শতাংশ বাড়িয়ে টার্গেট বেঁধে দেয়া হয়। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো লক্ষ্যমাত্রা তেমন বাড়াতে পারেনি। মাত্র ৫ শতাংশ বাড়াতে সক্ষম হয়। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এতে রীতিমতো নাখোশ হয়। নানা দিক বিবেচনায় চলতি অর্থবছর থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি সব ব্যাংকের ওপর কৃষিঋণ বিতরণ কার্যক্রম বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কেননা দু-একটি ব্যাংক ছাড়া বেশিরভাগ ব্যাংক তথা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কৃষির উন্নয়নে তেমন জোরালো ভূমিকা নেই। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যথেষ্ট ভূমিকা পালন করছে। তবে তাদের সেবা আরো বাড়ানো উচিত বলে সংশ্লিষ্টরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
পুনঃঅর্থায়ন সুবিধার আওতায় পাওয়া ঋণ কেবল কৃষিখাতে বিতরণ করা হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সব ধরনের সহযোগিতা করবে বলে আশ্বাস দেয়। কারণ আমাদের দেশে কৃষিক্ষেত্রে প্রদত্ত ঋণের অর্থ শিল্পসহ অন্যান্য খাতে ব্যবহার করা হয়। তাতে কৃষির কোনো কাজে আসে না। অথচ শিল্প খাতে প্রদত্ত ঋণের অর্থ কৃষিখাতে ব্যবহার হয় বলে শোনা যায় না। এতে সহজে বোঝা যায়, দেশের কৃষিখাত এখনো তিমিরেই রয়েছে। মোট ঋণের প্রায় ৯০ ভাগ বিতরণ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এসবের মধ্যে থেকে কেবল রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি) কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা ভোগ করতে পারে না। কারণ ওইসব ব্যাংক বাণিজ্যিক খাতেও ঋণ বিতরণ করে থাকে। অনেক ব্যাংক কৃষি খাতের চাইতে বাণিজ্যিক খাতে বেশি ঋণ দেয়। অথচ কৃষি খাতে ঋণ দিলে তা সহজে ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকে, যদি কোনো কারণে ক্ষেতের ফসলহানি না ঘটে। অথচ বেশিরভাগ ব্যবসায়ী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা আর সময়মতো পরিশোধ করেন না বা একেবারেই পরিশোধ না করার চিন্তাভাবনা করেন। যে কারণে দেশে ঋণখেলাপি উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় ধরনের বাধা। এ পর্যন্ত কোনো সরকার ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্য দিয়ে পাওনা অর্থ ফেরত দেয়ার নজির সৃষ্টি করতে পারেনি। অথচ কৃষকরা যে সামান্য অর্থ ঋণ হিসেবে নেন তা আদায়ের জন্য ব্যাংক তথা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যস্ত হয়ে যায়। কৃষিক্ষেত্রে বিদেশি ব্যাংকগুলোর তেমন ভূমিকা না থাকলেও তারা এনজিওর মাধ্যমে কৃষিঋণ বিতরণ করে থাকে। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে তাদের স্বচ্ছতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। ব্যাংক দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ৮টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যেমন সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, রাকাব, বিকেবি, বিআরডিপি ও সমবায় ব্যাংক দেশের মোট কৃষিঋণের প্রায় ৯০ শতাংশ বিতরণ করে থাকে। চলতি অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে প্রায় ৭ হাজার ১৬৫ কোটি টাকা। বিপরীতে বেসরকারি ব্যাংকগুলো কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করেছে প্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এদিকে গত বছর রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় ৬ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকা এবং বেসরকারি ব্যাংকগুলো কৃষিঋণের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করেছিল প্রায় ৯৬০ কোটি টাকার। চলতি ২০০৮-০৯ অর্থবছরে সোনালী ব্যাংক ৬৭০ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংক ৬৬ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংক ৪৩৮ কোটি টাকা, বিকেবি প্রায় ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা, রাকাব ৮৫০ কোটি টাকা, সমবায় ব্যাংক ৪৫ কোটি টাকা এবং বিআরডিবি ৭৪৫ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বলে জানা গেছে।
কৃষিঋণ বিতরণের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় তা আশানুরূপ বাস্তবায়িত না হওয়ার পেছনে সংশ্লিষ্টরা বিভিন্ন ব্যাংক তথা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থসংকটকেই বেশি দায়ী করছেন। নানা দুর্নীতি ও অনিয়ম এসব বিষয়কে আরো বেশি করে বাধাগ্রস্ত করেছে। যে কারণে কৃষিখাতে বড় বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ প্রবণতা একেবারেই কম। তবে গোটা বিশ্বে খাদ্যসংকট যে প্রকট আকার ধারণ করেছে তাতে এসব ক্ষেত্রে টনক নড়া অস্বাভাবিক নয়। উন্নত বিশ্বে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা করতে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলো শুধু বাড়ালেই চলবে না বরং ঋণের অর্থ প্রকৃত কৃষকরা পান কি না সেটাও তদারকি করতে হবে। আমাদের দেশে এ সংক্রান্ত বেশিরভাগ কাজকর্ম চলে গতানুগতিক নিয়মে। যে কারণে কাক্সিক্ষত সুফল পাওয়া যায় না। তাই গতানুগতিক ধারার পরিবর্তন প্রয়োজন। সরকার উন্নয়নের অনেক ক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে থাকে। তাই প্রাইভেটাইজেশনের চিন্তাভাবনা করতে হয়। যা হোক, দেশের কৃষিখাতের উন্নয়নে শুধু ঋণ প্রদানের মধ্যে সরকারকে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না, পাশাপাশি অন্য বিষয়গুলোর ওপরও নজরদারি বাড়াতে হবে। প্রতি কৃষি মৌসুমেই সারসংকট মারাত্মক আকার ধারণ করে। এবারো এর ব্যতিক্রম নয়। দেশে জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান চাপে দৈনিক গড়ে প্রায় ২৩৫ হেক্টর করে আবাদি জমি কমে যাচ্ছে। খাদ্য উৎপাদন বাড়লেও চাহিদার তুলনায় তা অনেক কম। উচ্চফলনশীল জাতের ফসলের আবাদ বাড়লেও তা তেমন কাজে আসছে না। এসব কারণে কৃষিঋণ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন কার্যক্রম কতটুকু সফলতা বয়ে আনবে তা নিয়ে নানা দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

আলুর জমিতে তামাক বিকল্কপ্প পণ্যের উদ্যোগ জরুরি

২২.১১.০৮
সমকাল ।। সম্পাদকীয়

ব্রিটিশ আমলে নীলচাষ করতে বাধ্য করা হয়েছিল এদেশের কৃষকদের। আর এখন চলছে অর্থ ও মনস্টøত্ত্বের লড়াই। মহৃল্য নিয়ে আলুচাষীদের অব্যাহত শগ্ধকাকে কাজে লাগিয়ে তামাক চাষের উজ্জ্বল সল্ফ¢াবনা দেখছেন ব্যবসায়ীরা। একবারও কি তারা জনস্ট^াস্ট’্য ও কৃষকদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভেবেছেন? ধহৃমপান নিরুৎসাহিত করার উদ্যোগের পর তামাক চাষ ও সিগারেট বিত্রিক্র বেড়ে যাওয়া অত্যšø উ™ে^গের। জাতীয় রাজস্ট^ বোর্ডকে টোব্যাকো কো¤ক্সানিগুলোর মহৃল্য সংযোজন করের পরিমাণ বৃ™িব্দর পরও সিগারেট বিত্রিক্রর হার ঊর্ধ্বমুখী। আইন করে হয়তো সিগারেটের বিজ্ঞাপন প্রচার ঠেকানো গেছে কিন্তু তামাক ব্যবসায়ীদের তৎপরতা ঠেকাবে কে? স¤ক্স্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে তামাক ব্যবসায়ীদের দৌরাÍে§্যর ফলে আলু চাষের জমিতে তামাক চাষের যে চিত্র ফুটে উঠেছে তা রীতিমতো উ™ে^গের।
তামাক আমাদের দেশের অন্যতম অর্থকরী ফসল। এটি চাষও লাভজনক। উ™ে^গের বিষয় হলো, সিগারেটের বিজ্ঞাপন প্রচার ও জনসমক্ষে ধহৃমপান নিষি™ব্দ হওয়ার পর চাষীদের জন্য তামাক চাষ আরো লাভজনক হয়ে উঠেছে। জনশ্র“তি আছে, তামাক ব্যবসায়ীরা আগে বিজ্ঞাপন খাতে যে অর্থ ব্যয় করতেন এর পুরোটাই এখন ব্যয় করছেন তামাক চাষে কৃষকদের আগ্রহী করে তুলতে। তামাক চাষ যেহেতু দেশে নিষি™ব্দ নয় তাই তামাক ব্যবসায়ীরা এ বিনিয়োগকে বৈধ বলেই দাবি করার সুযোগ পাবেন। কৃষকদেরও অধিকার আছে, যে ফসলে বেশি লাভ হবে সে ফসল চাষ করার। যেহেতু আমরা ধহৃমপান নিরুৎসাহিত করছি সেহেতু তামাক ও তামাকজাত পণ্যের উৎসগুলো নিয়েও ভাবতে হবে। আলুর দাম নিয়ে দুশ্চিšøায় আছেন মুন্সীগঞ্জসহ দেশের আলুপ্রধান বিভিল্পু জেলার কৃষকরা। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিনামহৃল্যে তামাক বীজ, সার ও সেচের জন্য অগ্রিম অর্থ দিচ্ছেন তামাক ব্যবসায়ীরা। আলুর বিকল্কপ্প হিসেবে যদি কোনো ফসল চাষ করতেই হয় তবে সবার জন্য প্রয়োজনীয় ও লাভজনক এমন ফসলই চাষ করা উচিত। বস্ট‘ত তামাক ব্যবসায়ীদের প্রলোভন থেকে কৃষকদের বাঁচাতে হলে অন্য ফসলের জন্য তামাক চাষে প্রাপ্টø সুবিধার অনুরূপ বা এর চেয়ে বেশি সুবিধা দিতে হবে। দুমর্হৃল্যের বাজারে বীজ, সার ও সেচ সুবিধা প্রাপ্টিø যে ক®দ্বসাধ্য তাতে কোনো নীতিকথায় কাজ হবে না। আর জনসমক্ষে ধহৃমপান নিষি™ব্দ করার আইনটি কেবল কাগুজে আইনে পরিণত হওয়ার আগেই তা বাস্টøবায়নের সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি।

সেচ মৌসুমে চাষাবাদ ব্যাহত ও শহরে লোডশেডিং বৃদ্ধির আশংকা

২২.১১.০৮
ডেসটিনি ।। সমকাল প্রতিবেদক

আসছে সেচ মৌসুমে মহানগরী ও শহর এলাকায় লোডশেডিং বাড়তে পারে। তবে শহরে লোডশেডিং করে সেচ কাজে নিরবচ্ছিল্পু বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রেখেও সেচ কাজে শতভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না সরকার। কারণ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে গ্যাসের সরবরাহ আরো কমে যাওয়ার সল্ফ¢াবনায় বিদ্যুৎ উৎপাদনও কমে যাবে বলে বোরো চাষাবাদও ব্যাহত হওয়ার প্রবল আশগ্ধকা দেখা দিয়েছে। যদিও সরকার আশা করছে, বোরো চাষাবাদে তেমন সমস্যা হবে না। নলকূপগুলো ভালোভাবে চালানোর জন্য বিদ্যুৎ ও ডিজেল সরবরাহে সার্বিক প্রস্ট‘তি নেওয়া হয়েছে। আগামী জানুয়ারিতে সারাদেশে পুরোদমে বোরো চাষাবাদ শুরু হবে। অবশ্য দেশের কোনো কোনো এলাকায় ডিসেল্ফ^র থেকেই এ চাষাবাদ শুরু হয়।
সেচ মৌসুমে নিরবচ্ছিল্পুভাবে ডিজেল ও বিদ্যুৎ সরবরাহ করার প্রস্ট‘তি নেওয়ার উদ্দেশ্যে গত বৃহ¯ক্সতিবার বিদ্যুৎ বিভাগে এক আšøঃমšúণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিদ্যুৎ সচিব ড. এম ফাওজুল কবির খানের সভাপতিÍে^ অনুষ্ঠিত সভায় বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংস্ট’াগুলোর প্রধান, জ্বালানি তেল বিপণনকারী সরকারি বিভিল্পু কো¤ক্সানি, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন, কৃষি মšúণালয়, বিআইড¦িèউটিএসহ সংশিè®দ্ব বিভিল্পু সংস্ট’ার প্রতিনিধিরা উপস্টি’ত ছিলেন। সভা শেষে সচিব ফাওজুল কবির খান এ বিষয়ে সমকালকে বলেছেন, ‘সরকার আশা করছে, গতবারের মতো এবারো ভালোভাবে কৃষকরা সেচকাজ করতে পারবেন। সেচকাজে যাতে কোনো সমস্যা না হয় সেজন্য সার্বিক প্রস্ট‘তি নেওয়া হচ্ছে।’ তবে তিনি উ™ে^গ প্রকাশ করে বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রস্ট‘ত রয়েছে। কিন্তু গ্যাসের সরবরাহ নিয়ে কিছুটা সমস্যা আছে। গ্যাস সরবরাহ ঠিক থাকলে বিদ্যুতের সরবরাহে কোনো সমস্যা হবে না বলে তিনি জানান। সভা সহৃত্রে জানা গেছে, কাপ্টøাই হ্রদে পানি কমে গেছে। ফলে এ কেন্দ্রটি থেকে আশানুরূপ বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে না। এজন্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে সেচকাজে কিছুটা সমস্যা হতে পারে। তবে গ্যাসের সমস্যা না থাকলে প্রতিদিন চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সল্ফ¢ব হবে। সেচ মৌসুমে দেশের প্রত্যšø অঞ্চলে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে নগর ও শহরাঞ্চলে লোডশেডিং বাড়বে কি-না জানতে চাইলে সচিব বলেন, এ মুহহৃর্তে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।
জানা গেছে, সেচ মৌসুমে কমপক্ষে ২০ হাজার পা¤েক্স নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। সবমিলিয়ে ছোট-বড় ২ লাখ ৪৭ হাজার নলকূপ চলবে সেচ মৌসুমে। এর অধিকাংশ বিদ্যুৎনির্ভর। বিদ্যুৎ না থাকলে কৃষকরা ডিজেল দিয়েও নলকূপ চালু রাখেন। তবে ডিজেলে খরচ বেশি পড়ে। কৃষি মšúণালয় বিদ্যুৎ বিভাগকে জানিয়েছে, দেশের উত্তরাঞ্চলেই সেচের প্রয়োজন পড়ে বেশি। বিদ্যুৎ সচিব বলেছেন, উত্তরাঞ্চলে চাহিদা মেটাতে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র পুরোদমে চালু রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সিরাজগঞ্জে বাঘাবাড়ীর কেন্দ্রগুলোও সচল রাখতে বলা হয়েছে। এবার সেচকাজে অতিরিক্ত চাহিদা বাড়তে পারে প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ বিভাগ আশা করছে, শীতকালে বিদ্যুতের আবাসিক চাহিদা কিছুটা কমে আসবে। রাত ১১টা থেকে ভোর ৬টা পর্যšø অফ পিক আওয়ারে সারাদেশে বিদ্যুতের ব্যবহার দুই-তৃতীয়াংশ কমে যায়। এ সময়ে নলকূপ চালানোর জন্য কৃষকদের বলা হবে। বৈঠক সহৃত্রে জানা যায়, বিপিসি আশ^স্টø করেছে এবার ডিজেলের কোনো ঘাটতি হবে না। তবে উত্তরাঞ্চলের জন্য সমস্যা হলো নদীপথে নাব্যতা না থাকার কারণে জাহাজ বাঘাবাড়ী পর্যšø যেতে পারে না।

পাচারকালে কেশবপুরে বিএডিসির ৪০ বস্তা বীজ ধান আটক

২২.১১.০৮
সমকাল ।। কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি

কেশবপুরে শুত্রক্রবার দুপুরে বিএডিসির ব্রি-২৮ জাতের ৪০ বস্টøা ধান বীজ কালোবাজারে পাচারকালে কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল ইসলাম আটক করেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, কেশবপুর সদরের বীজ ডিলার আরমানের ঘর থেকে ৪০ বস্টøা ব্রি-২৮ জাতের বীজ ধান পাশর্^বর্তী চুকনগরে কালোবাজারে পাচারের সময় কেদারপুর নামক জায়গা থেকে আটক করা হয়। বীজ পাচারের ঘটনায় ডিলারের বিরু™েব্দ আইনগত ব্যবস্ট’া নেওয়া হবে বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল ইসলাম জানান। এ ব্যাপারে উপজেলা বীজ কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, বিষয়টি তিনি নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে শুনেছেন। অপরদিকে বীজ ডিলার আরমান বলেছেন, তিনি ওই বীজ কেশবপুর উপজেলার গৌরীঘোনা ইউনিয়নে কৃষকদের জন্য পাঠাচ্ছিলেন। পাচারের কথা তিনি অস্ট^ীকার করেছেন।

সারের মূল্য বস্তাপ্রতি ৭০০ টাকা বৃদ্ধি টঙ্গীবাড়ীর আলুচাষিরা বিপাকে

২২.১১.০৮
ডেসটিনি ।। টঙ্গীবাড়ী (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি

টঙ্গীবাড়ীতে সারের মূল্য বস্তাপ্রতি ৩ দিনের ব্যবধানে ৭০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে আলুচাষিরা বিপাকে পড়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, ডিলাররা নিয়মনীতি না মেনে প্রতি বস্তা সার ৭০০ টাকা বেশি মূল্যে বিক্রি করছেন। যার জন্য কৃষকরা সার কেনার সাহস পাচ্ছে না। জানা গেছে, মঙ্গলবার টিএসপি ২ হাজার ৯৮০ টাকায় বিক্রি হলেও গতকাল বৃহস্পতিবার সেই সার ৩ হাজার ৭০৭ টাকা এবং এমওপি ২ হাজার ১০০ টাকা থেকে বেড়ে ২ হাজার ৬৯০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

রাজবাড়ীর বিলপাকুরিয়ার ভূমিহীন পল্লীতে শোকের ছায়া, জোতদারদের উল্লাস

২২.১১.০৮
ডেসটিনি ।। বালিয়াকান্দি (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি

রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের বিলপাকুরিয়ায় ভূমিহীনদের বপণকৃত ৮৪ একর জমির আমন ধান কেটে নেয়ার পর জোরদার মহলে আনন্দ-উল্লাস পরিলক্ষিত হলেও ভূমিহীন পল্লীতে অধিকারবঞ্চিতদের মধ্যে নেমে এসেছে শোকের মাতম। এদিকে এব্যাপারে গতকাল সংবাদ প্রকাশের পর একটি মহল ঘটনা ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এ প্রতিনিধিকে মিথ্যা মামলাসহ জীবননাশের হুমকি প্রদর্শনের কথাও একটি মহল থেকে প্রচার করা হচ্ছে। জানা যায়, ওই এলাকার (বিলপাকুরিয়া, ঘোড়ামারা, বনগ্রাম ও ঝাউডাঙ্গী) ভূমিহীনদের সমতা নামক একটি এনজিও বিদেশি দাতাগোষ্ঠী কর্তৃক অর্থ ও মদদপুষ্ট হয়ে সংবিধান অনুযায়ী নিজের অধিকার আদায়ে জনসচেতনতা, সমিতি গঠন এবং গাইড লাইনের মাধ্যমে উজ্জীবিত করে। এরই ধারাবাহিকতায় এলাকার অধিকারবঞ্চিত নিপীড়িত ভূমিহীনরা নতুন আশায় বুক বেঁধে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। ঠিক তখনই ব্যাপক জনমত ও স্থানীয় ভূমিহীনদের দাবির প্রেক্ষিতে সমতার পরিচালনায় সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী স্থানীয় প্রশাসন খাসজমি বণ্টন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এলাকার ভূমিহীনদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু এনজিও সমতার পরিচালনা পর্ষদের অর্থলিপ্সা, অসাংগঠনিক মনোভাব, সীমাহীন স্বজনপ্রীতি এবং দুর্নীতিপরায়ণ ধারায় আক্রান্ত হওয়ার ফলে সারাদেশসহ রাজবাড়ীতে ভূমিহীনদের অধিকার ভূ-লুণ্ঠিত হতে থাকে। একটি পর্যায়ে দাতাগোষ্ঠী কর্তৃক উল্লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ফান্ড বন্ধসহ কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়। এতে সমতা এবং তার সহযোগী সংস্থাগুলো সাংগঠনিক স্থবিরতাসহ বিলুপ্তির ধারায় অন্তর্ভুক্ত হতে থাকে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, এ সুযোগে এ সহযোগী সংস্থাগুলোর নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তি বিশেষ করে অগাধ সম্পদের মালিক বনে যান। কিন্তু অধিকার বিষয়ে সচেতন ভূমিহীনরা নিজেদের নেতৃত্বের বিকাশ ঘটিয়ে সরকারের মালিকানায় থাকা খাসজমিতে বহু ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমে দখলস্বত্ব বজায় রাখে। বর্তমানে বহুকষ্টে গড়া ভূমিহীনদের স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হতে চলছে। একদিকে মামলা অপরদিকে অধিকার হারানোর বেদনায় গোটা ভূমিহীন পল্লীতে শোকের মাতম সৃষ্টি করেছে। অথচ ’০২ সালে খাসজমি বণ্টন প্রক্রিয়ায় বন্দোবস্ত পাওয়ার পর পরিবারগুলো ধীরে ধীরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সম্পদ সঞ্চিত করার মাধ্যমে এলাকার অধিকারবঞ্চিত ভূমিহীনরা মানবেতর জীবন থেকে আলোর মুখ দেখতে শুরু করে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, অন্ন এবং বস্ত্রের অভাব ঘুচতে থাকে। কিন্তু এ বছর আমন ধান ঘরে না ওঠায় তাদের পূর্ববর্তী অবস্থায় প্রত্যাবর্তনের সূত্রপাত ঘটেছে। অপরদিকে দীর্ঘ ৬ বছর জোতদাররা তাদের দাবিকৃত অধিকার ফিরে পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে।

পাটগ্রামে বিক্রি হচ্ছে ভেজাল সার দোকানিকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা

২২.১১.০৮
ডেসটিনি ।। পাটগ্রাম (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি

জেলার পাটগ্রামের বিভিন্ন বাজারে ভেজাল সার বিক্রি হচ্ছে। এ সার কিনে সাধারণ কৃষকরা প্রতারিত হচ্ছেন। ভেজাল সার বিক্রি করার অপরাধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী আবু তাহের গত বুধবার দুপুরে বাজারের থানা রোডের মদিনা ট্রেডার্স নামে একটি সারের দোকানে অভিযান চালিয়ে ১২ বস্তা ভেজাল লোমাইট পাউডার ও ১ বস্তা ভারতীয় জৈবসার আটক করেন। এ ব্যাপারে দোকানের মালিক সহিদুল ইসলামকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পরে ওই দোকানটি সিলগালা করে দেয়া হয়। এ সময় কৃষি কর্মকর্তা কামরুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন। অভিযানকালে সহিদুল ইসলাম উপস্থিত না থাকলেও তার ছেলে জিতু দোকানে ছিল। কৃষি কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, আটককৃত ও লোমাইড পাউডারে বালি এবং মাটি পাওয়া গেছে। জানা যায়, এলাকার ভারতীয় জৈবসারকে টিএসপি হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে।

পাটগ্রামে বিক্রি হচ্ছে ভেজাল সার দোকানিকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা

বিএডিসির গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য দেশে বোরো চাষ বেড়েছে ১৩ গুণ, ফলন বেড়েছে প্রায় ৪ গুণ

২২.১১.০৮
ডেসটিনি ।। ডেসটিনি রিপোর্ট

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) এক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্যে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বর্তমানে বোরো ধানের চাষ বেড়েছে ১৩ গুণ এবং ফলন বেড়েছে প্রায় ৪ গুণ। অর্থাৎ শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ।
গবেষণা তথ্যে আরো বলা হয়েছে, সেচনির্ভর বোরো চাষে সেচ দক্ষতাসহ প্রযুক্তি ব্যবহারে কৃষকের প্রয়োজনীয় জ্ঞান থাকলে এ সময়ে ফলন দ্বিগুণ বাড়তো। এতে বলা হয়, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে প্রধান নিয়ামক হয়ে উঠেছে বোরো ধান। আউশ ও আমন ধানের চেয়ে এর ফলন বেশি হওয়ায় বোরো ধান চাষে আমাদের দেশে নীরব বিপ্লব ঘটে চলেছে।
তথ্য প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৬০ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বোরো ধান চাষ হয়েছিল ৩ লাখ ৭১ হাজার হেক্টর জমিতে। হেক্টরপ্রতি ধানের ফলন হয়েছিল ১ লাখ ৭ হাজার মেট্রিক টন। অর্থাৎ ধান উৎপাদন হয়েছিল ৩ লাখ ৯৭ হাজার মেট্রিক টন। উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের বোরো ধানের চাষ শুরু হলে ফলন বাড়ার পাশাপাশি বাড়তে থাকে চাষের জমি। প্রযুক্তিগত জ্ঞানেরও সম্প্রসারণ ঘটে কৃষকের। ২০০৪-০৫ সালে বাংলাদেশে বোরো ধানের চাষ হয় ৪০ লাখ ৬৭ হাজার হেক্টর জমিতে। ধান উৎপাদিত হয় ১ কোটি ৩৮ লাখ ৩৭ হাজার মেট্রিক টন। ফলন ৩ গুণেরও বেশি বেড়ে হেক্টরে গড় ফলন দাঁড়ায় ৩ টন ৪০০ কেজি। ২০০৬-০৭ সালে বোরো ধান চাষের জমি বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩ লাখ ৬৭ হাজার হেক্টরে। ধান উৎপাদন হয় প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ মেট্রিক টন। হেক্টরপ্রতি গড় ফলন হয় ৩ টন ৬০০ কেজি। আসন্ন মৌসুমে প্রায় ৫০ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ মেট্রিক টন।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, উন্নত বীজ ও রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে সেচনির্ভর বোরোর ফলন বাড়লেও কৃষকের প্রযুক্তিগত জ্ঞানে যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। খামারে পানি ব্যবস্থাপনায় (সেচ) কৃষকের জ্ঞান একেবারে শূন্যের কোঠায়। এ ক্ষেত্রে একজন কৃষকের জ্ঞানের অভাব রয়েছে ৭৩ ভাগ। সেচ যন্ত্রপাতি ব্যবহারে জ্ঞানের অভাব রয়েছে ৪৭ ভাগ, কৃষি যন্ত্রপাতিতে ৭৭ ভাগ, সুষম সার বণ্টনে ২৩ ভাগ, কীটনাশকে ৪০ ভাগ এবং বীজে ১৩ ভাগ। এই জ্ঞান ঘাটতির কারণে বোরো আবাদে প্রচুর শ্রম ও অর্থের অপচয় হচ্ছে। কম করে ধরা হলেও ক্ষেতে ব্যবহƒত পানি এবং সারের অর্ধেকের বেশি (শতকরা ৫০ ভাগ হারে) অপচয় হয়। এ কারণে একরপ্রতি কমপক্ষে ১৫ মণ ফলন কম হয়।
বিএডিসির প্রকৌশলী ও গবেষক ইফতেখারুল আলম জানান, দেশে সেচযোগ্য প্রায় ৭৬ লাখ হেক্টর জমি রয়েছে। বর্তমানে ৫০ লাখ হেক্টরেরও কম জমিতে বোরো ধানের চাষ হচ্ছে। উফশী জাতের বোরো ধানের হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ক্ষমতা ৬ টন হলেও শুধু কৃষকের জ্ঞানের অভাবে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, কৃষকের সেচ দক্ষতা এবং সেচজমি বাড়ানোসহ অনকূল কৃষি পরিবেশ সৃষ্টি করা গেলে বোরো ধানের ফলন আরো বাড়বে।

Saturday, November 22, 2008

পাটকেলঘাটায় ২০০ বস্তা টিএসপি আটক, থানার ভূমিকায় প্রশ্ন

২১.১১.০৮
ডেসটিনি ।। পাটকেলঘাটা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি

পাটকেলঘাটায় সংঘবদ্ধ সার ডিলারচক্র তালা উপজেলা কৃষি অফিসের যোগসাজশে সার ও বীজ চোরাই পথে আমদানি করে মজুদ করে রাখছে এবং ভরা মৌসুমে তীব্র চাহিদার সময় এই সার বেশি দামে কৃষকদের মাঝে বিক্রি করে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমন অভিযোগ সূত্রে মঙ্গলবার দুপুর ১২টার সময় এক দল সাংবাদিক পাটকেলঘাটা থানার সেকেন্ড অফিসার জিয়াউর রহমান ও দায়িত্বরত ব্লক সুপারভাইজার মাহবুবুল আলমের উপস্থিতিতে থানা সদরের কাছের একটি গুদাম থেকে ২০০ বস্তা তিউনেশিয়া টিএসপি সার উদ্ধার করে। পরে সারের মালিক ও বাজারের সার ব্যবসায়ী মেসার্স গ্রামীণ ট্রেডার্সের মালিক মনেন্দ্রনাথ ম-লকে থানায় নিয়ে আসে। এর পর ১০ ঘণ্টা তাকে পর্যবেক্ষণে রেখে ছেড়ে দেয় পুলিশ। ওই সার ব্যবসায়ীর ডিলারশিপ না থাকা সত্ত্বেও ২০০ বস্তা টিএসপি সার কোথা থেকে পেয়েছেন জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, উপজেলার নগরঘাটা ইউনিয়নের ডিলার গাজী ট্রেডার্সের মালিক হামিজউদ্দীনের কাছ থেকে তিনি ওই সার কিনেছেন। এ দিকে হামিজউদ্দীনকে ঘটনাটি অবহিত করা হলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন। গত মঙ্গলবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউন্নবী জানান, ঘটনাটি অভিযানের আগেই সাংবাদিকরা আমাকে জানিয়েছিলেন। ২০০ বস্তা সার জব্দ করার জন্য পাটকেলঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সোহরাব হোসেনের কাছে ঘটনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সার জব্দ করার জন্য সার্বিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৬ মাসের মধ্যে ডিলারদের মাধ্যমে যে পরিমাণ টিএসপি সার এ উপজেলার জন্য এসেছে তার সবই বাংলাদেশ টিএসপি। তবে ৬ মাস আগে তিউনেশিয়া টিএসপি বাজারে এসেছিল। সে সময় টিএসপি সারের প্রবল চাহিদা থাকলেও উপজেলার কতিপয় কৃষি কর্মকর্তা ও ডিলারদের যোগসাজশে একটি চক্র সার ক্রয় করে মজুদ করে রাখে। তাদের লক্ষ্য ছিল আসন্ন বোরো মৌসুমে উচ্চ মূল্যে তা বিক্রয় করার। ওই সময় বস্তা প্রতি টিএসপি সারের দাম ছিল ১ হাজার ৮০০ টাকা। অথচ বর্তমান বাজারে ওই সারের বস্তা প্রতি দাম ৩ হাজার ৮০০ টাকা। এদিকে মঙ্গলবার উদ্ধার করা ডিলারবিহীন ওই ২০০ বস্তা সার পুলিশ জব্দ না করায় কৃষি কর্মকর্তা ও থানার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

জাতীয় কৃষক দিবস এনেছে নতুন মাত্রা ।। রাউজান, নন্দীগ্রাম ও মিঠাপুকুরের মাঠে মাঠে সোনালি হাসি, পিঠা-পুলির ঘ্রাণ

২১.১১.০৮
ডেসটিনি ।। রাউজান (চট্টগ্রাম), নন্দীগ্রাম (বগুড়া) ও মিঠাপুকুর (রংপুর) প্রতিনিধি

দুঃখের পর সুখ আসেÑ এ কথা সত্য মেনে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে কৃষকরা আমন ধানের চাষ করেছিল সেই ফসল এখন ঘরে আসতে শুরু। আর তাই কৃষকের চোখে-মুখে হাসি যেন ধরছে না। এমন চিত্র রাউজানের কৃষাণ-কৃষাণিদের মাঝে। ইতিমধ্যেই তাদের গোলায় উঠতে শুরু করেছে রোপা আমন ধান। মাঠে মাঠে চলছে চলতি মৌসুমের ধান কাটা। উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়নের গ্রামগুলোয় কৃষকরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন মাঠে। আর কৃষাণিরা সেই ধান মাড়াইয়ের জন্য বাড়ির উঠোনে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন। এ বছর রাউজান উপজেলার ১২ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ করেছেন কয়েক হাজার কৃষক। ধান বীজ বপনের শুরু থেকেই রোগবালাই, ঝড়-ঝাপ্টা, জলোচ্ছ্বাসসহ সর্বশেষ কার্তিক মাসে টানা দুদিনের বৃষ্টি আর দমকা হাওয়ায় রাউজানের বহু এলাকায় পাকা, আধাপাকা ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। কিন্তু বাড়তি মনোবল নিয়ে রাউজানের কৃষকরা মাঠে ফলিয়েছে আমন ধান। আর তাই কৃষকদের ঘরে ঘরে নবান্নের উৎসব। ইতিমধ্যে নতুন চালের পিঠা বানানোর ধুম পড়েছে কৃষাণিদের মাঝে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ফলন ভালো। গত বছর একটানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে ৬ থেকে ৮ হাজার হেক্টর ফসলী জমির ধানের চারা নষ্ট হয়ে গেছে। তবে এবার ফলন ভালো হলে গত বছরের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে যাবেÑ এমন আশা করছেন নোয়াপাড়ার সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. সোহেল, আনোয়ার ছবুর ও মিল্টন। তবে রাউজান দক্ষিণ অংশের কয়েকটি ইউনিয়নের নিচু এলাকায় বৃষ্টির পানি জমে থাকায় ঝরে যাওয়া ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান সমিতির সভাপতি চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম জানান, হালদা ও কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে সংযোগ খালগুলোয় পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়ায় নিচু এলাকার পানি ঠিক সময়ে সরতে না পারায় ধানের ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া আগামী শুষ্ক মৌসুমে খালে পানি ঢুকতে না পারলে বহু এলাকায় বোরো চাষ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, কোনো কোনো এলাকায় নতুন নতুন ঘরবাড়ি, দালান-কোটা গড়ে তুলেছে। কৃষি জমির ওপর এসব বাড়ি এবং চলাচলের নতুন রাস্তা গড়ে তোলায় পানি চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে গেছে, যার ফলে কোনো কোনো স্থানে চাষ হচ্ছে না। আবার কোথাও চাষ হলেও পরেরবার পানি জমে ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। কোথাও কোথাও নদীর ব্যাপক ভাঙনে বহু ফসলী জমি নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। এরপরও কৃষকরা থেমে নেই।
কৃষকের ঘরে ঘরে নবান্ন উৎসব আমাদের নন্দীগ্রাম প্রতিনিধি জানান, উপজেলায় আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। কৃষকের ঘরে ঘরে চলছে হেমন্তের নবান্ন উৎসবের আমেজ। কৃষকরা অগ্রহায়ণের প্রথম দিকেই আমন ধান কেটে বাড়ির উঠানে নিয়ে আসেন। ধান কাটার পর বাংলার কৃষক সমাজ প্রাচীনকাল থেকে নবান্ন উৎসব পালন করে আসছে। কালের বিবর্তনে অনেক কিছু পরিবর্তন হলেও কৃষকরা নবান্ন উৎসবের কথা ভুলে যাননি। গ্রাম-বাংলার কৃষকরা নবান্ন উৎসব পরিপূর্ণভাবে উদযাপনের জন্য জামাই-ঝি আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আমন্ত্রণ করে এনে নতুন চালের পিঠা, পোলাও, পায়েসসহ বিভিন্ন রকমারি নিত্যনতুন খাবার তৈরি করে ভোজের আয়োজন করে। গ্রাম্যবধূরা জামাইকে সঙ্গে নিয়ে বাপের বাড়িতে নবান্নের জন্য আগ্রহে অপেক্ষা করেন। নবান্ন উৎসবে গ্রামের কৃষকরা মিলেমিশে গরু, মহিষ, খাসি জবাই করে এবং হাট-বাজারের সেরা বড় মাছ কিনে আনেন। বাংলার মুসলিম কৃষক সমাজে অগ্রহায়ণের প্রথম শুক্রবার থেকে নবান্ন উৎসব শুরু হয়। অপরদিকে সনাতন (হিন্দু) সমাজের কৃষকরা তাদের পঞ্জিকা অনুসারে পয়লা অগ্রহায়ণ নবান্ন উৎসব পালন করেন।
নন্দীগ্রাম উপজেলার তেঁতুলীয়াগাড়ীর কৃষক আলহাজ আ. সামাদ জানান, এ বছর প্রতি বিঘা জমিতে জাতভেদে ১৩/১৪ মণ ধান উৎপাদন হয়েছে। তিনি জানান, ধানের দাম খরচের তুলনায় বেশ কম। দলগাছা গ্রামের কৃষক আলহাজ মোখলেছার রহমান জানান, চলতি মৌসুমে আমি ৪৫ বিঘা জমিতে বিআর-৩২, বিআর-৩৪, শিলকুমার, পাইজাম ধান আবাদ করেছি। ধান কাটা শুরু হয়েছে। ফলন ভালো, তবে বাজারে ধানের দাম কম বলে হতাশ হচ্ছি। প্রতি বিঘা জমিতে এবার খরচ করতে হয়েছে সাড়ে ৪ হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা, অথচ ধান বিক্রি করে আবাদের খরচ তোলাই কঠিন হয়ে পড়েছে। বর্তমান বাজারে ধানের মূল্য বিআর-৩২, ৪৫০-৫০০ টাকা, পাইজাম (নেপালি) ৫৫০-৬০০ টাকা, পাইজাম (সাদা) ৫০০-৫৫০ টাকা ও পাইজাম ৬৫০-৭০০ টাকা।
চলতি আমন মৌসুমে নন্দীগ্রাম উপজেলায় ২১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ৭৮ হাজার ৩৪৫ মেট্রিকটন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
মিঠাপুকুর (রংপুর) প্রতিনিধি জানান, উপজেলায় এবার আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। মাঠজুড়ে যেদিকে চোখ যায় শুধু সোনালি ধানের সমারোহ। কৃষকের ঘরে ঘরে চলছে নবান্নের উৎসব। এবার পয়লা অগ্রহায়ণে প্রথমবারের মতো জাতীয় কৃষি দিবস পালিত হওয়ায় কৃষকদের আনন্দে নতুনমাত্রা পেয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা জানান, প্রস্তাবিত মিঠাপুকুর পৌর এলাকাসহ উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নে ৩১ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে। এবার বন্যায় দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় আমন ক্ষেত বিনষ্ট হলেও রংপুরের মিঠাপুকুর ও পাশের উপজেলায় বন্যার প্রভাব পড়েনি এবং বর্ষণের ফলে প্রাকৃতিকভাবে জমিতে নাইট্রোজেনের অভাব পূরণ হয়েছে। এ কারণে অল্প পরিমাণে ইউরিয়া প্রয়োগেই ফল হয়েছে ভালো। এবার আমন ক্ষেতে রোগ-বালাই ও পোকামাকড়ে আক্রমণ ছিল কম। ইতিমধ্যে বিস্তৃত মাঠের সোনালি আমন ধান পেকেছে। এলাকায় কাটা ও মাড়াই শুরু হয়েছে। বুজরুক, সন্তোষপুর ও পলাশটাড়ী গ্রামের আবুল কাশেম, বেলকোলা গ্রামের আনিছার রহমান, আবুল কালাম আজাদ, পলাশটাড়ী গ্রামের রেজবানুল ইসলাম, আন্দারকোটা গ্রামের সেরাজুল ইসলামসহ অন্যরা জানান, এবার একরপ্রতি উন্নত জাতের ধান-৬৫-৭০ মণ, ব্রি জাতের ধান-৪৫-৫০ মণ হারে ফলন হয়েছে। মিঠাপুকুর উপজেলার প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা শুকুরের হাটে প্রতিমণ নতুন ধান বিক্রি হচ্ছে ৪৯০ থেকে ৫০০ টাকা দরে।

দেশেই উৎপন্ন হচ্ছে ফুলকপি বীজ

২১.১১.০৮
সমকাল ।। সেলিম সরদার, ঈশ্বরদী

ঈশ্বরদীর সেই কৃষক আবদুল গণির ফুলকপি বীজে অবশেষে ফুল ফুটেছে। এ নিয়ে ঈশ^রদীর অন্য কৃষকদের মধ্যে রীতিমতো হৈচৈ পড়ে গেলেও বিষয়টি মোটেও আমলে নেয়নি ঈশ^রদী উপজেলা কৃষি অফিস।
গত শনিবার ঈশ^রদীর দিয়াড় সাহাপুর গ্রামের আলোচিত কৃষক আবদুল গণির (৪৬) ক্ষেতে গিয়ে দেখা গেছে, বিদেশ থেকে আমদানি করা বীজে উৎপল্পু ফুলকপির পাশাপাশি তার নিজস্ট^ উৎপাদিত বীজেও পরিপহৃর্ণ ফুলকপিতে ভরে গেছে মাঠ। দীর্ঘ এক বছর অপেক্ষার পর আবদুল গণির ওই সাফল্য। প্রথম প্রথম ফুলকপির বীজ উৎপাদন আর সেই বীজের চারা নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গেবেষণা দেখে আশপাশের যেসব কৃষক মুখ টিপে হাসতেন, নানা কটু কথা বলতেও যারা ছাড়েননি, এখন তারাই গণির কাছে আসছেন এ বিষয়ে পরামর্শ নিতে।
আবদুল গণির প্রধান পরামর্শক ঈশ^রদীর আরেক সফল কৃষক রিয়াজ উদ্দিন সরদার জানান, ইতিমধ্যে সাজেদুল, আমিরুল, রবি মৌলভিসহ আরো কয়েকজন ফুলকপির বীজ উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছেন।
কৃষক আবদুল গণি জানান, তিনি আশাবাদী এ মৌসুমেই আরো প্রায় দু’বিঘা জমিতে তার উৎপল্পু বীজে ফুলকপি উৎপাদন করে চমকে দেবেন অন্য কৃষকদের। আপন সাফল্যে উদ্ভাসিত কৃষক আবদুল গণি জানান, কৃষি বিভাগের সহযোগিতা এবং পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ফুলকপি চাষে বড় ধরনের সাফল্য আসতে পারে। কৃষক রিয়াজ উদ্দিন সরদারের মতে, আবদুল গণির সাফল্যকে ধরে রাখা গেলে বিদেশ থেকে আর উচ্চমহৃল্যে ফুলকপির বীজ আমদানি করতে হবে না। এদিকে আšøর্জাতিক বাজারে অত্যšø দামি ফুলকপির বীজ উৎপাদনে অভাবিত এ সাফল্যের বিষয়টি একটুও আমলে নেয়নি ঈশ^রদী কৃষি স¤ক্স্রসারণ অধিদফতর। গত ২৭ সেপ্টেল্টল্ফ^র দৈনিক সমকালে গণির সাফল্যের ওপর একটি রিপোর্ট ও পরদিন স¤ক্সাদকীয় প্রকাশের পর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশরাফ আলী জানিয়েছিলেন, ওই চারায় ফলন কী পরিমাণ হয়, তা দেখে এ বীজের মহৃল্যায়ন করবেন। কিন্তু সেই চারা পরিপহৃর্ণ হয়ে ভালো ফলন দিলেও এ পর্যšø কোনো খোঁজই নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করলেন কৃষক আবদুল গণি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল কাদেরকে এ বিষয়ে প্রশু করলে বলেন, ‘আমাদের জানা মতে, বাংলাদেশে একমাত্র টাঙ্গাইলে ফুলকপির বীজ উৎপাদন হয়।’ ঈশ^রদীর কৃষক আবদুল গণির ব্যাপারে তিনি অবগত নন; তবে খোঁজ নেবেন বলে জানান।

কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ভর্তুকি বাড়ানোর বিকল্প নেই

২১.১১.০৮
যায়যায়দিন ।। সম্পাদকীয়-উপসম্পাদকীয়

খাদ্য সঙ্কটে থাকা বাংলাদেশের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হবে। আর কৃষি উৎপাদন বাড়াতে চাই এ খাতে পর্যাপ্ত ভর্তুকি এবং সহজ শর্তে ঋণ। পরিস্থিতির দাবি যখন এই তখন বাস্তবতা দেখা যাচ্ছে ঠিক তার উল্টো। দেশের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এ খাতটিতে বছর বছর ভর্তুকি কমানো হচ্ছে এবং বাড়ানো হচ্ছে কৃষিঋণের সুদ। এ কাজগুলো সরকার করে যাচ্ছে বিশ্বব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মতো সংস্থার পরামর্শে।
যায়যায়দিনের এক রিপোর্টে জানা যায়, বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার শর্ত অনুযায়ী, কোনো দেশের কৃষিতে সরকারের ১০ ভাগ ভর্তুকি দেয়ার সুযোগ থাকলেও আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের চাপে তিন বছর ধরে কৃষিতে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে মাত্র ০.৩ ভাগ করে। চলতি বছরে যা ০.২ ভাগে নেমে এসেছে। গত বছরের মূল বাজেটে কৃষির জন্য বরাদ্দ ছিল ৫ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা। কিন্তু সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে আনা হয় ৪ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকায়। দেশের মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ কৃষি খাতে নিয়োজিত। তাছাড়া জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ২১ দশমিক ১১ শতাংশ হওয়ার পরও বিশ্বব্যাংকের নীতি অনুসরণ করতে গিয়ে এ খাতে ভর্তুকি কমানো হচ্ছে আবার বছর শেষেও মূল বরাদ্দ থেকে ছেঁটে ফেলা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফের পরামর্শে সরকার বছরের পর বছর কৃষি সেক্টর থেকে ভর্তুকির পরিমাণ কমিয়ে আনলেও তাদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি। কারণ তারা চায় কৃষি খাতে ভর্তুকি পুরোপুরি প্রত্যাহার। যে দেশে খাদ্য সঙ্কট চলছে সে দেশকে যদি কৃষি খাতে ভর্তুকি বন্ধ করে দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয় তাহলে বুঝতে বাকি থাকার কথা নয় এ পরামর্শ কৃষি খাতকে শক্তিশালী করার জন্য নয়, দেয়া হচ্ছে ধ্বংস করার জন্য।
বাংলাদেশ সরকারকে বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফ পরামর্শ নতুন দিচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংককে পরামর্শ দেয়া হয়েছিল মুদ্রা সঙ্কোচন নীতি গ্রহণ করার জন্য। তাদের পরামর্শে মুদ্রা সঙ্কোচন নীতি অনুসরণ করে দেশের মূল্যস্ফীতি তো কমেইনি বরং বেড়েছে বহুগুণে। এরপর ভুল পরামর্শের দায়ভার তারা নিজেরা না নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছিল। তাদের পরামর্শ মানতে গিয়ে আফ্রিকা এবং ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোকে চরম মূল্য দিতে হয়েছে। ধ্বংস হয়েছে তাদের কৃষি ব্যবস্থা। আর সেসব পরামর্শই এখন মানার জন্য বাংলাদেশকে চাপ দেয়া হচ্ছে।
দেশের সরকার যাতে তাদের কথা শুনে সে ব্যবস্থাও করে রাখা হচ্ছে। খাদ্য নিরাপত্তার কথা বলে বিভিন্ন প্রকল্পের নামে বাংলাদেশকে ঋণের জালে আরো ভালোভাবে বেঁধে ফেলা হচ্ছে। দেশে কোনো রাজনৈতিক সরকার না থাকায় সংস্থাগুলো চাপ দিয়ে বর্তমান সরকারের কাছ থেকে তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলো পাস করিয়ে নিচ্ছে বলেও জানা যাচ্ছে। এতে বাংলাদেশের কৃষি ব্যবস্থায় সংস্থা দুটোর নিয়ন্ত্রণ আরো জোরদার হচ্ছে।
কৃষিতে ভর্তুকি কমতে থাকলে বাংলাদেশ কখনই খাদ্য সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত যখন বছর বছর কৃষিতে ভর্তুকি বাড়াচ্ছে সেখানে আমাদের কমানো ভালো লক্ষণ নয়। দেশের কৃষি খাতকে বাঁচাতে ভর্তুকি এবং কম সুদে ঋণ প্রদানের বিকল্প নেই। আমরা আশা করবো, কোনো সংস্থার পরামর্শের কাছে নতিস্বীকার করে নয়, দেশ বাঁচাতে দেশের মানুষের পরামর্শেই কৃষি খাতের ব্যাপারে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।

Friday, November 21, 2008

কৃষিতে বিনিয়োগ-ভর্তুকি প্রত্যাহার না করায় নাখোশ ওয়ার্ল্ড ব্যাংক

২০.১১০৮
যায়যায়দিন ।। আলতাব হোসেন

বিশ্বের বৃহৎ অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের প্রস্তাব সরকার আমলে না নেয়ায় নাখোশ হয়েছে সংস্থাটি। সম্প্রতি বাংলাদেশের কৃষি সেক্টরে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ ও সরাসরি ভর্তুকি পুরোপুরি প্রত্যাহারের পরামর্শ দিয়েছিল ওয়ার্ল্ড ব্যাংক। এর আগে সয়াবিন, ভুট্টা ও আখ থেকে জৈব জ্বালানি (বায়ো ফুয়েল) উৎপাদনেরও প্রস্তাব দিয়েছিল সংস্থাটি। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের পরামর্শে সরকারও ভর্তুকির পরিমাণ বছরের পর বছর কমিয়ে আনছিল। তবে কৃষি সেক্টরে রাষ্ট্রীয় ভর্তুকি পুরোপুরি তুলে নেয়ার ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের প্রস্তাব সরকার সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে। আর এতেই নাখোশ সংস্থাটি।
বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার শর্ত অনুযায়ী, কোনো দেশের কৃষিতে সরকারের ১০ ভাগ ভর্র্তুকি দেয়ার ব্যবস্থা থাকলেও আইএমএফ ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের চাপে তিন বছর ধরে বাংলাদেশে এ হার ছিল মাত্র ০.৩ ভাগ। চলতি বছর যা ০.২ ভাগে নেমে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ হারে কমাতে থাকলে এবং বিশ্বজুড়ে যে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে, তাতে ভর্তুকি কমালে খাদ্য সঙ্কট থেকে বাংলাদেশ বের হয়ে আসতে পারবে না। কারণ একমাত্র কৃষি উৎপাদন বাড়িয়েই বাংলাদেশ পুরোপুরি আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে এনে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে।
ওয়ার্ল্ড ব্যাংক নব্বইয়ের দশকে আফ্রিকার কিছু দেশকে পরামর্শ দেয় কৃষি খাতে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ প্রত্যাহারের। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক তখন বলেছিল, এতে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ বাড়বে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা গেছে, বেসরকারি বিনিয়োগ হয়নি। তার ওপর ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের নীতি অনুসরণ করায় আফ্রিকান দেশগুলোর কৃষি খাত পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের মুরুব্বিপনার ফলে সেসব দেশে কৃষি খাতে প্রজনন ক্ষমতাহীন হাইব্রিড বীজ, কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার বেড়ে যায়। আর এতে লাভবান হয় বহুজাতিক কোম্পানিগুলো। কিন্তু ধ্বংস হয়ে যায় কৃষি সেক্টর।
একসময় কৃষি সেচের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা ছিল বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীন। বিএডিসির কার্যক্রমের মাধ্যমে বীজ ও সার সরবরাহ ব্যবস্থাপনাও গড়ে উঠেছিল। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই কৃষিতে ভর্তুকির ব্যবস্থা করা হতো। কিন্তু ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের পরামর্শে এ প্রক্রিয়াটিও বেসরকারিকরণ করা হয়। ১৯৯২ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জুট মিল আদমজী বন্ধের জন্য ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ২.৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দিয়েছিল।
গত বছর বাজেটে ডিজেল ভর্তুকি খাতে ৭৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের বিরোধিতায় শেষ পর্যন্ত ২৫০ কোটি টাকা করা হয়। এছাড়া সরকার ৩৫০ কোটি টাকার একটি এনডাউনমেন্ট ফান্ড গঠন করলেও এ টাকা ব্যয় করতে পারছে না। এ বছরও এসব খাতে সরকার বরাদ্দের পরিমাণ কমিয়ে আনে। অভিযোগ আছে, দেশে কোনো রাজনৈতিক সরকার না থাকায় দাতা সংস্থাগুলো চাপ দিয়ে এবং তোড়জোড় করে তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলো পাস করিয়ে নিচ্ছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশের কৃষি সেক্টরে প্রভাব বিস্তার করতে সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক। শুরুর দিকে কৃষি মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যৌথভাবে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের পরামর্শে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকে এ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে। ১৫ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ঋণ দেবে ১ হাজার ২৪২ কোটি টাকা। অথচ পরামর্শকদের বেতন-ভাতা, প্রশিক্ষণ, প্রকল্পের গাড়ি, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র ও বহুজাতিক কোম্পানির বীজ প্রদর্শনীর কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩১ কোটি টাকা। এর মধ্যে পরামর্শক ব্যয়ই ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা।
তিন ধাপে পাঁচ বছর করে ১৫ বছর মেয়াদি ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রজেক্ট (এনএটিপি) নামে নতুন কর্মসূচি ২০০৭ সালের জুলাই থেকে অফিসিয়ালি শুরু হলেও চলতি মাসেই পুরোদমে কাজ শুরু হচ্ছে এ প্রকল্পের। এরই মধ্যে প্রকল্প পরিচালকসহ প্রকল্পের বিভিন্ন ইউনিটের লোকবল নিয়োগের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ করে আনা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে ঋণ দিয়ে কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার নামে বাংলাদেশকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করছে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক।
ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, তৃণমূল ও জাতীয় পর্যায়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন ও খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে কৃষি হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন খাত। অর্থকরী খাত থেকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জিডিপির ২৬ ভাগ আসে, যা বিশ্ব অর্থনীতির চার ভাগেরও বেশি। তাই ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এ খাতটি নিজেদের দখলে নিতে আগ্রহী।
বিশেষজ্ঞরা অভিযোগ করেন, কৃষি খাতে জিডিপির ২১.৭৭ ভাগ ও দেশের ৬৫ ভাগ কর্মসংস্থান হওয়ার পরও ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের নীতি অনুসরণ করায় কৃষি খাতের বরাদ্দ বছর শেষে ছেঁটে ফেলা হয়। বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটেও কৃষি খাতের বরাদ্দ ছেঁটে ফেলা হয়। গত বছরের মূল বাজেটে বরাদ্দ ছিল ৫ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা। কিন্তু সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে আনা হয় ৪ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা।
বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (ডাবলিউটিও) চুক্তি অনুযায়ী ভর্তুকির ক্ষেত্রে স্বল্পোন্নত দেশগুলো কৃষি খাতে মোট উৎপাদনের (জিডিপি) ১০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি দিতে পারে। কিন্তু চলতি অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ দেয়া হয় কৃষি জিডিপির মাত্র ১ দশমিক ৪১ শতাংশ। অথচ ভারতে ব্যাপক হারে এ ভর্তুকি বাড়ছে। আর ইউরোপের অনেক দেশ প্রতিটি গাভীর জন্যই প্রতিদিন ৩ ডলার ভর্তুকি দিচ্ছে। কিন্তু ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও আইএমএফের ঋণ শর্ত মানতে গিয়ে কৃষি ভর্তুকি বাড়াতে পারছে না বাংলাদেশ। অথচ দেশে কৃষি ভর্তুকি বাড়ানো না হলে অন্যান্য দেশের কৃষিপণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে এদেশের কৃষি ক্রমে ক্ষয়িষ্ণু খাতে পরিণত হবে বলে দেশের অর্থনীতিবিদরা মনে করেন।
তারা বলছেন, গত দুই দশকে কৃষি খাতের উন্নয়নে গড়ে বছরে ব্যয় করেছে ২ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা, যা উন্নয়ন খাতে সরকারি বিনিয়োগের ২৯ শতাংশ। এ সময় জাতীয় আয়ে কৃষি খাতের অবদান কমেছে ৪৫ থেকে ৩২ শতাংশ। বিনিয়োগকৃত অর্থের ৪০ শতাংশ পেয়েছে ফসল, মৎস্য, বন, পশুপালন উপ-খাতগুলো। বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানিসম্পদ উন্নয়ন খাতে খরচ হয়েছে ৪৫ শতাংশ, ৫ শতাংশ স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যার থেকে ধান ও গম ছাড়া অন্যান্য শস্য এবং কৃষির উপখাত অগ্রাধিকার তালিকায় অবহেলিত হয়েছে। পানিসম্পদ উন্নয়নের বেশির ভাগ অর্থ খরচ হয়েছে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে। সেচ অবকাঠামোর উন্নয়ন হয়েছে সামান্যই।
সবদিক বিবেচনা করে সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ ও সরাসরি ভর্তুকি প্রত্যাহারের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, কৃষকদের উৎপাদনের মূল্য নিশ্চিত না করা হলে তারা উৎপাদন কমিয়ে দিতে পারেন। এতে দেশ আবার খাদ্য সঙ্কটের দিকে যেতে পারে। তাই সরকার কৃষি ভর্তুকি প্রত্যাহার করার পথে এগোবে না।
উবিনীগের নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আখতার বলেন, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক সব সময় বেসরকারিকরণের পক্ষে কাজ করে। তাই তারা কৃষি সেক্টরে সংস্কার করে বেসরকারিকরণের পথ উন্মুক্ত করার চেষ্টা করছে।
কৃষি উপদেষ্টা ড. সি এস করিম বলেন, কৃষি উৎপাদন বাড়াতে কৃষকদের সাবসিডি অব্যাহত রাখতে হবে। তবে এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, শুধু ভর্তুকি বাড়ালেই চলবে নাÑ সরকারের অন্যান্য উন্নয়ন খাতের দিকেও নজর দিতে হবে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম বৃদ্ধির ফলে সরকারকে বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। ফলে অন্যান্য খাতের বরাদ্দে টান পড়তে পারে।

কপি চাষে বিপ্লব

১৯.১১.০৮
যায়যায়দিন ।। গোলাম মোস্তফা মেহেরপুর

আশির দশক থেকে মেহেরপুর জেলায় সবজি চাষের গোড়াপত্তন হলেও দীর্ঘ পথ পেরিয়ে একুশ শতকে এসে সবজি চাষের বিপ্লব ঘটে। বর্তমানে জেলার আবাদযোগ্য ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩০০ একর জমির ৪০ ভাগ জমিতে সবজি চাষ হচ্ছে। এর ৬০ ভাগই কপি। জেলায় এখন অর্থকরী ফসল হিসেবে কপি চাষকে ধরা হয়। এর আগে জেলায় ব্যাপক হারে তামাক চাষ হতো। তামাক চাষে চাষীরা লাভবান হলেও জমির উর্বরা শক্তি দিন দিন কমে যাচ্ছে এমন বোধ জাগ্রত হওয়ায় তারা সবজি চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ে।
মেহেরপুরের বিভিন্ন জায়গায় চোখে পড়বে মাঠের পর মাঠজুড়ে কপি ক্ষেত। এখানে এক বিঘা জমি থেকে নিম্নে ১৫ থেকে ৩৫/৪০ হাজার টাকার কপি উৎপাদিত হচ্ছে। মেহেরপুর জেলায় বছরে ৩০/৩৫ কোটি টাকা মূল্যের বিভিন্ন ধরনের সবজি উৎপাদিত হচ্ছে, যার অধিকাংশ আসে কপি থেকে। আধুনিক চাষাবাদের কল্যাণে এ জেলার ২৫৩টি গ্রামের মানুষের ভাগ্য বদলে গেছে

হাইব্রিড ধানের জাত আলোড়ন

১৯.১১.০৮
ডেসটিনি ।। মাদারীপুর প্রতিনিধি

মাদারীপুর সদর উপজেলার ছয়না গ্রামে সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে ব্র্যাক সোমবার বিনামূল্যে বিতরণ করা পাকা হাইব্রিড়ের ধান ‘আলোড়ন’ কর্তন করা হয়েছে। বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি দেখা গেছে। জানা যায়, ব্র্যাক ও কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের সহযোগিতায় ব্র্যাক কৃষি পুনর্বাসন কমসূচি (সিডর) প্রকল্পে ছয়না গ্রামে ৩/৪ মাস আগে হাইব্রিডের ধান ‘আলোড়ন’ বিতরণ করা হয়। ধান পেকে যাওয়ায় গত সোমবার ধান কর্তন উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। পরে স্থানীয় কৃষক আ. কুদ্দুস তালুকদারের বাড়িতে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ব্র্যাক এলাকা ব্যবস্থাপক (সিডর) কর্মকর্তা মো. ফরিদউদ্দিন আখতার। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কৃষকদের উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন কৃষি স¤প্রসারণ অফিসার রাশেদ হাসনাত, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আ. মালেক, ব্র্যাক কৃষি সমন্বয়কারী রেজাউল হোসেন ও সাংবাদিক এমএ আকবর খোকা। এ ছাড়াও বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক সাগর হোসেন তামিম, মো. নূরু ভূঁইয়া, কৃষক সিরাজ। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক কৃষিবিদ মো. শাহাদাত হোসেন, ব্র্যাক কর্মসূচি সংগঠক শহিদুল ইসলাম, এলাকা জনপ্রতিনিধি সিরাজুল হাওলাদার প্রমুখ।

কম্পোস্ট তৈরির নানা কৌশল

১৯.১১.০৮
ডেসটিনি ।। কৃষিবিদ মো. কামরুল আহসান ভূঁইয়া

আন্তর্জাতিক বাজারে রাসায়নিক সারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ফলে দেশীয় প্রাকৃতিক উৎস ব্যবহার করে কীভাবে ফসল চাষ করা যায় সে বিষয়ে ভাবতে হবে। আমাদের হাতের কাছেই অযতেœ পড়ে আছে কচুরিপানা, ফসলের অবশিষ্টাংশ, খড়কুটা, আগাছা, গৃহস্থালীর আবর্জনা, ঝরাপাতা ইত্যাদি। অথচ এগুলো সঠিক নিয়মে পচিয়ে তৈরি করা যায় কম্পোস্ট সার। কম্পোস্ট ব্যবহারে একদিকে যেমন ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায় অন্যদিকে মাটি গঠন-প্রকৃতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কম্পোস্ট তৈরির কাজে কচুরিপানা একটি উৎকৃষ্ট উপাদান, যা বর্ষাকালে আমাদের দেশের অধিকাংশ এলাকার আনাচে-কানাচে, খাল-বিল, ডোবা-নালায় পাওয়া যায়। এর সঙ্গে আগাছা ও শস্যের পরিত্যক্ত অংশ, লতাপাতা ইত্যাদি একত্রে মিশিয়ে তা পচিয়ে সহজেই কম্পোস্ট তৈরি করা যায়। উপকরণের অভাবে একটি মাত্র জিনিস দিয়েও কম্পোস্ট তৈরি সম্ভব।
কীভাবে তৈরি করবেন : আমাদের দেশে সাধারণত দুভাবে কম্পোস্ট তৈরি করা হয়। স্তূপ বা গাদা পদ্ধতি এবং গর্ত পদ্ধতি। সাধারণত বর্ষকালে স্তূপ পদ্ধতিতে এবং কম বৃষ্টি হয় এমন এলাকায় ও শুকনো মৌসুমে গর্ত পদ্ধতিতে কম্পোস্ট তৈরির সুপারিশ করা হয়। তুলনামূলকভাবে স্তূপ পদ্ধতিতে কম্পোস্ট সার তৈরি করা সহজ ও সুবিধাজনক। এ পদ্ধতিতে আবার দুইভাবে কম্পোস্ট সার তৈরি করা যায়। এক. দ্রুত স্তূপ পদ্ধতি এবং দুই. ধীর স্তূপ পদ্ধতি।
দ্রুত স্তূপ পদ্ধতি : খড়কুটো, লতাপাতা, বাড়ি ও বাগানের আবর্জনা, কচুরিপানা ইত্যাদি টুকরো করে কেটে গোবরের সঙ্গে ভালো করে মেশাতে হবে। গোবর ও জৈব পদার্থের অনুপাত হবে ১ঃ২-১ঃ৩। এ মিশ্রণ স্তূপাকারে সাজাতে হবে। স্তূপের আকার হবে ১০ ফুট দৈর্ঘ্য, ৪ ফুট প্রস্থ ও ৪ ফুট উঁচু, তবে উপকরণ প্রাপ্তি ও অন্যান্য সুবিধা অনুযায়ী দৈর্ঘ্য কমবেশি করা যেতে পারে। স্তূপ তৈরি করে উপরে কলাপাতা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে, যাতে বাষ্পীভবন হতে না পারে। ৪-৫ দিন পর স্তূপের ভেতরের অংশ খুব গরম হয়ে যেতে পারে। তখন প্রতি ২ দিন পরপর স্তূপ নাড়াচাড়া করে দিতে হবে। কম্পোস্ট স্তূপকে স্যাঁতসেঁতে অবস্থায় রাখতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে মাঝে মাঝে হালকাভাবে পানি ছিটিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে। এভাবে কম্পোস্ট স্তূপ করলে ২-৩ সপ্তাহ পর জৈবসার হিসেবে ব্যবহার করার উপযোগী হবে।
ধীর স্তূপ পদ্ধতি : এ পদ্ধতিতে কম্পোস্ট সার তৈরি করার জন্য মূল উপাদান হিসেবে কচুরিপানা ব্যবহার করা হয়। স্তূপের আকার হবে দ্রুত স্তূপ পদ্ধতির অনুরূপ। প্রথমে কচুরিপানা ও অন্যান্য আবর্জনা যেমনÑ গাছের পাতা, ধানের খড় ইত্যাদি ১৫ সেমি টুকরো করে কেটে নিয়ে ১৫-১৮ সেমি পর স্তর সাজাতে হবে। ওই স্তরের ওপরে ২০০ গ্রাম ইউরিয়া ও ২০০ গ্রাম টিএসপি ছিটিয়ে দেয়ার পর স্তূপের উপরভাগে ২.৫০-৫ সেমি. পুরু করে গোবরের আস্তর দিতে হবে। পরের স্তরে থাকবে উর্বর মাটি। এই স্তরটি হবে ১ ইঞ্চি পুরু। এভাবে ৪-৫টি স্তর তৈরি করে কাক্সিক্ষত উচ্চতার কম্পোস্ট স্তূপ করতে হবে, যার প্রতি স্তরে কচুরিপানা, খড়কুটা এসব এবং উপরোক্ত হারে রাসায়নিক সার, গোবর এবং উর্বর মাটির স্তর থাকবে। তবে উচ্চতা ৪ ফুটের অধিক করা উচিত নয়। স্তূপের ওপরে চালার ব্যবস্থা করতে হবে। সম্ভব হলে গাছের নিচে স্তূপ তৈরি করতে হবে। গাছের ছায়ায় যে তাপমাত্রা পাওয়া যায়, তা জৈব পদার্থের পচন ক্রিয়ার সহায়ক, রোদ বৃষ্টি থেকেও অনেকটা রক্ষা করে। এছাড়াও চালার ব্যবস্থা না করতে পারলে স্তূপের উপরিভাবে এঁটেল মাটির প্রলেপ দিতে হবে, যাতে ভেতরে বৃষ্টির পানি প্রবেশ না করতে পারে এবং অতি রোদে না শুকিয়ে যায়। স্তূপ তৈরি শেষ হলে গাছের বড় পাতা যেমনÑ কলাপাতা দিয়ে স্তূপের উপরিভাগে ঢেকে দিতে হবে যাতে বাষ্পীভবন হতে না পারে। কম্পোস্টের স্তূপ তৈরির কাজ শেষ করার প্রায় সপ্তাহ খানেক পর একটি শক্ত কাঠি স্তূপের মাঝখানে ঢুকিয়ে দেখতে হবে যে, গাদাটি অতিরিক্ত ভিজা কিনা। অতিরিক্ত ভেজা হলে ভেতরে বাতাস চলাচলের জন্য শক্ত কাঠি দিয়ে গাদার ওপরে মাঝে মাঝে ছিদ্র করে দিতে হবে। ২-৩ দিন পর গর্তগুলো মাটি দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে। আবার গাদা অতিরিক্ত শুকিয়ে গেলে ওপরে ছিদ্র করে পানি অথবা গো-চনা ঢেলে দেয়া যেতে পারে। তাড়াতাড়ি পচনের জন্য ১ মাস পর পর ২ বার গাদার স্তরগুলো উল্টিয়ে দিতে হবে। এ সময় কম পচা আবর্জনাগুলো গাদার মাঝখানে রাখতে হবে। সম্ভব হলে চৌকোনা বেড়া নির্মাণ করে তার ভেতর কম্পোস্ট তৈরি করতে হবে। এতে কম্পোস্ট স্তরগুলো ঠিক থাকে। পর্যাপ্ত পরিমাণ গো-চনা, গোবর, ইউরিয়া ইত্যাদি ব্যবহার করলে দেড় থেকে তিন মাসের মধ্যেই কম্পোস্ট পচে জমিতে ব্যবহার উপোযোগী সার প্রস্তুত হয়।

আলু মৌসুমের শুরুতেই মুন্সীগঞ্জে সারের মহৃল্য বস্তা প্রতি ৫ শ’ টাকা বৃদ্ধি

১৯.১১.০৮
যায়যায়দিন ।। মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি

আলুর মৌসুম শুরু হতে না হতেই মুন্সীগঞ্জ সদরের চরাঞ্চলের চরকেওয়ার ইউনিয়নে এক রাতের ব্যবধানে সারের মহৃল্য বস্টøাপ্রতি ৫০০ টাকা বেড়ে গেছে। মঙ্গলবার মুন্সীরহাটে আগের দিনের তুলনায় প্রতি বস্টøা সার ৫০০ টাকা বেশি মহৃল্যে বিত্রিক্র হয়। ফলে অনেক কৃষকই সার না কিনে বাড়ি ফিরে যান।
জানা যায়, সোমবার টিএসপি ২ হাজার ৯৮০ থেকে ৩ হাজার টাকায় বিত্রিক্র হলেও মঙ্গলবার সেই সার ৩ হাজার ৫০০ টাকা এবং এমওপি ২ হাজার ১০০ টাকা থেকে বেড়ে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে বিত্রিক্র করা হয়েছে। চরাঞ্চলের হোগলাকান্দির আবদুল হালিম, টরকীর রহমতউল্কèাহ, বকচর গ্রামের সোবহান খাঁ সোমবারের তুলনায় মঙ্গলবার বেশি মহৃল্যে টিএসপি এবং এমওপি সার কিনেছেন।

মানসম্পন্ন বীজ

১৮.১১.০৮
যায়যায়দিন ।। এম জি মহিউদ্দীন আহম্মদ

মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন করা জরুরি গমবীজের উৎপাদনশীলতা বাড়াতেও গবেষণা চলছে। গমের উচ্চ ফলনশীল বীজ উৎপাদনেও এগিয়ে যাওয়া জরুরি। পাশাপাশি রবি মৌসুমে চরাঞ্চল, হাওর, দেশের উত্তর জনপদে গম উৎপাদনে কৃষকদের উৎসাহিত করা জরুরি। শস্য বহুমুখী করার সুফল সম্পর্কে কৃষকদের অবগত করানো দরকার, যার মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে গম চাষ ও অন্যান্য রবিশস্যের আবাদ চলতে পারে। খাদ্যনিরাপত্তার জন্য গমের উৎপাদন বাড়ানোও অগ্রাধিকার পেতে পারে।
===========================
বাংলাদেশ পললঘটিত বিশ্বের সেরা ব-দ্বীপগুলোর একটিতে অবস্থিত বিধায় সুপ্রাচীনকাল থেকেই এ দেশে কৃষি উৎপাদন চলে আসছে। বহুমাত্রিক প্রাকৃতিক বিপর্যয় এদেশে মাঝে মধ্যে হয়ে থাকে বিধায় এ দেশের জনগোষ্ঠী সাহসী ও উদ্যমী। তাই শত বাধাবিপত্তি মোকাবেলা করেই এ জনগোষ্ঠী জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। কৃষিতে ধারাবাহিক উৎপাদন নিশ্চিত করতে এ দেশের কৃষক সেই সুদূর অতীতকাল থেকে বীজ উৎপাদন ও বীজ সংরক্ষণে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। তবে জনসংখ্যা বাড়ার প্রেক্ষাপটে আবাদি জমিতে উৎপাদিত ফসল থেকে সবার খাদ্যের জোগান অব্যাহত রাখা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে খাদ্য আমদানি করতে হয়। জনগোষ্ঠীর খাদ্যনিরাপত্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে তাই উৎপাদন বাড়ানোর তৎপরতা চলতে থাকে। খাদ্যনিরাপত্তা গড়তে আন্তর্জাতিক তৎপরতার সঙ্গে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব সৃষ্টি হয় ষাটের দশক থেকে। আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট (ওজজও)-এর সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠতে থাকে। পাশাপাশি বাংলাদেশে কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট, উদ্যান গবেষণা ইন্সটিটিউট এসব প্রতিষ্ঠানও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শুরুতে ইরি থেকে বীজ সংগ্রহ করে চুক্তিবদ্ধ চাষের মাধ্যমে এ দেশেই ধানের বীজ উৎপাদন করা হয় এবং কৃষকের মাঝে সরবরাহ হতে থাকে। বাড়তে থাকে ধানের উৎপাদনশীলতা। পরে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের অব্যাহত গবেষণার মাধ্যমে উচ্চ ফলনশীল ধান বীজ উদ্ভাবন, উৎপাদন ও কৃষকদের কাছে জোগান দেয়া চলমান আছে। কৃষকরা এ দেশের বীজ ব্যবহার করে ধানের উৎপাদন অব্যাহতভাবে বাড়াতে সক্ষম হচ্ছে। তবে ইতিমধ্যে হাইব্রিড খ্যাত উচ্চ ফলনশীল ধানবীজও কৃষকদের সরবরাহ করা হচ্ছে। হাইব্রিড ধানবীজ বহুজাতিক কোম্পানির মাধ্যমে কৃষকদের কাছে পৌঁছানো হচ্ছে, যা থেকে কৃষকরা আবার বীজ উৎপাদন করতে পারছে না। এ প্রেক্ষাপটে এ ধরনের হাইব্রিড বীজ ব্যবহারকারী কৃষককে কোম্পানির সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করতে বাধ্য করা হচ্ছে। বর্তমানে কৃষকরা হাইব্রিডের প্রতি ঝুঁকে পড়লেও দুটি কারণে ভীতও বটে। একটি কারণ হলো উচ্চ মূল্যে বীজপ্রাপ্তি এবং কোম্পানির ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হলে অব্যাহত ব্যয় বৃদ্ধির সম্ভাবনা। অন্য কারণটি হলো বীজের মান নিয়ে। জমিতে বীজ বপন বা রোপণের পর সন্তোষজনক উৎপাদন বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা। পক্ষান্তরে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট উদ্ভাবিত বীজ বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের মাধ্যমে কৃষকদের কাছে পৌঁছানো হয়, যার মান সম্পর্কে কোনো সংশয় নেই। এ বীজের ওপর কৃষকদের নিয়ন্ত্রণ বিদ্যমান থাকায় কৃষকশ্রেণীর কাছে এর গ্রহণযোগ্যতা দীর্ঘকাল থেকেই রয়েছে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট ছাড়াও বিনা (ইওঘঅ) উদ্ভাবিত ধানবীজও উচ্চ ফলনশীল। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট ও বিনা গবেষণা প্রতিষ্ঠান দুটির কার্যক্রম অব্যাহত সম্প্রসারণের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে ধানের বীজ উৎপাদন ও কৃষকের কাছে জোগান দেয়ার তৎপরতা বাড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে সাফল্য নিশ্চিত করা সম্ভব হলে বহুজাতিক কোম্পানির ওপর কৃষকদের নির্ভরশীলতা সৃষ্টি হবে না এবং কৃষকরা সাশ্রয়ী মূল্যে বীজের জোগানও পেতে পারবে।
আন্তর্জাতিক করপোরেট তৎপরতা ধানবীজ গবেষণায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান দুটির সম্প্রসারণ তৎপরতায় বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত করতে তৎপর হতে পারে। এ ধরনের অবস্থায় দেশজ বিনিয়োগের মাধ্যমে ধান গবেষণা কার্যক্রম সম্প্রসারণ অব্যাহত রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখা দরকার, পাঁচ দশক ধরে এ দেশের কৃষক উচ্চ ফলনশীল ধান উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকায় বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণেও তাদের অভিজ্ঞতা কম নয়। এ অবস্থায় উচ্চ ফলনশীল বীজের ওপর এ দেশের কৃষকদের স্বনির্ভরতাকে সংরক্ষণ করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। উল্লেখ্য, দাতাগোষ্ঠীর ওপর নির্ভর করে এ দেশের পাট উৎপাদন ও পাটনির্ভর শিল্পকারখানা বিলীন হওয়ার পথে। পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশে দাতাগোষ্ঠীর সহায়তায় পাটের উৎপাদন ও শিল্পের প্রসার অব্যাহতভাবে চলমান। দেশের পাট গবেষণা ইন্সটিটিউট চলমান সময়ে মৃতপ্রায়। এটিকেও জীবিত করা জরুরি। এখান থেকেও উচ্চ ফলনশীল পাটবীজ উদ্ভাবনের তৎপরতা চালানো জরুরি। বিশ্বে পরিবেশ সচেতনতা বাড়ার ফলে পাটের চাহিদা বাড়বে এতে সন্দেহের অবকাশ থাকতে পারে না। শুধু কাঁচা পাট নয় পাটজাত পণ্যের চাহিদা বাড়ারও বিপুল সম্ভাবনা বিরাজমান। তাই পাট গবেষণা প্রতিষ্ঠানটিকে বহুমাত্রিক গবেষণায় সম্পৃক্ত করার ব্যবস্থা নেয়াও জরুরি। পাটের বহুমাত্রিক ব্যবহারের ওপর নিবিড় গবেষণা কাজ পরিচালনা করা বিবেচ্য। এক সময় এ দেশে পাট ও পাটজাত পণ্য ছিল শীর্ষ রপ্তানি খাত, যা বর্তমানে সারির শেষদিকে অবস্থান করছে। এ অবস্থার পরিবর্তন করা অসম্ভব নয় বরং অব্যাহত কার্যকর তৎপরতা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে স্বল্পতম সময়েই পাট নিজ অবস্থান ফিরে পেতে পারে। এ তৎপরতায় প্রথমেই উচ্চ ফলনশীল পাটবীজ উদ্ভাবনের নিমিত্ত পাট গবেষণা প্রতিষ্ঠানটিকে তাৎক্ষণিকভাবে ঢেলে সাজানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
গমবীজের উৎপাদনশীলতা বাড়াতেও গবেষণা চলছে। গমের উচ্চ ফলনশীল বীজ উৎপাদনেও এগিয়ে যাওয়া জরুরি। পাশাপাশি রবি মৌসুমে চরাঞ্চল, হাওর, দেশের উত্তর জনপদে গম উৎপাদনে কৃষকদের উৎসাহিত করা জরুরি। শস্য বহুমুখী করার সুফল সম্পর্কে কৃষকদের অবগত করানো দরকার, যার মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে গম চাষ ও অন্যান্য রবিশস্যের আবাদ চলতে পারে। খাদ্যনিরাপত্তার জন্য গমের উৎপাদন বাড়ানোও অগ্রাধিকার পেতে পারে। গমের পাশাপাশি ভুট্টা চাষেও নজর দেয়া দরকার। দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভুট্টা চাষে কৃষকরা সক্রিয় হচ্ছে। ভুট্টা চাষে ব্যয়ের পরিমাণ কম হয় বিধায় কৃষকরা অধিক লাভবান হতে পারে। মাছের খাদ্য, পোলট্রি ফিড এবং গোখাদ্য উৎপাদনে ভুট্টার ব্যবহার রয়েছে বিধায় ভুট্টাচাষ অব্যাহতভাবে বাড়ার সম্ভাবনা বিরাজমান। এ প্রেক্ষাপটে ভুট্টা বীজের উচ্চ ফলনশীলতা নিশ্চিত করতেও গবেষণা জরুরি।
আমাদের দেশে উৎপাদিত ডালের স্বাদ বেশি বিধায় ডালবীজের ক্ষেত্রেও গবেষণার মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া দরকার। তৈল উৎপাদন বাড়াতেও বীজের উৎপাদনশীলতা বাড়ানো জরুরি।
শাকসবজির মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদনে সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হলে উৎপাদন বাড়ানো যেতে পারে। শাকসবজির উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়ানো সম্ভব হলে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় ইতিবাচক ভূমিকা থাকবে। কেননা আন্তর্জাতিক বাজারে শাকসবজির বিপুল চাহিদা বিদ্যমান। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে শাকসবজি বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। রপ্তানি বাজার বিরাট বিধায় শাকসবজির উৎপাদন অব্যাহতভাবে বাড়ানো সম্ভব হলে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
প্রতিটি ক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়ানো জরুরি। এ কাজের জন্য বহুমাত্রিক তৎপরতার মাঝে মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদনে স্বাবলম্বী হওয়া জরুরি। মানসম্পন্ন বীজের জন্য বিদেশনির্ভরতা ছাড়তে হবে। উন্নতমানের বীজ উৎপাদনে সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হলে এ দেশের কৃষকরা কৃষির প্রতিটি উপখাতে উৎপাদন বাড়ানোর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সাফল্য নিশ্চিত করতে পারবে। তাই এ কাজটি গুরুত্ব সহকারে করা উচিত।

এম জি মহিউদ্দীন আহমদ: কলাম লেখক, সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা।

আতর ধানের গল্প

১৮.১১.০৮
যায়যায়দিন ।। শেখ সেলিম ঝিনাইদহ

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাধুহাটি ইউনিয়নে মাঠের পর মাঠে এখন এক ভিন্নধর্মী ধান চোখে পড়ছে। আতর আলীর উদ্ভাবিত এই ‘আতর ধান’-এর আশাতীত ফলন হচ্ছে। কৃষকরা এই ধান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
সদর উপজেলার সাধুহাটি ইউনিয়নের আসান নগর গ্রামের হরিপদ কাপালির উদ্ভাবিত ‘হরি ধান’ এ এঞ্চলে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। হরিপদ কাপালি এই সুবাদে জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কৃত হয়েছেন। হরিপদ কাপালির পরে একই ইউনিয়নের ধর্মতলা গ্রামের আরেক মেঠো বিজ্ঞানী (আবিষ্কারক) আতর আলীর উদ্ভাবিত ধানের সাফল্য ও সম্ভাবনা কৃষকদের কৌতূহলী করে তুলেছে।
সরেজমিন এ এলাকার ধানের ক্ষেত ঘুরে দেখা গেছে, আতর আলীর উদ্ভাবিত ধানের বাম্পার ফলন। দু’একদিনের মধ্যেই ধান কাটা শুরু হবে। এলাকাবাসী গিয়াস উদ্দীন সেতু, কৃষক মনিরুল ইসলাম, রফিকুল ও সাইদুল জানালেন, এ ধান চাষ করে গত বছর তারা বিঘা প্রতি ২৩-২৪ মণ করে ধান পেয়েছিলেন। এ বছর যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছিল তারপরও আতর ধানের এতোটা ভালো ফলন হবে তা আশা করা যায়নি। ধানের চেহারা দেখে মনে হচ্ছে এবারও বিঘাপ্রতি ২৩ থেকে ২৪ মণ ফলন পাওয়া যাবে। কৃষকরা আরো জানান, এই ধান গাছ লম্বা হয়। সার কম লাগে। চিকন চাল হয়, ভাত সুস্বাদু। প্রতি ছড়ায় ৩০০-৩২০টি ধান হয়। অন্যান্য ধানের থেকে ১০-১৫ দিন আগে কাটা যায়। কা- শক্তিশালী হওয়ায় সহজে হেলে পড়ে না। বিচালিও ভালো দামে বিক্রি হয়। বিচালি বিক্রির টাকা দিয়ে ধান চাষের খরচ অনেকটাই উঠে আসে।
আবিষ্কারক আতর আলীর বয়স ৪৫ বছর। সাধুহাটি ইউনিয়নের ধর্মতলা গ্রামের মৃত সুরুজ মিয়ার ছেলে তিনি। আতর আলী জানান, ২০০১ সালে তার জমির মধ্যে একটা ব্যতিক্রমধর্মী বড় ধান গাছ পান। সেই গাছটির ধান সংগ্রহ করে বীজ হিসেবে রেখে দিয়ে পরের বছর আলাদা চাষ করেন। এরপর থেকে এভাবে প্রতি বছর এ ধানের আবাদ করতে থাকেন। এক সময় এ ধানের গুণাগুণ এলাকার মানুষদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। কৃষকরা আতর আলীর কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে চাষ শুরু করেন। মাঠের সেরা ধান হিসেবে কৃষকদের কাছেও স্বীকৃতি মিলেছে। কৃষকরা আতর আলীর উদ্ভাবিত ধানটির নামকরণ করেছে ‘আতর ধান।’ এ বিষয়ে ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক আ. কাদের সরকার, ঝিনাইদহ কৃষি অফিসার নাসির উদ্দীন, সাধুহাটি বংকীরা ব্লকের কৃষি উপসহকারী তোফাজ্জেল হোসেন ঠা-ু জানান, অজ্ঞাত জাতের এ ধানের ফলন অন্য জাতের ধানের তুলনায় ভালো। কৃষকরা ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটে এ ধানের নমুনা পাঠিয়ে গবেষণার দাবি জানিয়েছেন। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে এ ধানের চাষ সম্প্রসারণ হলে কৃষি খাতে ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে।

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor