Thursday, March 5, 2009

লোডশেডিংয়ে দিশেহারা সাটুরিয়ার কৃষক

২৫.০২.০৯
ডেসটিনি ।। সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলায় লোডশেডিংয়ে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। পুড়ে গেছে ৩ শতাধিক বিদ্যুৎচালিত মোটর। অনেকেই ইরি-বোরো মৌসুমে সেচের অভাবে আবাদি জমি চাষ করতে পারছেন না। কৃষকরা জানান, পতিত থাকবে প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমি। রোপণকৃত ইরি-বোরোর চারায় মড়ক ধরেছে। এলাকাবাসী জানান, মোমবাতি জ্বালিয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থীরা লেখাপড়া করছে। কারণ একটাইÑ বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সাটুরিয়া উপজেলায় ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ২২টি ব্লকে বিদ্যুৎচালিত গভীর ও অগভীর ২ হাজার ৬০০ নলকূপের মাধ্যমে বোরোর ইরির আবাদ হয়ে থাকে। কিন্তু ঘন ঘন বিদ্যুৎ যাওয়ার কারণে অনেকেই আবাদ করতে পারছেন না। যাও আবাদ করেছে, তাও সেচের অভাবে প্রচ- রোদের খড়তাপে ক্ষেতের মাটি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। ফলে ব্লকের বিদ্যুৎ বিদ্যুৎচালিত ইরি-বোরোর রোপণকৃত চারার মড়ক ধরেছে। আবাদ নিয়ে মোটরমালিক ও কৃষকরা মহাবিপদে পড়েছেন। অনেক মোটরমালিক প্রজেক্টের টাকা ফেরত দিয়ে দিচ্ছে। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় অনেক জমিই পতিত থাকবে।
সাটুরিয়া উপজেলার বিদ্যুৎচালিত ২২টি ব্লকের মধ্যে গোপালপুর ১৫, ছনকা ১৫, দিঘলিয়া ৬৩, দেলুয়া ৫২, বালিয়াটী ১২, হাজিপুর ১১, গর্জনা ২৭, নওগাঁও ৭০, দরগ্রাম ৫০, আকাশী ২, তিল্লি ৪, পারতিল্লি ১০, হরগজ উত্তর ৪০, হরগজ দক্ষিণ ৬৭, সাটুরিয়া ১৩, ধুল্লা ৫১, বৈতলা ২৩, ধানকোড়া ৫৬, কৈট্টা ৭, মহিষালোহা ৭০, ফুকুরহাটি ৫৮ ও জান্না ৬টি গভীর ও অগভীর নলকূপ রয়েছে। এ বছর ২২টি ব্লকে ইরি-বোরোর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৬ হাজার ৬০০ হেক্টর। কিন্তু প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা জানান, যেভাবে বিদ্যুতের লোডশেডিং তা অর্জন করা সম্ভব নয়। দিনরাত মিলে বিদ্যুৎ থাকে মাত্র এক থেকে দেড় ঘণ্টা। সাটুরিয়া উপজেলায় এ মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ৮০ মেগাওয়াট। সেখানে পাচ্ছে ১৫ থেকে ২০ ওয়ার্ড।
বৈলতলা বাছট গ্রামের কৃষক মো. তোফাজ্জল হোসেন জানান, এক বিঘা জমিতে ইরি-বোরোর আবাদ করতে খরচ হয় শুরুতেই ৪ হাজার টাকা। এবার আমি প্রায় ১০ বিঘা জমি বিদ্যুৎচালিত মোটরে আবাদ করেছি। আমার শুরুতেই খরচ হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। খরচের টাকা উঠবে কি না জানি না, তবে এভাবে বিদ্যুতের লোডশেডিং চলতে থাকলে প্রান্তিক কৃষকদের পথে বসতে হবে।
বালিয়াটী গর্জনা গ্রামের গভীর নলকূপের ম্যানেজার মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, আমার ইরি-বোরো প্রজেক্টের বিঘাপ্রতি হারের টাকা কৃষকদের মাঝে ফেরত দিয়ে দিয়েছি। আমার প্রজেক্টে অর্ধেক জমিই পতিত থাকবে। যাও ইরি-বোরোর চারা রোপণ করেছে, তাও সেচের অভাবে মরে যাচ্ছে। আবাদি জমির দিকে তাকালে মনে হয় জমিগুলো পানির জন্য হাহাকার করছে। সামনে চৈত্র মাস, এভাবে বিদ্যুৎ চলতে থাকলে রোপণকৃত ইরি-বোরোর জমিগুলো মরুভূমিতে পরিণত হবে।
বিদ্যুতের বার বার লোডশেডিংয়ের কারণে প্রায় ৩ শতাধিক বিদ্যুৎচালিত মোটর পুড়ে গেছে। মোটর মালিকরা ইলেক্ট্রনিকের দোকানে এসে ভিড় জমাচ্ছে। মোটরমালিকরা অভিযোগ করে বলেন, ঘন ঘন বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার কারণে মোটর জ্বলে যাচ্ছে। এদিকে প্রান্তিক কৃষকরা প্রতিদিন রোপণকৃত চারায় সেচ দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করলেও মোটরমালিকরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
এ ব্যাপারে সাটুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ দৈনিক ডেসটিনিকে জানান, আমি বালিয়াটী ইউনিয়ন জগন্নাথপুর এলাকাসহ কয়েকটি ব্লকে বোরো রোপণকৃত জমি পরিদর্শন করি। ঘন ঘন বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে রোপণকৃত বোরো চারার মড়ক ধরেছে এ কথা স্বীকার করে বলেন, বিদ্যুতের এ অবস্থা চলতে থাকলে এ উপজেলায় বোরো লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নাও হতে পারে। ফলে কৃষকরা ফসল ঘরে তুলতে না পারলে প্রান্তিক কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। তিনি আরো জানান, বিদ্যুতের উন্নতি না হলে পতিত থাকবে অনেক জমিই।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।