Thursday, March 5, 2009

গলাচিপায় কম দামে ধান বিক্রি করছে কৃষক

২৫.০২.০৯
ডেসটিনি ।। গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

চালের দাম প্রত্যাশিত হারে না কমলেও ধানের দাম পড়ে গেছে ব্যাপকভাবে। কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে কেবলই হা-হুতাশ করছেন। এ সময় এভাবে ধানের দাম পড়ে যাওয়ায় তাদের মাথায় হাত পড়েছে। বোরো লাগাতে উৎপাদন খরচের চেয়েও কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা। বাজার পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হওয়ার কারণে ধানের বেপারিরাও প্রতিনিয়ত ধান কিনে লোকসানের মুখে পড়ছেন। ফলে অনেক ধান বিক্রি না করে বাজার থেকে ফিরিয়ে নিচ্ছেন বলেও খবর পাওয়া গেছে। অনুরূপভাবে চাতাল ব্যবসায়ীরা অব্যাহত লোকসান দিয়ে চাল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। মনপ্রতি তাদের রকমভেদে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা হারে লোকসান গুনতে হচ্ছে। এমনকি বাজার এখনো কমতির দিকেই আছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। গত জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত রকমভেদে প্রতি মন ধান ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কম দামে বিক্রি হয়েছে। অথচ একই ধান মনপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা কমে বর্তমান বাজারে কৃষকরা বিক্রি করছেন। এ অবস্থায় ধানের বাজারদর শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা ভেবে কোনো কূল-কিনারা করতে পারছেন না কৃষকরা। আর তাই ধানের অস্থিতিশীল বাজার পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে শস্য ভা-ারখ্যাত দক্ষিণাঞ্চলসহ পটুয়াখালীর গলাচিপার কৃষক পরিবারগুলো। বিশেষ করে এ অবস্থার পরিবর্তন না ঘটলে প্রান্তিক চাষিরা মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। তাদের মাথা তুলে ঘুরে দাঁড়ানোই যেন অনেকটা অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে জানিয়েছেন একাধিক কৃষক। এদিকে অস্বাভাবিকভাবে ধানের বাজার পড়ে যাওয়ায় কৃষকরা চলতি মৌসুমের রকমারি ফসল চাষ নিয়েও ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় চলতি মৌসুমের ধান, আলু, তরমুজ, সবজিসহ রকমারি ফসল চাষের জন্য সার, কীটনাশকসহ অন্যান্য খরচের জোগান দিতে কৃষকরা সম্পূর্ণভাবে অসহায় হয়ে পড়েছেন। সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত মৌসুমে তাদের ধান চাষ করতে প্রতিটি ক্ষেত্রে দ্বিগুণ থেকে পাঁচ গুণ হারে ব্যয় করতে হয়েছে। সেই হারে তারা তাদের ফসলের দাম পাচ্ছেন না। উপজেলার পূর্ব-নেতা গ্রামের কৃষক রফিকুল আকন জানান, গত দুই মাস আগে কাঁচা ধানের যে দাম ছিল এখন শুকনো ধানেরও সেই দাম নেই। এক বিঘা জমিতে ধান লাগানো থেকে শুরু করে কাটা, মাড়াই ও জমির মালিককে বর্গাবাবদ টাকা দেয়া পর্যন্ত তার প্রায় ৯ হাজার টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৩৬০ টাকার ৩০ কেজি ইউরিয়া সার, ৮০০ টাকার ১০ কেজি টিএসপি, ৪৪০ টাকার ১০ কেজি এমওপি, ৫০ টাকার ১০ কেজি জিপসাম, ১০০ টাকার ১ কেজি রোবন, ৭০০ টাকার কীটনাশক, ৫০০ টাকার বীজ লাগানো বাবদ ৫০০ টাকা, কাটা বাবদ ৭০০ টাকা, ক্ষেত ও ফসল পরিচর্যা বাবদ ৪০০ টাকা ও জমির মালিককে ৪ হাজার টাকা দেয়া। অথচ সেই জমি থেকে সর্বোচ্চ ১২ মন হারে ধানের ফলন হয়েছে। বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী সেই ধান তাকে ৪৮০ থেকে সাড়ে ৫০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। অর্থাৎ প্রতি বিঘায় তাদের অনেক টাকা লোকসান দিতে হয়েছে। আর এ হিসাবে তার মতো কৃষক পরিবারের অবস্থা কি হতে পারে তিনি এমন পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেন এ প্রতিবেদকের কাছে। এ অবস্থা কিন্তু তার একার নয়, গলাচিপা উপজেলাসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় কৃষক পরিবারেরই।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।