Thursday, March 5, 2009

বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিং ইরি-বোরো আবাদ হুমকির মুখে

২৬.০২.০৯
ইত্তেফাক ।।

বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে ইরি-বোরো আবাদ ব্যাহত হচ্ছে। কোনো কোনো এলাকার কৃষকরা জমিতে সেচ দিতে না পেরে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এসএসসি এবং দাখিল পরীক্ষার্থীরা। কল-কারখানার উৎপাদন হুমকির মুখে। খবর ইত্তেফাক সংবাদদাতাদের।

নেত্রকোনা: নেত্রকোনায় পর্যাপ্ত বিদ্যুতের অভাবে ইরি-বোরো জমিতে সেচের সমস্যা হচ্ছে বলে কৃষকরা অভিযোগ করেছে। বিশেষ করে পল্লী বিদ্যুতের লোডশেডিং বেশি হচ্ছে বলে জানা গেছে। নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোনায় প্রায় ৫ হাজার সেচ যন্ত্র পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ নিয়ে জমিতে পানি সরবরাহ করছে। এ বছর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি নতুন করে আরো ৭শ’ সেচ যন্ত্রে সংযোগ প্রদান করেছে। ফলে দিনদিন পল্লী বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ না পাওয়াতে অনেক সেচ যন্ত্র বন্ধ থাকছে।

নীলফামারী: নীলফামারী জেলার ৬টি উপজেলায় বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে ইরি-বোরো আবাদ নিয়ে কৃষকরা চিন্তিত হয়ে পড়েছে এবং মিল কল-কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে মারাত্মকভাবে। বিদ্যুৎ বিভাগ রাত আটটার পর শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখলেও কুলাতে পারছে না।

নীলফামারী জেলায় এবছর ইরি-বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৯ হাজার ১৬৩ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে উফশী ৪৫ হাজার ৬১৩ হেক্টর, হাইব্রিড ৩৩ হাজার ৫শ’ ও স্থানীয় জাতের ৫০ হাজার হেক্টর জমি রয়েছে। বীজতলা তৈরির পর প্রায় ৬০ ভাগ জমিতে চারা লাগানোর কাজ ইতিমধ্যে সমাপ্ত হয়েছে। কিন্তু বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং-এর কারণে কৃষকরা প্রয়োজন মত জমিতে পানি দিতে পারছে না। এ সময় ইরি-বোরো ক্ষেতের পানি খুব প্রয়োজন হলেও বিদ্যুতের লোডশেডিং, ভোল্টেজ আপ-ডাউনের কারণে কৃষকরা সেচ যন্ত্র চালাতে পারছেন না। এতে করে ইরি-বোরো আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে কিনা সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

সৈয়দপুর গ্রীড সূত্র জানায়, ৫০ থেকে ৫৫ মেগাওয়াট চাহিদার মাত্র ১৯ থেকে ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বরাদ্দ দেয়ায় গোটা নীলফামারী জেলা ছাড়াও নীলফামারী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, সৈয়দপুর, পার্বতীপুর, ফুলবাড়ি, বিরামপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, পাগলাপীর এলাকাসহ বৃহত্তর রংপুর-দিনাজপুর জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

কয়রা: পানির জন্য হাহাকার পড়ে গেছে কয়রা উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে। বোরো চাষীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। পানি নির্ভর বোরো আবাদের ভরা মৌসুম চললেও জমিতে প্রয়োজনমত এবং কোথাও কোথাও একেবারে পানি না পেয়ে চরম উৎকণ্ঠা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে কৃষকদের মাঝে। আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না বলে আশংকা দেখা দিয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি বছর কয়রা উপজেলাতে ৬ হাজার বিঘা জমিতে সেচ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করে সেচ কার্যক্রম শুরু করা হয়। চাষীরা শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি উঠাবে এ আশা করে তারা ঝুঁকি নিয়ে বোরো চাষ করে। হাজার হাজার বোরো চাষঅ এবার সেচ যন্ত্র মালিকদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। সেচ নির্ভর এ বোরো ধানের আবাদ করতে গিয়ে উচ্চ মূল্যে সেচ দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে কৃষকরা। সরকারিভাবে বৈদ্যুতিক সেচের ক্ষেত্রে ভর্তুকি দেয়া হলেও তার কোন সুবিধা ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীরা ভোগ করতে পারছে না। সেচযন্ত্র মালিকরা এবার সবকিছুর দাম বাড়ার অজুহাতে কৃষকদের নিকট থেকে ইচ্ছেমত অর্থ আদায় করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

কুমিল্লা উত্তর: বিদ্যুতের লোডশেডিং-এর কারণে কুমিল্লা উত্তরের দাউদকান্দি, হোমনা, চান্দিনা মুরাদনগর, দেবীদ্বার, মেঘনা ও তিতাস উপজেলার জনগণের চরম দুর্ভোগ হচ্ছে। এ এলাকায় সন্ধ্যার পর পরই বিদ্যুৎ চলে যায়। রাত ১০টার পর বিদ্যুৎ আসলেও সারা দিন এই আসে এই যায় খেলা চলে। ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজনের এলাকাটিতে ১৭/১৮ মেগাওয়াট ও পাওয়া যায় না। জাতীয় গ্রীড থেকে মাত্র ২/১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যায় বাকিটা পাওয়া যায় সামিট গ্রুপ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত কুটুম্বপুর পাওয়ার প্লাট থেকে।

সিঙ্গাইর: কৃষক এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে বোরো আবাদ নিয়ে। কিন্তু অব্যাহত লোডশেডিংয়ের কারণে বিপাকে পড়েছে এখানকার বোরো কৃষকরা। বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে সেচ সংকটে ইরি-বোরো চাষাবাদে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। প্রতিদিন ঘন্টার পর ঘন্টা লোডশেডিংয়ের কবলে পড়তে হয় পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহকদের। সন্ধ্যার পর বিদ্যুৎ চলে যাওয়া নিত্য-দিনের ঘটনা। দিনের বেলায়ও তাই। এ অবস্থা বিরাজ করতে থাকলে আবাদ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে কৃষক মনে করেন। অপরদিকে এসএসসি পরীক্ষার্থীরাও লেখাপড়া করতে পারছে না। ছাত্র-ছাত্রীদের লেখা-পড়ায় মারাত্মক অসুবিধা হচ্ছে।

আন্ডার ফ্রিকুয়েন্সীজনিত সমস্যার কারণে ঘন ঘন বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করে বলে জানা গেছে। আর এ কারণে সেচ গ্রাহকদের মোটরও নষ্ট হতে যাচ্ছে।

বাঞ্ছারামপুর: বাহ্মণবাড়িয়া জেলা বাঞ্ছারামপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বিদ্যুতের অব্যাহত লোডশেডিং-এ জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এতে ইরি-বোরো চাষ এবং এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষার্থীদের লেখাপড়া চরমভাবে বিঘিœত হচ্ছে। বিদ্যুতের কারণে উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে শতাধিক ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প-কারখানা, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান অচল হয়ে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ফলে ইরি ব্লকে রীতিমত পানি দিতে না পারায় কৃষকদের হাতে লাঞ্ছিত হচ্ছে ব্লক ম্যানেজাররা।

কালিয়াকৈর: উপজেলার নয়টি ইউনিযনের সর্বত্র বিদ্যুৎ সংকট চরমে পৌঁছেছে। ফলে কৃষকেরা কৃষিক্ষেত্রে নিয়মিত সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়েছেন। নাবী ইরি জমিগুলোতে বিদ্যুতের অভাবে যথাসময়ে ইরি রোপণ করা যাচ্ছে না। অনেক ইরি ক্ষেত সেচের অভাবে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। দিন-রাতের ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১০ থেকে ১৫ ঘন্টাই বিদ্যুৎবিহীন চলছে। ফলে কৃষিক্ষেত্র ছাড়াও শিল্প ক্ষেত্রেও নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে। উপজেলার প্রায় ৪শ’ শিল্প কারখানা বিদ্যুতের অভাবে একাধিক শিফট করতে পারছে না। ফলে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শফিপুর, মৌচাক, কালামপুর, ভান্নারা প্রভৃতি এলাকার শত শত শিল্প কারখানাগুলো। বিদ্যুতের অভাবে ছাত্রদের পড়াশুনার দারুণ ক্ষতি হচ্ছে। তাদের সামনে পরীক্ষা থাকায় প্রস্তুতি ঠিকমত নিতে পারছে না।

ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) ঃ সেচ মৌসুম শুরু হওয়ার সাথে সাথে নজীরবিহীন লোডশেডিংয়ের কারণে উপজেলার সর্বত্র বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে উপজেলার বোর আবাদ হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভার আওতায় এবার ১৯ হাজার হেক্টর জমিতে বোর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও অর্জিত হয়েছে ২০ হাজার ৯শ’ ৫০ হেক্টর। এবার এসব জমিতে সেচ দেয়ার জন্য মাঠে রয়েছে বিদ্যুৎচালিত গভীর নলকূপ ২শ’ ১৯টি। এলএলপি ৬টি এবং অগভীর নলকূপ ১ হাজার ৭০টি। কিন্তু বিদ্যুতের অভাবে কৃষকরা তাদের জমিতে পানি সেচ দিতে পারছে না।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।