Thursday, June 11, 2009

কৃষিতে আট হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি

ডেসটিনি- ০১.০৫.০৯
শফিকুল ইসলাম : আসন্ন বাজেটে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি রাখার প্রস্তাব থাকছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি কৃষকের স্বার্থসংরক্ষণ এবং আমদানি নির্ভরতা কমাতে সরকার যুগান্তকারী এ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। ৮ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকির এ প্রস্তাব কার্যকরি হলে কৃষিতে এবারের ভর্তুকি হবে গত বছরের তিনগুণ। একইসঙ্গে সারাদেশের কৃষকদের জন্য কার্ড চালুর প্রস্তাবনা রাখা হবে বাজেটে। এ কার্ড দিয়ে সার, সেচ ও ডিজেলের ভর্তুকির টাকা বিতরণ করা হবে কৃষকদের মধ্যে।
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী জানান, বিগত বছরগুলোয় বিশ্বব্যাংক ও দাতা সংস্থাগুলো কৃষিখাতে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ ও ভর্তুকি কমানোর জন্য সরকারের ওপর চাপ দিয়ে থাকলেও বর্তমানে কোনো চাপ নেই। তিনি জানান, বিশ্বমন্দার কারণে আমেরিকার সরকারও সেদেশে ভর্তুকি বাড়িয়েছে। আর এ কারণে তারা এ নিয়ে এবার কোনো বাধা দিচ্ছে না। আর এ সুযোগটি আমরা কৃষির উন্নয়নে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছি। উৎপাদন হলে আমদানি নির্ভরশীলতা কমিয়ে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা যাবে বলে তিনি জানান।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি কৃষি খাতে ভর্তুকির জন্য হিসাব-নিকাশ চূড়ান্ত করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে ৮ হাজার কোটি টাকার চাহিদা পেশ করা হয়েছে। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে এ খাতে ভর্তুকি রাখা হয় ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা ৪ হাজার ২৮৫ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। চলতি বোরো মৌসুমে বাম্পার ফলনের প্রেক্ষাপটে কড়া নজরদারি ও ভর্তুকি ব্যবস্থাপনার সুষ্ঠু সমন্বয়ের মাধ্যমে উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সরকার এরই মধ্যে মন্দা মোকাবিলায় বিশেষ প্যাকেজে কৃষিখাতে ভর্তুকি বর্তমানের ৪ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৫ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা এবং কৃষিঋণ (পুনঃমূলধনীকরণ) খাতে ভর্তুকি ১ হাজার কোটি টাকা থেকে ৫০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা করা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা
(খাদ্য) খাতে বর্তমান ভর্তুকি ৪ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা থেকে ৩৭৪ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৪ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা করা হয়েছে। এতে বর্তমানে বরাদ্দ ১১ হাজার ১৩০ কোটি টাকা থেকে ৩ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা বেড়ে সংশোধিত বাজেটে এসব খাতে মোট বরাদ্দের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৪ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা।
অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত বলেন, কৃষিতে বাজেটের প্রায় ৮০ ভাগই হচ্ছে অনুন্নয়ন ব্যয়। গত এক দশকে জিডিপিতে কৃষির অবদান কমে বর্তমানে ২১ দশমিক ১১ ভাগে উপনীত হয়েছে। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার শর্তানুযায়ী কৃষিতে ১০ ভাগ ভর্তুকি দেয়ার ব্যবস্থা থাকলেও আইএমএফ ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের চাপে বাংলাদেশে গত তিন বছর ধরে এ হার মাত্র শূন্য দশমিক ৩ ভাগ। এ বছর যা শূন্য দশমিক দুই ভাগে নেমে এসেছে।
চলতি অর্থবছরে ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ভর্তুকির সিংহভাগ ব্যয় হয়েছে সারের পেছনে। ইউরিয়া, নন-ইউরিয়া, পটাশ, টিএসপি উৎপাদন ও আমদানির বিপরীতে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে ১ হাজার কোটি টাকারও বেশি। সরকারি ও বেসরকারি আমদানিকারকরা উৎপাদন ও আমদানির তুলনায় অনেক কম দামে কৃষকদের হাতে সার তুলে দিচ্ছেন। আমদানিকারকরা সরকারের তরফ থেকে ভর্তুকি পাচ্ছেন ১৫ শতাংশ হারে। ভবিষ্যতে এর পরিমাণ বাড়ানো হতে পারে। কৃষকদের উন্নততর বীজ সরবরাহ করতে বিএডিসিকে থোক বরাদ্দ দেয়া হয় দেড়শো কোটি টাকা। ডিজেল ও বিদ্যুৎচালিত পাম্পের বিপরীতে ৩০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হয়। আখ উৎপাদনে ভর্তুকি দেয়া হয় সাত কোটি টাকার বেশি। এ ছাড়া আখের দুটি অর্থবছরের ভর্তুকির বকেয়া বাবদ সরকার ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। সব মিলিয়ে ৩ হাজার ৯০০ টাকার সংশোধিত ভর্তুকি নির্ধারণ করা হয়। নতুন অর্থবছরে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হলে অতিরিক্ত ব্যয় ভর্তুকিতে সমন্বয় করা হবে। সব মিলিয়ে আগামী বছরে তা হবে ৮ হাজার কোটি টাকার মতো।
সিপিডির প্রধান গবেষক ড. উত্তম কুমার দেব বলেন, বাজেটে কৃষি উৎপাদন ও গণমানুষের আয় বাড়নোর ব্যাপারটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে। তিনি আরো বলেন, কৃষি ব্যয় কমানোর জন্য সরকারকে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ পরিকল্পনা নিতে হবে। কৃষি যন্ত্রাংশ, সেচের খরচ, বীজপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা ও নতুন প্রযুক্তি বিষয়ে সরকারকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার দাবি জানান তিনি।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।