Thursday, June 11, 2009

ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপের উদ্যোগ , বদলে যাচ্ছে সনাতনি ধারা

ইত্তেফাক- ০৩.০৫.০৯
।। মনির হায়দার ।। বদলে যাচ্ছে ভূমি জরিপের সনাতনী ধারা। বর্তমান মহাজোট সরকার ভূমি জরিপের ক্ষেত্রে প্রচলিত প্রাচীন ও জটিল পদ্ধতির পরিবর্তে ডিজিটাল জরিপ পদ্ধতি প্রবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে একটি পাইলট প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যেই রাজধানীর অদূরে সাভারের ৫টি মৌজায় ডিজিটাল পদ্ধতিতে জরিপ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পাইলট প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ আগামী ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করার কথা। এই প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে অর্জিত অভিজ্ঞতার আলোকে পর্যায়ক্রমে সারাদেশে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপের কার্যক্রম হাতে নেয়া হবে। এই লক্ষ্যে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের একটি প্রকল্প প্রস্তাব সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ইত্তেফাককে এসব তথ্য জানান।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বর্তমান বাংলাদেশ ভূখণ্ডে সর্বপ্রথম ভূমি জরিপের কাজ শুরু হয় ১৮৮৭ সালে, যা ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে বা সিএস রেকর্ড নামে পরিচিত। টানা প্রায় ৫৪ বছর ধরে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত এই জরিপ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সিএস রেকর্ডকে এখনো পর্যন্ত জমির মালিকানা নির্ণয়ের মূল ভিত্তি হিসাবে বিবেচনা করা হয়। জমিদারী প্রথা উচ্ছেদের পটভূমিতে ১৯৫৫ সালে স্টেট এক্যুইজিশন অপারেশনের আওতায় নতুন জরিপ কার্যক্রম শুরু হয়, যা এসএ রেকর্ড নামে পরিচিত। তবে এটি কোন সরেজমিন জরিপ ছিল না। জমিদারদের আওতাধীন প্রজা বা মালিকদের নামে মালিকানা স্বত্ব এবং খাস জমির তালিকা প্রস্তুত করাই ছিল এই জরিপের উদ্দেশ্য। এসএ রেকর্ড প্রণয়নের কাজ শেষ হয় ১৯৬২ সালে।

অন্যদিকে সিএস জরিপের সমাপ্তি লগ্নে জমির মালিকানা ও প্রকৃতি পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৪০ সালে বৃহত্তর ফরিদপুর ও বৃহত্তর বরিশাল জেলায় শুরু হয় রিভিশনাল সার্ভে বা সংশোধনী জরিপ, যা আরএস রেকর্ড নামে পরিচিত। বৃহত্তর ফরিদপুর জেলায় আরএস রেকর্ড প্রণয়নের কাজ ১৯৪৫ সালের মধ্যে শেষ হলেও দেশ ভাগের কারণে বৃহত্তর বরিশাল জেলার জরিপ কাজ অসম্পন্ন থেকে যায়। পরবর্তীকালে বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইনের আওতায় ১৯৫২ সালে বরিশাল জেলার আরএস জরিপ সম্পন্ন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় পর্যায়ক্রমে বৃহত্তর ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, কুষ্টিয়া ও পাবনা জেলায় আরএস জরিপ পরিচালনা করা হয়। বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার আরএস জরিপ আজও শেষ হয়নি।

১৯৮৪ সালে এরশাদ সরকারের আমলে ভূমি সংস্কার অধ্যাদেশের আওতায় দেশের সবকটি জেলায় ভূমি জরিপের জন্য স্থায়ী কাঠামো স্থাপন ও চলমান রেকর্ড হালনাগাদকরণের লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে ১০টি জোনাল অফিসের মাধ্যমে জরিপ কার্যক্রম শুরু করা হয়। পাশাপাশি একটি বিশেষ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা মহানগরী এলাকায় ভূমি জরিপের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়। এছাড়া নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদী ও সমুদ্র-উপকূলবর্তী অঞ্চলে জেগে উঠা চর বা নতুন ভূখণ্ড জরিপের জন্য ‘দিয়ারা সেটেলমেন্ট অপারেশন ’ নামে পৃথক একটি জরিপ কার্যক্রম চালু রয়েছে।
ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ইত্তেফাককে বলেন, ভূমি জরিপের প্রচলিত পদ্ধতি একেবারেই সনাতনী এবং অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ। ভূমি সম্পর্কিত অধিকাংশ মামলা-মোকদ্দমার অন্যতম প্রধান কারণ হলো রেকর্ড জটিলতা। সনাতনী পদ্ধতির জরিপের নানা ত্রুটির কারণে একজনের জমি আরেকজনের নামে রেকর্ড হওয়ার ঘটনা হর-হামেশাই ঘটে থাকে। জমির পর্চা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক বিলম্ব জনসাধারণকে সীমাহীন ভোগান্তির মুখে ঠেলে দেয়। এসব কারণে বর্তমান সরকার স্বল্পতম সময়ে ভূমি জরিপের কাজ সম্পন্ন করে নিখুঁত পর্চা প্রকাশের লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে সারাদেশে ডিজিটাল জরিপ পদ্ধতি প্রবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে। এ লক্ষ্যে সাভার উপজেলার ৫টি মৌজায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে একটি পাইলট প্রকল্প। সাভারের কলমা, আউকপাড়া, জিঞ্জিরা, আরকান ও খাগান মৌজায় পরীক্ষামূলক ডিজিটাল জরিপ কার্যক্রম শেষ হবে আগামী ৩০ জুন।
এই কর্মকর্তা বলেন, সাভারের পাইলট প্রকল্পটি সফল হলে পর্যায়ক্রমে সারাদেশে এই পদ্ধতিতে ভূমি জরিপ কার্যক্রম হাতে নেয়া হবে। সেই ক্ষেত্রে প্রতি ৫ বছর অন্তর নতুন পর্চা ও মৌজা নকশা প্রণয়নের নিয়মিত ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। তিনি জানান, ডিজিটাল জরিপের মাধ্যমে মাত্র ৬ মাসের মধ্যে ভূমির অবস্থান ম্যাপসহ পর্চা প্রকাশ করা সম্ভব হবে এবং এই পদ্ধতিতে জমির দাগের মাপ ৯৫ শতাংশ নিখুঁত হবে। এর ফলে ভূমি সম্পর্কিত মামলা-মোকদ্দমার হার ৮০ শতাংশ কমে যাবে এবং ভূমি বিষয়ক রেকর্ড ও তথ্যাদি আরও নিরাপদভাবে সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি আরও জানান, ২০১৪ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে সারাদেশে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপ কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে ৩ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব সম্প্রতি ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে ইত্তেফাক প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপকালে ভূমি মন্ত্রী রেজাউল করিম হীরা বলেন, বর্তমান সরকার তার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ ’শ্লোগানের আলোকে ভূমি জরিপ ও সামগ্রিক ভূমি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমকে সম্পূর্ণরূপে যুগোপযোগী ও আধুনিকায়ন করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। সেই লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই ‘সাভার ডিজিটাল জরিপ’ শীর্ষক পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি সারাদেশে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।