Thursday, June 11, 2009

চা শিল্পের উন্নয়ন ও উৎপাদন বাড়াতে ৯১৭ কোটি টাকার প্রকল্প বছরে আয় হবে, ৫শ’ কোটি টাকা

ইত্তফোক-১০.০৫.০৯

মুহাম্মদ নিজাম উদ্দিন, চট্টগ্রাম অফিস ।।
চা শিল্পের উন্নয়ন ও উৎপাদন বাড়াতে ৯১৭ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে চা বোর্ড। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বছরে চা উৎপাদন বাড়বে ৪০ মিলিয়ন কেজি। আর এ থেকে বছরে রাজস্ব আয় হবে ৫০০ কোটি টাকা ।

এ প্রসঙ্গে চা বোর্ডের সদস্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) মোহাম্মদ আবুল কাশেম ইত্তেফাককে বলেন, ‘আমরা চা শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে পরামর্শ করে প্রকল্পটি সরকারের কাছে পাঠাবো। দেশের চা শিল্পের মতো লাভজনক অন্য কোনো ব্যবসা নেই। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা গেলে বছরে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে।’

দেশে বর্তমানে ১৬৩টি চা বাগান রয়েছে। এসব বাগান থেকে বর্তমানে প্রায় ৬০ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে ৭৪টি চা বাগান রুগ্ন। দেশের চাহিদা মিটাতে প্রায় ৫০ মিলিয়ন কেজি চায়ের প্রয়োজন হয়। বাকি চা বিদেশে রপ্তানি করা হয়। চা বোর্ড জানায়, দেশের চা বাগানগুলোতে উন্নয়নমূলক কোনো কাজ না হওয়ায় এবং বিরূপ আবহাওয়ার কারণে ক্রমেই চা উৎপাদন কমে যাচ্ছে। স্বাধীনতার পর থেকে চা শিল্পের উন্নয়নে সরকারিভাবে কোনো আর্থিক বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।

চা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, চা শিল্পের উৎপাদন বাড়াতে একটি ৫ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটির নাম দেয়া হয়েছে ‘স্ট্র্যাটেজিক ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান্ট ফর টি ইন্ডাস্ট্রি অব বাংলাদেশ ভিশন ২০২১’। ২০২১ সালে চায়ের উৎপাদন ১০০ মিলিয়ন কেজিতে উন্নীত করতে এ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। দুই বছরের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নে যে ব্যয় হবে তা উঠে আসবে। প্রকল্পে অর্থায়ন সরকারের পক্ষে সম্ভব না হলে দাতাদেশ ও সংস্থার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।

আরো জানা যায়, ৫ বছর মেয়াদি এ প্রকল্প তিন দফায় বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। প্রথম দফায় ৩৬৬.৯৬ কোটি টাকা, দ্বিতীয় দফায় ৩৯৭.২২ কোটি টাকা ও তৃতীয় দফায় ১৫৪.৯৯ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। আর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে চা শিল্পের উন্নয়নে ১২ দফা সুপারিশ করা হয়েছে প্রণীত এ পরিকল্পনায়। এসব সুপারিশের মধ্যে রয়েছে উন্নয়নমুখী চা বাগানগুলোর উন্নয়ন করা, রুগ্ন বাগানের যতœ নিতে ঋণ সুবিধা প্রদান, ছোট বাগান সম্প্রসারণ, চা ফ্যাক্টরির উন্নয়ন, টি এস্টেটে গাছ লাগানো, চা ছাড়া বাগানের অন্য ফসলের উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ, চা শিল্প কম্পিউটারাইজড, শ্রমিকদের দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণ, পিডিইউ ও বিডিআরআই শক্তিশালী করা ও শ্রমিক ওয়েলফেয়ার ফান্ড গঠন করা।

চা বোর্ড সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকার কৃষিখাতে ঋণ দিতে পারলে চা শিল্পে ঋণ দিতে সমস্যা কোথায়? ইতিপূর্বে চা শিল্পে যে ঋণ দেয়া হয়েছে তা ব্যাংকের মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের দেয়া হয়েছে। ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে চা বোর্ডের কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। চা বোর্ডের মাধ্যমে সরকার ঋণ সুবিধা প্রদান করলে চা শিল্পে উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। গৃহীত প্রকল্পের আওতায় স্মল হোল্ডিং টি চাষের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে। বর্তমানে ২৯৬টি স্মল হোল্ডিং টি বাগান রয়েছে। নতুন প্রকল্পের আওতায় এর পরিমাণ বৃদ্ধি করে ৫ হাজারে উন্নীত করা হবে। এতে সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর জমিতে নতুনভাবে আবাদ হবে। প্রকল্পে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও পঞ্চগড় এলাকায় এসব বাগান বাস্তবায়ন করা হবে। একটি চা গাছ লাগানোর তিন বছর পর চা উৎপাদিত হয়। বাগানগুলো থেকে ৬০ বছরের পুরনো রুগ্ন চা গাছগুলো সরিয়ে নতুনভাবে গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেয়া হবে। চা বাগানগুলোতে রাস্তাঘাট, পুল, কালভার্ট উন্নয়নে কোনো বরাদ্দ নেই। এসব বাগানের রাস্তাগুলোর অবস্থা অত্যন্ত করুণ। বর্তমানে চা বাগানগুলোতে দেড় লাখ শ্রমিক কাজ করছে। বাগানগুলোর যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য ইতিমধ্যে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়ে একটি প্রকল্প সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।