
১৫.০৯.০৮
।।যায়যায়দিন।। চাঁদপুর প্রতিনিধি
মৎস্য চাষ আর হ্যাচারিতে মাছের পোনা উৎপাদন করে জিরো থেকে হিরো হলেন যুবক মিজানুর রহমান। মাত্র ১০ হাজার টাকার পুঁজিতে চার বছরের মাথায় ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে সে এখন কোটিপতি। নিজে আর্থিকভাবে সফল হলেও এরই মধ্যে এলাকায় একজন সমাজসেবক হিসেবে তার নাম ছড়িয়ে পড়েছে। মেঘনাপাড়ের জনপদ ফরিদগঞ্জ উপজেলার আইটপাড়া গ্রামে নিরলস পরিশ্রম করে জীবনযুদ্ধে বেড়ে ওঠা মিজানের সাফল্যগাথা এখানে তুলে ধরা হলো ।
চার ভাই আর পাঁচ বোনের মধ্যে মিজানুর রহমান তৃতীয়। বাবা গ্রাম্য ডাক্তার রমজান আলী। মা হনুফা খাতুন একজন গৃহিণী। একে তো নিত্য অভাব, তার ওপর নয় ভাইবোনের বড় সংসার। ২০০২ সালে এইচএসসি পাসের পর নানা কারণে তাকে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে ফেলতে হলো। জানতে পারলেন সরকারের যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ চলছে। ছুটে গেলেন সেখানে। মাছ চাষের ওপর তিন মাসের প্রশিক্ষণ নিলেন। গ্রামে ফিরে ১০ হাজার টাকা আর তিনটি পুকুর নিয়ে মিজান শুরু করলেন মাছ চাষ। অল্প ক’দিনে বেশ ভালো করলেন। বাড়তে থাকলো পুঁজি সঙ্গে পুকুরও। ২০০৬ সালে শুরু করলেন হ্যাচারিতে মাছের পোনা উৎপাদন। মনোসেক্স তেলাপিয়া, রুই, কাতলা, মৃগেল, পাঙ্গাশ ইত্যাদি।
বর্তমানে প্রায় ১০০ একরের ২০টি পুকুরে মাছ চাষ করছেন মিজান। তার প্রতিষ্ঠানে অর্ধশত কর্মচারী কাজ করছেন। চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বেপারীরা এসে তার কাছ থেকে পোনা নিচ্ছেন। চলতি মৌসুমে শুধু মনোসেক্স তেলাপিয়ার পোনা উৎপাদন হয়েছে এক কোটি। বিক্রি করেছেন ৬০ লাখ টাকা। এতে নিট মুনাফা হয়েছে ১৬ লাখ টাকা। তার কাছ থেকে পোনা নিয়ে চাঁদপুরের দুটি আশ্রয়ণে সেনাবাহিনীর দুর্জয় চব্বিশ প্রকল্পে নদীতে খাঁচায় মাছ চাষ হচ্ছে ।
চাঁদপুরে অস্থায়ী সেনাক্যাম্পের উপঅধিনায়ক মেজর নিজাম মৎস্য চাষী মিজানের বিশাল প্রকল্প দেখে বেশ প্রশংসা করেছেন। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক নজরুল ইসলাম তার সহকর্মীদের নিয়ে মিজানের হ্যাচারিতে গিয়ে অনেকটা অভিভূত হয়েছেন। তিনি যায়যায়দিনকে জানান, মিজান প্রশিক্ষণ নিয়ে বসে থাকেনি। সে অন্যদের জন্য মডেল। হয়তো একজন সফল মৎস্য চাষী হিসেবে একদিন জাতীয় পদক ছিনিয়ে আনবে সে। মিজানুর রহমান এখন শুধু নিজের নয়, সমাজ বিনির্মাণেও কাজ করছেন। এলাকার যে কোনো উন্নয়নমূলক কাজে মানুষজন তাকে কাছে পাচ্ছে। এতে সমাজকে কিছু দিতে পেরে তিনি নিজেও গর্ববোধ করেন।
No comments:
Post a Comment