Tuesday, September 23, 2008

এবার ওরা ঘুরে দাঁড়াবেই

২৩.০৯.০৮
যায়যায়দিন ।। পটুয়াখালী প্রতিনিধি

ব্র্যাক থেকে নিজের নামে ২০ হাজার টাকা আর আশা থেকে স্ত্রীর নামে ১৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে আমন চাষাবাদে মাঠে নেমেছেন পটুয়াখালীর বাউফলের মহাশ্রাদ্ধি গ্রামের প্রান্তিক চাষী মতলেব কাজী (৫০)। নিজের ৫০ শতক ও অন্যের বর্গাসহ দেড়কানি জমিতে এবার আমন ধানের চাষ করছেন তিনি। গত বছরেও একই পরিমাণ জমিতে আমন চাষ করেছিলেন। কিন্তু সিডর সবকিছু ল-ভ- করে দিয়েছে। ক্ষেতেই মিশে গেছে উঠতি আমন ফসল। মাত্র ২০ মণ ধান ঘরে তুলতে পারেন তিনি। এ অবস্থায় বাঁচার তাগিদে তাকে নতুন করে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে নামতে হয় চাষাবাদের মাঠে। চলতি মৌসুমে এখন ক্ষেতে আমন চারা রোপণ প্রায় শেষ। সামনে তার সোনালি স্বপ্ন। সিডরের ক্ষতি কাটিয়ে ঘুড়ে দাঁড়ানোর নিরন্তর চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি।
একই এলাকার কৃষক আবদুস সালামের ঘরবাড়ি সিডরে বিধ্বস্ত হয়। বিনষ্ট হয় ক্ষেতের ফসল। এখন তাকে থাকতে হচ্ছে ঝুঁপড়ি ঘরে। এবারে তার ঘরে খোরাক (খাবার) ওঠেনি, রাখতে পারেননি প্রয়োজনীয় বীজ ধান। একদিকে খোরাকি চাল কিনতে হচ্ছে, অন্যদিকে আগামীর জন্য নামতে হয়েছে চাষাবাদে। এ অবস্থায় তাকে বাধ্য হয়ে জড়িয়ে পড়তে হয়েছে মহাজনের কর্জ-দাদনে, আর এনজিও’র ঋণের জালে। গত বছরের মতো এবারেও তিনি নিজের ৪০ কড়া (৯০ শতক), আর পাট্টা নিয়ে দুই কানি জমিতে চাষাবাদ করেছেন। তিনি জানান, এখন পরিবারের খোরাকি চাল হাওলাত করে খেতে হচ্ছে। চার মাস পর আমন ধান উঠলে প্রতি মণ চালের দাম পরিশোধ করতে হবে দুই হাজার টাকা। কর্জ-দাদনে মহাজনের কাছ থেকে আনা ১২ হাজার টাকায় পাঁচ মাসে পরিশোধ করতে হবে ১৮ হাজার টাকা। বীজ ধান ও চারা বীজ কেনাসহ চাষাবাদ সম্পন্নের জন্য আরো টাকার প্রয়োজন হওয়ায় গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ১৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন স্ত্রীর নামে। এ ঋণ আর কর্জ-দাদনে জড়িয়ে পড়ার চিত্র শুধু আবদুস সালামেরই নয় মজিবর সিকদারসহ আরো অনেক প্রান্তিক চাষীর। এরপরেও মনোবল হারাননি তারা। এবারে আর কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দিলে তারা সিডরের ক্ষতি অনেকটা কাটিয়ে উঠতে পারবেন বলে আশাবাদী।
পটুয়াখালীসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সিডরে জানমালের ক্ষতি হয় ব্যাপক। অধিকাংশ এলাকার উঠতি আমন ফসল মিশে যায় ক্ষেতের মাটিতে। জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী এ জেলায় দুই লক্ষাধিক হেক্টর জমির আমন ফসল দুর্যোগকবলিত হয়। এর মধ্যে ৯০ হাজার হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে উৎপাদন ক্ষতি হয় এক লাখ ৬২ হাজার মেট্রিক টন চাল। টাকার অঙ্কে এ ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। সিডর বিধ্বস্ত এলাকায় ফসলের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে গ্রহণ করা হয়েছে কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচি। চলতি মৌসুমে জেলায় দুই লাখ ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে চার লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন চাল। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে ৫১৭ মেট্রিক টন আমন বীজ ধান ও সার।
জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. কফিল উদ্দিন জানান, এ অঞ্চলের অধিকাংশ জমি এক ফসলী। কৃষকরা আমন ফসলের ওপর নির্ভরশীল। তাই তারা সিডরের ক্ষতি পোষাতে চলতি আমন মৌসুমে আগেভাগে মাঠে নেমেছেন।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor