Monday, January 26, 2009

বৃটেনে সবজি রপ্তানির সোনালী হাতছানি

২৬.০১.০৯

ইত্তেফাক ।। ফখরুল ইসলাম
সিলেট অঞ্চলের মানুষের প্রিয় বেশকিছু সবজির একটি বিশাল বাজার রয়েছে বৃটেনে। সাতকরা, জারা লেবু, আদা লেবু, খাসিয়া পান, নাগা মরিচ, লাইপাতা, লতা ইত্যাদির জন্য বৃটেনে বসবাসকারী সিলেটীরা লালায়িত। আর তাদের মাধ্যমে এসব সবজির জনপ্রিয়তা বৃটিশসহ বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর কাছেও বাড়ছে। এই অবস্থায় বাংলাদেশ থেকে বৃটেনে সবজি রপ্তানির খুবই উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখছেন রপ্তানির সাথে সংশ্লিষ্টরা। অবশ্য দীর্ঘদিন ধরে সিলেট থেকে কিছুসংখ্যক রপ্তানিকারক বৃটেনে সবজি রপ্তানি করে আসছেন। তবে নানা কারণে এই খাতে এখনো কাঙিক্ষত উন্নয়ন হয়নি। এব্যাপারে সরকারি উদ্যোগ-পৃষ্ঠপোষকতাও তেমন নেই। ফলে রপ্তানিকারকদের পক্ষে বিভিন্ন সমস্যা মোকাবেলা অনেক ক্ষেত্রে কঠিন হয়ে পড়ে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বৃটেনের বাজারে বিপুল চাহিদা থাকা সত্ত্বেও গত প্রায় ৭ মাস ধরে সাতকরা, আদা লেবু, কাগজী লেবু, জারা লেবু, শসা ও বেগুন রপ্তানিতে জটিলতা চলছে। এসব লেবুতে ক্ষতিকারক উপাদান এবং বেগুন ও শসায় পোকা রয়েছে দাবি করে বৃটেনের সরকারি স্বাস্থ্য সংস্থা ‘ডিপার্টমেন্ট অব এনভায়রনমেন্ট ফুড রিসার্চ এসোসিয়েশন (ডেফরা)’ এগুলো তাদের দেশে প্রবেশে বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে। এমনকি এসব পণ্যের অনেকগুলো বড় চালান তারা ডেষ্ট্রয় (নষ্ট) এবং রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে জরিমানাও আদায় করছে। সিলেটের জালালাবাদ ভেজিটেবল এক্সপোর্টার গ্রুপের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ডেফরা যে অজুহাতে এসব পণ্য তাদের দেশে প্রবেশ করতে বাধা দিচ্ছে তা সঠিক নয়। কারণ এসব পণ্য আমাদের দেশের লোকজন নিয়মিতই খাচ্ছেন। উপরন্তু সিলেটের রপ্তানিকারকদের দাবিতে প্রায় চার মাস আগে বাংলাদেশ এগ্রিকালচার ইন্সটিটিউটের একটি বিশেষজ্ঞ টিমও জৈন্তাপুরের একাধিক লেবু বাগানের লেবু পরীক্ষা করে ক্ষতিকারক উপাদান পাননি। এই অবস্থায় রপ্তানিকারকরা বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য সরকারি উচ্চ পর্যায় থেকে বৃটেনের ডেফরার সাথে জরুরিভিত্তিতে আলোচনার দাবি জানিয়েছেন।

সিলেটের রপ্তানিকারকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে সবজি রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার হলো বৃটেন। সেদেশে নানা জাতের লেবু, বেগুন, শসা, পান, শিম, কাঁচা মরিচ, নাগা মরিচ, ডাঁটা, ডাঁটাশাক, লালশাক, লাইপাতা, কচু, মুখি, লতা, চিচিঙ্গা, চালতা প্রভৃতির অনেক চাহিদা রয়েছে। লন্ডন সিটি, ম্যানচেস্টার, বার্মিংহাম, শেফিল্ড, লিবারপুল, নিউক্যাসলসহ বড় বড় শহরগুলোতে এসব সবজির ক্রেতা অনেক। দীর্ঘদিন ধরে সিলেট থেকে এসব সবজি কম-বেশি রপ্তানি হচ্ছে। তবে তা আশানুরূপ পর্যায়ে বৃদ্ধি পায়নি। সিলেটে অবস্থিত রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোও এব্যাপারে তেমন কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারছে না বলে রপ্তানির সাথে সংশ্লিষ্টরা জানান। তারা বলেন, নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও গত বছরের প্রথম ৭-৮ মাস সিলেট থেকে প্রতিমাসে প্রায় ২শ’ টন করে সবজি রপ্তানি হয়েছে। পরবর্তীতে ডেফরার বিধি নিষেধ, পাউন্ডের দরপতনসহ আরো কিছু কারণে রপ্তানির পরিমাণ কমে যায়। বর্তমানে সিলেট থেকে ( লেবু, শসা ও বেগুন বাদে) প্রতিমাসে প্রায় দেড় শ’ টন সবজি বৃটেনে রপ্তানি হচ্ছে। এ থেকে মাসে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে। ডেফরা যেসব পণ্যে বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে তার সমাধান হলে রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয় বহুগুণ বাড়বে। সংশ্লিষ্টরা আরো জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে জেট ফুয়েলের দাম কমলেও পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বিমান ভাড়া সে তুলনায় কমানো হয়নি। এতে রপ্তানিকারকরা আগ্রহ হারাচ্ছেন। সংশ্লিষ্টরা রপ্তানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান সকল সমস্যা সমাধান এবং সময়োপযোগী নানা পদক্ষেপের মাধ্যমে এই খাতের উন্নয়নে সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

জালালাবাদ ভেজিটেবল এক্সপোর্টার গ্রুপের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর আহমদ ইত্তেফাককে বলেন, বৃটেনে সবজি রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সুযোগ রয়েছে। এই সুযোগকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারলে দেশ উপকৃত হবে। তিনি বিমান ভাড়া কমানো, রপ্তানিকারকদের সহায়তা প্রদান ও ডেফরার সাথে আলোচনা করে বিধি-নিষেধ আরোপিত পণ্যগুলো রপ্তানির পথ সুগম করার দাবি জানান।

সিলেট মেট্রোপলিটন বিজনেস কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সিলেটে সরকারি উদ্যোগে ভেজিটেবল এক্সপোর্ট জোন প্রতিষ্ঠা করে সেখানে সবজি উৎপাদন এবং উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মান সুরক্ষিত রেখে উন্নত প্যাকেজিং করে তা বিদেশে রপ্তানি করলে এই খাত দ্রুতই সমৃদ্ধ হবে। কারণ এ খাতে রয়েছে সম্ভাবনার বিরাট হাতছানি।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor