Monday, January 26, 2009

বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা ও ধানের বাম্পার ফলনে মূল্যস্ফীতি হ্রাস পাচ্ছে

অর্থনীতিবিদদের অভিমত

ইত্তেফাক ।। জাহাঙ্গীর শাহ কাজল ।।

বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা এবং স্থানীয় বাজারে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম হ্রাস পাওয়ার প্রেক্ষাপটে মূল্যস্ফীতির লাগামে টান পড়েছে। মূল্যস্ফীতি ধারাবাহিকভাবে কমতে শুরু করেছে। অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর) অর্থ্যাৎ গত তিন মাস ধরে মূল্যস্ফীতি সিঙ্গেল ডিজিটে রয়েছে। সর্বশেষ গত ডিসেম্বরে (পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে) মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, চলমান বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা এবং চলতি মৌসুমে বোরো ও আমনের বাম্পার ফলনের কারণে মূল্যস্ফীতি কমে এসেছে। এতে সামনের দিনগুলোতেও মূল্যস্ফীতি আরো কমতে পারে।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ হিসাব মতে, গত ডিসেম্বরেই ২০০৮ সালের সর্বনিম্ন ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছে। ডিসেম্বরে খাদ্যপণ্যে শহরাঞ্চলের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে মূল্যস্ফীতির হার বেশি ছিল। খাদ্যপণ্যে শহরে মূল্যস্ফীতির হার ৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ, গ্রামে এই হার ৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

চলতি বছরের শুরু থেকেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মূল্যস্ফীতির হার বাড়তে থাকে। ২০০৮ সালে এপ্রিল এবং সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর প্রান্তিক ছাড়া কখনোই মূল্যস্ফীতি সিঙ্গেল ডিজিটে নামেনি। গত জানুয়ারিতে সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ মূল্যস্ফীতি ছিল।

২০০৮ সালের শুরু থেকেই দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছিল না। এসময় দরিদ্র ও সীমিত আয়ের মানুষের আয় না বাড়ায় প্রকৃত ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। কিন্তু জুলাই-আগস্ট থেকে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হওয়ার পরপরই আন্তর্জাতিক বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমতে শুরু করে। এক সময় আন্তর্জাতিক বাজারে টন প্রতি চালের দাম হাজার ডলার হয়ে যায়, এখন তা ৫০০ ডলারের নিচে নেমে এসেছে। এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম প্রায় এক-পঞ্চমাংশে নেমে গেছে। জুলাইতে পরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি দেড়শ’ ডলারে উন্নীত হয়েছিল, গত সপ্তাহে তা ৩৩ ডলারে নেমে গেছে। এ কারণে স্থানীয় বাজারেও জ্বালানি তেলের দাম দুই দফায় কমানো হয়েছে। এতে পণ্যের উৎপাদন ও পরিবহন ব্যয় কমেছে। এদিকে বোরো মৌসুমকে সামনে রেখে ইউরিয়া ব্যতীত অন্যান্য সারের দামও অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে। এতে চালের দাম আরো কমবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে চালের দামই বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিম্নবিত্তরা ও দিনমজুররা তাদের আয়ের প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ব্যয় করে থাকে খাদ্যপণ্য কিনতে। এর সিংহভাগই ব্যয় হয় চালে। বাকি ২০ শতাংশ আয় তারা জীবনধারণের অন্যান্য পণ্য কিনতে ব্যয় করে থাকেন।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক কাজী শাহাবুদ্দীন বলেন, আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় প্রেক্ষাপটই মূল্যস্ফীতি কমাতে সহায়তা করেছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একজন মানুষের চাল কেনায় কত ব্যয় হচ্ছে তাই হলো এদেশের মূল্যস্ফীতি পরিমাপের মৌলিক বিষয়। অন্যদিকে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার সুফল পাচ্ছে বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত আমদানি নির্ভর দেশগুলো। জ্বালানি তেলের দাম এক-পঞ্চময়াংশে নেমে আসায় উৎপাদন ব্যয় কমে আসছে।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor