Sunday, September 7, 2008

বন্যা: ফসল ব্যবস্থাপনায় কোথায় আছি আমরা?

০৮.০৯.০৮
।।ইত্তেফাক।। মাটি ও মানুষের কৃষি

গত কয়েকদিন ধরেই দেশের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত আছে। ভারতের আসাম ও মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতের প্রভাবে দেশের নদ নদীগুলির পানি বেড়েই চলেছে। পদ্মা, যমুনা, সুরমাসহ এর শাখা নদীগুলির পানি বিপদসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নিম্নাঞ্চলগুলো প¬াবিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সদ্য রোপিত আমন ফসল ক্ষতিগ্র¯- হয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে নানামুখি সংকট ছড়িয়ে পড়েছে। বন্যা কবলিত এলাকায় গতবারের দীর্ঘতম দুই দফা বন্যার তুলনায় পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ পর্যায়ে যায়নি। তবে দেশবাসীর আতংক রয়েছে। এই আতংক আমন ফসল রক্ষা নিয়ে। কারণ গতবার আমন মৌসুমে দুইবারের প্রলম্বিত বন্যা এবং প্রলয়ংকারী সিডরে ১৫ লাখ টন খাদ্যশস্যের সংকট দেখা দেয়। যার পুরোটাই আমন ফসল। অর্থাৎ সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয় আমন ফসল। তারপর খাদ্যচিš-ায় অনেকটাই দিশেহারা হয়ে পড়েন দেশের মানুষ। আমদানীর অজুহাতে আকাশচুম্বি হয়ে ওঠে চালের দাম। তারপর বোরো মৌসুমে ধানের রেকর্ড পরিমাণ ফলন পেয়ে মানুষ অনেকটাই সাহসে বুক বাঁধেন। ঘাটতি পূরণের স্বপ্ন দেখেন, কিন্তু বা¯-বতা হলো চালের দাম কমেনি বরং দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। খাদ্যশস্যের উৎপাদনে কোন রকম বিপর্যয়ের প্রভাবই হতে পারে মারাত্মক। গতবারের বন্যা ও সিডরের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার প্রশ্নে এবারের আমন মৌসুম অত্যš- গুরুত্বপূর্ণ। এবার বন্যা কতখানি মোকাবিলা করা যাবে কিংবা বন্যার হাত থেকে আমন ফসল রক্ষা করা যাবে তার ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু।

ভৌগলিক কারণেই বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের দেশে নতুন কিছু নয়। তার ওপর জলবায়ুর পরিবর্তনে স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশ অনেক বেশি দুর্যোগ প্রবণ হয়ে উঠছে। এই সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার চেয়ে দুর্যোগসহন ক্ষমতা অর্জন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে নির্দ্বিধায় বলা যায়, গবেষণা ও স¤প্রসারণে আমরা দুর্বল হয়ে আছি। ভীষণ দুর্বল। আমরা শুধু শুনেই চলেছি খরা, বন্যা কিংবা লবণাক্ততা সহনশীল ধান ও অন্যান্য ফসলের জাত কৃষক পর্যায়ে ছড়ানোর কথা। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে এর বি¯-ার দেখা যাচ্ছে না। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলহানী ঘটার সময় আমরা আমাদের ব্যর্থতা নিরূপণ করতে পারি। দেশ সংকটে পড়লে আমাদের টনক নড়ে। কিন্তু সংকট থেকে কোন রকম উত্তরণ ঘটলেই আমরা ভুলে যাই আমাদের অবস্থা ও অবস্থানের কথা।

এত বঞ্চনার ভেতরও ক’দিন আগে বেশ আশান্বিত হলাম কিশোরগঞ্জের কাটিয়াদিতে গিয়ে। গচিহাটি গ্রামের প্রগতিশীল এক কৃষক তার বুদ্ধিমত্তা নিয়ে এলাকার বি¯-ৃত জমিতে তিন মৌসুমে ধান উৎপাদন নিশ্চিত করার একটি উদ্যোগ নিয়েছেন। ওই কৃষক বোরো মৌসুম শেষ হওয়ার পর পরই বোরো মৌসুমেরই বি আর ২৮ জাতের ধান আউশ মৌসুমে ড্রাম সিডারের মাধ্যমে বুনে ১২০ দিনের স্থলে ৮৭ দিনে ফলন নিশ্চিত করেছে। এর মধ্য দিয়ে তিনি একদিকে ধান উৎপাদন সময়সীমা যেমন এগিয়ে এনেছেন ৩৩ দিন, অন্যদিকে আউশের বিঘাপ্রতি ৭ থেকে ৮ মণ ফলনের স্থলে পেয়েছেন ১১ মণ ধান। কিশোরগঞ্জের গোটা হাওর অঞ্চলের জন্য ওই প্রগতিশীল কৃষকের এবারের এই পরীক্ষামূলক স্বল্পমেয়াদী আউশ আবাদ এক নতুন দীগš- উন্মোচন করতে যাচ্ছে। দেশের নীচু ও বন্যা প্রবণ এলাকার জন্য ড্রাম সিডারে বোনা পদ্ধতিতে আউশ আবাদের মধ্য দিয়ে আসতে পারে দারুন সাফল্য। আমার জানামতে এ ধরনের প্রযুক্তি আমাদের দেশের বিজ্ঞানীদের কাছে তো বটেই কৃষি অনুরাগী প্রগতিশীল কৃষি স¤প্রসারণ কর্মকর্তাদের কাছেও রয়েছে। কিন্তু তারা কেন যে দেশব্যাপী এ ধরনের প্রযুক্তি ছড়িয়ে দিচ্ছেন না তা প্রশ্ন সাপেক্ষ।

স¤প্রতি আমার দীর্ঘদিনের পরিচিত কৃষি বিশেষজ্ঞ এম জি নিয়োগী কুশি ধান আবাদের সাফল্য পেয়েছেন মাঠ পর্যায়ে। রংপুর আরডিআরএস-এ কর্মরত জনাব নিয়োগী দীর্ঘদিন যাবৎ কুশি ধান নিয়ে কাজ করছেন। যে সব জমি বর্ষা মৌসুমে তলিয়ে যায় না এমন জমিতে বোরো ধান কাটার পরপরই গোড়া থেকে যে কুশি বের হয় সেই ধানের স্বাভাবিক আবাদ করেই পূর্ণাঙ্গ আউশের ফলন পাওয়া সম্ভব। সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত এ সংক্রাš- একটি লেখায় বেশ যুৎসইভাবে উলে¬খ করেছেন, ‘বাংলাদেশের কৃষকদের অর্থনৈতিক জ্ঞান টনটনে। বোরো ধান ওঠার পর কিছু জমিতেও যদি তারা কুশি ধানের চাষ করতে পারে তাহলে যে ধান ঘরে উঠবে সেটা বলা যায়, একেবারে ফাও পাওনা। মৃন্ময় গুহ নিয়োগী মনে করেন, বৃহত্তর রংপুর ও দিনাজপুরের আট জেলায় অš-ত: ৬ লাখ হেক্টর জমিতে কুশি ধান প্রযুক্তি বা¯-বায়ন সম্ভব। এর ফলে বছরে ১২ থেকে ১৫ লাখ টন অতিরিক্ত ফসল মিলতে পারে’।

এই ১৫ লাখ টনেরই ঘাটতি হয়েছিল গত বছর আমন মৌসুমে বন্যা আর সিডরের কবলে পড়ে। আবারে বলছি, বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের দেশের জন্য অনিবার্য। সঠিক ফসল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই দুর্যোগে খাদ্যশস্যের ঘাটতি থেকে অš-ত: রেহাই পাওয়া সম্ভব।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor