Wednesday, September 10, 2008

কৃষকের মাথায় হাত চুয়াডাঙ্গায় পান বরজে কা-পচা ঠাকুরগাঁওয়ে আমন ধানে পাতাপচা রোগ

০৯.০৯.০৮
।।যায়যায়দিন।।
চুয়াডাঙ্গা ও ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

চুয়াডাঙ্গার অর্থকরী ফসলগুলোর মধ্যে পান অন্যতম। বর্তমানে এ পান বরজগুলো কা-পচা ভাইরাস রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। ফলে এ এলাকার শত শত কৃষকের চোখে-মুখে বিরাজ করছে হতাশা। জেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামে মাঠের পর মাঠ পান বরজে কা-পচা রোগে আক্রান্ত হয়ে বরজ উজাড় হয়ে যাচ্ছে। বংশ পরম্পরায় পানের আবাদ করে এলেও অনেক পান চাষী জানান, এবার হঠাৎ করে পানের পাতায় কালো দাগ পড়ে হলুদ হয়ে আস্তে আস্তে গাছ মরে যাচ্ছে। তারা আরো জানান, বিভিন্ন রকম ওষুধ দিয়েও পান বরজের মড়ক ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না। জেলার প্রায় ১০ হাজার পান চাষীর এ কারণে পথে বসার উপক্রম হয়েছে। কৃষকদের ধারণা, এ মৌসুমে জেলার পান চাষীরা প্রায় ৫০ কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।
চুয়াডাঙ্গার কয়রাডাঙ্গা, বেগমপুর তালতলা, হাজরাহাটি, কুলচারা, দিগড়ি, জাফরপুর প্রভৃতি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে পান চাষীদের দুর্ভোগের চিত্র। কয়রাডাঙ্গা গ্রামের পান চাষী রজব শেখ বলেন, ১ বিঘা জমিতে পান বরজ তৈরি করতে ২ বছর সময় লেগে যায়। কিন্তু হঠাৎ ২ মাসের ভাইরাসে আমাদের বরজ অর্ধেকের বেশি নষ্ট হয়ে গেল। কি করে যে এবার আমাদের সংসার চলবে তাই ভাবছি? দিনকয়েক আগে সপ্তাহে ২-৩ হাজার টাকা করে পান বিক্রি করছি। এখন সব শেষ। বেগমপুরের আইনাল বলেন, নতুন করি বরজ করতি গেলে একুন আমাগের ভিটেমাটি বিক্কির করতি হবি, নয়তো ঋণ করতি হবি। এমন অসহায়ত্বের কথা জেলার প্রায় সব পান চাষীর মুখে শোনা যাচ্ছে। পান চাষী শহরের ইসলাম পাড়ার আবুল কাশেম ও রাজা বলেন, ৩ বিগে জমিতে আমাদের পানির আবাদ ছিল। কা-পচা রোগে ২ বিগে জমির পান সব নষ্ট হয়ে গিয়েচে। আর বচরে এই বরজ থেকে ৪ লাখ টাকার পান বিক্রি করেচি। এ বছর মনে হচ্চে ১ লাখ টাকাও পুরবে না। পান ব্যবসায়ী টাঙ্গাইলের শুভোল ও চুয়াডাঙ্গার আজিজুল জানান, বরজ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মোকামে ভালো পান উঠছে না। যে পান পাওয়া যাচ্ছে তাও অনেক দাম। বর্তমানে বড় সাইজের পান প্রতি পোন ৩৫-৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে তারা জানান। চুয়াডাঙ্গা কৃষি স¤প্রসারণ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ২ হাজার ৮শ ২৮ হেক্টর জমিতে পান আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদরে ৬৫০ হেক্টর ও আলমডাঙ্গায় ২ হাজার হেক্টর। ১ বিঘা পান বরজ করতে খরচ হয় দেড় লাখ টাকা। প্রতি বছর বিঘা প্রতি খরচ বাদে লাভ হয় ৮০-৯০ হাজার টাক। অনেক পরিবার শুধু পান আবাদ করেই সংসার চালায়। এবার কা-পচা রোগের কারণে কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলে তারা মনে করেন। চুয়াডাঙ্গা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মমতাজ হোসেন বলেন, বছরের পর বছর একই জমিতে পান আবাদ ও মাত্রাতিরিক্ত ইউরিয়া ব্যবহারের কারণে বরজে ভাইরাস ছড়িয়েছে। ৩-৪ বছর পর পর চুন, জৈব সার দিয়ে পান বরজের জমি শোধন করতে হবে। সে সঙ্গে পান বরজের জমিতে ইউরিয়া সারের পাশাপাশি এমওপি সার দেয়া উচিত। তাহলে পচন রোগ দেখা দেবে না। তাছাড়া পান বরজ থেকে ভাইরাস/কা-পচা রোগ দূর করতে হলে ছত্রাক নাশক চ্যাম্পিয়ন স্কোর অথবা ব্যাবিস্টিন ¯েপ্র ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। ঠাকুরগাঁওয়ে আমন ধানে পাতাপচা রোগ। এদিকে ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি জানান, ঠাকুরগাঁওয়ে আমন ধানে পাতাপচা রোগ ও ফসল বিনষ্টকারী কীট-পতঙ্গের আক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। সদর, বালিয়াডাঙ্গী, পীরগঞ্জ, রানীশংকৈল, হরিপুরসহ পাঁচটি উপজেলাতেই এ পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলে জানা গেছে। বর্ষা মৌসুমের শেষ প্রান্তে এসে টানা বর্ষণের কারণে এ পাতাপচা রোগ ও পোকামাকড়ের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে বলে কৃষকরা ধারণা করছেন। তবে কৃষি বিভাগকে এ ব্যপারে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
উফশী ও দেশি জাতের মিলিয়ে ১ লাখ ৯ হাজার হেক্টর জমিতে বাম্পার ফলনের আশায় কৃষকরা ১ লাখ ২৯ হাজার ৭শ’ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদ করেছেন বলে কৃষি বিভাগ জানায়। টিএসপি সারের দু®প্রাপ্যতা ও মূল্যবৃদ্ধির কারণে বেশির ভাগ কৃষক রাসায়নিক সার কম ব্যবহার করায় এমনিতেই ফসল কম হওয়ার আশঙ্কায় ছিলেন। পাতাপচা রোগ ও পোকামাকড়ের এই উপদ্রপ তাদের নতুন করে ফসলহানির আশঙ্কায় ফেলেছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল হায়াৎ জানান, আমাদের কাছে এখনো এ ধরনের সমস্যার কথা আসেনি।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor