Friday, September 12, 2008

পরিবেশ বিপর্যয় মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা

১৩.০৯.০৮
সম্পাদকীয়
।।ইত্তেফাক।।

পরিবেশ বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশকে সাড়ে সাত কোটি পাউন্ড সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়াছে ব্রিটেন। লন্ডনে অনুষ্ঠিত ইউকে-বাংলাদেশ পরিবেশ সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী ডগলাস আলেকজান্ডার বলেন, পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে বাংলাদেশ আজ বিরূপ অবস্থার মুখোমুখি। এই বিপর্যয় মোকাবিলায় সবাইকে একযোগে কাজ করিতে হইবে। গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ কমাইয়া জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাব নিয়ন্ত্রণ জরুরি হইয়া পড়িয়াছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করা না হইলে বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হইবে। সম্মেলনে বিশেষজ্ঞরা বলিয়াছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলির মধ্যে একটি। সরাসরি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের শিকার। উষ্ণমণ্ডলীয় বহু নিম্নভূমির দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও আবহাওয়া ও পরিবেশের দ্রুত পরিবর্তন ঘটিতেছে। বায়ুমণ্ডলের পরিবর্তনের ফলে জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন। অতি উষ্ণতা, অতি বন্যা, প্রবল ভাঙ্গন, দীর্ঘ খরা ও বহুরূপী আবহাওয়ার প্রভাবে দেশের কৃষি উৎপাদন ইতিমধ্যেই তছনছ হইয়া পড়িয়াছে। এই শতাব্দীর শেষের দিকে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করিতে পারে বলিয়াও ইতিমধ্যেই বিশেষজ্ঞরা আশংকা প্রকাশ করিয়াছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, জলবায়ুর সহিত মানুষের অস্তিত্ব জড়িত। পরিবেশ বিপন্ন হইলে মানুষের জীবনও বিপন্ন হয়।

গত শতাব্দীতে বিশ্বে গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাইয়াছে দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বর্তমান শতকে এই উষ্ণতা আরো ১.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়িতে পারে। উন্নয়নশীল বিশ্বে বেপরোয়া বৃক্ষনিধন ও উন্নত বিশ্বে শিল্প-কারখানা হইতে ধোঁয়া উদ্গীরণ, শিল্পবর্জ্য যত্রতত্র নিক্ষেপ এবং অধিক মাত্রায় জ্বালানি ব্যবহার করার কারণে বায়ুমণ্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড উৎক্ষেপণ হইতেছে ভয়াবহ মাত্রায়। বলা যায়, উন্নত বিশ্বের অধিক পরিমাণে কার্বন গ্যাস উদ্গীরণের কারণেই বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাইতেছে। ইহার দায়ভার যৌক্তিক কারণেই পশ্চাত্য তথা শিল্পোন্নত দেশগুলিই বহন করা উচিত।

জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের মতো দরিদ্র দেশের কৃষি ও জীবনযাত্রার উপর যে প্রভাব ফেলিতেছে, দেখা দিতেছে যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং যে পরিমাণ লোকের উদ্বাস্তু হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হইতেছে তাহা মোকাবিলার জন্য জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বিশ্বব্যাপী উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন। মনে রাখিতে হইবে জলবায়ু পরিবর্তন শুধু বাংলাদেশের মতো কোন দেশকে নয়, গোটা বিশ্বকেই ঝুঁকির মধ্যে ফেলিয়াছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশকে সাড়ে সাত কোটি পাউন্ড সহায়তা প্রদানের বৃটেনের এই ঘোষণা নিঃসন্দেহে এইক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ও প্রশংসনীয় সিদ্ধান্ত। বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশেরও একইভাবে সহায়তা প্রদানে আগাইয়া আসা কর্তব্য। জলবায়ু পরিবর্তনের ভবিষ্যৎ ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় বাংলাদেশের ৫৪০ কোটি ডলার প্রয়োজন হইবে বলিয়া সরকার ও দাতা সংস্থাগুলি হিসাব দিয়াছে। এইজন্য স্বল্প ও মধ্যমেয়াদে প্রয়োজন হইবে ১৪০ কোটি ডলার এবং দীর্ঘমেয়াদে ৪০০ কোটি ডলার। এই অর্থ সংগ্রহ করিতে একটি ‘মাল্টি ডোনার ট্রাস্ট ফান্ড’ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। উন্নত দেশ তথা আন্তর্জাতিক মহল জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করিবেন এবং জলবায়ু পরিবর্তন তহবিল গঠনে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করিবেন ইহাই কাম্য।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor