Tuesday, September 2, 2008

এ বছরই সহজ শর্তে শাকসবজি ফল রপ্তানির সুযোগ পাচ্ছে বাংলাদেশ

যায়যায়দিন \১৮ আগস্ট ২০০৮

বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার আওতায় ২০০৮ সালের অক্টোবর থেকে বাংলাদেশ অনেক দেশেই সহজ শর্তে টাটকা ও হিমায়িত শাকসবজি, মাছ ও ফল রপ্তানির বাড়তি সুযোগ পাচ্ছে। রপ্তানি পণ্যের ক্ষেত্রে শাকসবজি ও ফল অগ্রাধিকার পাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের আরো একটি গু রুত্বপূর্ণ খাতে পরিণত হচ্ছে। শাকসবজি, মাছ, আলু ও ফল রপ্তানি করে দেশে শুধু ব্যাপক কর্মসংস্থানই সৃষ্টি হবে নাÑ এতে অর্জিত হবে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে ২০০৬-০৭ অর্থবছরে সবজির মোট উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৬১ দশমিক ৩৩ লাখ টন। একই সময়ে ২৪ দশমিক ৭০ মিলিয়ন ডলারের সবজি বিদেশে রপ্তানি হয়। ওই সময়ে মোট রপ্তানিতে যা ছিল শূন্য দশমিক ৩২ শতাংশ। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৪৬ দশমিক ২৩ মিলিয়ন ডলারের সবজি রপ্তানি করে, যা ছিল ওই অর্থবছরের মোট রপ্তানির শূন্য দশমিক ৫৪ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশে মৌসুমভিত্তিক সবজি মালয়েশিয়া, ভিয়েতনামের মতো সারা বছর চাষ করে, সূর্য তাপ প্রতিহত করতে জমিতে আচ্ছাদন দিয়ে ও কৃষি উপকরণ ব্যবহারের সর্বোত্তম পদ্ধতির প্রয়োগ ঘটিয়ে ফলসহ এর উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি সম্ভব। তবে এ ক্ষেত্রে রয়েছে সমবায়ভিত্তিক রপ্তানিমুখী খামার প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগের অভাব, পচন রোধে আধুনিক সংরক্ষণ ও পরিবহন ব্যবস্থার অভাব এবং আবাদ থেকে শুরু করে প্যাকেজিং পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত মান অনুসরণের অভাব।
দেশ থেকে মাছ ও মাছজাতীয় পণ্য রপ্তানির পরিমাণ বেড়েই চলেছে। গত অর্থবছরে মাছ ও মাছজাতীয় পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে প্রায় ৩ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরে মাছ রপ্তানি করে আয় হয় ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ৬৩ হাজার ৩৭৭ টন মাছ ও মাছজাতীয় পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ আয় করে ২ হাজার ৫৭২ কোটি টাকা। ৫৪ হাজার ১৪১ টন মাছ ও মাছজাতীয় পণ্য রপ্তানি করে ২০০৪-০৫ অর্থবছরে আয়ের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা। এদিকে দেশে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত পাঁচ বছরে দেশে মোট মাছ উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ২৭ শতাংশ। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রয়োগের অভাব, মানসম্মত কীটনাশক ও বীজ সংগ্রহে সমস্যা, উদ্যোক্তাদের পুঁজির স্বল্পতা, সংরক্ষণ জ্ঞান ও ভ্রাম্যমাণ হিমাগারের অভাব, বিমান পরিবহনে জায়গার অভাব, উন্নত প্যাকেজিং পদ্ধতি সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে এসব পণ্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা ছিল বিশ্বের বেশ কিছু দেশে। সম্প্রতি বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
তবে সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ৮০০ কোটি ডলার সমমূল্যের কৃষিপণ্য যেমন মাছ, মাংস, ফলমূল, শাকসবজি ও প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্যের চাহিদা দেখা দেবে। ওই সময় ও মধ্যে বাংলাদেশের আরো ৬৫ লাখ টন শাকসবজি, ১৬ লাখ টন ফলমূল, ১৯ লাখ টন মাছ, ১৪ লাখ টন মাংস ও ডিম এবং ২৬ লাখ টন দুধের প্রয়োজন হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে এসব পণ্যের দাম প্রতিনিয়তই বাড়ছে। ২০০৫ সালের আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য হিসেবে এসব বাড়তি পণ্যের পেছনে ব্যয় হবে ৮০০ কোটি ডলার। রিপোর্টে কৃষি খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশের সামনে সাতটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বেশ কিছু সুপারিশের কথাও বলছে তারা। উচ্চমূল্যের কৃষিপণ্য উৎপাদনে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বিশ্বব্যাংক বলেছে, অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী উচ্চমূল্যের কৃষিপণ্যের চাহিদা ও দাম বাড়ছে। বাংলাদেশে এক যুগের মধ্যেই চাহিদা মেটাতে আরো ৮০০ কোটি ডলার মূল্যের কৃষিপণ্যের চাহিদা দেখা দেবে। এ অবস্থায় খাদ্য ঘাটতি মোকাবেলায় কৃষি খাতে বেসরকারি বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খাদ্যশস্য উৎপাদন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় পরিণত হয়েছে। কৃষকের কোটি কোটি টাকার মূলধন ও পরিশ্রম ধক্ষংস হচ্ছে। তাই খাদ্য উৎপাদনে অবশ্যই বীমা পদ্ধতি চালু করতে হবে। এছাড়া দরিদ্র কৃষকদের জন্য ভর্তুকি বাড়ানোর পাশাপাশি রেশনিং পদ্ধতি চালুর দাবি করেন তারা। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও কৃষি খাতের সমস্যা মোকাবেলায় প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশ করেছে। কৃষি খাতের উন্নয়নে সরকারকে অবশ্যই কিছু নীতিমালায় পরিবর্তন আনতে হবে। তৈরি করতে হবে নতুন নীতিমালা। সরকারের খাদ্য নিরাপত্তা বিধিমালা বর্তমানে অকার্যকর, ভোক্তা অধিকার আইনও নেই। সরকারের কর নীতিমালাতেও বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে। গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়নে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। মানবসম্পদ উন্নয়নে নজর দিতে হবে। এছাড়া বেশি পরিমাণে কর্মশালা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে গ্রামীণ দরিদ্র কৃষক ও উদ্যোক্তাদের কারিগরি দক্ষতা বাড়াতে হবে। আঞ্চলিক দেশগুলোর বেসরকারি কৃষি সংগঠনগুলোকে আরো শক্তিশালী করা এবং ফলপ্রসূ পাবলিক-প্রাইভেট আলোচনা ও সমন্বয় ঘটানোর ওপর জোর দিতে বলা হয়েছে।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor