Tuesday, September 2, 2008

খাদ্য ঘাটতি হ্রাসে সরকারের পরিকল্পনা

২৪.০৮.০৮
মো. আবদুস সালিম
বাংলাদেশে খাদ্য সমস্যা ক্রমেই বাড়ছে বলে নানা সূত্রে বলা হয়ে থাকে। অন্য একটি সূত্র বলেছে, এ দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদন কমেনি বরং বেড়েছে। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি হওয়ায় চাহিদার সঙ্গে উৎপাদনের ফারাক বাড়ছে। সাধারণত প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কৃষি উপকরণের অভাব, সেচ সমস্যা, গ্রাম্য মহাজনদের দৌরাত্ম্য বা দাপট, যথাসময়ে বা পরিমাণমতো ব্যাংক ঋণ না পাওয়া, চাষবাস সম্পর্কে কৃষক পর্যায়ে তেমন জ্ঞান না থাকা, নানা দুর্নীতি, অনিয়ম ইত্যাদি কারণে খাদ্য উৎপাদন অনেক সময় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম হয়ে থাকে। দেশে খাদ্যশস্যের দাম ক্রমেই বাড়ছে। ফলে নিম্নআয়ের লোকজনের দুঃখ-দুর্দশা বাড়ছে। কিন্তু পরিকল্পনামাফিক সব কাজ পরিচালিত হলে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি অতি সহজেই মোকাবিলা করা সম্ভব বলে সংশ্লিষ্ট অনেকে মন্তব্য করেছেন। কৃষকরা সময়মতো পরিমিত পরিমাণে অর্থ হাতে পেলে তারা অনেক পিছুটান থেকে সহজেই উঠে আসতে পারে। এ জন্য দেশের ব্যাংকগুলোকে কমবেশি দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কৃষির উন্নতির জন্য কৃষি ব্যাংকসহ আরও অনেক ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাদের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে কৃষক পর্যায়ে যথাসময়ে অর্থ ঋণ হিসেবে দেয়া এবং এ সব তদারকি করা। কিন্তু অনেক সময় আর্থিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে নানা আপত্তিকর তথ্য জানা যায় নানা মাধ্যমে, যা মোটেই কাম্য হতে পারে না। নানা মাধ্যমে প্রায়ই সরকারিভাবে কৃষক পর্যায়ে ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ দেয়ার কথা জানা যায়। অনেক সময় এ সব ভালো ফল দেয়, আবার অনেক সময় ভালো ফল দেয় না। এ সব বিষয় বিবেচনায় এনে সরকার সম্প্রতি উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্য ঘাটতি বা সংকট মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানা গেছে। এ লক্ষ্যে কৃষিঋণ নীতিমালাও প্রণয়ন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। কৃষিপণ্য বা যে কোনো ধরনের পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নীতিমালার বিকল্প নেই। আবার শুধু নীতিমালা থাকলেই চলে না বরং নীতিমালার বিভিন্ন দিক বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়োগ ঘটাতে হয়। তবেই পাওয়া যায় এ সবের সার্থকতা। দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়িয়ে এর ঘাটতি বা সংকট মোকাবিলার পদক্ষেপকে বিভিন্ন মহলের লোকজন স্বাগত জানিয়েছে। এ লক্ষ্যে এক বছরমেয়াদি একটি পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। এটি প্রণয়ন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সংশ্লিষ্টরা এরই মধ্যে কৃষি/পল্লী ঋণ কর্মসূচির ওপর বিশেষ জোর দিয়েছেন। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে ৯ হাজার কোটি টাকা। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৩০৮ কোটি টাকা। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর টার্গেট ছিল ১ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। তবে বেসরকারি ব্যাংকগুলো এ সব ক্ষেত্রে সুনাম অর্জন করলেও সরকারি ব্যাংকগুলোর কাজের ক্ষেত্রে নানা সমালোচনা হয়। অবশ্য সঠিকভাবে ব্যাংকগুলো কৃষিভিত্তিক শিল্প খাতে ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে ভালোই করেছে। নয়া এ নীতিমালায় ফসলের ধরন বুঝে ঋণসীমা বাড়ানো হয়েছে ২০ থেকে ৩০ ভাগ। পাশাপাশি ফসলের জন্য ব্যাংকগুলোকে মোট কৃষিঋণের ৬০ শতাংশ ঋণ বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে। সর্বোচ্চ ১৫ বিঘা বা ৫ একর জমি চাষাবাদের জন্য নির্ধারিত হারে ঋণ দেয়া হবে। তারা আলু ও আখ চাষের ক্ষেত্রে প্রাধান্য দিয়েছেন বেশি। এ ক্ষেত্রে ঋণের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে আড়াই একর পর্যন্ত। এরপরও ব্যাংকগুলো কৃষকের প্রকৃত চাহিদা বিবেচনা করে কিছু পরিমাণে ঋণ বাড়াতে বা কমাতে পারবে। পাশাপাশি শস্য বীমার ওপরও জোর দেয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে অনেকে এ সব বীমার কাজ বোঝে না। তাদের এ সব ব্যাপারে নানাভাবে সহায়তা করা হবে বলেও জানা গেছে। এসব ক্ষেত্রে নামকরা এনজিওগুলোকে কাজে লাগাতে পারলে আরও ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা প্রকাশ করেছেন। বিপরীতে নানা মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে তাদের স্বচ্ছতা নিয়ে। কারণ তারা যে পরিমাণ সুদ আদায় করে ঋণ দেয়ার বিপরীতে যার নজির নাকি বিশ্বের অনেক দেশেই নেই। যে সব দেশে একটু বেশি পরিমাণে সুদ ঋণের ওপর আদায় করা হয়ে থাকে সে সব দেশে সার্বিক বিষয় যথেষ্ট ভালোভাবেই পরিচালিত হয়। কৃষিঋণ পেতে কৃষকদের নানা ধরনের হয়রানি বন্ধ, যথাসময়ে ঋণের টাকা পাওয়া এবং অল্প সময়ের মধ্যে ঋণের অর্থ যাতে কৃষকের হাতে পৌঁছে সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের পৃথক সেল আছে। এ সব ক্ষেত্রে কোনো ধরনের দুর্নীতি, অনিয়ম বা স্বজনপ্রীতির প্রমাণ পাওয়া গেলে প্রকৃত দোষী/অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানিয়ে দেয়া হয়। এতে করে দেশে প্রচুর পরিমাণে কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে বলে আশা করছেন এর সঙ্গে জড়িতরা। নতুন কৃষিঋণ নীতিমালায় কৃষকদের জামানতের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আড়াই একর পর্যন্ত জমিতে চাষাবাদের ক্ষেত্রে শুধু ওই জমির ফসল ঋণের জন্য জামানত হিসেবে বিবেচ্য হবে। আর আড়াই একরের বেশি জমি হলে তা নিয়ে সমাধানের ব্যবস্থা বের করবে ব্যাংকগুলো। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত গ্যারান্টি থাকতে হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। ঋণ দেয়ার সময় হিসেবে বলা হয়েছে, ফসল উৎপাদনের মৌসুম শুরু হওয়ার প্রায় ১৫ দিন আগে ঋণ দেয়ার সব বিষয় চূড়ান্ত করে ফেলা হবে। এ ক্ষেত্রে ‘লিড ব্যাংক পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে। এর অর্থ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বা শাখা তাদের অনুকূলে বরাদ্দ করা ইউনিয়নে ঋণ দেবে। আবার যে সব কৃষক মূল বা প্রধান ফসলের পাশাপাশি অন্য ফসল ফলাবেন তাদের অতিরিক্ত পরিমাণে ঋণ দেয়া হবে। যেমন বিভিন্ন ফসলের পাশাপাশি ধনে চাষ করা হয়ে থাকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমনÑ বন্যা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি কারণে ফসলহানি ঘটলে সে ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো শস্য বীমা পলিসির আওতায় এ সংক্রান্ত নানা বিষয় বিচার-বিবেচনা করবে। কৃষিঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে শস্য উৎপাদন বা চাষ ছাড়াও পশু পালন ও মৎস্য খাতকে এর অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলেও জানা গেছে। যে কোনো আয়তনের পুকুর বা জলাশয়ে মাছ চাষের ক্ষেত্রে মাছ চাষিদের ঋণ দেবে ব্যাংকগুলো। তাতে করে বোঝ যায় কৃষিঋণ নীতিমালায় অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ মানুষ পাবে এর বহুমুখী সুযোগ-সুবিধা। পশুসম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে দুগ্ধখামার, হালের বলদ, গরু মোটাতাজাকরণ, হাঁস-মুরগির খামার ইত্যাদিতেও ঋণ দেয়ার কথা ভাবছে সরকার। কেননা এ সব বিষয় কৃষির অন্তর্ভুক্ত। কৃষি উপকরণ সংগ্রহ, কৃষি যন্ত্রপাতি জোগাড় বা তৈরি ইত্যাদি ক্ষেত্রেও নজর দেয়ার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ অর্থ আয়ের প্রায় সব ধরনের মাধ্যমকে এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ঋণের টাকা আদায় করা হবে ফসল তোলার পর হাতে টাকা এলে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকের লাভ-লোকসানের দিকেও খেয়াল রাখা হবে। যেমনÑ বকেয়া ও মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ আদায়ের দিকেও অধিক নজর দেয়া হবে। ব্যাংক যদি ঋণ হিসেবে টাকা দিয়ে তা আর সময়মতো না পায় তবে ব্যাংকের কার্যক্রম চলবে কীভাবে। ঋণ আদায়ে উৎসাহ ও আগ্রহ সৃষ্টির লক্ষ্যে ব্যাংকের লোকজনের জন্য বিশেষ পুরষ্কারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। কৃষকদেরও এর অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। যে যত অল্প সমেয় কাক্সিক্ষত পরিমাণ অর্থ ফেরত দিতে পারবে তার জন্যও বিশেষ পুরস্কারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা দরকার।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor