Friday, September 5, 2008

রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকলগুলোর সঙ্কট কাটছে না

০৫.০৯.০৮
।। ইত্তেফাক।। রেজাউল করিম, খুলনা অফিস

রাষ্ট্রয়াত্ত্ব পাটকল গুলোর বেশিরভাগের অবস্থান খুলনায়। এ পাটকলগুলোর সঙ্কট যেন কাটছেই না। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে এ অঞ্চলের ঐতিহৃবাহি পাটকলগুলোতে নানাবিধ সমস্যা লেগেই আছে। একযুগ আগে থেকে লোকশানের কথা বলে একের পর এক পাটকল বন্ধ করে দেয়া হয়। পাটকল বন্ধের প্রতিবাদে শুরু হয় শ্রমিক আন্দোলন। বন্ধ করে দেয়া পাটকলগুলো পুনরায় চালুর দাবিতে শ্রমিক-কর্মচারিরা লাগাতার আন্দোলন করে। আন্দোলন করতে গিয়ে অনেকবার শ্রমিকদের সঙ্গে আইন প্রয়োগকারি সংস্থার লোকদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। মামলা দেয়া হয় হাজার হাজার শ্রমিকের নামে। কিন্তু শ্রমিক আন্দোলন থেমে থাকেনি। কাজ আর বকেয়া পাওনার দাবিতে শ্রমিকরা জীবনের ঝঁকি মাথায় নিয়ে একের পর এক আন্দোন করে আসছে। তাদের আন্দোলনের ফলে বন্ধ হয়ে যাওয়া কয়েকটি পাটকল ব্যক্তি মালিকানায় চালু করা হয়। কিন্তু শ্রমিকদের আন্দোলন এখনো থামেনি। এখানো তাদের বকেয়া পাওনাসহ বিভিন্ন দাবিতে চলছে তাদের আন্দোলন।

১৯৪৭ সালে পাকিচ্চান সৃষ্টির পর থেকে খুলনার দৌলতপুর দেশের সবচেয়ে বড় পাট ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পাটের বিপুল উৎপাদন এবং সহজলভ্যতার কারণে পঞ্চাশের দশকে যশোর-খুলনা অঞ্চলে পাটকল গড়ে উঠতে থাকে। ১৯৫২ সালে খুলনায় ক্রিসেন্ট জুটমিল নামে প্রথম একটি পাটকল গড়ে ওঠে। প্রায় ১শ’ ৮ একর জমির উপর গড়ে ওঠা এ বিশাল পাটকল স্থাপিত হওয়ার ফলে সেখানে প্রায় ৮ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। ১৯৫০ সালের ডিসেম্বর মাসে সুন্দরবন সংলগ্ন পশুর নদীর জয়মনিগোলে একটি বৃটিশ বাণিজ্যিক জাহাজ নোঙ্গর করার পর মংলা বন্দরের (চালনা বন্দর) গোড়াপত্তন হয়। এ বন্দরের মাধ্যমে বিদেশের সাথে এ দেশের পাট বাণিজ্যের নতুন দুয়ার উন্মোচিত হয়।

এরপর একে একে গড়ে ওঠে প্লাটিনাম, স্টার, ইস্টার্ণ, কার্পেটিং, জেজেআই, সোনালী, এ্যাজাক্স, পিপলস, আলিম, দৌলতপুর জুট মিলসহ বেশ কয়েকটি পাটকল। রাষ্ট্রায়ত্ত্ব এসব পাটকলে উৎপাদিত পণ্যের বাজার সৃষ্টি হয় বিশ্বের বহু দেশে। ইউকে, ইরান, ইউরোপ, মিশর, সুদান, সিরিয়া, অষ্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, দুবাই, ব্যাঙ্কক, ভারত, জাপানসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত পণ্যের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। কেবল পাটকল নয়, নিউজপ্রিন্ট মিল, হার্ডবোর্ড মিল, স্টিল মিল, শিপইয়ার্ড, ক্যাবল ফ্যাক্টরী, ম্যাচ ফ্যাক্টরীসহ বিভিন্ন ভারী শিল্প কলকারখানাও গড়ে ওঠে। পাকিচ্চান আমল পর্যন্ত এই মিল কলকারখানাগুলোর অবস্থা খুব ভাল ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর মাথাভারী প্রশাসন, দুর্নীতি, অপচয়সহ নানাবিধ কারণে এসব শিল্প কলকারখানা লোকশানের ঘানি টানতে থাকে। ক্রমাগত লোকশানের মুখে পড়ায় একের পর এক বন্ধ করে দেয়া হতে থাকে কলকারখানাগুলো।

খুলনায় সর্বশেষ পিপলস জুটমিলটি একই কারণে বন্ধ করে দেয়া হয় ২০০৭ সালের জুন মাসে। শ্রমিক-কর্মচারিদের পাওনা বকেয়া রেখেই মিলটির শ্রমিক ছাঁটাই করে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বেকার হয়ে পড়ে কয়েক হাজার শ্রমিক-কর্মচারি। এ ঘটনা নিয়ে শ্রমিকরা লাগাতার আন্দোলন করে। কিন্তু তাদের সমুদয় বকেয়া এখনো পায়নি। তাবে আন্দোলনের মুখে সরকার পিপলস জুটমিলটিকে আবার ব্যক্তি মালালিকানায় চালু করেছে। কিন্তু পাটকলের সমস্যা একটা মেটে তো আর একটা দেখা দেয়। গত মাসের মাঝামাঝি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকলগুলোর কাছে পাট ব্যবসায়ীদের বকেয়া ৪৬ কোটি টাকা পাওনা থাকায় মিলে পাট সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়। প্রয়োজনীয় পাটের অভাবে যশোর-খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ৭টি জুট মিলের উৎপাদন কর্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। অনেক দেন-দরবারের পর মিলগুলো পাওনার একাংশ পরিশোধের চুক্তিতে ব্যবসায়ীরা পাট সরবরাহ শুরু করে।

এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ৭ পাটকলের শ্রমিকরা গত মাসাধিককাল ধরে ৮ দফার দাবিতে আন্দোলন করেছে। আন্দোলনরত শ্রমিকদের দাবিগুলোর মধ্যে বিজেএমসি বিলুপ্তিকরণ, পাট কেনার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ, শ্রমিক-কর্মচারিদের সমুদয় বকেয়া পরিশোধ, দুর্নীতিবাজ সিবিএ নেতাদের বিচার প্রধান। রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকল শ্রমিক উন্নয়ন আঞ্চলিক কমিটির আহবায়ক গাজী মাসুম জানান, বিজেএমসি’র কর্মকর্তারা বরাবরই তাদের দুর্নীতি ঢাকতে শ্রমিকদের উপর খড়গহস্ত চালিয়ে আসছে। কিন্তু তারা সবসময়ই রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। তিনি বলেন, পাটকলগুলোর লোকশানের জন্য শ্রমিকরা কখনো দায়ী নয়। কর্মকর্তা-কর্মচারি এবং সিবিএ নেতার সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকলগুলোর আজ এই পরিণতি। যাদের দুর্নীতির কারণে পাটকলের এ অবস্থা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। উক্ত দাবিগুলো বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত শ্রমিকরা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবে।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor