Wednesday, September 10, 2008

অতিমাত্রায় রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে পরিবেশ বিএটিবির তামাক চাষ এলাকা পরিদর্শনকালে শিল্প সচিব

১১.০৯.০৮
।। যায়যায়দিন।। কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

বাংলাদেশ শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ এনায়েত উল্লাহ বলেছেন, অপরিকল্পিত শিল্প স্থাপন এবং জমিতে অতিমাত্রায় রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। পরিবেশের ভারসাম্যের কথা বিবেচনা করে আমাদের সব কর্মকা- পরিচালনা করতে হবে।
বুধবার দুপুরে কুষ্টিয়ায় বিএটিবির তামাক চাষ এলাকা পরিদর্শনকালে তিনি এসব কথা বলেন। বিএটিবির তামাক চাষ এলাকা পরিদর্শনকালে শিল্প সচিব শেখ এনায়েত উল্লাহর সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের যুগ্ম সচিব বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প সংস্থার চেয়ারম্যান মোখলেসুর রহমান, কুষ্টিয়া চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালেহ মোহাম্মাদ নুরুদ্দিন, বৃটিশ-আমেরিকান টোবাকো কোম্পানি বাংলাদেশের হেড অফ লিগ্যাল অ্যান্ড কোম্পানি সেক্রেটারি মাহবুবুর রহমান, কুষ্টিয়া ডিভিশনাল ম্যানেজার গিয়াসউদ্দিন পাটোয়ারী, চেচুয়া লিফ রিজনের এরিয়া ম্যানেজার সাজেদুল করীম চৌধুরী, আল্লার দরগা রিজিওনাল ম্যানেজার মিজানুল কবীর প্রমুখ।
শিল্প সচিব তার বক্তৃতায় আরো বলেন, খেত-খামারে অতিমাত্রায় কীটনাশক ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে গ্রামীণ প্রাকৃতিক পরিবেশ বিঘিœত হচ্ছে। আমাদের এখন প্রয়োজন জৈব প্রযুক্তিতে পোকা দমনের ব্যবস্থা করা।
পরে তিনি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের বিএটিবির চুনিয়াপাড়া এবং গোড়দহ আইপিএম ক্লাব, ঔষধি বাগান এবং নিমপাতার সাহায্যে তৈরি জৈব কীটনাশক উৎপাদন প্রযুক্তি পরিদর্শন শেষে বিএটিবির অর্থায়নে পাকশী হাইওয়ে সড়ক ও পদ্মা সংলগ্ন বাগান পরিদর্শন করেন। শিল্প সচিব বিকালে কুষ্টিয়া চিনিকল পরিদর্শন করেন।

আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলন অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করতে হবে
বিশ্বে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে সর্বত্র। সময়মতো ঋতু পরিবর্তন ঘটছে নাÑ শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। বাংলাদেশও এ প্রভাব থেকে মুক্ত নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গত ১০ বছরে বাংলাদেশে তিনটি বড় ধরনের বন্যা হয়েছে। অল্প সময়ে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড় ধস হয়েছে। অন্যদিকে ঝড়-দুর্যোগে উপকূলে মাছ ধরা বিঘিœত হয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে শুষ্ক মৌসুমে বঙ্গোপসাগরের লোনা পানি ১০০ কিলোমিটার ভেতরে ঢুকছে।
সম্প্রতি লন্ডনে শুরু হয়েছে জলবায়ু বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন। এ সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়তে বিশ্বের ধনী দেশগুলোর কাছে বাংলাদেশ কয়েক বিলিয়ন ডলার সাহায্য চাইবে। কারণ, উপকূলীয় এলাকায় বাঁধ নির্মাণ, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি ও বৃক্ষরোপণসহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবেলায় অবকাঠামো নির্মাণের জন্য অন্তত ২০২০ সালের মধ্যে কম করে হলেও বাংলাদেশের চার বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন।
এটা এখন বাংলাদেশের অস্তিত্বের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৭ থেকে ১২ ফুট পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। যার অবধারিত পরিণতিতে এ শতকের শেষের দিকে বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে ৭ কোটি মানুষ জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হতে পারে।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৬৭ সেন্টিমিটার বাড়লে গোটা সুন্দরবনই পানিতে তলিয়ে যাবে। ইতিমধ্যে সুন্দরবনের ভারতীয় অংশে অবস্থিত ‘লোহাচরা’ ও ‘সুপারিভাঙ্গা’ নামে দুটি দ্বীপ সমুদ্রে হারিয়ে গেছে। লোহাচরা দ্বীপের মাত্র ১ মাইল উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত প্রায় দেড় লাখ জনসংখ্যার ‘সাগরদ্বীপের’ ৩৩.৬২ বর্গকিলোমিটার এলাকা গত ৩০ বছরে সমুদ্রে তলিয়ে গেছে। বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ভোলা দ্বীপও গত চার দশকে প্রায় ৩ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা হারিয়ে বর্তমানে ১৯৬৫ সালের তুলনায় অর্ধেকে এসে দাঁড়িয়েছে।
আমাদের দেশের নদীগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। আর তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে হিমবাহ গলে যাচ্ছে। ফলে এ দেশের নদীগুলো অতিরিক্ত পানিতে উপচে পড়ছে। এ জন্য হচ্ছে বন্যা। মানুষ হচ্ছে জলবায়ু উদ্বাস্তু। এ জলবায়ু উদ্বাস্তু ঠেকাতে হলে সরকারের এ বিষয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক পরিকল্পনা নিতে হবে। এ লক্ষ্যে কয়লা থেকে কোনো শক্তি উৎপাদন করা যাবে না; সৌরশক্তি ব্যবহার করতে হবে; বনায়ন কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে; নন-মোটোরাইজড গাড়ির ব্যবহার বাড়াতে হবে; নদী, জলাশয় ভরাট ও দূষণ বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক লবিইং করে কার্বন গ্যাস উৎপাদন কমানোর চেষ্টা করা দরকার। বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত অন্য দেশগুলোকেও এ প্রচার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মানুষের অস্তিত্বের প্রশ্ন জড়িত। এ পরিবর্তন খুব ধীরে হয় বলে মানুষ এর প্রভাব বুঝতে পারে না। জলবায়ুর পরিবর্তন যে একদিন মানুষের খাদ্য ও বাসস্থানের ওপর আঘাত হানবে, তা মানুষ এখনো গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছে না।
জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি। তাপমাত্রা যতোই বাড়বে ততোই গলতে থাকবে উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর বরফ। ফলে বাংলাদেশের মতো সাগরতীরে অবস্থিত দেশগুলোর নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাবে।
মানুষের পরিবেশ বিপর্যয়গত মৃত্যু ঠেকাতে পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে নামতে হবে। বিশ্ব নেতাদের বাধ্য করতে হবে পরিবেশ রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে। মানুষ যদি পরিবেশের ব্যাপারে সচেতন হয় এবং বিশ্ব নেতারা যদি তৎপর হন তাহলে পরিবেশগত বিপর্যয় থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করা যাবে।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor