Tuesday, September 2, 2008

দিন দিন বাড়ছে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা

ইত্তেফাক \
।। জামাল উদ্দীন ।।

দেশের হতদরিদ্র দুই কোটি মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের চাকা ঘুরছে না। সরকারি-বেসরকারিভাবে উন্নয়ন -উদ্যোগের নানা কথা বলা হলেও হতদরিদ্ররা রয়ে গেছে সেই তিমিরেই। এরমধ্যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ বিনিয়োগ মন্দা, কর্মসংস্থানের সুযোগ সংকুচিত হওয়ায় নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাচ্ছে এক শ্রেণীর মানুষ। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, অবস্থার উন্নতি না হলে দরিদ্রের সংখ্যা বাড়বে। সেক্ষেত্রে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) অর্জনেও কাঙিক্ষত গতি আসবে না। বরং নীট আমদানি নির্ভর দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে দারিদ্র্য বিমোচনের প্রক্রিয়ায় আরো কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।
সংশ্লিষ্টদের দেয়া তথ্যমতে, বাংলাদেশে দারিদ্র্য পরিস্থিতি ১ শতাংশ হারে কমে আসছিল। বিশেষ করে ২০০০ সালের পর থেকে দারিদ্র্য বিমোচনের হার সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমতে শুরু করে। কিন্তু গত প্রায় দুই বছর ধরে দারিদ্র্য পরিস্থিতি ক্রম:অবনতির দিকে যাচ্ছে।
দারিদ্র্য পরিস্থিতি অবনতির এ চিত্র উঠে এসেছে বিভিন্ন গবেষণায়। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সাম্প্রতিক এক গবেষণামতে, মানুষের প্রকৃত আয় কমে যাওয়ায় ২০০৭ সালের জানুয়ারী থেকে এ বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত প্রায় আড়াই লাখ পরিবার দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমেছে। একই গবেষণায় দেখানো হয়েছে, গত তিনবছরে (২০০৫-০৮) নতুন করে প্রায় সোয়া এক কোটি অর্থাৎ মোট জনগোষ্ঠীর সাড়ে আট শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ এক গবেষণায় দেখা গেছে, দারিদ্র্র্যসীমার নিচে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর পরিমাণ ৪০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা উন্নয়ন সমুন্নয়ন বলছে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে গত এক বছরে ৬২ লাখ লোক নতুন করে দারিদ্র্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। এসময়ে সাড়ে চার শতাংশ বেড়ে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর পরিমাণ ৪৫ দশমিক ৮৬ শতাংশে পৌঁছেছে।
এ পরিস্থিতিতে গত কয়েক বছরে দারিদ্র্য বিমোচনের যে সাফল্য বা অগ্রগতি হয়েছে তা ম্লান হয়ে গেছে সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে এখন দারিদ্র্য পরিস্থিতি বাড়ছে। অর্থাৎ দরিদ্র লোকের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। ব্যাহত হচ্ছে দারিদ্র্য বিমোচন প্রক্রিয়া।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে ধনীরা কেবলি ধনী হচ্ছে। আর গরীব কেবলি গরীব হচ্ছে। অথচ সরকারিভাবে যেমন উন্নয়নের জোয়ারের কথা বলা হচ্ছে, তেমনি বেসরকারি সংস্থাগুলোও দারিদ্র্য বিমোচনে তাদের ভূমিকার কথা বলছে। কার্যত দারিদ্র্য বিমোচনের শ্লথগতির মুখে দরিদ্রের সংকট বেড়ে চলেছে। কিন্তু দরিদ্রদের সার্বিক জীবনমান উন্নয়নে সরকারি উদ্যোগও যথেষ্ট নয়।
চলতি বছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় ২০ লাখ লোককে আনার পরিকল্পনা নেয়া হয়। এই কর্মসূচিতে তাদেরকে স্বাবলম্বী করার সরাসরি কোন উদ্যোগ নেই। সরকারিভাবে বিভিন্ন সংস্থাও রয়েছে। দরিদ্রদের দিন বদলায়নি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, সরকারের বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পগুলো সাময়িকভাবে মানুষের আয় রোজগারের ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু তা দীর্ঘস্থায়ী কোন আয়মূলক ব্যবস্থা হিসাবে কাজে আসছে না।
আবার অঞ্চলভিত্তিক বরাদ্দ বৈষম্যও দারিদ্র্য নিরসনের অন্যতম প্রতিবন্ধক। সরকারি বিনিয়োগে কোন কোন অঞ্চলের বরাদ্দ তুলনামূলক কম থাকে। পরিকল্পনা গ্রহণে দূরদর্শিতার অভাবও এজন্যে দায়ী বলে মনে করেন অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী। তার মতে, সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং চাহিদাভিত্তিক প্রকল্প গ্রহণ দরিদ্রের জীবনমান উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলেন, দারিদ্র্য বিমোচনে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাও কাজ করছে সেটাও খুব কার্যকর হয়নি। আবার একেবারেই হতদরিদ্রদের নিয়ে এসব সংস্থা খুব বেশি আগ্রহীও নয়। যদিও ইদানীং কোন কোন সংস্থা হতদরিদ্রের জন্য খুবই সীমিত আকারে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে দারিদ্র্যের খোলস থেকে একেবারেই বেরিয়ে আসা সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) অন্যতম লক্ষ্য দারিদ্র্য বিমোচন করতে হলে বাংলাদেশকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচিতে বছরে রাষ্ট্রীয় ব্যয়ের ৩৫ শতাংশ অর্থ ব্যয় করতে হবে। বর্তমানে মাত্র ৫ শতাংশ অর্থ ব্যয় করা হয়। এতে মাত্র ১০ ভাগ দরিদ্র জনগোষ্ঠী রাষ্ট্রের সামাজিক নিরাপত্তাজনিত সুবিধাদি ভোগ করেন। বর্তমানে এই সুবিধাদির মধ্যে রয়েছে, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা দুঃস্থ মহিলা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, শিশু কিশোরদের খোরাকি ভাতা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ভাতা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা, ভালনারেবল গ্রুপ ডেভেলপমেন্টসহ (ভিজিডি) অন্যান্য কর্মসূচি। এগুলোও আবার টার্গেট অনুযায়ী বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। প্রসঙ্গত, চলতি অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ১৬ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা ব্যয় করার লক্ষ্য নেয়া হয়েছে।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor