Tuesday, September 2, 2008

শত শত বীজাগার ব্যবহারের অযোগ্য ।। বহু নিশ্চিহ্ন

ইত্তেফাক \ ১৬ জুলাই ২০০৮
।। সালেহ টিটু, বরিশাল অফিস ।।

সংস্কারের অভাবে পাকিস্তান আমলে নির্মিত দেশের কয়েক হাজার বীজাগার ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে নদীর তীরবর্তী কিছু বীজাগার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বেশ কিছু বীজাগার ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তী এদেশে কোন বীজাগার নির্মিত না হওয়ায় কৃষকদের দূরবর্তী বিভিন্ন স্থান থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হচ্ছে। ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পুরাতন বীজাগারগুলোকে চিহ্নিত করে তা সংস্কার করে কৃষি কর্মকর্তার বাসভবনসহ বীজ রাখার উপযোগী করার কাজে হাত দেয় সরকার। এ জন্য দেশের সকল স্থানের কৃষি অফিসগুলোতে পাকিস্তান আমলে নির্মিত বীজাগারের তালিকা তৈরির নির্দেশ দেয়া হয়। ঐ নির্দেশ অনুযায়ী বর্তমানে বরিশাল কৃষি অধিদপ্তর থেকেও ৯টি জেলায় কতটি বীজাগার রয়েছে তার তালিকা তৈরির কাজ চলছে। ইতিমধ্যে বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর ও মাদারীপুর জেলায় ২৫৩টি বীজাগারের সন্ধান পাওয়া গেলেও এর অধিকাংশই সংস্কারের অভাবে ব্যবহার অনুপযোগী। কৃষি অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ১৯৬৩ সাল থেকে শুরু ১৯৬৯ সালের মধ্যে দেশের বেশিরভাগ ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় সংলগ্ন এলাকায় তৎকালীন সরকারের নির্দেশে বীজাগার নির্মাণ করা হয়। ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি থেকে শুরু করে সরকারি জমিতে এ সকল বীজাগার ভবন নির্মাণ করা হয়। তবে বেশিরভাগ বীজাগার নির্মাণ করা হয় ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে। ঐ সময় জমির মূল্য কম থাকায় এবং একজন ব্যক্তি কয়েক ‘কানি’ জমির মালিক হওয়ায় তারা ইউনিয়ন পরিষদকে বীজাগার নির্মাণে বাধা দেয়নি। কিন্তু বীজাগারগুলো এমন স্থানে নির্মাণ করা হয় যেখানে ধারে কাছে কোন কৃষক ছিল না। নির্জন স্থানে এক রকম জঙ্গল পরিষ্কার করে বীজাগার নির্মাণ করা হয়। নির্মাণ শেষে সেখানে কিছু লোক নিয়োগ দিয়ে কৃষকদের মাঝে বীজ বিতরণ শুরু করা হয়। বীজাগারগুলো দূরবর্তী স্থানে নির্মিত হওয়ায় এবং তেমন কোন যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় কৃষকরা বীজ আনতে তেমন একটা সেখানে যেত না। যে বীজাগারগুলো কৃষকদের বাড়ির ধারে কাছে নির্মিত হয়েছিল কিংবা যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল ছিল ঐ সকল স্থানের কৃষকরা সেখান থেকে বিনামূল্যে বীজ সংগ্রহ করত বলে জানা যায়।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জমির মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে যে সকল বীজাগার ভবনগুলো ব্যক্তি মালিকানার জমির উপর নির্মাণ করা হয়েছিল তা দখলে নিতে শুরু করে জমির মালিকরা। এছাড়া যে সকল বীজাগার ভবন ভাল ছিল সেগুলোতে পুলিশ ক্যাম্প এবং কৃষি অফিসারদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়। তবে বেশিরভাগ বীজাগার অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকায় তা সংস্কারের অভাবে দিনে দিনে ধ্বংসস্তূপ হয়ে যাচ্ছে। কিছু বীজাগার ইতিপূর্বে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। কৃষি অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বরিশাল জেলায় এখন পর্যন্ত ৮৫টি বীজাগারের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সদরে রয়েছে ১৬টি বীজাগার। ২টি ব্যবহারযোগ্য এবং বাকী ১৪টি ব্যবহার অযোগ্য। বাবুগঞ্জের ৬টি বীজাগারের মধ্যে ১টি নদীগর্ভে বিলীন, ১টি ব্যবহার করা হচ্ছে এবং বাকী ৪টি ব্যবহারযোগ্য নয়। উজিরপুরের ৯টি বীজাগারের মধ্যে ২টি ব্যবহারযোগ্য। বাকীগুলো ব্যবহারযোগ্য নয়। গৌরনদীর ১২টি বীজাগারের মধ্যে টরকী ও শরিকল বীজাগার দুইটিতে পুলিশ ক্যাম্প বসানো হয়েছে। ৩টি ব্যবহারযোগ্য। বাকীগুলো ব্যবহার অযোগ্য। আগৈলঝাড়ার ৫টি বীজাগারের মধ্যে ১টি ব্যবহারযোগ্য এবং বাকী ৪টি ব্যবহারযোগ্য নয়। বাকেরগঞ্জের ১৬টি বীজাগারের মধ্যে একটি নিলামে বিক্রি করা হয়েছ। ১টি নদীগর্ভে বিলীন, ৫টি ব্যবহারযোগ্য এবং ৯টি ব্যবহার অযোগ্য। মুলাদীর ২টি বীজাগার ব্যবহার অনুপযোগী। হিজলার ৩টি বীজাগারের মধ্যে ১টি ব্যবহারযোগ্য। মেহেন্দীগঞ্জের ৯টি বীজাগারের মধ্যে ২টি নদীগর্ভে এবং বাকী ৭টি ব্যবহারের অনুপযোগী। পটুয়াখালী জেলায় মোট ৬০টি বীজাগারের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সদরে ১২টি বীজাগার, দুমকিতে ৪টি, বাউফলে ১৩টি, দশমিনায় ৬টি, গলাচিপায় ১০টি, মীর্জাগঞ্জে ৭টি এবং কলাপাড়ায় ৮টি বীজাগারের সবক’টি সংস্কারের অভাবে ব্যবহারের অনুপযোগী। পিরোজপুর জেলায় ৫২টি বীজাগারের মধ্যে সদরে ৭টি, জিয়ানগরে ৩টি, কাউখালীতে ৬টি, নেছারাবাদে ১২টি, নাজিরপুরে ৮টি, ভান্ডারিয়ায় ৫টি, মঠবাড়িয়ায় ১১টি। এর মধ্যে ১টি বীজাগার নদীগর্ভে বিলীন, ১টি নিয়ে মামলা চলছে, ২০টি বীজাগার ব্যবহারযোগ্য এবং ৩০টি ব্যবহারের অনুপযোগী। মাদারীপুর জেলার ৫৬টি বীজাগারের মধ্যে সদরে ১৫টি, কালকিনিতে ১৪টি, রাজৈরে ১০টি ও শিবচরে ১৭টি বীজাগার রয়েছে। এর মধ্যে ৫টি নদীগর্ভে বিলীন, ৯টি ব্যবহারযোগ্য এবং ৪২টি ব্যবহারের অনুপযোগী। পাকিস্তান সরকার কোন দলিলপত্র ছাড়াই ঐ সকল বীজাগার নির্মাণ করায় তা দখলে নিতে বর্তমান কৃষি অধিদপ্তরকে বেশ বেগ পেতে হয়। স্বাধনীতাপরবর্তী কেন্দ্রীয় কৃষি অধিদপ্তর দেশের সকল বীজাগারের দলিল তৈরি করে তাদের আয়ত্তে নেয়ার নির্দেশ দেয়। সরকারি জমির উপর যে সকল বীজাগার নির্মিত হয়েছিল তা অনায়াসে দখলে নিতে পারলেও ব্যক্তি মালিকানার জমির উপর নির্মিত ভবনগুলো নিয়ে তাদের আদালত পর্যন্ত যেতে হয়েছে। এখনো বেশকিছু বীজাগার নিয়ে সরকারের সাথে মামলা চলছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বীজাগার সনাক্তকারী একাধিক কৃষি কর্মকর্তা জানান, অনতিবিলম্বে বীজাগারগুলোর সংস্কার করা না হলে ঐ ভবনগুলো কোন কাজে আসবে না। বরিশাল কৃষি অফিস সূত্র জানায়, যে সকল বীজাগার ভাল রয়েছে তা সংস্কার করে কৃষি কর্মকর্তাদের আবাসস্থলসহ বীজাগার নির্মাণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor