Thursday, September 4, 2008

বিপদসীমার ওপরে ২০ নদীর পানি বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, দেড় লাখ হেক্টর জমির আউশ-আমন তলিয়ে গেছে

০২.০৯.০৮
।। যায়যায়দিন ।। আলতাব হোসেন
দেশের প্রধান নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। ফলে ক্রমেই দেশের পূর্বাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গতকাল বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে দেশের ২০ নদীর পানি। ভারত ও নেপালের বন্যা এবং অব্যাহত বৃষ্টির কারণে আগামী তিনদিন বাংলাদেশের সব নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলে বন্যা পূর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে।
গতকাল দেশের ৭৩টির মধ্যে ৩৯ পয়েন্টে পানি বেড়েছে। কমেছে ২৯ পয়েন্টে। বিপদসীমার ওপরে ছিল ধরলা, যমুনা, কালীগঙ্গা, পদ্মা, মেঘনা, আড়িয়াল খাঁ, সুরমা, সোমেশ্বরী, ধলেশ্বরী, কুশিয়ারা, কংশ ও ঘাঘট নদী। এর মধ্যে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১১০ সেন্টিমিটার ও কুশিয়ারায় পানি ১০৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এসব নদীর পানি বৃদ্ধি আগামী তিনদিন অব্যাহত থাকবে বলে বন্যা পূর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে। সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, ভারতের বিহার মেঘালয়, আসাম, মিজোরাম, ত্রিপুরা অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি আগের মতোই আছে। আর নেপালে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ফলে দেশে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
এদিকে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে দেশের দেড় লাখ হেক্টর জমির বিভিন্ন ধরনের শস্য। এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উঠতি আউশ ও আমনের ক্ষেত। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মনিটরিং বিভাগ জানায়, গতকাল দেশের ২০ জেলার প্রায় দেড় লাখ কৃষি জমির ফসল বন্যার ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে। এর মধ্যে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, সিলেট, জামালপুর, কক্সবাজার, রাজবাড়ী, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, টাঙ্গাইল, নরসিংদী, যশোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও সিরাজগঞ্জ জেলার ১ লাখ ৬ হাজার ৮৬৯ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। এর মধ্যে রোপা আমন ৯৯ হাজার ৪০৮ হেক্টর, রোপা আমনের বীজতলা ৯৯২ হেক্টর, বোনা আমন ১ হাজার ৩৯৫ হেক্টর, আউশ ২ হাজার ৮০০ হেক্টর, শাকসবজি ১ হাজার ৯৪৪ হেক্টর, পাট ৪০ হেক্টর ও অন্যান্য ২৯০ হেক্টর।
বন্যা তথ্য কেন্দ্রের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গতকাল ধরলা নদীর পানি কুড়িগ্রাম পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। সকালে এখানে পানি ছিল ২৯ দশমিক ৯৪ মিটার। ঘাঘট নদীর গাইবান্ধা পয়েন্টে ১৬, ধলেশ্বরীর রেকাবি বাজার পয়েন্টে ৫, পদ্মার গোয়ালন্দে ৭৬ ও ভাগ্যকূলে ৮০, সুরমার কানাইঘাটে ১১০, সিলেটে ১৯, সুনামগঞ্জে ৫৫, কুশিয়ারার অমলশিড পয়েন্টে ১০৩, শেওলায় ৭৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে।
তবে পূর্বাভাস অনুযায়ী আজ পদ্মার রাজশাহী পয়েন্ট, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ, তালবাড়ীয়া, মাওয়া, ভাগ্যকূল, গোয়ালন্দসহ সব পয়েন্টে পানি বাড়বে। বাড়বে যমুনা ও সুরমার সব পয়েন্টে। বুড়িগঙ্গার পানি আগামী দুই-একদিনের মধ্যে বিপদসীমা অতিক্রমের আশঙ্কা না থাকলেও অনেক পয়েন্টেই পানি বাড়বে। এছাড়া রাজধানীর আশপাশের বালু, লাখাই, তুরাগÑ এসব নদীর পানিও বাড়বে। এতে মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, শরীয়তপুর জেলা এবং ঢাকার দোহার ও নবাবগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। একই ভাবে যমুনাসহ ব্রহ্মপুত্র বেসিনের অন্যান্য নদীগুলোর পানি বাড়ার ফলে সিরাজগঞ্জ, পাবনা, টাঙ্গাইল, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, রংপুর, বগুড়া ও জামালপুরের আরো অনেক নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে বলে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে মৌলভীবাজারে ৯৭ মিলিমিটার। এছাড়া সুনামগঞ্জে ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির পরিমাণ বাড়লে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের দুর্ভোগ আরো বাড়বে এবং সেই সঙ্গে নদীর পানি বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকলে নতুন করে অনেক এলাকা বন্যাকবলিত হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
বন্যার আশঙ্কায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ইতিমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। বন্যাকবলিত জেলাগুলোর জেলা প্রশাসকদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বন্যা বিশেষজ্ঞরা এ বছরের বন্যাকে ১৯৯৮ সালের বন্যার ভয়াবহতার মতো আশঙ্কা করছেন।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor