Tuesday, September 2, 2008

জলবায়ু পরিবর্তন ও খাদ্য নিরাপত্তা পরিবর্তিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে

যায়যায়দিন ।। ০১.০৯.০৮

জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মানুষের অস্তিত্বের প্রশ্ন জড়িত। এ পরিবর্তন খুব ধীরে হয় বলে মানুষ এর প্রভাব বুঝতে পারে না। জলবায়ুর পরিবর্তন যে একদিন মানুষের খাদ্য ও বাসস্থানের ওপর আঘাত হানবে সেটি মানুষ এখনো গু রুত্ব সহকারে নিচ্ছে না।
দক্ষিণ এশিয়ার জলবায়ু পরিবর্তন ও খাদ্য নিরাপত্তা শীর্ষক আন্তর্জাতিক সিম্পোজিয়ামে সফররত আইসল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট ও বিশিষ্ট পরিবেশ বিজ্ঞানী ওলাফার র‌্যাগনার গ্রিমসন যা বলেছেন তা তেমন সুখকর নয়। তিনি বলেছেন, হিসালয় পর্বতমালা ও মে রু অঞ্চলে আশঙ্কার চেয়ে বেশি পরিমাণে বরফ গলছে। এতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। ফলে উপকূল অঞ্চলে বসবাসকারী এশিয়ার প্রায় দুইশ কোটি লোকের বাসস্থান হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। এ নিয়ে সময়ক্ষেপণের আর কোনো সুযোগ নেই। মে রু অঞ্চলের অধিবাসী হিসেবে বলতে পারি, ভয়াবহতা আশঙ্কার চেয়ে অনেক বেশি। এটি এখন আর পরিবেশগত ইস্যু নয়। বরং বিশ্বের জন্য একটি নিরাপত্তা ইস্যু।
সিম্পোজিয়ামে শুধু আইসল্যান্ডের প্রেসিডেন্টই পরিবেশগত বিপর্যয়ের কথা বলেননি, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখ রুদ্দীন আহমদ, শিক্ষা উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, ওহাইও ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড. রতন লাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. এসএমএ ফায়েজ, ফাওয়ের প্রতিনিধি এড. স্পিসকার্সসহ ১৮টি দেশের ২৫৫ জন বিজ্ঞানী ও একাডেমিশিয়ান অভিন্ন কথা বলেন। বিজ্ঞানী ও একাডেমিশিয়ানরা ৬০টি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন এবং তা পর্যালোচনা করে দক্ষিণ এশিয়ার জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা এবং বিশ্বব্যাপী খাদ্য সঙ্কট সমাধানে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ছয়টি সুপারিশ করেন।
কিছুদিন আগে জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, পৃথিবীর তাপমাত্রা আর মাত্র ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে ৪৫ সেন্টিমিটার। ফলে বাংলাদেশের ২৫ শতাংশ উপকূলীয় এলাকা তলিয়ে যেতে পারে। সুন্দরবন, সেন্টমার্টিনস, নিঝুম ও হাতিয়া দ্বীপসহ বাংলাদেশের অসংখ্য দ্বীপের অস্তিত্ব বিলীন হতে পারে। এতে শুধু বাংলাদেশের ৩ কোটিরও বেশি মানুষ পরিবেশ উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি। তাপমাত্রা যতো বাড়বে ততোই গলতে থাকবে উত্তর ও দক্ষিণ মে রুর বরফও। ফলে বাংলাদেশের মতো সাগরতীরে অবস্থিত দেশগুলোর নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাবে।
পৃথিবীর তাপমাত্রা কমিয়ে আনতে গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ কমানো প্রয়োজন। ক্ষতিকর গ্যাস নির্গমনের মাত্রা কমিয়ে আনতে কিয়োটো প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়েছে। কিন্তু কমছে না তাপমাত্রা বৃদ্ধির ধারা। কারণ উন্নত দেশগুলোর তাপমাত্রা বৃদ্ধি রোধে যেভাবে কাজ করা উচিত ছিল তারা সেভাবে কাজ করছে না। ফলে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো বিপদের সম্মুখীন হচ্ছে।
এ বিপদ মোকাবেলার জন্য সেমিনারে যে ৬ দফা ঢাকা ঘোষণার সুপারিশ চূড়ান্ত করা হয়েছে তার বাস্তবায়নই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। সুপারিশ অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দুর্যোগ মোকাবেলা ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দক্ষিণ এশিয়ায় একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা এবং সাউথ এশিয়ান আউটলুক ফোরাম প্রতিষ্ঠা করা এবং এ দুটি বিষয়কে এগিয়ে নিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ঐক্যবদ্ধ করা, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এ বিষয়ে তথ্য ও প্রযুক্তি বিনিময় নিশ্চিত করা, ওয়ার্নিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা ও একটি সমন্বিত আর্থিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে পারলে দুর্যোগ এড়ানো সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
বিশ্বে এখন যুদ্ধবিরোধী সমাবেশের পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষার সমাবেশ আয়োজন করতে হবে। কারণ যুদ্ধে যেমন মানুষ মরে তেমনি জলবায়ু পরিবর্তনেও মানুষ মরবে। তবে তা যুদ্ধের চেয়েও বেশি। মানুষের পরিবেশ বিপর্যয়গত মৃত্যু ঠেকাতে পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে নামতে হবে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে বাধ্য করতে হবে পরিবেশ রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে। মানুষ যদি পরিবেশের ব্যাপারে সচেতন হয় এবং বিশ্ব নেতারা যদি তৎপর হন তাহলে পরিবেশগত বিপর্যয় থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করা যাবে। টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে নিম্নাঞ্চলে বসবাসরত শত কোটি মানুষের অস্তিত্ব।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor