Thursday, September 4, 2008

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন : বাংলাদেশের কৃষিতে এর প্রভাব ও করণীয়

সম্পাদকীয়
০৩.০৯.০৮
।। ডেসটিনি ।। মনির উদ্দিন

বাংলাদেশ বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপ, যা তৈরি হয়েছে হিমালয়ের পাদদেশ থেকে সৃষ্ট বিশ্বের বৃহত্তম নদী পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার বয়ে আনা পলিতে। হাওড়-বাঁওড়, খাল-বিল, নদ-নদী বেষ্টিত এ ভূখ-ে বন্যা, খরা, জোয়ার-ভাটা, লবণাক্ততা আর শিলাবৃষ্টিজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ একটি স্বাভাবিক ঘটনা এবং এ দেশের মানুষ প্রতিনিয়ত এগুলোর সঙ্গে সংগ্রাম করেই টিকে আছে। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এ দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা বিধান করা ছিল একটি প্রধান সমস্যা। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর এ দেশের লোকসংখ্যা ছিল প্রায় ৭ কোটি আর খাদ্য উৎপাদন ছিল মাত্র ১ কোটি টন। যার কারণে অনাহার, দুর্ভিক্ষ ছিল এ দেশের নিত্যসঙ্গী। এরপর দেশে শুরু হলো সবুজ বিপ্লব। কম উৎপাদনশীল দেশি জাতের ধানের জমিতে প্রবর্তিত হলো ইরির (ওজজও) ও ব্রির (ইজজও) আবিষ্কৃত উচ্চফলনশীল উন্নত জাতের ধান। ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য শুরু হলো রাসায়নিক সারের ব্যবহার। সেচের জন্য সরকারিভাবে বিএডিসির মাধ্যমে স্থাপন করা হয় গভীর নলকূপ। আর এভাবেই অভাবের এ দেশে উৎপাদিত হতে থাকে মাঠভরা সোনালি ধান এবং তারই ধারাবাহিকতায় আজ ১৪ কোটি মানুষের খাদ্যের জোগান দেয়ার জন্য উৎপাদিত হচ্ছে প্রায় ৩ কোটি টন ধান। এভাবেই আগামী দিনের ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছিল দেশের ১৪ কোটি মানুষ। বাংলাদেশের সাধারণ খেটে খাওয়া সেই মানুষের স্বপ্নে বাদ সেধেছে স্বয়ং প্রকৃতি। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে যে বিষয়টি নিয়ে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে, আন্তর্জাতিক মহলেও আলোচনা চলছে সেটা হলোÑ বৈশ্বিক জলবায়ুর পরিবর্তন এবং বাংলাদেশের প্রভাব। বিগত কয়েক বছর থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায়ই খরা, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়, অসময়ে বন্যা প্রভৃতি ঘটছেÑ যা আমাদের জলবায়ুজনিত পরিবর্তনের আভাসই দিচ্ছে। কীভাবে ঘটছে এ জলবায়ুজনিত পরিবর্তন? উন্নত বিশ্বের দ্রুত শিল্পায়নের ফলে বায়ুম-লে কার্বন মনো-অক্সাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড, মিথেন, ক্লোরোফ্লোরো কার্বন যুক্ত হয়ে ধরিত্রীর তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। সেই সঙ্গে বিশ্বের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য যে পরিমাণ বন তথা গাছ থাকা দরকার, শিল্পকারখানা স্থাপন, ফসলের জমি বাড়ানো তথা নগরায়নের ফলে সেটা কমে গেছে। এর ফলেও বায়ুম-লে কার্বন ডাই-অক্সাইড যুক্ত হয়ে বায়ুম-ল উত্তপ্ত হচ্ছে। পাশাপাশি কলকারখানার জ্বালানি, ফসল উৎপাদনের জন্য রাসায়নিক সারের ব্যবহারÑ সব কিছু মিলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বেড়ে গেছে, যার প্রভাবে দুই মেরুর বরফ গলছে। গলিত এ বরফের পানি সমুদ্রে পড়ে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। যার কারণে বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি দেশের একটা অংশ পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে, বিগত ১০০ বছরে পৃথিবীর বায়ুম-লের তাপমাত্রা বেড়েছে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অনেক বিজ্ঞানী বলছেন, ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়বে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়বে অর্ধ মিটার। নাসার এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে, ২০০৪ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে সুমেরু অঞ্চলের ১৪ শতাংশ বরফ হারিয়ে গেছে। পূর্ব-উত্তর মহাসাগরের অনেক স্থায়ী বরফ চলে গেছে পশ্চিম-উত্তর মহাসাগরের দিকে। অর্থাৎ ২ লাখ ৮০ হাজার বর্গমাইল এলাকার আয়তনের সমান স্থায়ী বরফ কমে গেছে। এভাবে যদি বরফ হারিয়ে যেতেই থাকে তাহলে দুই মেরুর গলিত বরফের পানিতে হারিয়ে যাবে পৃথিবীর অনেক স্থলভাগ আর যার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান রয়েছে ষষ্ঠ স্থানে। আমাদের দেশটি এমন একটি অবস্থানে রয়েছে, যার একদিকে সমুদ্র আর আরেক দিকে হিমালয়। এ অবস্থায় পৃথিবী যতই গরম হচ্ছে সমুদ্র ততই ফুলে উঠছে। আর বিশ্বের মানচিত্র থেকে বাংলাদেশের মুছে যাওয়ার শঙ্কা ততই ঘনীভূত হচ্ছে। গবেষণায় বলা হচ্ছে, ২০৩০ সাল নাগাদ দেশে বৃষ্টিপাত বেড়ে যাবে ১০ থেকে ১৫ ভাগ। সেই সঙ্গে সমুদ্রের উচ্চতা যদি বাড়তেই থাকে তাহলে বাংলাদেশের ২২,৮৮৯ বর্গ কিলোমিটার অর্থাৎ মোট আয়তনের ১৫.৮ ভাগ পানিতে তলিয়ে যাবে। আর এ জন্যই ব্রিটিশ সাংবাদিক জোহান হ্যারি জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক আন্তর্জাতিক পরিষদের (আইপিসিসি) তথ্যানুসারে বাংলাদেশকে এভাবেই দেখেছেন; বাংলাদেশ ১৯৭১ থেকে ২০৭১, ‘রক্তে জন্ম আর পানিতে মরণ’। সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়া নিয়ে যারা গবেষণা করছেন তারা অবশ্য বলেছেন, নানা উপাত্ত থেকে তাদের ধারণা হয়েছে যে গত ১০০ বছরে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা সম্ভবত ১০ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার বেড়েছে। আগামী ৩০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ হয়তো তলিয়ে যাবে না তবে তাপমাত্রা বৃদ্ধিজনিত বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরিমাণ বাড়তেই থাকবে এবং এটাও সত্য যে বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে সমুদ্রের উচ্চতাও ধীরে ধীরে হলেও বাড়বে।
বৈশ্বিক এ জলবায়ুগত পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের উন্নয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হবে সবচেয়ে বেশি। কারণ এ দেশের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর। সীমিত আয়তনের এ দেশে ১৪ কোটি লোকের বাস। নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে দিয়ে চলে এ দেশের কৃষি। আগামীতে বাড়তে থাকবে মানুষ, কমতে থাকবে জমি। এ অবস্থায় দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা দিতে হলে আগামী দিনের কৃষি হবে আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ জলবায়ুর এ পরিবর্তন এ দেশের কৃষিকে এখনই করে তুলেছে দুর্যোগের মুখোমুখি। যেভাবে মৌসুমে-অমৌসুমে বন্যা, খরা, ঘূর্ণঝড়, অনাবৃষ্টি, তাপমাত্রার বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হচ্ছে তাতে দেশের প্রধান দুটি ফসল বোরো ও আমন উভয়ই দুর্যোগের মুখোমুখি। দেশে বর্তমানে যে কোনো একটি মৌসুমের ফসলহানি মানেই নিশ্চিত দুর্ভিক্ষ। কারণ বিশ্বের যেসব দেশ নিজেদের খাদ্য জোগানের পাশাপাশি রফতানির মাধ্যমে অন্যান্য দেশের খাদ্য জোগানে সহায়তা দিত তারা নিজেরাই এখন তাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদার কথা ভেবে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। অন্যদিকে উন্নত বিশ্ব যেহেতু তারা খাদ্যে অনেকটা স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং জনসংখ্যা সীমিত। সেইসঙ্গে তাদের চাষযোগ্য জমিও রয়েছে প্রচুর। এ ক্ষেত্রে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাদের উৎপাদন হ্রাস পেলেও তেমন বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে না। সমস্যা হবে ঘনবসতির ১৪ কোটি মানুষের এই বাংলাদেশের।
জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে যেসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হতে পারে বাংলাদেশ সেগুলো মাথায় রেখেই অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে এগিয়ে নিতে হবে আমাদের আগামী দিনের কৃষিকে। জলবায়ুর পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে গড়ে তুলতে হবে কৃষি ব্যবস্থাকে। তাহলেই হয়তো দুর্যোগের মোকাবিলা করেই দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য যে বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব দেয়া দরকার এবং যথাযথ পদক্ষেপ এখন থেকেই গ্রহণ করা জরুরি তা হলোÑ
১. ফসলের এমন জাত উদ্ভাবন করা, যা পরিবর্তিত আবহাওয়ায় খাপ খাওয়াতে পারে। ২০০৭ সালের বোরো মৌসুমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ধানে চিটা হয়েছিল, যার পেছনে নীরব ভূমিকা ছিল জলবায়ুগত পরিবর্তনের। ধানের ফুল আসা অবস্থায় যদি অতি তাপমাত্রা, অতি ঠা-া, অতিবর্ষণ বা প্রবল বায়ুপ্রবাহÑ যে কোনো একটি ঘটে তাহলে পরাগায়নে বাধার কারণে ধানে চিটা হবে। আমাদের দেশের আবহাওয়ায় যে পরিবর্তন ইতিমধ্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে অতি তাপমাত্রা বা কম তাপমাত্রা যে কোনোটিই বোরো ও আমন উভয় ফসলের ক্ষেত্রে ফুল আসা অবস্থায় দেখা দেয়া অস্বাভাবিক নয়। তাই এ পরিবর্তিত আবহাওয়ায় পরাগায়নে সামর্থ্য হয় তথা খাপ খাওয়াতে পারে এ রকম জাত উদ্ভাবন করা অতীব জরুরি। কারণ যে কোনো একটি ফসলে যদি ২০০৭-এর মতো প্রভাব ব্যাপকভাবে পড়ে তাহলে তা দেশের জন্য হবে ভয়াবহ। সে জন্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে সরকারকে নীতি নির্ধারণ করা দরকার, যাতে দেশের বিভিন্ন পরিবেশ অঞ্চল অনুযায়ী উপযোগী ফসলের জাত দেয়া সম্ভব হয়।
২. বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা, যেমনÑ রাজশাহী অঞ্চলের বরেন্দ্র এলাকা, ময়মনসিংহের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকা, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও পঞ্চগড়ের অনেক এলাকায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ জমি বোরো মৌসুমে সেচের অভাবে অনাবাদি থাকে। গভীর নলকূপ ছাড়া এসব এলাকায় সেচের ব্যবস্থা করা অসম্ভব। আর স্থানীয় কৃষকদের পক্ষে গভীর নলকূপ স্থাপন করা দুরূহ। তাই সরকার যদি এসব এলাকায় গভীর নলকূপ স্থাপনের ব্যবস্থা করে তাহলে দেশের বোরো মৌসুমের আবাদি জমির পরিমাণ বেড়ে যাবে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। এতে বোরো ধানের মোট উৎপাদন আরও বাড়ানো সম্ভব হবে।
৩. হাওড়-বাঁওড়, বিল-ঝিলের এ দেশে নিয়মিত বন্যার কারণে অনেক হাওড়-বাঁওড়, বিল বন্যাবাহিত পলির মাধ্যমে উঁচু জমিতে পরিণত হয়েছেÑ যেখানে বোরো চাষ হচ্ছে। একই সঙ্গে দেশের উন্নয়ন কর্মকা-ের জন্য অবকাঠামো তথা রাস্তাঘাট নির্মাণ করতে গিয়ে প্রতিটি জেলায় বিপুল পরিমাণ জমি কৃত্রিম জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে। যেখানে বোরো মৌসুমে পানি জমে থাকা বা দেরিতে নামার কারণে বোরো চাষ করা যাচ্ছে না আবার অনেক জমি রয়েছে যেখানে জলাবদ্ধতার কারণে আমনও চাষ করা যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে যদি অঞ্চলভিত্তিক পানি ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের মাধ্যমে সঠিক পরিকল্পনা নেয়া যায় তাহলে অতিরিক্ত ১০ থেকে ১৫ লাখ হেক্টর জমি ধান চাষের আওতায় আনা সম্ভব হবে। যা আগামী দিনে বাংলাদেশের জন্য খাদ্য নিরাপত্তায় সহায়ক হবে।
৪. পরিকল্পিতভাবে বাঁধ নির্মাণ, খাল খনন, সøুইস গেট নির্মাণ করে শস্যের নিবিড়তাও বাড়ানো দরকার। পানি নিষ্কাশনের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব হলে অনেক এক ফসলি জমি দুই ফসলের আওতায়, দুই ফসলি জমি তিন ফসলের আওতায় আসতে পারে। এতে দেশের মোট চাষযোগ্য জমির পরিমাণ বেড়ে যাবে।
৫. উপকূলীয় এলাকায় রয়েছে আমাদের আবাদি জমির মোট ২০ শতাংশ, যা ইতিমধ্যেই লবণাক্ততার কবলে আক্রান্ত। খুলনার বিস্তীর্ণ এলাকায় ধানের ফলন একরপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ মণের জায়গায় ৫ থেকে ৬ মণে নেমে এসেছে। এখনই পরিকল্পিত ব্যবস্থা নেয়া দরকার এসব জমিকে লবণাক্ততার হাত থেকে রক্ষা করার। এ ক্ষেত্রে উপকূলীয় অঞ্চলকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করে এলাকার স্থানীয় খাল ও নদীগুলোকে সংস্কারের মাধ্যমে উজানের পলিবাহিত পানিকে বর্ষাকালে এসব এলাকার জমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত করা এবং তা যথাযথ নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকা। এতে করে একদিকে যেমন জমির লবণাক্ততা কমে ফসল উৎপাদনের উপযোগী থাকবে অন্যদিকে উপকূলীয় জমিতে পলি পড়ে ধীরে ধীরে জমির উচ্চতাও বাড়তে থাকবে। এতে ভবিষ্যতে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়লেও জমি লবণাক্ততার হাত থেকে রক্ষা পাবে।
৬. কৃষি জমি যাতে অকৃষি খাতে চলে না যায় তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। ধান উৎপাদনের ওপর নির্ভরশীল এ দেশের অর্থনীতি। তাই আগামীতে দুর্যোগ উপেক্ষা করেও যাতে দেশের চাহিদামাফিক ফসল উৎপাদন অব্যাহত রাখা যায় সেজন্য কৃষি জমিকে রক্ষা করা অতীব জরুরি।
৭. গ্রামীণ বাড়িঘর নির্মাণে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকা দরকার। চীনের মতো বিশাল দেশেও নির্দিষ্ট এলাকায় বসতি স্থাপন করে পরিকল্পিতভাবে জমির ব্যবহার করা হচ্ছে। সেখানে আমাদের গ্রামীণ পর্যায়ে বাড়িঘর তথা বসতি স্থাপনে কোনো নীতিমালা অনুসরণ করা হয় না। এ ক্ষেত্রে আমাদের বন্যাপ্রবণ এলাকায় আলাদা আলাদা বাড়ি নির্মাণ না করে কমিউনিটি ভিত্তিতে বন্যামুক্ত আবাস স্থাপনের পরিকল্পনা করা যেতে পারে। এতে একদিকে যেমন বন্যা, প্লাবন থেকে ঘরবাড়িসহ স্থায়ী সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির ঝূঁকি কমে যাবে অন্যদিকে বসতি স্থাপনে জমির পরিমাণ কমে গিয়ে তা কৃষিজ জমিতে যুক্ত হতে পারবে।
৮. দেশের বেশ কিছু নিচু অঞ্চল যেখানে বোরো চাষের পর আর কোনো ফসল ফলানো যায় না সেসব জমিতে যদি গভীর পানির আমনের উন্নত জাত দেয়া যায় তাহলে জাতীয় উৎপাদনে যুক্ত হতে পারে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অতিরিক্ত খাদ্যশস্য।
এফএও মহাপরিচালক তথ্য দিয়েছেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাওয়ায় আফ্রিকা, এশিয়া ও লাতিন আমেরিকায় ২০ থেকে ৪০ শতাংশ কৃষিজমি কমে যাবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, একুশ শতকের পৃথিবীর তাপমাত্রা ১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। যার ফলে উৎপাদন কমে যাবে। বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তা বিঘিœত হবে। এসব বিষয় নিয়ে আমাদের এখনই ভাবা দরকার। আমাদের সরকার চলতি বাজেটে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ৩০০ কোটি টকা বরাদ্দ রেখেছে, যা দেশ ও দেশের বাইরেও প্রশংসিত হয়েছে। ইতিমধ্যে উন্নত দেশগুলোও নাকি সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। সরকার জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক পলিসি ও একটি অ্যাকশন প্লানের খসড়া দাঁড় করিয়েছে, যার মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু উন্নয়ন পরিকল্পনা কৃষি খাতে অচিরেই নেয়া হবে বলে আশা করছি। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়াবহ চিত্রকে মাথায় রেখেই যদি আমরা আমাদের জমিকে রক্ষার উদ্যোগ এখন থেকেই গ্রহণ করি। পরিবর্তিত পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে উপযুক্ত ফসলের জাত উদ্ভাবন করতে পারি তাহলে আগামীতে আমরাও জলবায়ুজনিত পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়েই আমাদের উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে সক্ষম হব এবং এটাই আমাদের সবার প্রত্যাশা।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor