Tuesday, September 2, 2008

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়লেও দেশের উপকূলীয় এলাকা ডুবে যাবে না

০১.০৯.০৮
সমকাল ।। সবুজ ইউনুস, কক্সবাজার থেকে ফিরে

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার ১৭ ভাগ ডুবে যাওয়ার যে আশংকা করা হচ্ছে তা নাকচ করে দিয়েছেন জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত। তিনি বলেন, আমাদের সাগর উপকূল সুরক্ষিত। এখন প্রয়োজন উপকূলের বাঁধগুলোর সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ। পানির উচ্চতা কিছুটা বাড়লেও যেভাবে আশংকা করা হচ্ছে সেভাবে উপকূল ডুববে না। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দেশের স্থ’লভাগ বাড়তেও পারে। এ বিষয়ে নোয়াখালীসহ বিভিন্ন স্থ’ানে ইতিমধ্যে চর জেগে ওঠার উদাহরণ দেন তিনি। গত শুক্রবার ‘জলবায়ু পরিবর্তন, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও ই-গভর্নেন্স’ শীর্ষক এক কর্মশালায় তিনি এ কথা বলেন। ড. আইনুন নিশাত আরো বলেন, সামনের দিনগুলোতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়বে। পাল্কেল্ট যাবে ঋতুচক্র। বাংলাদেশের কৃষি খাতে এর মারাÍক প্রভাব পড়বে। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা পড়বে হুমকির মুখে। ফলে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হবে। তাই সম্ভাব্য নাজুক পরিস্থি’তি মোকাবেলায় এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। এ জন্য সরকারের নীতিনির্ধারক ও গণমাধ্যমকে সচেতন হতে হবে বলে তিনি মন্ত ব্য করেন। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসহৃচি (ইউএনডিপি) কক্সবাজারের একটি হোটেলে ওই কর্মশালার আয়োজন করে। কর্মশালায় গণমাধ্যম কর্মীরা অংশ নেন। ড. আইনুন নিশাত, অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমান ও ইউএনডিপির শীর্ষ কর্মকর্তারা গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। ড. আইনুন নিশাত বলেন, ১৯৯০ সালের পর থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের হার ব্যাপকভাবে বেড়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাও বাড়ছে। টেকনাফে ৬/৭ সেন্টিমিটার এবং সুন্দরবন এলাকায় ৪ সেন্টিমিটার পানির উচ্চতা বেড়েছে। তবে উচ্চতা বাড়ার ফলে বাংলাদেশের উপকূলের ১৭ ভাগ এলাকা ডুবে যাবে বলে যে আশংকা করা হচ্ছে তা ঠিক নয়। বরং কোনো কোনো এলাকায় নতুন চর জাগছে। দেশের উপকূলজুড়ে যে বাঁধ রয়েছে তা আমারা রক্ষা করতে সক্ষম। তবে বাঁধগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন। তিনি বলেন, আগামী ১৫ বছর খাদ্য নিরাপত্তা ব্যাপকভাবে বিঘিœত হতে পারে। উপকূলে লবণাক্ত এলাকা বাড়ছে। ফলে সেখানে ফসলের উৎপাদন কমছে। এ বিষয়গুলো বিবেচনা করে লবণাক্ততা, খরা, বন্যা সহ্য করতে পারে, এমন শস্য উদ্ভাবন করে তা কৃষকদের মাঝে জনপ্রিয় করতে হবে। খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন আনতে হবে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে বাংলাদেশের অবস্থ’া তুলে ধরে ড. আতিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশের বাস্তব অবস্থ’ার পরিপ্রেক্ষিতে এমডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের কৌশল বের করতে হবে। এমডিজির আটটি মূল লক্ষ্যমাত্রায় জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকে যুক্ত করা হয়নি। বিশ্বের অনেক দেশই নিজ দেশের আর্থ-সামাজিক পরিপ্রেক্ষিতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। বাংলাদেশকেও তার নিজস্ব সমস্যাগুলোকে বিবেচনায় এনে এগিয়ে যেতে হবে। কর্মশালায় আরো বক্তব্য রাখেন ইউএনডিপির কর্মকর্তা ড. আমিনুল ইসলাম, কেএএম মোরশেদ, কল্যাণ পান্ডে প্রমুখ। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের উপকহৃলীয় অঞ্চলে যে প্রভাব পড়ছে তা দেখতে কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকরা কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত থেকে ১২ কিলোমিটার দহৃরে হিমছড়ি এলাকা পরিদর্শন করেন। সেখানকার বাসিন্দারা সাংবাদিকদের জানান, দু’বছর আগে হিমছড়িতে সৈকত ছিল। সৈকতের পেছনে বসবাস ছিল প্রায় দু শ’ পরিবারের। কিন্তু এখন আর নেই। সমুদ্রে বিলীন হয়ে গেছে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা। ওই পরিবারগুলো এখন পাশের পাহাড়ের পাদদেশে আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থ’ায় তারা বসবাস করছেন। বৃষ্টির ফলে সেখানে পাহাড় ধসে পড়ার আশংকাও রয়েছে। সাগরের উপকূলে বোল্ডার ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সাগরের ঢেউয়ের গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে। সে পরিবর্তনের ফলেই এখানে ভাঙন হয়েছে। ঢেউয়ের গতিপথ আবারো পরিবর্তন হতে পারে।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor