Wednesday, September 10, 2008

পঞ্চগড়ে বাণিজ্যিক ভাবে কমলার চাষ

১১.০৯.০৮
।। ইত্তেফাক।। কাওছার আলী, পঞ্চগড় থেকে

সম্প্রতি পঞ্চগড়ে বাণিজ্যিক ভাবে কমলার চাষ শুরু হয়েছে। এক সময় জেলার কয়েকজন চাষী শখের বসে বাড়ির উঠোনে কমলার চারা রোপণ করে। কয়েক বছর এসব কমলা গাছে ধরে সুস্বাদু কমলা। এসব কমলার স্বাদও বাজারের অন্যান্য কমলার মতো বলে চাষীরা জানিয়েছেন। এদের মধ্যে জেলার বোদা উপজেলার সরদার পাড়া গ্রামের অচিন্ত্য কুমার কারকুনের কমলা বাগানে প্রচুর পরিমাণে কমলা ধরে। তার বাগানে প্রথম কমলা ফল হওয়ায় আশপাশের লোকজনের পাশাপাশি কৃষি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেছেন। এদিকে কৃষি বিভাগ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় মৃত্তিকা পরীক্ষা করে। জেলার মাটি ও আবহাওয়া কমলা চাষের উপযোগী বলে তারা মতামত দেয়।

ভারতীয় সীমান্ত বেষ্ঠিত এ জেলার পূর্বে ভারতের জলপাইগুড়ি, উত্তরে শিলিগুড়ি জেলা। ভারতের ওই জেলাগুলোতে অনেক আগে থেকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কমলা চাষ হচ্ছে। পঞ্চগড়ের জমি কমলা চাষের উপযোগী। জেলায় বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২ হাজার ৫শ’ থেকে ৩ হাজার মিলিমিটার। এধরনের জলবায়ু কমলা চাষের জন্য খুবই উপযোগী।

জেলার কৃষকদের কমলা চাষে আগ্রহ দেখে পঞ্চগড় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উন্নত কমলা চাষ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রকল্পের কর্মকর্তা আব্দুর রব জানান, কৃষি বিভাগ জেলায় পাঁচ বছর মেয়াদী কমলা চাষ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। গত ২০০৬ সালে এ প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করা হয়। এ পর্যন্ত জেলায় ৪ হাজার ৮শ’ ৮৮টি কমলা চারা লাগানো হয়েছে। পঞ্চগড় সদর উপজেলার মীরগড়ের হাফেজ মোঃ মজিবর রহমান, তেঁতুলিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি মখলেছার রহমান, আটোয়ারীর পানিশাইল গ্রামের মোঃ আব্দুর রশিদ এবং বোদা উপজেলার সর্দ্দারপাড়া গ্রামের তরিকুল ইসলাম প্রত্যেকে ৬৬ শতক জমিতে কমলা চারা রোপণ করেছেন। এসব কমলা চাষীর প্রত্যেককে ১৭০টি করে চারা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সরবরাহ করেছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পঞ্চগড় সদর, তেঁতুলিয়া, আটোয়ারী ও বোদা উপজেলার ৫৪০ জন চাষীকে কমলা চাষের জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। জেলা কৃষি অফিসের ৩০ জন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাকেও এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

এছাড়া জেলার সদর উপজেলার বলেয়াপাড়ার আব্দুল গফফার চৌধুরী, কাহারপাড়া গ্রামের জিতেন্দ্রনাথ, বড়ভিটার সালাউদ্দিন, জেলা শহরের কামাতপাড়ার আব্দুল জলিল, সিপাইপাড়া এলাকার আব্দুর রহমান, অচিন্ত্য কুমার কারকুন নিজস্ব উদ্যোগে বাড়িতে কমলা গাছ রোপণ করেছেন। এসব গাছের উৎপাদিত কমলার রং, আকার, স্বাদ ভারতীয় কমলার মত বলে তারা জানিয়েছেন। তাদের রোপণকৃত গাছে ৫০ থেকে ২শ’টি পর্যন্ত ফল ধরেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার মাটি ও আবহাওয়া কমলা চাষের উপযোগী হওয়ায় এখানে উন্নতজাতের নাগপূরী খাসিয়া কমলার চাষ করা যাবে। সাধারণত নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল কমলা চাষের উপযোগী। গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলেও কমলা চাষ হয়। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পঞ্চগড় জেলার মত একই জলবায়ু, পরিবেশ ও মাটি হওয়ায় দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি জেলার মতো এ জেলায়ও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কমলার চাষ সম্ভব। সম্প্রতি পঞ্চগড়ে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কমলা চাষ শুরু হয়েছে। উৎপাদিত কমলা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করে স্থানীয় কৃষকরা স্বচ্ছলতা আনতে সক্ষম হবে। এ লক্ষ্যে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার দর্জিপাড়া গ্রামে কাজী শাহেদ একটি কমলা বাগান করেছেন। তার কমলা বাগানে ১হাজার ২শ’ কমলা চারা রোপণ করা হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে এ বাগান থেকে কমলা উৎপাদন শুরু হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor