Sunday, September 7, 2008

বন্যায় দুই লাখ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত

০৮.০৯.০৮
।। ডেসটিনি ।। শফিকুল ইসলাম

বন্যার পানিতে ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ার পরিমাণ প্রতিদিনই বাড়ছে। সারাদেশে প্রায় ২ লাখ হেক্টর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তলিয়ে যাওয়া ফসলের মধ্যে রয়েছে আমন বীজতলা, আউশ, রোপা আমন ও বোনা আমন, পাট এবং শাকসবজি। এতে সারাদেশের কৃষকদের কোটি কোটি টাকার ফসলহানি ঘটছে। জমিতে পানি থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের আর্থিক মূল্য কত তা এখনো নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। তবে পানি নেমে গেলে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ কত হবে তা নিরূপণ করা সম্ভব বলে কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই) সূত্রে জানা গেছে।
বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে দেশের প্রায় ২ লাখ হেক্টর জমির বিভিন্ন ধরনের ফসল। কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক থেকে দেড় সপ্তাহের মধ্যে
আউশ-আমন ক্ষেতের পানি অপসারণ না হলে ফসল উৎপাদন কিছুটা হলেও ব্যাহত হবে। সূত্র জানিয়েছে, গতকাল পর্যন্ত (২৫ জেলার) দেশের লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, সিলেট, জামালপুর, কক্সবাজার, রাজবাড়ী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, টাঙ্গাইল, নরসিংদী, যশোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও সিরাজগঞ্জ জেলার ১ লাখ ৭৬ হাজার ৮৩০ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে রোপা আমন ১ লাখ ৬২ হাজার ৫২৫ হেক্টর, রোপা আমনের বীজতলা ২৪২৯ হেক্টর, বোনা আমন ১ হাজার ৯০৬ হেক্টর, আউশ ৫ হাজার ৬৩৫ হেক্টর, শাকসবজি ৩ হাজার ৩৫৯ হেক্টর, পাট ৪০ হেক্টর ও অন্যান্য ৯২৬ হেক্টর। এসব ফসলের অধিকাংশের ফসলি জমিতেই গত এক থেকে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত পানি স্থায়ী হয়ে আছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. শামছুল আলম দৈনিক ডেসটিনিকে জানান, বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়া আমন ধান যেগুলো এখনো কচি অবস্থায় রয়েছে সেগুলো একটু বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আমন ধান পানি সহিষ্ণু উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক সপ্তাহ বা তারও বেশি সময় পানিতে তলিয়ে থাকলে তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের বিষয়ে তিনি বলেন, ফসলি জমি থেকে পানি না সরা পর্যন্ত প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বলা সম্ভব নয়।
তবে আবহাওয়া অধিদফতর ও কৃষি অধিদফতরের মাঠপর্যায়ের একাধিক সূত্র দাবি করেছে, বন্যায় দেশের ২৫ জেলার ২ লাখ হেক্টর জমির ফসল একেবারেই নষ্টের পথে। উল্লেখ্য, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গত মৌসুমে বোরোর বাম্পার ফলনের পর চলমান আউশ-আমন ধানের চাষ ও উৎপাদন বাড়াতে নানামুখী পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে রোপা আমনের ৫৩ লাখ ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে ১ কোটি ৩০ লাখ টন চাল এবং বোনা আউশের ১১ দশমিক ১ লাখ হেক্টর জমিতে ২২ লাখ টন চাল। তবে আউশ চাষ হয়েছে ১৩ লাখ ৯৩ হাজার হেক্টর জমিতে (প্রায় ৩ লাখ হেক্টর জমি বেশি)।
সূত্র জানায়, বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়া জমির ফসলের মধ্যে আউশ ধান, বোনা আমন, পাট ও শাকসবজি রয়েছে। ধানের পরেই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে শাকসবজির ক্ষেতের। ক্ষতিগ্রস্ত এসব সবজির মধ্যে রয়েছেÑ মুলা, ডাঁটা শাক, ঢেঁড়স, ঝিঙা, চিচিঙা, লালশাক, পুঁইশাক প্রভৃতি। সবজি বিনষ্ট হলে অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে কৃষকরা।
এদিকে প্রবল বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার খবর পাওয়া গেলেও রাজধানীর খামারবাড়িস্থ কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর প্রাথমিক পর্যায়ে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করেনি। সারাদেশের মাঠপর্যায়ের রিপোর্ট না পাওয়ায় তারা তথ্য সংগ্রহে বিলম্ব করেছে বলে একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তবে ওই কর্মকর্তা দৈনিক ডেসটিনিকে জানিয়েছেন, এ বন্যার পানিতে জমি তলিয়ে যাওয়া স্বাভাবিক ঘটনা। এতে ফসলের ক্ষতি হয় না। তবে পানি দীর্ঘস্থায়ী হলে ফসলের ক্ষতি হয়। ইতিমধ্যে পানি কমে যেতে শুরু করেছে। আর বৃষ্টি না হলে স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে তিনি মনে করেন। সবজি ও আমন ধানের ক্ষেত সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিচু জমির সব সবজি নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আর উঁচু জমিতে সদ্য লাগানো সবজি ও বীজতলাগুলোও নষ্ট হয়েছে। তবে কী পরিমাণ জমির ফসল নষ্ট হয়েছে কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের আর্থিক মূল্য কেমন সে সম্পর্কে কৃষি অধিদফতরে কোনো তথ্য নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে দেশে প্রতি বছর বন্যার ক্ষতির পরিমাণ বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশে ১৯৫৪ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ৩২টি ভয়াবহ বন্যা হয়েছে। এর মধ্যে প্রলয়ঙ্করী বন্যা ছিল ১৭টি। বন্যাগুলোতে সাড়ে ৬ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়। সর্বশেষ ১৯৯৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় দেশের ৫২টি জেলা প্লাবিত হয়। বাংলাদেশে ১৯৭৪, ১৯৮৮, ১৯৯৮ ও ২০০৪ সালের বন্যায় দেশের মোট জমির ৫৪ থেকে ৭০ ভাগ ডুবে যায় ২১ থেকে ৭২ দিনের জন্য। মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৩০০ মিলিয়ন থেকে ২.২ বিলিয়ন ইউএস ডলার। গত বছর আমন মৌসুমে দুই দফা বন্যায় ১৭ লাখ টন খাদ্যশস্য কম উৎপাদিত হয়। ফলে দেশে চরম খাদ্য সংকট দেখা দেয়। জলবায়ু পরিবর্তনে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে বন্যার মধ্যবর্তী সময় ক্রমেই কমে আসছে। ১৯৫৫-এর ১৯ বছর পর ১৯৭৪, এর ১৪ বছর পর ১৯৮৮, এর ১০ বছর পর ১৯৯৮, এর ৬ বছর পর ২০০৪ এবং এর ৩ বছর ২০০৭।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor