Saturday, September 6, 2008

সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে চিংড়ি খাত বিপর্যয়ের মুখে

০৭.০৯.০৮
।। যায়যায়দিন।। ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি কক্সবাজার থেকে

বাংলাদেশের অন্যতম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী চিংড়ি খাত সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। সঠিক নীতিমালা ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ খাতটি বর্তমানের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারতো বলে এ খাতের সঙ্গে জড়িতরা মনে করেন। শ্রিম্প অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (শেব) সাধারণ সম্পাদক রইস উদ্দিন বলেন, চিংড়ি উৎপাদনের অন্যতম উপাদান মাদার শ্রিম্প অর্থাৎ মা চিংড়ি। বর্তমানে মা চিংড়ির আকাল দেখা দিয়েছে। ২০০০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ৫০০ হতে ৮০০ টাকা দরে একটি মা চিংড়ি কেনা যেতো। বর্তমানে একটি মা চিংড়ি ৫ হাজার থেকে ১৪ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। এতো বেশি দামে মা চিংড়ি কিনে লাভ করা সম্ভব হচ্ছে না। মা চিংড়ির আকালের কারণ জানতে চাওয়া হলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ম. কবির আহমদ জানান, পুরো বছর চিংড়ি ধরার কারণে মা চিংড়ির আকাল দেখা দিয়েছে। বর্তমানে বঙ্গোপসাগরে ৪৯টি জাহাজ চিংড়ি ধরছে। ১৯৯৮ সালে মৎস্য অধিদপ্তর ডিমপাড়া মৌসুমে (জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) মা চিংড়ি না ধরার জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করে। এ প্রজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে জাহাজ কোম্পানিগুলো হাইকোর্টে মামলা করে এর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করায়। সেই থেকে পুরো বছর ধরে তারা সমুদ্রে অব্যাহতভাবে চিংড়ি ধরা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরে টেকনাফের এলিফ্যান্ট পয়েন্টে ও সুন্দরবনের দুবলারচরের পাশে চিংড়ির গ্রাউন্ড রয়েছে। এর মধ্যে এলিফ্যান্ট পয়েন্ট হচ্ছে সবচেয়ে বড় চিংড়ি গ্রাউন্ড। এ গ্রাউন্ডগুলোতে সারান জাহাজ দিয়ে চষে বেড়ালে মা চিংড়ির আকাল তো হবেই। তিনি বলেন, এ জাহাজগুলোর চিংড়ি ধরার লাইসেন্স থাকলেও মা চিংড়ি ধরার লাইসেন্স নেই।
এ ব্যাপারে কক্সবাজারের বিশিষ্ট চিংড়ি উৎপাদনকারী ও শেবের সাবেক সভপতি লুৎফুর রহমান কাজল বলেন, চিংড়ি খাতে দিন দিন সমস্যার পাহাড় সৃষ্টি হয়েছে। মা চিংড়ির আকাল, পরিবেশবান্ধব ওষুধের অভাব, চিংড়ি পোনার বড় ক্রেতা খুলনা ও সাতক্ষীরা এলাকার ব্যবসায়ীরা বাকিতে বিপুল পরিমাণ পোনা কিনে কক্সবাজারের হ্যাচারি মালিকদের টাকা আটকে রাখা, প্রকৃতি থেকে আহরিত পোনার ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা না থাকার ফলে এ সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি বলেন, চিংড়ি খাত বাংলাদেশের অন্যতম অর্থকরী খাত। বাংলাদেশে ২ লাখ ১০ হাজার হেক্টর চিংড়ি জমি রয়েছে। তার মধ্যে কক্সবাজারে ৩০ হাজার হেক্টর জমি রয়েছে চিংড়ি চাষের। অন্যগুলো রয়েছে সাতক্ষীরা ও খুলনা এলাকায়। ১৯৭১ সালে খুলনা ও চট্টগ্রামে নয়টি চিংড়ি রপ্তানি প্রক্রিয়াজাত কারখানা গড়ে ওঠে। পরে কক্সবাজার, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও চট্টগ্রাম এলাকায় ১৩০টি প্রক্রিয়াজাত কারখানা গড়ে ওঠে। এ খাত থেকে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে হিমায়িত খাদ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশ আয় করে ২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, ১৯৭৫-৭৬ সালে আয় হয় ১৫৭ কোটি ২০ লাখ টাকা, ১৯৮০-৮১ সালে ৬৫০ কোটি ১০ লাখ, ১৯৯০-৯১ অর্থবছরে তা নেমে দাঁড়ায় ৫০০ কোটি টাকায়। ২০০০-০১ অর্থবছরে আয় হয় ১ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা, ২০০৬-০৭ অর্থবছরে আয় হয় ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং ২০০৭-০৮ অর্থবছরে তা দাঁড়ায় ৪ হাজার কোটিতে।
বিশিষ্ট চিংড়ি হ্যাচারি মালিক হুমায়ূন কবির জানান, সম্ভাবনাময় বাগদা চিংড়ি খাতে সমস্যার শেষ নেই, নেই সরকারি কোনো নীতিমালা। এতো বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করার পরও এ খাতের সমস্যা সমাধানে সরকার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করার কারণ খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বাগদা চিংড়ি প্রকল্প মালিক সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সানাউল্লা সানু বলেন, এ বছর হোয়াইট স্পট ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে জেলার ১ হাজার ৫০০টি প্রকল্পে প্রায় ১ হাজার ৫০০ হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ খাতটি অন্যতম অর্থকরী হলেও এ খাত রক্ষায় কোনো বীমা করার সুবিধা নেই।
বাংলাদেশে প্রতি হেক্টরে বাগদা চিংড়ি উৎপাদন হয় ২৫০ কেজি। অথচ প্রতিবেশী দেশ ভারতে প্রতি হেক্টরে উৎপাদন হয় ৩ হাজার কেজিরও বেশি। অথচ এ খাতটি সবচেয়ে অবহেলিত। যতো দ্রুত সম্ভব সরকার এ খাতের উন্নয়নে নজর দেবে ততোই মঙ্গল হবে দেশের।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor