Friday, January 30, 2009

উত্তরাঞ্চলে সেচ সংকটে ফসলের ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা

৩১.০১.০৯
ইত্তেফাক ।। আমিনুল ইসলাম চৌধুরী, উত্তরাঞ্চল প্রতিনিধি ।।

উত্তরাঞ্চলের জলবায়ুর পরিবর্তন ও আবহাওয়ার বৈরী আচরণ কৃষি ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। এই অবস্থা জনস্বাস্থ্যের জন্যও হুমকিস্বরূপ। দীর্ঘস্থায়ী ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে প্রকৃতি। দিনভর সূর্যের মুখ দেখা যায় না। ৭ দিন পর গত বৃহস্পতিবার দুপুর ২ টায় মাত্র এক ঘন্টার জন্য সূর্যের মুখ দেখা গেছে। নদ-নদীর পানি সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে। পানিশূন্য হয়ে পড়েছে নদ-নদী, খাল-বিল। ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে। এখন শুরু হয়েছে বোরো মৌসুম। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে যাওয়ায় সেচ সংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। বেশি ফলনের আশায় উত্তরাঞ্চলে ৮০ ভাগ জমিতেই হাইব্রিড ধানের চাষ হচ্ছে। সেচ সংকট দেখা দিলে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। পদ্মা, যমুনা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র নদ-নদীর পানি প্রবাহ শূন্যের কোটায়। বিশাল বিস্তৃত চলনবিলসহ শতাধিক নদী পানিশূন্য। চলনবিল ও নদ-নদীর তলদেশে ফসলের চাষ হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য, চলতি মৌসুমে পদ্মা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা নদ-নদীর পানির গভীরতা সর্বনিম্নে নেমে গেছে। পানিশূন্য নদ-নদী বক্ষে বিশাল বিস্তৃত বালির স্তর জমেছে। ৫০ হাজারেরও বেশি একর আবাদি জমি অনাবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, এবার শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই উত্তরাঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে। ৯০ থেকে ১শ ফুট পাইপ বসিয়েও নলকূপে পানি উঠছে না। পানির স্তর ৩৫ থেকে ৪০ ফুট নিচে নেমে গেছে। পানির স্তর সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে যাওয়ায় উত্তরাঞ্চলের জন্য অশনিসংকেত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে যাওয়া উত্তরাঞ্চলে মরু প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিশুদ্ধ পানীয় জলের সংকট দেখা দিয়েছে। পানিতে আর্সেনিকের পরিমাণ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার জরিপ রিপোর্ট থেকে জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের বগুড়া, রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, জয়পুরহাট, নাটোর, নওগাঁ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ জেলায় ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিকের পরিমাণ সব চেয়ে বেশি। এসব জেলার ৯৫টিরও বেশি গ্রামের পানিতে আর্সেনিকের পরিমাণ বেশি বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব গ্রামে আর্সেনিকে আক্রান্ত লোকের সংখ্যা সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। বেসরকারি সংস্থার হিসাবে এ সংখ্যা ৫ সহস্রাধিক।

প্রকৃতির বৈরী আচরণে ফসল উৎপাদনও ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আবাদ করা ফসলে ছড়িয়ে পড়ছে রোগবালাই। ঘন কুয়াশায় এবার উত্তরাঞ্চলে আলু ক্ষেতে ছত্রাক রোগের বিস্তৃতি ঘটেছে। পাতা পচা রোগে নষ্ট হচ্ছে আলু। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে উঠতি গম, সরিষা। ওষুধ ছিটিয়েও কাঙিক্ষত ফল পাওয়া যাচ্ছে না। কৃষি বিভাগের হিসাবে উত্তরাঞ্চলের বগুড়া, রংপুর, নীলফামারী, পাবনা, জয়পুরহাট, লালমনিরহাট, সিরাজগঞ্জ জেলায় উচ্চফলনশীল ও হাইব্রিড জাতের আলু চাষ হয়েছে ৯৫ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে। আবহাওয়া ও প্রকৃতির বৈরী আচরণে ছত্রাকে ( লেট ব্লাইড) আক্রান্ত হয়ে সাড়ে তিন হাজার হেক্টরেরও বেশি জমির আলু নষ্ট হয়ে গেছে। উৎপাদনও নিচে নেমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor