Thursday, October 2, 2008

রাবার চাষ বদলে দিতে পারে কৃষি অর্থনীতি

২৮.০৯.০৮
ইত্তেফাক ।। মাটি ও মানুষের কৃষি ডেস্ক

রাবার প্রকৃতিক উপায়ে সংগৃহীত একটি জৈব পদার্থ। একটি রাবার গাছের পরস্পর সম্পর্কযুক্ত কোন অংশ বা প্রণালী দিয়ে নির্গত কষই হচ্ছে রাবার। প্রথম দিকে সব রাবারই ছিল প্রাকৃতিক, যা জীবš- রাবার গাছ হতে আহরিত হত। গাছ থেকে আহরিত কষ যা নিয়মমাফিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঘনীভূত হয়ে শক্ত হয়। সেই কষ প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে প্রাকৃতিক রাবারকে ব্যবহার উপযোগী করে মানুষের বিভিন্ন চাহিদা মেটানো হয়।

বাংলাদেশে রাবার চাষের উজ্জ্বল সম্ভবনা রয়েছে। ষাটের দশকের শুরুর দিকে কক্সবাজারের রামু এবং তার আশেপাশের পাহাড়ী এলাকাগুলো বিশেষজ্ঞরা জরীপ করে রাবার চাষের উপযোগী বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। ১৯৬০-৬১ সালে সরকারি উদ্যোগে কক্সবাজার জেলার রামুতে প্রথম পরীক্ষামূলক রাবার চাষ শুরু হয়। পরবর্তীতে সরকারি পর্যায়ে আরও রাবার বাগান গড়ে ওঠে। এরপর ব্যক্তিমালিকানায় রাবার চাষ শুরু হয়। ১৯৮০-৮১ সাল হতে ১৯৯৭ সাল পর্যš- প্রতিটি ২৫.০০ একর করে প্রায় ১৩০০টি বাগান বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দ দেয়া হয়।

১৮৭৬ সালে স্যার হেনী উইকহ্যাম আমাজান নদীর অববাহিকার গভীর জঙ্গল থেকে রাবারের বীজ সংগ্রহ করে লন্ডনের ‘কিউ গার্ডেন’ এ রোপণ করেন। সেখান থেকে ছোট গাছ অবস্থায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সিলোন ও পূর্ব-এশিয়ার মালায়ন উপদ্বীপ এ স্থানাš-রিত হয় এবং পরবর্তীতে ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও ভারতীয় উপ-মহাদেশে রাবার চাষ শুরু হয়। সেদিক থেকে বাংলাদেশ রাবার চাষে নতুন হলেও এদেশের ভূ-প্রকৃতি, জলবায়ু ও পরিবেশ রাবার চাষের জন্য খুবই উপযোগী।

রাবার চাষ আমাদের গ্রামীণ এলাকায় ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। উৎপাদিত রাবার কাঁচামাল হিসেবে শিল্প প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার করে রাবারজাত দ্রব্যাদি প্রস্তুতপর্বে এবং বিপণনে বহু লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। রাবার একটি অপরিহার্য অর্থকরী ফসল। তাই বাণিজ্যিকভাবে রাবার চাষ একাš- প্রয়োজন। রাবার গাছ অন্য যে কোন গাছের চেয়ে তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি পরিমাণ অক্সিজেন উৎপাদন করে। তাই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার খাতিরে রাবার চাষ কাম্য। দেশীয় রাবার শিল্প বিকাশের লক্ষ্যে অবশ্যকরণীয় কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশের কথা উলে¬খ করা যায়।

রাবার গাছকে প্রক্রিয়াজাত করে মূল্যবান আসবাবপত্র তৈরির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। রাবার শিল্পের সাথে সাথে রাবার গাছের কাঠও দেশের জন্য বিশাল সম্ভবনা নিয়ে আসতে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে করে আগামী দশ বছরে পাঁচ লক্ষাধিক লোকের কর্মসংস্থান হতে পারে।

আমাদের দেশে কাঁচা রাবার আমদানির ক্ষেত্রে সঠিক নীতিমালা থাকা প্রয়োজন। এতে করে দেশীয় উৎপাদনকারী, আমদানিকারক ও ব্যবহারকারীর স্বার্থ সংরক্ষিত হবে। ১৯৯৬-৯৭ অর্থ বছরে কাঁচা রাবার আমদানি কর প্রায় অর্ধেক কমানোতে দেশীয় উৎপাদনকারী এবং এর সাথে সংশি¬ষ্ট সকলেই চরম আর্থিক সংকটে পতিত হয়েছে এবং রাবার চাষ প্রকল্প হুমকির মুখে পড়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে উৎপাদনকারী বা বিনিয়োগকারীরা হতাশ হয়ে পড়বে। এতে করে হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ অঙ্কুরেই বিনষ্ট হবে ও অর্থনীতির উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়বে।

রাবার চাষ একটি জাতীয় ভিত্তিক প্রকল্প। এর উৎপাদন, শ্রমিক কর্মচারী ও মালিক পক্ষের স্বার্থ সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণ, আমদানিকৃত কাঁচা রাবারের সাথে দেশীয় রাবারের অসম প্রতিযোগিতা দূরীকরণ এবং আমদানিকারক, উৎপাদনকারী ও ব্যবহারকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য অবশ্যই জাতীয় রাবার নীতিমালা প্রণয়নের প্রয়োজন রয়েছে।

রাবার শিল্প বিকাশের লক্ষ্যে ইভাফোম, সিনথেটিক রাবার আমদানিকারক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এলসি খোলার পূর্বে কমপক্ষে শতকরা ৫০ ভাগ কাঁচামাল হিসেবে দেশীয় রাবার ক্রয় করেছেন মর্মে বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন থেকে প্রত্যায়ন পত্র গ্রহণের নির্দেশ জারী করা যেতে পারে। এতে ইভাফোম, নরম প¬াস্টিক ও সিনথেটিক রাবার আমদানির পরিমাণ কমাতে এবং দেশীয় রাবারের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে।

বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে রাবার চাষ কর্মসূচিকে সাফল্যের দ্বারপ্রাšে- উপনীত করতে হলে ‘রাবার বোর্ড’ গঠন করা অত্যš- জরুরি।

রাবার চাষে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দরকার। আমাদের পার্শ্ববতী দেশ ভারতে রাবার চাষীদের বিশেষ রফতানি ও ভর্তুকি সুবিধাসহ সহজ শর্তে ঋণ, অনুদান ও রাবার বোর্ড গঠনের মাধ্যমে হাতে-কলমে শিক্ষাসহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়। আমাদের দেশে অনুরূপ সহযোগিতা পেলে রাবার চাষ আরও বি¯-ারলাভ করতে পারতো।

সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তি মালিকাধীন বাগান হতে চলতি বছর প্রায় ৯০০০ মেট্রিক টন কাঁচা রাবার উৎপাদিত হবে। অন্যদিকে দেশের অভ্যš-রীণ রাবার শিল্প কারখার চাহিদা রয়েছে প্রায় ৯০০০ মেট্্িরক টন। বর্তমান চাহিদার তুলনায় উৎপাদন উদ্বৃত্ত হওয়া সত্ত্বেও বাইরে থেকে রাবার আমদানি করে থাকে।

রাবার শিল্পের প্রতি যতœবান হলেই আমরা বিদেশ থেকে রাবার আমদানি করা বন্ধ করে রাবার রফতানি করতে পারবো। আর এর জন্য প্রয়োজন মালিকানাধীন বাগানগুলোতে পর্যাপ্ত পুঁজি, সুন্দর অবকাঠামো, সুষ্ঠু আইন-শৃঙ্খলা। পাশাপাশি আধুনিক পদ্ধতিতে রাবার প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে বিপণনের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে করে রাবার উৎপাদনে নিয়োজিত অন্য সকল সংস্থা ছাড়া শুধু ব্যক্তি মালিকানায় রাবার চাষ উন্নয়ন খাত থেকেই আগামী ২০২০ সাল নাগাদ অš-তপক্ষে ২০.০০০.০০ মেট্্িরক টন প্রাকৃতিক রাবার বিদেশে রফতানি করা সম্ভব হবে এবং দেশকে স্থায়ীভাবে রাবার রফতানিকারক দেশে পরিণত হবে।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor