Saturday, October 11, 2008

কৃষিবান্ধব নীতির কারণে কৃষিতে এগিয়ে চীন

০৮.১০.০৮
ডেসটিনি ।। শফিকুল ইসলাম, চীন থেকে ফিরে

কৃষিবান্ধব নীতির কারণে সফলতার ধারায় এগিয়ে যাচ্ছে চীনের কৃষি। বিশ্বের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর দেশ চীনে কৃষকদের শস্যভেদে সরকার ৬০ ভাগ পর্যন্ত ভর্তুকি দিয়ে থাকে। বর্তমানে ভূমির মালিকানা সরকারের হাতে থাকলেও তা দীর্ঘমেয়াদে লিজ দেয়া হচ্ছে কৃষকদের। কৃষকের নামে জমি লিজ নিয়ে কন্ট্রাক্ট ফার্মিং পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছে শহরের খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
বেইজিং শহর থেকে সাড়ে ৪ হাজার কিলোমিটার দূরে হুবাই প্রদেশের গুনআন কাউন্টির (জেলা) একটি গ্রাম জুজেইয়ান। ২৬ সেপ্টেম্বর সেখানে সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, দেড় হাজার হেক্টর আয়তনের এ বিশাল গ্রামের লোকসংখ্যা মাত্র ২ হাজার ৪১২ জন। আর কৃষক পরিবারের সদস্য ৫৬০ জন। মোট জমির ১ হাজার হেক্টরই আবাদি জমি। ৩ থেকে ৫ হাজার পাকা দালান নিয়ে গড়ে উঠেছে চীনের একেকটি গ্রাম। এসব গ্রামে মূলত কৃষকরাই বসবাস করেন। কৃষকের দুই থেকে পাঁচতলা বাড়িই বেশি চোখে পড়ে। প্রতিটি বাড়ি রঙিন টাইলস দিয়ে তৈরি। চোখে পড়লো কৃষকের পাকা উঠানে শুকাতে দেয়া তুলা, ভুট্টা আর লাল মরিচ। বাড়ির পাশের সামান্য পতিত জমিতে কৃষক বুনেছেন নানা জাতের শাকসবজি। ফুটে আছে সর্ষেফুল। রাস্তার পাশে ছোট নালায় ফুটেছে
নীলপদ্ম। কোথাও পাকা আবার কোথাও আধাপাকা ধানের ক্ষেত। চোখে পড়লো কৃষকের ব্যস্ততা। কৃষাণীদের ব্যস্ততা যেন একটু বেশিই। ধান কেটে সঙ্গে সঙ্গে ক্ষেতেই মেশিন দিয়ে তা মাড়াই করা হচ্ছে। মাড়াইয়ের পর ধানের খড় জমিতেই পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। এরপর গাড়িতে করে কৃষকের ফসল চলে যাচ্ছে সরকার নিয়ন্ত্রিত গ্রামের খাদ্য গুদামে।
কৃষকদের শস্যভেদে সার, সেচসহ অন্যান্য উপকরণে ৪০ ভাগ থেকে ৬০ ভাগ পর্যন্ত ভর্তুকি দিয়ে থাকে চীন সরকার। পাশাপাশি কৃষিজমি কোনোভাবেই অকৃষিতে যাতে না যায় সেজন্য চীন সরকারের রয়েছে কঠোর নীতিমালা। কেউ ইচ্ছা করলেই কৃষি জমিতে শিল্প-কারখানা স্থাপন করতে পারেন না। এ ধরনের নীতিমালা বাংলাদেশে না থাকায় প্রতি বছর দেশে ৬০ থেকে ৬৫ হেক্টর জমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। কৃষকদের যাতে কেউ ঠকাতে না পারে সেজন্যও রয়েছে কঠিন আইন। চীনে মুক্তবাজার অর্থনীতি থাকলেও রয়েছে কঠোর আইন। কেউ ইচ্ছা করলেই কৃষি উপকরণের দাম বেশি নিতে পারেন না। অর্থনীতির ফর্মুলায় উপকরণের ওপর নিয়ন্ত্রণ না থাকলেও মান নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে চীন সরকার কঠোর ভূমিকা পালন করে থাকে।
চীনের মতো বাংলাদেশে কৃষিবান্ধব নীতিমালা থাকলে দেশ অনেকদূর এগিয়ে যেত উল্লেখ করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক কৃষিবিদ ইব্রাহিম খলিল বলেন, কৃষির অন্যতম উপকরণ বীজ, সার ও কীটনাশক সহজলভ্য করা উচিত। দেশে প্রতি বছর ২৮ লাখ ১৪ হাজার টন ইউরিয়া, ৪ লাখ ৬০ হাজার টন টিএসপি, ৪ লাখ টন এমওপি এবং আড়াই লাখ টন ডিএপি সারের প্রয়োজন হয়। কৃষকদের স্বার্থের কথা ভেবে এসব সার কৃষকরা প্রয়োজন মতো খুব সহজে যাতে পেতে পারেন, সে ধরনের কৃষিবান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন করা প্রয়োজন।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor