Tuesday, October 7, 2008

হাইব্রিড ধান বীজ

০৭.১০.০৮
সম্পাদকীয়
।।ডেসটিনি।।

চালের ঘাটতি কমাতে হাইব্রিড ধানের চাষ বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। আগামী বোরো মৌসুমে ১৫ হাজার টন হাইব্রিড ধান বীজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সে জন্য জমি নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ লাখ হেক্টর। গত মৌসুমে হাইব্রিডের আওতায় জমি ছিল ৮ লাখ হেক্টর। আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি বিগত বছরে আমাদের এক নতুন এবং তিক্ত অভিজ্ঞতা দিয়েছে। এই অভিজ্ঞতা থেকেই ঘটেছে নতুন বোধোদয়। বাংলাদেশ খাদ্য ঘাটতির দেশ। এই ঘাটতি পূরণে আমদানিনির্ভরতা কমাতে না পারলে বিগত বছরের মতো মূল্য বিপর্যয়ের মুখে পড়ার আশঙ্কা থেকে যাবে বরাবরই। আমদানিনির্ভরতা কমাতে নিজেদের খাদ্য উৎপাদনকে জোরালো করতে হবে। সে ক্ষেত্রে হাইব্রিড ধানের আবাদ বৃদ্ধি অবশ্যই গুরুত্ব পাওয়ার দাবি রাখে। স্পষ্ট করেই বলতে হয় দেশের জমি ও জনগণের খাদ্য চাহিদার বিচেনায় হাইব্রিডের বিকল্প নেই। সাধারণ জাতের ধানের চেয়ে হাইব্রিডের ফলন শতকরা ২০ ভাগ বেশি। কৃষি বিশেষজ্ঞরাও হাইব্রিড আবাদকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। সরকার হাইব্রিড ধানের আবাদ বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে যথাযথ, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছেন।
তবে প্রশ্নটি অন্যত্র। চাহিদা মাফিক হাইব্রেডের বীজ আসবে কোথা থেকে। এ ক্ষেত্রে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাফল্য একেবারেই নগণ্য। হাইব্রিডের বীজের জন্যও আমদানিনির্ভর হয়ে থাকতে হচ্ছে দেশকে। জানা গেছে, সরকার ১৫ হাজার টন হাইব্রিড বীজ আবাদের পরিকল্পনা নিলেও সরকারি বীজ ভা-ারে বীজ রয়েছে মাত্র ৫০০ টন। বোরো মৌসুমের আগে সাড়ে ১৪ হাজার টন বীজ ধান কোথা থেকে, কিভাবে আসবে সেটাই বড় প্রশ্ন। সরকার হাইব্রিডের আবাদ বাড়াতে উৎসাহী কিন্তু বীজ আমদানির ব্যাপারে সরকার বেসরকারি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের দিকে তাকিয়ে আছেন। জানা গেছে, কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট পরিমাণ বীজ আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, যারা বীজ আমদানি করছে বা করবে তারা তা করবে ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে। বিগত বছরগুলোতে যেসব হাইব্রিডের আবাদে কৃষকরা সাফল্য পেয়েছে সে জাতের বীজ আমদানিকারকরা আনছে বা আনবে কি না? অধিক লাভের আশায় আমদানিকারকরা যদি হঠকারিতার আশ্রয় নেয় তাহলে কি পরিণতি দাঁড়াবে তা ভেবে দেখা দরকার পূর্বাহ্নেই। বলা বাহুল্য, ভুল জাতের বীজ আমদানি হলে কৃষকরা শুধু উৎপাদনে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, ধান আবাদের পরিবেশও বিপন্ন হয়ে পড়তে পারে।
আমরা মনে করি, খাদ্য ঘাটতি পূরণে যেমনি নিজেদের উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানিনির্ভরতা কমাতে হবে তেমনি হাইব্রিড বীজ উৎপাদনেও নিজস্ব সামর্থ্য বাড়াতে হবে- আমদানিনির্ভরতা কমাতে হবে। দেশে হাইব্রিড বীজ উৎপাদনের প্রতি সরকারকেই গুরুত্ব দিতে হবে। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটকে এমন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হবে যা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রহণ করে। ইতিমধ্যে দেশের কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান উচ্চ ফলনশীল, হাইব্রিড বীজ উৎপাদনে আত্মনিয়োগ করেছে। তারা যদি হাইব্রেড বীজ উৎপাদনের প্রযুক্তি পায় এবং বীজ উৎপাদনে যেতে পারে তাহলে হাইব্রিড বীজের জন্যে আমদানিনির্ভরতা কমানো সম্ভব। হাইব্রিড বীজের জন্যে বিদেশি নির্ভরতা ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতি মৌসুমেই যদি বীজ আমদানি করে আবাদ করতে হয় এবং কোনো কারণে কোনো মৌসুমে যদি বীজ আমদানি করা সম্ভব না হয় তাহলে কি অবস্থা দাঁড়াবে তা সহজেই অনুমান করা যায়। উচ্চ ফলনশীল, হাইব্রিড বীজ উৎপাদনে যেমন চাই নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন তেমনি বীজ উৎপাদনকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য চাই সরকারের উৎসাহ ও সার্বিক সহযোগিতা। দেশের ক্রমবর্ধমান খাদ্য চাহিদা পূরণে এবং আমদানিনির্ভরতা দূর করতে অবশ্যই খাদ্যশস্যের বিশেষ করে ধানের উৎপাদন বাড়াতে হবে। ধানের উৎপাদন বাড়াতে হাইব্রিড আবাদ ছাড়া গত্যন্তর নেই। এই হাইব্রিডের জন্যও বিদেশনির্ভরতা দূর করতে হবে। সে জন্যই উৎসাহিত করতে হবে দেশীয় বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor