Thursday, October 2, 2008

চলছে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষের মৌসুম

২৮.০৯.০৮
ইত্তেফাক ।। সাহারা তুষার
বাংলাদেশে প্রায় এক’শ রকমের ফসল জন্মে। এর মধ্যে সবজি জাতীয় ফসলই বেশি। সবজি ফসলের মধ্যে বেগুন, আলু, টমেটো, শিম, বরবটি, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, চিচিঙ্গা, করলা, ঝিঙ্গা, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ঢেঁড়শ, মূলা, ইত্যাদি। এর ভেতরে কিছু সবজি ফসল আছে যা সারা বছরই জন্মে। যেমন বেগুন। আবার কিছু মৌসুমী সবজি আছে যা জন্মে গ্রীষ্মকালে এবং শীতকালে। এখন গ্রীষ্মকালীন সবজির ফলন প্রায় শেষ। চারিদিকে চলছে শীতকালীন সবজি চাষের তোড়জোর। শীতকালীন সবজির মধ্যে রয়েছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, মটরশুটি, পালন শাক, শিম, ডাটা শাক, মূলা ইত্যাদি। আজকের প্রতিবেদন ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ নিয়ে।

ফুলকপি
ফুলকপি একটি পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও আমাদের দেশে জনপ্রিয় সবজি। বাংলাদেশে ১৯৯৬-৯৭ সালে মোট ১০ হাজার হেক্টর জমিতে ফুলকপি চাষাবাদ হয় এবং উৎপাদন হয় প্রায় ৭৬ হাজার টন। আমাদের দেশে চাষকৃত ফুলকপি অধিকাংশই সংকর জাতের এবং বিদেশ থেকে আমদানিকৃত যা স্থানীয় আবহাওয়ায় বীজ উৎপাদন করে না। ঠাণ্ডা ও আর্দ্র জলবায়ুতে ফুলকপির ভাল ফলন পাওয়া যায়। সেচ ও পানি নিষ্কাশনের সুবিধা আছে এমন ধরনের সব মাটিতে ফুলকপির চাষ ভাল হয়। আমাদের দেশে মাঘী, অগ্রহায়ণী, পৌষালী, বারি ফুলকপি-১, ২ ইত্যাদি বিভিন্ন জাতের ফুলকপি পাওয়া যায়। ফুলকপি বপনের উপযুক্ত সময় হল আগষ্ট ও সেপ্টেম্বর। প্রতি শতকে বীজের পরিমাণ দুই গ্রাম। বীজতলার জন্য ৩ ী ১ মিটার মাপের ১৫ সে.মি. উঁচু বেড তৈরি করলে ভাল হয়। বীজতলার উপরের ¯-রে ১:১ অনুপাতে পচা গোবর/আবর্জনা সার এবং দো-আঁশ মাটির মিশ্রণ ছড়িয়ে দিতে হবে। এরপর তিন-চার সপ্তাহ পলিথিন দিয়ে মাটি ঢেকে রেখে শোধনের পর পাঁচ সে. মি. দূরে দূরে লাইনে ছিটিয়ে ১০ গ্রাম বীজ বুনতে হবে। অতিবৃষ্টি ও রোদের ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য উপরে পলিথিন বা চাটাইয়ের আচ্ছাদন দিতে হবে। ১০ দিন পর দ্বিতীয় বীজতলায় পাঁচ সে.মি. পর পর সারি করে দুই সে.মি. দূরে দূরে শেষ বিকেলে স্থানাš-র করতে হবে। দ্বিতীয় বীজতলায় চারা স্থানাš-রের পাঁচ দিন পর বীজতলার চারায় প্রতি ১০ লিটার পানির সাথে ৩০ গ্রাম সোহাগা মিশিয়ে ¯েপ্র করা অত্যাবশ্যক।

সার ব্যবহারÑ
পচা গোবর জমি তৈরির সময় ৫০ কেজি দিতে হবে। প্রতি শতকে ইউরিয়া শেষ চাষের সময় ২৫০ গ্রাম, তার ২০ দিন পর ৫০০ গ্রাম এবং ৩৫ দিন পর ২৫০ গ্রাম। টিএসপি শেষ চাষের সময় ৭০০ গ্রাম দিতে হবে। এমপি শেষ চাষের সময় ২০০ গ্রাম, ২০ দিনপর ৩০০ গ্রাম এবং ৩৫ দিন পর ২০০ গ্রাম। জিপসাম জমি তৈরির সময় ৪০০ গ্রাম দিতে হবে। জিংক সালফেট শেষ চাষের পর ৪০ গ্রাম এবং সোহাগা শেষ চাষের সময় ৪০ গ্রাম।

২৫ থেকে ৩০ দিন বয়সের চারা সারি থেকে সারি ৫০ সে.মি. (২০ ইঞ্চি) এবং চারা থেকে চারা ৪০ সে.মি. (১৬ ইঞ্চি) দূরত্ব বজায় রেখে রোপণ করতে হবে। প্রথম ও দ্বিতীয়বার সার উপরি প্রয়োগের পর পরই সারির দু’পাশের মাটি আলগা করে গাছের গোড়ায় তুলে দিতে হবে। এতে সেচ ও নিষ্কাশন উভয় কাজে সুবিধা হবে। চারা রোপণের ৪৫ দিন পর কপি সংগ্রহ করতে হয়। শতকে ৬০-৮০ কেজি আর একরে ৬ থেকে ৮ টন ফুলকপি জন্মে।

আবশ্যকীয় কার্যাবলী
১. পানি নিষ্কাশন সুবিধাযুক্ত উঁচু জমিতে চাষ করতে হবে। ২. আগাছা দমন করতে হবে। ৩. সেচ ও নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। ৪. রোগ-বালাই দমনে উপযুক্ত ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। ৫. অবশ্যই সোহাগা ব্যবহার করতে হবে। ৬. সঠিক বয়সের সুস্থ ও সবল চারা স্থানাš-র, পরিমিত সার, সেচ ও অন্যান্য অšর্-বর্তীকালীন পরিচর্যা সঠিক সময় ও নিয়ম অবশ্যই সম্পাদন করতে হবে।

বাঁধাকপি
বাঁধাকপি আমাদের দেশে একটি বহুল ব্যবহৃত শীতকালীন সবজি। বাংলাদেশে ১৯৯৬-৯৭ সালে মোট প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমিতে বাঁধাকপির চাষ করা হয় এবং মোট এক লক্ষ সাত হাজার টন বাঁধাকপি উৎপাদিত হয়। বাঁধাকপির অধিকাংশ জাতই সংকর এবং এর বীজ প্রতিবছর আমদানি করতে হয়। আমাদের স্থানীয় আবহাওয়া বাঁধাকপির বীজ উৎপাদনের উপযোগী নয়। তবে কোন কোন জাত অপেক্ষাকৃত কম ঠাণ্ডা অঞ্চলেও বীজ উৎপাদন করতে পারে। মূলত ঠাণ্ডা ও আর্দ্র জলবায়ুতে বাঁধাকপি ভাল হয়। আগষ্ট মাস থেকে চাষ শুরু হয় এবং অত্যধিক বেলে মাটি ছাড়া যে কোন মাটিতেই ভাল জন্মে। আমাদের উৎপাদিত বাঁধাকপি সাধারণত আগাম, মাঝারি ও নাবি (দেরীতে জন্মানো) জাতের।

বীজতলা তৈরিÑ বাঁধাকপির জমি গভীর চাষ দিয়ে, ঢেলা ভেঙ্গে, আগাছা পরিষ্কার করে আগষ্ট থেকে মধ্য অক্টোবর মাসের যে কোন সময় বীজ বপন করতে হয়। বীজতলা তৈরি করার জন্য বীজতলার মাটির সমপরিমাণ বালি, মাটি ও কম্পোষ্ট সার মিশিয়ে ঝুরঝুরে করতে হয়। বীজতলার মাটি প্রতি একভাগ ফরমালডিহাইডের সাথে ৫০ ভাগ পানি মিশিয়ে শোধন করে নিলে ভাল হয়। প্রথমে বীজতলাতে ঘন করে বীজ ফেললেও ১০ থেকে ১২ দিন পর দ্বিতীয় বীজতলায় চারা স্থানাš-র করতে হয়। বীজতলার মাপ ৩ ী ১ মিটার হওয়া দরকার। প্রতি হেক্টর জমির চারা উৎপাদন করতে এ রকম ২০টি বীজতলার প্রয়োজন। ৩৫০ থেকে ৪০০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয় প্রতি হেক্টর জমিতে।

বীজ বপনের ৩০-৩৫ দিন পর সমতল জমিতে ১৫ সে. মিটার উঁচু বেড তৈরি করে চারা রোপণ করলে ভাল হয়। পাশাপাশি দু’টি বেডের মাঝখানে ৩০ সে. মি. প্রশ¯- নালা রেখে বেডের উপর ৬০ সে. মি. দূরত্বে দু’টি সারি করে


সারিতে ৪৫ সে. মি. দূরে দূরে চারা লাগাতে হয়।
সারের ব্যবহারÑ শেষ চাষের সময় গোবর দিতে হবে প্রতি হেক্টরে ১০ টন । হেক্টর প্রতি চারা রোপণ করার ১০ দিন পর ১০০ কেজি, ২৫ দিন পর ১০০ কেজি এবং মাথা বাঁধার সময় ১০০ কেজি ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। টিএসপি শেষ চাষের সময় ২২৫ কেজি দিতে হবে। এমওপি শেষ চাষের সময় ১০০ কেজি, চারা রোপণের ১০ দিন পর ৫০ কেজি, ২৫ দিন পর ৫০ কেজি এবং মাথা বাঁধার সময় ৫০ কেজি দিতে হবে। জিপসাম শেষ চাষের সময় ১৪৪ কেজি দিতে হবে।

বাঁধাকপিতে ঘন ঘন সেচ দিয়ে মাটি ভিজিয়ে রাখতে হবে। পাশাপাশি আগাছামুক্ত রাখতে হবে।

পোকামাকড় দমন- কাটাই পোকা, মাথায় লেদা পোকা বা ডায়মন্ড ব্যাক মথ এবং ওয়েবওয়ার্ম পোকা বাঁধাকপির ক্ষতি করে থাকে। লেদা পোকার আক্রমণ দেখা দিলে ম্যালথিয়ন ৫০ ইসি বা রপকর্ড ২ মি. লি./ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। বাঁধাকপির অন্যতম প্রধান রোগ চারা ধবসা রোগ। এ রোগে চারা আক্রাš- হলে চারার রঙ ফ্যাকাসে সবুজ হয়ে যায় এবং চারার গোড়া পচে চারা মারা যায়। এ রোগের জন্য ব্যাভিস্টিন ৫০ ডবি¬উ পি ৫০০ গ্রাম/ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor