Monday, October 6, 2008

কৃষিঋণ : প্রান্তিক কৃষকদের সুবিধা কতখানি ?

০৫.১০.০৮
ইত্তেফাক ।। মাটি ও মানুষের কৃষি

মানিকগঞ্জের পদ্মার চর এলাকার বহু প্রাšি-ক কৃষক পড়েছেন দুর্দশায়। পদ্মার ভাঙনে সহায়-সম্বল হারিয়ে ঋণনির্ভর মানুষগুলোর এখন গলার কাঁটা হয়ে উঠেছে এই ঋণ। কারণ, তাগাদা এসেছে জরুরি ভিত্তিতে ঋণ পরিশোধের। ঋণ শোধ করতে না পেরে ঘর ছেড়েছেন অনেকেই। যারা এলাকায় আছেন তাদের দিন কাটছে চরম অনিশ্চয়তার ভেতর। এই অনিশ্চয়তা কাটিয়ে তুলতে সরকারি-বেসরকারি বিশেষ সহযোগিতার বিকল্প নেই বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। স্থানীয়রা এও বলছেন, দিনের পর দিন চরম অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে পদ্মা চরবাসীর জীবন। শুধু কৃষি ঋণের বোঝা কমানোই নয়, তাদের জীবনযাত্রার মানের সকল দিকেই প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি সুযোগ সুবিধা। খবরটি একেবারে সা¤প্রতিক সময়ের। দেশি-বিদেশি সব ব্যাংকেই যখন কৃষি ঋণ দেয়ার বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে ঠিক তখনই পাওয়া গেল এমন একটি খবর।

১৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত কৃষি ঋণ বিতরণ পর্যবেক্ষণ কমিটির বৈঠকে দেশ-বিদেশি সব ব্যাংককেই বাধ্যতামূলক কৃষি ঋণ বিতরণের সরকারি ঘোষণা এসেছে। কৃষকদের জন্য তিন বছর মেয়াদে আবর্তক শস্য-ঋণ ব্যবস্থা চালুরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ উদ্যোগের পেছনে রয়েছে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উৎপাদন বাড়ানোর প্রয়াস। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর বলেছেন, কৃষিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধাš- হচ্ছে কোন ব্যাংক কৃষি খাতে কত টাকা ঋণ দেবে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাপিয়ে দেবে না, ব্যাংকগুলো নিজেরাই তা নির্ধারণ করবে। কিন্তু ঋণের পরিমাণ ব্যাংকের অন্য খাতে বিতরণ করা অর্থের তুলনায় যাতে যুক্তিসংগত হয় তা নিশ্চিত করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। কৃষকরা তিন বছরের কৃষি ঋণ পেতে একবারই আবেদন করবে। মৌসুম শেষে ঋণের টাকা শোধ করে দেবে। পরবর্তী মৌসুমের শুরুতে সে আপনাআপনিই ঋণ পেয়ে যাবে। একেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে আবর্তক শস্য-ঋণ ব্যবস্থা। একসময় কৃষি বিভাগের একটি ঋণ প্রকল্প ছিল। সেটি হচ্ছে শস্য গুদাম ঋণ প্রকল্প। যেটি শস্য সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণের প্রশ্নে অত্যš- কার্যকর একটি প্রকল্প হলেও অজ্ঞাত কারণে এ প্রকল্পটি নব্বইয়ের দশকেই মুখ থুবড়ে পড়ে। যা হোক আমরা আশা করছি, আবর্তক শস্য-ঋণ প্রকল্প অধিক কার্যকর একটি ঋণ প্রকল্প হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পাবে কৃষকদের কাছে। কিন্তু কথা হচ্ছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে যাদের ফসলহানী ঘটছে, যারা সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়ছে, এক বছর ঋণ নেয়ার পর যারা অর্থনৈতিকভাবে অনেক বেশি দুর্বল হয়ে পড়ছে তাদের জন্য করণীয় নির্ধারণ করা হচ্ছে না। যারা ঋণের টাকা শোধ দেয়ার যোগ্যতা হারাচ্ছে, আকস্মিক ভূমিহীন হয়ে পড়ছে তাদের জন্য স্বল্পমেয়াদী বা দীর্ঘমেয়াদী উদ্যোগটি কি হতে পারে সে বিষয়টি আজও ভাবা হচ্ছে না। অবশ্য, বর্গা চাষিদের জন্য একটি নীতিমালা তৈরি হচ্ছে বলে জানা গেছে। যাদের নিজের জমি নেই, অন্যের জমিতে ফসল ফলায়Ñ এমন বর্গাচাষিরা সাধারণত ব্যাংক থেকে ঋণ পায় না। এই বর্গাচাষি ও জেলেরা পাবেন জামানতবিহীন ঋণ। কিন্তু এতে ঋণ শোধ দেয়ার প্রশ্নে ব্যর্থ জনগণ কি সুবিধা পাবে তা প্রশ্ন হিসেবেই থেকে গেল। অর্থাৎ মানিকগঞ্জের পদ্মার ভাঙনের শিকার পরিবারগুলোর জন্য কোন সুখবর নেই। দেশের বিভিন্ন নদী তীরবর্তী এলাকার ভাঙনে সর্বস্বহারা জনগণ প্রতি বছরই এমন দুর্দশার শিকার হয়। স্থাবর অস্থাবর এমন কিছুই থাকে না তাদের, যা বিক্রি করে মেটাবে ঋণের দায়। অগত্যা, গ্রাম থেকে পালিয়ে শহরে আশ্রয় গ্রহণ করে মানুষগুলো। কৃষি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বেছে নিতে হয় নগরের কঠিন ব¯ি- জীবন।

শুধু কৃষি ঋণের বিষয়ই নয়, গ্রামীন ও কৃষিখাতে সকল ব্যাংকের কার্যকর অংশগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। বহুদিন ধরেই বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে এ বিষয়ে তাগাদা দিয়ে আসছে কিন্তু তাতে কোনই কাজ হচ্ছে না। বেসরকারি ব্যাংকগুলো বিগত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশের শিল্প উন্নয়নে ও রপ্তানী খাতে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখে আসছে । কিন্তু, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারি সংস্থাগুলোর বারংবার তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও কৃষিক্ষেত্রে বেসরকারি ব্যাংকগুলো এখন পর্যš- উলে¬খ করার মত কোন ভূমিকাই রাখতে পারছে না বা চাইছে না। অথচ, ২০০৬-এর শেষের দিকে বিশ্ব ব্যাংকের এক রিপোর্টে বলা হয়, দেশে বাইরে থেকে যে বৈদেশিক রেমিটেন্স বা প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ আসে তার ৮০ ভাগই জমা হয় গ্রামের ব্যাংকগুলোতে। অথচ এই অর্থ গ্রামের কোন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যয় হয় না। ৮০ ভাগ অর্থই চলে আসে শহরের ব্যাংকগুলোতে। গ্রামীণ কৃষিজীবি জনগোষ্ঠীরে স্বার্থে ব্যাংকগুলোকে গ্রামমুখী হতে হবে। এ বিষয়টিও সরকারকে অত্যš- গুরুত্বের সাথে ভাবতে হবে।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor