Saturday, October 11, 2008

লক্ষ্মীপুরে সার-কীটনাশক-শ্রমের মূল্যবৃদ্ধিII আমন চাষ নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক

০৮.১০.০৮
ডেসটিনি ।। লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

গত বছরের তুলনায় সার, কীটনাশক, শ্রমিকের শ্রমের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় চলতি মৌসুমে আমন চাষ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি, কমলনগর, রামগঞ্জ, রায়পুর ও সদর উপজেলার কৃষকরা। বাজারে অসহনীয় দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সার, কীটনাশক ও শ্রমের মূল্যসহ এবার কৃষি উপকরণের মূল্য দ্বিগুণ বেড়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। চলতি মৌসুমে জেলায় আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা বেশি বলে জানিয়েছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা। ফলে চলতি মৌসুমে কৃষিনির্ভর লক্ষ্মীপুর জেলায় আমন উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কৃষক ও কৃষি সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আমন চাষের জন্য অত্যাবশ্যকীয় ইউরিয়া, টিএসপি, বাসুডিনসহ কীটনাশকের দাম গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ থেকে চারগুণ বৃদ্ধি পেয়ে টিএসপি (বাংলা ফসফেট) প্রতি ৫০ কেজি বস্তা ১ হাজার ২০০ টাকা, প্রতি কেজি ১৮ টাকা করে বিক্রি করা হয়েছে। কিন্তু এক বছরের ব্যবধানে বাজারে এখন টিএসপি (বাংলা ফসফেট) সারের বস্তা ৪ হাজার ২০০ টাকা এবং খুচরা প্রতি কেজি ৪৮ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। বিদেশি টিএসপি ৫০ কেজির বস্তা ৮০০ টাকা বিক্রি করা হলেও এবার ৫০ কেজি বস্তা বিক্রি করা হচ্ছে ৩ হাজার ৭০০ টাকায়। অর্থাৎ কেজিপ্রতি বিক্রি করা হচ্ছে ৭৫ টাকায়। গত বছর এমওপি (পটাশ) সার ৫০ কেজির বস্তা ২০০ টাকা, খুচরা ২৫ টাকা করে বিক্রি করা হয়। এবার প্রতি ৫০ কেজির বস্তা ৩ হাজার এবং খুচরা ৬০ টাকা করে কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। এসএসপি সার গত বছরের প্রথমদিকে ৫০ কেজি বস্তা ৮০০ টাকা এবং প্রতি কেজি ১৬ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। কিন্তু এখন এই এসএসপি ৫০ কেজি বস্তা ২ হাজার ২৫০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। খুচরা ৪৫ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। ইউরিয়া ৫০ কেজি বস্তা ৩০০ টাকা, খুচরা ৬ টাকা কেজি বিক্রি করা হয়েছিল। দস্তার কেজি গত বছর ৮০ টাকা, এখন ১০০ টাকা। কীটনাশক বাসুডিনের কেজি ছিল ১২০ টাকা, এখন ১৬০ টাকা, সিনজেনটার সবিক্রন ৫০০ এমএলের দাম ছিল ৪০০ টাকা, এখন ৫৬০ টাকা। বিওসি ছিল ১৫০ টাকা, এখন ২৮০ টাকা। এ বছর সার ও কীটনাশক প্রায় চারগুণ বেড়ে যাওয়ায় কৃষিক্ষেত্রে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
কমলনগর উপজেলার চরকাদিরার কৃষক হোসেন বলেন, গত বছর প্রতি একর জমিতে সার বাবদ খরচ হয়েছিল ৩ হাজার ৫০০ টাকা, এবার খরচ হয়েছে ৪ হাজার ৫০০ টাকা। চর ফলকনের কৃষক গিয়াস উদ্দিন বলেন, গত বছর একজন শ্রমিকের মজুরি ছিল ৫০ টাকা, এবার ১৫০ টাকা। গত বছর জমিতে কীটনাশক বাবদ খরচ হয়েছিল ৬০০ টাকা, এবার ১ হাজার টাকা। রামগতি উপজেলার চর আলেকজান্ডার গ্রামের কৃষক আবদুর রব জানান,্ এক একর জমিতে তার উৎপাদন খরচ পড়বে ১৭ হাজার ৫০০ টাকা অথচ ধান পেতে পারেন ১৫ হাজার থেকে ১৭ হাজার টাকার। ২৮ থেকে ৩২ মণ ধান পাওয়া যেতে পারে। তাই তিনি চলতি মৌসুমে আমন আবাদ বাদ দিয়েছেন।
জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় ২৬ হাজার ৩৬০ হেক্টর, রামগতি উপজেলায় ২১ হাজার ৫০০ হেক্টর, কমলনগর উপজেলায় ২৪ হাজার ৭৯০ হেক্টর, রায়পুর উপজেলায় ১ হাজার ৭০ হেক্টর ও রামগঞ্জ উপজেলায় ৩ হাজার ২৯০ হেক্টর। মোট ৮৬ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষ করা হয়েছে। লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বলেন, এ বছর কোনো রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দিলে বাম্পার ফলন হবে বলে আমার বিশ্বাস।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor