Thursday, October 2, 2008

বীজ, সার, সেচ, যত্ন, এই চার মিলে রত্ন

২৮.০৯.০৮
কৃষিবিদের কলাম
ইত্তেফাক ।। মোঃ তৌফিক আরেফীন, কৃষিবিদ

কৃষি উন্নয়নে সেচের গুরত্ব অপরিসীম। আদিম যুগে সেচের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত না হলেও সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে সাথে সেচ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অনেক অগ্রগতি সাধিত হয়। জাতিসংঘ মহাসচিব বেশ ক’বছর আগে ঠাট্টা করে বলেছিলেন আগামী পৃথিবীতে যদি কোন বিশ্বযুদ্ধ হয় তবে তা হবে পানি নিয়ে বিশ্বযুদ্ধ। পানি ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সেচ।

বাংলাদেশে সেচ ব্যবস্থার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও বর্তমান পরিস্থিতি: ষাটের দশকে সর্বজন শ্রদ্ধাভাজন ড.আখতার হামিদ খান এর হাতের স্পর্শে বাংলাদেশে প্রথম ভূ-গর্ভস্থ পানি সেচের সূচনা ঘটে। পরে ১৯৬০ সালে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে তৎকালীন পানি ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (ওয়াপদা) ও কৃষি উন্নয়ন সংস্থা (এসিডি) নামে দু’টি সংস্থা গঠিত হয়। ১৯৬৪ সালে ইপিওয়াপদা একটি মহাপরিকল্পনা তৈরি করে। ১৯৬২ সাল হতে শুরু করে ১৯৬৬ সাল পর্যš- গভীর নলকূপ সেচ প্রকল্প বা¯-বায়নের মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলে সেচের কর্মসূচি শুরু হয়। তারপর সত্তর দশক, আশির দশক, নব্বই দশক, বিশ শতক এবং পরিশেষে একুশ শতকের শুরুতে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক ২০০১ সালের মে মাস পর্যš- সেচযোগ্য এলাকা ছিল ৭.৪১ লক্ষ হেক্টর, যার মধ্যে সেচযুক্ত এলাকা ছিল ৫.৭১ লক্ষ হেক্টর। বর্তমানে সেচকৃত জমির পরিমাণ ৪৬,২৪,৪৩৯ লক্ষ হেক্টর। যদিও ৮২.৯০ লক্ষ আবাদি জমি বিদ্যমান। এ বিপুল পরিমাণ এলাকায় সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নকল্পে ডিএই, বিএডিসি ও বিএমডিএ সম্মিলিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের কৃষি ও সেচ- বাংলাদেশের কৃষির উলম্ব উন্নতির জন্য সেচ ব্যবস্থাপনা অতি জরুরি। অবস্থা এমন যে বাংলাদেশের কৃষি ভার্টিক্যাল এক্সপানশন ছাড়া আর খাদ্য নিরাপত্তা সমুন্নত রাখার কোন সুযোগ নেই। বাংলাদেশে শতকরা প্রায় ৬২ ভাগ জনগণ প্রত্যক্ষভাবে কৃষিকাজে নিয়োজিত। আবাদি জমির মধ্যে শতকরা ৩৫.০৮ ভাগ এক ফসলী জমি, দুই ফসলী জমি শতকরা ৫১.৪৫ ভাগ এবং তিন ফসলী জমি শতকরা ১২.৭৫ ভাগ (কৃষি ডাইরি ২০০৮)। বর্তমানে মোট সেচকৃত জমির পরিমাণ ৪৮ লক্ষ হেক্টর যা মোট ফসলী জমির প্রায় ৬০ ভাগ (পাউবো ২০০২ এবং বিবিএস ২০০২)। কৃষি উৎপাদনে বিপ¬ব ঘটাতে হলে সেচের স¤প্রসারণ অতি জরুরি। জাপানের সেচ ব্যবস্থা ১৩৫০ বছরের এবং থাইল্যান্ডের ১০০ বছরের পুরানো। মাত্র ৪০ বছরের ব্যবধানে দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপিনস, লাওস, কম্পোডিয়া ও ভিয়েতনাম ইত্যাদি দেশের কৃষিভিত্তিক শিল্পের ক্ষেত্রে সেচ ব্যবস্থা অগ্রণী ভুমিকা পালন করেছে।

কৃষি কাজে সেচ ব্যবস্থাপনা- বর্তমান পরিস্থিতিতে কৃষিকাজে সুষ্ঠ সেচ ব্যবস্থাপনার জন্য যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে- ১. পরিকল্পনা ২. অবকাঠামোর নকশা প্রণয়ন ৩. সেচ কাঠামোর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ। এছাড়াও সেচ ব্যবস্থার আলোকে পানিকে সুষ্ঠ ও নিয়মিতভাবে সরবরাহ করার জন্য- ১.ভূমির অবস্থা ২. সেচ পদ্ধতি ৩. ফসলের জাত ৪. মৃত্তিকা ও ফসলের ধরন অনুযায়ী কতটকু পানির প্রয়োজন তা পরিমাপ করা ৫. পর্যায়ক্রমিক সেচ ৬. সেচ বিতরণ ৭. সেচ ব্যবস্থায় ভোক্তার ভূমিকা।

এসব বিষয়ে বি¯-ারিত সমীক্ষার পর বাংলাদেশে জাতীয় সেচ নীতি ও সেচ প্রকল্পের সেচ কর ধার্য ও আদায় সংক্রাš- নীতিমালা প্রণয়নে মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক সমীক্ষা ও চলমান গবেষণা অব্যাহত থাকা জরুরি।

বর্তমানে দেশে বিএডিসি সারাদেশে ক্ষুদ্র সেচ উন্নয়নে গ্রাউন্ড ওয়াটার জোনিং ম্যাপ করছে শুধুমাত্র সেচ দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য। তবে গ্রামীণ পর্যায়ে অপরিকল্পিত লো-লিফট পাম্প ব্যবহার করার জন্য পানির স্বাভাবিক তল এখন নিুগামী। বর্তমান সরকার সেচের ডিজেল ক্রয়ে চাষীদের ভর্তুকির ব্যবস্থা গ্রহণ করার উদ্যোগ প্রশংসনীয়। টেকসই ও বা¯-বধর্মী সেচ নীতি সময়ের নিরিখে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য কমান্ড এরিয়া উন্নয়ন, সেচ প্রকল্পের স¤প্রসারণ, দল গঠন ও জাতীয় পর্যায়ে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা প্রয়োজন।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor