Monday, October 27, 2008

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করিতে সার উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হইতে হইবে

২৭.১০.০৮
সম্পাদকীয়
।। ইত্তেফাক ।।

ইউরিয়াসহ সব ধরনের রাসায়নিক সারের উচ্চমূল্য ও দুষ্প্রাপ্যতার কারণে কৃষি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হইয়া পড়িয়াছে। মাঠভরা এখন আমন ধান। ধানের ক্ষেতে শীষ বাহির হইবার মোক্ষম সময় ইহা। এই পর্যায়ে জমিতে শেষবারের মত ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা জরুরি হইয়া দেখা দেয়। সামনে আসিতেছে রবি মৌসুম। তারপরেই আবার বোরো সিজন। মাস দুয়েকের মধ্যে শুরু হইয়া যাইবে বোরো ধানের বীজতলা তৈরির কাজ। বোধগম্য কারণেই এই সময়টায় সারের চাহিদা বাড়িবে। কিন্তু আমাদের দেশে সারের দুর্ঘট সাংবাৎরিক সমস্যা হইয়া দেখা দিয়াছে। বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ৬টি ইউরিয়া কারখানায় ১৭ লক্ষ মেট্রিক টনের বেশি উৎপাদন হয় না। অথচ বৎসরে আমাদের ইউরিয়ার চাহিদা ২৮ লক্ষ টন। বাকী ১১ লক্ষ টন আমদানি করিতে হয় কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করিয়া। এইদিকে বিদেশেও ইউরিয়া দুষ্প্রাপ্য হইয়া গিয়াছে বলিয়া গত রবিবার (২৬ অক্টোবর) একটি রিপোর্ট বাহির হইয়াছে পত্রিকান্তরে।

এমন দিন হয়তো দূরে নয়, যখন উন্নয়নশীল ও দরিদ্র দেশের জন্য সারের সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থা কায়েম হইবে। অর্থাৎ কৃষি-নির্ভর দেশগুলি বহুক্ষেত্রে সার সরবরাহ ও বিক্রয়কারী দেশ বা বহুজাতিক ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের কাছে জিম্মি হইয়া পড়িবে। তেমন অবস্থায় যাহাতে কোনদিন পড়িতে না হয়, সেই চিন্তা এখনই করা উচিত। এখনই উচিত সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং সার উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার আবশ্যিক এবং সামগ্রিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। উল্লেখ করা যাইতে পারে আমাদের আভ্যন্তরীণ সার-ঘাটতির বর্তমান বাস্তবতায় চট্টগ্রামে স্থাপিত কাফকো সার কারখানা তেমন কাজে আসে না। এই কারখানায় বাংলাদেশের গ্যাস ব্যবহার করিয়া পর্যাপ্ত ইউরিয়া সার উৎপাদিত হইলেও বাংলাদেশের সমস্যা সমাধানে ইহার অবদান অতি সামান্য। কাফকোর নিকট হইতে আমাদের সার কিনিতে হয় যথারীতি আন্তর্জাতিক বাজারদর অনুযায়ী, যাহা আমদানিরই শামিল।

এই পরিস্থিতিতে দেশে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং খাদ্য নিরাপত্তা গড়িয়া তোলার যে কথা বলা হইতেছে, তাহা দূরপরাহত হইয়া থাকিবার সমূহ আশংকা। সারের সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিত করা না গেলে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা নিতান্তই অসম্ভব। আধুনিক কৃষি ব্যবস্থায় রাসায়নিক সার অপরিহার্য। সার, বীজ ও কীটনাশক- এই তিনটি উপকরণ ছাড়া কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়ানতো পরের কথা, বিপর্যয় দেখা দেওয়াই স্বাভাবিক। এই অবস্থায় দেশের অভ্যন্তরে ইউরিয়াসহ বিভিন্ন প্রকারের রাসায়নিক সারের উৎপাদন বাড়ান অত্যাবশ্যক।

প্রসঙ্গত এইখানে উল্লেখ করা বাঞ্ছনীয় যে, বাংলাদেশে সরকারি মালিকানায় সারের কারখানা রহিয়াছে ৬টি। ইহার মধ্যে ৪টি স্থাপিত হয় পাকিস্তান আমলে। ১৯৮১ সালে আশুগঞ্জে স্থাপন করা হয় জিয়া ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি। তারও দশককাল পরে জামালপুরের তারাকান্দায় প্রতিষ্ঠিত হয় যমুনা সার কারখানা । নতুন-পুরাতন মিলাইয়া বাংলাদেশের অর্ধ ডজন কারখানার সার উৎপাদন ক্ষমতা ২৩ লক্ষ টন হইলেও কার্যত উৎপাদিত হয় ১৭ লক্ষ টন। কোনো কোনো বছর উৎপাদন আরো কম হয়। ইহার কারণ বহুবিধ। প্রথমত অব্যবস্থাপনা, বিশৃংখলা এবং দুর্নীতি তো আছেই, উপরন্তু এইসব কারখানার মেশিনপত্র পুরনো এবং জীর্ণ। প্রায়শই বিকল হইয়া যায়। ফলে হ্রাস পায় উৎপাদন।

গত জুলাই মাসে সার কারখানাসমূহ সংস্কারের একটি কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়। এই সংস্কারের মাধ্যমে ২০১২ সাল নাগাদ দেশে ইউরিয়া সারের উৎপাদন ৫ লক্ষ টন বৃদ্ধি করা সম্ভবপর হইবে বলিয়া আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। ইহা সম্ভবপর হইলে ইউরিয়া আমদানি খাতে ব্যয় অনেকটাই হ্রাস পাইবে। কিন্তু, একটি স্বনির্ভর কৃষি ব্যবস্থাপনা গড়িয়া তুলিতে হইলে সার আমদানি শূন্যের কোঠায় নামাইয়া আনিতে হইবে। দেশে সরকারি এবং বেসরকারি খাতে আরো সার কারখানা স্থাপন করা দরকার। এই খাতে বিনিয়োগের জন্য দেশী-বিদেশী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করিতে হইবে। ইউরিয়া ছাড়াও অন্যান্য রাসায়নিক সারের আমদানি নির্ভরতা হ্রাস করিতে হইবে। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগের পথে যেসব অন্তরায় রহিয়াছে তাহা দূর করিতে হইবে। এইক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার অবসান এবং গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহের নিশ্চয়তা বিধান জরুরি। সারের উৎপাদন বাড়াইবার বিষয়টি সরকারের অগ্রাধিকার বিবেচনা লাভ করিবে, ইহাই আমাদের প্রত্যাশা।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor