Monday, October 6, 2008

ভার্মি কম্পোস্ট! সবুজ বিপ¬বের আর এক নিয়ামক

০৫.১০.০৮
মাটি ও মানুষের কৃষি
ইত্তেফাক ।। - জহুরুল হক

কৃষি প্রধান আমাদের দেশে কৃষি বিপ¬ব বা সবুজ বিপ¬ব যাই বলি না কেন, তা অনেকটা দুরূহ আমাদের কারণেই? স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আমাদের দেশে কৃষি বিপ¬ব ঘটানোর নানা আয়োজন সত্ত্বেও তা কখনও আলোর মুখ দেখেনি। যার ফলে বার বার আমরা সম্মুখীন হচ্ছি ভয়াবহ খাদ্য সংকটের। পরিবর্তিত পরিস্থিতি, ক্রমবর্ধমান হারে আবাদী জমির পরিমাণ হ্রাস এবং ধারাবাহিকভাবে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে জমির উর্বরতা হ্রাসসহ নানাভাবে আমাদের কৃষি ধাবিত হচ্ছে এক ধোয়াছন্ন পরিবেশে। অথচ উন্নত বিশ্বের দেশগুলো এসব পরিস্থিতি মোকাবেলায় সুষ্ঠ পরিকল্পনা গ্রহণ করে তা বা¯-বায়নে এগিয়ে চলছে, আর আমরা আমাদের কৃষিকে নিয়ে যাচ্ছি ঠিক তার উল্টো পথে।

উন্নত বিশ্ব নানা পদ্ধতিতে গবেষণা চালিয়ে কৃষি খাতকে টেকসই অবস্থানে নেবার জন্য জৈব কৃষি প্রযুক্তির উদ্ভাবন করে অর্গানিক চাষের পরিধি বি¯-ার করছে। তবুও আমরা আছি সেকেলে কৃষি ব্যবস্থার উপর দাঁড়িয়ে।

এক দিকে জনসংখ্যার চাপ সামাল দিতে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে আবাদী জমি, অন্য দিকে পুরানো চাষ এবং রাসয়ানিক সারের অপরিকল্পিত ব্যবহারে উর্বরাশক্তি হারিয়ে ফেলছে জমি। সরকারি কোন উদ্যোগ বা পৃষ্ঠপোষকতা না পেলেও আমাদের কৃষককুলের দু’একজন সচেতন কৃষক নিজের তাগিদেই হয়ে উঠেছেন কৃষি ও কৃষকদের কাছে দৃষ্টাš- এবং পরিবেশ ও মাটির অকৃত্রিম বন্ধু। তেমনি একজন কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার হোগলবাড়ীয়া ইউনিয়নের শশীধরপুর গ্রামের নাসির উদ্দিন। গত ১৫ মাস ধরে তিনি ভার্মি কম্পোষ্ট (কেঁচো সার) নামে জৈব সার তৈরি করে নিজে বিভিন্ন ফসলের আবাদ করছেন। এতে একদিকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, জমির উর্বরাশক্তি বৃদ্ধি ও অর্থের অপচয় রোধ সব মিলিয়ে তিনি একজন আদর্শ এবং সফল জৈব চাষী হিসাবে এলাকায় পরিচিত। স্থানীয় উপ-সহকারি এক কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে তিনি এই জৈব সার তৈরি ও ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন বলে নাসির উদ্দিন জানান।

ভার্মি কম্পোষ্টের অন্যতম প্রধান উপাদান হল গরুর গোবর ও কেঁচো। প্রথমে কাঁচা গোবর একটি চারকোণা বিশিষ্ট শেড তৈরি করে সেখানে রাখতে হবে। এরপর হলুদ, মরিচের গুঁড়া এবং থিয়োডিন নামক একটি ঔষধ মিশ্রিত করে শেডের চারপাশে ছড়িয়ে দিতে হবে যাতে কোন কীটপতঙ্গ সেখানে না আসে। ওই শেডে ১৫ দিন গোবর রেখে টকটিসিটি গ্যাস দূর করে নিয়ে একই ধরনের অপর একটি শেডে গোবরগুলো স্থানাš-র করে তার ভেতরে কেঁচো ছেড়ে দিতে হবে। উলে¬খ্য যে, এক ধরনের লালচে কেঁচো ভার্মি কম্পোস্ট তৈরির জন্য উপযোগী। এরপর আড়াই থেকে তিন মাসের মধ্যে ওই শেডে যে জৈব সার তৈরি হবে তা জমিতে ব্যবহারের উপযোগী হবে। ভার্মি কম্পোস্ট সার কৃষক নাসির উদ্দিন ধান, পাট, কচু, কলা, পেঁপে, পেঁয়াজ, আলু ও পানবরজে ব্যবহার করে দারুণ সাফল্য পেয়েছেন। এই জৈব সার ব্যবহারে জমির হারানো জীবন ফিরে এসেছে, ফসলের উৎপাদন অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তার এই সাফল্য দেখে অন্য চাষীরাও এই সার তৈরিতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে এবং কোন প্রকার রাসায়নিক সারের ব্যবহার ছাড়াই ভাল ফসল উৎপাদন করায় এলাকায় ব্যাপক সাড়া পড়ে গেছে। অন্যদিকে রাসায়নিক সারের অর্ধেকেরও কম খরচ হয়েছে এই ভার্মি কম্পোষ্ট তৈরিতে। রাসায়নিক সারের অগ্নিমূল্য ও এর পার্শ¦-প্রতিক্রিয়ার কারণে এই কম্পোষ্ট হতে পারে কৃষকের জন্য একটি আর্শীবাদ, একটি নিয়ামক যা সবুজ বিপ¬বের জন্য সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। এ ব্যাপারে উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা বকুল হোসেন জানান, ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার একটি সম্পূর্ণ জৈব সার। এই সার পরিবেশ সহায়ক ও মাটির স্বাস্থ্য ভাল করে ও মাটিকে উর্বরা করে তুলে। এই সার ফসলের বর্ণ, গন্ধ, স্বাদ ও অন্যান্য গুণগতমান উন্নয়নে সহায়তা করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কেঁচো সার ব্যবহারে ফসলের উৎপাদন খরচ কম হয়। এই সারে জৈব পদার্থ, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সালফার, ম্যাগনেশিয়াম, বোরণসহ অসংখ্যা গুণ থাকায় রাসায়নিক সার ব্যবহারের কোন প্রয়োজন হয় না। কৃষকের প্রাকৃতিক লাঙ্গল কেঁচো দিন দিন বিলীন হয়ে যাচ্ছে। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক যথেচ্ছা ব্যবহারের ফলে বিলীন হতে চলেছে কেঁচো। সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে তার বংশবি¯-ার। যে জৈব পদার্থ মাটিকে উর্বর রাখে, মাটিকে নরম রাখে, মাটিতে বায়ু চলাচলে সুবিধা ঘটায়, পানি ধারন ক্ষমতা বাড়ায় ও ফসলের পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি করে সেই জৈব পদার্থ আমাদের মাটি থেকে হারিয়ে গেলে যে বিপর্যয় ঘটবে তার লক্ষণসমূহ ইতিমধ্যে আমাদের কৃষিতে দৃশ্যমান। তাই মানুষের কল্যাণের জন্যই যে মাটি সেই মাটির প্রতি আমাদের যতœবান, এর সঠিক ব্যবহার ও পরিচর্যা ও সুসম জৈব প্রযুক্তির চাষাবাদ আমাদের মাটির এবং আমাদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে পারে। ভার্মি কম্পোস্ট কেঁচো সার আমাদের সেই চাহিদা ও প্রত্যাশা পূরণে রাখতে পারে উলে¬খ যোগ্য অবদান। মাটির উর্বরা শক্তি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে রাসায়নিক সার আমদানি ও ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার জন্য সরকার তথা সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সারের ব্যবহারের প্রতি কৃষককে উদ্ধুদ্ধ ও উজ্জীবিত করে তুলতে হবে।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor