Tuesday, October 7, 2008

কোল্ড স্টোরেজে রয়েছে ১৫ লাখ টন আলু লোকসানে বিক্রি করছে কৃষকরা II ৪ লাখ টন অবিক্রিত থাকার সম্ভাবনা

০৭.১০.০৮
ইত্তেফাক ।। নিজামুল হক

আগামী দুই মাসের মধ্যে নতুন আলু বাজারে আসা শুরু হবে। কিন্তু দেশের ৩০০টি কোল্ড স্টোরেজে এখনও সংরক্ষিত রয়েছে ১৫ লাখ টন আলু। এ অবস্থায় সংরক্ষিত আলু অবিক্রিত থাকার আশংকা করছেন কৃষকরা। আলু অবিক্রীত থাকলে কৃষকদের কয়েকশ’ কোটি টাকার লোকসান গুনতে হবে। এ অবস্থায় কৃষকরা আলুর ব্যবহার বাড়াতে ত্রাণ বিতরণসহ বিভিন্ন খাদ্য কর্মসূচিতে আলু অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন।

আলুর চাষ বৃদ্ধিতে সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের কারণে কৃষকরা বিগত বছরগুলোর চেয়ে বেশি জমিতে আলু চাষ করে। অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে গত মওসুমে আলুর উৎপাদন ৯০ লাখ টন ছাড়িয়ে যায়। দেশের বিভিন্ন জেলায় ৩০০টি কোল্ড স্টোরেজে গত মওসুমে ২২ লাখ টন আলু সংরক্ষণ করা হয়। এর মধ্যে এখনও ১৫ লাখ টন আলু সংরক্ষিত রয়েছে। অন্যান্য বছর এ সময়ে অর্ধেক আলু কোল্ড স্টোরেজ থেকে খালাস হয়। কোল্ডস্টোরেজ মালিকরা জানিয়েছেন, বর্তমানে যে পরিমাণে আলু কোল্ড স্টোরেজ থেকে খালাস হচ্ছে সে অনুযায়ী আগামী মওসুমে নতুন আলু বাজারে আসলেও অন্তত ৪ লাখ টন আলু হিমাগারে পড়ে থাকার আশংকা রয়েছে। ইতিমধ্যে কৃষকরা উঁচু জমিতে আলু চাষের প্রস্তুতি নিয়েছে। আগামী নভেম্বরের মাঝামাঝি এবং শেষ সপ্তাহের মধ্যে বাজারে নতুন আলু আসবে। আলু বীজ বাদে এ সময়ের মধ্যে কোল্ড স্টোরেজ থেকে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টন আলু বের হতে পারে। এরপরই নতুন আলু বাজারে চলে আসবে। নতুন আলু বাজারে আসার কারণে ক্রেতারা পুরাতন আলু কিনতে আগ্রহী হবেন না।

চালের ওপর থেকে চাপ কমানো এবং আলুর ব্যবহার বাড়াতে গত মে মাসে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজন করা হয়েছিল পটেটো ক্যাম্পেইন। উক্ত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আলুর বহুবিধ ব্যবহারের জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা হয়। কৃষি বিজ্ঞানীরা বলছেন, উৎপাদন অনুযায়ী আলুর ব্যবহার তেমন বাড়েনি। ফলে ক্যাম্পেইনের সুফল পাচ্ছে না কৃষকরা। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত মওসুমে ৫ লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে ৯০ লাখ টন আলু উৎপাদন হয়। বাজার চাহিদা পূরণের পর ২২ লাখ টন আলু কোল্ডস্টোরেজে রাখা হয়।

মুন্সীগঞ্জের কৃষক কামাল হোসেন জানান, প্রতি বস্তায় ৮০ কেজি আলু থাকে। ৮০ কেজি আলুর উৎপাদন খরচ ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা। কোল্ড স্টোরেজে প্রতি বস্তার জন্য দিতে হয় ১৮০ টাকা। পরিবহন খরচ ৮০ টাকাসহ বস্তা প্রতি তার খরচ ৯৫০ টাকা। কামাল হোসেন আরো জানান, প্রতি বস্তা তিনি বিক্রি করছেন ৯০০ টাকায়। বস্তা প্রতি তাকে ৫০ টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে। তবে স্থানভেদে উৎপাদন খরচ কম-বেশি হয়। কেউ লোকসান দিয়ে বা কেউ শুধু মূলধন তুলে নেয়ার উদ্দেশ্যে আলু বিক্রি করছেন বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে দেশে প্রতিষ্ঠিত রফতানিমুখী কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প পটেটো ফ্লেক্সের ৪টি কারখানা বন্ধ রয়েছে। এগুলো হলো পাটোয়ারী পটেটো ফ্লেক্স লিমিটেড, বিক্রমপুর পটেটো ফ্লেক্স লিমিটেড, পটেটো ফ্লেক্স (বিডি) লিমিটেড এবং ফ্লেমিংগো এগ্রোটেক লিমিটেড। কারখানাগুলোর আলু প্রক্রিয়াজাতকরণ ক্ষমতা বছরে অন্তত ৪ লাখ থেকে ৬ লাখ টন। এ কারখানা চারটি চালু করা গেলে আলুর ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষকরা লাভবান হতে পারতো বলে ধারণা করছে অনেকেই।

এসব কারখানা মালিকদের অভিযোগ, মূলধন বরাদ্দের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিআরপিডি সার্কুলার-৫এর শর্ত শিথিল না হওয়ায় ঋণ নেয়া যাচ্ছে না। বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মেজর (অবঃ) জসিম উদ্দীন বলেন, আলুর ব্যবহার বাড়াতে সশস্ত্রবাহিনী, বিডিআর, পুলিশ, আনসার, জেলখানা, এতিমখানা, হাসপাতাল, ভিজিএফ, কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচিসহ বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ হিসাবে চাল-গমের সঙ্গে আলু দেয়া হোক। তিনি কৃষকদের লোকসানের বিষয়টি বিবেচনা করে সরকারকে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor