Tuesday, February 10, 2009

কৃষকের পাওনা সাড়ে ৪ কোটি টাকা নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের আখমাড়াই বন্ধ ঘোষণা

১১.০২.০৯
ডেসটিনি ।। ময়নুল ইসলাম, লালপুর (নাটোর)
আরো একমাস মাড়াই কার্যক্রম চলার উপযোগী আখ থাকার পরও কৃষকরা মিলে আখ সরবরাহ না করায় গতকাল মঙ্গলবার লালপুরের নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। উৎপাদন শুরু হওয়ার পর অধিকাংশ মাড়াই মৌসুমে লোকসান হওয়ায় মিলটি পুঞ্জিভূত লোকসানের ঋণের বোঝা আরো বাড়লো। গত মৌসুমের ১ হাজার ৬৭৫ মেট্রিক টনসহ মোট ১৩ হাজার ৭৯৩ মেট্রিক টন চিনি এখনো অবিক্রীত রয়েছে। কৃষকদের পাওনা রয়েছে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা।
মিল সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে মিলটি ১১০ কর্মদিবসে ১ লাখ ৭০ হাজার ২৬০ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ১২ হাজার ১১৮ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন করে। চিনি আহরণের হার ৭ দশমিক ২০ ভাগ। কিন্তু ১ হাজার ৬৭৫ মেট্রিক টনসহ মোট ১৩ হাজার ৭৯৩ মেট্রিক টন চিনি এখনো অবিক্রীত রয়েছে। ২০০৮-০৯ মাড়াই মৌসুমে ১৪৮ কর্মদিবসে ২ লাখ ৫২ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ১৯ হাজার ৪০৪ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে গত বছর ২৪ অক্টোবর মিলের মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন করা হয়। আরো ৩৮ কর্মদিবস মাড়াই কার্যক্রম চলার উপযোগী আখ মাঠে দ-ায়মান থাকার পরও কৃষকরা মিলে আখ সরবরাহ না করায় ১১০ কর্মদিবসে মিলের মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে এ বছর লোকসানের পরিমাণ আরো বাড়বে।
মিল চালুর অনেক আগে থেকে মিল এলাকায় অবৈধভাবে প্রায় ১ হাজার ১০০ পাওয়ার ক্রাশারে অবাধে আখ মাড়াই করে গুড় তৈরি হয়ে আসছে। মিল কর্তৃপক্ষ ক্রাশারে আখ মাড়াইয়ে নিরুৎসাহিত করতে লিফলেট ও মাইকিং ছাড়াও প্রায় ৯০০ চিঠি দিয়ে সতর্ক করেও কোনো লাভ হয়নি। কৃষকরা জানান,
মিলের চেয়ে অনেক বেশি দামে গুড় প্রস্তুতকারীরা জমি থেকে নিজেদের খরচে আখ কেটে নিয়ে যায়। মিল প্রতিমণ আখের মূল্য দেয় ৬১.৫০ টাকা। পক্ষান্তরে গুড় প্রস্তুতকারীরা মণপ্রতি দাম দিচ্ছেন ৮০ থেকে ৯০ টাকা। বাজারে প্রতি কেজি গুড় প্রায় ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়াও গুড় উৎপাদনকারীরা সঠিক ওজনে আখ কেনার সঙ্গে সঙ্গে দাম পরিশোধ করেন। তারা কৃষকদের অগ্রিম টাকাও দেন। অথচ সঠিক ওজন এবং আখের মূল্য বাবদ মিলের কাছে কৃষকদের পাওনা নিয়ে চাষীদের আন্দোলন করতে হয়। এসব কারণে সুগার মিলে উৎপাদিত চিনির পরিবর্তে গুড় তৈরিতে বেশি আখ ব্যবহৃত হচ্ছে।
নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি খন্দকার শহিদুল ইসলাম জানান, মিলের শ্রমিক-কর্মচারী সবাই চিনি শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। চরম হুমকির মুখে যে কোনো সময় দেশের চিনি কলগুলো বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তিনি দেশীয় চিনি শিল্পকে বাঁচাতে আমদানিকৃত বিদেশি চিনির ওপর অতিরিক্ত কর আরোপ করে বাজারে দেশি চিনির মূলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষা করার দাবি জানান।
নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) গোলাম মোর্তুজা জানান, চাহিদার তুলনায় দেশীয় চিনির উৎপাদন অত্যন্ত কম। এ মিলে উৎপাদিত চিনির মান আমদানিকৃত চিনির চেয়ে অনেক ভালো। বাজারে নিম্নমানের ঝকঝকে বিদেশি চিনির চাহিদা বেশি। তাই চিনি ব্যবহারকারীদের গুণগত মান সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। তিনি আরো জানান, মিল এলাকায় বর্তমানে যে পরিমাণ আখ দ-ায়মান রয়েছে তাতে আরো এক মাসের বেশি মিল চলার কথা। কিন্তু কৃষকরা মিলে আখ সরবারহ না করার কারণে যে কোনো সময় মিল বন্ধ ঘোষণা করতে হয়েছে।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor