Saturday, February 14, 2009

মাগুরার বোরো চাষিরা দেশের বৃহত্তর জিকে সেচ প্রকল্পের কোনো সুবিধা পাচ্ছেন না

১৩.০২.০৯
ডেসটিনি ।। মুসাফির নজরুল, মাগুরা

মাগুরার বোরো চাষিরা দেশের বৃহত্তর জিকে সেচ প্রকল্পের কোনো সুবিধাই পাচ্ছেন না। ১৯৫৪ সালে দেশের বৃহত্তম গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পটি মাগুরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ১৩টি উপজেলার আবাদি জমির আমন ও বোরো মৌসুমে সেচ সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দুই শতাধিক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হলেও প্রায় ৫৪ বছরের মাথায় কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রার ধারের কাছেও পৌঁছাতে পারেনি। উপরন্তু অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে এ প্রকল্পের আওতাধীন কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ। ফলে প্রতি বছর এ প্রকল্পে লোকসান যাচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এদিকে গত কয়েক বছর ধরে ভরা মৌসুমেও জিকে প্রকল্পের মাগুরা অংশের খালগুলোতে বিন্দু পরিমাণও পানি সরবরাহের বালাই নেই। ফলে গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প এ জেলার কৃষকদের কোনো উপকারেই আসছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৫৪ সালে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ২০০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্প নির্মিত হয় । কাজ শেষ হয় ১৯৯৪ সালে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল এ অঞ্চলের সেচ সুবিধাসহ বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য পানি নিষ্কাশন এবং কৃষকদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ও আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটানো। এ জন্য শুরুতেই চাষিদের আধুনিক চাষাবাদের সঙ্গে পরিচিত ও প্রশিক্ষণদানের জন্য ৪৯টি পাকা চাষি ক্লাবভবন নির্মাণ ও ৭টি উপজেলায় কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি গঠন করা হয়; যার অধীনে প্রাথমিক সমিতির সংখ্যা ছিল ৭৪৯টি। আর এসব কাজ সুচারুরূপে বাস্তবায়নের জন্য প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ভাগ করে ১৯৫৫-৫৬ অর্থবছরে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ১৯৭০ সালে সাড়ে ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রথম পর্যায়ের এবং ১৯৮৩ সালে ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শেষ হয় ।
১৯৮৩-৮৪ অর্থবছরে প্রকল্পের পুনর্বাসন কাজ শুরু হয় এবং ২১২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৯৯৪ সালে শেষ হয়। এ সময় ভেড়ামারায় প্রকল্পের পা¤পহাউস নির্মাণসহ ১৯৩ কিলোমিটার সেচ খাল, ৪৬৭ কিলোমিটার শাখা সেচ খাল, ৯৯৫ কিলোমিটার উপ-শাখা সেচ খাল খনন ও ২ হাজার ১৮৪টি পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো, ২২৮ কিলোমিটার সড়ক, ১টি বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ সুষ্ঠুভাবে প্রকল্প পরিচালনার জন্য বাসা সেকশন, সাবডিভিশন ও ডিভিশন অফিস নির্মাণ করা হয়। এ ছাড়া মাগুরায় নির্মাণ করা হয় ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে রেগুলেটর ও একটি প্রধান পাম্প। কিন্তু এত কিছুর পরও ১৯৬৩ সালের আউশ-আমন মৌসুমে এই প্রকল্প থেকে সেচ সুবিধা পাওয়া যায় মাত্র ১৭ হাজার ২৬৭ একর জমিতে, যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ৫ শতাংশ মাত্র। প্রথম খরিপ মৌসুমে প্রকল্পটি ১ লাখ ২০ হাজার একর জমিতে সেচ সুবিধা দিতে সক্ষম হয়, যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ৩৪ শতাংশ। দ্বিতীয় খরিপ মৌসুমে ২ লাখ ২৫ হাজার একর জমিতে সেচ দেয়া সম্ভব হয়, যা লক্ষ্যমাত্রার ৬৪ শতাংশ। পরে কোনো সময়েই আর এ প্রকল্পটি এই লক্ষ্যমাত্রার ধারে কাছেও যেতে পারেনি।
এদিকে জেলার নাকোল, সাচিলাপুর, শ্রীপুর, গোয়ালদা, আমলসার, লাঙ্গলবাঁধ, গাংনালিয়া, আমতৈল, বড়ইচারা, প্রভৃতি স্থানের ডিভিশন, সাবডিভিশন ও সেকশন অফিস ও বাসার বিভিন্ন সরঞ্জামাদি অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। স্থাপনাগুলোর জানালা-দরজাসহ অনেক কিছুই চুরি হয়ে গেছে কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালিপনার কারণে। মাঠপর্যায়ের প্রকল্প অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কর্মরত কর্মচারীরা দীর্ঘদিন কাজ না থাকায় অনেকে স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন অন্য কাজে। এ প্রকল্পটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করলে মাগুরা তথা পার্শ্ববর্তী জেলার কৃষকদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রভূত উন্নতি সম্ভব হবে। খালের দুপাশের জমি অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে আংশিক উদ্ধার করলেও তা সেভাবেই পড়ে আছে। সেদিকে কর্তৃপক্ষের কোনো ভ্রƒক্ষেপ নেই।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor