Saturday, February 14, 2009

সেচের জন্য ১১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার

১৩.০২.০৯

ডেসটিনি রিপোর্ট
সেচপাম্পে ব্যবহারের জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ১১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও প্রতিমন্ত্রী। এজন্য প্রয়োজন হলে শহরাঞ্চলে লোডশেডিং করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে গ্যাসের অভাবে যাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত না হয় সেজন্য প্রতিদিন বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেচপাম্পগুলোয় বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারলে সারাদেশে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হবে এমনই আশঙ্কায় গত বুধবার উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী এবং প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু এ নির্দেশ দেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, সেচপাম্পে ব্যবহারের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতেই আমরা এ নির্দেশনা দিয়েছি। এ ছাড়া গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে একটি কন্ট্রোলরুম খোলা হবে এবং বিদ্যুৎ পরিস্থিতি জোর মনিটরিং করা হবে। তিনি বলেন, বিদ্যুতে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে আমরা বলেছি কাফকোতে গ্যাস সরবরাহ কিছুটা কমিয়ে আনতে। কেননা এ মুহূর্তে সেচের প্রয়োজনে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা জরুরি। এ ছাড়া বিদ্যুতের জন্য প্রতিদিন ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের নির্দেশ দিয়েছি।
সূত্রমতে, আগামী সেচ মৌসুমে সেচপাম্পে ব্যবহারের জন্য চাহিদামতো বিদ্যুৎ সরবরাহ করা না গেলে আশানুরূপ ফসল উৎপাদিত হবে না। সূত্রমতে, সেচ মৌসুমে সারাদেশে প্রতিদিন বিদ্যুৎ ঘাটতি দাঁড়াবে ২ হাজার মেগাওয়াট। এ সময় সেচে ব্যবহৃত পাম্পে প্রায় ১ হাজার ১০০ মেগাওয়াট অতিরিক্ত বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে।
তবে সরকার এ বিদ্যুৎ ঘাটতি মেটাতে ও সেচপাম্পগুলোয় বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে বলে জানান বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে তারা ৩০ হাজার সেচপাম্পে সংযোগ দিয়েছেন। এ ছাড়া সেচ এলাকায় বিভিন্ন কার্যক্রম মনিটরিং করতে কমিটি করা হয়েছে। সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎচালিত সেচপাম্পগুলোয় প্রয়োজনীয় ও মানসম্পন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সেচপাম্পগুলোয় বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো এবং সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনগুলোয় প্রয়োজনীয় মেরামত ও সংরক্ষণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বোরো চাষ সফল করতে সেচপাম্পগুলোয় মানসম্পন্ন ও পূর্ণ ভোল্টেজের বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। জানা গেছে, এ বছর দেশে ২ লাখ ২৩ হাজার বিভিন্ন ধরনের সেচপাম্পে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হবে। যা গত
বছরের তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি। নতুন সংযোগ প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারি সেচ প্রকল্পগুলো এবং অধিকতর এলাকায় সেচ করা হবে এমন বেসরকারি সংযোগকে অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে। অন্যদিকে শীতের কারণে বিদ্যুতের চাহিদাও কম হবে। সূত্রমতে, চলতি সেচ মৌসুমের শুরুর দিকে সান্ধ্য পিক সময়ে সেচসহ মোট বিদ্যুৎ চাহিদা ৪ হাজার ৭১ মেগাওয়াটÑ যা মার্চে গিয়ে বেড়ে দাঁড়াবে ৪ হাজার ৫৯২ মেগাওয়াট। তবে এ সময় ৩ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার ৯৮০ মেগাওয়াটের বেশি উৎপাদন করতে সক্ষম হবে না পিডিবি। যার ফলে আগামী সেচ মৌসুমে সান্ধ্য পিক সময়ে প্রতিদিন বিদ্যুৎ ঘাটতি দাঁড়াবে ৬৫০ মেগাওয়াট থেকে ১ হাজার মেগাওয়াট।
জানা গেছে, সেচ মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা ঢাকায় ১ হাজার ৯০২ মেগাওয়াট, ময়মনসিংহে ২৩২ মেগাওয়াট, সিলেটে চাহিদা ২২৫, কুমিল্লায় বিদ্যুৎ চাহিদা ৩৯৬ মেগাওয়াট, চট্টগ্রামে ৫৯৫ মেগাওয়াট, খুলনায় ৫০১ মেগাওয়াট, বরিশালে ১০২ মেগাওয়াট, রাজশাহীতে ৪১৭ মেগাওয়াট এবং রংপুরে ২২০ মেগাওয়াট।
চলতি সেচ মৌসুমে সেচপাম্পের বিদ্যুৎ চাহিদা মোট ১ হাজার ৭৮ মেগাওয়াট। এর মধ্যে ঢাকায় বিদ্যুৎ চাহিদা ৭৩ মেগাওয়াট, ময়মনসিংহে ২০৯ মেগাওয়াট, সিলেটে ১৫ মেগাওয়াট, কুমিল্লায় ১০২ মেগাওয়াট, চট্টগ্রামে ২৪ মেগাওয়াট, খুলনায় ১২৮ মেগাওয়াট, বরিশালে ৩ মেগাওয়াট, রাজশাহীতে ৩০৯ মেগাওয়াট এবং রংপুরে ২১৫ মেগাওয়াট।
বিদ্যুৎ সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, সেচপাম্পের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি হচ্ছে রাজশাহী বিভাগে। এখানে সেচপাম্পের সংখ্যা হচ্ছে দেশের মোট পাম্পের প্রায় অর্ধেক। এর পরই রয়েছে ঢাকা। তবে ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে সিলেট, চট্টগ্রাম ও বরিশাল অঞ্চলে সেচপাম্পের ঘনত্ব স্বল্প।
সূত্র মতে, গত কয়েক বছরে দেশে গ্যাসের নতুন কোনো মজুত আবিষ্কৃত হয়নি। ফলে মজুত কমে যাচ্ছে। যে কারণে বিদ্যুৎ ও সার উৎপাদনসহ সব ক্ষেত্রে প্রতি বছর গ্যাসের চাহিদা বাড়লেও গ্যাসের মজুত বাড়ছে না। গ্যাসের উৎপাদন না বাড়ায় ইতিমধ্যেই পেট্রোবাংলা বেশ কয়েকটি নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহে অপারগতা জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে সব বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের মোট স্থাপিত ক্ষমতা ৫ হাজার ১৮৭ মেগাওয়াট। কিন্তু বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর বেশ কয়েকটি অনেক পুরনো। মোট ৯৭টি বিদ্যুৎ ইউনিটের মধ্যে ২৯টি ইউনিটের বয়স ২০ বছরের ঊর্ধ্বে, অর্থাৎ এগুলোর স্বীকৃত আয়ুষ্কাল ইতিমধ্যে পেরিযে গেছে। আর ১৬টি ইউনিটের বয়স ১৫ বছরের ওপরে। বয়সের ভারে এগুলোর ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে, ফলে বর্তমানে সব ইউনিট মিলে সম্মিলিত ডিরেকটেড ক্ষমতা হচ্ছে ৪ হাজার ৬০৪ মেগাওয়াট।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor