Friday, February 27, 2009

লক্ষ্মীপুরে বিদ্যুৎ ও গলাচিপায় পানি সংকটে বোরো চাষ ব্যাহত

১৭.০২.০৯
ডেসটিনি ।। শ্যামল বাংলা ডেস্ক

লক্ষ্মীপুরে বিদ্যুৎ ও গলাচিপায় পানির অভাবে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
আমাদের লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধে জানান, বোরো আবাদ মৌসুমে পুরো মাত্রায় শুরু হলেও অনেক সেচ প্রকল্পের মালিক এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ পাননি। বিদ্যুতের সংযোগ কবে নাগাদ পাওয়া যাবে সে ব্যাপারেও নিশ্চিত নন তারা। এ ছাড়া ঘনঘন লোডশেডিংয়ের ও লো-ভোল্টেজের কারণে বেশিরভাগ সেচ প্রকল্পেই চাহিদা মতো পানি সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না এমন অভিযোগ করছেন সেচ প্রকল্পের মালিক ও কৃষকরা। এদিকে সেচ প্রকেল্পে বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রসঙ্গে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কর্তৃপক্ষের বক্তব্য হলো সেচ কাজে নতুন সংযোগ মিটার নিয়ে সারা দেশে অভাব চলছে। আরইবি থেকে চাহিদা মতো মিটার না পাওয়ার সেচের জন্য যত আবেদন জমা পড়েছে তার বিপরীতে মিটার দেয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এজিএম (সদস্য সেবা) মৃণাল কান্তি চৌধুরী জানান, এ বছর সেচের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ চেয়ে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আবেদন জমা পড়ে ৫৫১টি। এর মধ্যে গত ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪৫৩ জনকে মিটার দেয়া হয়েছে। বাকি ৯৮ জনকেও পর্যায়ক্রমে মিটার দেয়া হবে। কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে চাহিদা মতো মিটার না পাওয়ায় তাদের এমন সমস্যা পড়তে হয়েছে বলে তিনি জানান। সমিতিরি জেলা নসদর দফতর অফিসের আওতায় সেচ সংযোগ দেয়া হয়েছে ২৮৭টি। এর মধ্যে এলএলপি ১৮৪, অগভীর ৮৮, গভীর ১৫টি। রায়পুর জোনাল অফিসের মাধ্যমে দেয়া হয় ৪৯টি। এর মধ্যে এলএলপি ৪৭, অগভীর ২টি। রামগঞ্জ জোনাল অফিসের আওতায় দেয়া হয় ১১৭টি। এর মধ্যে এলএলপি ২৯, অগভীর ৮৭ গভীর ১টি। সেচ মালিকদের অভিযোগ, বিদ্যুতের জন্য পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে বার বার ধরনা দিয়েও তারা মিটার পাচ্ছে না। সংযোগ পতে পেতে বোরো আবাদের সময় পার হয়ে যেতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন তারা। এ ছাড়া আবাদকৃত ফসলি জমিতে ঠিকমতো পানি দিতে না পারলে ফসল উৎপাদনও ব্যাহত হতে পারে। এদিকে যে সব সেচ প্রকল্পে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে সেসব প্রকল্পের মালিকরাও স্বস্তিতে নেই। তাদের অভিযোগ, ঘনঘন লোডশেডিং এবং বিদ্যুতের লো ভোল্টেজের কারণে কৃষকের চাহিদা মতো পানি সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না ফলে তাদের নানা বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এনিয়ে সেচ মালিক ও কৃষকদের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে। লোডশেডিং প্রসঙ্গে এজিএম মৃণাল কান্তি চৌধুরী জানান, জেলায় ২৮ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও তারা প্রতিদিনই গড়ে বিদ্যুৎ পাচ্ছেন ৬ থেকে ৭ মেগাওয়াট। যে কারণে ঘনঘন লোডশেডিং দেয়া ছাড়া তাদের কোনো উপায় নেই। লো ভোল্টেজ প্রসঙ্গে তিনি জানান চাহিদা ৩৩ কেভি হলেও তারা পাচ্ছেন ২৪ কেভি। এ ছাড়া চৌমুহনী থেকে জেলার অবস্থানগত দূরত্ব এবং বিদ্যুতের লাইনগুলো দীর্ঘদিন যাবৎ সংস্কার না হওয়া লো- ভোল্টেজের কারণ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এদিকে আমাদের গলাচিপা প্রতিনিধি জানান, গলাচিপার কৃষকদের মধ্যে পানির জন্য হাহাকার চলছে। বিভিন্ন এলাকায় প্রবাহিত অনেক খাল এখন ভরাট হয়ে পড়েছে। কয়েকটি খালের মুখ নষ্ট হয়ে থাকায় সøুইসগেটের কারণে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ নেই। যেখানে পানি পাওয়ার ব্যবস্থা আছে, সেখানে সেচপাম্প মালিকরা কৃষকদের পানি দিচ্ছে নিজেদের খেয়ালখুশিমতো একর প্রতি মূল্য ধার্য করে। আবার কোনো কোনো এলাকায় মজুদ পানির ব্যবহার নিয়ে চলছে পক্ষ-বিপক্ষে বাদ-প্রতিবাদ। এ রকম পরিস্থিতিতে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে গলাচিপার শত শত কৃষক। বোরো চাষাবাদের শুরু গত মাসে সূচনা হলেও উপজেলায় এখনো ৪ হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি রয়েছে। জানা গেছে, যারা সেচপাম্প বসিয়ে জমিতে পানি দেয় তারা যার যার মতো করে কৃষকদের কাছ থেকে একবার পানির মূল্য ধার্য করে। কৃষকদের স্বার্থ দেখার কেউ না থাকায় মনগড়া পানির মূল্য দিতে হয় সেচপাম্প মালিকদের। চালিতাবুনিয়ার কৃষক খোকন হাওলাদার জানিয়েছেন, তার জমিতে সেচ দেন পাম্প মালিক আমির হোসেন। প্রতি একর জমিতে সেচ সুবিধা দিতে তাকে দিতে হবে ১৭০০ টাকা। পাশের মাওলানারচরে সেব দেন আলতাফ মিয়া। তিনি একরপ্রতি পানির মূল্য ধার্য করেছেন ২ হাজার টাকা। সেচপাম্প মালিকদের দাবি কামলার দৈনিক মজুরি, খাওয়া ও থাকা দিয়ে আড়াইশ টাকা দিতে হয়। রয়েছে তেল, ডিজেল ও নানা রকম খরচ। এ হিসেবে তারা পানির মূল নির্ধারণ করেছেন। রাক্তাবালী ইউনিয়নের আললিবাড়িয়া এলাকায় সেচ দেন পাম্প মালিক ইব্রাহিম ফকির। তিনি নিচ্ছেন একর প্রতি দেড় হাজার টাকা। এখানে দেখা গেছে, সময়মতো পানি পেয়ে কৃষকরা জমিতে চাষাবাদ নেমেছে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, চিকনিকান্দি, বকুলবাড়িয়া, গজালিয়া, আমখোলা এলাকার অনেক জমি এখানো গরু-ছাগলের দখলে। মুক্ত বিরাণভূমি। এখানে চাষাবাদ হবে এমন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে এবার বোরো চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি চাষাবাদের আওতায় এসেছে বলে তাদের দাবি। সেচপাম্প মালিকদের পানির মূল্য নির্ধারণ ও ভরাট খালের পানির প্রবাহ প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওসমান খান বরেন, ভরাট খাল নিয়ে বারবার কথা হয় বিভিন্ন সভায়। এর সমাধান দরকার। পানির মূল্য নির্ধারণে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বসে কৃষকদের স্বার্থে ফয়সালা করতে পারে। এ ব্যাপারে তারা সহায়তা দেবেন।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor