Saturday, February 14, 2009

পদ্মার ২৫টি শাখা নদীতে পানি নেই, বোরো চাষে বিপর্যয়ের আশঙ্কা

১৫.০২.০৯
ডেসটিনি ।। সালেহ আকরাম

পাবনা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা, ঝিনাইদহ, নড়াইল, সাতক্ষীরা ও ফরিদপুর অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রায় ২৫টি উপশাখা নদীর উৎসমুখ ‘পদ্মা’। পানির অভাবে বর্তমানে এসব শাখা-উপশাখা নদীগুলো শুকিয়ে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় কৃষকরা চরম বিপাকে পড়েছে। জমিতে ঠিকমতো সেচ দিতে না পারায় বোরো মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে মারাত্মক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের আওতাধীন অধিকাংশ হস্তচালিত গভীর-অগভীর নলকূপ থেকে পর্যাপ্ত পানি উঠছে না বলে জানা গেছে। জিকে (গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প) ক্যানালে পানিশূন্যতার কারণে এই বিপর্যয় হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এবারের বোরো মৌসুমে প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ নিশ্চত না হলে ইরি-বোরো আবাদ হুমকির মুখে পড়বে। এদিকে কৃষক জেগে ওঠা চরের জমিতে বাদাম, ভুট্টা ও আখের আবাদ শুরু করেছে। জেগে ওঠা চর দখল নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষেরও খবর পাওয়া যাচ্ছে। অন্যদিকে পদ্মাপাড়ের মৎসজীবীদের জীবন এখন বিপর্যস্ত। পানিহীন পদ্মায় মাছ সংকটে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সূত্রমতে, সেচের মাধ্যমে এ অঞ্চলের ফসল উৎপাদনের স্বার্থে সরকার ১৯৫৪ সালে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় ‘গঙ্গা-কপোতাক্ষ’ সেচ প্রকল্প গ্রহণ করে। ১৯৬৯-এ প্রকল্পের কাজ শেষ করা হয়। এই প্রকল্পের ১২টি ছোট পাম্প ও ৩টি বড় পাম্প চালু রাখতে ন্যূনতম ১৫ ফুট পানির স্তর প্রয়োজন। মোট সাড়ে ৩ লাখ একর জমি এই সেচ প্রকল্পের আওতায় আনা হয়। বর্তমানে পদ্মায় পানিস্বল্পতার কারণে মাত্র ১ লাখ একরের বেশি জমিতে সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। জিকে প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গত বছরের ডিসেম্বরে প্রকল্পের ৮টি পাম্প বন্ধ করে দিয়েছে বলে জানা গেছে। কৃষক বোরো মৌসুমের জমিতে সেচ দিতে
না পারায় চরম বিপাকে পড়েছে। জিকে প্রকল্পের ক্যানালে পানিশূন্যতার কারণে বোরো মৌসুমে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বোরো মৌসুমে ২ হাজার হেক্টরের অধিক জমিতে আবাদ করা হবে বলে ঠিক করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ভেড়ামারায় ১ হাজার হেক্টর জমিতে ফসল ফলানোর প্রক্রিয়া হাতে নিয়েছে কৃষক। অন্যদিকে পাবনাসহ পদ্মার আশপাশের উপশাখা নদীর চরাঞ্চলেও পুরোদমে কৃষিকাজ চলছে। কিন্তু শুষ্ক মৌসুম না আসতেই পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এ এলাকার কৃষক বিপাকে পড়েছে। জিকে প্রকল্পের আওতাধীন ভেড়ামারার জুনিয়াদহ, বাহিরচর, চাঁদগ্রাম, মোকারিমপুর, বাহাদুরপুর, ধরমপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ হস্তচালিত গভীর-অগভীর নলকূপ থেকে পর্যাপ্ত পানি উঠছে না বলে খবর পাওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ৩০ বছরের গঙ্গার পানি চুক্তির ১৩তম বর্ষে পদার্পণ করলেও গত ১২ বছর ওই চুক্তির শর্তানুসারে বাংলাদেশ ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। সংশিষ্টরা বলছেন, প্রতি বছর বাংলাদেশ ভারত সরকারের কাছে লিখিতÑঅলিখিতভাবে পানির বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে এলেও তাতে কোনো কাজ হয়নি। গত বছরও ভারত সবচেয়ে কম পানি দিয়েছে বাংলাদেশকে। একতরফাভাবে ভারত বাংলাদেশের কাছ থেকে পানি প্রত্যাহার করে নেয়ার কারণে খরা মৌসুম শুরুর আগেই পাকশী পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ১৬ স্প্যানের ইতিমধ্যে ৮-১০টি স্প্যান পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। সেখানে দেখা দিয়েছে ধু-ধু বালুচর। সেই সঙ্গে ২৫টি উপশাখা নদীর পানি শুকিয়ে যেতে শুরু করেছে। ১৯৯৬-এ তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেব গৌড়ের মধ্যে হায়দরাবাদ হাউসে ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গার পানি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাইড্রোলজি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী দৌলতুজ্জামান এ বিষয়ে দৈনিক ডেসটিনিকে জানান, পদ্মার হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে বর্তমানে ৮ মিটার পানির স্তর রয়েছে। ভারত বাংলাদেশকে প্রাপ্য পানি বণ্টন করছে বলে তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, চলতি জানুয়ারি মাসের পর্যবেক্ষণ রিপোর্ট অনুযায়ী সাড়ে ৫১ হাজার কিউসেক পানি পাওয়া গেছে। কিন্তু তার দেয়া তথ্য ও সরেজমিন ঘুরে কোনো মিল পাওয়া যায়নি।
আমাদের পাবনা প্রতিনিধি জানান, পানির অভাবে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের তলদেশে ১৬টি স্প্যানের মধ্যে বর্তমানে ৮-১০টি স্প্যান পানিশূন্য রয়েছে। আগামী ১ মাসের মধ্যে অবস্থা আরো ভয়াবহ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor