Sunday, February 1, 2009

খুলনায় নয়া ফসল বণ্টন প্রথা চালু ।। বর্গাচাষীরা বিপাকে তেভাগা আন্দোলনের প্রস্তুতি

০১.০২.০৯
।। রেজাউল করিম, খুলনা অফিস ।।

খুলনার বিভিন্ন এলাকায় জমির মালিকরা নয়া ফসল বন্টন প্রথা (পদ্ধতি) চালু করেছে। তেভাগা (তিনভাগ) পদ্ধতিতেই দীর্ঘকাল ধরে চলে আসছিল বর্গাচাষীদের উৎপাদিত ফসলের ভাগ-বাটোয়ারা। চলতি বোরো মৌসুম শুরু হলে জমির মালিকরা হঠাৎ করে তেভাগার বদলে পাঁচভাগা ফসলের দাবি করার ফলে বর্গাচাষীরা দারুণ বিপাকে পড়েছেন। ধান লাগানোর কাজ শেষ হলে বর্গাচাষীরা বিষয়টি নিয়ে আন্দোলনে নামবে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা।

জানা গেছে, বছরের পর বছর ধরে দক্ষিণের বিভিন্ন এলাকায় তেভাগা পদ্ধতিতে বর্গা চাষীরা জমি চাষ করে ফসল নেয়। চাষকৃত জমিতে যে ফসল উৎপাদন হয় তা তিন ভাগ করে এক ভাগ নেয় জমির মালিক আর দুই ভাগ নেয় বর্গাচাষী। এ নিয়মে জমিতে ফসল তোলা পর্যন্ত সব খরচ বর্গাচাষীরা বহন করে থাকে; কিন্তু চলতি মওসুমে জমিতে বীজতলা তৈরির পর জমি মালিকরা তাদের নতুন বিধান ঘোষণা করে। তারা ঘোষণা দিয়েছে, চলতি মওসুম থেকে বর্গা জমির ফসলের ভাগ হবে ৪টি। এর মধ্যে ২ ভাগ পাবে চাষী আর ২ ভাগ পাবে জমির মালিক। যাবতীয় উৎপাদন খরচ বহন করবে চাষী। কৃষকরা বলছেন, এ অঞ্চলের অধিকাংশ বর্গাচাষী ভূমিহীন অথবা সামান্য জমির মালিক। ফসল ফলানোর পুরো খরচই তাদের বহন করতে হয়। জমির মালিকদের এমন চাপিয়ে দেয়া বন্টন প্রথা মানতে গেলে বর্গাচাষীদের সমস্ত কিছু পন্ডশ্রমে পরিণত হবে।

এদিকে জেলার নয়টি উপজেলার অধিকাংশ কৃষকই এখন পুঁজি সংকটে পড়ে দিশেহারা। জমিতে ফসল উৎপাদনের ধারা সচল রাখতে তারা জড়িয়ে পড়েছেন সুদখোর মহাজনদের ঋণের জালে। এছাড়া এনজিওর ঋণেও জর্জরিত হয়ে অনেকেই সর্বস্বান্ত হতে বসেছেন। সাপ্তাহিক বা অর্ধমাসিক কিস্তির টেনশনে অধিকাংশ বর্গাচাষীকে কুঁরে কুঁরে খায়। সূত্র জানায়, সুদ ব্যবসায়ীরা তিন মাসের জন্য চড়া সুদে টাকা ধার দিয়ে থাকে। ফসল উঠলে তাদের সুদের টাকা ধান দিয়ে পরিশোধ করতে হয়। বাজার দরের চেয়ে কম দামে মহাজনদের নিকট ধান বিক্রি করতেও কৃষকদের বাধ্য করা হয়। রূপসা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, সরকারিভাবে প্রান্তিক চাষীদের জন্য সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা নেই। তবে বাংলাদেশ রুরাল ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিআরডিবি) সদস্য হলে কৃষকরা সহজশর্তে ঋণ পেতে পারেন।

জেলার রূপসা উপজেলার যুগিহাটি গ্রামে কৃষকদের সংগঠন আইসিএম ক্লাবের কৃষক নেতা শেখ গোলাম কিবরিয়া ও নূর মোহাম্মদ মোল্লা জানান, জমি চাষ, বীজ, সার, সেচ, কীটনাশকের সঙ্গে উৎপাদিত ফসলের ভাগ নিয়ে যে নতুন বিধান জমি মালিকরা চালু করেছে তা শোষণ-পীড়ন ছাড়া আর কিছু নয়।

সূত্র জানায়, এখানে সুদে মহাজনদের নিমর্ম অত্যাচার চলছে বহুকাল ধরে। পাশাপাশি এনজিও সমিতির মাধ্যমে দেয়া ক্ষুদ্র ঋণের জালেও কৃষকরা জড়িয়ে পড়েছে ব্যাপকভাবে। রূপসার বর্গাচাষী জাহান শেখ জানান, সুদ ব্যবসায়ীরা দরিদ্র কৃষকদের কোন ছাড় দেয় না। সময়মত ঋণের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হলে অনেক সময় তারা চাষীদের হালের বলদ মুক্তিপণ হিসেবে আটক করতেও দ্বিধা করে না। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরকারীভাবে সহজশর্তে সুদমুক্ত কৃষিঋণ ব্যবস্থা নিশ্চিত হওয়া দরকার বলে কৃষকরা মনে করেন।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor